Ajker Patrika

আবাসিক বিদ্যুতের সিংহভাগ খরচ করে এসি, বিকল্প কী

জাহাঙ্গীর আলম
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২২, ২০: ০৪
আবাসিক বিদ্যুতের সিংহভাগ খরচ করে এসি, বিকল্প কী

২০১৯ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। বছরের উষ্ণতম সপ্তাহের ভবিষ্যদ্বাণী করার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন অঙ্গরাজ্যের নিউইয়র্ক শহরজুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। গত দুই দশকে শহরের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সবকটি রেকর্ডই ঘটেছে তাপপ্রবাহের সময়। কারণ একটাই লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো চালু করে। নিউইয়র্কের ১ কোটির বেশি বাসিন্দাকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিতরণ সংস্থার ঘাম ছুটে যায়। তারা কোম্পানির সম্মেলন কক্ষকে জরুরি কমান্ড সেন্টার বানিয়ে ফেলে। 

এসিতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খচর হয় সেটির একটি ধারণা পেতে আমরা নিউইয়র্ক সিটিকেই নমুনা হিসেবে নিতে পারি। 

নিউইয়র্ক সিটি এবং ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টিজুড়ে ৬২টি পাওয়ার সাবস্টেশন এবং ১ লাখ ৩০ হাজার মাইলেরও বেশি পাওয়ার লাইন এবং তারের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা কন এডিসনের গ্রিড প্রতি সেকেন্ডে ১৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। সে হিসাবে এটি প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ অশ্বশক্তির সমতুল্য। 

নিয়মিত দিনে, নিউইয়র্ক সিটির প্রতি সেকেন্ডে চাহিদা প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট। তাপপ্রবাহের সময় এই চাহিদা ১৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। 

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এই সরবরাহ কোম্পানির একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, একটা সাধারণ পাটিগণিত করে দেখুন। উচ্চ চাহিদা এবং চরম তাপমাত্রা দুই মিলে সিস্টেমের সরঞ্জামগুলোকে অতিরিক্ত গরম করে তোলে। এতে পুরো সিস্টেমই ফেইল করতে পারে। ফলে ব্ল্যাকআউট হয়। ২০০৬ সালে সরঞ্জাম অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণে কুইন্সে এক সপ্তাহের জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন ছিল। একটি তাপপ্রবাহে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। 

একটি উদাহরণ দিয়ে পরিস্থিতির বোঝানো যাক: ২০১৯ সালের ২১ জুলাই সন্ধ্যা নাগাদ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে। তখন প্রতি সেকেন্ডে চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। সরবরাহ কোম্পানি কন এডিসন ব্রুকলিন এবং কুইন্সের ৫০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ ২৪ ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন রাখতে বাধ্য হয়। কারণ কাছাকাছি গ্রিডে সিস্টেম অকেজো হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এটি না করলে হাজার হাজার মানুষ কয়েক দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। ওই সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা করতে অঙ্গরাজ্য প্রশাসনকে পুলিশ পাঠাতে হয়েছিল,  আর কন এডিসনের কর্মীরা লোডশেডিংয়ে পড়া গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি ড্রাই আইস বিতরণ করেছিলেন যাতে তাঁরা ঘরবাড়ি ঠান্ডা রাখতে পারেন। বাংলাদেশে অবশ্য এমন সেবা অবাস্তব কল্পনা! 

পৃথিবীর উষ্ণতা যতই বাড়বে, এ ধরনের দৃশ্য ক্রমেই সাধারণ হয়ে উঠবে। আর গরম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বেই এয়ার কন্ডিশনার কেনার প্রবণতা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভবত সবচেয়ে সাধারণ ও জনপ্রিয় একটি ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে এই এসির ব্যবহার। 

অথচ এয়ার কন্ডিশনার একটি প্রায় অনন্য খরুচে যন্ত্র। এসির একটি ছোট ইউনিট একটি ঘর শীতল করতে পারে, অথচ এটিই গড়ে চারটি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ খরচ করে। আর যখন বাড়ি শীতল রাখতে একটি কেন্দ্রীয় ইউনিট ব্যবহার করা হয় তখন ১৫ টির বেশি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ একটাই খরচ করে।

আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) বিশ্লেষক জন ডুলাক বলেন, ২০১৮ সালে বেইজিংয়ে তাপপ্রবাহের সময় উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশই ব্যবহার করেছিল এয়ার কন্ডিশনার বা এসি! 

 ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে তখন একটি ঘর ঠান্ডা রাখার মতো এসির ইউনিট ছিল ১০০ কোটির বেশি। সে হিসাবে পৃথিবীতে প্রতি সাতজনের বিপরীতে প্রায় একটি এসি। যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের মধ্যেও এসির শীতলতা কল্পনা করতে পারেন না। 

এ নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ছোট ইউনিটের এসি থাকবে ৪৫০ কোটির বেশি। তার মানে বর্তমানের মোবাইল ফোনের মতো সর্বব্যাপী ভোক্তাপণ্য হয়ে উঠবে। 

যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে প্রতি বছর শুধু এয়ার কন্ডিশনারের জন্য যতখানি বিদ্যুৎ খরচ করে তা যুক্তরাজ্যের মোট ব্যবহারের সমান! 

আইইএর ধারণা মতে, বিশ্বের বাকি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থায় পৌঁছালে, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিদ্যুতের প্রায় ১৩ শতাংশ খরচ করবে। আর এসব যন্ত্র বছরে উৎপাদন করবে ২০০ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশ ভারতের সমান। 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, চলতি শতকের শেষ নাগাদ শুধু এসি থেকে নির্গত গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। 

দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং এরই মধ্যেই বিপজ্জনক মাত্রার তাপ ও আর্দ্রতার কবলে পড়া দেশগুলো-ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রাজিলের মতো দেশের কোটি কোটি মানুষ শিগগিরই তাদের বাড়ির জন্য প্রথম এসি কিনবে। 

সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া একটি বিপজ্জনক চক্রের জন্ম দিচ্ছে। উষ্ণতা বৃদ্ধি মানুষকে আরও বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যত বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে তত বাড়বে পরিবেশের উষ্ণতা। এই চক্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ওপর এই নির্ভরতা সভ্যতার এমন এক উপসর্গ যেটিকে চীনা শিল্প সমালোচক হাউ হ্যানরু ‘পরিকল্পনার-উত্তর যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন। সাধারণত পরিকল্পনা বলতে আমরা যা বুঝি—কেন্দ্রীভূত, পদ্ধতিগত, পূর্ববর্তী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা—এই ধারণা এখন প্রায় বিলুপ্ত। উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি এবং খাত নির্ধারণ করে দেয় বাজার। মানুষের (ভোক্তা) বেঁচে থাকার প্রয়োজন খোঁজা হয় পরে, তাও বিচ্ছিন্নভাবে। 

শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রকে এখন প্রায়শই একটি সাধারণ পছন্দ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। মানুষের আর্থিক উন্নয়নে পাশাপাশি জীবনকে উন্নত করার জন্য এটিকে একটি অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। যেমনটি জাপানি এসি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান দাইকিনের ভারতীয় শাখার একজন নির্বাহী বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘এসি এখন আর বিলাসবহুল পণ্য নয় বরং প্রয়োজন। এসি সবারই প্রাপ্য।’ 

জীবনযাপনে আমেরিকান হতে গিয়ে অনেকে দেশেই মানুষের জীবনে এসি যেন গেঁথে গেছে। এমন কোনো ক্ষেত্রে ভোক্তাদের পছন্দকেও উপেক্ষা করা হয়। যেমন: কোনো হোটেলে ব্যাপারটা এমন যে ‘আপনি এসি চালু করবেন কি না সেটি আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কিন্তু আপনি জানালা খুলতে পারবেন না!’ 

তাহলে, কীভাবে এসির ফাঁদ থেকে পৃথিবীর মানুষকে বের করা যাবে? জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে হলে যে অভ্যাস এবং প্রযুক্তিগুলো কমাতে বা ত্যাগ করতে হবে তার মধ্যে এসিও কিন্তু পড়ে। রেড মিট খাওয়ার অভ্যাস কমানোর চেয়ে এসি বিসর্জন দেওয়া কঠিন, তবে জীবাশ্ম-জ্বালানি চালিত অটোমোবাইল নির্মূল করার চেয়ে সহজ। 

এ ছাড়া গবেষকেরা দেখিয়েছেন, গরম অঞ্চলের মানুষ ঘরে বেশি তাপমাত্রার মধ্যেও অনেক সময় আরাম বোধ করেন। তাঁরা দাবি করেন, মনের অবস্থা হোক বা জৈবিক সমন্বয় হোক, মানুষের আরাম আসলে অভিযোজনের ব্যাপার, এটা উদ্দেশ্যমূলক নয়। এ কারণে এসি ছাড়া যে অফিস চলবে না সাম্প্রতিককালের এমন ধারণার আসলে শক্ত ভিত্তি নেই। অর্থাৎ কাজ করার জন্য ‘আদর্শ’ তাপমাত্রার ধারণার সপক্ষে যুক্তি দুর্বল। 

এসি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু অগ্রগতি হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল বড় ভবনগুলোর গ্রিস হাউস গ্যাস নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আইন করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস মেয়রের কার্যালয় ২০৫০ সালের নিট-জিরো কার্বন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। 

অন্যান্য শহর আরও সরাসরি পদক্ষেপ নিচ্ছে। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি, জেনেভার স্থানীয় সরকার বিশেষ অনুমতি ছাড়া এসি স্থাপন নিষিদ্ধ করে। যদিও এ শহরে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে উষ্ণ। এই পদ্ধতিটি সুইজারল্যান্ডজুড়ে বলতে গেলে স্বাভাবিক। এর ফলও পেয়েছে তারা। এখন মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ২ শতাংশেরও কম খরচ হয় এসিতে। সুইসরা যে এসি খুব মিস করে তেমন কিন্তু দেখা যায় না। 

যেসব দেশে এসি এখনো তুলনামূলকভাবে নতুন, সেখানে বিকল্প বিকল্প খোঁজার সুযোগ বেশি। এসব দেশের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ‘পশ্চিমের সবচেয়ে খারাপ’ জিনিসগুলো এড়ানো। ভারত সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ শুরু করেছে। 

অন্যান্য অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের মতো ভারতকেও তার বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যার জন্য তাপমাত্রা সহ্য ক্ষমতার মধ্যে রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্রিন হাউস গ্যাসে উচ্চ নির্গমন পরিস্থিতিতে ভারতের জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ ২১০০ সালের মধ্যে চরম তাপ ও আর্দ্রতার কারণ জীবন-হুমকির মুখে পড়বে। ২০১৭ সালে বিজ্ঞানের অগ্রগতি বিষয়ক একটি গবেষণায় এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে, এয়ার কন্ডিশনারগুলো ‘গ্লোবাল কুলিং প্রাইজ’ মান পূরণে প্রয়োজনীয় প্রবিধান প্রণয়ন করলে ভারতের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পেছনে খরচ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। সেই সঙ্গে দেশের গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন-হ্রাস লক্ষ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ হয়ে যাবে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, বিশ্বব্যাপী চরম তাপপ্রবাহ ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ২ লাখ ৫৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে। নতুন প্রযুক্তির এয়ার কন্ডিশনার একা এই মৃত্যু ঠেকাতে পারবে না। এর জন্য অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে কাচ এবং কংক্রিটের চেয়ে ভালো নিরোধক উপকরণ দিয়ে ভবন নির্মাণ জরুরি। 

বিপুলসংখ্যক এই নতুন গ্রাহকেরা যাতে আরও কার্যকর (পরিবেশবান্ধব অর্থে) এসি কিনতে পারে তা নিশ্চিত করতে গ্লোবাল কুলিং প্রাইজ চালু করা হয়েছে। কৌশলগতভাবে পুরস্কারটি আপাতত শুধু ভারতের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংগুলোতে ব্যবহৃত এক কক্ষের এসিগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এ রকম এসি ডিজাইন করা আটজন চূড়ান্ত প্রতিযোগীর জন্য ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আদর্শ হিসেবে বলা হয়, জীবনকালে প্রচলিত এসির পাঁচগুণ কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করবে। সেই সঙ্গে দাম প্রচলিতর এসির দ্বিগুণের বেশি কোনোভাবেই হবে না। 

 ২০১৮ সালে প্রতিযোগিতাটি চালু হয়, পৃষ্ঠপোষক ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; রকি মাউন্টেন ইনস্টিটিউট (আরএমআই) ; ২৪টি দেশের একটি জোট এবং ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রিচার্ড ব্র্যানসন। ৩০ লাখ ডলারের উদ্যোগ এটি। আরএমআইয়ের ধারণা, এই ধরনের প্রযুক্তি জনপ্রিয় হলে ২০৫০ সালের মধ্যে ১০০ গিগাটন পর্যন্ত গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন রোধ করা যাবে। আশার কথা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে বৃহৎ এসি কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসছে। ২০২১ সালে পুরস্কার জিতেছে জাপানি কোম্পানি দাইকিন এবং চীনা কোম্পানি গ্রি। 

রকি মাউনটেইন ইনস্টিটিউটের (আরএমআই) হিসাব করে দেখেছে, নতুন এয়ার কন্ডিশনার থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি ঠেকাতে হলে নতুন প্রযুক্তির এসি যা সাধারণ এসির পাঁচ গুণ কম বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঝুঁকি তৈরি করে, সেগুলোর দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২০২২ সালের মধ্যেই বাজারে আনা উচিত। আর ২০৪০ সালের মধ্যে বার্ষিক এসি বিক্রয়ের প্রায় ১০০ শতাংশ দখল করতে পারতে হবে। 

তবে দাম কম রাখার প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র যে নতুন প্রযুক্তি দিয়ে সস্তা বিকল্পগুলোর স্থান দখল করা কঠিন হবে। বিশেষ করে ভারত এবং ব্রাজিলের মতো দেশে এটি একটি চ্যালেঞ্জ, যেখানে মানুষের আয় বাড়ছে এবং মানুষ দ্রুতই তাদের প্রথম এসিটি কেনার সামর্থ্য অর্জন করবে ৷ 

অবশ্য দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ কোনোভাবে এসি কেনার সামর্থ্য অর্জন করলেও এর ব্যয় বহন করার সামর্থ্য অর্জন করতে আরও সময় লাগবে। 

আমরা এখন কীভাবে শীতল থাকার চেষ্টা করছি সেই চিত্র বদলে দেওয়ার দ্রুততম পথটি হবে-উদ্ভাবন, প্রতিযোগিতা এবং নিয়ন্ত্রণের সমন্বয়। এই অগ্রগতিতে আরও গতি অত্যাবশ্যক। কারণ বিশ্বকে শীতল রাখার দৌড় শুধু উদ্ভাবন আর বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা নয়, এটা আমাদের বেঁচে থাকার প্রশ্ন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত