এমন বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলতে পারি যারা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি রাশিয়াকেও সমর্থন করে। যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোকে গাজার মতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার যেমন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, তেমনি ক্রেমলিনও ‘বৃহত্তর রাশিয়া’ গড়ার পরিকল্পনা করছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ীয় হওয়ার পর নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজ সেই ভোটারদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন যারা, একই সঙ্গে তাঁকে ও ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কী কারণে তাঁরা এমন আপাত স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জবাবে তিনি শুনেছেন, তাঁকে ও ট্রাম্পকে তাঁদের কাছে বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে। যেখানে কমলা হ্যারিসকে চতুর মনে হয়েছে।
(ভোটারদের মনোভাব বুঝতে) ওকাসিও কর্তেজের এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ ছিল। একইভাবে, আমরা এমন বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলতে পারি যারা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি রাশিয়াকেও সমর্থন করে। যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোকে গাজার মতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার যেমন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, তেমনি ক্রেমলিনও ‘বৃহত্তর রাশিয়া’ গড়ার পরিকল্পনা করছে। তাই, রাশিয়ার এই নির্মূল প্রচেষ্টা ইউক্রেনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে ১৯০ মাইল পাল্লার মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পরপর ক্রেমলিন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্রের যেকোনো ব্যবহার তাদের নতুন পরমাণু নীতির আওতায় পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। তা সত্ত্বেও পরদিনই ইউক্রেন রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ছয়টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি—পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে, কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে রাশিয়ার নতুন পরমাণু নীতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার এখন তাদের আছে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে বিপজ্জনক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তাহলে কি ইউক্রেন সত্যিই সীমা অতিক্রম করেছে? এই সংঘাতের সীমিত ভারসাম্য কি নষ্ট হয়ে গেছে?
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে মূলত কুরস্ক অঞ্চলে হামলার অনুমতি দিয়েছে। এখান থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছি শুধু তাদের (রাশিয়ার) তির (ক্ষেপণাস্ত্র) আটকানোর জন্য নয়, তীরন্দাজকেও (ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা) আঘাত করার সক্ষমতা দেওয়ার জন্য।’
এ ছাড়া মনে রাখতে হবে, রাশিয়া কয়েক দিন আগেই ইউক্রেনের ওপর নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। শীত আসার ঠিক আগে বেসামরিক জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
পরিস্থিতি যেমন জঘন্য, তেমনই অদ্ভুত! রাশিয়া তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে দখলদার যুদ্ধ শুরু করেছে। অথচ, এখন নিজ ভূখণ্ডকে যুদ্ধের আওতামুক্ত রাখতে চায় এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই সংঘাত ‘বিস্তৃত’ করার অভিযোগ তুলছে। যদি রাশিয়া তার নতুন পারমাণবিক নীতিকে সিরিয়াসলি নেয়, তবে আমাদেরও সমান গুরুত্বপূর্ণ পাল্টা নীতি থাকা উচিত: ‘কোনো স্বাধীন দেশ যদি একটি পারমাণবিক পরাশক্তির অপারমাণবিক আক্রমণের শিকার হয়, তবে ওই দেশের মিত্রদের অধিকার ও দায়িত্ব আছে দেশটিকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করার, যাতে দেশটি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।’
প্রায়ই বলা হয়, পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও স্তালিনবাদে ফিরতে চান। তবে এটি সঠিক নয়, বরং তাঁর শাসন টিকে আছে ১৯১৭ সালের আগের সাম্রাজ্যবাদী যুগের স্বপ্নে, যখন জার শাসিত রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে শুধু পোল্যান্ড নয়, ফিনল্যান্ডও ছিল। পুতিনের এই নব্য জারবাদ কেবল কল্পনা নাকি বাস্তবায়নযোগ্য, তা সময়ই বলবে। উদীয়মান বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে, শক্তিশালী সাম্রাজ্যের উত্থান এবং তাদের নিজ নিজ প্রভাব বলয়ের বিস্তার অস্বাভাবিক নয়।
পুতিন ২০২২ সালের জুনে সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে বলেছিলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে সার্বভৌমত্ব আংশিক বা খণ্ডিত হতে পারে না।’ তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় পরিচয় বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে একই সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক, আর্থিক, পেশাগত এবং প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা নির্ধারণ করে এমন সবকিছু শক্তিশালী করাও সমানভাবে জরুরি।’
(পুতিনের মনোভাবে) স্পষ্ট, একমাত্র নতুন সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া—ইউক্রেন, বেলারুশ বা ফিনল্যান্ড নয়—এই সার্বভৌমত্বের পরিপূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠেছে—যেদিন পুতিন নতুন পারমাণবিক নীতি ঘোষণা করলেন, সেদিনই বিবিসি জানিয়েছে, ‘ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণ অত্যন্ত গুরুতর মাত্রায় পৌঁছেছে। বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টে ভুগছে, শহর ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে। বিমান চলাচল ব্যাহত, স্কুল বন্ধ এবং নির্মাণকাজ স্থগিত।’ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
রাশিয়া যখন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে লিপ্ত এবং তাদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শন করছে, তখন শত শত কোটি মানুষের শ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের গণমাধ্যম রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারের খবরকে প্রথম পাতার ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে তুলে ধরছে, আর আমাদের ক্ষীণদৃষ্টির বামপন্থীরা ইউক্রেনের ‘বাড়তি প্রতিরক্ষা’ প্রচেষ্টাকে একটি বিপজ্জনক উসকানি হিসেবে দেখছে। অথচ আমাদের টিকে থাকার জন্য সত্যিকার হুমকিগুলো তাদের কাছে অতি সামান্য গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হচ্ছে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত দার্শনিক স্লাভয় জিজেকের নিবন্ধ
অনুবাদ: আব্দুর রহমান

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ীয় হওয়ার পর নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজ সেই ভোটারদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন যারা, একই সঙ্গে তাঁকে ও ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কী কারণে তাঁরা এমন আপাত স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জবাবে তিনি শুনেছেন, তাঁকে ও ট্রাম্পকে তাঁদের কাছে বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে। যেখানে কমলা হ্যারিসকে চতুর মনে হয়েছে।
(ভোটারদের মনোভাব বুঝতে) ওকাসিও কর্তেজের এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ ছিল। একইভাবে, আমরা এমন বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলতে পারি যারা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি রাশিয়াকেও সমর্থন করে। যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোকে গাজার মতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার যেমন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, তেমনি ক্রেমলিনও ‘বৃহত্তর রাশিয়া’ গড়ার পরিকল্পনা করছে। তাই, রাশিয়ার এই নির্মূল প্রচেষ্টা ইউক্রেনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে ১৯০ মাইল পাল্লার মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পরপর ক্রেমলিন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্রের যেকোনো ব্যবহার তাদের নতুন পরমাণু নীতির আওতায় পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। তা সত্ত্বেও পরদিনই ইউক্রেন রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ছয়টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি—পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে, কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে রাশিয়ার নতুন পরমাণু নীতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার এখন তাদের আছে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে বিপজ্জনক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তাহলে কি ইউক্রেন সত্যিই সীমা অতিক্রম করেছে? এই সংঘাতের সীমিত ভারসাম্য কি নষ্ট হয়ে গেছে?
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে মূলত কুরস্ক অঞ্চলে হামলার অনুমতি দিয়েছে। এখান থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছি শুধু তাদের (রাশিয়ার) তির (ক্ষেপণাস্ত্র) আটকানোর জন্য নয়, তীরন্দাজকেও (ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা) আঘাত করার সক্ষমতা দেওয়ার জন্য।’
এ ছাড়া মনে রাখতে হবে, রাশিয়া কয়েক দিন আগেই ইউক্রেনের ওপর নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। শীত আসার ঠিক আগে বেসামরিক জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
পরিস্থিতি যেমন জঘন্য, তেমনই অদ্ভুত! রাশিয়া তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে দখলদার যুদ্ধ শুরু করেছে। অথচ, এখন নিজ ভূখণ্ডকে যুদ্ধের আওতামুক্ত রাখতে চায় এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই সংঘাত ‘বিস্তৃত’ করার অভিযোগ তুলছে। যদি রাশিয়া তার নতুন পারমাণবিক নীতিকে সিরিয়াসলি নেয়, তবে আমাদেরও সমান গুরুত্বপূর্ণ পাল্টা নীতি থাকা উচিত: ‘কোনো স্বাধীন দেশ যদি একটি পারমাণবিক পরাশক্তির অপারমাণবিক আক্রমণের শিকার হয়, তবে ওই দেশের মিত্রদের অধিকার ও দায়িত্ব আছে দেশটিকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করার, যাতে দেশটি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।’
প্রায়ই বলা হয়, পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও স্তালিনবাদে ফিরতে চান। তবে এটি সঠিক নয়, বরং তাঁর শাসন টিকে আছে ১৯১৭ সালের আগের সাম্রাজ্যবাদী যুগের স্বপ্নে, যখন জার শাসিত রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে শুধু পোল্যান্ড নয়, ফিনল্যান্ডও ছিল। পুতিনের এই নব্য জারবাদ কেবল কল্পনা নাকি বাস্তবায়নযোগ্য, তা সময়ই বলবে। উদীয়মান বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে, শক্তিশালী সাম্রাজ্যের উত্থান এবং তাদের নিজ নিজ প্রভাব বলয়ের বিস্তার অস্বাভাবিক নয়।
পুতিন ২০২২ সালের জুনে সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে বলেছিলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে সার্বভৌমত্ব আংশিক বা খণ্ডিত হতে পারে না।’ তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় পরিচয় বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে একই সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক, আর্থিক, পেশাগত এবং প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা নির্ধারণ করে এমন সবকিছু শক্তিশালী করাও সমানভাবে জরুরি।’
(পুতিনের মনোভাবে) স্পষ্ট, একমাত্র নতুন সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া—ইউক্রেন, বেলারুশ বা ফিনল্যান্ড নয়—এই সার্বভৌমত্বের পরিপূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠেছে—যেদিন পুতিন নতুন পারমাণবিক নীতি ঘোষণা করলেন, সেদিনই বিবিসি জানিয়েছে, ‘ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণ অত্যন্ত গুরুতর মাত্রায় পৌঁছেছে। বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টে ভুগছে, শহর ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে। বিমান চলাচল ব্যাহত, স্কুল বন্ধ এবং নির্মাণকাজ স্থগিত।’ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
রাশিয়া যখন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে লিপ্ত এবং তাদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শন করছে, তখন শত শত কোটি মানুষের শ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের গণমাধ্যম রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারের খবরকে প্রথম পাতার ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে তুলে ধরছে, আর আমাদের ক্ষীণদৃষ্টির বামপন্থীরা ইউক্রেনের ‘বাড়তি প্রতিরক্ষা’ প্রচেষ্টাকে একটি বিপজ্জনক উসকানি হিসেবে দেখছে। অথচ আমাদের টিকে থাকার জন্য সত্যিকার হুমকিগুলো তাদের কাছে অতি সামান্য গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হচ্ছে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত দার্শনিক স্লাভয় জিজেকের নিবন্ধ
অনুবাদ: আব্দুর রহমান
এমন বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলতে পারি যারা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি রাশিয়াকেও সমর্থন করে। যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোকে গাজার মতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার যেমন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, তেমনি ক্রেমলিনও ‘বৃহত্তর রাশিয়া’ গড়ার পরিকল্পনা করছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ীয় হওয়ার পর নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজ সেই ভোটারদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন যারা, একই সঙ্গে তাঁকে ও ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কী কারণে তাঁরা এমন আপাত স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জবাবে তিনি শুনেছেন, তাঁকে ও ট্রাম্পকে তাঁদের কাছে বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে। যেখানে কমলা হ্যারিসকে চতুর মনে হয়েছে।
(ভোটারদের মনোভাব বুঝতে) ওকাসিও কর্তেজের এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ ছিল। একইভাবে, আমরা এমন বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলতে পারি যারা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি রাশিয়াকেও সমর্থন করে। যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোকে গাজার মতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার যেমন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, তেমনি ক্রেমলিনও ‘বৃহত্তর রাশিয়া’ গড়ার পরিকল্পনা করছে। তাই, রাশিয়ার এই নির্মূল প্রচেষ্টা ইউক্রেনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে ১৯০ মাইল পাল্লার মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পরপর ক্রেমলিন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্রের যেকোনো ব্যবহার তাদের নতুন পরমাণু নীতির আওতায় পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। তা সত্ত্বেও পরদিনই ইউক্রেন রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ছয়টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি—পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে, কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে রাশিয়ার নতুন পরমাণু নীতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার এখন তাদের আছে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে বিপজ্জনক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তাহলে কি ইউক্রেন সত্যিই সীমা অতিক্রম করেছে? এই সংঘাতের সীমিত ভারসাম্য কি নষ্ট হয়ে গেছে?
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে মূলত কুরস্ক অঞ্চলে হামলার অনুমতি দিয়েছে। এখান থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছি শুধু তাদের (রাশিয়ার) তির (ক্ষেপণাস্ত্র) আটকানোর জন্য নয়, তীরন্দাজকেও (ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা) আঘাত করার সক্ষমতা দেওয়ার জন্য।’
এ ছাড়া মনে রাখতে হবে, রাশিয়া কয়েক দিন আগেই ইউক্রেনের ওপর নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। শীত আসার ঠিক আগে বেসামরিক জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
পরিস্থিতি যেমন জঘন্য, তেমনই অদ্ভুত! রাশিয়া তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে দখলদার যুদ্ধ শুরু করেছে। অথচ, এখন নিজ ভূখণ্ডকে যুদ্ধের আওতামুক্ত রাখতে চায় এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই সংঘাত ‘বিস্তৃত’ করার অভিযোগ তুলছে। যদি রাশিয়া তার নতুন পারমাণবিক নীতিকে সিরিয়াসলি নেয়, তবে আমাদেরও সমান গুরুত্বপূর্ণ পাল্টা নীতি থাকা উচিত: ‘কোনো স্বাধীন দেশ যদি একটি পারমাণবিক পরাশক্তির অপারমাণবিক আক্রমণের শিকার হয়, তবে ওই দেশের মিত্রদের অধিকার ও দায়িত্ব আছে দেশটিকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করার, যাতে দেশটি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।’
প্রায়ই বলা হয়, পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও স্তালিনবাদে ফিরতে চান। তবে এটি সঠিক নয়, বরং তাঁর শাসন টিকে আছে ১৯১৭ সালের আগের সাম্রাজ্যবাদী যুগের স্বপ্নে, যখন জার শাসিত রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে শুধু পোল্যান্ড নয়, ফিনল্যান্ডও ছিল। পুতিনের এই নব্য জারবাদ কেবল কল্পনা নাকি বাস্তবায়নযোগ্য, তা সময়ই বলবে। উদীয়মান বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে, শক্তিশালী সাম্রাজ্যের উত্থান এবং তাদের নিজ নিজ প্রভাব বলয়ের বিস্তার অস্বাভাবিক নয়।
পুতিন ২০২২ সালের জুনে সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে বলেছিলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে সার্বভৌমত্ব আংশিক বা খণ্ডিত হতে পারে না।’ তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় পরিচয় বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে একই সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক, আর্থিক, পেশাগত এবং প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা নির্ধারণ করে এমন সবকিছু শক্তিশালী করাও সমানভাবে জরুরি।’
(পুতিনের মনোভাবে) স্পষ্ট, একমাত্র নতুন সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া—ইউক্রেন, বেলারুশ বা ফিনল্যান্ড নয়—এই সার্বভৌমত্বের পরিপূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠেছে—যেদিন পুতিন নতুন পারমাণবিক নীতি ঘোষণা করলেন, সেদিনই বিবিসি জানিয়েছে, ‘ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণ অত্যন্ত গুরুতর মাত্রায় পৌঁছেছে। বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টে ভুগছে, শহর ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে। বিমান চলাচল ব্যাহত, স্কুল বন্ধ এবং নির্মাণকাজ স্থগিত।’ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
রাশিয়া যখন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে লিপ্ত এবং তাদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শন করছে, তখন শত শত কোটি মানুষের শ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের গণমাধ্যম রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারের খবরকে প্রথম পাতার ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে তুলে ধরছে, আর আমাদের ক্ষীণদৃষ্টির বামপন্থীরা ইউক্রেনের ‘বাড়তি প্রতিরক্ষা’ প্রচেষ্টাকে একটি বিপজ্জনক উসকানি হিসেবে দেখছে। অথচ আমাদের টিকে থাকার জন্য সত্যিকার হুমকিগুলো তাদের কাছে অতি সামান্য গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হচ্ছে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত দার্শনিক স্লাভয় জিজেকের নিবন্ধ
অনুবাদ: আব্দুর রহমান

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ীয় হওয়ার পর নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজ সেই ভোটারদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন যারা, একই সঙ্গে তাঁকে ও ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কী কারণে তাঁরা এমন আপাত স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জবাবে তিনি শুনেছেন, তাঁকে ও ট্রাম্পকে তাঁদের কাছে বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে। যেখানে কমলা হ্যারিসকে চতুর মনে হয়েছে।
(ভোটারদের মনোভাব বুঝতে) ওকাসিও কর্তেজের এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ ছিল। একইভাবে, আমরা এমন বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলতে পারি যারা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি রাশিয়াকেও সমর্থন করে। যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোকে গাজার মতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার যেমন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, তেমনি ক্রেমলিনও ‘বৃহত্তর রাশিয়া’ গড়ার পরিকল্পনা করছে। তাই, রাশিয়ার এই নির্মূল প্রচেষ্টা ইউক্রেনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে ১৯০ মাইল পাল্লার মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পরপর ক্রেমলিন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্রের যেকোনো ব্যবহার তাদের নতুন পরমাণু নীতির আওতায় পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। তা সত্ত্বেও পরদিনই ইউক্রেন রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ছয়টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি—পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে, কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে রাশিয়ার নতুন পরমাণু নীতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার এখন তাদের আছে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে বিপজ্জনক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তাহলে কি ইউক্রেন সত্যিই সীমা অতিক্রম করেছে? এই সংঘাতের সীমিত ভারসাম্য কি নষ্ট হয়ে গেছে?
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে মূলত কুরস্ক অঞ্চলে হামলার অনুমতি দিয়েছে। এখান থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছি শুধু তাদের (রাশিয়ার) তির (ক্ষেপণাস্ত্র) আটকানোর জন্য নয়, তীরন্দাজকেও (ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা) আঘাত করার সক্ষমতা দেওয়ার জন্য।’
এ ছাড়া মনে রাখতে হবে, রাশিয়া কয়েক দিন আগেই ইউক্রেনের ওপর নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। শীত আসার ঠিক আগে বেসামরিক জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
পরিস্থিতি যেমন জঘন্য, তেমনই অদ্ভুত! রাশিয়া তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে দখলদার যুদ্ধ শুরু করেছে। অথচ, এখন নিজ ভূখণ্ডকে যুদ্ধের আওতামুক্ত রাখতে চায় এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই সংঘাত ‘বিস্তৃত’ করার অভিযোগ তুলছে। যদি রাশিয়া তার নতুন পারমাণবিক নীতিকে সিরিয়াসলি নেয়, তবে আমাদেরও সমান গুরুত্বপূর্ণ পাল্টা নীতি থাকা উচিত: ‘কোনো স্বাধীন দেশ যদি একটি পারমাণবিক পরাশক্তির অপারমাণবিক আক্রমণের শিকার হয়, তবে ওই দেশের মিত্রদের অধিকার ও দায়িত্ব আছে দেশটিকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করার, যাতে দেশটি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।’
প্রায়ই বলা হয়, পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও স্তালিনবাদে ফিরতে চান। তবে এটি সঠিক নয়, বরং তাঁর শাসন টিকে আছে ১৯১৭ সালের আগের সাম্রাজ্যবাদী যুগের স্বপ্নে, যখন জার শাসিত রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে শুধু পোল্যান্ড নয়, ফিনল্যান্ডও ছিল। পুতিনের এই নব্য জারবাদ কেবল কল্পনা নাকি বাস্তবায়নযোগ্য, তা সময়ই বলবে। উদীয়মান বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে, শক্তিশালী সাম্রাজ্যের উত্থান এবং তাদের নিজ নিজ প্রভাব বলয়ের বিস্তার অস্বাভাবিক নয়।
পুতিন ২০২২ সালের জুনে সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে বলেছিলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে সার্বভৌমত্ব আংশিক বা খণ্ডিত হতে পারে না।’ তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় পরিচয় বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে একই সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক, আর্থিক, পেশাগত এবং প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা নির্ধারণ করে এমন সবকিছু শক্তিশালী করাও সমানভাবে জরুরি।’
(পুতিনের মনোভাবে) স্পষ্ট, একমাত্র নতুন সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া—ইউক্রেন, বেলারুশ বা ফিনল্যান্ড নয়—এই সার্বভৌমত্বের পরিপূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠেছে—যেদিন পুতিন নতুন পারমাণবিক নীতি ঘোষণা করলেন, সেদিনই বিবিসি জানিয়েছে, ‘ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণ অত্যন্ত গুরুতর মাত্রায় পৌঁছেছে। বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টে ভুগছে, শহর ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে। বিমান চলাচল ব্যাহত, স্কুল বন্ধ এবং নির্মাণকাজ স্থগিত।’ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
রাশিয়া যখন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে লিপ্ত এবং তাদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শন করছে, তখন শত শত কোটি মানুষের শ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের গণমাধ্যম রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারের খবরকে প্রথম পাতার ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে তুলে ধরছে, আর আমাদের ক্ষীণদৃষ্টির বামপন্থীরা ইউক্রেনের ‘বাড়তি প্রতিরক্ষা’ প্রচেষ্টাকে একটি বিপজ্জনক উসকানি হিসেবে দেখছে। অথচ আমাদের টিকে থাকার জন্য সত্যিকার হুমকিগুলো তাদের কাছে অতি সামান্য গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হচ্ছে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত দার্শনিক স্লাভয় জিজেকের নিবন্ধ
অনুবাদ: আব্দুর রহমান

মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া ভূখণ্ডটি চিকেন’স নেক নামেও পরিচিত। এই করিডর দিয়েই মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য—অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরা।
৭ ঘণ্টা আগে
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
১ দিন আগে
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।
২ দিন আগে
পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
২ দিন আগেডি ডব্লিউর প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির অন্যতম সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে পরিচিত ভারতের শিলিগুড়ি করিডর। মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া ভূখণ্ডটি চিকেন’স নেক নামেও পরিচিত। এই করিডর দিয়েই মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য—অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরা। একদিকে নেপাল-ভুটান, আরেক দিকে বাংলাদেশ ও চীন ঘেরা এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে ভারতের কৌশলগত দুর্বলতার কেন্দ্রবিন্দু।
সম্প্রতি একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সেনাবাহিনী শিলিগুড়ি করিডরের চারপাশে তিনটি নতুন পূর্ণাঙ্গ গ্যারিসন (সক্রিয় সেনাঘাঁটি) স্থাপন করেছে এবং সীমান্ত এলাকায় বড় ধরনের সেনাসমাবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে।
ডি ডব্লিউ বাংলার সীমান্তবিষয়ক প্রতিবেদক স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে ভারতীয় সেনা বা সরকারি সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও বিস্তৃত বাহিনী মোতায়েন, নতুন স্থাপনা ও টহল বৃদ্ধি স্পষ্ট চোখে পড়ছে।
এই বাড়তি সামরিক উপস্থিতি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইতিহাসের অন্যতম নিম্নতম পর্যায়ে নেমে এসেছে।
এর মধ্যে আজ সোমবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন তিনি।
রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে আবারও চিঠি দেবে বাংলাদেশ সরকার।
তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ‘প্রত্যর্পণ চুক্তি’ কার্যকর করার প্রস্তুতি দেখা গেলেও ভারতের আনুষ্ঠানিক অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। এই বিষয়ও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে তুলনামূলক স্থিতিশীল রেখেছিলেন। তবে তাঁর ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং তারপরের ঘটনাবলি দুই দেশের সম্পর্কে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে চলছে। এই সরকার ভারতকে আগের মতো ঘনিষ্ঠভাবে দেখছে না—এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
নয়াদিল্লির থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রধান হর্ষ ভি. পন্ত ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘শিলিগুড়ি করিডর ভারতের একটি কৌশলগত দুর্বলতা, যাকে সুরক্ষিত রাখা অপরিহার্য।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বাড়তে থাকা ভারতবিরোধী মনোভাব এবং ড. ইউনূস সরকারের ভারতবিরোধী অবস্থানের ইঙ্গিত—উভয়ই নয়াদিল্লিকে সতর্ক করেছে।
নতুন গ্যারিসন স্থাপনের খবরের পাশাপাশি, ভারতীয় বিমানবাহিনী ৯ নভেম্বর আসামে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এয়ার শো প্রদর্শন করে। এরপর ১৩ থেকে ২০ নভেম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সাত দিনব্যাপী বড়সড় মহড়া চালায়।
এই সামরিক কর্মকাণ্ডগুলো এমন সময় হচ্ছে, যখন প্রথমবারের মতো ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের একটি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশে নোঙর করেছে এবং পাকিস্তানের নৌবাহিনীর প্রধান ঢাকা সফর করেছেন।
হর্ষ ভি. পন্ত বলেন, ভারত নিয়মিত সামরিক মহড়ার মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে, তারা আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন। তবে তাঁর মতে, এয়ার শো বিশেষভাবে কারও বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন ছিল না।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘কখনো এগুলো নিয়মিত মহড়া, কখনো বার্তা দেওয়ার কৌশল। পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে যেতে পারে—আজকের বন্ধু আগামীকাল শত্রুও হতে পারে।’
হর্ষ ভি. পন্ত মনে করেন, ভারতের সামরিক পদক্ষেপগুলো প্রতিরক্ষামূলক হলে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে; বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য যদি অব্যাহত থাকে।
তিনি ড. ইউনূসের করা একটি মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেন। চলতি বছরের মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস এমন একটি মন্তব্য করেছিলেন। যদিও ঢাকা এই মন্তব্যের উদ্দেশ্য আঞ্চলিক সংযোগের সম্ভাবনা তুলে ধরা বলে দাবি করেছে, তবে ওই এলাকার ভূরাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে নয়াদিল্লি এই মন্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি।
ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্থলবেষ্টিত (ল্যান্ডলকড), আর তাদের সাগরে প্রবেশের একমাত্র প্রবেশদ্বার বাংলাদেশ।’ ভারতের কাছে বিষয়টি অস্বস্তিকর ছিল।
উভয় দেশের সরকারই সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির বিষয়ে নীরব রয়েছে এবং ডি ডব্লিউর মন্তব্যের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছে।
ডি ডব্লিউ বলছে, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভারত সম্ভবত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অপেক্ষা করাচ্ছে। অর্থাৎ ‘নির্বাচিত সরকার এলেই পূর্ণমাত্রায় সম্পর্ক পুনর্গঠিত হবে।’
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে মূলত সম্পর্ক খারাপের দিকে যেতে থাকে। তবে এরপরও কিছু বিষয়ে আড়ালে অবিশ্বাস থেকে যায়।
২০১৯ সালের ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাংলাদেশে তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের কথায় ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ শব্দের ব্যবহার বৈরিতা বাড়ায়। আর শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়া এই বিরোধকে আরও গভীর করে তোলে।
ঢাকা বারবার তাঁকে ফেরত চাইলেও ভারত নীরব থেকেছে। এ ছাড়া ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার উপস্থিতি ঢাকার কাছে উসকানি হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানায়।
বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘১৫ বছর ধরে ভারত ভেবেছে, ঢাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে—এ যুগ শেষ। তবে ক্ষুদ্র দেশগুলোর ওপর ভারতের প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা আরও বেড়েছে।’
ভারত-বাংলাদেশ উত্তেজনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কেও নতুন উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রধান হর্ষ ভি. পন্ত একে বলেছেন ‘নতুন প্রেম’।
১৯৭১ সালে যে পাকিস্তান থেকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেই পাকিস্তান এখন ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয়। সম্প্রতি ইসলামাবাদ ঢাকায় পররাষ্ট্র এবং গোয়েন্দা প্রধানসহ উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে, নতুন বাণিজ্য চুক্তি করেছে, সামরিক সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করেছে, পাকিস্তানি নৌ জাহাজ বাংলাদেশের বন্দর পরিদর্শন করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ভারতের প্রভাব কাটাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, আর ভারত বিষয়টি নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে দেখছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক জেনারেল ফজলে ইলাহী আকবর ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে ভারতের ভূমিকাকে অবশ্যই স্বীকার করবে, কিন্তু নিজের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতকে খুশি করা অব্যাহত রাখবে না।’
সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভিত্তি বোঝে, কিন্তু সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক সম্মান, সমতা ও মর্যাদা প্রয়োজন; যা ভারতের আচরণে দেখা যাচ্ছে না।’
তবে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে অংশ নিতে ১৯ নভেম্বর নয়াদিল্লি সফর করছেন। সেখানে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। আজ শেখ হাসিনার রায়ের পর এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক জেনারেল ফজলে ইলাহী আকবর ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে ভারতের ভূমিকাকে অবশ্যই স্বীকার করবে, কিন্তু নিজের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতকে খুশি করা অব্যাহত রাখবে না।’
সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভিত্তি বোঝে, কিন্তু সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক সম্মান, সমতা ও মর্যাদা প্রয়োজন; যা ভারতের আচরণে দেখা যাচ্ছে না।’
তবে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে অংশ নিতে ১৯ নভেম্বর নয়াদিল্লি সফর করছেন। সেখানে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। আজ শেখ হাসিনার রায়ের পর এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির অন্যতম সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে পরিচিত ভারতের শিলিগুড়ি করিডর। মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া ভূখণ্ডটি চিকেন’স নেক নামেও পরিচিত। এই করিডর দিয়েই মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য—অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরা। একদিকে নেপাল-ভুটান, আরেক দিকে বাংলাদেশ ও চীন ঘেরা এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে ভারতের কৌশলগত দুর্বলতার কেন্দ্রবিন্দু।
সম্প্রতি একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সেনাবাহিনী শিলিগুড়ি করিডরের চারপাশে তিনটি নতুন পূর্ণাঙ্গ গ্যারিসন (সক্রিয় সেনাঘাঁটি) স্থাপন করেছে এবং সীমান্ত এলাকায় বড় ধরনের সেনাসমাবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে।
ডি ডব্লিউ বাংলার সীমান্তবিষয়ক প্রতিবেদক স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে ভারতীয় সেনা বা সরকারি সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও বিস্তৃত বাহিনী মোতায়েন, নতুন স্থাপনা ও টহল বৃদ্ধি স্পষ্ট চোখে পড়ছে।
এই বাড়তি সামরিক উপস্থিতি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইতিহাসের অন্যতম নিম্নতম পর্যায়ে নেমে এসেছে।
এর মধ্যে আজ সোমবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন তিনি।
রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে আবারও চিঠি দেবে বাংলাদেশ সরকার।
তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ‘প্রত্যর্পণ চুক্তি’ কার্যকর করার প্রস্তুতি দেখা গেলেও ভারতের আনুষ্ঠানিক অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। এই বিষয়ও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে তুলনামূলক স্থিতিশীল রেখেছিলেন। তবে তাঁর ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং তারপরের ঘটনাবলি দুই দেশের সম্পর্কে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে চলছে। এই সরকার ভারতকে আগের মতো ঘনিষ্ঠভাবে দেখছে না—এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
নয়াদিল্লির থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রধান হর্ষ ভি. পন্ত ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘শিলিগুড়ি করিডর ভারতের একটি কৌশলগত দুর্বলতা, যাকে সুরক্ষিত রাখা অপরিহার্য।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বাড়তে থাকা ভারতবিরোধী মনোভাব এবং ড. ইউনূস সরকারের ভারতবিরোধী অবস্থানের ইঙ্গিত—উভয়ই নয়াদিল্লিকে সতর্ক করেছে।
নতুন গ্যারিসন স্থাপনের খবরের পাশাপাশি, ভারতীয় বিমানবাহিনী ৯ নভেম্বর আসামে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এয়ার শো প্রদর্শন করে। এরপর ১৩ থেকে ২০ নভেম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সাত দিনব্যাপী বড়সড় মহড়া চালায়।
এই সামরিক কর্মকাণ্ডগুলো এমন সময় হচ্ছে, যখন প্রথমবারের মতো ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের একটি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশে নোঙর করেছে এবং পাকিস্তানের নৌবাহিনীর প্রধান ঢাকা সফর করেছেন।
হর্ষ ভি. পন্ত বলেন, ভারত নিয়মিত সামরিক মহড়ার মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে, তারা আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন। তবে তাঁর মতে, এয়ার শো বিশেষভাবে কারও বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন ছিল না।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘কখনো এগুলো নিয়মিত মহড়া, কখনো বার্তা দেওয়ার কৌশল। পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে যেতে পারে—আজকের বন্ধু আগামীকাল শত্রুও হতে পারে।’
হর্ষ ভি. পন্ত মনে করেন, ভারতের সামরিক পদক্ষেপগুলো প্রতিরক্ষামূলক হলে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে; বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য যদি অব্যাহত থাকে।
তিনি ড. ইউনূসের করা একটি মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেন। চলতি বছরের মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস এমন একটি মন্তব্য করেছিলেন। যদিও ঢাকা এই মন্তব্যের উদ্দেশ্য আঞ্চলিক সংযোগের সম্ভাবনা তুলে ধরা বলে দাবি করেছে, তবে ওই এলাকার ভূরাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে নয়াদিল্লি এই মন্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি।
ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্থলবেষ্টিত (ল্যান্ডলকড), আর তাদের সাগরে প্রবেশের একমাত্র প্রবেশদ্বার বাংলাদেশ।’ ভারতের কাছে বিষয়টি অস্বস্তিকর ছিল।
উভয় দেশের সরকারই সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির বিষয়ে নীরব রয়েছে এবং ডি ডব্লিউর মন্তব্যের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছে।
ডি ডব্লিউ বলছে, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভারত সম্ভবত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অপেক্ষা করাচ্ছে। অর্থাৎ ‘নির্বাচিত সরকার এলেই পূর্ণমাত্রায় সম্পর্ক পুনর্গঠিত হবে।’
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে মূলত সম্পর্ক খারাপের দিকে যেতে থাকে। তবে এরপরও কিছু বিষয়ে আড়ালে অবিশ্বাস থেকে যায়।
২০১৯ সালের ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাংলাদেশে তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের কথায় ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ শব্দের ব্যবহার বৈরিতা বাড়ায়। আর শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়া এই বিরোধকে আরও গভীর করে তোলে।
ঢাকা বারবার তাঁকে ফেরত চাইলেও ভারত নীরব থেকেছে। এ ছাড়া ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার উপস্থিতি ঢাকার কাছে উসকানি হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানায়।
বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘১৫ বছর ধরে ভারত ভেবেছে, ঢাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে—এ যুগ শেষ। তবে ক্ষুদ্র দেশগুলোর ওপর ভারতের প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা আরও বেড়েছে।’
ভারত-বাংলাদেশ উত্তেজনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কেও নতুন উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রধান হর্ষ ভি. পন্ত একে বলেছেন ‘নতুন প্রেম’।
১৯৭১ সালে যে পাকিস্তান থেকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেই পাকিস্তান এখন ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয়। সম্প্রতি ইসলামাবাদ ঢাকায় পররাষ্ট্র এবং গোয়েন্দা প্রধানসহ উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে, নতুন বাণিজ্য চুক্তি করেছে, সামরিক সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করেছে, পাকিস্তানি নৌ জাহাজ বাংলাদেশের বন্দর পরিদর্শন করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ভারতের প্রভাব কাটাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, আর ভারত বিষয়টি নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে দেখছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক জেনারেল ফজলে ইলাহী আকবর ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে ভারতের ভূমিকাকে অবশ্যই স্বীকার করবে, কিন্তু নিজের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতকে খুশি করা অব্যাহত রাখবে না।’
সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভিত্তি বোঝে, কিন্তু সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক সম্মান, সমতা ও মর্যাদা প্রয়োজন; যা ভারতের আচরণে দেখা যাচ্ছে না।’
তবে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে অংশ নিতে ১৯ নভেম্বর নয়াদিল্লি সফর করছেন। সেখানে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। আজ শেখ হাসিনার রায়ের পর এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক জেনারেল ফজলে ইলাহী আকবর ডি ডব্লিউকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে ভারতের ভূমিকাকে অবশ্যই স্বীকার করবে, কিন্তু নিজের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতকে খুশি করা অব্যাহত রাখবে না।’
সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভিত্তি বোঝে, কিন্তু সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক সম্মান, সমতা ও মর্যাদা প্রয়োজন; যা ভারতের আচরণে দেখা যাচ্ছে না।’
তবে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে অংশ নিতে ১৯ নভেম্বর নয়াদিল্লি সফর করছেন। সেখানে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। আজ শেখ হাসিনার রায়ের পর এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
২৪ নভেম্বর ২০২৪
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
১ দিন আগে
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।
২ দিন আগে
পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
আজ রোববার ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন এমবিএস। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চাপ তিনি হজম করে গেছেন। এমনকি ইসরায়েল–ইরান যুদ্ধেও নিজ দেশকে রক্ষা করে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর বিপরীতে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি সৌদি আরবকে নিজ পক্ষপুটে আনতে আলোচনা টেবিলে নিজ দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ—পারমাণবিক ও এআই প্রযুক্তির বিষয়টি উত্থাপনে প্রস্তুত।
একসময় মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা হোয়াইট হাউসে যেতেন এমন সব চুক্তি নিয়ে, যেগুলো মূলত বোয়িং আর লকহিড মার্টিনকে ব্যস্ত রাখত। ইরানের শাহ অস্ত্র ব্যবস্থার বিশ্বকোষসম জ্ঞানের জন্য এমন সফরে কুখ্যাত ছিলেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মোহাম্মদ বিন সালমানের জটিল ‘শপিং লিস্ট’ এক পরিণত ও দূরদর্শী রাষ্ট্রের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ফুটিয়ে তোলে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক এডেলম্যান পাবলিক অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান আইয়্যাম কামেল বলেন, ‘এমবিএস কেবল একটি খাতে সহযোগিতা চান না, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি আরব সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে চান। সেটা প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের দ্বিমুখী প্রবাহের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরব এখনো বহুমেরুবিশ্বের অংশ হতে চায়, কিন্তু তারা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ নিতেও প্রস্তুত।’
বিশেষজ্ঞরা যে দিকটিতে নজর রাখা উচিত বলে মনে করছেন তা হলো—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছাতার নিচে জায়গা পেতে সৌদি আরবের আগ্রহ। কাতারে হামাসের মধ্যস্থতাকারীদের ওপর ইসরায়েলের হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে।
পাকিস্তানের হাতে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে বলে ধারণা করা হয়। দুই দেশের বিবরণে বলা হয়, চুক্তিতে সামরিক সব ধরনের বিকল্পই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে সৌদির পারমাণবিক আলোচনার বিষয়বস্তু গোপনে রাখা হয়েছে। তবে সাবেক এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, সৌদি আরবকে মার্কিন সামরিক সুরক্ষার আওতায় আনার ধারণা কার্যকর হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এতে সৌদিরা পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতার বাইরে আসবে এবং নিজেদের কাতারের চেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করবে।’
সৌদি আরব মূলত নিরাপত্তা শঙ্কার জায়গা থেকেই মার্কিন পারমাণবিক শক্তি ছায়াতলে আশ্রয় নিতে চাইছে। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর স্থাপনায় ইরানের হামলার পর থেকে সৌদি আরব ভয় পেতে শুরু করে। সর্বশেষ, কাতারে ইসরায়েলি হামলা সেই ভয়কে আরও বাড়িয়েছে।
কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর দোহারের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে কাতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং উপসাগরীয় এই দেশে যে কোনো হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘শান্তি ও নিরাপত্তার’ প্রতি হুমকি হিসেবে ধরা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ওয়াশিংটন বা উপসাগরীয় অঞ্চলের খুব কম কর্মকর্তাই এই প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দেন। কারণ, আনুষ্ঠানিক চুক্তি প্রতিশ্রুতির তুলনায় নির্বাহী আদেশ যেকোনো সময় বাতিল করা যায় এবং নতুন মার্কিন প্রশাসন এই ধরনের নির্বাহী আদেশ মানবে—এমন নিশ্চয়তাও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরব আরও শক্তিশালী কিছু চায়।
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসাআদ আল আইবান এ সপ্তাহের শুরুতেই ওয়াশিংটনে গিয়ে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা অঙ্গীকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনে যুবরাজের পা পড়ার আগেই তাঁর সফরের একটি বড় সাফল্য হলো—দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ইসরায়েল ইস্যুকে আলাদা করে ফেলা।
ট্রাম্প মে মাসে সৌদি সফরে যাওয়ার আগেই রিয়াদ আগাম আলোচ্যসূচি ঠিক করে নিয়েছিল, যাতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রসঙ্গ আলোচনায় না আসে। এখন গাজায় নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, বছরের শেষের মধ্যে রিয়াদ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। কিন্তু পশ্চিমা ও আরব কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, সৌদি আরব আগের মতোই এ আলোচনায় ফিরতে অনিচ্ছুক। সৌদি আরব যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে বাস্তব অগ্রগতি দেখতে চায়। কিন্তু একটি এমন শর্ত, যা মানতে ইসরায়েল দৃশ্যত প্রস্তুত নয়।
সৌদি আরব কি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তা মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সম্ভাব্য পুরস্কার হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। এখন সেই স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া শীতল হয়ে গেলেও, আলোচনা থেমে নেই। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট সৌদি আরবে আসেন পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলতে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আব্রাহাম অ্যাকর্ডের চুক্তিগুলোকে নিজের পররাষ্ট্র নীতির বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়িক চুক্তিতেও আগ্রহী। ওয়েস্টিংহাউস ও বেকটেলের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো পারমাণবিক চুল্লি ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নির্মাণে যে ভূমিকা রাখে, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তিতে তাদের মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা এই আলোচনাকে আরও এগিয়ে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘১২৩ চুক্তি’ করে। সেখানে তারা অঙ্গীকার করে যে, তারা নিজস্বভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে না, বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমতি দেয়। কিন্তু সৌদি যুবরাজ এমন চুক্তি চাইছেন, যেখানে নিজেদের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার থাকবে। তাদের দাবি, দেশে বিপুল ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে।
বছরের শুরুতে সৌদি জ্বালানি মন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান বলেন, ‘আমরা এটি সমৃদ্ধ করব, বিক্রি করব এবং আমরা ইয়েলোকেক তৈরি করব।’ ইয়েলোকেক হলো খনি থেকে উত্তোলনের পর সমৃদ্ধকরণের আগের পর্যায়।
এক সৌদি বিশ্লেষক বলেন, ‘সমৃদ্ধ না করা সৌদিদের জন্য বড় ছাড় হবে। এটি অর্থনৈতিক ইস্যুও। কারণ, ইউরেনিয়াম রপ্তানি করার চেয়ে নিজেরাই সমৃদ্ধ করলে তারা বেশি লাভ করবে। পাশাপাশি এটি জাতীয় মর্যাদার ব্যাপার। প্রশ্ন হলো, যদি সৌদিরা সমৃদ্ধ না করে, তাহলে বিনিময়ে ট্রাম্প থেকে তারা কী পাবে?’
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বার্নার্ড হায়কেল আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিনিময়ে সৌদি আরব ‘পারমাণবিক অস্ত্র সুরক্ষা’ চাইতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি মনে করি আপাতত তারা সমৃদ্ধকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে সরে আসতে পারে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সুরক্ষা চাইবে। এতে সৌদি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনও থাকতে পারে।’
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার গ্রেগরি গস বলেন, ‘ইতিহাসে আমরা নানা জায়গায় পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছি। কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরবে এমন মোতায়েন সম্ভব।’ তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, ট্রাম্প চাইলে ভারত মহাসাগরে এসব সাবমেরিন টহল দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে পারেন।
সৌদি আরব কি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, সফরে সৌদি আরবের যুবরাজ ১৮টি বিমানে করে ১ হাজার কর্মকর্তা নিয়ে ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের পর এমবিএসের প্রথম হোয়াইট হাউস সফর এটি। সেই সফরের সাত মাস পর ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়। এতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনা করে এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনও তীব্র নিন্দা জানান।
বাইডেন প্রশাসনের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্ক ঠান্ডা থাকলেও ২০২২ সালে তা আবার উষ্ণ হয়। মূলত রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি জ্বালানি প্রয়োজন হওয়ায়। এই সময়ে সৌদি যুবরাজ আরও শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসেন। তিনি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতা করেন এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করেন। অনেক আগেই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠেছেন। এবারকার সফর মূলত ট্রাম্পের গালফ সফরের সময় যে বিশাল প্যাকেজ চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল তা চূড়ান্ত করা।
দুই পক্ষ তখন ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিক্রির ঘোষণা দেয়। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও সেই সম্ভাব্য চুক্তির অংশ ছিল। গত সপ্তাহে রয়টার্স জানায়, এই প্যাকেজে সৌদি আরবের জন্য ৪৮টি পর্যন্ত এফ-৩৫ থাকতে পারে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ বিক্রির বিষয়ে উদ্বেগ আছে। ইসরায়েল বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র দেশ যারা এফ-৩৫ চালায় এবং তাদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে আমিরাতকে এফ-৩৫ বিক্রির পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু চীনের প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার নিয়ে উদ্বেগের কারণে বাইডেন প্রশাসন তা আটকে দেয়। সেই একই উদ্বেগ সৌদি আরব নিয়েও রয়েছে বলে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা জানান।
অ্যারোডাইনামিক অ্যাডভাইজরির মহাকাশ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড আবুলালাফিয়া বলেন, চুক্তি হলেও ডেলিভারি পেতে তিন থেকে চার বছর লাগবে, কারণ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আগেই অর্ডার করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সামরিক প্রাধান্য নিশ্চিত করতে অতীতেও সৌদিদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে সৌদি আরবকে যে এফ-১৫ এস স্ট্রাইক ইগল বিক্রি করা হয়েছিল, সেখানে রাডার ও ইলেকট্রনিক প্রতিরক্ষায় কিছুটা দুর্বল সংস্করণ দেওয়া হয়। এফ-৩৫ সম্পর্কে আবুলালাফিয়া বলেন, ‘এই বিমানগুলোতে দূর থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে যে কোনো সময় এগুলো বন্ধ করে দিতে পারে।
ইসরায়েল নিজস্ব সংস্করণ এফ-৩৫ আই অ্যাডায়ারে অনেক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তাদের তৈরি অতিরিক্ত জ্বালানি বহনক্ষমতা বিমানটির স্টেলথ ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রেখে দীর্ঘ দূরত্বে উড্ডয়ন সম্ভব করেছে। এই পরিবর্তিত এফ-৩৫ ব্যবহার করেই ইরানে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে।
সৌদি নিরাপত্তা বিশ্লেষক আল–গান্নাম বলেন, এ ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ‘স্থানীয়করণ’ই সৌদির প্রধান লক্ষ্য। তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সহায়তা ছাড়া’ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় অস্ত্র নির্মাতা সৌদি অ্যারাবিয়ান মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ আন্তর্জাতিক মানের কোনো কোম্পানিতে পরিণত হতে পারবে না।
ড্রোন থেকে ডেটা সেন্টার: সৌদি আরবের এআই উচ্চাভিলাষ
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব শত শত এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন বিক্রির বিষয়েও আলোচনা চালাচ্ছে। তবে প্রতিরক্ষা খাতের অভ্যন্তরীণ সূত্র ও কর্মকর্তাদের মতে, সৌদি আরব এখন ক্রমশ বাছাই করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিচ্ছে। তাই এই সফরের সময় নজর রাখার জায়গা হচ্ছে তুলনামূলক ছোট প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি।
সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্টআপ শিল্ড এআই-এর সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির এআই-সমর্থিত ভি-ব্যাট ড্রোন ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোম্পানিটি আরও একটি ‘ভার্টিকাল টেকঅফ’ ড্রোন নিয়ে কাজ করছে, যা আকাশ থেকে আকাশে ও আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র বহন করতে পারে।
আলাপ সম্পর্কে অবহিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘রিয়াদ তাদের (শিল্ড এআই) বড় আগ্রহের এলাকা। সৌদিরা মাঝারি আকারের ড্রোন চাচ্ছে। তারা এমন কোলাবরেটিভ কমব্যাট এয়ারক্রাফট চায়, যা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পাশাপাশি উড়তে পারে; আর তারা এমন ড্রোনও খুঁজছে যা সামুদ্রিক নজরদারিতে কার্যকর।’
প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সৌদি আরবও মার্কিন এআই চিপের দিকে নজর দিচ্ছে। মে মাসে এনভিডিয়া ঘোষণা করেছে যে, তারা সৌদি আরবের এক ট্রিলিয়ন ডলারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মালিকানাধীন এআই প্রতিষ্ঠান ‘হিউমেইন’-কে তাদের উন্নত ব্ল্যাকওয়েল চিপের হাজারো ইউনিট বিক্রি করবে।
সৌদি আরব নিজেকে এআই হাব হিসেবে তুলে ধরছে, কম দামের বিদ্যুৎ দিয়ে ডেটা সেন্টার চালানোর সুবিধা তুলে ধরে। হিউমেইন রিয়াদ থেকে দাম্মাম পর্যন্ত ডেটা সেন্টার নির্মাণ করছে; ২০৩৪ সালের মধ্যে এসব সেন্টারের মোট সক্ষমতা হবে ৬.৬ গিগাওয়াট। সৌদির আরেক এআই কোম্পানি ডেটাভল্ট লোহিত সাগর উপকূলে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ডেটা সেন্টার তৈরি করছে।
যদিও মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সৌদি সফরে নানা এআই চুক্তি ঘোষণা করা হয় ছিলো বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে, কিন্তু সেই চিপের সরবরাহ আটকে আছে, প্রকাশ্যে কোনো অগ্রগতির খবরও নেই। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সৌদি আরবে এসব মার্কিন এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে চীন হয়তো প্রবেশাধিকার পেতে পারে। যুবরাজ ওয়াশিংটনে গিয়ে এসব চুক্তির অগ্রগতি বাড়াতেই চাপ তৈরি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
আজ রোববার ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন এমবিএস। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চাপ তিনি হজম করে গেছেন। এমনকি ইসরায়েল–ইরান যুদ্ধেও নিজ দেশকে রক্ষা করে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর বিপরীতে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি সৌদি আরবকে নিজ পক্ষপুটে আনতে আলোচনা টেবিলে নিজ দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ—পারমাণবিক ও এআই প্রযুক্তির বিষয়টি উত্থাপনে প্রস্তুত।
একসময় মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা হোয়াইট হাউসে যেতেন এমন সব চুক্তি নিয়ে, যেগুলো মূলত বোয়িং আর লকহিড মার্টিনকে ব্যস্ত রাখত। ইরানের শাহ অস্ত্র ব্যবস্থার বিশ্বকোষসম জ্ঞানের জন্য এমন সফরে কুখ্যাত ছিলেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মোহাম্মদ বিন সালমানের জটিল ‘শপিং লিস্ট’ এক পরিণত ও দূরদর্শী রাষ্ট্রের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ফুটিয়ে তোলে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক এডেলম্যান পাবলিক অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান আইয়্যাম কামেল বলেন, ‘এমবিএস কেবল একটি খাতে সহযোগিতা চান না, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি আরব সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে চান। সেটা প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের দ্বিমুখী প্রবাহের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরব এখনো বহুমেরুবিশ্বের অংশ হতে চায়, কিন্তু তারা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ নিতেও প্রস্তুত।’
বিশেষজ্ঞরা যে দিকটিতে নজর রাখা উচিত বলে মনে করছেন তা হলো—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছাতার নিচে জায়গা পেতে সৌদি আরবের আগ্রহ। কাতারে হামাসের মধ্যস্থতাকারীদের ওপর ইসরায়েলের হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে।
পাকিস্তানের হাতে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে বলে ধারণা করা হয়। দুই দেশের বিবরণে বলা হয়, চুক্তিতে সামরিক সব ধরনের বিকল্পই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে সৌদির পারমাণবিক আলোচনার বিষয়বস্তু গোপনে রাখা হয়েছে। তবে সাবেক এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, সৌদি আরবকে মার্কিন সামরিক সুরক্ষার আওতায় আনার ধারণা কার্যকর হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এতে সৌদিরা পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতার বাইরে আসবে এবং নিজেদের কাতারের চেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করবে।’
সৌদি আরব মূলত নিরাপত্তা শঙ্কার জায়গা থেকেই মার্কিন পারমাণবিক শক্তি ছায়াতলে আশ্রয় নিতে চাইছে। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর স্থাপনায় ইরানের হামলার পর থেকে সৌদি আরব ভয় পেতে শুরু করে। সর্বশেষ, কাতারে ইসরায়েলি হামলা সেই ভয়কে আরও বাড়িয়েছে।
কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর দোহারের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে কাতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং উপসাগরীয় এই দেশে যে কোনো হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘শান্তি ও নিরাপত্তার’ প্রতি হুমকি হিসেবে ধরা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ওয়াশিংটন বা উপসাগরীয় অঞ্চলের খুব কম কর্মকর্তাই এই প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দেন। কারণ, আনুষ্ঠানিক চুক্তি প্রতিশ্রুতির তুলনায় নির্বাহী আদেশ যেকোনো সময় বাতিল করা যায় এবং নতুন মার্কিন প্রশাসন এই ধরনের নির্বাহী আদেশ মানবে—এমন নিশ্চয়তাও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরব আরও শক্তিশালী কিছু চায়।
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসাআদ আল আইবান এ সপ্তাহের শুরুতেই ওয়াশিংটনে গিয়ে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা অঙ্গীকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনে যুবরাজের পা পড়ার আগেই তাঁর সফরের একটি বড় সাফল্য হলো—দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ইসরায়েল ইস্যুকে আলাদা করে ফেলা।
ট্রাম্প মে মাসে সৌদি সফরে যাওয়ার আগেই রিয়াদ আগাম আলোচ্যসূচি ঠিক করে নিয়েছিল, যাতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রসঙ্গ আলোচনায় না আসে। এখন গাজায় নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, বছরের শেষের মধ্যে রিয়াদ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। কিন্তু পশ্চিমা ও আরব কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, সৌদি আরব আগের মতোই এ আলোচনায় ফিরতে অনিচ্ছুক। সৌদি আরব যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে বাস্তব অগ্রগতি দেখতে চায়। কিন্তু একটি এমন শর্ত, যা মানতে ইসরায়েল দৃশ্যত প্রস্তুত নয়।
সৌদি আরব কি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তা মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সম্ভাব্য পুরস্কার হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। এখন সেই স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া শীতল হয়ে গেলেও, আলোচনা থেমে নেই। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট সৌদি আরবে আসেন পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলতে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আব্রাহাম অ্যাকর্ডের চুক্তিগুলোকে নিজের পররাষ্ট্র নীতির বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়িক চুক্তিতেও আগ্রহী। ওয়েস্টিংহাউস ও বেকটেলের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো পারমাণবিক চুল্লি ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নির্মাণে যে ভূমিকা রাখে, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তিতে তাদের মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা এই আলোচনাকে আরও এগিয়ে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘১২৩ চুক্তি’ করে। সেখানে তারা অঙ্গীকার করে যে, তারা নিজস্বভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে না, বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমতি দেয়। কিন্তু সৌদি যুবরাজ এমন চুক্তি চাইছেন, যেখানে নিজেদের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার থাকবে। তাদের দাবি, দেশে বিপুল ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে।
বছরের শুরুতে সৌদি জ্বালানি মন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান বলেন, ‘আমরা এটি সমৃদ্ধ করব, বিক্রি করব এবং আমরা ইয়েলোকেক তৈরি করব।’ ইয়েলোকেক হলো খনি থেকে উত্তোলনের পর সমৃদ্ধকরণের আগের পর্যায়।
এক সৌদি বিশ্লেষক বলেন, ‘সমৃদ্ধ না করা সৌদিদের জন্য বড় ছাড় হবে। এটি অর্থনৈতিক ইস্যুও। কারণ, ইউরেনিয়াম রপ্তানি করার চেয়ে নিজেরাই সমৃদ্ধ করলে তারা বেশি লাভ করবে। পাশাপাশি এটি জাতীয় মর্যাদার ব্যাপার। প্রশ্ন হলো, যদি সৌদিরা সমৃদ্ধ না করে, তাহলে বিনিময়ে ট্রাম্প থেকে তারা কী পাবে?’
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বার্নার্ড হায়কেল আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিনিময়ে সৌদি আরব ‘পারমাণবিক অস্ত্র সুরক্ষা’ চাইতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি মনে করি আপাতত তারা সমৃদ্ধকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে সরে আসতে পারে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সুরক্ষা চাইবে। এতে সৌদি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনও থাকতে পারে।’
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার গ্রেগরি গস বলেন, ‘ইতিহাসে আমরা নানা জায়গায় পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছি। কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরবে এমন মোতায়েন সম্ভব।’ তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, ট্রাম্প চাইলে ভারত মহাসাগরে এসব সাবমেরিন টহল দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে পারেন।
সৌদি আরব কি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, সফরে সৌদি আরবের যুবরাজ ১৮টি বিমানে করে ১ হাজার কর্মকর্তা নিয়ে ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের পর এমবিএসের প্রথম হোয়াইট হাউস সফর এটি। সেই সফরের সাত মাস পর ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়। এতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনা করে এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনও তীব্র নিন্দা জানান।
বাইডেন প্রশাসনের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্ক ঠান্ডা থাকলেও ২০২২ সালে তা আবার উষ্ণ হয়। মূলত রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি জ্বালানি প্রয়োজন হওয়ায়। এই সময়ে সৌদি যুবরাজ আরও শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসেন। তিনি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতা করেন এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করেন। অনেক আগেই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠেছেন। এবারকার সফর মূলত ট্রাম্পের গালফ সফরের সময় যে বিশাল প্যাকেজ চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল তা চূড়ান্ত করা।
দুই পক্ষ তখন ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিক্রির ঘোষণা দেয়। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও সেই সম্ভাব্য চুক্তির অংশ ছিল। গত সপ্তাহে রয়টার্স জানায়, এই প্যাকেজে সৌদি আরবের জন্য ৪৮টি পর্যন্ত এফ-৩৫ থাকতে পারে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ বিক্রির বিষয়ে উদ্বেগ আছে। ইসরায়েল বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র দেশ যারা এফ-৩৫ চালায় এবং তাদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে আমিরাতকে এফ-৩৫ বিক্রির পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু চীনের প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার নিয়ে উদ্বেগের কারণে বাইডেন প্রশাসন তা আটকে দেয়। সেই একই উদ্বেগ সৌদি আরব নিয়েও রয়েছে বলে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা জানান।
অ্যারোডাইনামিক অ্যাডভাইজরির মহাকাশ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড আবুলালাফিয়া বলেন, চুক্তি হলেও ডেলিভারি পেতে তিন থেকে চার বছর লাগবে, কারণ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আগেই অর্ডার করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সামরিক প্রাধান্য নিশ্চিত করতে অতীতেও সৌদিদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে সৌদি আরবকে যে এফ-১৫ এস স্ট্রাইক ইগল বিক্রি করা হয়েছিল, সেখানে রাডার ও ইলেকট্রনিক প্রতিরক্ষায় কিছুটা দুর্বল সংস্করণ দেওয়া হয়। এফ-৩৫ সম্পর্কে আবুলালাফিয়া বলেন, ‘এই বিমানগুলোতে দূর থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে যে কোনো সময় এগুলো বন্ধ করে দিতে পারে।
ইসরায়েল নিজস্ব সংস্করণ এফ-৩৫ আই অ্যাডায়ারে অনেক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তাদের তৈরি অতিরিক্ত জ্বালানি বহনক্ষমতা বিমানটির স্টেলথ ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রেখে দীর্ঘ দূরত্বে উড্ডয়ন সম্ভব করেছে। এই পরিবর্তিত এফ-৩৫ ব্যবহার করেই ইরানে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে।
সৌদি নিরাপত্তা বিশ্লেষক আল–গান্নাম বলেন, এ ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ‘স্থানীয়করণ’ই সৌদির প্রধান লক্ষ্য। তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সহায়তা ছাড়া’ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় অস্ত্র নির্মাতা সৌদি অ্যারাবিয়ান মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ আন্তর্জাতিক মানের কোনো কোম্পানিতে পরিণত হতে পারবে না।
ড্রোন থেকে ডেটা সেন্টার: সৌদি আরবের এআই উচ্চাভিলাষ
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব শত শত এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন বিক্রির বিষয়েও আলোচনা চালাচ্ছে। তবে প্রতিরক্ষা খাতের অভ্যন্তরীণ সূত্র ও কর্মকর্তাদের মতে, সৌদি আরব এখন ক্রমশ বাছাই করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিচ্ছে। তাই এই সফরের সময় নজর রাখার জায়গা হচ্ছে তুলনামূলক ছোট প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি।
সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্টআপ শিল্ড এআই-এর সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির এআই-সমর্থিত ভি-ব্যাট ড্রোন ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোম্পানিটি আরও একটি ‘ভার্টিকাল টেকঅফ’ ড্রোন নিয়ে কাজ করছে, যা আকাশ থেকে আকাশে ও আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র বহন করতে পারে।
আলাপ সম্পর্কে অবহিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘রিয়াদ তাদের (শিল্ড এআই) বড় আগ্রহের এলাকা। সৌদিরা মাঝারি আকারের ড্রোন চাচ্ছে। তারা এমন কোলাবরেটিভ কমব্যাট এয়ারক্রাফট চায়, যা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পাশাপাশি উড়তে পারে; আর তারা এমন ড্রোনও খুঁজছে যা সামুদ্রিক নজরদারিতে কার্যকর।’
প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সৌদি আরবও মার্কিন এআই চিপের দিকে নজর দিচ্ছে। মে মাসে এনভিডিয়া ঘোষণা করেছে যে, তারা সৌদি আরবের এক ট্রিলিয়ন ডলারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মালিকানাধীন এআই প্রতিষ্ঠান ‘হিউমেইন’-কে তাদের উন্নত ব্ল্যাকওয়েল চিপের হাজারো ইউনিট বিক্রি করবে।
সৌদি আরব নিজেকে এআই হাব হিসেবে তুলে ধরছে, কম দামের বিদ্যুৎ দিয়ে ডেটা সেন্টার চালানোর সুবিধা তুলে ধরে। হিউমেইন রিয়াদ থেকে দাম্মাম পর্যন্ত ডেটা সেন্টার নির্মাণ করছে; ২০৩৪ সালের মধ্যে এসব সেন্টারের মোট সক্ষমতা হবে ৬.৬ গিগাওয়াট। সৌদির আরেক এআই কোম্পানি ডেটাভল্ট লোহিত সাগর উপকূলে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ডেটা সেন্টার তৈরি করছে।
যদিও মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সৌদি সফরে নানা এআই চুক্তি ঘোষণা করা হয় ছিলো বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে, কিন্তু সেই চিপের সরবরাহ আটকে আছে, প্রকাশ্যে কোনো অগ্রগতির খবরও নেই। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সৌদি আরবে এসব মার্কিন এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে চীন হয়তো প্রবেশাধিকার পেতে পারে। যুবরাজ ওয়াশিংটনে গিয়ে এসব চুক্তির অগ্রগতি বাড়াতেই চাপ তৈরি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
২৪ নভেম্বর ২০২৪
মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া ভূখণ্ডটি চিকেন’স নেক নামেও পরিচিত। এই করিডর দিয়েই মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য—অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরা।
৭ ঘণ্টা আগে
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।
২ দিন আগে
পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘নতুন স্বাভাবিক’ (নিউ নরমাল) প্রতিষ্ঠার দাবির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে মোদি বলেছিলেন, দেশ এখন সন্ত্রাসবাদকে আর সহ্য করবে না, অথচ এর মাত্র ছয় মাস পর সোমবার (১০ নভেম্বর) ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই এক গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে প্রাথমিক অনিশ্চয়তা থাকলেও ঘটনাটি পরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কার্যকলাপ বলে নিশ্চিত করেছে সরকার।
যদিও সরকার এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে দুই দিন সময় নিয়েছেন। কিন্তু এরপরও প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য সরাসরি দায়ী করতে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নজিরবিহীনভাবে সতর্ক এবং নীরব ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর সরকারের কঠোর নীতির প্রমাণ হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে তাঁর সরকার আর পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করবে না। কিন্তু লাল কেল্লার অদূরে বিস্ফোরণটি সেই কঠোর দাবির বিপরীতে সরকারের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণটি ঘটে, যখন বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ও শেষ দফার ভোট গ্রহণের এক দিন আগে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। ঘটনার দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিস্ফোরণস্থল ও লোক নায়ক জয় প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভুটানের সাবেক রাজার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে হিমালয়ের ওই দেশটিতে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ‘অসংবেদনশীলতা’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলে বিরোধী পক্ষ। বুধবার দিল্লি ফিরে তিনি দ্রুত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
বিস্ফোরণের প্রকৃতি এবং উৎস নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় প্রথমদিকে বহু রাজনীতিবিদ নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক ও সমবেদনা জানানোর মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন পোস্ট দেন।
বিস্ফোরণের সঙ্গে একটি ‘সন্ত্রাসী মডিউলের’ যোগসূত্রের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কোনো শীর্ষ বিরোধী নেতা বিস্ফোরণস্থল বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেননি। এই নীরবতা রাজনৈতিক মহলে সমালোচিত হচ্ছে। শুধু আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং কংগ্রেসের দিল্লি ইউনিটের স্থানীয় প্রতিনিধিরা আহত ব্যক্তিদের দেখতে হাসপাতালে যান। তবে এই স্থানীয় নেতারাও সন্ত্রাসবাদ বা জাতীয় নিরাপত্তার বৃহত্তর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে, কেবল বিস্ফোরণের পরবর্তী পরিস্থিতি ও সরকারি ব্যবস্থাপনার ভুলত্রুটি নিয়ে কথা বলেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সংসদ সদস্য পার্থ ভৌমিক ঘটনার আদালত-পর্যবেক্ষিত তদন্ত দাবি করেন। অন্যদিকে এএপির মুখপাত্র সঞ্জয় সিং এবং কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনাতে প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারের প্রতি তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সঞ্জয় সিং এক্সে লেখেন, ‘দেশ যন্ত্রণায় ভুগছে আর মোদি প্লেনে...এমন অসংবেদনশীল প্রধানমন্ত্রীকে জাতি আর কত দিন দিন সহ্য করবে?’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লির বিস্ফোরণে বিরোধী দলগুলোর এই ‘নিঃশব্দ প্রতিক্রিয়া’ এক কৌশলগত দুর্বলতার প্রতিফলন। তারা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, এ ক্ষেত্রে বিজেপিকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের কাছে স্পষ্ট কোনো কৌশল নেই।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় যুক্তি দিয়েছেন, মোদিকে বিদ্রূপ করার জন্য ‘যুদ্ধবাজ’ সাজার চেষ্টা করা সঠিক কৌশল নয়। তাঁর মতে, বিরোধী দলকে মোদির ‘বড়াই ও মিথ্যা সাহসের অন্তঃসারশূন্যতা’ এবং নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা যশোবর্ধন ঝা আজাদ বলেন, বিরোধী দলগুলোর উচিত মোদি সরকারের কাছে ‘নির্দিষ্ট ও তীক্ষ্ণ’ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে দায়বদ্ধতা স্থির করা। তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী মডিউলটি ‘প্রধান ও বিপজ্জনক’ ছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন না করলে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা স্মরণ করিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘নতুন স্বাভাবিক’ (নিউ নরমাল) প্রতিষ্ঠার দাবির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে মোদি বলেছিলেন, দেশ এখন সন্ত্রাসবাদকে আর সহ্য করবে না, অথচ এর মাত্র ছয় মাস পর সোমবার (১০ নভেম্বর) ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই এক গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে প্রাথমিক অনিশ্চয়তা থাকলেও ঘটনাটি পরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কার্যকলাপ বলে নিশ্চিত করেছে সরকার।
যদিও সরকার এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে দুই দিন সময় নিয়েছেন। কিন্তু এরপরও প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য সরাসরি দায়ী করতে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নজিরবিহীনভাবে সতর্ক এবং নীরব ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর সরকারের কঠোর নীতির প্রমাণ হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে তাঁর সরকার আর পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করবে না। কিন্তু লাল কেল্লার অদূরে বিস্ফোরণটি সেই কঠোর দাবির বিপরীতে সরকারের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণটি ঘটে, যখন বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ও শেষ দফার ভোট গ্রহণের এক দিন আগে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। ঘটনার দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিস্ফোরণস্থল ও লোক নায়ক জয় প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভুটানের সাবেক রাজার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে হিমালয়ের ওই দেশটিতে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ‘অসংবেদনশীলতা’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলে বিরোধী পক্ষ। বুধবার দিল্লি ফিরে তিনি দ্রুত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
বিস্ফোরণের প্রকৃতি এবং উৎস নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় প্রথমদিকে বহু রাজনীতিবিদ নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক ও সমবেদনা জানানোর মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন পোস্ট দেন।
বিস্ফোরণের সঙ্গে একটি ‘সন্ত্রাসী মডিউলের’ যোগসূত্রের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কোনো শীর্ষ বিরোধী নেতা বিস্ফোরণস্থল বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেননি। এই নীরবতা রাজনৈতিক মহলে সমালোচিত হচ্ছে। শুধু আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং কংগ্রেসের দিল্লি ইউনিটের স্থানীয় প্রতিনিধিরা আহত ব্যক্তিদের দেখতে হাসপাতালে যান। তবে এই স্থানীয় নেতারাও সন্ত্রাসবাদ বা জাতীয় নিরাপত্তার বৃহত্তর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে, কেবল বিস্ফোরণের পরবর্তী পরিস্থিতি ও সরকারি ব্যবস্থাপনার ভুলত্রুটি নিয়ে কথা বলেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সংসদ সদস্য পার্থ ভৌমিক ঘটনার আদালত-পর্যবেক্ষিত তদন্ত দাবি করেন। অন্যদিকে এএপির মুখপাত্র সঞ্জয় সিং এবং কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনাতে প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারের প্রতি তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সঞ্জয় সিং এক্সে লেখেন, ‘দেশ যন্ত্রণায় ভুগছে আর মোদি প্লেনে...এমন অসংবেদনশীল প্রধানমন্ত্রীকে জাতি আর কত দিন দিন সহ্য করবে?’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লির বিস্ফোরণে বিরোধী দলগুলোর এই ‘নিঃশব্দ প্রতিক্রিয়া’ এক কৌশলগত দুর্বলতার প্রতিফলন। তারা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, এ ক্ষেত্রে বিজেপিকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের কাছে স্পষ্ট কোনো কৌশল নেই।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় যুক্তি দিয়েছেন, মোদিকে বিদ্রূপ করার জন্য ‘যুদ্ধবাজ’ সাজার চেষ্টা করা সঠিক কৌশল নয়। তাঁর মতে, বিরোধী দলকে মোদির ‘বড়াই ও মিথ্যা সাহসের অন্তঃসারশূন্যতা’ এবং নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা যশোবর্ধন ঝা আজাদ বলেন, বিরোধী দলগুলোর উচিত মোদি সরকারের কাছে ‘নির্দিষ্ট ও তীক্ষ্ণ’ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে দায়বদ্ধতা স্থির করা। তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী মডিউলটি ‘প্রধান ও বিপজ্জনক’ ছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন না করলে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা স্মরণ করিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।

ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
২৪ নভেম্বর ২০২৪
মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া ভূখণ্ডটি চিকেন’স নেক নামেও পরিচিত। এই করিডর দিয়েই মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য—অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরা।
৭ ঘণ্টা আগে
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
১ দিন আগে
পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ৯ দেশের মধ্যে শুধু সুইডেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট (প্রায় ৬৫ শতাংশ)। নেদারল্যান্ডসে মতামত বিভক্ত; ৩৬ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট। পোল্যান্ডে ৪০ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩১ শতাংশ অসন্তুষ্ট।
বাকি দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ছয় দেশে গড় সন্তুষ্টির হার ২৪ শতাংশের কম। ক্রোয়েশিয়ায় ১৮ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৬ শতাংশ, স্পেনে ২৭ শতাংশ এবং ইতালিতে ২৯ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাঁদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স (৮১ শতাংশ) ও নেদারল্যান্ডসে (৭৬ শতাংশ); যেখানে চলতি বছর সরকার পতনের ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ একই মত প্রকাশ করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম পোল্যান্ড; সেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের মান কিছুটা ভালো হয়েছে, ৩০ শতাংশ বলেছেন খারাপ হয়েছে।
সুইডেন বাদে বাকি সব দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেছে। ফ্রান্সে ৮৬ শতাংশ, স্পেনে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৭৪ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ায় ৭৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ শতাংশ এবং ইতালিতে ৬৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে; ভুয়া তথ্য (ডিসইনফরমেশন), রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, চরমপন্থা ও দুর্নীতি।
ফ্রান্স (৫৬ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৬৪ শতাংশ), সুইডেন (৬৭ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (৭৫ শতাংশ) ও পোল্যান্ডে (৭৬ শতাংশ) সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে ভুয়া তথ্যকে। অন্যদিকে, দুর্নীতিকে সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৩ শতাংশ, স্পেনের ৭৩ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ার ৮০ শতাংশ ও ইতালির ৪৭ শতাংশ মানুষ। তবে ইতালিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও সমান বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব সমাধানের কথা বলেছেন, তা হলো—কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও এর বাস্তবায়ন, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষা উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা।
জরিপে দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি মোটের ওপর জোরালো সমর্থন রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, এটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও রক্ষাযোগ্য। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে মনে করেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র বজায় রাখা উচিত কি না—তা সেই দেশের মানুষের জীবনের মানের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, বেশির ভাগ দেশে বেড়েছে মৌলিক বা ‘র্যাডিক্যাল’ পরিবর্তনের দাবি। অনেকে মনে করেন বর্তমান ব্যবস্থাটি ধনীদের স্বার্থে, এটি সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে না। স্পেনে ৫২ শতাংশ, ইতালিতে ৫৫ শতাংশ, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬৬ শতাংশ এবং ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ মানুষ র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের দাবি করেন।
তবে পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রবল হলেও, প্রায় সব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেন।

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ৯ দেশের মধ্যে শুধু সুইডেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট (প্রায় ৬৫ শতাংশ)। নেদারল্যান্ডসে মতামত বিভক্ত; ৩৬ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট। পোল্যান্ডে ৪০ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩১ শতাংশ অসন্তুষ্ট।
বাকি দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ছয় দেশে গড় সন্তুষ্টির হার ২৪ শতাংশের কম। ক্রোয়েশিয়ায় ১৮ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৬ শতাংশ, স্পেনে ২৭ শতাংশ এবং ইতালিতে ২৯ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাঁদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স (৮১ শতাংশ) ও নেদারল্যান্ডসে (৭৬ শতাংশ); যেখানে চলতি বছর সরকার পতনের ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ একই মত প্রকাশ করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম পোল্যান্ড; সেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের মান কিছুটা ভালো হয়েছে, ৩০ শতাংশ বলেছেন খারাপ হয়েছে।
সুইডেন বাদে বাকি সব দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেছে। ফ্রান্সে ৮৬ শতাংশ, স্পেনে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৭৪ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ায় ৭৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ শতাংশ এবং ইতালিতে ৬৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে; ভুয়া তথ্য (ডিসইনফরমেশন), রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, চরমপন্থা ও দুর্নীতি।
ফ্রান্স (৫৬ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৬৪ শতাংশ), সুইডেন (৬৭ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (৭৫ শতাংশ) ও পোল্যান্ডে (৭৬ শতাংশ) সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে ভুয়া তথ্যকে। অন্যদিকে, দুর্নীতিকে সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৩ শতাংশ, স্পেনের ৭৩ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ার ৮০ শতাংশ ও ইতালির ৪৭ শতাংশ মানুষ। তবে ইতালিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও সমান বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব সমাধানের কথা বলেছেন, তা হলো—কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও এর বাস্তবায়ন, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষা উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা।
জরিপে দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি মোটের ওপর জোরালো সমর্থন রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, এটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও রক্ষাযোগ্য। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে মনে করেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র বজায় রাখা উচিত কি না—তা সেই দেশের মানুষের জীবনের মানের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, বেশির ভাগ দেশে বেড়েছে মৌলিক বা ‘র্যাডিক্যাল’ পরিবর্তনের দাবি। অনেকে মনে করেন বর্তমান ব্যবস্থাটি ধনীদের স্বার্থে, এটি সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে না। স্পেনে ৫২ শতাংশ, ইতালিতে ৫৫ শতাংশ, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬৬ শতাংশ এবং ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ মানুষ র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের দাবি করেন।
তবে পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রবল হলেও, প্রায় সব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেন।

ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
২৪ নভেম্বর ২০২৪
মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া ভূখণ্ডটি চিকেন’স নেক নামেও পরিচিত। এই করিডর দিয়েই মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য—অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরা।
৭ ঘণ্টা আগে
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
১ দিন আগে
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।
২ দিন আগে