Ajker Patrika

তাঁর সৃষ্টি এখনো স্বমহিমায়, তিনি কে

খান মুহাম্মদ রুমেল
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৩৬
তাঁর সৃষ্টি এখনো স্বমহিমায়, তিনি কে

রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। কর্মদিবসের প্রথম দিনে মানুষের সমাগম কম হবে অনুমিত ছিল, হয়েছেও তা-ই। তবে মেলা জমতে শুরু করেছে! প্রায় সব স্টল সাজিয়ে-গুছিয়ে বসেছে। ক্রেতা-পাঠক-দর্শনার্থী বাড়ছে, মেলা জমছে।

এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশাল ছবি ব্যবহার করেছে। মেলার প্রথম দিকে হুমায়ূন আহমেদের বই ঘিরেই পাঠকের আগ্রহ। মাসজুড়েই এটি থাকবে নিশ্চিত করে বলা যায়।

জীবন-মৃত্যুর ভেদরেখা মুছে অসীম আকাশের তারা হয়ে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ—সেও তো হয়ে গেল এক যুগ। ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই রাতটা চাঁদনি পসর ছিল কি না, কিংবা নিউইয়র্কের নীল আকাশে সেদিন ঝকঝকে রোদ ছিল কি না, এখন হয়তো অনেকেরই মনে নেই। তবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায়—আজও পূর্ণিমা আলোয় ভেসে গেলে রাতের আকাশ নীল শাড়ি পরে ছাদে চলে যায় বিষণ্ন কোনো তরুণী। স্বপ্নতাড়িত তরুণ আজও জোছনা দেখলে হাঁটতে থাকে শহুরে পথ ধরে উদ্দেশ্যহীন। শহর থেকে দূর লোকালয়ে একই রকম আবেগ নিয়ে হুমায়ূনকে স্মরণ করে এই সময়ের কিশোর তারুণ্য।

শুধু কিশোর-তারুণ্য কেন—মৃত্যুর বারো বছর পর এও তো স্পষ্ট-বয়সী পাঠকেরাও লুকিয়ে কিংবা প্রকাশ্যে এখনো হুমায়ূন পড়েন একই রকম মাদকতায়।

সাহিত্যে মান এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে তর্ক দীর্ঘদিনের। আর এই তর্ক থেকেই অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন, অনেক বেশি লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু মানের দিক থেকে তার লেখা অতটা কালোত্তীর্ণ কি না—সেই দ্বন্দ্বের বিচার করতে যাওয়া এই আলোচনার উদ্দেশ্য নয়। একজন লেখক প্রায় পাঁচ দশক ধরে মায়াময় মোহাচ্ছন্ন লেখনীতে আবিষ্ট করে রেখেছেন কয়েকটি প্রজন্মকে। একা হাতে দাঁড় দিয়েছেন বাংলা প্রকাশনা শিল্পকে। এমন কৃতিত্ব পৃথিবীর ইতিহাসে কজন লেখকের আছে? তিনি যা-ই লিখতেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন পাঠকেরা। এমনকি মৃত্যুর বারো বছর পেরিয়ে গেলেও তার মোহ থেকে বের হতে পারেননি বাংলা ভাষার পাঠক। কী এমন মায়া, কী এমন জাদু তাঁর লেখায়? কেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো টানতে পেরেছেন তিনি পাঠককে?

রোববার সন্ধ্যায় মেলা চত্বরে দাঁড়িয়ে একজন লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। তিনি নিজের পাঠক তৈরি করেছেন।

—হুম, আপনার কথা অনেকটাই সত্যি। কিন্তু এই যে নিজের অগুনতি পাঠক তিনি তৈরি করেছেন, কয়েকটি প্রজন্মকে পাঠমুখী করেছেন সেটার কোনো কৃতিত্ব দেবেন না? আমি তো এমন অনেককে চিনি, যারা হুমায়ূন পড়তে পড়তে নিবিষ্ট পাঠক হয়ে উঠেছেন। খুব শান্ত স্বরে বলি আমি!

—হুম, সেটা আপনি বলতে পারেন। কিন্তু তাঁর কারণে মানুষের পাঠের অভ্যাস একটা গণ্ডিতে আটক গেছে। এর বাইরে মানুষ আর কিছু পড়তে চায় না।

—সেটা তো ভাই হুমায়ূন আহমেদের দায় না। বরং অন্য সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা।

—শোনেন, আপনাদের মতো অন্ধ ভক্তদের সঙ্গে আলাপ করে লাভ নেই।

কথাটা বলেই তিনি হাসতে থাকেন। হাসিতে যোগ দিই আমিও।

—আমি ভাই অন্ধ ভক্ত নই। আপনি যুক্তি দিয়ে বোঝালে আমি অবশ্যই মেনে নেব।

—থাক, এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরে আলাপ করব।

তিনি চলে যান তার পথে। আমিও হাঁটতে থাকি একা একা। মেলার ভিড় দেখি। মেলার মানুষ দেখি। মাথার মধ্যে তখনো ভর করে থাকেন হুমায়ূন আহমেদ।

হুমায়ূন আহমেদ গল্প বলতেন আমাদের চেনা পরিসরের। মধ্যবিত্তের নিত্য জীবন যাপনের টানাপোড়েনের। বোহিমিয়ান বাউন্ডুলে জীবন তাঁর লেখায় যেমন উঠে এসেছে, তেমনি তিনি গল্প বলেছেন তুখোড় যুক্তিবাদীর। আর এ কারণেই হয়তো হিমু মিসির আলি, জরি পরি রূপা শুভ্ররা সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্রের অবয়ব ছাপিয়ে পাঠকের কাছে হয়ে উঠেছেন রক্ত মাংসের জীবন্ত মানুষ। শুরুতে যে বলছিলাম জোছনা রাতে এখনো শাড়ি পরে ছাদে চলে যান কোনো বিষণ্ন তরুণী, কিংবা হিমুর মতো খালি পায়ে হাঁটতে বের হয়ে যান কোনো বোহিমিয়ান তরুণ—প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কে?

হুমায়ূন আহমেদ যেখানে হাত দিয়েছেন ফলেছে সোনা। স্যাটেলাইট যুগের আগে বিটিভির জন্য নাটক লিখলেন ‘এইসব দিনরাত্রি’। নাটকের ছোট্ট শিশুর চরিত্র টুনির ক্যানসারের খবর শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন দেশের হাজারো মানুষ। ‘বহুব্রীহি’ নাটকে পাখির মুখে তিনি বলালেন রাজাকার শব্দটি। অথচ স্বৈরশাসনের আমলে বিটিভিতে তখন নিষিদ্ধ এই শব্দ। আর ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের চরিত্রের জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে কী তুলকালাম হয়েছে, সেটি আর নতুন করে বলার কিছু আছে? নাটকের একটি চরিত্রের ফাঁসি হচ্ছে, আর এই ফাঁসি বন্ধের জন্য দেশজুড়ে মিছিল হচ্ছে। বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর কয়টা আছে। এরপর ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’ হয়ে ধারাবাহিকের তালিকাটা হয়তো খুব বেশি দীর্ঘ নয়। কিন্তু তিনি লিখেছেন পরিচালনা করেছেন আরও অনেক নাটক। যেগুলো এখনো ইউটিউবের ট্রেন্ডিং তালিকায় আছে বছরের পর বছর ধরে। বলা চলে বাংলা নাটকের ভাষা ও নির্মাণশৈলী একাই বদলে দিয়েছেন তিনি।

লেখক হুমায়ূন আহমেদ নাটকের পথে হেঁটে একসময় এলেন চলচ্চিত্রে। প্রথমে চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখলেন। তারপর নিজেই এলেন পরিচালনায়। এখানেও জয়জয়কার। একসময় ওপার বাংলার লেখকদের বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকা পাঠককে তিনি যেমন বাংলাদেশমুখী করেছেন, তেমনই হিন্দি সিরিয়াল আর সিনেমায় বুঁদ দর্শককে তিনি টেনে এনেছেন বিটিভিতে, দেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিংবা সিনেমা হলে।

এখনো বইমেলায় সবচেয়ে ভিড় সেসব প্রকাশনীতে যেগুলোতে হুমায়ূন আহমেদের বই আছে। কোনো বইয়ের দোকানে গেলেও তাঁর লেখা বইয়ের তাক ঘিরেই ভিড় চোখে পড়ে বেশি। সবচেয়ে বড় কথা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এত বছর পরেও বাংলা ফিকশনে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউ। এটা কি তবে অন্য লেখকদের সীমাবদ্ধতা? নিশ্চয় না। আদতে এটি হুমায়ূন আহমেদের আশ্চর্য জাদুকরী লেখার ক্ষমতা। আর সেই ক্ষমতাতেই তিনি এখনো অধীশ্বর হয়ে আছেন বাঙালি পাঠকের কাছে।

একজন মানুষকে প্রথমে পাঠক হয়ে উঠতে হয়। অর্থাৎ পাঠের অভ্যাস গড়ে উঠলে তারপর একজন পাঠক বাছবিচার করে পড়তে শেখেন। চিন্তার দরজা খুলতে থাকলে তিনি হয়ে ওঠেন প্রকৃত পাঠক। তাঁর সমালোচকদের কেউ কেউ বলেন—যেমনটা একটু আগে পরিচিত লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ নিজের পাঠক করেছেন, বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে কলম ধরেন এমন মানুষেরা বলেন, নিজের পাঠক তৈরি করার মধ্য দিয়েই তিনি কয়েকটি প্রজন্মকে বইমুখী করেছেন। অন্য সব আলাপ বাদ দিয়ে শুধু পাঠক তৈরির দিকটি বিবেচনায় নিলেও বলা যায়—হুমায়ূন আহমেদ এখনো প্রাসঙ্গিক। বাঙালিকে পাঠমুখী এবং এখনকার বৈশ্বিক অস্থির সময়ে কোথাও দু-দণ্ড স্থির হয়ে বসে নতুন ভাবনায় মশগুল হতেও হুমায়ূন আহমেদ বড় বেশি প্রয়োজনীয়। চিন্তার শৃঙ্খল মুক্তির বড় অনুষঙ্গ এখনো হুমায়ূন আহমেদ।

সময় বাড়ছে। সন্ধ্যা পেরিয়েছে অনেকক্ষণ। হঠাৎ আনমনে আকাশের দিকে তাকাই। চাঁদহীন আকাশে ধূসর মেঘ। হুমায়ূন আহমেদ কি দেখছেন ওপর থেকে তাঁর ভক্ত পাঠকদের? যেখানে এখন তিনি থাকেন সেখান থেকে অনুভব করা যায় মর্ত্যলোকের আনন্দ বেদনা?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

সম্পাদকীয়
লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!

...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?

...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।

আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...

সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বধ্যভূমি ৭১

সম্পাদকীয়
বধ্যভূমি ৭১

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রহনপুর গণকবর

সম্পাদকীয়
রহনপুর গণকবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত