Ajker Patrika

‘অজনপ্রিয়’ এসি ‘অপরিহার্য’ করে তুলল কারা?

জাহাঙ্গীর আলম
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২২, ০০: ৩৩
‘অজনপ্রিয়’ এসি ‘অপরিহার্য’ করে তুলল কারা?

এয়ার কন্ডিশনার বা এসি একটি প্রায় অনন্য খরুচে যন্ত্র। এসির একটি ছোট ইউনিট একটি ঘর শীতল করতে পারে, অথচ এটিই গড়ে চারটি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ খরচ করে। আর যখন বাড়ি শীতল রাখতে একটি কেন্দ্রীয় ইউনিট ব্যবহার করা হয় তখন ১৫টির বেশি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ একাই খরচ করে।

আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে তখন একটি ঘর ঠান্ডা রাখার মতো এসির ইউনিট ছিল ১০০ কোটির বেশি। সে হিসাবে পৃথিবীতে প্রতি সাতজনের বিপরীতে প্রায় একটি এসি। যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের মধ্যেও এসির শীতলতা কল্পনা করতে পারেন না। 

এ নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ছোট ইউনিটের এসি থাকবে ৪৫০ কোটির বেশি। তার মানে বর্তমানের মোবাইল ফোনের মতো সর্বব্যাপী ভোক্তাপণ্য হয়ে উঠবে। 

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের এই বিশ্বব্যাপী আধিপত্য কিন্তু অনিবার্য ছিল না। এই মাত্র ১৯৯০ সালেও বিশ্বে মাত্র ৪০ কোটি এয়ার কন্ডিশনার ইউনিট ছিল, যার আবার বেশিরভাগই ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। মূলত শিল্পে ব্যবহারের জন্য নির্মিত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র শেষ পর্যন্ত মানুষের অপরিহার্য, আধুনিকতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। এরপরই এয়ার কন্ডিশনার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। 

তবে মানতে হবে যে, সমুদ্রে সংযোগ খাল খনন বা অটোমোবাইলের মতো শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এমন একটি প্রযুক্তি যা বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। স্বাধীন সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ এই যন্ত্রকে ‘ইতিহাসের একটি বাঁকবদলকারী উদ্ভাবন’ বলে অভিহিত করেছেন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের দ্রুত আধুনিকায়নে এটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। 

১৯৯৮ সালে আমেরিকান শিক্ষাবিদ রিচার্ড নাথান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, ‘নাগরিক অধিকার বিপ্লব’-এর সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গত তিন দশকে আমেরিকার জনসংখ্যা এবং রাজনীতি পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় অনুঘটক ছিল। এটি ব্যাপক আবাসিক উন্নয়নকে সম্ভব করে তুলেছে। বিশেষ করে গরম এবং খুব রক্ষণশীল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পরিবর্তনের জন্য এর অবদান অনস্বীকার্য। 

অথচ মাত্র এক শতক আগেও খুব কম মানুষই এমন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন। যদিও উদ্ভাবনের প্রথম ৫০ বছর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মূলত কারখানা এবং মুষ্টিমেয় পাবলিক স্পেসে সীমাবদ্ধ ছিল। 

এসির প্রাথমিক উদ্ভাবনের কৃতিত্ব দেওয়া হয় উইলিস ক্যারিয়ারকে। তিনি একজন আমেরিকান প্রকৌশলী। একটি হিটিং এবং ভেন্টিলেশন কোম্পানি তাঁকে ১৯০২ সালে ব্রুকলিনের একটি মুদ্রণ কারখানায় আর্দ্রতা কমানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। আমাদের ধারণা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের উদ্দেশ্য হলো তাপমাত্রা কমানো, কিন্তু তখনকার প্রকৌশলীরা শুধু তাপমাত্রা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না। তাঁরা শিল্প উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে স্থিতিশীল সম্ভাব্য পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যেমন, একটি মুদ্রণ কারখানায় বেশি আর্দ্রতা থাকলে কাগজের শিট কুঁচকে যেতে পারে, এতে কালি ঝাপসা বা লেপটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

ক্যারিয়ার বুঝতে পেরেছিলেন যে কারখানার বাতাস থেকে তাপ অপসারণ করলে আর্দ্রতা হ্রাস পাবে। তাই তিনি একটি জ্যাক-আপ ফ্রিজ তৈরি করার জন্য নতুন রেফ্রিজারেশন শিল্প থেকে প্রযুক্তি ধার করেন। এরপরে এখনকার মতো, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটগুলো যেমন গরম বাতাস টেনে নেয় এবং একটি শীতল পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয়, ফলে ঠান্ডা এবং শুষ্ক বাতাসে ঘর ভরে যায়—এমন একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন ক্যারিয়ার। 

উদ্ভাবনটি বহু শিল্পের বেশ উপকারে আসে। টেক্সটাইল, গোলাবারুদ এবং ওষুধ কারখানাগুলো এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের প্রথম দিকের গ্রাহক হয়। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসর নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে এসি লাগানো হয় ১৯২৮ সালে। পরের বছর এসি পায় হোয়াইট হাউস এবং এরপর সিনেট। 

১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে, যখন এসি মানুষের বাসাবাড়িতে প্রবেশ করতে শুরু করে, তখন এয়ার কন্ডিশনার সত্যি সত্যিই আমেরিকা জয় করে ফেলেছে। তবে ইতিহাসবিদ গেইল কুপারের মতে, জনসাধারণকে এটা বোঝানোর জন্য এসি শিল্পকে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে যে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কোনো বিলাসিতা নয় বরং প্রয়োজন। 

শুরুর দিনগুলোর কিছু বিবরণও তুলে ধরেছেন কুপার। তিনি উল্লেখ করেছেন, তখনকার ম্যাগাজিনগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বাজারে ফ্লপ করেছে বর্ণনা করেছে। ফরচুন ম্যাগাজিন তো এটিকে ‘১৯৩০-এর দশকের একটি প্রধান জনহতাশা' বলে অভিহিত করেছে। 

১৯৩৮ সাল নাগাদ আমেরিকার প্রতি ৪০০টি বাড়ির মধ্যে মাত্র একটিতে এসি ছিল। আর আজ এটি ১০-এর মধ্যে নয়টির কাছাকাছি চলে এসেছে। 

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের এই উত্থান কিন্তু ভোক্তা চাহিদার আকস্মিক বিস্ফোরণের ফলে ঘটেনি। বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আবাসন শিল্পের উল্লম্ফন এসি শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়। ১৯৪৬ এবং ১৯৬৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ কোটি ১০ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়। সেই ঘরগুলোতে এসি রাখা একটা আভিজাত্যের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। স্থপতি এবং নির্মাণ সংস্থাগুলোকে তখন জলবায়ু নিয়ে অতো ভাবতে হয়নি। তারা ডেলাওয়্যারের মতো নিউ মেক্সিকোতেও একই শৈলীর বাড়ি বিক্রি করতে পারছিল। 

১৯৩৯ সালে নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় নিজের উদ্ভাবিত এসির প্রদর্শনী করেন উইলিস ক্যারিয়ারতখনকার প্রচলিত মানসিকতা ছিল, গরম আবহাওয়া, সস্তা নির্মাণ সামগ্রী, বাজে নকশা বা দুর্বল নগর পরিকল্পনার কারণে সৃষ্ট যে কোনও সমস্যাই উতরে যাওয়া যাবে এক এসি দিয়ে! আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস ১৯৭৩ সালে লিখেছিল, বেশি এসি ব্যবহার করেই সব দুর্বলতা ঢাকা যাবে এমন একটা মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। ইতিহাসবিদ কুপার যেমন লিখেছেন, ‘স্থপতি, নির্মাণকারী এবং ব্যাংকাররা প্রথমে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। সাধারণ ভোক্তাদের ব্যাপারটা তখন এমন ছিল যে, তারা মুখ ফুটে চাইলেই হাতের নাগালে চলে আসবে!’

এসির এই উত্থানের সঙ্গে সমানভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের গ্রিডে নতুন নতুন বাসাবাড়ি যুক্ত করে আয় বাড়াচ্ছিল। তবে বিশ শতকের গোড়ার দিকে তারা এই নতুন গ্রাহকদের আরও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার উপায় খুঁজছিল। এই প্রক্রিয়াটি তখন ‘লোড বিল্ডিং’ নামে পরিচিত ছিল। কারণ বিদ্যুতের খরচ তখন কম ছিল। তাই আয় বাড়াতে বেশি ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল কোম্পানিগুলো।  

ভার্জিনিয়া টেকের প্রযুক্তির ইতিহাসবিদ রিচার্ড হারশ বলেন, গ্রাহকেরা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্প্রসারণ এবং নির্মাণ চালিয়ে যাওয়া যাবে—এই ছিল কোম্পানিগুলোর লক্ষ্য। 

কোম্পানিগুলো দেখল, গ্রিডে উল্লেখযোগ্য লোড বাড়ায় এসি। ১৯৩৫ সালের প্রথম দিকে, কমনওয়েলথ এডিসন, আধুনিক কন এডিসনের পূর্বসূরী, বছর শেষের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, এয়ার কন্ডিশনারের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বছরে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এতে। 

একই বছর শিল্প বাণিজ্য পত্রিকা ইলেকট্রিক লাইট অ্যান্ড পাওয়ারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বড় শহরগুলোর সরবরাহ কোম্পানিগুলো এখন শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা নিজেদের লাভের জন্যই এটা করছে। সমস্ত বিদ্যুৎ কোম্পানিকে এক্ষেত্রে খুব সক্রিয় হওয়া উচিত। 

১৯৫০-এর দশকে, সেই কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ এসে যায়। বৈদ্যুতিক ইউটিলিটিগুলো এয়ার কন্ডিশনারের পক্ষে প্রচার-প্রচারণার জন্য প্রিন্ট, রেডিও এবং সিনেমায় বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। সেই সঙ্গে এসি উৎপাদনকারী এবং বিক্রয় ও বিক্রয় পরবর্তী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরাসরি অর্থায়ন এবং ছাড়ের অফার দিতে শুরু করে। ১৯৫৭ সালে কমনওয়েলথ এডিসন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, প্রথমবারের মতো, সর্বোচ্চ বিদ্যুতের ব্যবহার হয়েছে গ্রীষ্মকালে। মানুষ যখন এসি চালু রেখেছে তখনই সবচেয়ে বেশি লোড পড়েছে। অথচ আগে শীতকালে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করতো মানুষ, কারণ তারা রুম হিটার ব্যবহার করতো। ১৯৭০ সালের মধ্যে, ৩৫ শতাংশ আমেরিকান বাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঢুকে পড়ে। যা তিন দশক আগের সংখ্যার ২০০ গুণেরও বেশি! 

একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। কাচঘেরা আকাশচুম্বি ভবন বা অল-গ্লাস স্কাইস্ক্র্যাপার, এমন একটি বিল্ডিং শৈলী যেটির দুর্বল প্রতিফলন বৈশিষ্ট্য এবং বায়ুচলাচলের যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে এসি অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সেন্ট্রাল এসি ও ছোট ইউনিটের জন্য ভবনের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎ এসির জন্য সংরক্ষিত রাখতে হয়। এই ধরনের ভবনই যুক্তরাষ্ট্রে চল হয়ে ওঠে। 

১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক ভবনে প্রতি বর্গফুট হিসাবে বিদ্যুতের ব্যবহার দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ে। নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৯৭৪ সালে। তখনকার সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম এসি ইউনিট ছিল সেখানে। ঋতুভেদে শীতল ও গরম করার জন্য নয়টি বিশাল ইঞ্জিন এবং ২৭০ কিলোমিটারেরও বেশি পাইপিং ব্যবস্থা ছিল। সেই সময়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এই এসি ব্যবস্থা প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার জনসংখ্যার শহর শেনেক্টাডির সমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। 

যুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিবাদের ঢেউয়ে নিরাপদে চড়ে বসে এসি শিল্প, নির্মাণ কোম্পানি এবং বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো। এই কোম্পানিগুলোর প্রচার প্রচারণার কারণেই এসি আমেরিকান জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে ওঠে। ‘আমাদের বাচ্চারা এসি সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে’, ১৯৬৮ সালে একটি এসি কোম্পানির নির্বাহী টাইম ম্যাগাজিনকে এমন কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এসি নেই এমন বাড়িতে বসবাস করার কথা নিশ্চয়ই ভাববেন না।’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নিজের অজান্তেই এসি ভালোবাসতে শুরু করে। দ্রুত এসির ব্যবহার বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালের মধ্যে ৮৭ শতাংশ মার্কিন পরিবারে পৌঁছে যায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। 

যুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে নতুন নতুন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হতে থাকে। তখন নীতি নির্ধারকদের বিশ্বাস ছিল, এসব অবকাঠামো প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করবে কিন্তু এতে ভবিষ্যতে গুরুতর কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। ১৯৯২ সালে এনার্জি অ্যান্ড বিল্ডিংস সাময়িকীতে ব্রিটিশ রক্ষণশীল একাডেমিক গুইন প্রিন্সের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি যুক্তি দেন, এসির প্রতি এই আমেরিকান আসক্তি তাদের গভীর অবক্ষয়েরই প্রতীক! প্রিন্স আমেরিকার এই প্রবণতার বিষয়ে বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা ঠান্ডার মধ্যে থাকব, আমাদের প্লেট উপচে পড়বে এবং গ্যাস হবে প্রতি গ্যালন ১ ডলার, আমেন!’ 

যে সময়ে এয়ার কন্ডিশনার আমেরিকার শহরগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছিল, ওই সময় কিন্তু বাইরের বিশ্বে এর প্রভাব তেমন পড়েনি। অবশ্য জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুর শুরুর দিকের গ্রাহক ছিল। যাইহোক, এয়ার কন্ডিশনার শেষ পর্যন্ত বিশ্বের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। 

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এসির অগ্রযাত্রা যুদ্ধোত্তর নির্মাণ খাতের উল্লম্ফন এবং মানুষের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে এই তাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সাম্প্রতিক সম্প্রসারণ বিশ্বায়নের গতিপথ অনুসরণ করছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলো নির্মাণ এবং জীবনযাপন পদ্ধতিতে আরও বেশি আমেরিকান হয়ে উঠতে চেয়েছে। তারাও ব্যাপকভাবে এসির ব্যবহার শুরু করেছে। 

১৯৯০-এর দশকে, এশিয়ার অনেক দেশ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত হয়, যা অভূতপূর্ব নগর নির্মাণের সূচনা করে। গত তিন দশকে, ভারতের প্রায় ২০ কোটি মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে গেছে; চীনে এই সংখ্যা ৫০ কোটিরও বেশি। নয়াদিল্লি থেকে সাংহাই পর্যন্ত ভারী এসি যুক্ত অফিস ভবন, হোটেল এবং শপিং মল গড়ে ওঠে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। এই ভবনগুলোকে নিউইয়র্ক বা লন্ডনের থেকে আলাদা করা যায় না। তাছাড়া প্রায়শই একই নির্মাতা এবং স্থপতিরাই থাকেন এসব ভবন নির্মাণের পেছনে। 

অশোক লাল নামে একজন ভারতীয় স্থপতি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা বলেন, উঁচু উঁচু ভবনগুলোর জন্য বাইরের বিশ্ব থেকে যখন টাকা আসতো তখন প্রায়শই একজন আমেরিকান বা ইউরোপীয় ডিজাইনার বা পরামর্শক সংস্থাও সঙ্গে চলে আসতো। ফলে ভবনের সঙ্গে প্যাকেজ হিসেবে আসে এসি! এখানকার লোকেরা ভেবেছিল এর মানেই অগ্রগতি!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১২
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।

চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। সেখানে কর্মীরা চাকরি খোঁজেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মীদের বাছাই করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মে এবার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ।

ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীনেশ বৈরাগী। ‘পূর্ণকালীন’ চাকরির অফার দিয়ে নারীবন্ধু খুঁজেছেন লিংকডইনে। ওই বিজ্ঞাপনের বিবরণে সম্ভাব্য ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা গুণাবলির কথাও উল্লেখ করেছেন দীনেশ।

টেক মাহিন্দ্রার সাবেক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট দীনেশ চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘গুরগাঁওয়ে পূর্ণকালীন গার্লফ্রেন্ডের পদ খালি আছে। সরাসরি দেখা করা এবং দূর থেকে দায়িত্ব পালন দুটোই করতে হবে।’

প্রযুক্তিখাতে অভিজ্ঞ এই যুবক চাকরির বিজ্ঞাপনে আরও লিখেছেন, ‘এই ভূমিকায় শক্তিশালী আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা, অর্থবহ কথোপকথনে অংশ নেওয়া, সঙ্গ দেওয়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম বা শখে যুক্ত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সক্রিয় যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এই ভূমিকাটির ভিত্তি হবে। পাশাপাশি যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইতিবাচক ও সহায়ক সম্পর্কের পরিবেশ গড়ে তোলাও এর অন্তর্ভুক্ত।’

দীনেশ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আবেগগত বুদ্ধিমত্তা, শোনার সক্ষমতা, সহমর্মিতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, এমন একজনকে তিনি খুঁজছেন, যাঁর মধ্যে রসবোধ, দয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকবে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও যৌথ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। শখ, কার্যক্রমে আগ্রহ বা একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক সমর্থন ও বিকাশে আগ্রহী হতে হবে।’

লিংকডইনে দেওয়া এই চাকরি খোঁজার মতো করে গার্লফ্রেন্ড খোঁজার পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রসিকতার বন্যা বইয়ে দেন নেটিজেনরা। অনেকেই এই অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি পারিশ্রমিক বা বেতন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চান।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওহ, এখন সব পরিষ্কার! তাহলে আমার প্রাক্তন আমার সঙ্গে ছয় মাস গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেছিল, এরপর অন্য কোথাও ফুলটাইম গার্লফ্রেন্ডের চাকরি পেয়ে চলে গেছে।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যদি আসলেই ভারতীয় হন, তাহলে যেকোনো অ্যাপই ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে ফেলবেন।’

তৃতীয় একজন লিখেছেন, ‘পদের বিবরণ দেখে বেশ চমকপ্রদই লাগছে, কিন্তু স্যালারি কত?’

একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কি লিংকডইনের পোস্টের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছেন?’ উত্তরে দীনেশ বলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি প্রকৃত শূন্যপদ। প্রোফাইলটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি চাকরির বিবরণ দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া কেউ যদি আগ্রহী ও যোগ্য হন, তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

শেষ আপডেট অনুযায়ী দীনেশ জানিয়েছেন, এই ‘চাকরির’ জন্য এরইমধ্যে ২৬ জন আবেদন করেছেন। এখন নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টার বেশি সময় টয়লেটে কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে ১৪ বার টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তাঁর সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতি নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি-এর পদে কাজ করার জন্য তাঁকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচার পর্বের পর আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং লি-এর কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তাঁর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করান।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালেও জিয়াংসু প্রদেশের আরেক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল এক দিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যর্থ ব্যবসায়ী ফুড ডেলিভারি করে লাখপতি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১১
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

সাধারণত অস্থায়ী পেশা হিসেবে ফুড ডেলিভারির চাকরি অনেকেই করেন। কেউ আবার মূল চাকরির ফাঁকে ফুড ডেলিভারি দেন অতিরিক্ত আয়ের জন্য। কিন্তু এ কাজ করেও যে লাখ টাকার মালিক হওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিলেন চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং নামের এক তরুণ।

ফুড ডেলিভারি করতে করতে মাত্র পাঁচ বছরে ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান সঞ্চয় করেছেন তিনি, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান। প্রতিদিন গড়ে ১৪ ঘণ্টা কাজ আর কঠোর মিতব্যয়িতাই তাঁকে লাখপতি বানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

ব্যর্থ ব্যবসা, তারপর নতুন শুরু

ঝাংয়ের বাড়ি ফুজিয়ান প্রদেশের ঝাংঝো শহরে। ২০১৯ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে তিনি একটি নাশতার দোকান চালু করেন। শুরুতে কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসার অবস্থা হয়ে যায় টালমাটাল। লোকসান দিন দিন বাড়তে থাকে, ক্রেতা কমে যায় এবং প্রতিদিনের খরচ টানতে গিয়ে তিনি চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত দোকানটি বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং তাঁর কাঁধে চাপে প্রায় ৫০ হাজার ইউয়ানের ঋণ।

চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন
চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন

এ ব্যর্থতা তরুণ ঝাংকে মানসিকভাবে দমিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি পরিবারকে বিষয়টি বুঝতে দিতে চাননি। তাই সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে একাই রওনা দেন সাংহাইয়ের পথে। বড় শহরে গিয়ে নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তবুও লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শোধ করা, আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো মূলধন জোগাড় করা এবং নিজের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করা।

১৪ ঘণ্টার কর্মদিবস এবং অবিশ্বাস্য পরিশ্রম

সাংহাইয়ের মিনহাং জেলায় উঝং রোডের একটি ডেলিভারি স্টেশনে তিনি কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টা ৪০ থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বৃষ্টি, ঠান্ডা কিংবা গরম—সব পরিস্থিতিতেই তিনি মাঠে থাকেন ডেলিভারির কাজে। সবার আগে অর্ডার ধরতে এবং দ্রুত ডেলিভারি দিতে তিনি সব সময় ছুটে চলেন। ডেলিভারি স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ান বলেন, ‘ছেলেটা খুব কম কথা বলে, কিন্তু কাজ করে অবিশ্বাস্য পরিশ্রম দিয়ে। প্রতিদিনই দেখি সে সময় বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে।’

কাজের দক্ষতার কারণে সহকর্মীরা তাঁকে ডাকেন ‘অর্ডারের রাজা’ নামে। টানা দীর্ঘ শিফটের পরও তিনি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুম নিশ্চিত করেন, যাতে পরদিন আবার পুরো শক্তিতে কাজ করতে পারেন।

কঠোর মিতব্যয়িতা

ঝাংয়ের সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় রহস্য তাঁর মিতব্যয়ী জীবনযাপন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি কোনো খরচ করেন না। বাইরে খাওয়া, বিনোদন, ভ্রমণ—কোনো কিছুতেই ব্যয় করেন না তিনি। এমনকি চন্দ্র নববর্ষেও তিনি বাড়ি যান না। তখন শহরে থেকে উচ্চমূল্যের অর্ডার ডেলিভারি করেন। এই কঠোর জীবনযাপন ও পরিশ্রম মিলিয়ে পাঁচ বছরে তাঁর মোট আয় দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ ইউয়ান। প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে সঞ্চয় হয় ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান।

ঝাং জানান, তাঁর পরিবার এখনো জানে না যে তিনি ঋণ শোধ করে বড় অঙ্কের সঞ্চয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘একবার ব্যর্থ হয়েছি বলে থেমে থাকব না। ভবিষ্যতে আবার ব্যবসা শুরু করার পুঁজি হিসেবেই এ টাকা জমাচ্ছি।’

চীনের তরুণদের নতুন পেশা হিসেবে ডেলিভারি

অর্থনৈতিক ধাক্কা ও চাকরির বাজারের পরিবর্তনের মধ্যে চীনে ডেলিভারি পেশা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ঝাওপিনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশটিতে ডেলিভারি কর্মীদের মধ্যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীর হার দুই বছরে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। আয়ও অনেক অফিসকর্মীর চেয়ে বেশি। বেইজিং বা সাংহাইয়ের মতো বড় শহরে যেখানে সাধারণ একজন অফিসকর্মী মাসে গড়ে আয় করেন ৬ হাজার ইউয়ান, সেখানে ডেলিভারি ড্রাইভারদের গড় আয় মাসে ৭ হাজার ৩৫০ ইউয়ান পর্যন্ত। ব্যস্ত দিনে ঝাংয়ের মতো পরিশ্রমী ডেলিভারি কর্মীরা দিনে হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করতে পারেন।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমানের ডানায় আটকে গেল প্যারাস্যুট, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন স্কাইডাইভার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৯
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঘটে বিস্ময়কর সেই দুর্ঘটনাটি। সেদিন প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন এক স্কাইডাইভার। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডের টুলি এয়ারপোর্টের আকাশে ১৭ জন প্যারাস্যুটার একটি ‘সিক্সটিন-ওয়ে ফরমেশন জাম্পে’ অংশ নিচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমজন যখন বিমান থেকে বের হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর রিজার্ভ প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেলটি বিমানের উইং ফ্ল্যাপে আটকে যায়। এর ফলে মুহূর্তের মধ্যেই রিজার্ভ প্যারাস্যুট খুলে যায় এবং বাতাসের হঠাৎ টানে পেছনের দিকে ছিটকে গিয়ে বিমানের ডানায় ধাক্কা খান এবং আটকে যান ওই স্কাইডাইভার। এতে বিমানের ডানায় ও স্ট্যাবিলাইজারে গুরুতর ক্ষতি হয়।

প্যারাস্যুটের দড়ি স্ট্যাবিলাইজারের চারপাশে পেঁচিয়ে যাওয়ায় স্কাইডাইভার ঝুলন্ত অবস্থায় অচল হয়ে পড়েন। অন্য প্যারাস্যুটারেরা জাম্প সম্পন্ন করলেও দুজন দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছিলেন। ঝুলে থাকা প্যারাস্যুটার জীবন বাঁচাতে তাঁর হুক নাইফ বের করে রিজার্ভ প্যারাস্যুটের ১১টি লাইন কেটে নিজেকে মুক্ত করেন। এরপর তিনি মূল প্যারাস্যুট খুলতে সক্ষম হন, যদিও রিজার্ভ প্যারাস্যুটের কিছু লাইন তখনো তাঁকে জড়িয়ে ছিল।

এদিকে পাইলট হঠাৎ বিমানটিকে ওপরের দিকে ঢলে যেতে এবং গতি কমে যেতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন বিমানটিতে ত্রুটি হয়েছে। পরে তাঁকে জানানো হয়, একজন স্কাইডাইভার বিমানের পেছনে ডানায় ঝুলে আছেন। এ অবস্থায় পাইলট জরুরি ‘মে ডে’ বার্তা পাঠান এবং প্রয়োজনে নিজেও বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

অবশেষে ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় এসে পাইলট বুঝতে পারেন, বিমানটি তাঁর নিয়ন্ত্রণেই আছে। ছোট-খাটো আঘাত নিয়ে নিরাপদেই অবতরণ করেন ওই স্কাইডাইভার এবং পাইলটও ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনার পর স্কাইডাইভারদের প্রতি এক সতর্কবার্তায় ‘অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরো’ বলেছে—বিমানের দরজার কাছে প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেল সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে এবং জরুরি অবস্থার জন্য হুক নাইফ অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ব্যুরো আরও জানিয়েছে, বিমানের ওজন ও ভারসাম্য নির্ণয় স্কাইডাইভিং অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতীতে এসব কারণে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত