Ajker Patrika

রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে চাপ, বঙ্গভবন ঘিরে রাতভর উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ৪৯
রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে চাপ, বঙ্গভবন ঘিরে রাতভর উত্তেজনা

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।

বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, সংবিধান বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

এর আগে বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রথমে তারা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীদের একাংশ কর্মসূচি স্থগিত করলেও আরেক পক্ষ বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।

এই অবস্থায় রাতে বঙ্গভবনের আশপাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ভ্যানের ওপরও হামলা চালানো হলে পুলিশ সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।

একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গভবনের ভেতরে চলে যান। হামলার মুখে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র ফেলে চলে যান। পরে আন্দোলনকারীরা অস্ত্রগুলো সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেন। এ সময় সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে নিরাপত্তা ব্যারিকেডে কড়া অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।

আহতদের মধ্যে সাংবাদিকসহ পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন শ্যামপুর বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪), হকার শফিকুল ইসলাম (৪৫), বার্তা ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদ (২৫), ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ খান (২০)।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সারজিস বলেন, ‘আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনকে সময় দিয়েছি। এর মধ্যে এই ঘটনার সুরাহা হবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কে আসবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে।’

সবাইকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফেরার আহ্বান জানান ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কিছু বিক্ষোভকারী সেখানে অবস্থান করছিলেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তখন এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর শপথ ভঙ্গ হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত।

এদিকে রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্যের পর বিক্ষোভ শুরু হয় রাজপথে। কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। তারা দ্রুত রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি তোলে।

ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ৩টার দিক থেকে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে দলে দলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্র-জনতা। শহীদ মিনারে অবস্থান ও সমাবেশ শেষে বিকেলে ৫টার দিকে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।

এর আগে শহীদ মিনারে কর্মসূচিতে ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে; অবিলম্বে সংবিধান বাতিল করে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধান লিখতে হবে; ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে এই সপ্তাহের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে এবং ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত যথাক্রমে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিন নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাঁরা যেন কখনো বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারেন, সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে শহীদ মিনার থেকে আমরা ১ দফা দাবি তুলেছিলাম, সেই শহীদ মিনার থেকে আমরা ৫ দফা ঘোষণা দিচ্ছি। এই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ৫ দফা দাবি না মানা হলে আমরা আবার রাজপথে নামব।’

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যে ছাত্রলীগের হাতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। 

পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
বিকেলে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র-জনতা। বঙ্গভবনের সামনে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তার জন্য বঙ্গভবনের সামনে ব্যারিকেড, সাঁজোয়া যান ও জলকামান রাখা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা।

দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল শুরু করে বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি। হাইকোর্ট মাজার মোড়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভবনের সামনের মোড়ে অবস্থান নেয় তারা।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, বঙ্গভবন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের লোকজন দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাই কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে, সে জন্য পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের সদস্য রাখা হয়।

বঙ্গভবনের সামনে কয়েক ঘণ্টা আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের আশ্বাসে আন্দোলনকারীদের একাংশ ইনকিলাব মঞ্চ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।

ইনকিলাব মঞ্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও বঙ্গভবনের সামনে রয়ে যান রক্তিম জুলাই-২০২৪ সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।

আন্দোলনকারীরা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। তাঁর এমন বক্তব্যের পর তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। তাই তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাঁকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হয়, তা ছাত্র-জনতা জানেন। 

দুই দলের বিক্ষোভ 
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে এবি পার্টি। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী চক্রান্ত করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।

এরপর একই এলাকায় লাঠি মিছিল করে গণঅধিকার পরিষদ। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে পদত্যাগের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। 

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গাইবান্ধা, পিরোজপুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গতকাল দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে মো. সাহাবুদ্দিন বক্তব্য দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ এবং সর্বস্তরের আওয়ামী সন্ত্রাসী-কুশীলবদের বিচার করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, কোনো অবস্থাতেই আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না।’

একই দাবিতে গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভ মিছিল বের করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিনিও আওয়ামী লীগের দোসর। শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে তিনি দুই রকম কথা বলেছেন। আমরা তাঁর অপসারণ চাই। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ ১৫ বছর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’

পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের হয়ে শহরে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।

দুপুরে বরিশালে নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ ও লাঠি মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। একই দাবিতে বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৭
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের মান ও সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এই লক্ষ্যে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত প্রণয়ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়াররা নিজেদের নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে জনগণের বন্ধু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্প, বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্যোগে ফায়ার ফাইটারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভলান্টিয়াররাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ভলান্টিয়ারদের আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কোনো রকম সুবিধা না নিয়ে নিজের ইচ্ছায় নিঃস্বার্থভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আপনারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আপনারা এ কাজের প্রতিদান শুধু ইহকালে নয়, পরকালেও পাবেন।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সারা দেশে ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৫৫ হাজারের বেশি ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকেরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পরিবারের গর্বিত সদস্য হিসেবে আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছেন। এর ফলে একদিকে যেমন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের জনবল সংকট দূর হচ্ছে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বাড়ছে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারি বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে এককভাবে ভূমিকম্প, বড় অগ্নিদুর্ঘটনা বা বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করা দুরূহ। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকেরা পেশাদার বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে দুর্যোগ প্রশমনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সব স্তরে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ রাজনীতিমুক্ত হবে কি না—এ-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন প্রণয়ন করা হয় জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য। এই আইনও করা হয়েছে জনগণ যেন প্রকৃত সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে। তিনি আশ্বস্ত করেন, পুলিশ কমিশন জনগণ ও পুলিশের প্রকৃত কল্যাণে কিছু সুপারিশ করবে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।

এর আগে উপদেষ্টা পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রদর্শিত মহড়া দেখেন এবং তাঁদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরতের ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাঁকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে এক দিনে, সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কী আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এ রকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারেক সাহেব কখন আসবেন, এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্র্যাফট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে।’

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি, সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ ছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সব ক্ষেত্রে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবার রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এ ছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে শুরু হওয়া সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর দু’টি মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারা এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে।

এদিকে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের ‘হয়রানিমূলক’ বদলি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব বদলিকে তাঁরা ‘হয়রানিমূলক বদলি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, ‘রেওয়াজ না থাকলেও নিজ জেলার বাইরে হয়রানি করতে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে।’

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব বদলির আদেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জানিয়েছেন, তাঁকে নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, তিনিসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অন্তত ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ ও পরে বদলি করা হলো। এটি হয়রানিমূলক বদলি, আমাদের শাস্তি দিয়েছে কারণ আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষক যাঁরা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না তবুও তাঁরা বদলি হয়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারীরা সরকারের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন। সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তা বর্জন করে কর্মবিরতি চালিয়ে যান।

কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।

পরে ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা, যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকারে আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত