Ajker Patrika

‘বাঁশি তোমায় দিয়ে যাব’

সম্পাদকীয়
‘বাঁশি তোমায় দিয়ে যাব’

পঙ্কজ মল্লিক তখন বেতারে কাজ করছেন। একদিন অপরিচিত এক অবাঙালি তরুণ তাঁর অভিলাষ নিয়ে বেতারে এসেছেন। অনুষ্ঠান পরিচালক নৃপেন মজুমদার পঙ্কজকে ডেকে বললেন, ‘পঙ্কজ, দেখো তো, এই ছেলেটি রেডিওতে গাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তুমি ওর অডিশন নাও।’

অবাঙালি দেখে পঙ্কজ মল্লিক ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ধরনের গান করে থাকেন আপনি?’

তরুণটি বললেন, ‘গীত, ভজন, ঠুংরি এই সব।’

গানের ঘরে নিয়ে গিয়ে পঙ্কজ তাঁকে গাইতে ইঙ্গিত করলেন। তরুণটি গাইতে শুরু করলেন। এ যে ভগবান-প্রদত্ত কণ্ঠ। পঙ্কজ তক্ষুনি ছুটলেন নৃপেন মজুমদারের কাছে। ‘নেপেনদা, আপনি নিজে এসে একবার শুনে যান।’

নৃপেন মজুমদার এলেন রাইচাঁদ বড়ালকে নিয়ে। তাঁরা দুজন তরুণটির গান শোনার পর নৃপেন মজুমদার বললেন, ‘ওহে, ছেলেটাকে আজই মাইক্রোফোনে বসিয়ে দাও।’

সে সময় বেতারে আগে থেকে টেপ করার রেওয়াজ ছিল না। যিনি গান করবেন, তাঁকে মাইক্রোফোনের সামনে বসিয়ে দেওয়া হতো।

তরুণটির নাম ছিল কুন্দনলাল সায়গল। তাঁর গান সেদিনই ব্রডকাস্ট করা হয়েছিল। 

খুব কম সময়ের মধ্যেই পঙ্কজ আর সায়গলের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। শিল্পী হিসেবে সায়গল বেশ নাম করলেন অল্প দিনেই। কিনলেন একটি মোটর বাইক। সন্ধ্যায় সেই মোটর বাইকেই পঙ্কজকে বাড়ি পৌঁছে দিতেন সায়গল। একদিন পঙ্কজকে বাইকের পেছনে বসিয়ে সায়গল গান ধরলেন, ‘শারদ প্রাতে আমার রাত পোহাল…’। মোটরসাইকেলের ভটভট শব্দের তালে গাইলেন, ‘বাঁশি তোমায় দিয়ে যাব কাহার হাতে।’ তারপর বললেন, ‘পঙ্কজ, তুইও গা।’

পঙ্কজ বলল, ‘তুই ঠিক করে ধর। ওখানটায় ভুল হচ্ছে…ঠিক হলো না।’

কথা বলতে বলতে এবড়োখেবড়ো পথে বাইকের ঝাঁকুনিতে কখন একসময় মোটরসাইকেল থেকে ধপ করে পড়ে গেলেন পঙ্কজ। সায়গল তা টেরই পেলেন না। মহানন্দে ‘বাঁশি তোমায় দিয়ে যাব’ গাইতে গাইতে সশব্দে চলে গেলেন। অকস্মাৎ এ ঘটনা ঘটায় পঙ্কজ কিছুই বলতে পারলেন না। ট্রামে উঠে ফিরলেন বাড়ি। 

সূত্র: পঙ্কজ মল্লিক, আমার যুগ আমার গান, পৃষ্ঠা ৭৫-৭৬ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

সম্পাদকীয়
লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!

...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?

...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।

আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...

সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বধ্যভূমি ৭১

সম্পাদকীয়
বধ্যভূমি ৭১

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রহনপুর গণকবর

সম্পাদকীয়
রহনপুর গণকবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সাধারণ সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত