আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন। সে সময় ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী হাও লে একটি সুযোগ দেখেছিলেন। কারণ, তাঁর কোম্পানি চীনা রপ্তানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল সে সময়। এবার যখন পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমেই চীনা রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে, তখন হাও লের কোম্পানির মতো শত শত কোম্পানি সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
লের কোম্পানির নাম এসএইচডিসি ইলেকট্রনিকস। তারা প্রতি মাসে ২০ লাখ ডলারের যন্ত্রাংশ আমেরিকায় রপ্তানি করে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সরঞ্জাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ট্রাম্প ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসালে সেই আয়ের পথ বন্ধ হতে পারে। এই পরিকল্পনা জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। লে বলছেন, এটি তাঁর ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ খবর। এটা তাঁর ব্যবসার জন্য ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবে।
তাঁর কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিক্রি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চীনা পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি না। এটি কেবল আমাদের সমস্যা নয়। অনেক দেশীয় কোম্পানি অভ্যন্তরীণ বাজারে হিমশিম খাচ্ছে।’
২০১৬ সালে ট্রাম্প শুল্ক বসানোর পর সস্তা চীনা পণ্যে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাজার ভরে যায়। এই পণ্যগুলো আসলে আমেরিকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় অনেক চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশের স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে এই পরিস্থিতি অন্য ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করে। অনেক কোম্পানি বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। বহু কোম্পানি চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে চাইছিল। কিন্তু এখন আবার ট্রাম্প নিজেই সেই দরজাগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এই সুযোগগুলোকে একটি অগ্রহণযোগ্য ফাঁক হিসেবে দেখছেন।
এটি ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল এক ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে হিস্যা দাবি করছে। কিন্তু তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে পড়েছে। চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। আর আমেরিকা তাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশগুলোর আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এমন চুক্তি করতে চাইতে পারে তাদের সঙ্গে, যার ফলে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন। এই সফর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এর গুরুত্ব বেড়েছে। তিন দেশই সি–কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। তবে ট্রাম্প এটিকে দেখছেন আমেরিকাকে ‘বিপদে ফেলার’ ষড়যন্ত্র হিসেবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে এসেছে, হোয়াইট হাউস ছোট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। ওয়াশিংটন এই দেশগুলোকে বেইজিংয়ের সঙ্গে লেনদেন সীমিত করতে চাপ দেবে বলে জানা গেছে। কিন্তু চীন ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্যের পরিমাণ এতই বেশি যে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে চীন রপ্তানি থেকে রেকর্ড সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর ১৬ শতাংশই এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশগুলো থেকে এবং এই অঞ্চলই চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। বেইজিং এই অঞ্চলে অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ভিয়েতনামে রেললাইন, কম্বোডিয়ায় বাঁধ এবং মালয়েশিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। এগুলো দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ। এর উদ্দেশ্য, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা চীন ও আমেরিকার মধ্যে কাউকে বেছে নিতে পারি না। যদি কোনো বিষয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’
ট্রাম্প নতুন করে বিশাল শুল্কের ঘোষণা দেওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো নড়েচড়ে বসেছে। তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনা শুরু করেছে। ভিয়েতনামের নেতা তো লামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি এটিকে ‘খুব ফলপ্রসূ’ আলাপ বলেছেন। তো লাম মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আমেরিকার বাজার ভিয়েতনামের জন্য জরুরি। ভিয়েতনাম ইলেকট্রনিকস শিল্পে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। স্যামসাং, ইন্টেল ও ফক্সকনের মতো কোম্পানি দেশটিতে কারখানা স্থাপন করেছে। তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি ফক্সকন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের হয়ে আইফোন তৈরি করে।
এদিকে, থাই কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে গেছেন। তাঁদের পরিকল্পনা হলো, আমেরিকা থেকে আমদানি ও বিনিয়োগ বাড়ানো। আমেরিকা তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। তাই তারা ৩৬ শতাংশ শুল্ক এড়াতে চাইছে। ট্রাম্প যেকোনো সময় এই শুল্ক আবার চালু করতে পারেন বলে ভয় তাদের। থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ‘আমরা আমেরিকাকে বলব, থাইল্যান্ড শুধু রপ্তানি করে না, আমরা তাদের বিশ্বস্ত মিত্র ও অর্থনৈতিক অংশীদার। আমেরিকা আমাদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে ভরসা রাখতে পারে।’
ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান পাল্টা ব্যবস্থা নেবে না। তারা ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং, তারা আমেরিকার কাছে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরবে। টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমেরিকার উদ্বেগ বুঝতে পারছি। আমাদের দেখাতে হবে, আসিয়ান এবং বিশেষ করে মালয়েশিয়া আমেরিকার জন্য একটি সংযোগ সেতু বা মধ্যস্থতাকারী হতে পারে।’
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তারা এই ভূমিকা ভালোভাবেই পালন করেছে। চীন ও আমেরিকা—দুই পক্ষের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে তারা লাভবান হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক সেই ধারা ব্যাহত করতে পারে।
মালয়েশিয়ার কথাই ভাবা যাক। গত কয়েক বছরে আমেরিকা ও অন্য দেশ থেকে চিপ প্রস্তুতকারকেরা সেখানে বিনিয়োগ করেছে। ওয়াশিংটন চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করেছে বলেই মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের এই বাড়বাড়ন্ত। গত বছর চীন মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের চিপ আমদানি করেছে। এই চিপগুলো চীনে ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরিতে কাজে লাগে। যেমন আইফোন। এসব পণ্য সাধারণত আমেরিকায় রপ্তানি হয়।
মালয়েশিয়ার ওপর ট্রাম্প ২৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মার্কিন বাজারে কয়েক শ কোটি ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এখানেই শেষ নয়, জাফরুল আজিজ বলেন, ‘যদি এমন পরিস্থিতি থেকেই যায়, তাহলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাববে। এর প্রভাব কেবল মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে।’
ইন্দোনেশিয়ার ওপরও ৩২ শতাংশ শুল্ক ধার্য করতে পারেন ট্রাম্প। ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর নিকেল আছে। এ কারণে দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ির সরবরাহ চেইনে বড় ভূমিকা নিতে চায়।
কম্বোডিয়াকে সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। কম্বোডিয়াকে চীনের মিত্র ভাবা হয়। কম্বোডিয়া এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। তবে দেশটি ট্রানজিট হাব হিসেবে বেশ উন্নতি করেছে। যেসব চীনা কোম্পানি আমেরিকার শুল্ক এড়াতে চায়, তারা ফ্রেন্ডশোরিংয়ের অংশ হিসেবে কম্বোডিয়াকে ব্যবহার করছে। কম্বোডিয়ায় পোশাক কারখানার ৯০ শতাংশই চীনাদের মালিকানাধীন বা তারাই চালায়। এই কারখানাগুলো মূলত আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি করে।
মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের অর্থনীতিবিদ ডরিস লিউ বলেছেন, ট্রাম্প শুল্কগুলো স্থগিত রেখেছেন। কিন্তু ‘যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে! তিনি বলেন, এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শুধু আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমালেই হবে না। কোনো একক বাণিজ্য অংশীদারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাও কমাতে হবে। এর জন্য ভারসাম্য আনা দরকার।
এই অনিশ্চিত সময়ে সি চিনপিং এক দৃঢ় বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘আসুন আমরা হাত মেলাই।’ আমেরিকার ‘ধমক’ প্রতিরোধ করি। তবে এটা সহজ হবে না। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়েরও বাণিজ্য বিরোধ আছে।
ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী ইসমা সাবিত্রী চিন্তিত। চীনের ওপর ট্রাম্প ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। তিনি বলেন, এর মানে হলো—চীনা পণ্য এখন অন্য বাজারে যাবে। ইসমা মনে করেন, এতে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণ, তারাও আর আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে পারছে না।
হেলোপপি নামের একটি পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক ইসমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট ব্যবসাগুলো খুব চাপে পড়েছে। অত্যন্ত সস্তা চীনা পণ্যের কারণে আমরা টিকে থাকতে লড়াই করছি।’ হেলোপপির একটি জনপ্রিয় পায়জামার দাম ৭ দশমিক ১০ ডলার। ইন্দোনেশীয় রুপিতে এটা ১ লাখ ১৯ হাজার। ইসমা জানান, তিনি চীন থেকে আসা একই ডিজাইনের পায়জামা প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হতে দেখেছেন।
সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস ইউসুফ-ইসহাক ইনস্টিটিউটের গবেষক নগুয়েন খ্যাক জিয়াং বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের খুব কাছে। এখানকার বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্মুক্ত। বাজারও দ্রুত বাড়ছে। তাই এটি চীনা পণ্যের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনেক দেশ চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। এতে তাদের দুর্বলতা আরও বাড়ে।
চীনা পণ্যের দাম কম, তাই ক্রেতারা খুশি। পোশাক, জুতা, ফোন—সবকিছুর দাম কম। কিন্তু হাজার হাজার স্থানীয় ব্যবসা এই কম দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, গত দুই বছরে প্রতি মাসে দেশটিতে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় আড়াই লাখ টেক্সটাইল শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সেখানকার বাণিজ্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রায় ৬০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। স্রিটেক্স ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল কারখানা। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
মুজিয়াতি নামে একজন স্রিটেক্সে ৩০ বছর কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি চাকরি হারান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যখন খবরে দেখছি, আমদানি করা পণ্যে বাজার ভরে গেছে। এটি আমাদের দেশের বাজার নষ্ট করছে।’ ৫০ বছর বয়সী মুজিয়াতি এখনো কাজ খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের ভাগ্যই খারাপ ছিল। আমরা কার কাছে অভিযোগ করব? কেউ নেই।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো সুরক্ষানীতি নিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীনা পণ্যের প্রভাব থেকে বাঁচতে সাহায্য চাওয়ায় সরকারগুলো পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত বছর ইন্দোনেশিয়া কিছু চীনা পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ভেবেছিল। তারা একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট তেমু বন্ধ করে দেয়। এটি চীনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল।
থাইল্যান্ড আমদানি পণ্যে নজরদারি বাড়িয়েছে। দেড় হাজার থাই বাথের (প্রায় ৪৫ ডলার) কম দামের পণ্যে তারা অতিরিক্ত কর বসিয়েছে। এ বছর ভিয়েতনাম চীনা ইস্পাত পণ্যের ওপর দুই বার শুল্ক বসিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর খবর এসেছে, ভিয়েতনাম কড়াকড়ি করতে চলেছে। তাদের দেশ হয়ে আমেরিকায় পাঠানো চীনা পণ্যের ওপর এই কড়াকড়ি হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যে ভয় পাচ্ছে তা প্রশমিত করা সি’র সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। দ্য ইকোনমিস্টের সাবেক বেইজিং ব্যুরো চিফ ডেভিড রেনি বিবিসিকে বলেন, ‘চীনের একটা চিন্তা আছে। আমেরিকার জন্য তৈরি পণ্য অন্য দেশে পাঠালে সেই বাণিজ্য অংশীদাররা বিরক্ত হবে। তারা হয়তো চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনা পণ্যের ঢল যদি এই বাজারগুলোকে ভাসিয়ে দেয়, চাকরির ক্ষতি করে—তবে তা চীনের জন্য বড় সমস্যা হবে। এটা তাদের কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হবে।’
চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলের সম্পর্ক সব সময় সহজ ছিল না। লাওস, কম্বোডিয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশগুলো চীনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সতর্ক। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধ ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে। ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশেরও একই সমস্যা আছে। তবে এত দিন বাণিজ্য এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সেই অবস্থা বদলে যেতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চং জা-ইয়ান বলেন, ‘আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ভাবতে হতো চীনকে অসন্তুষ্ট করবে কিনা। এখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।’
চীনের ক্ষতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য লাভও বয়ে আনতে পারে। ভিয়েতনামের হাও লে আবারও সুযোগ দেখছেন। তিনি বলেন, আমেরিকান ক্রেতারা এখন চীনের বাইরে নতুন সরবরাহকারী খুঁজছে। খোঁজখবর অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে সরবরাহকারী বদলাতে মাস লাগত। এখন কয়েক দিনেই সিদ্ধান্ত হয়।’
মালয়েশিয়ায় বিশাল রাবার বাগান আছে। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিকেল রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী। রাবার গ্লাভসের প্রায় অর্ধেক বাজার তাদের দখলে। তারা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকে আরও বড় বাজার দখল করতে প্রস্তুত। মালয়েশিয়ান রাবার গ্লাভস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উন কিম হং বলেন, এই অঞ্চলের পণ্যে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক বসেছে। এটা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মতোই। এটা অবশ্যই খারাপ খবর।
তবে উন কিম হাং বলেন, ‘ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক ফের চালু হলেও মালয়েশিয়ার লাভ হবে। গ্রাহকেরা মালয়েশিয়ার গ্লাভসের জন্য অতিরিক্ত ২৪ শতাংশ শুল্ক দিতে রাজি হবে। কারণ চীনা গ্লাভসের জন্য ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিক আনন্দে নাচছি না। কিন্তু এটি আমাদের উৎপাদকদের জন্য ভালো হতে পারে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার উৎপাদকরাও এতে লাভবান হতে পারে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন। সে সময় ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী হাও লে একটি সুযোগ দেখেছিলেন। কারণ, তাঁর কোম্পানি চীনা রপ্তানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল সে সময়। এবার যখন পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমেই চীনা রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে, তখন হাও লের কোম্পানির মতো শত শত কোম্পানি সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
লের কোম্পানির নাম এসএইচডিসি ইলেকট্রনিকস। তারা প্রতি মাসে ২০ লাখ ডলারের যন্ত্রাংশ আমেরিকায় রপ্তানি করে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সরঞ্জাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ট্রাম্প ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসালে সেই আয়ের পথ বন্ধ হতে পারে। এই পরিকল্পনা জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। লে বলছেন, এটি তাঁর ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ খবর। এটা তাঁর ব্যবসার জন্য ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবে।
তাঁর কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিক্রি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চীনা পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি না। এটি কেবল আমাদের সমস্যা নয়। অনেক দেশীয় কোম্পানি অভ্যন্তরীণ বাজারে হিমশিম খাচ্ছে।’
২০১৬ সালে ট্রাম্প শুল্ক বসানোর পর সস্তা চীনা পণ্যে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাজার ভরে যায়। এই পণ্যগুলো আসলে আমেরিকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় অনেক চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশের স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে এই পরিস্থিতি অন্য ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করে। অনেক কোম্পানি বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। বহু কোম্পানি চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে চাইছিল। কিন্তু এখন আবার ট্রাম্প নিজেই সেই দরজাগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এই সুযোগগুলোকে একটি অগ্রহণযোগ্য ফাঁক হিসেবে দেখছেন।
এটি ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল এক ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে হিস্যা দাবি করছে। কিন্তু তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে পড়েছে। চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। আর আমেরিকা তাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশগুলোর আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এমন চুক্তি করতে চাইতে পারে তাদের সঙ্গে, যার ফলে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন। এই সফর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এর গুরুত্ব বেড়েছে। তিন দেশই সি–কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। তবে ট্রাম্প এটিকে দেখছেন আমেরিকাকে ‘বিপদে ফেলার’ ষড়যন্ত্র হিসেবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে এসেছে, হোয়াইট হাউস ছোট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। ওয়াশিংটন এই দেশগুলোকে বেইজিংয়ের সঙ্গে লেনদেন সীমিত করতে চাপ দেবে বলে জানা গেছে। কিন্তু চীন ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্যের পরিমাণ এতই বেশি যে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে চীন রপ্তানি থেকে রেকর্ড সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর ১৬ শতাংশই এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশগুলো থেকে এবং এই অঞ্চলই চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। বেইজিং এই অঞ্চলে অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ভিয়েতনামে রেললাইন, কম্বোডিয়ায় বাঁধ এবং মালয়েশিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। এগুলো দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ। এর উদ্দেশ্য, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা চীন ও আমেরিকার মধ্যে কাউকে বেছে নিতে পারি না। যদি কোনো বিষয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’
ট্রাম্প নতুন করে বিশাল শুল্কের ঘোষণা দেওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো নড়েচড়ে বসেছে। তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনা শুরু করেছে। ভিয়েতনামের নেতা তো লামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি এটিকে ‘খুব ফলপ্রসূ’ আলাপ বলেছেন। তো লাম মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আমেরিকার বাজার ভিয়েতনামের জন্য জরুরি। ভিয়েতনাম ইলেকট্রনিকস শিল্পে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। স্যামসাং, ইন্টেল ও ফক্সকনের মতো কোম্পানি দেশটিতে কারখানা স্থাপন করেছে। তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি ফক্সকন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের হয়ে আইফোন তৈরি করে।
এদিকে, থাই কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে গেছেন। তাঁদের পরিকল্পনা হলো, আমেরিকা থেকে আমদানি ও বিনিয়োগ বাড়ানো। আমেরিকা তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। তাই তারা ৩৬ শতাংশ শুল্ক এড়াতে চাইছে। ট্রাম্প যেকোনো সময় এই শুল্ক আবার চালু করতে পারেন বলে ভয় তাদের। থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ‘আমরা আমেরিকাকে বলব, থাইল্যান্ড শুধু রপ্তানি করে না, আমরা তাদের বিশ্বস্ত মিত্র ও অর্থনৈতিক অংশীদার। আমেরিকা আমাদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে ভরসা রাখতে পারে।’
ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান পাল্টা ব্যবস্থা নেবে না। তারা ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং, তারা আমেরিকার কাছে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরবে। টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমেরিকার উদ্বেগ বুঝতে পারছি। আমাদের দেখাতে হবে, আসিয়ান এবং বিশেষ করে মালয়েশিয়া আমেরিকার জন্য একটি সংযোগ সেতু বা মধ্যস্থতাকারী হতে পারে।’
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তারা এই ভূমিকা ভালোভাবেই পালন করেছে। চীন ও আমেরিকা—দুই পক্ষের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে তারা লাভবান হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক সেই ধারা ব্যাহত করতে পারে।
মালয়েশিয়ার কথাই ভাবা যাক। গত কয়েক বছরে আমেরিকা ও অন্য দেশ থেকে চিপ প্রস্তুতকারকেরা সেখানে বিনিয়োগ করেছে। ওয়াশিংটন চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করেছে বলেই মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের এই বাড়বাড়ন্ত। গত বছর চীন মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের চিপ আমদানি করেছে। এই চিপগুলো চীনে ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরিতে কাজে লাগে। যেমন আইফোন। এসব পণ্য সাধারণত আমেরিকায় রপ্তানি হয়।
মালয়েশিয়ার ওপর ট্রাম্প ২৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মার্কিন বাজারে কয়েক শ কোটি ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এখানেই শেষ নয়, জাফরুল আজিজ বলেন, ‘যদি এমন পরিস্থিতি থেকেই যায়, তাহলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাববে। এর প্রভাব কেবল মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে।’
ইন্দোনেশিয়ার ওপরও ৩২ শতাংশ শুল্ক ধার্য করতে পারেন ট্রাম্প। ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর নিকেল আছে। এ কারণে দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ির সরবরাহ চেইনে বড় ভূমিকা নিতে চায়।
কম্বোডিয়াকে সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। কম্বোডিয়াকে চীনের মিত্র ভাবা হয়। কম্বোডিয়া এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। তবে দেশটি ট্রানজিট হাব হিসেবে বেশ উন্নতি করেছে। যেসব চীনা কোম্পানি আমেরিকার শুল্ক এড়াতে চায়, তারা ফ্রেন্ডশোরিংয়ের অংশ হিসেবে কম্বোডিয়াকে ব্যবহার করছে। কম্বোডিয়ায় পোশাক কারখানার ৯০ শতাংশই চীনাদের মালিকানাধীন বা তারাই চালায়। এই কারখানাগুলো মূলত আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি করে।
মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের অর্থনীতিবিদ ডরিস লিউ বলেছেন, ট্রাম্প শুল্কগুলো স্থগিত রেখেছেন। কিন্তু ‘যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে! তিনি বলেন, এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শুধু আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমালেই হবে না। কোনো একক বাণিজ্য অংশীদারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাও কমাতে হবে। এর জন্য ভারসাম্য আনা দরকার।
এই অনিশ্চিত সময়ে সি চিনপিং এক দৃঢ় বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘আসুন আমরা হাত মেলাই।’ আমেরিকার ‘ধমক’ প্রতিরোধ করি। তবে এটা সহজ হবে না। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়েরও বাণিজ্য বিরোধ আছে।
ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী ইসমা সাবিত্রী চিন্তিত। চীনের ওপর ট্রাম্প ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। তিনি বলেন, এর মানে হলো—চীনা পণ্য এখন অন্য বাজারে যাবে। ইসমা মনে করেন, এতে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণ, তারাও আর আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে পারছে না।
হেলোপপি নামের একটি পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক ইসমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট ব্যবসাগুলো খুব চাপে পড়েছে। অত্যন্ত সস্তা চীনা পণ্যের কারণে আমরা টিকে থাকতে লড়াই করছি।’ হেলোপপির একটি জনপ্রিয় পায়জামার দাম ৭ দশমিক ১০ ডলার। ইন্দোনেশীয় রুপিতে এটা ১ লাখ ১৯ হাজার। ইসমা জানান, তিনি চীন থেকে আসা একই ডিজাইনের পায়জামা প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হতে দেখেছেন।
সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস ইউসুফ-ইসহাক ইনস্টিটিউটের গবেষক নগুয়েন খ্যাক জিয়াং বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের খুব কাছে। এখানকার বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্মুক্ত। বাজারও দ্রুত বাড়ছে। তাই এটি চীনা পণ্যের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনেক দেশ চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। এতে তাদের দুর্বলতা আরও বাড়ে।
চীনা পণ্যের দাম কম, তাই ক্রেতারা খুশি। পোশাক, জুতা, ফোন—সবকিছুর দাম কম। কিন্তু হাজার হাজার স্থানীয় ব্যবসা এই কম দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, গত দুই বছরে প্রতি মাসে দেশটিতে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় আড়াই লাখ টেক্সটাইল শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সেখানকার বাণিজ্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রায় ৬০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। স্রিটেক্স ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল কারখানা। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
মুজিয়াতি নামে একজন স্রিটেক্সে ৩০ বছর কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি চাকরি হারান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যখন খবরে দেখছি, আমদানি করা পণ্যে বাজার ভরে গেছে। এটি আমাদের দেশের বাজার নষ্ট করছে।’ ৫০ বছর বয়সী মুজিয়াতি এখনো কাজ খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের ভাগ্যই খারাপ ছিল। আমরা কার কাছে অভিযোগ করব? কেউ নেই।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো সুরক্ষানীতি নিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীনা পণ্যের প্রভাব থেকে বাঁচতে সাহায্য চাওয়ায় সরকারগুলো পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত বছর ইন্দোনেশিয়া কিছু চীনা পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ভেবেছিল। তারা একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট তেমু বন্ধ করে দেয়। এটি চীনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল।
থাইল্যান্ড আমদানি পণ্যে নজরদারি বাড়িয়েছে। দেড় হাজার থাই বাথের (প্রায় ৪৫ ডলার) কম দামের পণ্যে তারা অতিরিক্ত কর বসিয়েছে। এ বছর ভিয়েতনাম চীনা ইস্পাত পণ্যের ওপর দুই বার শুল্ক বসিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর খবর এসেছে, ভিয়েতনাম কড়াকড়ি করতে চলেছে। তাদের দেশ হয়ে আমেরিকায় পাঠানো চীনা পণ্যের ওপর এই কড়াকড়ি হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যে ভয় পাচ্ছে তা প্রশমিত করা সি’র সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। দ্য ইকোনমিস্টের সাবেক বেইজিং ব্যুরো চিফ ডেভিড রেনি বিবিসিকে বলেন, ‘চীনের একটা চিন্তা আছে। আমেরিকার জন্য তৈরি পণ্য অন্য দেশে পাঠালে সেই বাণিজ্য অংশীদাররা বিরক্ত হবে। তারা হয়তো চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনা পণ্যের ঢল যদি এই বাজারগুলোকে ভাসিয়ে দেয়, চাকরির ক্ষতি করে—তবে তা চীনের জন্য বড় সমস্যা হবে। এটা তাদের কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হবে।’
চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলের সম্পর্ক সব সময় সহজ ছিল না। লাওস, কম্বোডিয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশগুলো চীনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সতর্ক। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধ ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে। ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশেরও একই সমস্যা আছে। তবে এত দিন বাণিজ্য এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সেই অবস্থা বদলে যেতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চং জা-ইয়ান বলেন, ‘আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ভাবতে হতো চীনকে অসন্তুষ্ট করবে কিনা। এখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।’
চীনের ক্ষতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য লাভও বয়ে আনতে পারে। ভিয়েতনামের হাও লে আবারও সুযোগ দেখছেন। তিনি বলেন, আমেরিকান ক্রেতারা এখন চীনের বাইরে নতুন সরবরাহকারী খুঁজছে। খোঁজখবর অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে সরবরাহকারী বদলাতে মাস লাগত। এখন কয়েক দিনেই সিদ্ধান্ত হয়।’
মালয়েশিয়ায় বিশাল রাবার বাগান আছে। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিকেল রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী। রাবার গ্লাভসের প্রায় অর্ধেক বাজার তাদের দখলে। তারা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকে আরও বড় বাজার দখল করতে প্রস্তুত। মালয়েশিয়ান রাবার গ্লাভস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উন কিম হং বলেন, এই অঞ্চলের পণ্যে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক বসেছে। এটা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মতোই। এটা অবশ্যই খারাপ খবর।
তবে উন কিম হাং বলেন, ‘ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক ফের চালু হলেও মালয়েশিয়ার লাভ হবে। গ্রাহকেরা মালয়েশিয়ার গ্লাভসের জন্য অতিরিক্ত ২৪ শতাংশ শুল্ক দিতে রাজি হবে। কারণ চীনা গ্লাভসের জন্য ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিক আনন্দে নাচছি না। কিন্তু এটি আমাদের উৎপাদকদের জন্য ভালো হতে পারে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার উৎপাদকরাও এতে লাভবান হতে পারে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন। সে সময় ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী হাও লে একটি সুযোগ দেখেছিলেন। কারণ, তাঁর কোম্পানি চীনা রপ্তানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল সে সময়। এবার যখন পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমেই চীনা রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে, তখন হাও লের কোম্পানির মতো শত শত কোম্পানি সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
লের কোম্পানির নাম এসএইচডিসি ইলেকট্রনিকস। তারা প্রতি মাসে ২০ লাখ ডলারের যন্ত্রাংশ আমেরিকায় রপ্তানি করে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সরঞ্জাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ট্রাম্প ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসালে সেই আয়ের পথ বন্ধ হতে পারে। এই পরিকল্পনা জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। লে বলছেন, এটি তাঁর ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ খবর। এটা তাঁর ব্যবসার জন্য ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবে।
তাঁর কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিক্রি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চীনা পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি না। এটি কেবল আমাদের সমস্যা নয়। অনেক দেশীয় কোম্পানি অভ্যন্তরীণ বাজারে হিমশিম খাচ্ছে।’
২০১৬ সালে ট্রাম্প শুল্ক বসানোর পর সস্তা চীনা পণ্যে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাজার ভরে যায়। এই পণ্যগুলো আসলে আমেরিকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় অনেক চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশের স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে এই পরিস্থিতি অন্য ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করে। অনেক কোম্পানি বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। বহু কোম্পানি চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে চাইছিল। কিন্তু এখন আবার ট্রাম্প নিজেই সেই দরজাগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এই সুযোগগুলোকে একটি অগ্রহণযোগ্য ফাঁক হিসেবে দেখছেন।
এটি ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল এক ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে হিস্যা দাবি করছে। কিন্তু তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে পড়েছে। চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। আর আমেরিকা তাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশগুলোর আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এমন চুক্তি করতে চাইতে পারে তাদের সঙ্গে, যার ফলে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন। এই সফর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এর গুরুত্ব বেড়েছে। তিন দেশই সি–কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। তবে ট্রাম্প এটিকে দেখছেন আমেরিকাকে ‘বিপদে ফেলার’ ষড়যন্ত্র হিসেবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে এসেছে, হোয়াইট হাউস ছোট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। ওয়াশিংটন এই দেশগুলোকে বেইজিংয়ের সঙ্গে লেনদেন সীমিত করতে চাপ দেবে বলে জানা গেছে। কিন্তু চীন ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্যের পরিমাণ এতই বেশি যে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে চীন রপ্তানি থেকে রেকর্ড সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর ১৬ শতাংশই এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশগুলো থেকে এবং এই অঞ্চলই চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। বেইজিং এই অঞ্চলে অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ভিয়েতনামে রেললাইন, কম্বোডিয়ায় বাঁধ এবং মালয়েশিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। এগুলো দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ। এর উদ্দেশ্য, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা চীন ও আমেরিকার মধ্যে কাউকে বেছে নিতে পারি না। যদি কোনো বিষয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’
ট্রাম্প নতুন করে বিশাল শুল্কের ঘোষণা দেওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো নড়েচড়ে বসেছে। তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনা শুরু করেছে। ভিয়েতনামের নেতা তো লামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি এটিকে ‘খুব ফলপ্রসূ’ আলাপ বলেছেন। তো লাম মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আমেরিকার বাজার ভিয়েতনামের জন্য জরুরি। ভিয়েতনাম ইলেকট্রনিকস শিল্পে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। স্যামসাং, ইন্টেল ও ফক্সকনের মতো কোম্পানি দেশটিতে কারখানা স্থাপন করেছে। তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি ফক্সকন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের হয়ে আইফোন তৈরি করে।
এদিকে, থাই কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে গেছেন। তাঁদের পরিকল্পনা হলো, আমেরিকা থেকে আমদানি ও বিনিয়োগ বাড়ানো। আমেরিকা তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। তাই তারা ৩৬ শতাংশ শুল্ক এড়াতে চাইছে। ট্রাম্প যেকোনো সময় এই শুল্ক আবার চালু করতে পারেন বলে ভয় তাদের। থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ‘আমরা আমেরিকাকে বলব, থাইল্যান্ড শুধু রপ্তানি করে না, আমরা তাদের বিশ্বস্ত মিত্র ও অর্থনৈতিক অংশীদার। আমেরিকা আমাদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে ভরসা রাখতে পারে।’
ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান পাল্টা ব্যবস্থা নেবে না। তারা ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং, তারা আমেরিকার কাছে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরবে। টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমেরিকার উদ্বেগ বুঝতে পারছি। আমাদের দেখাতে হবে, আসিয়ান এবং বিশেষ করে মালয়েশিয়া আমেরিকার জন্য একটি সংযোগ সেতু বা মধ্যস্থতাকারী হতে পারে।’
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তারা এই ভূমিকা ভালোভাবেই পালন করেছে। চীন ও আমেরিকা—দুই পক্ষের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে তারা লাভবান হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক সেই ধারা ব্যাহত করতে পারে।
মালয়েশিয়ার কথাই ভাবা যাক। গত কয়েক বছরে আমেরিকা ও অন্য দেশ থেকে চিপ প্রস্তুতকারকেরা সেখানে বিনিয়োগ করেছে। ওয়াশিংটন চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করেছে বলেই মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের এই বাড়বাড়ন্ত। গত বছর চীন মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের চিপ আমদানি করেছে। এই চিপগুলো চীনে ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরিতে কাজে লাগে। যেমন আইফোন। এসব পণ্য সাধারণত আমেরিকায় রপ্তানি হয়।
মালয়েশিয়ার ওপর ট্রাম্প ২৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মার্কিন বাজারে কয়েক শ কোটি ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এখানেই শেষ নয়, জাফরুল আজিজ বলেন, ‘যদি এমন পরিস্থিতি থেকেই যায়, তাহলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাববে। এর প্রভাব কেবল মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে।’
ইন্দোনেশিয়ার ওপরও ৩২ শতাংশ শুল্ক ধার্য করতে পারেন ট্রাম্প। ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর নিকেল আছে। এ কারণে দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ির সরবরাহ চেইনে বড় ভূমিকা নিতে চায়।
কম্বোডিয়াকে সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। কম্বোডিয়াকে চীনের মিত্র ভাবা হয়। কম্বোডিয়া এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। তবে দেশটি ট্রানজিট হাব হিসেবে বেশ উন্নতি করেছে। যেসব চীনা কোম্পানি আমেরিকার শুল্ক এড়াতে চায়, তারা ফ্রেন্ডশোরিংয়ের অংশ হিসেবে কম্বোডিয়াকে ব্যবহার করছে। কম্বোডিয়ায় পোশাক কারখানার ৯০ শতাংশই চীনাদের মালিকানাধীন বা তারাই চালায়। এই কারখানাগুলো মূলত আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি করে।
মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের অর্থনীতিবিদ ডরিস লিউ বলেছেন, ট্রাম্প শুল্কগুলো স্থগিত রেখেছেন। কিন্তু ‘যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে! তিনি বলেন, এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শুধু আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমালেই হবে না। কোনো একক বাণিজ্য অংশীদারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাও কমাতে হবে। এর জন্য ভারসাম্য আনা দরকার।
এই অনিশ্চিত সময়ে সি চিনপিং এক দৃঢ় বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘আসুন আমরা হাত মেলাই।’ আমেরিকার ‘ধমক’ প্রতিরোধ করি। তবে এটা সহজ হবে না। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়েরও বাণিজ্য বিরোধ আছে।
ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী ইসমা সাবিত্রী চিন্তিত। চীনের ওপর ট্রাম্প ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। তিনি বলেন, এর মানে হলো—চীনা পণ্য এখন অন্য বাজারে যাবে। ইসমা মনে করেন, এতে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণ, তারাও আর আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে পারছে না।
হেলোপপি নামের একটি পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক ইসমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট ব্যবসাগুলো খুব চাপে পড়েছে। অত্যন্ত সস্তা চীনা পণ্যের কারণে আমরা টিকে থাকতে লড়াই করছি।’ হেলোপপির একটি জনপ্রিয় পায়জামার দাম ৭ দশমিক ১০ ডলার। ইন্দোনেশীয় রুপিতে এটা ১ লাখ ১৯ হাজার। ইসমা জানান, তিনি চীন থেকে আসা একই ডিজাইনের পায়জামা প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হতে দেখেছেন।
সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস ইউসুফ-ইসহাক ইনস্টিটিউটের গবেষক নগুয়েন খ্যাক জিয়াং বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের খুব কাছে। এখানকার বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্মুক্ত। বাজারও দ্রুত বাড়ছে। তাই এটি চীনা পণ্যের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনেক দেশ চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। এতে তাদের দুর্বলতা আরও বাড়ে।
চীনা পণ্যের দাম কম, তাই ক্রেতারা খুশি। পোশাক, জুতা, ফোন—সবকিছুর দাম কম। কিন্তু হাজার হাজার স্থানীয় ব্যবসা এই কম দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, গত দুই বছরে প্রতি মাসে দেশটিতে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় আড়াই লাখ টেক্সটাইল শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সেখানকার বাণিজ্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রায় ৬০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। স্রিটেক্স ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল কারখানা। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
মুজিয়াতি নামে একজন স্রিটেক্সে ৩০ বছর কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি চাকরি হারান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যখন খবরে দেখছি, আমদানি করা পণ্যে বাজার ভরে গেছে। এটি আমাদের দেশের বাজার নষ্ট করছে।’ ৫০ বছর বয়সী মুজিয়াতি এখনো কাজ খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের ভাগ্যই খারাপ ছিল। আমরা কার কাছে অভিযোগ করব? কেউ নেই।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো সুরক্ষানীতি নিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীনা পণ্যের প্রভাব থেকে বাঁচতে সাহায্য চাওয়ায় সরকারগুলো পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত বছর ইন্দোনেশিয়া কিছু চীনা পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ভেবেছিল। তারা একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট তেমু বন্ধ করে দেয়। এটি চীনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল।
থাইল্যান্ড আমদানি পণ্যে নজরদারি বাড়িয়েছে। দেড় হাজার থাই বাথের (প্রায় ৪৫ ডলার) কম দামের পণ্যে তারা অতিরিক্ত কর বসিয়েছে। এ বছর ভিয়েতনাম চীনা ইস্পাত পণ্যের ওপর দুই বার শুল্ক বসিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর খবর এসেছে, ভিয়েতনাম কড়াকড়ি করতে চলেছে। তাদের দেশ হয়ে আমেরিকায় পাঠানো চীনা পণ্যের ওপর এই কড়াকড়ি হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যে ভয় পাচ্ছে তা প্রশমিত করা সি’র সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। দ্য ইকোনমিস্টের সাবেক বেইজিং ব্যুরো চিফ ডেভিড রেনি বিবিসিকে বলেন, ‘চীনের একটা চিন্তা আছে। আমেরিকার জন্য তৈরি পণ্য অন্য দেশে পাঠালে সেই বাণিজ্য অংশীদাররা বিরক্ত হবে। তারা হয়তো চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনা পণ্যের ঢল যদি এই বাজারগুলোকে ভাসিয়ে দেয়, চাকরির ক্ষতি করে—তবে তা চীনের জন্য বড় সমস্যা হবে। এটা তাদের কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হবে।’
চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলের সম্পর্ক সব সময় সহজ ছিল না। লাওস, কম্বোডিয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশগুলো চীনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সতর্ক। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধ ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে। ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশেরও একই সমস্যা আছে। তবে এত দিন বাণিজ্য এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সেই অবস্থা বদলে যেতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চং জা-ইয়ান বলেন, ‘আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ভাবতে হতো চীনকে অসন্তুষ্ট করবে কিনা। এখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।’
চীনের ক্ষতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য লাভও বয়ে আনতে পারে। ভিয়েতনামের হাও লে আবারও সুযোগ দেখছেন। তিনি বলেন, আমেরিকান ক্রেতারা এখন চীনের বাইরে নতুন সরবরাহকারী খুঁজছে। খোঁজখবর অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে সরবরাহকারী বদলাতে মাস লাগত। এখন কয়েক দিনেই সিদ্ধান্ত হয়।’
মালয়েশিয়ায় বিশাল রাবার বাগান আছে। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিকেল রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী। রাবার গ্লাভসের প্রায় অর্ধেক বাজার তাদের দখলে। তারা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকে আরও বড় বাজার দখল করতে প্রস্তুত। মালয়েশিয়ান রাবার গ্লাভস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উন কিম হং বলেন, এই অঞ্চলের পণ্যে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক বসেছে। এটা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মতোই। এটা অবশ্যই খারাপ খবর।
তবে উন কিম হাং বলেন, ‘ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক ফের চালু হলেও মালয়েশিয়ার লাভ হবে। গ্রাহকেরা মালয়েশিয়ার গ্লাভসের জন্য অতিরিক্ত ২৪ শতাংশ শুল্ক দিতে রাজি হবে। কারণ চীনা গ্লাভসের জন্য ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিক আনন্দে নাচছি না। কিন্তু এটি আমাদের উৎপাদকদের জন্য ভালো হতে পারে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার উৎপাদকরাও এতে লাভবান হতে পারে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন। সে সময় ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী হাও লে একটি সুযোগ দেখেছিলেন। কারণ, তাঁর কোম্পানি চীনা রপ্তানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল সে সময়। এবার যখন পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমেই চীনা রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে, তখন হাও লের কোম্পানির মতো শত শত কোম্পানি সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
লের কোম্পানির নাম এসএইচডিসি ইলেকট্রনিকস। তারা প্রতি মাসে ২০ লাখ ডলারের যন্ত্রাংশ আমেরিকায় রপ্তানি করে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সরঞ্জাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ট্রাম্প ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসালে সেই আয়ের পথ বন্ধ হতে পারে। এই পরিকল্পনা জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। লে বলছেন, এটি তাঁর ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ খবর। এটা তাঁর ব্যবসার জন্য ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবে।
তাঁর কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিক্রি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চীনা পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি না। এটি কেবল আমাদের সমস্যা নয়। অনেক দেশীয় কোম্পানি অভ্যন্তরীণ বাজারে হিমশিম খাচ্ছে।’
২০১৬ সালে ট্রাম্প শুল্ক বসানোর পর সস্তা চীনা পণ্যে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাজার ভরে যায়। এই পণ্যগুলো আসলে আমেরিকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় অনেক চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশের স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে এই পরিস্থিতি অন্য ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করে। অনেক কোম্পানি বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। বহু কোম্পানি চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে চাইছিল। কিন্তু এখন আবার ট্রাম্প নিজেই সেই দরজাগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এই সুযোগগুলোকে একটি অগ্রহণযোগ্য ফাঁক হিসেবে দেখছেন।
এটি ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল এক ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে হিস্যা দাবি করছে। কিন্তু তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে পড়েছে। চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। আর আমেরিকা তাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশগুলোর আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এমন চুক্তি করতে চাইতে পারে তাদের সঙ্গে, যার ফলে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন। এই সফর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এর গুরুত্ব বেড়েছে। তিন দেশই সি–কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। তবে ট্রাম্প এটিকে দেখছেন আমেরিকাকে ‘বিপদে ফেলার’ ষড়যন্ত্র হিসেবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে এসেছে, হোয়াইট হাউস ছোট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। ওয়াশিংটন এই দেশগুলোকে বেইজিংয়ের সঙ্গে লেনদেন সীমিত করতে চাপ দেবে বলে জানা গেছে। কিন্তু চীন ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্যের পরিমাণ এতই বেশি যে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে চীন রপ্তানি থেকে রেকর্ড সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর ১৬ শতাংশই এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশগুলো থেকে এবং এই অঞ্চলই চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। বেইজিং এই অঞ্চলে অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ভিয়েতনামে রেললাইন, কম্বোডিয়ায় বাঁধ এবং মালয়েশিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। এগুলো দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ। এর উদ্দেশ্য, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা চীন ও আমেরিকার মধ্যে কাউকে বেছে নিতে পারি না। যদি কোনো বিষয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’
ট্রাম্প নতুন করে বিশাল শুল্কের ঘোষণা দেওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো নড়েচড়ে বসেছে। তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনা শুরু করেছে। ভিয়েতনামের নেতা তো লামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি এটিকে ‘খুব ফলপ্রসূ’ আলাপ বলেছেন। তো লাম মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আমেরিকার বাজার ভিয়েতনামের জন্য জরুরি। ভিয়েতনাম ইলেকট্রনিকস শিল্পে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। স্যামসাং, ইন্টেল ও ফক্সকনের মতো কোম্পানি দেশটিতে কারখানা স্থাপন করেছে। তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি ফক্সকন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের হয়ে আইফোন তৈরি করে।
এদিকে, থাই কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে গেছেন। তাঁদের পরিকল্পনা হলো, আমেরিকা থেকে আমদানি ও বিনিয়োগ বাড়ানো। আমেরিকা তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। তাই তারা ৩৬ শতাংশ শুল্ক এড়াতে চাইছে। ট্রাম্প যেকোনো সময় এই শুল্ক আবার চালু করতে পারেন বলে ভয় তাদের। থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ‘আমরা আমেরিকাকে বলব, থাইল্যান্ড শুধু রপ্তানি করে না, আমরা তাদের বিশ্বস্ত মিত্র ও অর্থনৈতিক অংশীদার। আমেরিকা আমাদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে ভরসা রাখতে পারে।’
ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান পাল্টা ব্যবস্থা নেবে না। তারা ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং, তারা আমেরিকার কাছে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরবে। টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমেরিকার উদ্বেগ বুঝতে পারছি। আমাদের দেখাতে হবে, আসিয়ান এবং বিশেষ করে মালয়েশিয়া আমেরিকার জন্য একটি সংযোগ সেতু বা মধ্যস্থতাকারী হতে পারে।’
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তারা এই ভূমিকা ভালোভাবেই পালন করেছে। চীন ও আমেরিকা—দুই পক্ষের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে তারা লাভবান হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক সেই ধারা ব্যাহত করতে পারে।
মালয়েশিয়ার কথাই ভাবা যাক। গত কয়েক বছরে আমেরিকা ও অন্য দেশ থেকে চিপ প্রস্তুতকারকেরা সেখানে বিনিয়োগ করেছে। ওয়াশিংটন চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করেছে বলেই মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের এই বাড়বাড়ন্ত। গত বছর চীন মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের চিপ আমদানি করেছে। এই চিপগুলো চীনে ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরিতে কাজে লাগে। যেমন আইফোন। এসব পণ্য সাধারণত আমেরিকায় রপ্তানি হয়।
মালয়েশিয়ার ওপর ট্রাম্প ২৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মার্কিন বাজারে কয়েক শ কোটি ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এখানেই শেষ নয়, জাফরুল আজিজ বলেন, ‘যদি এমন পরিস্থিতি থেকেই যায়, তাহলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাববে। এর প্রভাব কেবল মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে।’
ইন্দোনেশিয়ার ওপরও ৩২ শতাংশ শুল্ক ধার্য করতে পারেন ট্রাম্প। ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর নিকেল আছে। এ কারণে দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ির সরবরাহ চেইনে বড় ভূমিকা নিতে চায়।
কম্বোডিয়াকে সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। কম্বোডিয়াকে চীনের মিত্র ভাবা হয়। কম্বোডিয়া এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। তবে দেশটি ট্রানজিট হাব হিসেবে বেশ উন্নতি করেছে। যেসব চীনা কোম্পানি আমেরিকার শুল্ক এড়াতে চায়, তারা ফ্রেন্ডশোরিংয়ের অংশ হিসেবে কম্বোডিয়াকে ব্যবহার করছে। কম্বোডিয়ায় পোশাক কারখানার ৯০ শতাংশই চীনাদের মালিকানাধীন বা তারাই চালায়। এই কারখানাগুলো মূলত আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি করে।
মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের অর্থনীতিবিদ ডরিস লিউ বলেছেন, ট্রাম্প শুল্কগুলো স্থগিত রেখেছেন। কিন্তু ‘যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে! তিনি বলেন, এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শুধু আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমালেই হবে না। কোনো একক বাণিজ্য অংশীদারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাও কমাতে হবে। এর জন্য ভারসাম্য আনা দরকার।
এই অনিশ্চিত সময়ে সি চিনপিং এক দৃঢ় বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘আসুন আমরা হাত মেলাই।’ আমেরিকার ‘ধমক’ প্রতিরোধ করি। তবে এটা সহজ হবে না। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়েরও বাণিজ্য বিরোধ আছে।
ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী ইসমা সাবিত্রী চিন্তিত। চীনের ওপর ট্রাম্প ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। তিনি বলেন, এর মানে হলো—চীনা পণ্য এখন অন্য বাজারে যাবে। ইসমা মনে করেন, এতে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণ, তারাও আর আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে পারছে না।
হেলোপপি নামের একটি পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক ইসমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট ব্যবসাগুলো খুব চাপে পড়েছে। অত্যন্ত সস্তা চীনা পণ্যের কারণে আমরা টিকে থাকতে লড়াই করছি।’ হেলোপপির একটি জনপ্রিয় পায়জামার দাম ৭ দশমিক ১০ ডলার। ইন্দোনেশীয় রুপিতে এটা ১ লাখ ১৯ হাজার। ইসমা জানান, তিনি চীন থেকে আসা একই ডিজাইনের পায়জামা প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হতে দেখেছেন।
সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস ইউসুফ-ইসহাক ইনস্টিটিউটের গবেষক নগুয়েন খ্যাক জিয়াং বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের খুব কাছে। এখানকার বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্মুক্ত। বাজারও দ্রুত বাড়ছে। তাই এটি চীনা পণ্যের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনেক দেশ চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। এতে তাদের দুর্বলতা আরও বাড়ে।
চীনা পণ্যের দাম কম, তাই ক্রেতারা খুশি। পোশাক, জুতা, ফোন—সবকিছুর দাম কম। কিন্তু হাজার হাজার স্থানীয় ব্যবসা এই কম দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, গত দুই বছরে প্রতি মাসে দেশটিতে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় আড়াই লাখ টেক্সটাইল শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সেখানকার বাণিজ্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রায় ৬০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। স্রিটেক্স ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল কারখানা। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
মুজিয়াতি নামে একজন স্রিটেক্সে ৩০ বছর কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি চাকরি হারান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যখন খবরে দেখছি, আমদানি করা পণ্যে বাজার ভরে গেছে। এটি আমাদের দেশের বাজার নষ্ট করছে।’ ৫০ বছর বয়সী মুজিয়াতি এখনো কাজ খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের ভাগ্যই খারাপ ছিল। আমরা কার কাছে অভিযোগ করব? কেউ নেই।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো সুরক্ষানীতি নিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীনা পণ্যের প্রভাব থেকে বাঁচতে সাহায্য চাওয়ায় সরকারগুলো পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত বছর ইন্দোনেশিয়া কিছু চীনা পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ভেবেছিল। তারা একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট তেমু বন্ধ করে দেয়। এটি চীনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল।
থাইল্যান্ড আমদানি পণ্যে নজরদারি বাড়িয়েছে। দেড় হাজার থাই বাথের (প্রায় ৪৫ ডলার) কম দামের পণ্যে তারা অতিরিক্ত কর বসিয়েছে। এ বছর ভিয়েতনাম চীনা ইস্পাত পণ্যের ওপর দুই বার শুল্ক বসিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর খবর এসেছে, ভিয়েতনাম কড়াকড়ি করতে চলেছে। তাদের দেশ হয়ে আমেরিকায় পাঠানো চীনা পণ্যের ওপর এই কড়াকড়ি হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যে ভয় পাচ্ছে তা প্রশমিত করা সি’র সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। দ্য ইকোনমিস্টের সাবেক বেইজিং ব্যুরো চিফ ডেভিড রেনি বিবিসিকে বলেন, ‘চীনের একটা চিন্তা আছে। আমেরিকার জন্য তৈরি পণ্য অন্য দেশে পাঠালে সেই বাণিজ্য অংশীদাররা বিরক্ত হবে। তারা হয়তো চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনা পণ্যের ঢল যদি এই বাজারগুলোকে ভাসিয়ে দেয়, চাকরির ক্ষতি করে—তবে তা চীনের জন্য বড় সমস্যা হবে। এটা তাদের কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হবে।’
চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলের সম্পর্ক সব সময় সহজ ছিল না। লাওস, কম্বোডিয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশগুলো চীনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সতর্ক। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধ ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে। ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশেরও একই সমস্যা আছে। তবে এত দিন বাণিজ্য এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সেই অবস্থা বদলে যেতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চং জা-ইয়ান বলেন, ‘আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ভাবতে হতো চীনকে অসন্তুষ্ট করবে কিনা। এখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।’
চীনের ক্ষতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য লাভও বয়ে আনতে পারে। ভিয়েতনামের হাও লে আবারও সুযোগ দেখছেন। তিনি বলেন, আমেরিকান ক্রেতারা এখন চীনের বাইরে নতুন সরবরাহকারী খুঁজছে। খোঁজখবর অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে সরবরাহকারী বদলাতে মাস লাগত। এখন কয়েক দিনেই সিদ্ধান্ত হয়।’
মালয়েশিয়ায় বিশাল রাবার বাগান আছে। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিকেল রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী। রাবার গ্লাভসের প্রায় অর্ধেক বাজার তাদের দখলে। তারা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকে আরও বড় বাজার দখল করতে প্রস্তুত। মালয়েশিয়ান রাবার গ্লাভস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উন কিম হং বলেন, এই অঞ্চলের পণ্যে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক বসেছে। এটা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মতোই। এটা অবশ্যই খারাপ খবর।
তবে উন কিম হাং বলেন, ‘ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক ফের চালু হলেও মালয়েশিয়ার লাভ হবে। গ্রাহকেরা মালয়েশিয়ার গ্লাভসের জন্য অতিরিক্ত ২৪ শতাংশ শুল্ক দিতে রাজি হবে। কারণ চীনা গ্লাভসের জন্য ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিক আনন্দে নাচছি না। কিন্তু এটি আমাদের উৎপাদকদের জন্য ভালো হতে পারে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার উৎপাদকরাও এতে লাভবান হতে পারে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

ট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
১৮ এপ্রিল ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
১৮ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

ট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
১৮ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
১৮ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১ দিন আগে