আজকের পত্রিকা ডেস্ক

চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের যুদ্ধ শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে গণ্য করবে তাঁর সরকার। তার আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এপ্রিলে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৫ জন নিহত হওয়ার পর ভারত দোষ চাপিয়েছিল পাকিস্তানের ওপর। ইসলামাবাদ সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও মে মাসের গোড়ার দিকে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। এতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র আকাশযুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় দুই দেশই একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করে।
চার দিন পর দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য তখন নয়া এক ‘রেড লাইন বা চূড়ান্ত সীমারেখা’ টেনে দেয়। তাঁর বক্তব্য ভবিষ্যতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে একেবারে ন্যূনতম সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
এরপর গত সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি কেঁপে ওঠে এক বড় বিস্ফোরণে। ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই ওই বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত ও দুই ডজনের মতো আহত হয়। ভারত সরকার এই ‘সন্ত্রাসী হামলার’ তদন্ত করছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। যাদের দায়িত্বই হলো সন্ত্রাসবিরোধী মামলার অনুসন্ধান করা। হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
হামলার পরদিন মঙ্গলবার মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তান ভারতকে দায়ী করেছে। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত নিজেদের রাজধানীতে আগের দিন ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করা থেকে বিরত রয়েছে।
এমন প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক। কারণ, অতীতে ভারতের তদন্ত সংস্থাগুলো হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। কিন্তু এবার বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির সাবধানী নীরবতা অনেকের নজর কেড়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তকারীরা হামলাকারীদের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন কাশ্মীরের দিক থেকে, আর সেখানে পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও মিলেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মে মাসের বিমানযুদ্ধের পর ভারত যেভাবে উচ্চকণ্ঠে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছিল, এখন সেই অবস্থানই ভারতের নিজস্ব কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করেছে। মোদি যেভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে ভবিষ্যতে যেকোনো ‘সন্ত্রাসী হামলাকে’ সরাসরি যুদ্ধ হিসেবে দেখা হবে—সেই ‘চূড়ান্ত সীমা’ এখন সরকারের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। কারণ, যদি তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে নয়াদিল্লির বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করে, তাহলে জনগণের মধ্যে সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানে সামরিক পাল্টা আঘাতের দাবি উঠবে।
সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের নির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, ‘ভারত সরকার নিজেই নিজের জন্য ফাঁদ তৈরি করেছে—নিজের বানানো ফাঁদে নিজেই আটকা পড়েছে। তারা বলেছে, সন্ত্রাস মানেই যুদ্ধ, কিন্তু এর কোনো স্পষ্ট নীতি তৈরি করেনি। এখন সেই কথারই ফল ভুগছে তারা। এটা কোনো নীতি নয়, বরং স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভের জন্য নেওয়া একেবারে বোকামিতে পূর্ণ অবস্থান।’
লালকেল্লার জনাকীর্ণ বাজারে বিস্ফোরণ ঘটার কয়েক ঘণ্টা আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলিশ নয়াদিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান চালায়। তাদের দাবি, একটি ‘আন্তরাজ্য ও আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’ ধ্বংস করেছে। পুলিশের ভাষ্য, ওই নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধ সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) ও আনসার গাজওয়াতুল-হিন্দের (এজিইউএইচ) সঙ্গে যুক্ত। জেইএম পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। মে মাসে পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলায় এই গোষ্ঠীর কয়েকটি ঘাঁটিও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
অন্যদিকে এজিইউএইচ হলো আল-কায়েদা ঘনিষ্ঠ কাশ্মীরি সংগঠন, যা হিজবুল মুজাহিদীন থেকে আলাদা হয়ে গঠিত হয়েছে। একসময় কাশ্মীরি বিদ্রোহী নেতা জাকির মুসার নেতৃত্বে সংগঠনটি সক্রিয় ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের মে মাসে মুসা নিহত হওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীটি তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ হয়ে গেছে।
উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযানের পর কাশ্মীর পুলিশ জানায়, তারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি আইইডি বা তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি বিস্ফোরক যন্ত্র তৈরির উপকরণ যেমন, রাসায়নিক পদার্থ, ইলেকট্রনিক সার্কিট এবং রিমোট কন্ট্রোল ইত্যাদি।
পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে, যার মধ্যে দুই কাশ্মীরি চিকিৎসক রয়েছেন। অপর চিকিৎসক দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার উমর নবী—প্রথম দফায় গ্রেপ্তারের পর পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা এখন ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে লালকেল্লার বাইরে বিস্ফোরিত গাড়িটি উমর নবী চালাচ্ছিলেন কি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা পাওয়া গেছে যে দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক কিছু গোষ্ঠীর লজিস্টিক সহায়তা ছিল। তবে যাঁরা বাস্তবে হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছেন তাঁরা স্থানীয় এবং নিজেরাই চরমপন্থায় জড়িয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো খতিয়ে দেখছি তারা কীভাবে এর জন্য অর্থ জোগাড় করেছিল।’
বিশ্লেষকদের মতে, তদন্তে যা-ই বেরিয়ে আসুক না কেন, এপ্রিলের হামলার পর ভারত যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলে সেটাই এবার কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে নয়াদিল্লিকে জটিল অবস্থায় ফেলবে। ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, নয়াদিল্লি এখন নিজস্ব নতুন নীতিগত মতাদর্শের ফাঁদে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি সরকার প্রকাশ্যে এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করে, তাহলে কৌশলগত ও রাজনৈতিকভাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো বড় কিছু করে দেখানোর চাপ পড়বে।’
বিশ্লেষক অজয় সাহনি বলেন, মোদির সরকার এখনো স্পষ্টভাবে বলেনি তাদের ধারণায় কোন ধরনের হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ধরা হবে, বিশেষ করে পেহেলগাম-পরবর্তী নীতির প্রেক্ষাপটে। সাহনির প্রশ্ন, ‘যদি কোনো সন্ত্রাসী মাত্র একজন সাধারণ মানুষকেও গুলি করে হত্যা করে, সেটিও কি সন্ত্রাস নয়?’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য, দেশের ভেতরের নির্দিষ্ট শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য।’ সাহনি বলেন, এখন দিল্লির বিস্ফোরণের পর সরকারকে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
কুগেলম্যান জানান, পেহেলগাম হামলার পর মে মাসে পাকিস্তানে বিমান হামলা করায় ভারতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ব্যাপক সমালোচনার মুখে’ পড়তে হয়। কারণ, ভারত ইসলামাবাদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘এর ফলে সংঘাত চালকালীন পুরো সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ধরে রাখা ভারতের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ উপস্থাপন করতে ভারতের অস্বীকৃতি বা ব্যর্থতা ইসলামাবাদের অবস্থানকেই শক্তিশালী করেছে। কারণ, পাকিস্তান নিজেকে আক্রমণের শিকার হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
যা হোক, লালকেল্লা বিস্ফোরণের পর এখন পর্যন্ত তদন্ত ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ঘিরেই চলছে। সোমবারের বিস্ফোরণের পর থেকে কাশ্মীরে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে সন্দেহভাজনদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।
কাশ্মীরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেন, অঞ্চলটিতে কঠোর অভিযান চললেও ভারত পেহেলগাম হামলার পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া থেকে কিছুটা শিক্ষা নিয়েছে বলেই মনে হয়। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোতে এখন এক ধরনের পরিণত উপলব্ধি তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়।’
গত মে মাসের যুদ্ধ ভারতের ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী লাখ লাখ কাশ্মীরির জীবন ধ্বংস করে দেয়। সীমান্তবর্তী বহু গ্রাম খালি করতে হয়, দুই পক্ষেই সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। শওকত বলেন, পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিকভাবে দোষারোপ না করে অপেক্ষা করা ভারতীয় সংস্থাগুলোকে নিজেদের পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করার সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যথায়, পাকিস্তানকে দোষারোপ করা মানে নিজের দায় এড়ানোর একটা পুরোনো কৌশল।’
ভারতের এই দায় না চাপানোর বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি বারবার দাবি করেছেন যে তিনিই মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়ে দিয়েছেন। আর ভারত বারবার এটি অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার হুমকি ব্যবহার করেছিলেন। আর তাতেই ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হয়।
বর্তমানে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। দীর্ঘ আলোচনার পর দুই দেশ এখন একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের একাধিক পর্যায়ে একাধিকবার হোয়াইট হাউসে আতিথেয়তা দিয়েছে।
কুগেলম্যান বলেন, ট্রাম্প এই সমীকরণে উভয় দেশের জন্যই একটি জটিল উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, কোনো দেশই তাঁকে বিরক্ত করতে চায় না। কারণ, এতে তিনি যে যুদ্ধবিরতিকে নিজের বড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে দাবি করেছেন, তা ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে হতে পারে।
তবে বিষয়টা শুধু ট্রাম্পকে ঘিরে নয়। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ভূরাজনীতি বিশ্লেষক হর্ষ পন্ত বলেছেন, ভারতের কৌশল সব সময় ‘সংঘাত এড়িয়ে চলা।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে ভারত এখন নিজের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে চায়।’
হর্ষ পন্তর ভাষায়, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতে জড়িয়ে থাকা ভারতের পক্ষে কোনোভাবেই সুবিধাজনক নয়। যুদ্ধাবস্থার মতো অবস্থানে থাকতে হলে অর্থনৈতিকভাবে এবং কৌশলগতভাবেও ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, যেসব সম্পদ উন্নয়নে ব্যবহার করা যেত, সেগুলো তখন পাকিস্তানকে কেন্দ্র করেই ব্যয় করতে হয়।’
তবে মে মাসের সংঘাতের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত নতুন সীমারেখাগুলো দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে দায়ীদের নাম প্রকাশে ভারতের সতর্কতার মূল কারণ—এই মতের সঙ্গে একমত নন পন্ত। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ কিছু মানুষকে আটক করেছিল, যাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল। ফলে তারা বলতে পারে যে একটি বড় ষড়যন্ত্র উন্মোচন এবং ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা পেহেলগামের ঘটনার মতো ছিল না।’
পন্ত আরও বলেন, ‘এই বিস্ফোরণ সম্ভবত পরিকল্পিত ছিল না। এটি একধরনের দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।’ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি ইঙ্গিত করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন পালানোর চেষ্টা করার সময় গাড়িটি বিস্ফোরিত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, দিল্লি সরকার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে না।’
এই মনোভাব ভারতের অতীতের বিভিন্ন প্রাণঘাতী শহুরে হামলার প্রতিক্রিয়ার তুলনায় অনেকটা ভিন্ন এবং একই ধরনের ঘটনার পর পাকিস্তানের আচরণের সঙ্গেও এর তীব্র পার্থক্য রয়েছে। ভারত সরকার যখন জানায় যে, দিল্লি বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে, তার কয়েক ঘণ্টা পরই পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়।
ইসলামাবাদের আদালত কমপ্লেক্সের বাইরে এই বিস্ফোরণটি ঘটে এমন সময়ে, যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওয়ানায় একটি ক্যাডেট কলেজে জঙ্গিদের হাতে আটক শতাধিক শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে ব্যস্ত। ওয়ানা শহরটি আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অবস্থিত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কোনো প্রমাণ না দিয়েই ইসলামাবাদ ও ওয়ানার উভয় ঘটনার জন্য ভারতকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘উভয় হামলাই অঞ্চলে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ। এখনই বিশ্বের উচিত ভারতের এমন নোংরা ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানানো।’ ভারত এসব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই হামলাগুলো এমন সময় ঘটছে, যখন পাকিস্তান ও তালেবানশাসিত আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। গত মাসে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্তে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। সেই সংঘর্ষের সময়ই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ভারত সফরে ছিলেন, যা নয়াদিল্লি ও কাবুলের মধ্যে এক নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিত দেয়।
দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তান ছিল তালেবানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, আর ভারত সেই গোষ্ঠীকে ইসলামাবাদের প্রভাবাধীন একটি প্রক্সি হিসেবে দেখত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টে গেছে। পাকিস্তান এখন অভিযোগ করছে, তালেবান ভারতের স্বার্থে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, তালেবান পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে। যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের ভেতরে ঘটে যাওয়া বেশির ভাগ বড় হামলার দায় স্বীকার করেছে, যদিও মঙ্গলবারের আত্মঘাতী হামলার দায় এখনো তারা নেয়নি।
ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের অভিযোগ তুললেও, ইসলামাবাদ এখনো স্পষ্ট করে জানায়নি, তারা কীভাবে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই অনিশ্চয়তাই পাকিস্তানকে তার কাঙ্ক্ষিত কৌশলগত নমনীয়তা দিয়েছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের যুদ্ধ শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে গণ্য করবে তাঁর সরকার। তার আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এপ্রিলে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৫ জন নিহত হওয়ার পর ভারত দোষ চাপিয়েছিল পাকিস্তানের ওপর। ইসলামাবাদ সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও মে মাসের গোড়ার দিকে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। এতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র আকাশযুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় দুই দেশই একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করে।
চার দিন পর দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য তখন নয়া এক ‘রেড লাইন বা চূড়ান্ত সীমারেখা’ টেনে দেয়। তাঁর বক্তব্য ভবিষ্যতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে একেবারে ন্যূনতম সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
এরপর গত সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি কেঁপে ওঠে এক বড় বিস্ফোরণে। ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই ওই বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত ও দুই ডজনের মতো আহত হয়। ভারত সরকার এই ‘সন্ত্রাসী হামলার’ তদন্ত করছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। যাদের দায়িত্বই হলো সন্ত্রাসবিরোধী মামলার অনুসন্ধান করা। হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
হামলার পরদিন মঙ্গলবার মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তান ভারতকে দায়ী করেছে। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত নিজেদের রাজধানীতে আগের দিন ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করা থেকে বিরত রয়েছে।
এমন প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক। কারণ, অতীতে ভারতের তদন্ত সংস্থাগুলো হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। কিন্তু এবার বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির সাবধানী নীরবতা অনেকের নজর কেড়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তকারীরা হামলাকারীদের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন কাশ্মীরের দিক থেকে, আর সেখানে পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও মিলেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মে মাসের বিমানযুদ্ধের পর ভারত যেভাবে উচ্চকণ্ঠে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছিল, এখন সেই অবস্থানই ভারতের নিজস্ব কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করেছে। মোদি যেভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে ভবিষ্যতে যেকোনো ‘সন্ত্রাসী হামলাকে’ সরাসরি যুদ্ধ হিসেবে দেখা হবে—সেই ‘চূড়ান্ত সীমা’ এখন সরকারের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। কারণ, যদি তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে নয়াদিল্লির বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করে, তাহলে জনগণের মধ্যে সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানে সামরিক পাল্টা আঘাতের দাবি উঠবে।
সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের নির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, ‘ভারত সরকার নিজেই নিজের জন্য ফাঁদ তৈরি করেছে—নিজের বানানো ফাঁদে নিজেই আটকা পড়েছে। তারা বলেছে, সন্ত্রাস মানেই যুদ্ধ, কিন্তু এর কোনো স্পষ্ট নীতি তৈরি করেনি। এখন সেই কথারই ফল ভুগছে তারা। এটা কোনো নীতি নয়, বরং স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভের জন্য নেওয়া একেবারে বোকামিতে পূর্ণ অবস্থান।’
লালকেল্লার জনাকীর্ণ বাজারে বিস্ফোরণ ঘটার কয়েক ঘণ্টা আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলিশ নয়াদিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান চালায়। তাদের দাবি, একটি ‘আন্তরাজ্য ও আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’ ধ্বংস করেছে। পুলিশের ভাষ্য, ওই নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধ সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) ও আনসার গাজওয়াতুল-হিন্দের (এজিইউএইচ) সঙ্গে যুক্ত। জেইএম পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। মে মাসে পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলায় এই গোষ্ঠীর কয়েকটি ঘাঁটিও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
অন্যদিকে এজিইউএইচ হলো আল-কায়েদা ঘনিষ্ঠ কাশ্মীরি সংগঠন, যা হিজবুল মুজাহিদীন থেকে আলাদা হয়ে গঠিত হয়েছে। একসময় কাশ্মীরি বিদ্রোহী নেতা জাকির মুসার নেতৃত্বে সংগঠনটি সক্রিয় ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের মে মাসে মুসা নিহত হওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীটি তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ হয়ে গেছে।
উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযানের পর কাশ্মীর পুলিশ জানায়, তারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি আইইডি বা তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি বিস্ফোরক যন্ত্র তৈরির উপকরণ যেমন, রাসায়নিক পদার্থ, ইলেকট্রনিক সার্কিট এবং রিমোট কন্ট্রোল ইত্যাদি।
পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে, যার মধ্যে দুই কাশ্মীরি চিকিৎসক রয়েছেন। অপর চিকিৎসক দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার উমর নবী—প্রথম দফায় গ্রেপ্তারের পর পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা এখন ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে লালকেল্লার বাইরে বিস্ফোরিত গাড়িটি উমর নবী চালাচ্ছিলেন কি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা পাওয়া গেছে যে দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক কিছু গোষ্ঠীর লজিস্টিক সহায়তা ছিল। তবে যাঁরা বাস্তবে হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছেন তাঁরা স্থানীয় এবং নিজেরাই চরমপন্থায় জড়িয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো খতিয়ে দেখছি তারা কীভাবে এর জন্য অর্থ জোগাড় করেছিল।’
বিশ্লেষকদের মতে, তদন্তে যা-ই বেরিয়ে আসুক না কেন, এপ্রিলের হামলার পর ভারত যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলে সেটাই এবার কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে নয়াদিল্লিকে জটিল অবস্থায় ফেলবে। ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, নয়াদিল্লি এখন নিজস্ব নতুন নীতিগত মতাদর্শের ফাঁদে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি সরকার প্রকাশ্যে এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করে, তাহলে কৌশলগত ও রাজনৈতিকভাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো বড় কিছু করে দেখানোর চাপ পড়বে।’
বিশ্লেষক অজয় সাহনি বলেন, মোদির সরকার এখনো স্পষ্টভাবে বলেনি তাদের ধারণায় কোন ধরনের হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ধরা হবে, বিশেষ করে পেহেলগাম-পরবর্তী নীতির প্রেক্ষাপটে। সাহনির প্রশ্ন, ‘যদি কোনো সন্ত্রাসী মাত্র একজন সাধারণ মানুষকেও গুলি করে হত্যা করে, সেটিও কি সন্ত্রাস নয়?’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য, দেশের ভেতরের নির্দিষ্ট শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য।’ সাহনি বলেন, এখন দিল্লির বিস্ফোরণের পর সরকারকে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
কুগেলম্যান জানান, পেহেলগাম হামলার পর মে মাসে পাকিস্তানে বিমান হামলা করায় ভারতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ব্যাপক সমালোচনার মুখে’ পড়তে হয়। কারণ, ভারত ইসলামাবাদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘এর ফলে সংঘাত চালকালীন পুরো সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ধরে রাখা ভারতের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ উপস্থাপন করতে ভারতের অস্বীকৃতি বা ব্যর্থতা ইসলামাবাদের অবস্থানকেই শক্তিশালী করেছে। কারণ, পাকিস্তান নিজেকে আক্রমণের শিকার হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
যা হোক, লালকেল্লা বিস্ফোরণের পর এখন পর্যন্ত তদন্ত ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ঘিরেই চলছে। সোমবারের বিস্ফোরণের পর থেকে কাশ্মীরে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে সন্দেহভাজনদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।
কাশ্মীরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেন, অঞ্চলটিতে কঠোর অভিযান চললেও ভারত পেহেলগাম হামলার পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া থেকে কিছুটা শিক্ষা নিয়েছে বলেই মনে হয়। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোতে এখন এক ধরনের পরিণত উপলব্ধি তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়।’
গত মে মাসের যুদ্ধ ভারতের ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী লাখ লাখ কাশ্মীরির জীবন ধ্বংস করে দেয়। সীমান্তবর্তী বহু গ্রাম খালি করতে হয়, দুই পক্ষেই সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। শওকত বলেন, পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিকভাবে দোষারোপ না করে অপেক্ষা করা ভারতীয় সংস্থাগুলোকে নিজেদের পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করার সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যথায়, পাকিস্তানকে দোষারোপ করা মানে নিজের দায় এড়ানোর একটা পুরোনো কৌশল।’
ভারতের এই দায় না চাপানোর বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি বারবার দাবি করেছেন যে তিনিই মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়ে দিয়েছেন। আর ভারত বারবার এটি অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার হুমকি ব্যবহার করেছিলেন। আর তাতেই ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হয়।
বর্তমানে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। দীর্ঘ আলোচনার পর দুই দেশ এখন একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের একাধিক পর্যায়ে একাধিকবার হোয়াইট হাউসে আতিথেয়তা দিয়েছে।
কুগেলম্যান বলেন, ট্রাম্প এই সমীকরণে উভয় দেশের জন্যই একটি জটিল উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, কোনো দেশই তাঁকে বিরক্ত করতে চায় না। কারণ, এতে তিনি যে যুদ্ধবিরতিকে নিজের বড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে দাবি করেছেন, তা ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে হতে পারে।
তবে বিষয়টা শুধু ট্রাম্পকে ঘিরে নয়। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ভূরাজনীতি বিশ্লেষক হর্ষ পন্ত বলেছেন, ভারতের কৌশল সব সময় ‘সংঘাত এড়িয়ে চলা।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে ভারত এখন নিজের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে চায়।’
হর্ষ পন্তর ভাষায়, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতে জড়িয়ে থাকা ভারতের পক্ষে কোনোভাবেই সুবিধাজনক নয়। যুদ্ধাবস্থার মতো অবস্থানে থাকতে হলে অর্থনৈতিকভাবে এবং কৌশলগতভাবেও ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, যেসব সম্পদ উন্নয়নে ব্যবহার করা যেত, সেগুলো তখন পাকিস্তানকে কেন্দ্র করেই ব্যয় করতে হয়।’
তবে মে মাসের সংঘাতের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত নতুন সীমারেখাগুলো দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে দায়ীদের নাম প্রকাশে ভারতের সতর্কতার মূল কারণ—এই মতের সঙ্গে একমত নন পন্ত। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ কিছু মানুষকে আটক করেছিল, যাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল। ফলে তারা বলতে পারে যে একটি বড় ষড়যন্ত্র উন্মোচন এবং ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা পেহেলগামের ঘটনার মতো ছিল না।’
পন্ত আরও বলেন, ‘এই বিস্ফোরণ সম্ভবত পরিকল্পিত ছিল না। এটি একধরনের দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।’ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি ইঙ্গিত করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন পালানোর চেষ্টা করার সময় গাড়িটি বিস্ফোরিত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, দিল্লি সরকার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে না।’
এই মনোভাব ভারতের অতীতের বিভিন্ন প্রাণঘাতী শহুরে হামলার প্রতিক্রিয়ার তুলনায় অনেকটা ভিন্ন এবং একই ধরনের ঘটনার পর পাকিস্তানের আচরণের সঙ্গেও এর তীব্র পার্থক্য রয়েছে। ভারত সরকার যখন জানায় যে, দিল্লি বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে, তার কয়েক ঘণ্টা পরই পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়।
ইসলামাবাদের আদালত কমপ্লেক্সের বাইরে এই বিস্ফোরণটি ঘটে এমন সময়ে, যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওয়ানায় একটি ক্যাডেট কলেজে জঙ্গিদের হাতে আটক শতাধিক শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে ব্যস্ত। ওয়ানা শহরটি আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অবস্থিত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কোনো প্রমাণ না দিয়েই ইসলামাবাদ ও ওয়ানার উভয় ঘটনার জন্য ভারতকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘উভয় হামলাই অঞ্চলে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ। এখনই বিশ্বের উচিত ভারতের এমন নোংরা ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানানো।’ ভারত এসব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই হামলাগুলো এমন সময় ঘটছে, যখন পাকিস্তান ও তালেবানশাসিত আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। গত মাসে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্তে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। সেই সংঘর্ষের সময়ই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ভারত সফরে ছিলেন, যা নয়াদিল্লি ও কাবুলের মধ্যে এক নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিত দেয়।
দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তান ছিল তালেবানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, আর ভারত সেই গোষ্ঠীকে ইসলামাবাদের প্রভাবাধীন একটি প্রক্সি হিসেবে দেখত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টে গেছে। পাকিস্তান এখন অভিযোগ করছে, তালেবান ভারতের স্বার্থে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, তালেবান পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে। যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের ভেতরে ঘটে যাওয়া বেশির ভাগ বড় হামলার দায় স্বীকার করেছে, যদিও মঙ্গলবারের আত্মঘাতী হামলার দায় এখনো তারা নেয়নি।
ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের অভিযোগ তুললেও, ইসলামাবাদ এখনো স্পষ্ট করে জানায়নি, তারা কীভাবে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই অনিশ্চয়তাই পাকিস্তানকে তার কাঙ্ক্ষিত কৌশলগত নমনীয়তা দিয়েছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ
১৩ নভেম্বর ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ
১৩ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ
১৩ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ
১৩ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে