অনলাইন ডেস্ক
নেতানিয়াহু প্রায়ই নিজেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে নেতানিয়াহু এই সম্পর্ককে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, বাস্তবতা ততটা সরল নয় বলেই মনে করেন অনেকে। সম্প্রতি ইসরায়েলি গণমাধ্যমজুড়ে এই জল্পনা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, দুই নেতার পাশাপাশি দুই দেশেরও সম্পর্কে ভাঙনের সুর।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, এই দূরত্বের ইঙ্গিত মিলেছে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরেও, যেখানে তিনি সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করলেও ঐতিহাসিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলে যাননি। একইভাবে ইসরায়েলের দুই আঞ্চলিক বৈরী ইরান ও ইয়েমেনে তেহরান-সমর্থিত হুতিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান শান্তি আলোচনায়ও ইসরায়েলের কোনো দৃশ্যমান অংশগ্রহণ নেই। যদিও ইসরায়েল এসব বিষয়ে সব সময়ই নিজেকে কেন্দ্রীয় পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে।
সবশেষে গাজায় ইসরায়েলের সহিংসতা ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দা যখন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ‘লজিস্টিক’ সমস্যা দেখিয়ে পূর্বনির্ধারিত ইসরায়েল সফর বাতিল করেন।
চলতি মাসের শুরুতে জাতীয় টেলিভিশনে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু সম্পর্ক নিয়ে ইসরায়েলি বিশ্লেষক দানা ফাহন লুজন বলেন, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে স্পষ্ট করে বার্তা দিচ্ছেন—এই বন্ধুত্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হাঁপিয়ে উঠেছেন।
আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি জনমত বিশ্লেষক, নেতানিয়াহুসহ একাধিক শীর্ষ রাজনীতিকের সাবেক উপদেষ্টা মিচেল বারাক বলেন, ‘ইসরায়েলের জন্য উপকারী এমন সবকিছুই এখন ভেঙে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র একসময় আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, কিন্তু এখন তারা আমাদের কোনো কথাই শুনছে না। প্রতিটি ইসরায়েলিরই এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’
বারাক আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এই মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পেছনে নেতানিয়াহুকেই দায়ী করেন অনেক ইসরায়েলি। তিনি সব সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁদের সম্পর্ককে এমনভাবে উপস্থাপন করতেন, যেন ট্রাম্প তাঁর হাতের মুঠোয়। আর ট্রাম্প সেটা মোটেও পছন্দ করেননি।’
স্পষ্টত ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ওয়াশিংটন-তেল আবিব সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। গত রোববার ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফেরাতে চান, গাজার মানবিক সংকট সমাধান করতে চান। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সম্পর্কে ফাটল ধরেছে।
গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পরিত্যাগ করবে—এ ধরনের গুজব উড়িয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হেউইট বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ভালো কোনো বন্ধু তেল আবিবের ছিল না।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর চলছে নজিরবিহীন দমনপীড়ন। এ পর্যন্ত অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে শুধু মতপ্রকাশের কারণে গ্রেপ্তার ও দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ট্রাম্প-নেতানিয়াহু সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়—ওয়াশিংটন এখনো ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন করে। প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদেও কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিদের বহু স্বার্থ উদ্ধার করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। শুধু তাই নয়, প্রথম মেয়াদে সিরিয়ায় অধিকৃত গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। ইরানের সঙ্গে হওয়া পারমাণবিক চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প।
তবে দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক ঠিকঠাক আছে—এমনটা মানতে নারাজ অনেক বিশ্লেষক। কিছুটা হলেও দুই নেতার মধ্যে টানাপোড়েন চলছে বলে মনে করেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন না। ইসরায়েলের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বহু সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিলেও নেতানিয়াহু সেগুলোর জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞ নন। আর এতে নাখোশ ট্রাম্প। এ ছাড়া ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয়ের পর জো বাইডেনকে তাৎক্ষণিক অভিনন্দন জানিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। কিন্তু ওই নির্বাচনের ফলই মানতে নারাজ ট্রাম্প। ওই সময়ই নেতানিয়াহুর এই অভিনন্দন নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প।
২০২১ সালের এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো প্রথম ব্যক্তিটি ছিলেন বিবি (বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু)। বিবির জন্য আমি অন্য যে কারও চেয়ে বেশি করেছি। তিনি অন্তত চুপ থাকতে পারতেন। খুব বড় ভুল করেছেন তিনি।’
অবশ্য ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের আগেই নেতানিয়াহু ও তাঁর মিত্ররা ট্রাম্পকে পাশে টানার চেষ্টা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ট্রাম্পের ওপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা করেন নেতানিয়াহু। চ্যাথাম হাউসের বিশ্লেষক ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্পের পক্ষে প্রচার করেছেন নেতানিয়াহু। বাইডেনকে ‘খারাপ’ বলে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এখন তাঁরা বুঝতে পারছেন না, ট্রাম্প কোন দিকে যাবেন। কারণ, ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। সবকিছুতে তিনি লাভ খোঁজেন। ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাঁর আসলে কোনো লাভ নেই।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো বলছে, ট্রাম্প এখন আর গাজা ইস্যুতে আগ্রহী নন। কারণ, নেতানিয়াহু ও তাঁর কট্টরপন্থী মিত্ররা কোনো মূল্যেই এই যুদ্ধ থামাতে চান না। এর আগে ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছিল, নেতানিয়াহুর কোনো ফোনকল বা বার্তায় ট্রাম্প নিজে আর সাড়া দিচ্ছেন না। কারণ, নেতানিয়াহু তাঁকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন বলে মনে করছেন তিনি।
ইসরায়েলি সাংবাদিক ইয়ানির কোজিন সামাজিক মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘ট্রাম্পকে যদি কেউ অপদার্থ মনে করে বা প্রতারণা করার চেষ্টা করে—তাকে ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন। আর সে কারণেই তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।’
ইসরায়েলি বিশ্লেষক নিমরোদ ফ্লাশেনবার্গ বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলিরা ধরে নিয়েছেন—ট্রাম্প নেতানিয়াহুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আর এতে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা আতঙ্কিত। এত দিন তাঁরা ভেবেছিলেন, ট্রাম্প সব সময়ই তাঁদের পাশে থাকবেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নেতানিয়াহু-ট্রাম্প সম্পর্ক যতই খারাপ হোক, সেটা যে সরাসরি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ভেঙে দেবে—তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক কেমন হতে পারে, সেটিই এখন আলোচনার বিষয়।
চ্যাথাম হাউসের গবেষক ইয়োসি মেকেলবার্গ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা বহুদিন ধরে ইসরায়েল-আমেরিকার সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ট্রাম্প হয়তো এখন নেতানিয়াহুর ওপর ক্ষুব্ধ, কিন্তু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই দলেরই বড় একটি অংশ ইসরায়েলের সমর্থক।
ফ্লাশেনবার্গ বলেন, যুদ্ধবিরোধীরা এখন আশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এবার একটা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে নেতানিয়াহুকে চাপ দেবে। তবে এই আশা মূলত নেতানিয়াহু সরকারের ওপর বিরক্তি থেকে এসেছে, ট্রাম্পের ওপর আস্থা থেকে নয়।
অন্যদিকে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিকেরা—যেমন অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির—এই পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে চাইছেন। মেকেলবার্গ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি শুধু অস্ত্র দেয় আর জাতিসংঘে ইসরায়েলকে রক্ষা করে, তবে কট্টর ডানপন্থীরা সেটিকে নিজেদের জয়
হিসেবে দেখবে।’
এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ কী—সেই প্রশ্নও উঠছে। অনেকেই বলেছেন, নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বিশ্লেষক মিচেল বারাক বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে। যখন আমি তাঁর উপদেষ্টা ছিলাম, তখনো সবাই বলত—তাঁর সময় শেষ। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে, তাঁর হাতে আর কোনো “জাদু” নেই।’
নেতানিয়াহু প্রায়ই নিজেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে নেতানিয়াহু এই সম্পর্ককে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, বাস্তবতা ততটা সরল নয় বলেই মনে করেন অনেকে। সম্প্রতি ইসরায়েলি গণমাধ্যমজুড়ে এই জল্পনা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, দুই নেতার পাশাপাশি দুই দেশেরও সম্পর্কে ভাঙনের সুর।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, এই দূরত্বের ইঙ্গিত মিলেছে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরেও, যেখানে তিনি সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করলেও ঐতিহাসিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলে যাননি। একইভাবে ইসরায়েলের দুই আঞ্চলিক বৈরী ইরান ও ইয়েমেনে তেহরান-সমর্থিত হুতিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান শান্তি আলোচনায়ও ইসরায়েলের কোনো দৃশ্যমান অংশগ্রহণ নেই। যদিও ইসরায়েল এসব বিষয়ে সব সময়ই নিজেকে কেন্দ্রীয় পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে।
সবশেষে গাজায় ইসরায়েলের সহিংসতা ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দা যখন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ‘লজিস্টিক’ সমস্যা দেখিয়ে পূর্বনির্ধারিত ইসরায়েল সফর বাতিল করেন।
চলতি মাসের শুরুতে জাতীয় টেলিভিশনে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু সম্পর্ক নিয়ে ইসরায়েলি বিশ্লেষক দানা ফাহন লুজন বলেন, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে স্পষ্ট করে বার্তা দিচ্ছেন—এই বন্ধুত্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হাঁপিয়ে উঠেছেন।
আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি জনমত বিশ্লেষক, নেতানিয়াহুসহ একাধিক শীর্ষ রাজনীতিকের সাবেক উপদেষ্টা মিচেল বারাক বলেন, ‘ইসরায়েলের জন্য উপকারী এমন সবকিছুই এখন ভেঙে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র একসময় আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, কিন্তু এখন তারা আমাদের কোনো কথাই শুনছে না। প্রতিটি ইসরায়েলিরই এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’
বারাক আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এই মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পেছনে নেতানিয়াহুকেই দায়ী করেন অনেক ইসরায়েলি। তিনি সব সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁদের সম্পর্ককে এমনভাবে উপস্থাপন করতেন, যেন ট্রাম্প তাঁর হাতের মুঠোয়। আর ট্রাম্প সেটা মোটেও পছন্দ করেননি।’
স্পষ্টত ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ওয়াশিংটন-তেল আবিব সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। গত রোববার ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফেরাতে চান, গাজার মানবিক সংকট সমাধান করতে চান। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সম্পর্কে ফাটল ধরেছে।
গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পরিত্যাগ করবে—এ ধরনের গুজব উড়িয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হেউইট বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ভালো কোনো বন্ধু তেল আবিবের ছিল না।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর চলছে নজিরবিহীন দমনপীড়ন। এ পর্যন্ত অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে শুধু মতপ্রকাশের কারণে গ্রেপ্তার ও দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ট্রাম্প-নেতানিয়াহু সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়—ওয়াশিংটন এখনো ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন করে। প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদেও কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিদের বহু স্বার্থ উদ্ধার করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। শুধু তাই নয়, প্রথম মেয়াদে সিরিয়ায় অধিকৃত গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। ইরানের সঙ্গে হওয়া পারমাণবিক চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প।
তবে দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক ঠিকঠাক আছে—এমনটা মানতে নারাজ অনেক বিশ্লেষক। কিছুটা হলেও দুই নেতার মধ্যে টানাপোড়েন চলছে বলে মনে করেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন না। ইসরায়েলের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বহু সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিলেও নেতানিয়াহু সেগুলোর জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞ নন। আর এতে নাখোশ ট্রাম্প। এ ছাড়া ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয়ের পর জো বাইডেনকে তাৎক্ষণিক অভিনন্দন জানিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। কিন্তু ওই নির্বাচনের ফলই মানতে নারাজ ট্রাম্প। ওই সময়ই নেতানিয়াহুর এই অভিনন্দন নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প।
২০২১ সালের এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো প্রথম ব্যক্তিটি ছিলেন বিবি (বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু)। বিবির জন্য আমি অন্য যে কারও চেয়ে বেশি করেছি। তিনি অন্তত চুপ থাকতে পারতেন। খুব বড় ভুল করেছেন তিনি।’
অবশ্য ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের আগেই নেতানিয়াহু ও তাঁর মিত্ররা ট্রাম্পকে পাশে টানার চেষ্টা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ট্রাম্পের ওপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা করেন নেতানিয়াহু। চ্যাথাম হাউসের বিশ্লেষক ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্পের পক্ষে প্রচার করেছেন নেতানিয়াহু। বাইডেনকে ‘খারাপ’ বলে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এখন তাঁরা বুঝতে পারছেন না, ট্রাম্প কোন দিকে যাবেন। কারণ, ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। সবকিছুতে তিনি লাভ খোঁজেন। ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাঁর আসলে কোনো লাভ নেই।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো বলছে, ট্রাম্প এখন আর গাজা ইস্যুতে আগ্রহী নন। কারণ, নেতানিয়াহু ও তাঁর কট্টরপন্থী মিত্ররা কোনো মূল্যেই এই যুদ্ধ থামাতে চান না। এর আগে ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছিল, নেতানিয়াহুর কোনো ফোনকল বা বার্তায় ট্রাম্প নিজে আর সাড়া দিচ্ছেন না। কারণ, নেতানিয়াহু তাঁকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন বলে মনে করছেন তিনি।
ইসরায়েলি সাংবাদিক ইয়ানির কোজিন সামাজিক মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘ট্রাম্পকে যদি কেউ অপদার্থ মনে করে বা প্রতারণা করার চেষ্টা করে—তাকে ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন। আর সে কারণেই তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।’
ইসরায়েলি বিশ্লেষক নিমরোদ ফ্লাশেনবার্গ বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলিরা ধরে নিয়েছেন—ট্রাম্প নেতানিয়াহুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আর এতে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা আতঙ্কিত। এত দিন তাঁরা ভেবেছিলেন, ট্রাম্প সব সময়ই তাঁদের পাশে থাকবেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নেতানিয়াহু-ট্রাম্প সম্পর্ক যতই খারাপ হোক, সেটা যে সরাসরি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ভেঙে দেবে—তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক কেমন হতে পারে, সেটিই এখন আলোচনার বিষয়।
চ্যাথাম হাউসের গবেষক ইয়োসি মেকেলবার্গ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা বহুদিন ধরে ইসরায়েল-আমেরিকার সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ট্রাম্প হয়তো এখন নেতানিয়াহুর ওপর ক্ষুব্ধ, কিন্তু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই দলেরই বড় একটি অংশ ইসরায়েলের সমর্থক।
ফ্লাশেনবার্গ বলেন, যুদ্ধবিরোধীরা এখন আশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এবার একটা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে নেতানিয়াহুকে চাপ দেবে। তবে এই আশা মূলত নেতানিয়াহু সরকারের ওপর বিরক্তি থেকে এসেছে, ট্রাম্পের ওপর আস্থা থেকে নয়।
অন্যদিকে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিকেরা—যেমন অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির—এই পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে চাইছেন। মেকেলবার্গ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি শুধু অস্ত্র দেয় আর জাতিসংঘে ইসরায়েলকে রক্ষা করে, তবে কট্টর ডানপন্থীরা সেটিকে নিজেদের জয়
হিসেবে দেখবে।’
এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ কী—সেই প্রশ্নও উঠছে। অনেকেই বলেছেন, নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বিশ্লেষক মিচেল বারাক বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে। যখন আমি তাঁর উপদেষ্টা ছিলাম, তখনো সবাই বলত—তাঁর সময় শেষ। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে, তাঁর হাতে আর কোনো “জাদু” নেই।’
ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে যে হামলা শুরু করেছে, তা যেন শুধু স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে নয়, বরং সেই কর্মসূচির মাথা হিসেবে পরিচিত বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধেও। এই হামলার তালিকায় ছিল ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক প্রধান ফেরেইদুন আব্বাসির নাম।
৭ ঘণ্টা আগেইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের কেবল শুরু। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস ও সামরিক বাহিনীকে পঙ্গু করে দিতে ‘যত দিন লাগবে’ ইসরায়েল তত দিন আঘাত হানতে থাকবে। এটি প্রাথমিকভাবে কয়েক সপ্তাহ হতে পারে। ইরান এরই মধ্যে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরায়েলের
৯ ঘণ্টা আগেইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে এক নতুন অস্থিরতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বড় আঞ্চলিক শক্তিগুলোর ভূমিকাও হয়ে উঠেছে নজরকাড়া। এর মধ্যে রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জটিল অবস্থানে রয়েছে। একদিকে তাদের ঐতিহাসিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ, অন্যদিকে বর্তমান সংঘাতে
১০ ঘণ্টা আগেগত শুক্রবার ভোরে আকস্মিকভাবে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। মূলত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি হামলার জবাব দিচ্ছে দেশটি। ইসরায়েল দাবি করেছে, গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত ইরান মোট ৩৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে