আল–জাজিরার বিশ্লেষণ

সিআইএ কর্মকর্তা আসিফ রহমানের বিরুদ্ধে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি গত অক্টোবরে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতি সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস করেছেন। এ ঘটনায় কয়েক দশক ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান আঞ্চলিক সংঘাতের ছায়াযুদ্ধ প্রকাশ্যে এসেছে। এটি মূলত গোয়েন্দাগিরি ও পাল্টা গোয়েন্দাগিরির খেলা!
ইরানভিত্তিক একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে রহমানের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে। চ্যানেলটি ইরানের সরকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে এ ঘটনা মার্কিন প্রশাসনকে যথেষ্ট বিব্রত করেছে। এর আগে পেন্টাগনের নথি ফাঁসের দায়ে দপ্তরের কর্মকর্তা জ্যাক টিক্সেরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
ইরানি চ্যানেলে ফাঁস হওয়া তথ্য ইরান, ইসরায়েলি ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অস্বচ্ছ সম্পর্ককে উন্মোচন করেছে। এই সম্পর্ক বর্তমান সংঘাতের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রভাবিত হচ্ছে।
অক্টোবরের শেষ দিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিনবেত পূর্ব জেরুজালেমে সাতজন ইসরায়েলি নাগরিককে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। তাঁরা ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর একদিন আগে, হাইফায় আরও সাত ইসরায়েলি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থায় ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে। এদের প্রায় সবাই ইহুদি!
ইসরায়েলি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে ইরান সমর্থিত আরও কয়েকটি নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তবে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও, গত সেপ্টেম্বরে ৭৩ বছর বয়সী ইসরায়েলি ব্যবসায়ী মোতি মামানকে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শিনবেত এবং ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর বিনিময়ে তিনি ইরানের কাছ থেকে ১০ লাখ ডলার চেয়েছিলেন।
অন্য দিকে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলাকালেই তেহরান বেশ কয়েকজন ইরানিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে সহযোগিতা করেছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে ইরান তিন পুরুষ ও এক নারীকে ফাঁসি দেয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা মোসাদের হয়ে কাজ করেছেন এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে শুরু করে ইরানি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অপহরণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে জড়িত ছিলেন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে, লেবাননে ইরানের মিত্র হিজবুল্লাহর যোগাযোগ ব্যবস্থায় (পেজার–ওয়াকিটকি) ইসরায়েলের হামলার পর ইরান ১২ জন নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা এবং ইরানে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়।
ইলেকট্রনিক নজরদারি, সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং ও অন্যান্য নজরদারি আজকাল গুপ্তচরবৃত্তির গুরুত্বপূর্ণ টুল বা হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তবে তথ্য সংগ্রহ এবং সামরিক লক্ষ্য নির্ধারণে গুপ্তচর হিসেবে মানুষ এখনো কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির সিনিয়র ফেলো সিনা টুসি বলেন, ‘গুপ্তচর হিসেবে মানুষকে ব্যবহার ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান ছায়াযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উভয় দেশই গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করছে। দেশ দুটির গোয়েন্দাগিরি ও পাল্টা গোয়েন্দাগিরি কার্যক্রম তাদের বৃহত্তর কৌশলগত হিসাব-নিকাশে ভূমিকা রাখে।’
হাইফায় আটক হওয়া ইসরায়েলিরা ইরানের হয়ে গত দুই বছরে ৬০০–৭০০টি গোয়েন্দা মিশন পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ করেছে তেল আবিব। এসব পরিকল্পনার মধ্যে একটি ছিল— ইসরায়েলের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যা করা। এটি সম্ভবত ইসরায়েলের হাইপ্রোফাইল হত্যাকাণ্ডের মতো একটি সম্ভাব্য গুপ্তহত্যা পরিকল্পনা। যেমনটা ছিল, গত জুলাইয়ে ইরানে হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে সিনা টুসি বলেন, ‘একাধিক হাইপ্রোফাইল হত্যাকাণ্ড এবং অন্তর্ঘাতমূলক মিশনের মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানে তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে। যা মূলত দেশটিতে মোসাদের গভীর অনুপ্রবেশকেই নির্দেশ করে। অন্যদিকে, ইরান ইসরায়েলে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে এবং এই বিষয়টি ইরানের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কয়েকজন ইসরায়েলি নাগরিককে গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।’
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হামজা আত্তার এমনটাই জানিয়েছেন। তবে বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে ইসরায়েলি সমাজে মৌলিক পরিবর্তন এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সেই বিভাজনগুলোর ফাটল দিয়ে এখন প্রবেশ করছে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থা। হাইফায় আটক হওয়া ১৪ জন এজেন্টের প্রথম দলটি ১০ বছর আগে আজারবাইজান থেকে ইসরায়েলে গিয়েছিল। দ্বিতীয় দলটি আরব–ইসরায়েলি হিসেবে পরিচিত। এই দুটি দলই ইসরায়েলি সমাজের মূলধারার বাইরের বলে মনে করা হলেও—এই পরিবর্তনকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন আত্তার।
তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটা সময়ে পুরো ইসরায়েলকে একটি একক পরিচয়ের আওতায় ধরা হতো...তাদের এমনভাবে পড়ানো হতো যে, তারা তাদের আরব প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত আক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে আছে। যদি ইরান এই দুই দলকে নিজের পক্ষে কাজ করতে রাজি করিয়ে থাকতে পারে, তবে তারা আরও অনেককেই তাদের দলে ভেড়াতে পেরেছে বলেই মনে হয়।’
ইসরায়েলি সমাজে ইরানের প্রবেশের প্রচেষ্টা সম্প্রতি সামনে এলেও ইসরায়েল যে দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে আসছে, সে বিষয়ে আগেই অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করছে ইরানের বিশাল আয়তন, যেখানে জনসংখ্যা ইসরায়েলের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৯ গুণ। ইরানের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন ইসরায়েলকে সুবিধা দিয়েছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের যুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক আহরন ব্রেগম্যান বলেন, ‘১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর থেকে ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে, দেশটির শাসকগোষ্ঠীকে ভেতর থেকে উৎখাত করা। এটাই তাদের (ইসরায়েলের) কাজের পদ্ধতির মূলে। ইরানের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনার পরিকল্পনা করা, চর নিয়োগ দেওয়ার ও গোয়েন্দাগিরি শক্তিশালী করার জন্য ইসরায়েল হাতে অনেক সময় পেয়েছে।’
অন্যদিকে, ইরান সম্ভবত তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অনেকাংশেই মিত্রদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে বিনিয়োগ করেছে। যেমন, লেবাননের হিজবুল্লাহ, যারা তাদের তথ্য সরবরাহ করে। ইরানি গোয়েন্দা কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ছিল মূলত ইসরায়েলে কাজ করা ফিলিস্তিনিদের নিয়োগ দেওয়া। যারা সেখানে প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হয়। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে ইসরায়েলি সমাজে প্রবেশের চেষ্টাও ইরান করেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসরায়েলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরানি গোয়েন্দারা বিচারবিভাগীয় সংস্কারের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ এবং গাজায় আটক বন্দীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজে লাগিয়ে বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। তারা ইসরায়েলিদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন স্থাপনার ছবি তুলতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল।
তবে ইরান ইসরায়েলে ততটা সফল নয়, যতটা সফল ইরানে ইসরায়েল। এই বিষয়ে সিনা টুসি বলেন, ‘তবে, ইরানে ইসরায়েলের গোয়েন্দা কার্যক্রম অনেক বেশি উন্নত এবং বিস্তৃত বলে মনে হয়। ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা, ইসমাইল হানিয়ার মতো উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের টার্গেট করা, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে অন্তর্ঘাত চালানো এবং ইরানের গভীরে ইসরায়েলের হামলা চালানোর সক্ষমতা ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল ইরানের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্থানগুলোতে কতটা কার্যকরভাবে অনুপ্রবেশ করেছে।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরান বিরোধী গুপ্তচর সংস্থাগুলোর কাছে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরে এবং তা প্রকাশিত হতে দেয় এবং আবার পরে সেই তথ্যকে মিথ্যা প্রমাণিত করে তারাই। বিরোধী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আস্থার সংকটে ফেলে দিতে এটা একটি শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে।
নিউইয়র্কভিত্তিক সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের ফেলো ভিনা আলী খান বলেন, ‘ইরানের ইতিহাসে পশ্চিমা গণমাধ্যমে মিথ্যা খবর প্রচার করার নজির রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে কাজ করা সেসব দেশের ভাষার কিন্তু ইরান থেকে পরিচালিত গণমাধ্যম রয়েছে। খবর ছড়ানোর পর ইরান সেগুলোকে নিজেরাই মিথ্যা প্রমাণ করে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অধিকতর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে।’
উদাহরণ হিসেবে ভিনা আলী বলেন, ‘ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, ইরানের বিপ্লবী গার্ডবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল ক্বানি মারা গেছেন বা আটক হয়েছেন। কিন্তু পরে ইরান তাঁকে জীবিত প্রমাণ করে। এভাবে, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পুনরায় এমন সব বার্তা প্রচার করে—যার মাধ্যমে দেশটি প্রমাণ করে দেয় যে, পশ্চিমা গণমাধ্যম পুরোপুরি ভুল ছিল। এ কারণে পশ্চিমা গণমাধ্যমের ওপর বিশ্বাস করা উচিত নয়।’
পাবলিক ন্যারেটিভ বা জনগণের কাছে প্রচলিত বয়ানকে নিয়ন্ত্রণ করা গুপ্তচরবৃত্তির জগতে প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখার অন্যতম কৌশল। এ বিষয়ে ব্রেগম্যান বলেন, এটি প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্যও জরুরি। শিনবেত ও পুলিশ সচেতনভাবে ইরানি গুপ্তচর গ্রেপ্তারের খবর প্রচার করছে। এটি মূলত অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য। তারা (ইসরায়েল) তাদের প্রচেষ্টাগুলো প্রকাশ করছে। তারা মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, তারা তৎপর আছে এবং যারা ইরানের হয়ে কাজ করবে তাদের পাকড়াও করা হবে।’
একইভাবে, সিনা টুসি উল্লেখ করেছেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রাধান্য দেওয়ার পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক ব্যর্থতা ঢাকা পড়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার বিষয়টি আগেভাগে জানতে না পারা।
টুসি বলেন, ‘এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসরায়েলি এস্টাবলিশমেন্ট এবং এর সমর্থক গণমাধ্যম ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার অদৃশ্য শক্তির যে ছবি তুলে ধরে তা বাস্তবতার সঙ্গে সব সময় মেলে না। ইসরায়েলের কৌশলগত সাফল্য থাকার পরও গোপনীয় গোয়েন্দা কার্যক্রম বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অপ্রতিরোধ্য হওয়ার ধারণা দেশের ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীল কৌশলগত পরিস্থিতির কারণে বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছে।’
টুসি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের গোয়েন্দা সক্ষমতা যথেষ্ট শক্তিশালী, তবে এটি এখন একাধিক শত্রু ও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে।’
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

সিআইএ কর্মকর্তা আসিফ রহমানের বিরুদ্ধে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি গত অক্টোবরে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতি সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস করেছেন। এ ঘটনায় কয়েক দশক ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান আঞ্চলিক সংঘাতের ছায়াযুদ্ধ প্রকাশ্যে এসেছে। এটি মূলত গোয়েন্দাগিরি ও পাল্টা গোয়েন্দাগিরির খেলা!
ইরানভিত্তিক একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে রহমানের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে। চ্যানেলটি ইরানের সরকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে এ ঘটনা মার্কিন প্রশাসনকে যথেষ্ট বিব্রত করেছে। এর আগে পেন্টাগনের নথি ফাঁসের দায়ে দপ্তরের কর্মকর্তা জ্যাক টিক্সেরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
ইরানি চ্যানেলে ফাঁস হওয়া তথ্য ইরান, ইসরায়েলি ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অস্বচ্ছ সম্পর্ককে উন্মোচন করেছে। এই সম্পর্ক বর্তমান সংঘাতের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রভাবিত হচ্ছে।
অক্টোবরের শেষ দিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিনবেত পূর্ব জেরুজালেমে সাতজন ইসরায়েলি নাগরিককে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। তাঁরা ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর একদিন আগে, হাইফায় আরও সাত ইসরায়েলি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থায় ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে। এদের প্রায় সবাই ইহুদি!
ইসরায়েলি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে ইরান সমর্থিত আরও কয়েকটি নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তবে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও, গত সেপ্টেম্বরে ৭৩ বছর বয়সী ইসরায়েলি ব্যবসায়ী মোতি মামানকে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শিনবেত এবং ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর বিনিময়ে তিনি ইরানের কাছ থেকে ১০ লাখ ডলার চেয়েছিলেন।
অন্য দিকে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলাকালেই তেহরান বেশ কয়েকজন ইরানিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে সহযোগিতা করেছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে ইরান তিন পুরুষ ও এক নারীকে ফাঁসি দেয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা মোসাদের হয়ে কাজ করেছেন এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে শুরু করে ইরানি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অপহরণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে জড়িত ছিলেন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে, লেবাননে ইরানের মিত্র হিজবুল্লাহর যোগাযোগ ব্যবস্থায় (পেজার–ওয়াকিটকি) ইসরায়েলের হামলার পর ইরান ১২ জন নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা এবং ইরানে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়।
ইলেকট্রনিক নজরদারি, সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং ও অন্যান্য নজরদারি আজকাল গুপ্তচরবৃত্তির গুরুত্বপূর্ণ টুল বা হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তবে তথ্য সংগ্রহ এবং সামরিক লক্ষ্য নির্ধারণে গুপ্তচর হিসেবে মানুষ এখনো কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির সিনিয়র ফেলো সিনা টুসি বলেন, ‘গুপ্তচর হিসেবে মানুষকে ব্যবহার ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান ছায়াযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উভয় দেশই গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করছে। দেশ দুটির গোয়েন্দাগিরি ও পাল্টা গোয়েন্দাগিরি কার্যক্রম তাদের বৃহত্তর কৌশলগত হিসাব-নিকাশে ভূমিকা রাখে।’
হাইফায় আটক হওয়া ইসরায়েলিরা ইরানের হয়ে গত দুই বছরে ৬০০–৭০০টি গোয়েন্দা মিশন পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ করেছে তেল আবিব। এসব পরিকল্পনার মধ্যে একটি ছিল— ইসরায়েলের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যা করা। এটি সম্ভবত ইসরায়েলের হাইপ্রোফাইল হত্যাকাণ্ডের মতো একটি সম্ভাব্য গুপ্তহত্যা পরিকল্পনা। যেমনটা ছিল, গত জুলাইয়ে ইরানে হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে সিনা টুসি বলেন, ‘একাধিক হাইপ্রোফাইল হত্যাকাণ্ড এবং অন্তর্ঘাতমূলক মিশনের মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানে তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে। যা মূলত দেশটিতে মোসাদের গভীর অনুপ্রবেশকেই নির্দেশ করে। অন্যদিকে, ইরান ইসরায়েলে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে এবং এই বিষয়টি ইরানের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কয়েকজন ইসরায়েলি নাগরিককে গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।’
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হামজা আত্তার এমনটাই জানিয়েছেন। তবে বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে ইসরায়েলি সমাজে মৌলিক পরিবর্তন এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সেই বিভাজনগুলোর ফাটল দিয়ে এখন প্রবেশ করছে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থা। হাইফায় আটক হওয়া ১৪ জন এজেন্টের প্রথম দলটি ১০ বছর আগে আজারবাইজান থেকে ইসরায়েলে গিয়েছিল। দ্বিতীয় দলটি আরব–ইসরায়েলি হিসেবে পরিচিত। এই দুটি দলই ইসরায়েলি সমাজের মূলধারার বাইরের বলে মনে করা হলেও—এই পরিবর্তনকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন আত্তার।
তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটা সময়ে পুরো ইসরায়েলকে একটি একক পরিচয়ের আওতায় ধরা হতো...তাদের এমনভাবে পড়ানো হতো যে, তারা তাদের আরব প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত আক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে আছে। যদি ইরান এই দুই দলকে নিজের পক্ষে কাজ করতে রাজি করিয়ে থাকতে পারে, তবে তারা আরও অনেককেই তাদের দলে ভেড়াতে পেরেছে বলেই মনে হয়।’
ইসরায়েলি সমাজে ইরানের প্রবেশের প্রচেষ্টা সম্প্রতি সামনে এলেও ইসরায়েল যে দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে আসছে, সে বিষয়ে আগেই অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করছে ইরানের বিশাল আয়তন, যেখানে জনসংখ্যা ইসরায়েলের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৯ গুণ। ইরানের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন ইসরায়েলকে সুবিধা দিয়েছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের যুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক আহরন ব্রেগম্যান বলেন, ‘১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর থেকে ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে, দেশটির শাসকগোষ্ঠীকে ভেতর থেকে উৎখাত করা। এটাই তাদের (ইসরায়েলের) কাজের পদ্ধতির মূলে। ইরানের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনার পরিকল্পনা করা, চর নিয়োগ দেওয়ার ও গোয়েন্দাগিরি শক্তিশালী করার জন্য ইসরায়েল হাতে অনেক সময় পেয়েছে।’
অন্যদিকে, ইরান সম্ভবত তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অনেকাংশেই মিত্রদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে বিনিয়োগ করেছে। যেমন, লেবাননের হিজবুল্লাহ, যারা তাদের তথ্য সরবরাহ করে। ইরানি গোয়েন্দা কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ছিল মূলত ইসরায়েলে কাজ করা ফিলিস্তিনিদের নিয়োগ দেওয়া। যারা সেখানে প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হয়। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে ইসরায়েলি সমাজে প্রবেশের চেষ্টাও ইরান করেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসরায়েলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরানি গোয়েন্দারা বিচারবিভাগীয় সংস্কারের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ এবং গাজায় আটক বন্দীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজে লাগিয়ে বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। তারা ইসরায়েলিদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন স্থাপনার ছবি তুলতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল।
তবে ইরান ইসরায়েলে ততটা সফল নয়, যতটা সফল ইরানে ইসরায়েল। এই বিষয়ে সিনা টুসি বলেন, ‘তবে, ইরানে ইসরায়েলের গোয়েন্দা কার্যক্রম অনেক বেশি উন্নত এবং বিস্তৃত বলে মনে হয়। ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা, ইসমাইল হানিয়ার মতো উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের টার্গেট করা, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে অন্তর্ঘাত চালানো এবং ইরানের গভীরে ইসরায়েলের হামলা চালানোর সক্ষমতা ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল ইরানের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্থানগুলোতে কতটা কার্যকরভাবে অনুপ্রবেশ করেছে।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরান বিরোধী গুপ্তচর সংস্থাগুলোর কাছে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরে এবং তা প্রকাশিত হতে দেয় এবং আবার পরে সেই তথ্যকে মিথ্যা প্রমাণিত করে তারাই। বিরোধী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আস্থার সংকটে ফেলে দিতে এটা একটি শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে।
নিউইয়র্কভিত্তিক সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের ফেলো ভিনা আলী খান বলেন, ‘ইরানের ইতিহাসে পশ্চিমা গণমাধ্যমে মিথ্যা খবর প্রচার করার নজির রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে কাজ করা সেসব দেশের ভাষার কিন্তু ইরান থেকে পরিচালিত গণমাধ্যম রয়েছে। খবর ছড়ানোর পর ইরান সেগুলোকে নিজেরাই মিথ্যা প্রমাণ করে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অধিকতর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে।’
উদাহরণ হিসেবে ভিনা আলী বলেন, ‘ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, ইরানের বিপ্লবী গার্ডবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল ক্বানি মারা গেছেন বা আটক হয়েছেন। কিন্তু পরে ইরান তাঁকে জীবিত প্রমাণ করে। এভাবে, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পুনরায় এমন সব বার্তা প্রচার করে—যার মাধ্যমে দেশটি প্রমাণ করে দেয় যে, পশ্চিমা গণমাধ্যম পুরোপুরি ভুল ছিল। এ কারণে পশ্চিমা গণমাধ্যমের ওপর বিশ্বাস করা উচিত নয়।’
পাবলিক ন্যারেটিভ বা জনগণের কাছে প্রচলিত বয়ানকে নিয়ন্ত্রণ করা গুপ্তচরবৃত্তির জগতে প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখার অন্যতম কৌশল। এ বিষয়ে ব্রেগম্যান বলেন, এটি প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্যও জরুরি। শিনবেত ও পুলিশ সচেতনভাবে ইরানি গুপ্তচর গ্রেপ্তারের খবর প্রচার করছে। এটি মূলত অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য। তারা (ইসরায়েল) তাদের প্রচেষ্টাগুলো প্রকাশ করছে। তারা মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, তারা তৎপর আছে এবং যারা ইরানের হয়ে কাজ করবে তাদের পাকড়াও করা হবে।’
একইভাবে, সিনা টুসি উল্লেখ করেছেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রাধান্য দেওয়ার পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক ব্যর্থতা ঢাকা পড়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার বিষয়টি আগেভাগে জানতে না পারা।
টুসি বলেন, ‘এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসরায়েলি এস্টাবলিশমেন্ট এবং এর সমর্থক গণমাধ্যম ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার অদৃশ্য শক্তির যে ছবি তুলে ধরে তা বাস্তবতার সঙ্গে সব সময় মেলে না। ইসরায়েলের কৌশলগত সাফল্য থাকার পরও গোপনীয় গোয়েন্দা কার্যক্রম বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অপ্রতিরোধ্য হওয়ার ধারণা দেশের ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীল কৌশলগত পরিস্থিতির কারণে বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছে।’
টুসি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের গোয়েন্দা সক্ষমতা যথেষ্ট শক্তিশালী, তবে এটি এখন একাধিক শত্রু ও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে।’
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
২২ নভেম্বর ২০২৪
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
২২ নভেম্বর ২০২৪
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
২২ নভেম্বর ২০২৪
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
২২ নভেম্বর ২০২৪
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে