শাহাদাত স্বাধীন

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সমাজ একটি ক্রমবর্ধমান দমবন্ধ রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি গভীর হতাশা জমা হচ্ছিল–ক্রোধ সর্বদা দৃশ্যমান না হলেও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির আড়ালে সর্বদা উপস্থিত ছিল।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র কঠোর নিয়ন্ত্রণের মডেলে চলছিল। শেখ হাসিনার সরকার ভিন্নমত দমনে দ্বিধা করেনি, যা বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুমকে স্বাভাবিক করে তুলেছিল। হাসিনার শাসনামলে ১ হাজার ৯২৬টি বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং ১ হাজার ৬৭৬টি গুমের অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধী, কর্মী এবং ভিন্ন মতাদর্শের সমালোচকদের ওপর নিষ্ঠুর দমনপীড়ন চালানো হয়েছিল। অনেককে গোপন বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল, যেগুলো ‘আয়না ঘর’ নামে কুখ্যাত।
হাসিনার নিয়ন্ত্রণ শুধু ভৌত জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ভার্চুয়াল জগতেও বিস্তৃত ছিল। ২০১৮ সালের একপক্ষীয় নির্বাচনের আগে, তিনি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করেন, যা সাংবাদিক এবং সোশ্যাল মিডিয়া কর্মীদের লক্ষ্য করে প্রণীত। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই আইনের অধীনে ১ হাজার ১০৯টি মামলা করা হয়, যার ফলে ১৬১ জন বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং ১৩৮ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হন।
২০২৪ সালে ছাত্র এবং সাধারণ নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি গণ–অভ্যুত্থান শুরু হয়। ৫ আগস্ট প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। এর মাধ্যমে তাঁর প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তবে তাঁর প্রস্থান এসেছে অনেক প্রাণের বিনিময়ে। এই সময় সরকারের দমনপীড়নে ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং ১৯ হাজার মানুষ আহত হয়। শাসনক্ষমতা ধরে রাখতে হাসিনার সরকার মরিয়া চেষ্টা করেছিল।
বিপ্লব প্রায়শই একটি অস্থির শূন্যতা রেখে যায়, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। পরবর্তীতে বিপ্লবের কৃতিত্বের দাবি নিয়ে গোষ্ঠীগত বিরোধ দেখা দেয়। মূলত প্রতিবিপ্লব এবং গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার মুহূর্তে এমনটি হয়েছে। সিরিয়ার সংঘাত এর একটি মর্মান্তিক অনুস্মারক। কীভাবে আরব বসন্তের মতো বিপ্লবগুলো দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে পারে সেটিও স্মরণযোগ্য।
৮ আগস্ট, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এই সরকার: দেশের রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা, শাসন ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করা এবং তরুণ–যুবকদের আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা–এর প্রাথমিক অগ্রাধিকার হয়ে ওঠে। এই বাধা সত্ত্বেও, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গৃহযুদ্ধ বা সম্প্রদায়গত সংঘাতের সম্ভাবনা রোধ করতে সক্ষম হয়েছিল। এই অর্জন উপেক্ষা করা যায় না।
বৈশ্বিক শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দ্রুত স্বীকৃতি এবং সমর্থন সত্ত্বেও, ভারত শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব দেখিয়েছে। এটি নয়াদিল্লির ঐতিহ্যবাহী অবস্থানের ধারাবাহিকতাকেই চিহ্নিত করে, যারা দীর্ঘদিন ধরে হাসিনার প্রতি অটল সমর্থন দিয়ে এসেছে। তাঁর (শেখ হাসিনা) বাবার যুগ থেকে ভারতের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল, এমনকি ১৯৭৫ সালে তাঁর পরিবার খুন হওয়ার পর ছয় বছর সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর আওয়ামী লীগের ১ হাজারের বেশি নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ঢাকায় ক্ষমতার এই আকস্মিক পরিবর্তন নয়াদিল্লির জন্য একটি বড় বৈদেশিক নীতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটগুলো বাংলাদেশের নতুন সরকারের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদেশি হস্তক্ষেপের গুঞ্জন
ভূ–রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে, পশ্চিমা–সমর্থিত শাসন পরিবর্তনের অভিযোগ প্রচারিত হতে শুরু করে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন সাবেক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘অস্থিতিশীল’ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। তবে, এই ধরনের দাবিগুলো মূলত অভ্যুত্থানের স্বাভাবিক (অরগানিক) প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে। যারা ‘মনসুন বিপ্লব’ প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, এটি দীর্ঘদিন ধরে জমছিল—বছরের পর বছর ধরে চলা পদ্ধতিগত নিপীড়ন, যুব আন্দোলন এবং সম্মিলিত চাপা ক্ষোভের মধ্যে এর শিকড় প্রোথিত ছিল।
এই আন্দোলন কোনো বিদেশি অর্থায়নে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে ঘটেনি। এটি বছরের পর বছর ধরে চলা দমনমূলক শাসন এবং হাসিনার নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে গড়ে ওঠা মতাদর্শগত ঐক্যের ফল। এই আন্দোলনের বীজ ২০১৮ সালেই বপন করা হয়েছিল, যখন দুটি উল্লেখযোগ্য যুব আন্দোলন—কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন—রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। যদিও হাসিনা গ্রেপ্তার এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে এই আন্দোলনগুলো দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তবে সেগুলো ২০২৪ সালের ঘটনার ভিত্তি তৈরি করেছিল।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া স্কুলছাত্ররা ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হয়ে উঠেছিল, যারা সংগঠিত করা, রাষ্ট্রীয় নজরদারি এড়ানো এবং একটি কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল। মনসুন বিপ্লব শুরু হওয়ার সময়, তারা অতীতের ভুলগুলো থেকে শিখেছিল এবং নিশ্চিত করেছিল যে তাদের আন্দোলনের ঐক্য সহজে ভেঙে দেওয়া যাবে না।
বিক্ষোভগুলো মূলত অরগানিক ছিল, মানুষ স্বাধীনভাবে সংগঠিত হচ্ছিল। বিক্ষোভকারীরা বিদেশি আর্থিক সহায়তার পরিবর্তে ঘরে তৈরি খাবার এবং স্থানীয় সংগঠনের ওপর নির্ভর করেছিল। তা ছাড়া, আন্দোলনটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি পেয়েছিল শুধু হাসিনা প্রশাসন হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো এবং দেহ পোড়ানোর মতো চরম বলপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানোর পর। এটি স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে আন্দোলনটি বিদেশি হস্তক্ষেপের পরিবর্তে ন্যায়বিচারের সম্মিলিত দাবির দ্বারা চালিত হয়েছিল।
আন্দোলনের বিস্তার এতটাই বিশাল ছিল যে বিদেশি কুশীলবদের কয়েকশ ডলার দিয়ে এটি সংগঠিত করার ধারণা অবান্তর। এটি ছিল একটি জনগণের আন্দোলন—যা বাংলাদেশি সমাজের প্রকৃত দাবির দ্বারা চালিত হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সুপ্রতিষ্ঠিত স্বৈরশাসকের পতনের মাধ্যমে এর পরিণতি ঘটে।
মাইক বেনজ বিতর্ক
বিদেশি হস্তক্ষেপের দাবিগুলো একটি সন্দেহজনক উৎস থেকে এসেছে। এগুলোতে বেশ কয়েকটি তথ্যগত ভুল রয়েছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক কর্মকর্তা মাইক বেনজ অভিযোগ করেন, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) গত বছর বাংলাদেশের শাসন পরিবর্তনে একটি ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত রক্ষণশীল পডকাস্টার টাকার কার্লসনের সঙ্গে কথা বলার সময়, বেনজ দাবি করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল, কারণ তিনি চীনের প্রভাব মোকাবিলায় এই অঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছিলেন।
বেনজ দাবি করেন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ইউএসএআইডি দ্বারা সমর্থিত যুক্তরাষ্ট্র–ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘অস্থিতিশীল’ করার জন্য কাজ করেছিল। তিনি আরও দাবি করেন, মনসুন বিপ্লব এলজিবিটি কর্মী, জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং ছাত্র সংগঠন দ্বারা চালিত হয়েছিল, যারা ইউএসএআইডি থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল।
আইআরআই হাসিনা–বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল, বেনজের এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশে আইআরআই হাসিনার সরকারের পক্ষে সমীক্ষা প্রকাশের জন্য পরিচিত। ২০১৮ সালে যখন সমগ্র বাংলাদেশ হাসিনার দমনপীড়ন এবং গুমের নৈরাজ্যের মুখোমুখি, তখন ইনস্টিটিউটটি দাবি করেছিল যে,৬৬ শতাংশ বাংলাদেশি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন করে। এই বৈধতা ২০১৮ সালে আরেকটি একদলীয় নির্বাচনের জন্য তাঁর প্রচেষ্টাকে জোরদার করতে সাহায্য করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, অনেক হাসিনা–বিরোধী কর্মী আইআরআইকে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য সমালোচনা করেছেন।
আন্দোলনটি এলজিবিটি কর্মীদের দ্বারা সমর্থিত ছিল, বেনজের এই দাবিও অপ্রমাণিত। বাংলাদেশ একটি গভীরভাবে রক্ষণশীল সমাজ, যেখানে এলজিবিটি অধিকার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে প্রকাশ্যে নিজেকে চিহ্নিত করার ঘটনা এখানে বিরল। এলজিবিটি অধিকারের জন্য আন্দোলন ভারত এবং নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম। সামাজিক এবং আইনি সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনা করে, এলজিবিটি কর্মীরা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন, এই অসম্ভব।
বাংলাদেশের জাতিগত সংখ্যালঘুরা, যারা জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম, দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার সমাজে অন্তর্ভুক্তির জন্য সংগ্রাম করে আসছে। তাদের সীমিত রাজনৈতিক প্রভাব এবং চলমান প্রান্তিকীকরণের কারণে এটি সম্ভব যে, তারা কোনো গণ–আন্দোলনের মূল অংশীদার হতে পারে।
বেনজের যুক্তি এই বাস্তবতাগুলোকে উপেক্ষা করে। পরিবর্তে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আলাপকে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মনে হচ্ছে।
বেনজের এসব যুক্তিকে বরং একটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এজেন্ডা উপস্থাপনের পাঁয়তারা বলেই মনে হয়। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঠিক বিবরণ উপস্থাপন করে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হওয়া সত্ত্বেও এলজিবিটি বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল শ্রোতাদের কাছে আবেদন তৈরির চেষ্টা করছেন বলে মনে হয়। তিনি ইউএসএআইডির সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়েছিলেন এমন সময়ে যখন ট্রাম্প প্রশাসন এই সংস্থার ওপর খড়গহস্ত হয়েছেন। বেনজের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, যার লক্ষ্য শ্রোতা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মনোযোগ আকর্ষণ।
বাংলাদেশের মনসুন বিপ্লবের পেছনের বাস্তবতা
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে বাংলাদেশের ঘটনাগুলো কোনো বিদেশি অর্থায়নে ষড়যন্ত্রের ফলাফল ছিল না। বরং এটি ছিল একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণ–আন্দোলন যাতে ছাত্র, নাগরিক, নারী, সংখ্যালঘু এবং সমাজের সব স্তরের মানুষ জড়িত ছিল। এই আন্দোলনের পেছনের কারণ ছিল হাসিনা প্রশাসনের প্রতি গভীর হতাশা, এতে কোনো বহিরাগত প্রভাব ছিল না।
সামান্য বিদেশি টাকায় এত বড় আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে বলে দাবি করা মানে হলো সেসব মানুষের ত্যাগ এবং সংগ্রামকে খাটো করা, যারা তাঁদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন।
বেনজের দাবিগুলো আন্দোলনের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাঁর বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের প্রকৃত গতিশীলতা প্রতিফলিত করার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আলাপ পরিবেশন করার সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়। তবুও, এই আলাপ কিছু পক্ষের স্বার্থের সঙ্গে মিলে যাওয়ায়, বেনজের মন্তব্যগুলো যোগ্যতার চেয়ে বেশি মনোযোগ পেয়েছে।
লেখক:
শাহাদাত স্বাধীন একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্কলার, বর্তমানে নয়াদিল্লির সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে গবেষণা করছেন।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সমাজ একটি ক্রমবর্ধমান দমবন্ধ রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি গভীর হতাশা জমা হচ্ছিল–ক্রোধ সর্বদা দৃশ্যমান না হলেও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির আড়ালে সর্বদা উপস্থিত ছিল।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র কঠোর নিয়ন্ত্রণের মডেলে চলছিল। শেখ হাসিনার সরকার ভিন্নমত দমনে দ্বিধা করেনি, যা বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুমকে স্বাভাবিক করে তুলেছিল। হাসিনার শাসনামলে ১ হাজার ৯২৬টি বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং ১ হাজার ৬৭৬টি গুমের অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধী, কর্মী এবং ভিন্ন মতাদর্শের সমালোচকদের ওপর নিষ্ঠুর দমনপীড়ন চালানো হয়েছিল। অনেককে গোপন বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল, যেগুলো ‘আয়না ঘর’ নামে কুখ্যাত।
হাসিনার নিয়ন্ত্রণ শুধু ভৌত জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ভার্চুয়াল জগতেও বিস্তৃত ছিল। ২০১৮ সালের একপক্ষীয় নির্বাচনের আগে, তিনি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করেন, যা সাংবাদিক এবং সোশ্যাল মিডিয়া কর্মীদের লক্ষ্য করে প্রণীত। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই আইনের অধীনে ১ হাজার ১০৯টি মামলা করা হয়, যার ফলে ১৬১ জন বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং ১৩৮ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হন।
২০২৪ সালে ছাত্র এবং সাধারণ নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি গণ–অভ্যুত্থান শুরু হয়। ৫ আগস্ট প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। এর মাধ্যমে তাঁর প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তবে তাঁর প্রস্থান এসেছে অনেক প্রাণের বিনিময়ে। এই সময় সরকারের দমনপীড়নে ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং ১৯ হাজার মানুষ আহত হয়। শাসনক্ষমতা ধরে রাখতে হাসিনার সরকার মরিয়া চেষ্টা করেছিল।
বিপ্লব প্রায়শই একটি অস্থির শূন্যতা রেখে যায়, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। পরবর্তীতে বিপ্লবের কৃতিত্বের দাবি নিয়ে গোষ্ঠীগত বিরোধ দেখা দেয়। মূলত প্রতিবিপ্লব এবং গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার মুহূর্তে এমনটি হয়েছে। সিরিয়ার সংঘাত এর একটি মর্মান্তিক অনুস্মারক। কীভাবে আরব বসন্তের মতো বিপ্লবগুলো দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে পারে সেটিও স্মরণযোগ্য।
৮ আগস্ট, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এই সরকার: দেশের রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা, শাসন ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করা এবং তরুণ–যুবকদের আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা–এর প্রাথমিক অগ্রাধিকার হয়ে ওঠে। এই বাধা সত্ত্বেও, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গৃহযুদ্ধ বা সম্প্রদায়গত সংঘাতের সম্ভাবনা রোধ করতে সক্ষম হয়েছিল। এই অর্জন উপেক্ষা করা যায় না।
বৈশ্বিক শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দ্রুত স্বীকৃতি এবং সমর্থন সত্ত্বেও, ভারত শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব দেখিয়েছে। এটি নয়াদিল্লির ঐতিহ্যবাহী অবস্থানের ধারাবাহিকতাকেই চিহ্নিত করে, যারা দীর্ঘদিন ধরে হাসিনার প্রতি অটল সমর্থন দিয়ে এসেছে। তাঁর (শেখ হাসিনা) বাবার যুগ থেকে ভারতের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল, এমনকি ১৯৭৫ সালে তাঁর পরিবার খুন হওয়ার পর ছয় বছর সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর আওয়ামী লীগের ১ হাজারের বেশি নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ঢাকায় ক্ষমতার এই আকস্মিক পরিবর্তন নয়াদিল্লির জন্য একটি বড় বৈদেশিক নীতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটগুলো বাংলাদেশের নতুন সরকারের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদেশি হস্তক্ষেপের গুঞ্জন
ভূ–রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে, পশ্চিমা–সমর্থিত শাসন পরিবর্তনের অভিযোগ প্রচারিত হতে শুরু করে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন সাবেক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘অস্থিতিশীল’ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। তবে, এই ধরনের দাবিগুলো মূলত অভ্যুত্থানের স্বাভাবিক (অরগানিক) প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে। যারা ‘মনসুন বিপ্লব’ প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, এটি দীর্ঘদিন ধরে জমছিল—বছরের পর বছর ধরে চলা পদ্ধতিগত নিপীড়ন, যুব আন্দোলন এবং সম্মিলিত চাপা ক্ষোভের মধ্যে এর শিকড় প্রোথিত ছিল।
এই আন্দোলন কোনো বিদেশি অর্থায়নে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে ঘটেনি। এটি বছরের পর বছর ধরে চলা দমনমূলক শাসন এবং হাসিনার নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে গড়ে ওঠা মতাদর্শগত ঐক্যের ফল। এই আন্দোলনের বীজ ২০১৮ সালেই বপন করা হয়েছিল, যখন দুটি উল্লেখযোগ্য যুব আন্দোলন—কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন—রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। যদিও হাসিনা গ্রেপ্তার এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে এই আন্দোলনগুলো দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তবে সেগুলো ২০২৪ সালের ঘটনার ভিত্তি তৈরি করেছিল।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া স্কুলছাত্ররা ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হয়ে উঠেছিল, যারা সংগঠিত করা, রাষ্ট্রীয় নজরদারি এড়ানো এবং একটি কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল। মনসুন বিপ্লব শুরু হওয়ার সময়, তারা অতীতের ভুলগুলো থেকে শিখেছিল এবং নিশ্চিত করেছিল যে তাদের আন্দোলনের ঐক্য সহজে ভেঙে দেওয়া যাবে না।
বিক্ষোভগুলো মূলত অরগানিক ছিল, মানুষ স্বাধীনভাবে সংগঠিত হচ্ছিল। বিক্ষোভকারীরা বিদেশি আর্থিক সহায়তার পরিবর্তে ঘরে তৈরি খাবার এবং স্থানীয় সংগঠনের ওপর নির্ভর করেছিল। তা ছাড়া, আন্দোলনটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি পেয়েছিল শুধু হাসিনা প্রশাসন হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো এবং দেহ পোড়ানোর মতো চরম বলপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানোর পর। এটি স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে আন্দোলনটি বিদেশি হস্তক্ষেপের পরিবর্তে ন্যায়বিচারের সম্মিলিত দাবির দ্বারা চালিত হয়েছিল।
আন্দোলনের বিস্তার এতটাই বিশাল ছিল যে বিদেশি কুশীলবদের কয়েকশ ডলার দিয়ে এটি সংগঠিত করার ধারণা অবান্তর। এটি ছিল একটি জনগণের আন্দোলন—যা বাংলাদেশি সমাজের প্রকৃত দাবির দ্বারা চালিত হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সুপ্রতিষ্ঠিত স্বৈরশাসকের পতনের মাধ্যমে এর পরিণতি ঘটে।
মাইক বেনজ বিতর্ক
বিদেশি হস্তক্ষেপের দাবিগুলো একটি সন্দেহজনক উৎস থেকে এসেছে। এগুলোতে বেশ কয়েকটি তথ্যগত ভুল রয়েছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক কর্মকর্তা মাইক বেনজ অভিযোগ করেন, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) গত বছর বাংলাদেশের শাসন পরিবর্তনে একটি ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত রক্ষণশীল পডকাস্টার টাকার কার্লসনের সঙ্গে কথা বলার সময়, বেনজ দাবি করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল, কারণ তিনি চীনের প্রভাব মোকাবিলায় এই অঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছিলেন।
বেনজ দাবি করেন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ইউএসএআইডি দ্বারা সমর্থিত যুক্তরাষ্ট্র–ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘অস্থিতিশীল’ করার জন্য কাজ করেছিল। তিনি আরও দাবি করেন, মনসুন বিপ্লব এলজিবিটি কর্মী, জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং ছাত্র সংগঠন দ্বারা চালিত হয়েছিল, যারা ইউএসএআইডি থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল।
আইআরআই হাসিনা–বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল, বেনজের এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশে আইআরআই হাসিনার সরকারের পক্ষে সমীক্ষা প্রকাশের জন্য পরিচিত। ২০১৮ সালে যখন সমগ্র বাংলাদেশ হাসিনার দমনপীড়ন এবং গুমের নৈরাজ্যের মুখোমুখি, তখন ইনস্টিটিউটটি দাবি করেছিল যে,৬৬ শতাংশ বাংলাদেশি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন করে। এই বৈধতা ২০১৮ সালে আরেকটি একদলীয় নির্বাচনের জন্য তাঁর প্রচেষ্টাকে জোরদার করতে সাহায্য করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, অনেক হাসিনা–বিরোধী কর্মী আইআরআইকে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য সমালোচনা করেছেন।
আন্দোলনটি এলজিবিটি কর্মীদের দ্বারা সমর্থিত ছিল, বেনজের এই দাবিও অপ্রমাণিত। বাংলাদেশ একটি গভীরভাবে রক্ষণশীল সমাজ, যেখানে এলজিবিটি অধিকার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে প্রকাশ্যে নিজেকে চিহ্নিত করার ঘটনা এখানে বিরল। এলজিবিটি অধিকারের জন্য আন্দোলন ভারত এবং নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম। সামাজিক এবং আইনি সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনা করে, এলজিবিটি কর্মীরা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন, এই অসম্ভব।
বাংলাদেশের জাতিগত সংখ্যালঘুরা, যারা জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম, দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার সমাজে অন্তর্ভুক্তির জন্য সংগ্রাম করে আসছে। তাদের সীমিত রাজনৈতিক প্রভাব এবং চলমান প্রান্তিকীকরণের কারণে এটি সম্ভব যে, তারা কোনো গণ–আন্দোলনের মূল অংশীদার হতে পারে।
বেনজের যুক্তি এই বাস্তবতাগুলোকে উপেক্ষা করে। পরিবর্তে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আলাপকে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মনে হচ্ছে।
বেনজের এসব যুক্তিকে বরং একটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এজেন্ডা উপস্থাপনের পাঁয়তারা বলেই মনে হয়। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঠিক বিবরণ উপস্থাপন করে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হওয়া সত্ত্বেও এলজিবিটি বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল শ্রোতাদের কাছে আবেদন তৈরির চেষ্টা করছেন বলে মনে হয়। তিনি ইউএসএআইডির সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়েছিলেন এমন সময়ে যখন ট্রাম্প প্রশাসন এই সংস্থার ওপর খড়গহস্ত হয়েছেন। বেনজের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, যার লক্ষ্য শ্রোতা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মনোযোগ আকর্ষণ।
বাংলাদেশের মনসুন বিপ্লবের পেছনের বাস্তবতা
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে বাংলাদেশের ঘটনাগুলো কোনো বিদেশি অর্থায়নে ষড়যন্ত্রের ফলাফল ছিল না। বরং এটি ছিল একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণ–আন্দোলন যাতে ছাত্র, নাগরিক, নারী, সংখ্যালঘু এবং সমাজের সব স্তরের মানুষ জড়িত ছিল। এই আন্দোলনের পেছনের কারণ ছিল হাসিনা প্রশাসনের প্রতি গভীর হতাশা, এতে কোনো বহিরাগত প্রভাব ছিল না।
সামান্য বিদেশি টাকায় এত বড় আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে বলে দাবি করা মানে হলো সেসব মানুষের ত্যাগ এবং সংগ্রামকে খাটো করা, যারা তাঁদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন।
বেনজের দাবিগুলো আন্দোলনের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাঁর বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের প্রকৃত গতিশীলতা প্রতিফলিত করার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আলাপ পরিবেশন করার সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়। তবুও, এই আলাপ কিছু পক্ষের স্বার্থের সঙ্গে মিলে যাওয়ায়, বেনজের মন্তব্যগুলো যোগ্যতার চেয়ে বেশি মনোযোগ পেয়েছে।
লেখক:
শাহাদাত স্বাধীন একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্কলার, বর্তমানে নয়াদিল্লির সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে গবেষণা করছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

বিপ্লব প্রায়শই একটি অস্থির শূন্যতা রেখে যায়, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। পরবর্তীতে বিপ্লবের কৃতিত্বের দাবি নিয়ে গোষ্ঠীগত বিরোধ দেখা দেয়। মূলত প্রতিবিপ্লব এবং গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার মুহূর্তে এমনটি হয়েছে। সিরিয়ার সংঘাত এর একটি মর্মান্তিক অনুস্মারক। কীভাবে আরব বসন্তের মতো বিপ্লবগুলো দীর্ঘস্থায়ী..
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিপ্লব প্রায়শই একটি অস্থির শূন্যতা রেখে যায়, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। পরবর্তীতে বিপ্লবের কৃতিত্বের দাবি নিয়ে গোষ্ঠীগত বিরোধ দেখা দেয়। মূলত প্রতিবিপ্লব এবং গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার মুহূর্তে এমনটি হয়েছে। সিরিয়ার সংঘাত এর একটি মর্মান্তিক অনুস্মারক। কীভাবে আরব বসন্তের মতো বিপ্লবগুলো দীর্ঘস্থায়ী..
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

বিপ্লব প্রায়শই একটি অস্থির শূন্যতা রেখে যায়, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। পরবর্তীতে বিপ্লবের কৃতিত্বের দাবি নিয়ে গোষ্ঠীগত বিরোধ দেখা দেয়। মূলত প্রতিবিপ্লব এবং গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার মুহূর্তে এমনটি হয়েছে। সিরিয়ার সংঘাত এর একটি মর্মান্তিক অনুস্মারক। কীভাবে আরব বসন্তের মতো বিপ্লবগুলো দীর্ঘস্থায়ী..
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিপ্লব প্রায়শই একটি অস্থির শূন্যতা রেখে যায়, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। পরবর্তীতে বিপ্লবের কৃতিত্বের দাবি নিয়ে গোষ্ঠীগত বিরোধ দেখা দেয়। মূলত প্রতিবিপ্লব এবং গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার মুহূর্তে এমনটি হয়েছে। সিরিয়ার সংঘাত এর একটি মর্মান্তিক অনুস্মারক। কীভাবে আরব বসন্তের মতো বিপ্লবগুলো দীর্ঘস্থায়ী..
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে