অনলাইন ডেস্ক
দিন কয়েক আগে, ইসরায়েলি হামলায় ১৫ ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও সিভিল ডিফেন্স কর্মী নিহত হন। তাঁরা যোদ্ধা ছিলেন না, জঙ্গি ছিলেন না। রকেট বা অস্ত্র লুকিয়ে রাখা কেউও ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন সাহায্যকর্মী, মানবতাবাদী। তাঁরা বোমার আঘাতে হতাহতদের দিকে ছুটে যাওয়া সেবক ছিলেন। অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৩ মার্চ, দক্ষিণ গাজার রাফাহে। ইসরায়েলি বাহিনী অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার এটি গাড়িবহর লক্ষ্য করে হামলা চালালে ৮ রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের ৬ জন এবং জাতিসংঘের এক কর্মী নিহত হন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, গাড়িগুলো চিহ্নিত ছিল না এবং সেগুলোতে জঙ্গিদের বহন করা হচ্ছিল বলে সন্দেহ ছিল। কিন্তু সেটা ছিল মিথ্যা।
নিহত চিকিৎসাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের ফোন থেকে উদ্ধার করা ফুটেজে দেখা যায়, গাড়িগুলোতে লাল আলো জ্বালানো ছিল, গাড়িগুলো স্পষ্ট চিহ্নও এবং কোনো অস্ত্রও পাওয়া যায়নি। পরে রিফাতের মরদেহ পরে আরও ১৩ জনের সঙ্গে একটি গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহতদের কয়েকজনের মাথা বা বুক গুলিবিদ্ধ ছিল এবং তাদের হাত বাঁধা ছিল।
মৃত্যুর পরেও এই হতভাগা সাহায্যকর্মীদের প্রমাণ করতে হয়েছিল যে, তাঁরা সাহায্যকর্মীই ছিলেন। এবং এখনো, পশ্চিমা গণমাধ্যমের বেশির ভাগই ইসরায়েলের ভাষ্যই প্রথম সূত্র হিসেবে তাদের সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছে। তারা ব্যবহার করেছে, ‘ইসরায়েল বলছে...’, ‘আইডিএফ জানিয়েছে...’, ‘একটি সামরিক সূত্র জানিয়েছে...।’
এসব সাবধানে লেখা লাইনগুলো রেড ক্রিসেন্টের কর্মীদের রক্তমাখা পোশাকের চেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। প্রমাণের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এগুলো। সত্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি নতুন কিছু নয়, কোনো বিচ্ছিন্ন ভুল নয় বরং এটি একটা ব্যবস্থা।
পশ্চিমা গণমাধ্যমে এটি এমন এক ব্যবস্থা যেখানে ফিলিস্তিনিদের ‘অপরাধী’ হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে হাসপাতালগুলোকে প্রমাণ করতে হয় যে, তারা কেবলই হাসপাতাল, স্কুলকে প্রমাণ করতে হয় তারা কেবলই স্কুল এবং শিশুদের প্রমাণ করতে হয় যে, তারা মানবঢাল নয়। এটি এমন এক ব্যবস্থা যেখানে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকে হুমকি হিসেবে গণ্য করা হয়। পশ্চিমা গণমাধ্যম তাদের এমন এক হুমকি বলে মনে করে—যাদের আজীবন লেগে যে তারা হুমকি নয় প্রমাণ করতে। আর কেউ কেউ তো প্রমাণ, ব্যাখ্যা, যাচাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ইসরায়েলি অস্ত্রের আঘাতে নিজেরাই শেষ হয়ে যায়।
অমানবিকীকরণ প্রক্রিয়া দেখতে ঠিক এ রকমই। আমি গাজায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং সেখানেই বড় হয়েছি। আমি জানি, রেড ক্রিসেন্ট ভেস্টের মানে কী। এর মানে হলো—যখন আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, তখন একমাত্র আশা এই ভেস্ট। এর মানে হলো—কেউ সাহায্য করতে আসছে—লড়াই করতে বা মারতে নয়, বরং বাঁচাতে। এর মানে হলো—ধ্বংসস্তূপ আর মৃত্যুর মাঝেও কারও কারও কাছে ফিলিস্তিনিদের জীবনের মূল্য আছে।
আমি এটাও জানি, সেই আস্থা, বিশ্বাসের বাহকদের হারানোর মানে কী। চিকিৎসাকর্মীদের নিহত হতে দেখা এবং তারপর তাদের অপবাদ দিতে, দেখা, তাদের সহকর্মীরা যখন গণকবর খুঁড়ছেন তখন বিশ্বকে তাদের নির্দোষিতা নিয়ে বিতর্ক করতে শোনা, যারা জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাদের পরিসংখ্যানে পরিণত হতে দেখা, সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হতে দেখা এবং তারপর ভুলে যাওয়া—এই পুরোটাই মূলত এক ডিহিউম্যানাইজেশন বা অমানবিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ।
অমানবিকীকরণ কেবল বাগাড়ম্বরপূর্ণ কোনো সমস্যা নয়। এটি শুধু গণমাধ্যমের ফ্রেমিং বা রাজনৈতিক ভাষা নয়। এটি মানুষকে হত্যা করে, ইতিহাস থেকে মুছে ফেলে। যখন পুরো সম্প্রদায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তখন এটি বিশ্বকে মূল ঘটনা থেকে দূরে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
এটি আমাদের (ফিলিস্তিনিদের) বলে—তোমাদের জীবন একই রকম মূল্যবান নয়। যতক্ষণ না আমরা যাচাই করে নিশ্চিত হতে পারি, ততক্ষণ তোমাদের দুঃখ বাস্তব নয়। যতক্ষণ না আমরা অনুমোদন করি, ততক্ষণ তোমার মৃত্যু মর্মান্তিক নয়।
আর এ কারণেই ১৫ চিকিৎসা ও উদ্ধারকর্মীর মৃত্যু এত গভীরভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের খুন হওয়ার গল্প কেবল নৃশংসতার বিষয় নয়। এটি সেই ‘মেশিনারি অব ডাউট’ বা ‘সন্দেহের যন্ত্রের’ বিষয়, যা কেবল ফিলিস্তিনিরা নিহত হলেই চালু হয়। এটি সেই বিষয়, যেখানে শোক করার সময়ও আমাদের নিজেদেরই ফরেনসিক তদন্তকারী, নিজেদের আইনি দল, নিজেদের জনসংযোগ সংস্থা হতে হয়। অন্য কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায় না।
এই বোঝা আর কারও ওপর চাপানো হয় না। যখন পশ্চিমা সাংবাদিকেরা নিহত হন, তখন তাদের সম্মানিত করা হয়। যখন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক মারা যান, তখন তাদের নাম ও মুখ বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। আর যখন ফিলিস্তিনিরা মারা যান, তখন তাদের পরিবারকে প্রথমে প্রমাণ করতে হয় যে তারা সন্ত্রাসী ছিল না। আমরা সর্বদা নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত দোষী এবং প্রায় সব সময়ই।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা গণমাধ্যম ফিলিস্তিনি সূত্রের চেয়ে ইসরায়েলি সূত্রের উদ্ধৃতি অনেক বেশি দেয় এবং ইসরায়েলি বিবৃতির বিরুদ্ধে একই কঠোরতা দেখায় না। ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর কেবল প্রান্তিকই নয়, প্রায়শই অবিশ্বাস্য বা আবেগপ্রবণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়—যেন শোক সত্যকে অস্বীকার করে, যেন বেদনা আমাদের অযৌক্তিক করে তোলে।
এই গণমাধ্যম চিত্রায়ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে ইন্ধন জোগায় এবং প্রতিফলিত করে—অস্ত্র বিক্রি থেকে শুরু করে কূটনৈতিক সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক ফোরামে নীরবতা থেকে শুরু করে জাতিসংঘের ভেটো পর্যন্ত। সবকিছুই সংযুক্ত। যখন ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণরূপে মানুষ হিসেবে দেখা হয় না, তখন তাদের হত্যাকারীদের সম্পূর্ণরূপে দায়ী হিসেবেও দেখা হয় না।
এবং এর মানসিক প্রভাব অপরিসীম। আমরা শুধু শোক করি না; আমরা আমাদের শোককে রক্ষা করি। আমরা শুধু আমাদের মৃতদের কবর দিই না; আমরা তাদের মৃত্যুকে স্বীকৃতি দেওয়ানোর জন্য লড়াই করি। আমরা এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ নিয়ে বাঁচি যা কোনো সম্প্রদায়ের সহ্য করা উচিত নয়—সেই চাপ যেখানে আমাদের প্রমাণ করতে হয় যে, আমরা সেই ‘ব্যক্তি’ নই যা বিশ্ব এরই মধ্যে আমাদের বানিয়ে দিয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় নিহত এই ১৫ যেকোনো বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসা বীর ছিলেন। তাঁরা বিপদের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁরা তাদের জনগণের সেবা করেছেন। তাঁরা জীবনের পবিত্রতায় বিশ্বাস করতেন, এমনকি এমন এক জায়গায় যেখানে জীবন প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে। তাদের স্মৃতি পবিত্র হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। পরিবর্তে, তাদের গল্প আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
আমরা মানুষ যে মানুষ, এটি প্রমাণ করানো যে বাধ্যবাধকতা আমাদের ওপর চাপানো হয়েছে বিশ্বকে সেটা বন্ধ করতে হবে। আমরা ফিলিস্তিনিরা ‘মিথ্যা বলি’ এবং ‘আমাদের হত্যাকারীদের সত্য বলে’ ধারণা বন্ধ করতে হবে। এমন এক ন্যারেটিভ বা বয়ান গ্রহণ করা বন্ধ করতে হবে যেখানে ফিলিস্তিনিদের শোক করার জন্য সাধু হতে হবে।
ইসরায়েলি হামলায় নিহত এই চিকিৎসাকর্মীদের বিশ্বাস করা উচিত ছিল বিশ্ববাসীর। তাদের রক্ষা করা উচিত ছিল এবং তারা ন্যায়বিচার পাওয়ার যোগ্য। তবে সবচেয়ে বেশি, তারা প্রাপ্য—যেটা আমাদের সবারই প্রাপ্য—মানুষ হিসেবে বিবেচিত হওয়া।
আল-জাজিরার লেখা ফিলিস্তিনি রাজনীতি বিশ্লেষক ও নাট্যকার আহমেদ নাজিরের লেখা নিবন্ধ অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান
দিন কয়েক আগে, ইসরায়েলি হামলায় ১৫ ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও সিভিল ডিফেন্স কর্মী নিহত হন। তাঁরা যোদ্ধা ছিলেন না, জঙ্গি ছিলেন না। রকেট বা অস্ত্র লুকিয়ে রাখা কেউও ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন সাহায্যকর্মী, মানবতাবাদী। তাঁরা বোমার আঘাতে হতাহতদের দিকে ছুটে যাওয়া সেবক ছিলেন। অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৩ মার্চ, দক্ষিণ গাজার রাফাহে। ইসরায়েলি বাহিনী অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার এটি গাড়িবহর লক্ষ্য করে হামলা চালালে ৮ রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের ৬ জন এবং জাতিসংঘের এক কর্মী নিহত হন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, গাড়িগুলো চিহ্নিত ছিল না এবং সেগুলোতে জঙ্গিদের বহন করা হচ্ছিল বলে সন্দেহ ছিল। কিন্তু সেটা ছিল মিথ্যা।
নিহত চিকিৎসাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের ফোন থেকে উদ্ধার করা ফুটেজে দেখা যায়, গাড়িগুলোতে লাল আলো জ্বালানো ছিল, গাড়িগুলো স্পষ্ট চিহ্নও এবং কোনো অস্ত্রও পাওয়া যায়নি। পরে রিফাতের মরদেহ পরে আরও ১৩ জনের সঙ্গে একটি গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহতদের কয়েকজনের মাথা বা বুক গুলিবিদ্ধ ছিল এবং তাদের হাত বাঁধা ছিল।
মৃত্যুর পরেও এই হতভাগা সাহায্যকর্মীদের প্রমাণ করতে হয়েছিল যে, তাঁরা সাহায্যকর্মীই ছিলেন। এবং এখনো, পশ্চিমা গণমাধ্যমের বেশির ভাগই ইসরায়েলের ভাষ্যই প্রথম সূত্র হিসেবে তাদের সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছে। তারা ব্যবহার করেছে, ‘ইসরায়েল বলছে...’, ‘আইডিএফ জানিয়েছে...’, ‘একটি সামরিক সূত্র জানিয়েছে...।’
এসব সাবধানে লেখা লাইনগুলো রেড ক্রিসেন্টের কর্মীদের রক্তমাখা পোশাকের চেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। প্রমাণের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এগুলো। সত্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি নতুন কিছু নয়, কোনো বিচ্ছিন্ন ভুল নয় বরং এটি একটা ব্যবস্থা।
পশ্চিমা গণমাধ্যমে এটি এমন এক ব্যবস্থা যেখানে ফিলিস্তিনিদের ‘অপরাধী’ হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে হাসপাতালগুলোকে প্রমাণ করতে হয় যে, তারা কেবলই হাসপাতাল, স্কুলকে প্রমাণ করতে হয় তারা কেবলই স্কুল এবং শিশুদের প্রমাণ করতে হয় যে, তারা মানবঢাল নয়। এটি এমন এক ব্যবস্থা যেখানে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকে হুমকি হিসেবে গণ্য করা হয়। পশ্চিমা গণমাধ্যম তাদের এমন এক হুমকি বলে মনে করে—যাদের আজীবন লেগে যে তারা হুমকি নয় প্রমাণ করতে। আর কেউ কেউ তো প্রমাণ, ব্যাখ্যা, যাচাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ইসরায়েলি অস্ত্রের আঘাতে নিজেরাই শেষ হয়ে যায়।
অমানবিকীকরণ প্রক্রিয়া দেখতে ঠিক এ রকমই। আমি গাজায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং সেখানেই বড় হয়েছি। আমি জানি, রেড ক্রিসেন্ট ভেস্টের মানে কী। এর মানে হলো—যখন আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, তখন একমাত্র আশা এই ভেস্ট। এর মানে হলো—কেউ সাহায্য করতে আসছে—লড়াই করতে বা মারতে নয়, বরং বাঁচাতে। এর মানে হলো—ধ্বংসস্তূপ আর মৃত্যুর মাঝেও কারও কারও কাছে ফিলিস্তিনিদের জীবনের মূল্য আছে।
আমি এটাও জানি, সেই আস্থা, বিশ্বাসের বাহকদের হারানোর মানে কী। চিকিৎসাকর্মীদের নিহত হতে দেখা এবং তারপর তাদের অপবাদ দিতে, দেখা, তাদের সহকর্মীরা যখন গণকবর খুঁড়ছেন তখন বিশ্বকে তাদের নির্দোষিতা নিয়ে বিতর্ক করতে শোনা, যারা জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাদের পরিসংখ্যানে পরিণত হতে দেখা, সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হতে দেখা এবং তারপর ভুলে যাওয়া—এই পুরোটাই মূলত এক ডিহিউম্যানাইজেশন বা অমানবিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ।
অমানবিকীকরণ কেবল বাগাড়ম্বরপূর্ণ কোনো সমস্যা নয়। এটি শুধু গণমাধ্যমের ফ্রেমিং বা রাজনৈতিক ভাষা নয়। এটি মানুষকে হত্যা করে, ইতিহাস থেকে মুছে ফেলে। যখন পুরো সম্প্রদায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তখন এটি বিশ্বকে মূল ঘটনা থেকে দূরে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
এটি আমাদের (ফিলিস্তিনিদের) বলে—তোমাদের জীবন একই রকম মূল্যবান নয়। যতক্ষণ না আমরা যাচাই করে নিশ্চিত হতে পারি, ততক্ষণ তোমাদের দুঃখ বাস্তব নয়। যতক্ষণ না আমরা অনুমোদন করি, ততক্ষণ তোমার মৃত্যু মর্মান্তিক নয়।
আর এ কারণেই ১৫ চিকিৎসা ও উদ্ধারকর্মীর মৃত্যু এত গভীরভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের খুন হওয়ার গল্প কেবল নৃশংসতার বিষয় নয়। এটি সেই ‘মেশিনারি অব ডাউট’ বা ‘সন্দেহের যন্ত্রের’ বিষয়, যা কেবল ফিলিস্তিনিরা নিহত হলেই চালু হয়। এটি সেই বিষয়, যেখানে শোক করার সময়ও আমাদের নিজেদেরই ফরেনসিক তদন্তকারী, নিজেদের আইনি দল, নিজেদের জনসংযোগ সংস্থা হতে হয়। অন্য কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায় না।
এই বোঝা আর কারও ওপর চাপানো হয় না। যখন পশ্চিমা সাংবাদিকেরা নিহত হন, তখন তাদের সম্মানিত করা হয়। যখন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক মারা যান, তখন তাদের নাম ও মুখ বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। আর যখন ফিলিস্তিনিরা মারা যান, তখন তাদের পরিবারকে প্রথমে প্রমাণ করতে হয় যে তারা সন্ত্রাসী ছিল না। আমরা সর্বদা নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত দোষী এবং প্রায় সব সময়ই।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা গণমাধ্যম ফিলিস্তিনি সূত্রের চেয়ে ইসরায়েলি সূত্রের উদ্ধৃতি অনেক বেশি দেয় এবং ইসরায়েলি বিবৃতির বিরুদ্ধে একই কঠোরতা দেখায় না। ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর কেবল প্রান্তিকই নয়, প্রায়শই অবিশ্বাস্য বা আবেগপ্রবণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়—যেন শোক সত্যকে অস্বীকার করে, যেন বেদনা আমাদের অযৌক্তিক করে তোলে।
এই গণমাধ্যম চিত্রায়ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে ইন্ধন জোগায় এবং প্রতিফলিত করে—অস্ত্র বিক্রি থেকে শুরু করে কূটনৈতিক সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক ফোরামে নীরবতা থেকে শুরু করে জাতিসংঘের ভেটো পর্যন্ত। সবকিছুই সংযুক্ত। যখন ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণরূপে মানুষ হিসেবে দেখা হয় না, তখন তাদের হত্যাকারীদের সম্পূর্ণরূপে দায়ী হিসেবেও দেখা হয় না।
এবং এর মানসিক প্রভাব অপরিসীম। আমরা শুধু শোক করি না; আমরা আমাদের শোককে রক্ষা করি। আমরা শুধু আমাদের মৃতদের কবর দিই না; আমরা তাদের মৃত্যুকে স্বীকৃতি দেওয়ানোর জন্য লড়াই করি। আমরা এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ নিয়ে বাঁচি যা কোনো সম্প্রদায়ের সহ্য করা উচিত নয়—সেই চাপ যেখানে আমাদের প্রমাণ করতে হয় যে, আমরা সেই ‘ব্যক্তি’ নই যা বিশ্ব এরই মধ্যে আমাদের বানিয়ে দিয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় নিহত এই ১৫ যেকোনো বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসা বীর ছিলেন। তাঁরা বিপদের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁরা তাদের জনগণের সেবা করেছেন। তাঁরা জীবনের পবিত্রতায় বিশ্বাস করতেন, এমনকি এমন এক জায়গায় যেখানে জীবন প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে। তাদের স্মৃতি পবিত্র হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। পরিবর্তে, তাদের গল্প আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
আমরা মানুষ যে মানুষ, এটি প্রমাণ করানো যে বাধ্যবাধকতা আমাদের ওপর চাপানো হয়েছে বিশ্বকে সেটা বন্ধ করতে হবে। আমরা ফিলিস্তিনিরা ‘মিথ্যা বলি’ এবং ‘আমাদের হত্যাকারীদের সত্য বলে’ ধারণা বন্ধ করতে হবে। এমন এক ন্যারেটিভ বা বয়ান গ্রহণ করা বন্ধ করতে হবে যেখানে ফিলিস্তিনিদের শোক করার জন্য সাধু হতে হবে।
ইসরায়েলি হামলায় নিহত এই চিকিৎসাকর্মীদের বিশ্বাস করা উচিত ছিল বিশ্ববাসীর। তাদের রক্ষা করা উচিত ছিল এবং তারা ন্যায়বিচার পাওয়ার যোগ্য। তবে সবচেয়ে বেশি, তারা প্রাপ্য—যেটা আমাদের সবারই প্রাপ্য—মানুষ হিসেবে বিবেচিত হওয়া।
আল-জাজিরার লেখা ফিলিস্তিনি রাজনীতি বিশ্লেষক ও নাট্যকার আহমেদ নাজিরের লেখা নিবন্ধ অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান
আজ ১৭ এপ্রিল। প্রতি বছর এই দিনটিতে পালিত হয় ‘ফিলিস্তিনি বন্দী দিবস’। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ১৯৭৪ সালে বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া প্রথম ফিলিস্তিনি মাহমুদ বাকর হিজ
১৩ ঘণ্টা আগেচীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করছে। এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ ক্রমশ বাড়ছে। তবে চীন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক চাপিয়েই চীনের প্রতিশোধ নেওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। বেইজিং এখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা খনিজ ও চুম্বক রপ্তানির রাশ টেনেছে।
১৫ ঘণ্টা আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এলোমেলো ও লাগামহীন শুল্কারোপের কারণে বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির বাজার খ্যাত আসিয়ানের দেশগুলো বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে। ট্রাম্পের শুল্কের খড়্গ নেমে এসেছে চীনের ওপরও। এই অবস্থায় চীন ও আসিয়ান পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প নিয়েছে। আর তাই পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আসিয়ান সদস্য...
৩ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ ক্যাম্পেইন এগিয়ে নিতে বিশ্বের দেশগুলোর ওপর বিশাল শুল্ক আরোপ করেছিলেন। যদিও পরে সেই শুল্ক তিনি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। কিন্তু চীনের ওপর তিনি শুল্ক বাড়িয়েই চলেছেন। জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় কাছাকাছি পরিমাণে
৬ দিন আগে