Ajker Patrika

অন্তঃসত্ত্বা কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে বস্তাবন্দী করে ফেলা হয়েছিল নদীতে

তুহিন কান্তি দাস, ঢাকা
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ১৮: ১০
অন্তঃসত্ত্বা কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে বস্তাবন্দী করে ফেলা হয়েছিল নদীতে

পাঁচ মাসের গর্ভবতী এক নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিলেন কুমার নদে। তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। তারপর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে উদ্ধার ও বেঁচে ফেরা। একেবারে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই নারী এরপর থানা-আদালত ঘুরে ফিরেছিলেন স্বামীর কাছে; কিন্তু থাকা হয়নি। গর্ভে থাকা সেই পাঁচ মাসের ভ্রূণ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুকে নিয়েই তাঁকে ঘুরতে হয়েছে আখড়া থেকে আখড়ায় এবং সেই সূত্রে গানের সঙ্গে গাঁটছড়া। মাঝে মুক্তিযুদ্ধ, ভারতে আশ্রয়, সেখানেও গানই হয়ে থাকল তাঁর একমাত্র সখা। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলো, বাংলাদেশ এগিয়ে গেল অনেকটাই, সেই নারীও ক্রমে এক আইকনে পরিণত হলেন, কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান থেকে ফেরা হলো না। তাঁর নাম কাঙ্গালিনী সুফিয়া। 

কাঙ্গালিনী সুফিয়া সেই নাম, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরানের বান্ধবের খোঁজে বুড়িয়ে যাওয়া এক জীবনের দীর্ঘশ্বাস। সাধক ওয়াহিদের লেখা এই গান সুফিয়ার কণ্ঠের জাদুতে বাংলা লোকসংগীতের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে। বাউলশিল্পী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করা এই শিল্পীর ব্যক্তিজীবনের সংগ্রাম সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা? নজর পড়েছে কি কখনো শিল্পীর আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক অদম্য নারীর আত্মমগ্নতায়? 

এই দেশে নারীর একজীবনে তাকে যে কত নাম নিতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। তারপরও কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নামের হদিস নিতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। এক দরিদ্র জেলে পরিবারের টুনি কিংবা অনিতা হালদার থেকে কালের পরিক্রমায় সুফিয়া খাতুন, সুফিয়া খাতুন থেকে বাউল সুফিয়া, আবার বাউল সুফিয়া থেকে কাঙ্গালিনী সুফিয়া হয়ে ওঠার সেই অজানা গল্পের প্রতিটি বাঁকে রয়েছে এক নারীর আজীবন ইস্পাতকঠিন লড়াইয়ের কাহিনি। 

সুফিয়ার আসল নাম ছিল অনিতা হালদার বা টুনি হালদার, ডাকনাম বুচি। কমলা হালদার ও খোকন হালদার দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলের সর্বশেষ টুনি হালদার। শৈশব থেকেই জেলে পরিবারের আবহমান অভাব-অনটনে বড় হয়েছেন। সুফিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে ১৯৫৫-৫৬ সালে তাঁর জন্ম। তবে পাসপোর্টে তাঁর জন্মসাল লেখা ১৯৬২। 

ছোটকাল থেকেই গানের প্রতি সহজাত টানের দরুন পাশের সোনাপুরের বৈষ্ণব আখড়ায় সুফিয়া ছুটে গেছেন বহুবার। সব সময় গুনগুন করে গাইতেন পল্লিগান। একবার শুনেই যেকোনো গান মনে রাখতে পারতেন অবিকল। কিন্তু এই সংগীতযাত্রায় ঠিকভাবে নামার আগেই বদলে গেল সব। ভাগ্যের ফেরে বারো-তেরো বছর বয়সে সুধীর হালদারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। 

সুদর্শন সুধীর হালদার পাতলা গড়নের শ্যামলা অনিতাকে পছন্দ করতেন না। ফলে প্রায় সময়ই স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন অনিতা। পাঁচ মাসের গর্ভবতী অনিতাকে একবার অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর স্বামী বস্তাবন্দী করে ফেলে দেন কুমার নদে। 

সেখান থেকে খোলা চুল দেখে মাছ ধরতে আসা জেলেরা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান অনিতাকে। খবর পেয়ে মা-বাবা এসে স্বামীর বাড়ি থেকে নিয়ে যান মেয়েকে। নির্যাতন মামলায় স্বামী কয়েক মাস কারাবাসের পর স্ত্রী-কন্যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার শর্তে সমঝোতা হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান মেলেনি। ফলে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি পালিয়ে যান অনিতা। পরে মেয়ে পুষ্পকে রেখে মায়ের সহযোগিতায় বাবার হাত ধরে আশ্রয় নেন বৈষ্ণব আখড়ায়। ফেরা হলো গানের জগতে। 

অনিতা বৈষ্ণব ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করে প্রায় পাঁচ বছর সোনাপুর আশ্রমে কাটান। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দেবেন ক্ষ্যাপা ও গৌর মোহন্তের। তাঁদের গুরু মেনে বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের পাঠ নেন তিনি। 

এই আখড়াতেই অনিতা হালদারের নাম বদলে হয় অনিতা ক্ষ্যাপী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা বৈষ্ণব আখড়ায় হামলা চালালে দেশ ত্যাগ করে তিনি আশ্রয় নেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা ও সীমান্তবর্তী লালগোলায়। সেখানকার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে প্রায়ই তিনি গান শুনিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ দিতেন, প্রেরণা জোগাতেন। ক্যাম্পে গান গাইতে গাইতে পরিচয় হয় মুক্তিযোদ্ধা মান্দার ফকিরের সঙ্গে। দেশ স্বাধীন হলে অনিতা ক্ষ্যাপী মান্দার ফকিরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চলে যান। সেখানে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজ নাম বদলে রাখেন সুফিয়া খাতুন। 

গানের জগতে বিচরণের জন্য সুফিয়া খাতুন ভাঙ্গা থেকে আবার চলে আসেন তৎকালীন পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ও বর্তমান সিরাজগঞ্জ সদরে। এই সময়ে তিনি পালাগানের নতুন জগৎ গড়ে তোলেন। পাল্লা দিয়ে গান গাইতে গাইতে তিনি বাউল সুফিয়া হিসেবে পরিচিতি পান। 

সমসাময়িক শিল্পীদের পরামর্শে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে ১৯৭৬ সালের দিকে ঢাকায় চলে আসেন বাউল সুফিয়া। সুফিয়ার ভাষায়, ‘একজন শিল্পী বলছিল ঢাকায় না গেলে নামকরা শিল্পী হওয়া যাবে না। তুমি ঢাকায় যাও, দেখবা একদিন নামকরা শিল্পী হইবা।’ 

সুফিয়া ঢাকার বাড্ডায় শাহাজাদপুরে এসে ওঠেন। হাইকোর্টের মাজারের মজমায় গান গাইতেন নিয়মিত। বিভিন্ন মজমায় লালন ও বাউলগান গেয়ে সংসার চালাতেন তিনি। সেই মজমাতেই একদিন কবি আসাদ চৌধুরী দেখা পান বাউল সুফিয়ার। 

হাইকোর্ট মাজারের সামনে শিল্পী কানাইলাল শীলের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী এবং আরও কয়েকজন। সেখানে গান গাইতে আসেন বাউল সুফিয়া। অসাধারণ কণ্ঠে তিনি মুগ্ধ করেন সবাইকে। অনুষ্ঠান শেষে আসাদ চৌধুরী সুফিয়াকে বাংলা একাডেমিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এভাবেই বাংলা লোকসংগীতের কালজয়ী ফেরিওয়ালা কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে আবিষ্কার করেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। 

আসাদ চৌধুরী সে সময় বাংলা একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বিটিভিতে ‘প্রচ্ছদ’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। সেই অনুষ্ঠানে এবং পরে বাংলা একাডেমিতে সুফিয়াকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি। তৎকালীন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের প্রধান হিসেবে সহকর্মীদের অনুরোধ করেন গ্রামবাংলার প্রতিভাবান কোনো শিল্পীর সন্ধান করতে। 

সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সহকর্মীরা মুস্তাফা মনোয়ারের কাছে নিয়ে আসেন সুফিয়াকে। সুফিয়ার অপূর্ব গায়কি, ভাব-আবেগ মুগ্ধ করে মুস্তাফা মনোয়ারকে। সুফিয়াকে গান গাইতে কোরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু সুফিয়া তখন ছিলেন আর্থিকভাবে নাজেহাল। তাঁর এই করুণ চিত্র দেখেই মুস্তাফা মনোয়ার তাঁর নাম দিয়েছিলেন সুফিয়া কাঙ্গালিনী। সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া। 

শেষ এই নামটিই আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সুফিয়া। যদিও তাঁর জীবনের ভাঁজে ভাঁজে রয়ে গেছেন সেই বুচি, টুনি বা অনিতা হালদারেরা। রয়ে গেছে আখড়ায় বা বৈষ্ণবদের কাছ থেকে পাওয়া অনিতা ক্ষ্যাপী নামটি। মজমায় মজমায় গান গেয়ে বেড়ানো সুফিয়া এক আজন্ম বাউল। বয়সী এই মানুষটির সঙ্গী হিসেবে রয়ে গেছে শুধু দুটি জিনিস—গান আর পুষ্প। মায়ের মতো পুষ্পও গান করেন। কুমার নদে বস্তাবন্দী পড়ে থাকা সুফিয়া বা অনিতার পক্ষে একজীবনে সব বাধা ভাঙা সম্ভব না হলেও, সব লড়াইয়ে জয় পাওয়া সম্ভব না হলেও বহু মানুষকে তিনি লড়াইয়ের শক্তি জুগিয়েছেন, যেমন জুগিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমাদের অর্জন অনেক

সম্পাদকীয়
আমাদের অর্জন অনেক

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।

এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।

সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত