Ajker Patrika

চীনা ফাস্ট ফ্যাশন ব্র্যান্ড শি-ইনের আগ্রাসী বাজার কৌশল, পোশাক রপ্তানি খাতে উদ্বেগ

আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৫৪
চীনা ফাস্ট ফ্যাশন ব্র্যান্ড শি-ইনের আগ্রাসী বাজার কৌশল, পোশাক রপ্তানি খাতে উদ্বেগ

ডেনিম জিন্স প্যান্ট মাত্র ৯ ডলারে, তাও ইউরোপ-আমেরিকায়! চোখ কপালে ওঠার কথা বটে। সেকেন্ডহ্যান্ড অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত পোশাকের কথা বলছি না। একেবারে আনকোরা হাল ফ্যাশনের কেতাদুরস্ত পোশাক নিয়ে কথা হচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনসের দাম গড়ে ১৫০ ডলারের বেশি এবং ব্রিটেনে সর্বনিম্ন ৩৭ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ডলারের জিনস বিক্রি হয়। সেখানে মাত্র ৯ ডলারে ডেনিম জিন্স প্যান্ট বিক্রির প্রায় অসম্ভব কাজটি করছে ফাস্ট ফ্যাশনের জগতে চীনের অনলাইন রিটেইলার শি-ইন। 

ফাস্ট ফ্যাশন এমন আড়ম্বরপূর্ণ সস্তা পোশাক, যা হালের চাহিদা পূরণে খুব দ্রুত ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো হয়। এই পোশাকগুলো একের একের এক বাজারে আসতে থাকে। সরবরাহ শৃঙ্খল বা উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণনের স্তরে স্তরে রিটেইলার বা খুচরা বিক্রেতাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনের ফলেই ফাস্ট ফ্যাশন সম্ভব হয়েছে। শি-ইনের আগে এই খাতে শীর্ষ দুই রিটেইলার প্রতিষ্ঠান ছিল জারা ও এইচঅ্যান্ডএম। 

পুরোনো এই দুই রিটেইলারকে এরই মধ্যে ছুঁয়ে ফেলেছে বাজার দখলের আগ্রাসী চেষ্টায় থাকা শি-ইন। নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় ধাঁচের ১০ হাজার পোশাকের ছবিসহ বিবরণ প্রতিদিন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এই রিটেইলার। শুরুতেই খুব বেশি সংখ্যায় পোশাক তৈরি করে না। প্রথমে কয়েকশ পোশাক তৈরি করা হয়। বেশিসংখ্যক মানুষ কেনা শুরু করলে তখন বেশি করে অর্ডার দেওয়া হয়। নকশার পর মাত্র ১০ দিনে পোশাক বাজারে আসে।সস্তা শ্রমের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বসেরার অবস্থান চীনের, সেটা অদূর ভবিষ্যতে কেউ ছুঁতে পারবে না বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম এর পরের অবস্থানে থাকলেও চীন থেকে বহু পিছিয়ে। চীনে কম খরচে পোশাক তৈরি হলেও হাজার হাজার মাইল দূরে একটি জিনস কীভাবে মাত্র ১০ ডলারে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, তা অন্য দেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ।

গত বছরজুড়েই বিশ্বে তৈরি পোশাক খাতে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল শি-ইন। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বে ফাস্ট ফ্যাশনের বাজারে প্রশস্ত পথ তৈরি করে ফেলেছে এই রিটেইলার। ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণদেরকে টার্গেট করে আগ্রাসী বিক্রি কৌশল নেওয়ায় মার্কিন ভোক্তাদের পছন্দের শীর্ষে উঠেছে। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুসারে, বিক্রির হিসাবে শি-ইন এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফাস্ট ফ্যাশন রিটেইলার।

লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক কোম্পানি গ্লোবাল ডেটার নিল সন্ডার্সের মতে, সস্তা দাম ও দক্ষতা দিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনলাইনভিত্তিক রিটেইলারে পরিণত হয়েছে শি-ইন। গত মাসে প্রকাশিত শি-ইনের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে শি-ইন। এতে রেকর্ড ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের বেশি মুনাফা হয়েছে। এর আগে যথাক্রমে ২০২২ সালে শি-ইনের মুনাফা ছিল প্রায় ১৪০ কোটি ও ২০২১ সালে ১১০ কোটি ডলার। 

মূলত জেন জেড বা সবচেয়ে কমবয়সী এই শতকের তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করে পোশাক তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কম দামেই পোশাক বিক্রি করে তাঁরা। সবচেয়ে বিস্ময়কর দাম ডেনিম জিনসের, মাত্র ৯ ডলার। শি-ইন কেন তরুণদের কাছে জনপ্রিয়, তারও আন্দাজ পাওয়া যায় ওয়েবসাইট ঘুরে। হরেক রকম অফার, ক্রেতারা আসক্ত না হয়ে যাবে কোথায়?

তাছাড়া পয়েন্ট সিস্টেম ও রিওয়ার্ডের ব্যবস্থা আছে। ফ্লাশ সেল ও সময়সীমা বেঁধে বিক্রির অফার দিয়ে কাউন্টডাউন করা হয়। স্বভাবতই এত সস্তায় পণ্য কেনার সুযোগ না হারানোর চাপ তৈরি হয় ক্রেতার উপর। এর সঙ্গে আছে তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিযোগ: স্লট মেশিনের মতো লাকি ড্র ফিচারের মাধ্যমে প্রতিদিনই ছাড়, পয়েন্ট বা কোনো উপহার জেতার সুযোগ। শি-ইনের ওয়েবসাইট ঘুরে চক্ষু চড়কগাছ, এত সস্তায় আকর্ষণীয় সব পোশাক!

চীনা প্রতিষ্ঠানটির এই বাণিজ্য কৌশল নৈতিক কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো-এত স্বল্প দামে ডেনিম জিন্স কীভাবে দিচ্ছে শি-ইন, যা অন্য পোশাক বিক্রেতাদের পক্ষে অসম্ভবই বলা চলে। শি-ইন যে ব্যবসা কৌশল নিয়েছে তা নৈতিক না হলেও সফল। কারণ প্রতিবছরই কোম্পানির বিক্রি বাড়ছে ব্যাপক। আগের বছরের চেয়ে ২০২৩ সালে দ্বিগুণের বেশি আয় করেছে শি-ইন। এই কোম্পানি এখন ওয়াশিংটনের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায়। এর জন্য চীন সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছে এই রিটেইলার। শি-ইনের আইপিওর আকার চলতি বছরের সবচেয়ে বড় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

শি-ইন চীনে প্রতিষ্ঠিত হলেও সিঙ্গাপুরের সদর দপ্তর থেকে পরিচালিত হয়। শি-ইন ২০২২ সালে বিশ্বের বৃহত্তম ফ্যাশন রিটেইলারের স্বীকৃতি পায়। ওই বছর শেষে চীনে প্রতিষ্ঠানটির ১০ হাজার ৩৮২ জন কর্মী ছিল, আর সিঙ্গাপুরে ছিল প্রায় ২০০। 

২০০৮ সালে গুয়াংজুর নানজিংয়ে শি-ইনের যাত্রা শুরু। তখন গুয়াংজুর পাইকারি বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিত এই প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালের শুরুতে নকশা থেকে শুরু থেকে উৎপাদনের জন্য নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খল চালু করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি খুচরা বিক্রেতা হিসেবে রূপান্তরিত হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত এর তিন হাজারের বেশি সরবরাহকারীর নেটওয়ার্ক ছিল। 

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ তুলনামূলক সস্তা শ্রমের দেশ থেকে কেনা প্রতিদ্বন্দ্বী খুচরা বিক্রেতাদের ছাপিয়ে এই চীনা রিটেইলার কীভাবে পোশাক তৈরি করছে, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিকে এক নিবন্ধে এর বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ ডেনিম প্রস্তুকারক এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাফিজ উদ্দিন। 

প্রথমত, শি-ইন যে ব্যবসার মডেল অনুসরণ করছে, তা ব্যাপকভাবে ডেটা অ্যানালিটিকস ও হাল ফ্যাশনে রিয়েল-টাইম নজরদারির উপর নির্ভর করে। এর ফলে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত পোশাক তৈরি করতে পারে কোম্পানি এবং অবিক্রিত থাকার পরিমাণ কমে এবং বর্জ্যের পরিমাণও কমে। 

দ্বিতীয়ত, ভোক্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের কৌশলের কারণে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য যেমন নেই, তেমনি দোকান খোলার বাড়তি খরচও নেই। এই কৌশলের কারণে শুধু পরিচালন ব্যয় যে কম তা নয়, সরবরাহ শৃঙ্খলও সুচারু হয় এবং দক্ষতা বাড়ে। 

তাছাড়া শি-ইন ‘এজাইল সাপ্লাই চেইন’ অর্থাৎ উৎপাদনের পর দ্রুত বণ্টনের মডেল অনুসরণ করায় ছোট ছোট ব্যাচে উৎপাদন সম্ভব হয়। এর ফলে অতি উৎপাদনের ঝুঁকি কমে এবং কোম্পানিও সস্তায় বৈচিত্র্যময় পণ্য ক্রেতাদের দিতে পারে। 

লন্ডনভিত্তিক ব্যবসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটরের প্রতিবেদনে এত সস্তা দামে শি-ইনের পোশাক বিক্রির সক্ষমতার পেছনে এর পেছনে তিনটি বিশেষ দিক তুলে ধরা হয়েছে। 

১. স্বল্প দাম
শি-ইনের পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল গুয়াংজুভিত্তিক হওয়ায় পরিচালন ব্যয় অনেক কম। পরিবহন ব্যয় যেমন কমে, খরচও বাঁচে। আর এটাই বড় বড় ফ্যাশন কোম্পানির জন্য উদ্বেগের। কারণ, অন্যরা নানা জায়গায় বহু ধাপে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এর ফলে তাঁদের ব্যয় অনেক বেশি। 

উপরন্তু, সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে ২০১৮ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পরে চীনে করছাড় পেয়েছে। চীনা কোম্পানির উপর যুক্তরাষ্ট্র যখন বাড়তি কর আরোপ করল, তখন চীন পুরো কর মওকুফ করা শুরু করল। তাছাড়া, ২০১৫ সালের আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৮০০ ডলার পর্যন্ত আমদানি শুল্কমুক্ত। অর্থাৎ, ২০১৮ সাল থেকে শি-ইন আমদানি ও রপ্তানি শুল্কের আওতামুক্ত। 

২. চমকপ্রদ স্টাইল 
বিগ ডেটার উপর ভিত্তি করে কার্যক্রম পরিচালনা করে শি-ইন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া উদ্যোক্তা ক্রিস শু কোম্পানি প্রতিষ্ঠার আগে তিন বছর এসইও প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। অ্যাপ ডেটা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কৌশল নির্ধারণ শুরু করেন তিনি। এর ফলে নতুন পণ্যের নকশা, উৎপাদনের পরিমাণ ও সরবরাহকারী বাছাই সহজ হয়। গুগল ট্রেন্ডস ফাইন্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় ফ্যাশনে ভালো দখল তৈরির জন্য গুগলের সঙ্গে চুক্তিও করেছে শি-ইন।

কোনো পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে মাত্র ১০০টি নমুণা তৈরি করে শি-ইন, যেখানে জারার মতো রিটেইলারকে ন্যূনতম ৩০০-৫০০ অর্ডার করতে হয়। স্থানীয় কারখানাগুলোর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকায় শি-ইন এই বিশেষ সুবিধা পায়। এর ফলে তার পক্ষে দিনে ৩০০০ হাজার নমুনা তৈরি সম্ভব হয়, যেটা অন্যদের পক্ষে রীতিমতো অসম্ভব। 

৩. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
শি-ইনের উদ্দিষ্ট ক্রেতারা জেনারেশন জেড বা একবিংশ শতকের প্রজন্ম। তারা ডিজিটাল বিশ্বে বড় হয়েছে এবং প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে তাঁদের বসবাস। ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের ‘ভয়েস অফ দ্য কনজিউমার: লাইফস্টাইল সার্ভে’ ২০২১ সালের এপ্রিলের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে জেনারেশন জেডের ৩৩ শতাংশেরও বেশি সক্রিয়ভাবে কোম্পানির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং ফিড অনুসরণ করে। গুগল ট্রেন্ডস অনুসারে গত বছর বহুল অনুসন্ধান করা শীর্ষ ১০টি বিষয়ের মধ্যে দুটিই ছিল এই প্রজন্ম সম্পর্কিত ফ্যাশন (স্লিম-ফিট প্যান্ট, ফ্যাশন)। তাই শি-ইন যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং থেকে উপকৃত হয়েছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। 

শি-ইন নামকরণের আগে প্রায় নয় বছর ধরে জোরালো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কৌশল নিয়েছিল কোম্পানি। পরে ভোক্তাদের কাছে ব্র্যান্ড ও পণ্যগুলিকে পরিচয় করিয়ে দিতে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও পিনটারেস্টের ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে জোট বাঁধে শি-ইন। ব্যবসার উদ্দেশ্যে টিকটকের ব্যবহারও শুরুতে করেছে শি-ইন। 

এসব কারণকে বাস্তব ধরে নিলেও চীনে ডেনিম জিন্স তৈরি করে মাত্র ৯ ডলারে ইউরোপ বা আমেরিকায় ক্রেতার কাছে পৌঁছানো চাট্টিখানি কথা নয়! কারণ, কাঁচামাল, মজুরি, নানা পর্যায়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া, ও পরিবহন বাবদ ব্যয় এর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। এগুলো বাদ দিলে কোনো মুনাফা থাকা কঠিন। 

ফ্যাশনের ব্যবসায় গোপন কিছু ব্যাপার যে থাকে, তা সবাই জানে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে শি-ইনের সব কিছুই পর্দার আড়ালে। বিশ্বের প্রধান প্রধান ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, অ্যাসোস ও গ্যাপ এরই মধ্যে নিজেদের যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছে, তারা ওয়েবসাইটে সরবরাহকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। শি-ইন সেই কাজটি এখনও করেনি। বাজারে প্রভাব ও বিস্তৃত তারুণ্যের মধ্যে জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিলে শি-ইন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। 

তবে শিগগিরই হয়তো আরও কিছু জানা যাবে। কারণ, কোম্পানিটি নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে ব্যবসা কৌশলসহ যাবতীয় মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এজন্য চীনের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক এবং লন্ডন স্টক এক্সেচেঞ্জের (এলএসই) কাছে আবেদন করেছে শি-ইন। 
 
তবে এখন যেভাবে শি-ইনের ব্যবসা চলছে, তা নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের ভ্রু কুঁচকে আছে। এই মুহূর্তে বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ছাড়া শি-ইনকে আর কিছু বলা যাচ্ছে না। এধরনের কোম্পানি যুগে যুগেই আসে এবং বাজারের নীতি উলট-পালট করে দেয়। কিন্তু এভাবে দীর্ঘদিন চলতে পারে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার ক্ষেত্রে আইন ও সুযোগ সমান থাকতে হবে।

একটি কোম্পানির সরবরাহ শৃঙ্খল যখন পুরো আঁধারে ঢাকা, আর প্রতিযোগী সব কোম্পানির সবকিছু উন্মুক্ত, তখন বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে না। তাই শি-ইন ব্যবসার তথ্য প্রকাশ না করলে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ থাকবে না। তাতে বাংলাদেশের মতো অন্য দেশে রপ্তানিকারকরাও হুমকির মুখে পড়বেন।

লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।

উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।

প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।

পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।

পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।

কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।

দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।

শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।

কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।

উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।

ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।

রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।

দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।

জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।

রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।

উদ্ভাবন কি থেমে যাবে

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।

বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে

ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে

গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।

চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব

বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।

তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।

এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।

পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।

বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত