আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন। সে সময় ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী হাও লে একটি সুযোগ দেখেছিলেন। কারণ, তাঁর কোম্পানি চীনা রপ্তানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল সে সময়। এবার যখন পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমেই চীনা রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে, তখন হাও লের কোম্পানির মতো শত শত কোম্পানি সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
লের কোম্পানির নাম এসএইচডিসি ইলেকট্রনিকস। তারা প্রতি মাসে ২০ লাখ ডলারের যন্ত্রাংশ আমেরিকায় রপ্তানি করে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সরঞ্জাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ট্রাম্প ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসালে সেই আয়ের পথ বন্ধ হতে পারে। এই পরিকল্পনা জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। লে বলছেন, এটি তাঁর ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ খবর। এটা তাঁর ব্যবসার জন্য ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবে।
তাঁর কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিক্রি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চীনা পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি না। এটি কেবল আমাদের সমস্যা নয়। অনেক দেশীয় কোম্পানি অভ্যন্তরীণ বাজারে হিমশিম খাচ্ছে।’
২০১৬ সালে ট্রাম্প শুল্ক বসানোর পর সস্তা চীনা পণ্যে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাজার ভরে যায়। এই পণ্যগুলো আসলে আমেরিকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় অনেক চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশের স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে এই পরিস্থিতি অন্য ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করে। অনেক কোম্পানি বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। বহু কোম্পানি চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে চাইছিল। কিন্তু এখন আবার ট্রাম্প নিজেই সেই দরজাগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এই সুযোগগুলোকে একটি অগ্রহণযোগ্য ফাঁক হিসেবে দেখছেন।
এটি ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল এক ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে হিস্যা দাবি করছে। কিন্তু তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে পড়েছে। চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। আর আমেরিকা তাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশগুলোর আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এমন চুক্তি করতে চাইতে পারে তাদের সঙ্গে, যার ফলে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন। এই সফর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এর গুরুত্ব বেড়েছে। তিন দেশই সি–কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। তবে ট্রাম্প এটিকে দেখছেন আমেরিকাকে ‘বিপদে ফেলার’ ষড়যন্ত্র হিসেবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে এসেছে, হোয়াইট হাউস ছোট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। ওয়াশিংটন এই দেশগুলোকে বেইজিংয়ের সঙ্গে লেনদেন সীমিত করতে চাপ দেবে বলে জানা গেছে। কিন্তু চীন ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্যের পরিমাণ এতই বেশি যে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে চীন রপ্তানি থেকে রেকর্ড সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর ১৬ শতাংশই এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশগুলো থেকে এবং এই অঞ্চলই চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। বেইজিং এই অঞ্চলে অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ভিয়েতনামে রেললাইন, কম্বোডিয়ায় বাঁধ এবং মালয়েশিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। এগুলো দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ। এর উদ্দেশ্য, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা চীন ও আমেরিকার মধ্যে কাউকে বেছে নিতে পারি না। যদি কোনো বিষয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’
ট্রাম্প নতুন করে বিশাল শুল্কের ঘোষণা দেওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো নড়েচড়ে বসেছে। তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনা শুরু করেছে। ভিয়েতনামের নেতা তো লামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি এটিকে ‘খুব ফলপ্রসূ’ আলাপ বলেছেন। তো লাম মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আমেরিকার বাজার ভিয়েতনামের জন্য জরুরি। ভিয়েতনাম ইলেকট্রনিকস শিল্পে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। স্যামসাং, ইন্টেল ও ফক্সকনের মতো কোম্পানি দেশটিতে কারখানা স্থাপন করেছে। তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি ফক্সকন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের হয়ে আইফোন তৈরি করে।
এদিকে, থাই কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে গেছেন। তাঁদের পরিকল্পনা হলো, আমেরিকা থেকে আমদানি ও বিনিয়োগ বাড়ানো। আমেরিকা তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। তাই তারা ৩৬ শতাংশ শুল্ক এড়াতে চাইছে। ট্রাম্প যেকোনো সময় এই শুল্ক আবার চালু করতে পারেন বলে ভয় তাদের। থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ‘আমরা আমেরিকাকে বলব, থাইল্যান্ড শুধু রপ্তানি করে না, আমরা তাদের বিশ্বস্ত মিত্র ও অর্থনৈতিক অংশীদার। আমেরিকা আমাদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে ভরসা রাখতে পারে।’
ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান পাল্টা ব্যবস্থা নেবে না। তারা ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং, তারা আমেরিকার কাছে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরবে। টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমেরিকার উদ্বেগ বুঝতে পারছি। আমাদের দেখাতে হবে, আসিয়ান এবং বিশেষ করে মালয়েশিয়া আমেরিকার জন্য একটি সংযোগ সেতু বা মধ্যস্থতাকারী হতে পারে।’
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তারা এই ভূমিকা ভালোভাবেই পালন করেছে। চীন ও আমেরিকা—দুই পক্ষের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে তারা লাভবান হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক সেই ধারা ব্যাহত করতে পারে।
মালয়েশিয়ার কথাই ভাবা যাক। গত কয়েক বছরে আমেরিকা ও অন্য দেশ থেকে চিপ প্রস্তুতকারকেরা সেখানে বিনিয়োগ করেছে। ওয়াশিংটন চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করেছে বলেই মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের এই বাড়বাড়ন্ত। গত বছর চীন মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের চিপ আমদানি করেছে। এই চিপগুলো চীনে ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরিতে কাজে লাগে। যেমন আইফোন। এসব পণ্য সাধারণত আমেরিকায় রপ্তানি হয়।
মালয়েশিয়ার ওপর ট্রাম্প ২৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মার্কিন বাজারে কয়েক শ কোটি ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এখানেই শেষ নয়, জাফরুল আজিজ বলেন, ‘যদি এমন পরিস্থিতি থেকেই যায়, তাহলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাববে। এর প্রভাব কেবল মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে।’
ইন্দোনেশিয়ার ওপরও ৩২ শতাংশ শুল্ক ধার্য করতে পারেন ট্রাম্প। ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর নিকেল আছে। এ কারণে দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ির সরবরাহ চেইনে বড় ভূমিকা নিতে চায়।
কম্বোডিয়াকে সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। কম্বোডিয়াকে চীনের মিত্র ভাবা হয়। কম্বোডিয়া এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। তবে দেশটি ট্রানজিট হাব হিসেবে বেশ উন্নতি করেছে। যেসব চীনা কোম্পানি আমেরিকার শুল্ক এড়াতে চায়, তারা ফ্রেন্ডশোরিংয়ের অংশ হিসেবে কম্বোডিয়াকে ব্যবহার করছে। কম্বোডিয়ায় পোশাক কারখানার ৯০ শতাংশই চীনাদের মালিকানাধীন বা তারাই চালায়। এই কারখানাগুলো মূলত আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি করে।
মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের অর্থনীতিবিদ ডরিস লিউ বলেছেন, ট্রাম্প শুল্কগুলো স্থগিত রেখেছেন। কিন্তু ‘যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে! তিনি বলেন, এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শুধু আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমালেই হবে না। কোনো একক বাণিজ্য অংশীদারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাও কমাতে হবে। এর জন্য ভারসাম্য আনা দরকার।
এই অনিশ্চিত সময়ে সি চিনপিং এক দৃঢ় বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘আসুন আমরা হাত মেলাই।’ আমেরিকার ‘ধমক’ প্রতিরোধ করি। তবে এটা সহজ হবে না। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়েরও বাণিজ্য বিরোধ আছে।
ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী ইসমা সাবিত্রী চিন্তিত। চীনের ওপর ট্রাম্প ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। তিনি বলেন, এর মানে হলো—চীনা পণ্য এখন অন্য বাজারে যাবে। ইসমা মনে করেন, এতে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণ, তারাও আর আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে পারছে না।
হেলোপপি নামের একটি পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক ইসমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট ব্যবসাগুলো খুব চাপে পড়েছে। অত্যন্ত সস্তা চীনা পণ্যের কারণে আমরা টিকে থাকতে লড়াই করছি।’ হেলোপপির একটি জনপ্রিয় পায়জামার দাম ৭ দশমিক ১০ ডলার। ইন্দোনেশীয় রুপিতে এটা ১ লাখ ১৯ হাজার। ইসমা জানান, তিনি চীন থেকে আসা একই ডিজাইনের পায়জামা প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হতে দেখেছেন।
সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস ইউসুফ-ইসহাক ইনস্টিটিউটের গবেষক নগুয়েন খ্যাক জিয়াং বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের খুব কাছে। এখানকার বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্মুক্ত। বাজারও দ্রুত বাড়ছে। তাই এটি চীনা পণ্যের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনেক দেশ চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। এতে তাদের দুর্বলতা আরও বাড়ে।
চীনা পণ্যের দাম কম, তাই ক্রেতারা খুশি। পোশাক, জুতা, ফোন—সবকিছুর দাম কম। কিন্তু হাজার হাজার স্থানীয় ব্যবসা এই কম দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, গত দুই বছরে প্রতি মাসে দেশটিতে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় আড়াই লাখ টেক্সটাইল শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সেখানকার বাণিজ্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রায় ৬০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। স্রিটেক্স ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল কারখানা। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
মুজিয়াতি নামে একজন স্রিটেক্সে ৩০ বছর কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি চাকরি হারান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যখন খবরে দেখছি, আমদানি করা পণ্যে বাজার ভরে গেছে। এটি আমাদের দেশের বাজার নষ্ট করছে।’ ৫০ বছর বয়সী মুজিয়াতি এখনো কাজ খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের ভাগ্যই খারাপ ছিল। আমরা কার কাছে অভিযোগ করব? কেউ নেই।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো সুরক্ষানীতি নিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীনা পণ্যের প্রভাব থেকে বাঁচতে সাহায্য চাওয়ায় সরকারগুলো পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত বছর ইন্দোনেশিয়া কিছু চীনা পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ভেবেছিল। তারা একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট তেমু বন্ধ করে দেয়। এটি চীনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল।
থাইল্যান্ড আমদানি পণ্যে নজরদারি বাড়িয়েছে। দেড় হাজার থাই বাথের (প্রায় ৪৫ ডলার) কম দামের পণ্যে তারা অতিরিক্ত কর বসিয়েছে। এ বছর ভিয়েতনাম চীনা ইস্পাত পণ্যের ওপর দুই বার শুল্ক বসিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর খবর এসেছে, ভিয়েতনাম কড়াকড়ি করতে চলেছে। তাদের দেশ হয়ে আমেরিকায় পাঠানো চীনা পণ্যের ওপর এই কড়াকড়ি হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যে ভয় পাচ্ছে তা প্রশমিত করা সি’র সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। দ্য ইকোনমিস্টের সাবেক বেইজিং ব্যুরো চিফ ডেভিড রেনি বিবিসিকে বলেন, ‘চীনের একটা চিন্তা আছে। আমেরিকার জন্য তৈরি পণ্য অন্য দেশে পাঠালে সেই বাণিজ্য অংশীদাররা বিরক্ত হবে। তারা হয়তো চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনা পণ্যের ঢল যদি এই বাজারগুলোকে ভাসিয়ে দেয়, চাকরির ক্ষতি করে—তবে তা চীনের জন্য বড় সমস্যা হবে। এটা তাদের কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হবে।’
চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলের সম্পর্ক সব সময় সহজ ছিল না। লাওস, কম্বোডিয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশগুলো চীনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সতর্ক। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধ ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে। ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশেরও একই সমস্যা আছে। তবে এত দিন বাণিজ্য এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সেই অবস্থা বদলে যেতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চং জা-ইয়ান বলেন, ‘আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ভাবতে হতো চীনকে অসন্তুষ্ট করবে কিনা। এখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।’
চীনের ক্ষতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য লাভও বয়ে আনতে পারে। ভিয়েতনামের হাও লে আবারও সুযোগ দেখছেন। তিনি বলেন, আমেরিকান ক্রেতারা এখন চীনের বাইরে নতুন সরবরাহকারী খুঁজছে। খোঁজখবর অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে সরবরাহকারী বদলাতে মাস লাগত। এখন কয়েক দিনেই সিদ্ধান্ত হয়।’
মালয়েশিয়ায় বিশাল রাবার বাগান আছে। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিকেল রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী। রাবার গ্লাভসের প্রায় অর্ধেক বাজার তাদের দখলে। তারা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকে আরও বড় বাজার দখল করতে প্রস্তুত। মালয়েশিয়ান রাবার গ্লাভস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উন কিম হং বলেন, এই অঞ্চলের পণ্যে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক বসেছে। এটা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মতোই। এটা অবশ্যই খারাপ খবর।
তবে উন কিম হাং বলেন, ‘ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক ফের চালু হলেও মালয়েশিয়ার লাভ হবে। গ্রাহকেরা মালয়েশিয়ার গ্লাভসের জন্য অতিরিক্ত ২৪ শতাংশ শুল্ক দিতে রাজি হবে। কারণ চীনা গ্লাভসের জন্য ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিক আনন্দে নাচছি না। কিন্তু এটি আমাদের উৎপাদকদের জন্য ভালো হতে পারে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার উৎপাদকরাও এতে লাভবান হতে পারে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন। সে সময় ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী হাও লে একটি সুযোগ দেখেছিলেন। কারণ, তাঁর কোম্পানি চীনা রপ্তানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল সে সময়। এবার যখন পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমেই চীনা রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে, তখন হাও লের কোম্পানির মতো শত শত কোম্পানি সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
লের কোম্পানির নাম এসএইচডিসি ইলেকট্রনিকস। তারা প্রতি মাসে ২০ লাখ ডলারের যন্ত্রাংশ আমেরিকায় রপ্তানি করে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সরঞ্জাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ট্রাম্প ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসালে সেই আয়ের পথ বন্ধ হতে পারে। এই পরিকল্পনা জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। লে বলছেন, এটি তাঁর ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ খবর। এটা তাঁর ব্যবসার জন্য ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবে।
তাঁর কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিক্রি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চীনা পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি না। এটি কেবল আমাদের সমস্যা নয়। অনেক দেশীয় কোম্পানি অভ্যন্তরীণ বাজারে হিমশিম খাচ্ছে।’
২০১৬ সালে ট্রাম্প শুল্ক বসানোর পর সস্তা চীনা পণ্যে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাজার ভরে যায়। এই পণ্যগুলো আসলে আমেরিকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় অনেক চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশের স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে এই পরিস্থিতি অন্য ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করে। অনেক কোম্পানি বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। বহু কোম্পানি চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে চাইছিল। কিন্তু এখন আবার ট্রাম্প নিজেই সেই দরজাগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এই সুযোগগুলোকে একটি অগ্রহণযোগ্য ফাঁক হিসেবে দেখছেন।
এটি ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল এক ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে হিস্যা দাবি করছে। কিন্তু তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে পড়েছে। চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। আর আমেরিকা তাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশগুলোর আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এমন চুক্তি করতে চাইতে পারে তাদের সঙ্গে, যার ফলে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন। এই সফর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এর গুরুত্ব বেড়েছে। তিন দেশই সি–কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। তবে ট্রাম্প এটিকে দেখছেন আমেরিকাকে ‘বিপদে ফেলার’ ষড়যন্ত্র হিসেবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে এসেছে, হোয়াইট হাউস ছোট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। ওয়াশিংটন এই দেশগুলোকে বেইজিংয়ের সঙ্গে লেনদেন সীমিত করতে চাপ দেবে বলে জানা গেছে। কিন্তু চীন ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্যের পরিমাণ এতই বেশি যে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে চীন রপ্তানি থেকে রেকর্ড সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর ১৬ শতাংশই এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশগুলো থেকে এবং এই অঞ্চলই চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। বেইজিং এই অঞ্চলে অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ভিয়েতনামে রেললাইন, কম্বোডিয়ায় বাঁধ এবং মালয়েশিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। এগুলো দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ। এর উদ্দেশ্য, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা চীন ও আমেরিকার মধ্যে কাউকে বেছে নিতে পারি না। যদি কোনো বিষয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’
ট্রাম্প নতুন করে বিশাল শুল্কের ঘোষণা দেওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো নড়েচড়ে বসেছে। তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনা শুরু করেছে। ভিয়েতনামের নেতা তো লামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি এটিকে ‘খুব ফলপ্রসূ’ আলাপ বলেছেন। তো লাম মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আমেরিকার বাজার ভিয়েতনামের জন্য জরুরি। ভিয়েতনাম ইলেকট্রনিকস শিল্পে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। স্যামসাং, ইন্টেল ও ফক্সকনের মতো কোম্পানি দেশটিতে কারখানা স্থাপন করেছে। তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি ফক্সকন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের হয়ে আইফোন তৈরি করে।
এদিকে, থাই কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে গেছেন। তাঁদের পরিকল্পনা হলো, আমেরিকা থেকে আমদানি ও বিনিয়োগ বাড়ানো। আমেরিকা তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। তাই তারা ৩৬ শতাংশ শুল্ক এড়াতে চাইছে। ট্রাম্প যেকোনো সময় এই শুল্ক আবার চালু করতে পারেন বলে ভয় তাদের। থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ‘আমরা আমেরিকাকে বলব, থাইল্যান্ড শুধু রপ্তানি করে না, আমরা তাদের বিশ্বস্ত মিত্র ও অর্থনৈতিক অংশীদার। আমেরিকা আমাদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে ভরসা রাখতে পারে।’
ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান পাল্টা ব্যবস্থা নেবে না। তারা ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং, তারা আমেরিকার কাছে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরবে। টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমেরিকার উদ্বেগ বুঝতে পারছি। আমাদের দেখাতে হবে, আসিয়ান এবং বিশেষ করে মালয়েশিয়া আমেরিকার জন্য একটি সংযোগ সেতু বা মধ্যস্থতাকারী হতে পারে।’
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তারা এই ভূমিকা ভালোভাবেই পালন করেছে। চীন ও আমেরিকা—দুই পক্ষের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে তারা লাভবান হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক সেই ধারা ব্যাহত করতে পারে।
মালয়েশিয়ার কথাই ভাবা যাক। গত কয়েক বছরে আমেরিকা ও অন্য দেশ থেকে চিপ প্রস্তুতকারকেরা সেখানে বিনিয়োগ করেছে। ওয়াশিংটন চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করেছে বলেই মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের এই বাড়বাড়ন্ত। গত বছর চীন মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের চিপ আমদানি করেছে। এই চিপগুলো চীনে ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরিতে কাজে লাগে। যেমন আইফোন। এসব পণ্য সাধারণত আমেরিকায় রপ্তানি হয়।
মালয়েশিয়ার ওপর ট্রাম্প ২৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মার্কিন বাজারে কয়েক শ কোটি ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এখানেই শেষ নয়, জাফরুল আজিজ বলেন, ‘যদি এমন পরিস্থিতি থেকেই যায়, তাহলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাববে। এর প্রভাব কেবল মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে।’
ইন্দোনেশিয়ার ওপরও ৩২ শতাংশ শুল্ক ধার্য করতে পারেন ট্রাম্প। ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর নিকেল আছে। এ কারণে দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ির সরবরাহ চেইনে বড় ভূমিকা নিতে চায়।
কম্বোডিয়াকে সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। কম্বোডিয়াকে চীনের মিত্র ভাবা হয়। কম্বোডিয়া এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। তবে দেশটি ট্রানজিট হাব হিসেবে বেশ উন্নতি করেছে। যেসব চীনা কোম্পানি আমেরিকার শুল্ক এড়াতে চায়, তারা ফ্রেন্ডশোরিংয়ের অংশ হিসেবে কম্বোডিয়াকে ব্যবহার করছে। কম্বোডিয়ায় পোশাক কারখানার ৯০ শতাংশই চীনাদের মালিকানাধীন বা তারাই চালায়। এই কারখানাগুলো মূলত আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি করে।
মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের অর্থনীতিবিদ ডরিস লিউ বলেছেন, ট্রাম্প শুল্কগুলো স্থগিত রেখেছেন। কিন্তু ‘যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে! তিনি বলেন, এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শুধু আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমালেই হবে না। কোনো একক বাণিজ্য অংশীদারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাও কমাতে হবে। এর জন্য ভারসাম্য আনা দরকার।
এই অনিশ্চিত সময়ে সি চিনপিং এক দৃঢ় বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘আসুন আমরা হাত মেলাই।’ আমেরিকার ‘ধমক’ প্রতিরোধ করি। তবে এটা সহজ হবে না। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়েরও বাণিজ্য বিরোধ আছে।
ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী ইসমা সাবিত্রী চিন্তিত। চীনের ওপর ট্রাম্প ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। তিনি বলেন, এর মানে হলো—চীনা পণ্য এখন অন্য বাজারে যাবে। ইসমা মনে করেন, এতে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণ, তারাও আর আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে পারছে না।
হেলোপপি নামের একটি পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক ইসমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট ব্যবসাগুলো খুব চাপে পড়েছে। অত্যন্ত সস্তা চীনা পণ্যের কারণে আমরা টিকে থাকতে লড়াই করছি।’ হেলোপপির একটি জনপ্রিয় পায়জামার দাম ৭ দশমিক ১০ ডলার। ইন্দোনেশীয় রুপিতে এটা ১ লাখ ১৯ হাজার। ইসমা জানান, তিনি চীন থেকে আসা একই ডিজাইনের পায়জামা প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হতে দেখেছেন।
সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস ইউসুফ-ইসহাক ইনস্টিটিউটের গবেষক নগুয়েন খ্যাক জিয়াং বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের খুব কাছে। এখানকার বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্মুক্ত। বাজারও দ্রুত বাড়ছে। তাই এটি চীনা পণ্যের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনেক দেশ চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। এতে তাদের দুর্বলতা আরও বাড়ে।
চীনা পণ্যের দাম কম, তাই ক্রেতারা খুশি। পোশাক, জুতা, ফোন—সবকিছুর দাম কম। কিন্তু হাজার হাজার স্থানীয় ব্যবসা এই কম দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, গত দুই বছরে প্রতি মাসে দেশটিতে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় আড়াই লাখ টেক্সটাইল শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সেখানকার বাণিজ্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রায় ৬০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। স্রিটেক্স ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল কারখানা। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
মুজিয়াতি নামে একজন স্রিটেক্সে ৩০ বছর কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি চাকরি হারান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যখন খবরে দেখছি, আমদানি করা পণ্যে বাজার ভরে গেছে। এটি আমাদের দেশের বাজার নষ্ট করছে।’ ৫০ বছর বয়সী মুজিয়াতি এখনো কাজ খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের ভাগ্যই খারাপ ছিল। আমরা কার কাছে অভিযোগ করব? কেউ নেই।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো সুরক্ষানীতি নিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীনা পণ্যের প্রভাব থেকে বাঁচতে সাহায্য চাওয়ায় সরকারগুলো পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত বছর ইন্দোনেশিয়া কিছু চীনা পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ভেবেছিল। তারা একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট তেমু বন্ধ করে দেয়। এটি চীনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল।
থাইল্যান্ড আমদানি পণ্যে নজরদারি বাড়িয়েছে। দেড় হাজার থাই বাথের (প্রায় ৪৫ ডলার) কম দামের পণ্যে তারা অতিরিক্ত কর বসিয়েছে। এ বছর ভিয়েতনাম চীনা ইস্পাত পণ্যের ওপর দুই বার শুল্ক বসিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর খবর এসেছে, ভিয়েতনাম কড়াকড়ি করতে চলেছে। তাদের দেশ হয়ে আমেরিকায় পাঠানো চীনা পণ্যের ওপর এই কড়াকড়ি হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যে ভয় পাচ্ছে তা প্রশমিত করা সি’র সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। দ্য ইকোনমিস্টের সাবেক বেইজিং ব্যুরো চিফ ডেভিড রেনি বিবিসিকে বলেন, ‘চীনের একটা চিন্তা আছে। আমেরিকার জন্য তৈরি পণ্য অন্য দেশে পাঠালে সেই বাণিজ্য অংশীদাররা বিরক্ত হবে। তারা হয়তো চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনা পণ্যের ঢল যদি এই বাজারগুলোকে ভাসিয়ে দেয়, চাকরির ক্ষতি করে—তবে তা চীনের জন্য বড় সমস্যা হবে। এটা তাদের কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হবে।’
চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলের সম্পর্ক সব সময় সহজ ছিল না। লাওস, কম্বোডিয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশগুলো চীনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সতর্ক। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধ ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে। ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশেরও একই সমস্যা আছে। তবে এত দিন বাণিজ্য এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সেই অবস্থা বদলে যেতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চং জা-ইয়ান বলেন, ‘আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ভাবতে হতো চীনকে অসন্তুষ্ট করবে কিনা। এখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।’
চীনের ক্ষতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য লাভও বয়ে আনতে পারে। ভিয়েতনামের হাও লে আবারও সুযোগ দেখছেন। তিনি বলেন, আমেরিকান ক্রেতারা এখন চীনের বাইরে নতুন সরবরাহকারী খুঁজছে। খোঁজখবর অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে সরবরাহকারী বদলাতে মাস লাগত। এখন কয়েক দিনেই সিদ্ধান্ত হয়।’
মালয়েশিয়ায় বিশাল রাবার বাগান আছে। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিকেল রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী। রাবার গ্লাভসের প্রায় অর্ধেক বাজার তাদের দখলে। তারা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকে আরও বড় বাজার দখল করতে প্রস্তুত। মালয়েশিয়ান রাবার গ্লাভস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উন কিম হং বলেন, এই অঞ্চলের পণ্যে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক বসেছে। এটা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মতোই। এটা অবশ্যই খারাপ খবর।
তবে উন কিম হাং বলেন, ‘ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক ফের চালু হলেও মালয়েশিয়ার লাভ হবে। গ্রাহকেরা মালয়েশিয়ার গ্লাভসের জন্য অতিরিক্ত ২৪ শতাংশ শুল্ক দিতে রাজি হবে। কারণ চীনা গ্লাভসের জন্য ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিক আনন্দে নাচছি না। কিন্তু এটি আমাদের উৎপাদকদের জন্য ভালো হতে পারে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার উৎপাদকরাও এতে লাভবান হতে পারে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

ট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
১৮ এপ্রিল ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

ট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
১৮ এপ্রিল ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

ট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
১৮ এপ্রিল ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
১৮ এপ্রিল ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে