
গত বছরের জুনে নিখিল গুপ্ত নিজের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর এক পরিচিতজনকে একটি ভিডিও পাঠান। কানাডায় শিখদের প্রার্থনাগৃহ গুরুদুয়ারার বাইরে এক ব্যক্তিকে পরপর ৩৪টি গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি একটি গাড়ির পাশে ঢলে পড়েন। এই ঘটনারই ভিডিও সেটি।
নিহত ওই ব্যক্তি হরদীপ সিং নিজ্জার। কানাডা পুলিশ বলছে, নিখিলের বেশ কয়েকজন টার্গেটের মধ্যে হরদীপ একজন। কারণ নিখিল তাঁর সেই পরিচিতজনকে লিখেছিলেন, ‘আমাদের অনেক টার্গেট রয়েছে।’
মার্কিন কৌঁসুলিদের মতে, নিখিল নিউইয়র্কভিত্তিক আইনজীবী এবং শিখস ফর জাস্টিস সংগঠনের নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে মার্কিন গোয়েন্দাদের তৎপরতায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন, শিখস ফর জাস্টিসের দুই নেতা পান্নুন এবং নিজ্জার স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সপক্ষে বৈশ্বিক গণভোট আয়োজনে কাজ করছিলেন। এ কারণেই তাঁদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, এই গণভোটের মাধ্যমে পাঞ্জাবকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টি করা।
কানাডা এখনো নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারলেও, নিখিলকে গত জুনে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্কে দাখিল করা একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, নিখিল পান্নুনকে হত্যার জন্য ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু চালচক্রে ভাড়াটে খুনি খুঁজতে গিয়ে মার্কিন পুলিশেরই এক সোর্সকে ১ লাখ ডলার দিয়েছিলেন তিনি।
এই অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে ভারত এমন একটি ক্লাবের সদস্য হয়ে উঠবে যারা আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে গুপ্তহত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে ফের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড শুরুর ইঙ্গিত মিলছে, যে চর্চাটি দীর্ঘকাল ধরে শুধু বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মধ্যেই ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে বিরোধীদের গুপ্তহত্যার অভিযোগ রয়েছে। বিদেশের মাটিতে ভারত সরকারের গুপ্তহত্যার লক্ষ্য পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই ছিল। সম্প্রতি শিখ নেতা নিজ্জার হত্যার ঘটনার পর ভারতের বিরুদ্ধে সেই সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে।
বিদেশের মাটিতে গুপ্তহত্যার রেকর্ড সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলের। হামাসের সিনিয়র নেতাদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে দেশটি গুপ্তহত্যার পরিকল্পনা নতুন করে সাজাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যেই হামাসের অন্তত তিনজন সিনিয়র নেতাকে গুপ্তহত্যা করেছে ইসরায়েল।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না থাকলে, কোনো নিন্দা না হলে, বিচার না হলে এটি বাড়বে। এগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা ও স্থায়ীকরণের উপাদান।’
সৌদি আরবের গুপ্তহত্যার তদন্তকারী কমিটির নেতৃত্বদানকারী ক্যালামার্ড বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে লক্ষ্যবস্তু করা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলো আমাদের আরও খারাপ দুনিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে; এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
আন্তর্জাতিক আইনে বিদেশের মাটিতে রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা নিঃসন্দেহে বেআইনি। আর কূটনৈতিক কনভেনশন অনুযায়ী এটি আরও বড় অপরাধ, যা যুদ্ধের সমতুল্য।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের পরিণতি নিয়ে ভয় এবং আন্তর্জাতিক সুযোগ–সুবিধা সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে বিংশ শতকের বেশির ভাগ সময় বেশির ভাগ দেশ গুপ্তহত্যা থেকে বিরত ছিল। এরপরও যেসব দেশ জড়িয়েছে, তারা অভ্যন্তরীণ আইন মেনে কাকে, কখন, কোথায় এবং কীভাবে হত্যা করতে হবে তা নির্ধারণ করেছে।
গুপ্তহত্যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র
স্নায়ুযুদ্ধের সময় বিশ্বের দুটি পরাশক্তি গুপ্তহত্যায় জড়িয়েছিল, যদিও খুবই ভিন্ন উদ্দেশ্যে। ১৯৬৪ সালের সিআইএ মেমো রিপোর্ট বলছে, সোভিয়েতরা গুপ্তহত্যার টার্গেট করত কেবল সেই ব্যক্তিদের যারা কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক এবং যাদের কোনোভাবেই অপহরণ করা যায় না।
সাধারণভাবে, সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তহত্যা নিজ দেশের সেসব নাগরিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যারা বিদেশ থেকে সোভিয়েত শাসনের সমালোচনা করছিল। ১৯৪০ সালে মেক্সিকো সিটির একটি বাড়িতে লিওন ট্রটস্কিকে বরফ ভাঙার সুচ দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এভাবে ক্রেমলিনের শত্রুদের দেশে এবং বিদেশের মাটিতে অপহরণ বা হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যতিক্রমও করেছে: জার্মান আইনজীবী ওয়াল্টার লিন্সকে মার্কিন–অধিকৃত বার্লিন থেকে অপহরণ এবং ১৯৫৩ সালে হত্যা করা হয়েছিল।
আমেরিকার বিশ্ব নেতাদের খুনের তালিকায় রাখার প্রবণতা রয়েছে। ২০০৭ সালে সিআইএর কুখ্যাত গুপ্তহত্যার তথ্য ফাঁস হয়, এই নথি ‘ফ্যামিলি জুয়েলস’ নামে বিখ্যাত। সেখানে দেখা যায়, বিদেশি কমিউনিস্ট নেতাদের হত্যার লক্ষ্যবস্তু করেছে সিআইএ। এর মধ্যে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যার অসংখ্য পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া সিআইএর হত্যার তালিকায় ছিলেন দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এনগো দিন দিম এবং কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বা। তবে সিআইএ তাঁদের হত্যা করার আগেই মার্কিন সমর্থিত অভ্যুত্থানে তাঁরা নিহত হন। এসব হত্যাকাণ্ডের গোপন নথি প্রকাশ পেলে মার্কিন সিনেটে ‘চার্চ কমিটি’ নামে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
তদন্ত শেষে কমিটি জানায়, যুদ্ধের অংশ হিসেবে হলেও ‘গুপ্তহত্যা’ আমেরিকান নীতি, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং নৈতিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বৈদেশিক নীতির হাতিয়ার এটি হতে পারে না, একে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
এরপর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ১৯৭৬ সালে একটি নির্বাহী আদেশে বিদেশের মাটিতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হন এবং আইন পাস করেন।
গুপ্তহত্যায় ইরান ও উত্তর কোরিয়া
গুপ্তহত্যার বেশির ভাগই করেছে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো। ব্যতিক্রম হিসেবে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে বিদেশের মাটিতে প্রায় দুই ডজন গুপ্তহত্যার পেছনে ইরানকে দায়ী করা হয়। এসবের কিছু ফলও ভোগ করতে হয়েছে তেহরানকে।
১৯৮০ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাপুর বখতিয়ারকে হত্যাচেষ্টার জন্য গ্রেপ্তার হওয়া ইরানের একটি হিট স্কোয়াডকে ক্ষমা করে দেয় ফ্রান্স। ইরান এক দশক পরে প্যারিসে বখতিয়ারকে শেষমেশ হত্যা করেই ছাড়ে।
নিউইয়র্ক সিটিতে নির্বাসিত ইরানি ভিন্নমতাবলম্বী মাসিহ আলিনেজাদ অন্তত দুটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন। মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, ইরানের ভাড়াটে বন্দুকধারীরা ২০২১ সালে তাঁকে আটক করে ইরানে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুলিশ তা ব্যর্থ করে দেয়। ২০২২ সালে এই লেখককে হত্যার উদ্দেশ্যে আরেকটি দল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এবারও তারা পুলিশের হাতে আটক হয়।
গত বছরের হ্যালিফ্যাক্স আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ফোরামে আলিনেজাদ বলেন, যে লোকটিকে আসলে ব্রুকলিনে আমার বাড়ির সামনে থেকে একে–৪৭ বন্দুকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তিনি আগে ইউরোপের একটি অপরাধী চক্রের অংশ ছিলেন। সুতরাং বাস্তবতা হলো—স্বৈরাচারীরা কেবল নিজ দেশের লোকদেরই নয়, সীমানার বাইরের লোকদেরও নিপীড়ন করতে তারা একে অপরকে সাহায্য এবং সমর্থন করছে।
উত্তর কোরিয়া গুপ্তহত্যায় উচ্চাভিলাষী হলেও ততটা চতুর নয়। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং–হিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ‘ব্লু হাউসে’ ব্যর্থ হামলা চালায়। ১৯৯৭ সালে কিম জং ইলের ভাতিজা ই হান–ইয়ংকে হত্যার পেছনেও পিয়ংইয়ংকে দায়ী করা হয়।
২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সৎ ভাই কিম জং নাম কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মারাত্মক স্নায়ুগ্যাসে আক্রান্ত হন। ধারণা করা হয়, পিয়ংইয়ং এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে।
৯/১১ ও যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তহত্যার নতুন যুগ
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একবিংশ শতাব্দীতে সিআইএ এখন আর গুপ্তহত্যার অভিযানকে অগ্রাধিকার দেয় না। ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আরও বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এখন গুপ্তহত্যার সংস্কৃতি আর নেই বলেই মনে হচ্ছে।
এখন স্নায়ুযুদ্ধ না থাকলেও অনেক কিছুই বদলেছে। ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা এবং ৯/১১ হামলা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ নতুন যুগের সূচনা করেছে।
নাইন–ইলেভেনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘সমস্ত প্রয়োজনীয় এবং উপযুক্ত শক্তি’ ব্যবহারের জন্য মার্কিন কংগ্রেস ২০০১ সালে একটি তালিকা অনুমোদন করে। এরপর ২০১১ সালের অপারেশনে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা এবং ২০২০ সালে ড্রোন হামলায় ইরাকে ইরানের সামরিক কমান্ডার কাসেম সুলেইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।
গুপ্তহত্যা এখন চলছে আকাশপথে, ফলে খুনিদের ঝুঁকি কমেছে। আইনে এখনো এসব হত্যাকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মার্কিন ড্রোন কর্মসূচির ফাঁস হওয়া নথিতে অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার বিশ্লেষক ড্যানিয়েল হেল স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্টকে এসব নথি দেন। নথিতে দেখা যায়, মার্কিন সামরিক বাহিনী ২০১১ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সোমালিয়া এবং ইয়েমেনে কমপক্ষে নয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে টার্গেট করেছে।
সামরিক অভিযানের আওতায় একই ধরনের ড্রোন কর্মসূচি সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে আফগানিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়ায় সবচেয়ে বেশি মার্কিন ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার দাবি করে, এসব আক্রমণ হত্যার উদ্দেশ্যে নয়, এগুলো সামরিক শক্তির বৈধ ব্যবহার, যা ২০০১ সালের কংগ্রেসে অনুমোদিত।
সবাইকে ছাড়িয়ে ইসরায়েল
তবে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির অজুহাতে সবচেয়ে বেশি গুপ্তহত্যা করেছে ইসরায়েল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনি নেতা এবং নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিদেশের মাটিতে গুপ্তহত্যা করেছে। কিন্তু ইসরায়েল সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মাটিতে এসব করে না। তবে ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ মিউনিখ গেমসের সময় ইসরায়েলি অলিম্পিক দলের ওপর হামলা চালালে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
এরপরে একটি ইসরায়েলি গোষ্ঠী মিউনিখ হামলার সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই ডজন ফিলিস্তিনি নেতাকে হত্যা বা হত্যার চেষ্টা করে বলে মনে করা হয়। ইউরোপের মাটিতে খুন না করার প্রতিজ্ঞা ভেঙে ইসরায়েল ইতালি, ফ্রান্স, গ্রিস, সাইপ্রাস এবং অন্যান্য দেশে এসব হত্যাকাণ্ড চালায়।
ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন গোয়েন্দা ‘রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট: দ্য সিক্রেট হিস্টরি অব ইসরায়েলস টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশন’—এর লেখক রনেন বার্গম্যানকে বলেন, এসব খুনের ঘটনাগুলো ধোঁয়াশাপূর্ণ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে গুপ্তহত্যা চালানো আসলেই ভয় উদ্রেককারী। ইসরায়েল এসবের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও, এটি সত্য যে, একজন ইসরায়েলিই সেই বন্দুকের ট্রিগার চেপেছে।
ইসরায়েলের নতুন গুপ্তহত্যা অভিযানের লক্ষ্য হয়েছে হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইরানের নেতারা। ২০০৪ সালে দেশটি হামাস নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে হত্যার জন্য একটি হেলিকপ্টার গানশিপ পাঠায় ইসরায়েল। এই অভিযানে নয়জন পথচারী নিহত হয়। এই হত্যাকাণ্ড জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়। যদিও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয়।
অতি সম্প্রতি, দখলদার দেশটি ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানীদের নির্মূল করার জন্য গুপ্তহত্যা পরিকল্পনাকে প্রসারিত করেছে, এমনকি যারা তেহরানের অস্ত্র কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে না তাঁদেরও হত্যা করেছে।
তবে ‘রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট’ বইটিতে বার্গম্যান ইসরায়েলের টার্গেটেড কিলিং প্রোগ্রাম এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্যে একটি ফারাক দেখিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এখন যেসব কমান্ড–অ্যান্ড–কন্ট্রোল সিস্টেম, যুদ্ধকক্ষ, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি এবং পাইলটবিহীন বিমান বা ড্রোন আমেরিকা এবং মিত্রদের সেবা দেয়; সবই ইসরায়েলে বিকশিত হয়েছে।’
বার্গম্যান অনুমান করেন, ২০০০–এর আগের দশকগুলোতে ইসরায়েল প্রায় ৫০০টি গুপ্তহত্যা করেছে। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় নিয়ে বার্গম্যান লিখেছেন, এই সময় সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এরপর ২০১৮ পর্যন্ত কমপক্ষে আরও ৮০০টি অপারেশন হয়েছিল। সেই হাজার হাজার গুপ্তহত্যার অভিযানে টার্গেট ও অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যুদ্ধোত্তর সময়ে ইসরায়েল আবারও এসব গুপ্তহত্যা কর্মসূচি বাড়াতে চায়। গাজার বাইরে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে—সম্ভবত কাতার বা অন্য কোথাও।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্যালামার্ড বলেন, ‘আমরা তথাকথিত সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা করা প্রায় স্বাভাবিক করে ফেলেছি। এটিকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে আংশিক ন্যায্যতা দেওয়া হয়েছে। তবে কোনোভাবেই বিদেশের মাটিতে গুপ্তহত্যাকে সমর্থন করা যায় না।’
গত ২ জানুয়ারি লেবাননের বৈরুত শহরতলিতে একটি হামাসের অফিসে ড্রোন হামলায় গোষ্ঠীটির সিনিয়র নেতা সালেহ আল–আরৌরি নিহত হন। ওই হামলায় হামাসের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
গুপ্তহত্যার বিশ্বমঞ্চে পুতিন
বিশ্ব রাজনীতিতে আরেক যুগের সূচনা হয় ২০০০ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষমতায় আরোহণের মধ্যে দিয়ে। তাঁর নেতৃত্বে মস্কো বিদেশে নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যার সোভিয়েত রীতি বজায় রেখেছে। তবে মস্কো যেসব অঞ্চলকে জাতিগত এবং ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার অংশ বলে মনে করে, এমন প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদেরও টার্গেট করছে।
ইউক্রেনের ক্ষেত্রে পুতিনের কৌশলগুলো ক্রমশ নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে। ২০০৬ সালে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ দিয়ে দলত্যাগী আলেক্সান্ডার লিৎভিনেঙ্কো এবং সাবেক ডবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপালের বিষক্রিয়া এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
কিন্তু রাশিয়া এটাও প্রমাণ করেছে যে, খুনের কালিমা থেকে রেহাই পাওয়া কতটা সহজ! স্ক্রিপালকে বিষ প্রয়োগের চেষ্টার ঘটনায় বেশ কিছু নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লেও ২০১৭ সালে বাজফিড নিউজের তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গোপনে বিশ্বাস করেছিল, রাশিয়া অগণিত গুপ্তহত্যার জন্য দায়ী। কিন্তু যেসবের জন্য মস্কোকে সরাসরি অভিযুক্ত ও তিরস্কার করা হয়নি।
উন্নত গোয়েন্দা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকলেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার তেমন নেই। সন্দেহ রয়েছে, এই দেশগুলো পশ্চিমা তদন্তকারীদের এড়াতে কৌশল এবং তথ্য বিনিময় করছে।
গুপ্তহত্যায় সৌদি আরব ও পাকিস্তান
এমনকি যে রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতি রক্ষা করতে চায় তাদের বিরুদ্ধেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সৌদি রাজপরিবারের সমালোচক ব্লগার জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পেছনে রিয়াদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সিআইএ ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগি হত্যার জন্য সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে ১৫ জনের হিট স্কোয়াডকে দায়ী করেছে। এরপরেও এখনো ট্রাম্প নির্বিকার স্বরে বলেন, ‘হয়তো তিনি করেছেন, হয়তো করেননি।’
বিচারবহির্ভূত বা নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে জাতিসংঘের তৎকালীন বিশেষ র্যাপোর্টার ক্যালামার্ড সৌদি আরবকে জবাবদিহি করতে বিশ্বের ব্যর্থতার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর ও রিপোর্টের চার বছর পর ক্যালামার্ড বলেন, সামান্য পরিবর্তন হয়েছে এবং তবে বিচারের পথ সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধই রয়েছে।
পাকিস্তানও এই কাণ্ডে সমানভাবে দায়ী হতে পারে। দরিদ্র পাকিস্তানি প্রদেশ বেলুচিস্তানের একজন মানবাধিকার আইনজীবী কারিমা বালুচকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে টরন্টোতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। কানাডার পুলিশ বলেছে, পাকিস্তানের যোগসাজশের কোনো প্রমাণ নেই, তবে তাঁর পরিবার আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি করেছে। এ ছাড়া আইনজীবীরা কয়েক মাস আগে সুইডেনে নির্বাসিত পাকিস্তানি সাজিদ হোসেনের মৃত্যুর সঙ্গে আগের ঘটনার মিল আছে বলে দাবি করেছেন।
গুপ্তহত্যা ক্লাবের নতুন মুখ ভারত
বিচার প্রক্রিয়ার অভাবে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষার হর্তাকর্তারা বৈদেশিক নীতিকে এগিয়ে নিতে গুপ্তহত্যা অব্যাহত রেখেছে। হত্যাকারী দেশগুলোর ক্লাবে নতুন সদস্য যোগ হচ্ছে। সেই ক্লাবে ভারতকে নতুন সদস্য বলে মনে হচ্ছে। কানাডায় নিজ্জার হত্যা এবং নিউইয়র্কে পান্নুনকে হত্যার পরিকল্পনা ছাড়াও পাকিস্তানি গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন, ইন্টারসেপ্টের প্রাপ্ত নথি অনুসারে, ভারত অন্তত দুই পাকিস্তানি বাসিন্দাকে টার্গেট করেছে। একটি পৃথক ভারতীয় মেমো বলছে, কথিত রয়েছে, পশ্চিমে ভারতীয় কনস্যুলেটগুলো এই ‘অত্যাধুনিক ক্র্যাকডাউন স্কিম’ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে এমন প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের কোনো স্পষ্ট প্রমাণ নেই। তবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশে দেশটির সমালোচকদের ওপর নজরদারি ও চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বাড়িয়েছে।
সমাধান মিলবে কি?
ক্যালামার্ড বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা এমন একটি আন্তর্জাতিক সন্ধিক্ষণে রয়েছি; যেখানে কোনো দেশ বা সরকারের ভাবমূর্তি ও প্রচারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই সরকারগুলো তার প্রতি একেবারেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে।’
ক্যালামার্ড নিজের প্রতিবেদনে জাতিসংঘকে ‘টার্গেটেড কিলিংয়ের’ সমীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল করার আহ্বান জানিয়েছেন, যারা রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের খুঁটিনাটি তদন্ত করবে। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, ‘আমরা এখনো এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত নই এবং কারা এসব করে তার সম্পূর্ণ সন্দেহভাজন তালিকাও আমাদের কাছে নেই।’
ক্যালামার্ড মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বা কমিটি থাকা উচিত, যারা এসব মামলার তদন্ত করবে। এটি গঠিত হলে খুব শক্তিশালী বার্তা যাবে যে, এসব আর সহ্য করা হবে না।’
ক্যালামার্ড ফরেন পলিসিকে আরও বলেন, ‘আমি তখন যে পয়েন্টটি তৈরি করছিলাম এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছি তা হলো—নির্দিষ্ট ঘটনা তদন্তের জন্য আমাদের ক্ষমতার প্রয়োগ পুঙ্খানুপুঙ্খ করা। যা এসব ঘটনা রোধ করবে এবং আমাদের সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।’
তবে এসব সুপারিশ এখনো উপেক্ষিত। আশ্চর্যের কিছু নেই, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অন্তত দুটি রাষ্ট্র তাঁদের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে নিয়মিত গুপ্তহত্যা করে যাচ্ছে। বিশ্ব এখনো দায়সারাভাবেই গুপ্তহত্যা মোকাবিলার চেষ্টা করে। অনেক সময় ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা হলেও মূল হোতা দেশ বা সংস্থা দায় এড়ায়।
ক্যালামার্ড বলেন, দেশগুলো দ্বিপক্ষীয় বা কূটনৈতিক স্তরে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক আইন পরিচালনার কোনো উপায় নয়। বিশ্ব গুপ্তহত্যা ঠেকানো থেকে আরও দূরে চলে গেছে এবং বিশ্বজুড়ে সীমাহীন যুদ্ধের এক স্বাভাবিকতা এনে দিয়েছে।
হিট স্কোয়াড, বিষযুক্ত টুথপেস্ট বা সশস্ত্র ড্রোন যাই হোক না কেন, বিদেশের মাটিতে হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা নীতি, ভূ–রাজনীতি এবং অভ্যন্তরীণ ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক এবং উদ্বাস্তুরা এই বাস্তবতার শিকার সবচেয়ে বেশি—সম্ভবত জঙ্গি ও রাজনৈতিক নেতাদের চেয়েও।
ক্যালামার্ড যুক্তি দেন, এই ধরনের হত্যা বিশ্বকে নিরাপদ করা তো দূরের কথা, বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা তৈরি ছাড়া আর কিছুই করে না। আর এমন পরিস্থিতি তৈরিতে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মতো দেশগুলো।
ক্যালামার্ড বলেন, ‘গত ২০ বছরে সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে অসংখ্য আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা যে “ন্যায্যতা” এনেছে তা সত্যিই নিন্দনীয়। শুধু তাই নয়, দৃঢ় কণ্ঠে এসব ঘটনার নিন্দা করার ক্ষমতাকেও ব্যাপকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে।’
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ

গত বছরের জুনে নিখিল গুপ্ত নিজের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর এক পরিচিতজনকে একটি ভিডিও পাঠান। কানাডায় শিখদের প্রার্থনাগৃহ গুরুদুয়ারার বাইরে এক ব্যক্তিকে পরপর ৩৪টি গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি একটি গাড়ির পাশে ঢলে পড়েন। এই ঘটনারই ভিডিও সেটি।
নিহত ওই ব্যক্তি হরদীপ সিং নিজ্জার। কানাডা পুলিশ বলছে, নিখিলের বেশ কয়েকজন টার্গেটের মধ্যে হরদীপ একজন। কারণ নিখিল তাঁর সেই পরিচিতজনকে লিখেছিলেন, ‘আমাদের অনেক টার্গেট রয়েছে।’
মার্কিন কৌঁসুলিদের মতে, নিখিল নিউইয়র্কভিত্তিক আইনজীবী এবং শিখস ফর জাস্টিস সংগঠনের নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে মার্কিন গোয়েন্দাদের তৎপরতায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন, শিখস ফর জাস্টিসের দুই নেতা পান্নুন এবং নিজ্জার স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সপক্ষে বৈশ্বিক গণভোট আয়োজনে কাজ করছিলেন। এ কারণেই তাঁদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, এই গণভোটের মাধ্যমে পাঞ্জাবকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টি করা।
কানাডা এখনো নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারলেও, নিখিলকে গত জুনে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্কে দাখিল করা একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, নিখিল পান্নুনকে হত্যার জন্য ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু চালচক্রে ভাড়াটে খুনি খুঁজতে গিয়ে মার্কিন পুলিশেরই এক সোর্সকে ১ লাখ ডলার দিয়েছিলেন তিনি।
এই অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে ভারত এমন একটি ক্লাবের সদস্য হয়ে উঠবে যারা আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে গুপ্তহত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে ফের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড শুরুর ইঙ্গিত মিলছে, যে চর্চাটি দীর্ঘকাল ধরে শুধু বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মধ্যেই ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে বিরোধীদের গুপ্তহত্যার অভিযোগ রয়েছে। বিদেশের মাটিতে ভারত সরকারের গুপ্তহত্যার লক্ষ্য পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই ছিল। সম্প্রতি শিখ নেতা নিজ্জার হত্যার ঘটনার পর ভারতের বিরুদ্ধে সেই সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে।
বিদেশের মাটিতে গুপ্তহত্যার রেকর্ড সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলের। হামাসের সিনিয়র নেতাদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে দেশটি গুপ্তহত্যার পরিকল্পনা নতুন করে সাজাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যেই হামাসের অন্তত তিনজন সিনিয়র নেতাকে গুপ্তহত্যা করেছে ইসরায়েল।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না থাকলে, কোনো নিন্দা না হলে, বিচার না হলে এটি বাড়বে। এগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা ও স্থায়ীকরণের উপাদান।’
সৌদি আরবের গুপ্তহত্যার তদন্তকারী কমিটির নেতৃত্বদানকারী ক্যালামার্ড বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে লক্ষ্যবস্তু করা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলো আমাদের আরও খারাপ দুনিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে; এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
আন্তর্জাতিক আইনে বিদেশের মাটিতে রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা নিঃসন্দেহে বেআইনি। আর কূটনৈতিক কনভেনশন অনুযায়ী এটি আরও বড় অপরাধ, যা যুদ্ধের সমতুল্য।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের পরিণতি নিয়ে ভয় এবং আন্তর্জাতিক সুযোগ–সুবিধা সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে বিংশ শতকের বেশির ভাগ সময় বেশির ভাগ দেশ গুপ্তহত্যা থেকে বিরত ছিল। এরপরও যেসব দেশ জড়িয়েছে, তারা অভ্যন্তরীণ আইন মেনে কাকে, কখন, কোথায় এবং কীভাবে হত্যা করতে হবে তা নির্ধারণ করেছে।
গুপ্তহত্যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র
স্নায়ুযুদ্ধের সময় বিশ্বের দুটি পরাশক্তি গুপ্তহত্যায় জড়িয়েছিল, যদিও খুবই ভিন্ন উদ্দেশ্যে। ১৯৬৪ সালের সিআইএ মেমো রিপোর্ট বলছে, সোভিয়েতরা গুপ্তহত্যার টার্গেট করত কেবল সেই ব্যক্তিদের যারা কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক এবং যাদের কোনোভাবেই অপহরণ করা যায় না।
সাধারণভাবে, সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তহত্যা নিজ দেশের সেসব নাগরিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যারা বিদেশ থেকে সোভিয়েত শাসনের সমালোচনা করছিল। ১৯৪০ সালে মেক্সিকো সিটির একটি বাড়িতে লিওন ট্রটস্কিকে বরফ ভাঙার সুচ দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এভাবে ক্রেমলিনের শত্রুদের দেশে এবং বিদেশের মাটিতে অপহরণ বা হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যতিক্রমও করেছে: জার্মান আইনজীবী ওয়াল্টার লিন্সকে মার্কিন–অধিকৃত বার্লিন থেকে অপহরণ এবং ১৯৫৩ সালে হত্যা করা হয়েছিল।
আমেরিকার বিশ্ব নেতাদের খুনের তালিকায় রাখার প্রবণতা রয়েছে। ২০০৭ সালে সিআইএর কুখ্যাত গুপ্তহত্যার তথ্য ফাঁস হয়, এই নথি ‘ফ্যামিলি জুয়েলস’ নামে বিখ্যাত। সেখানে দেখা যায়, বিদেশি কমিউনিস্ট নেতাদের হত্যার লক্ষ্যবস্তু করেছে সিআইএ। এর মধ্যে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যার অসংখ্য পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া সিআইএর হত্যার তালিকায় ছিলেন দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এনগো দিন দিম এবং কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বা। তবে সিআইএ তাঁদের হত্যা করার আগেই মার্কিন সমর্থিত অভ্যুত্থানে তাঁরা নিহত হন। এসব হত্যাকাণ্ডের গোপন নথি প্রকাশ পেলে মার্কিন সিনেটে ‘চার্চ কমিটি’ নামে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
তদন্ত শেষে কমিটি জানায়, যুদ্ধের অংশ হিসেবে হলেও ‘গুপ্তহত্যা’ আমেরিকান নীতি, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং নৈতিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বৈদেশিক নীতির হাতিয়ার এটি হতে পারে না, একে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
এরপর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ১৯৭৬ সালে একটি নির্বাহী আদেশে বিদেশের মাটিতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হন এবং আইন পাস করেন।
গুপ্তহত্যায় ইরান ও উত্তর কোরিয়া
গুপ্তহত্যার বেশির ভাগই করেছে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো। ব্যতিক্রম হিসেবে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে বিদেশের মাটিতে প্রায় দুই ডজন গুপ্তহত্যার পেছনে ইরানকে দায়ী করা হয়। এসবের কিছু ফলও ভোগ করতে হয়েছে তেহরানকে।
১৯৮০ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাপুর বখতিয়ারকে হত্যাচেষ্টার জন্য গ্রেপ্তার হওয়া ইরানের একটি হিট স্কোয়াডকে ক্ষমা করে দেয় ফ্রান্স। ইরান এক দশক পরে প্যারিসে বখতিয়ারকে শেষমেশ হত্যা করেই ছাড়ে।
নিউইয়র্ক সিটিতে নির্বাসিত ইরানি ভিন্নমতাবলম্বী মাসিহ আলিনেজাদ অন্তত দুটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন। মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, ইরানের ভাড়াটে বন্দুকধারীরা ২০২১ সালে তাঁকে আটক করে ইরানে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুলিশ তা ব্যর্থ করে দেয়। ২০২২ সালে এই লেখককে হত্যার উদ্দেশ্যে আরেকটি দল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এবারও তারা পুলিশের হাতে আটক হয়।
গত বছরের হ্যালিফ্যাক্স আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ফোরামে আলিনেজাদ বলেন, যে লোকটিকে আসলে ব্রুকলিনে আমার বাড়ির সামনে থেকে একে–৪৭ বন্দুকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তিনি আগে ইউরোপের একটি অপরাধী চক্রের অংশ ছিলেন। সুতরাং বাস্তবতা হলো—স্বৈরাচারীরা কেবল নিজ দেশের লোকদেরই নয়, সীমানার বাইরের লোকদেরও নিপীড়ন করতে তারা একে অপরকে সাহায্য এবং সমর্থন করছে।
উত্তর কোরিয়া গুপ্তহত্যায় উচ্চাভিলাষী হলেও ততটা চতুর নয়। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং–হিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ‘ব্লু হাউসে’ ব্যর্থ হামলা চালায়। ১৯৯৭ সালে কিম জং ইলের ভাতিজা ই হান–ইয়ংকে হত্যার পেছনেও পিয়ংইয়ংকে দায়ী করা হয়।
২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সৎ ভাই কিম জং নাম কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মারাত্মক স্নায়ুগ্যাসে আক্রান্ত হন। ধারণা করা হয়, পিয়ংইয়ং এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে।
৯/১১ ও যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তহত্যার নতুন যুগ
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একবিংশ শতাব্দীতে সিআইএ এখন আর গুপ্তহত্যার অভিযানকে অগ্রাধিকার দেয় না। ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আরও বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এখন গুপ্তহত্যার সংস্কৃতি আর নেই বলেই মনে হচ্ছে।
এখন স্নায়ুযুদ্ধ না থাকলেও অনেক কিছুই বদলেছে। ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা এবং ৯/১১ হামলা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ নতুন যুগের সূচনা করেছে।
নাইন–ইলেভেনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘সমস্ত প্রয়োজনীয় এবং উপযুক্ত শক্তি’ ব্যবহারের জন্য মার্কিন কংগ্রেস ২০০১ সালে একটি তালিকা অনুমোদন করে। এরপর ২০১১ সালের অপারেশনে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা এবং ২০২০ সালে ড্রোন হামলায় ইরাকে ইরানের সামরিক কমান্ডার কাসেম সুলেইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।
গুপ্তহত্যা এখন চলছে আকাশপথে, ফলে খুনিদের ঝুঁকি কমেছে। আইনে এখনো এসব হত্যাকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মার্কিন ড্রোন কর্মসূচির ফাঁস হওয়া নথিতে অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার বিশ্লেষক ড্যানিয়েল হেল স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্টকে এসব নথি দেন। নথিতে দেখা যায়, মার্কিন সামরিক বাহিনী ২০১১ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সোমালিয়া এবং ইয়েমেনে কমপক্ষে নয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে টার্গেট করেছে।
সামরিক অভিযানের আওতায় একই ধরনের ড্রোন কর্মসূচি সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে আফগানিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়ায় সবচেয়ে বেশি মার্কিন ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার দাবি করে, এসব আক্রমণ হত্যার উদ্দেশ্যে নয়, এগুলো সামরিক শক্তির বৈধ ব্যবহার, যা ২০০১ সালের কংগ্রেসে অনুমোদিত।
সবাইকে ছাড়িয়ে ইসরায়েল
তবে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির অজুহাতে সবচেয়ে বেশি গুপ্তহত্যা করেছে ইসরায়েল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনি নেতা এবং নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিদেশের মাটিতে গুপ্তহত্যা করেছে। কিন্তু ইসরায়েল সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মাটিতে এসব করে না। তবে ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ মিউনিখ গেমসের সময় ইসরায়েলি অলিম্পিক দলের ওপর হামলা চালালে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
এরপরে একটি ইসরায়েলি গোষ্ঠী মিউনিখ হামলার সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই ডজন ফিলিস্তিনি নেতাকে হত্যা বা হত্যার চেষ্টা করে বলে মনে করা হয়। ইউরোপের মাটিতে খুন না করার প্রতিজ্ঞা ভেঙে ইসরায়েল ইতালি, ফ্রান্স, গ্রিস, সাইপ্রাস এবং অন্যান্য দেশে এসব হত্যাকাণ্ড চালায়।
ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন গোয়েন্দা ‘রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট: দ্য সিক্রেট হিস্টরি অব ইসরায়েলস টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশন’—এর লেখক রনেন বার্গম্যানকে বলেন, এসব খুনের ঘটনাগুলো ধোঁয়াশাপূর্ণ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে গুপ্তহত্যা চালানো আসলেই ভয় উদ্রেককারী। ইসরায়েল এসবের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও, এটি সত্য যে, একজন ইসরায়েলিই সেই বন্দুকের ট্রিগার চেপেছে।
ইসরায়েলের নতুন গুপ্তহত্যা অভিযানের লক্ষ্য হয়েছে হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইরানের নেতারা। ২০০৪ সালে দেশটি হামাস নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে হত্যার জন্য একটি হেলিকপ্টার গানশিপ পাঠায় ইসরায়েল। এই অভিযানে নয়জন পথচারী নিহত হয়। এই হত্যাকাণ্ড জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়। যদিও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয়।
অতি সম্প্রতি, দখলদার দেশটি ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানীদের নির্মূল করার জন্য গুপ্তহত্যা পরিকল্পনাকে প্রসারিত করেছে, এমনকি যারা তেহরানের অস্ত্র কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে না তাঁদেরও হত্যা করেছে।
তবে ‘রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট’ বইটিতে বার্গম্যান ইসরায়েলের টার্গেটেড কিলিং প্রোগ্রাম এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্যে একটি ফারাক দেখিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এখন যেসব কমান্ড–অ্যান্ড–কন্ট্রোল সিস্টেম, যুদ্ধকক্ষ, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি এবং পাইলটবিহীন বিমান বা ড্রোন আমেরিকা এবং মিত্রদের সেবা দেয়; সবই ইসরায়েলে বিকশিত হয়েছে।’
বার্গম্যান অনুমান করেন, ২০০০–এর আগের দশকগুলোতে ইসরায়েল প্রায় ৫০০টি গুপ্তহত্যা করেছে। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় নিয়ে বার্গম্যান লিখেছেন, এই সময় সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এরপর ২০১৮ পর্যন্ত কমপক্ষে আরও ৮০০টি অপারেশন হয়েছিল। সেই হাজার হাজার গুপ্তহত্যার অভিযানে টার্গেট ও অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যুদ্ধোত্তর সময়ে ইসরায়েল আবারও এসব গুপ্তহত্যা কর্মসূচি বাড়াতে চায়। গাজার বাইরে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে—সম্ভবত কাতার বা অন্য কোথাও।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্যালামার্ড বলেন, ‘আমরা তথাকথিত সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা করা প্রায় স্বাভাবিক করে ফেলেছি। এটিকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে আংশিক ন্যায্যতা দেওয়া হয়েছে। তবে কোনোভাবেই বিদেশের মাটিতে গুপ্তহত্যাকে সমর্থন করা যায় না।’
গত ২ জানুয়ারি লেবাননের বৈরুত শহরতলিতে একটি হামাসের অফিসে ড্রোন হামলায় গোষ্ঠীটির সিনিয়র নেতা সালেহ আল–আরৌরি নিহত হন। ওই হামলায় হামাসের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
গুপ্তহত্যার বিশ্বমঞ্চে পুতিন
বিশ্ব রাজনীতিতে আরেক যুগের সূচনা হয় ২০০০ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষমতায় আরোহণের মধ্যে দিয়ে। তাঁর নেতৃত্বে মস্কো বিদেশে নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যার সোভিয়েত রীতি বজায় রেখেছে। তবে মস্কো যেসব অঞ্চলকে জাতিগত এবং ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার অংশ বলে মনে করে, এমন প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদেরও টার্গেট করছে।
ইউক্রেনের ক্ষেত্রে পুতিনের কৌশলগুলো ক্রমশ নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে। ২০০৬ সালে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ দিয়ে দলত্যাগী আলেক্সান্ডার লিৎভিনেঙ্কো এবং সাবেক ডবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপালের বিষক্রিয়া এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
কিন্তু রাশিয়া এটাও প্রমাণ করেছে যে, খুনের কালিমা থেকে রেহাই পাওয়া কতটা সহজ! স্ক্রিপালকে বিষ প্রয়োগের চেষ্টার ঘটনায় বেশ কিছু নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লেও ২০১৭ সালে বাজফিড নিউজের তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গোপনে বিশ্বাস করেছিল, রাশিয়া অগণিত গুপ্তহত্যার জন্য দায়ী। কিন্তু যেসবের জন্য মস্কোকে সরাসরি অভিযুক্ত ও তিরস্কার করা হয়নি।
উন্নত গোয়েন্দা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকলেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার তেমন নেই। সন্দেহ রয়েছে, এই দেশগুলো পশ্চিমা তদন্তকারীদের এড়াতে কৌশল এবং তথ্য বিনিময় করছে।
গুপ্তহত্যায় সৌদি আরব ও পাকিস্তান
এমনকি যে রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতি রক্ষা করতে চায় তাদের বিরুদ্ধেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সৌদি রাজপরিবারের সমালোচক ব্লগার জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পেছনে রিয়াদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সিআইএ ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগি হত্যার জন্য সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে ১৫ জনের হিট স্কোয়াডকে দায়ী করেছে। এরপরেও এখনো ট্রাম্প নির্বিকার স্বরে বলেন, ‘হয়তো তিনি করেছেন, হয়তো করেননি।’
বিচারবহির্ভূত বা নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে জাতিসংঘের তৎকালীন বিশেষ র্যাপোর্টার ক্যালামার্ড সৌদি আরবকে জবাবদিহি করতে বিশ্বের ব্যর্থতার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর ও রিপোর্টের চার বছর পর ক্যালামার্ড বলেন, সামান্য পরিবর্তন হয়েছে এবং তবে বিচারের পথ সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধই রয়েছে।
পাকিস্তানও এই কাণ্ডে সমানভাবে দায়ী হতে পারে। দরিদ্র পাকিস্তানি প্রদেশ বেলুচিস্তানের একজন মানবাধিকার আইনজীবী কারিমা বালুচকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে টরন্টোতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। কানাডার পুলিশ বলেছে, পাকিস্তানের যোগসাজশের কোনো প্রমাণ নেই, তবে তাঁর পরিবার আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি করেছে। এ ছাড়া আইনজীবীরা কয়েক মাস আগে সুইডেনে নির্বাসিত পাকিস্তানি সাজিদ হোসেনের মৃত্যুর সঙ্গে আগের ঘটনার মিল আছে বলে দাবি করেছেন।
গুপ্তহত্যা ক্লাবের নতুন মুখ ভারত
বিচার প্রক্রিয়ার অভাবে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষার হর্তাকর্তারা বৈদেশিক নীতিকে এগিয়ে নিতে গুপ্তহত্যা অব্যাহত রেখেছে। হত্যাকারী দেশগুলোর ক্লাবে নতুন সদস্য যোগ হচ্ছে। সেই ক্লাবে ভারতকে নতুন সদস্য বলে মনে হচ্ছে। কানাডায় নিজ্জার হত্যা এবং নিউইয়র্কে পান্নুনকে হত্যার পরিকল্পনা ছাড়াও পাকিস্তানি গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন, ইন্টারসেপ্টের প্রাপ্ত নথি অনুসারে, ভারত অন্তত দুই পাকিস্তানি বাসিন্দাকে টার্গেট করেছে। একটি পৃথক ভারতীয় মেমো বলছে, কথিত রয়েছে, পশ্চিমে ভারতীয় কনস্যুলেটগুলো এই ‘অত্যাধুনিক ক্র্যাকডাউন স্কিম’ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে এমন প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের কোনো স্পষ্ট প্রমাণ নেই। তবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশে দেশটির সমালোচকদের ওপর নজরদারি ও চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বাড়িয়েছে।
সমাধান মিলবে কি?
ক্যালামার্ড বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা এমন একটি আন্তর্জাতিক সন্ধিক্ষণে রয়েছি; যেখানে কোনো দেশ বা সরকারের ভাবমূর্তি ও প্রচারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই সরকারগুলো তার প্রতি একেবারেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে।’
ক্যালামার্ড নিজের প্রতিবেদনে জাতিসংঘকে ‘টার্গেটেড কিলিংয়ের’ সমীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল করার আহ্বান জানিয়েছেন, যারা রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের খুঁটিনাটি তদন্ত করবে। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, ‘আমরা এখনো এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত নই এবং কারা এসব করে তার সম্পূর্ণ সন্দেহভাজন তালিকাও আমাদের কাছে নেই।’
ক্যালামার্ড মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বা কমিটি থাকা উচিত, যারা এসব মামলার তদন্ত করবে। এটি গঠিত হলে খুব শক্তিশালী বার্তা যাবে যে, এসব আর সহ্য করা হবে না।’
ক্যালামার্ড ফরেন পলিসিকে আরও বলেন, ‘আমি তখন যে পয়েন্টটি তৈরি করছিলাম এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছি তা হলো—নির্দিষ্ট ঘটনা তদন্তের জন্য আমাদের ক্ষমতার প্রয়োগ পুঙ্খানুপুঙ্খ করা। যা এসব ঘটনা রোধ করবে এবং আমাদের সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।’
তবে এসব সুপারিশ এখনো উপেক্ষিত। আশ্চর্যের কিছু নেই, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অন্তত দুটি রাষ্ট্র তাঁদের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে নিয়মিত গুপ্তহত্যা করে যাচ্ছে। বিশ্ব এখনো দায়সারাভাবেই গুপ্তহত্যা মোকাবিলার চেষ্টা করে। অনেক সময় ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা হলেও মূল হোতা দেশ বা সংস্থা দায় এড়ায়।
ক্যালামার্ড বলেন, দেশগুলো দ্বিপক্ষীয় বা কূটনৈতিক স্তরে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক আইন পরিচালনার কোনো উপায় নয়। বিশ্ব গুপ্তহত্যা ঠেকানো থেকে আরও দূরে চলে গেছে এবং বিশ্বজুড়ে সীমাহীন যুদ্ধের এক স্বাভাবিকতা এনে দিয়েছে।
হিট স্কোয়াড, বিষযুক্ত টুথপেস্ট বা সশস্ত্র ড্রোন যাই হোক না কেন, বিদেশের মাটিতে হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা নীতি, ভূ–রাজনীতি এবং অভ্যন্তরীণ ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক এবং উদ্বাস্তুরা এই বাস্তবতার শিকার সবচেয়ে বেশি—সম্ভবত জঙ্গি ও রাজনৈতিক নেতাদের চেয়েও।
ক্যালামার্ড যুক্তি দেন, এই ধরনের হত্যা বিশ্বকে নিরাপদ করা তো দূরের কথা, বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা তৈরি ছাড়া আর কিছুই করে না। আর এমন পরিস্থিতি তৈরিতে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মতো দেশগুলো।
ক্যালামার্ড বলেন, ‘গত ২০ বছরে সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে অসংখ্য আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা যে “ন্যায্যতা” এনেছে তা সত্যিই নিন্দনীয়। শুধু তাই নয়, দৃঢ় কণ্ঠে এসব ঘটনার নিন্দা করার ক্ষমতাকেও ব্যাপকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে।’
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

গত বছরের জুনে নিখিল গুপ্ত নিজের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর এক পরিচিতজনকে একটি ভিডিও পাঠান। কানাডায় শিখদের প্রার্থনাগৃহ গুরুদুয়ারার বাইরে এক ব্যক্তিকে পরপর ৩৪টি গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি একটি গাড়ির পাশে ঢলে পড়েন। এই ঘটনারই ভিডিও সেটি।
২২ জানুয়ারি ২০২৪
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

গত বছরের জুনে নিখিল গুপ্ত নিজের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর এক পরিচিতজনকে একটি ভিডিও পাঠান। কানাডায় শিখদের প্রার্থনাগৃহ গুরুদুয়ারার বাইরে এক ব্যক্তিকে পরপর ৩৪টি গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি একটি গাড়ির পাশে ঢলে পড়েন। এই ঘটনারই ভিডিও সেটি।
২২ জানুয়ারি ২০২৪
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

গত বছরের জুনে নিখিল গুপ্ত নিজের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর এক পরিচিতজনকে একটি ভিডিও পাঠান। কানাডায় শিখদের প্রার্থনাগৃহ গুরুদুয়ারার বাইরে এক ব্যক্তিকে পরপর ৩৪টি গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি একটি গাড়ির পাশে ঢলে পড়েন। এই ঘটনারই ভিডিও সেটি।
২২ জানুয়ারি ২০২৪
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

গত বছরের জুনে নিখিল গুপ্ত নিজের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর এক পরিচিতজনকে একটি ভিডিও পাঠান। কানাডায় শিখদের প্রার্থনাগৃহ গুরুদুয়ারার বাইরে এক ব্যক্তিকে পরপর ৩৪টি গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি একটি গাড়ির পাশে ঢলে পড়েন। এই ঘটনারই ভিডিও সেটি।
২২ জানুয়ারি ২০২৪
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে