Ajker Patrika

চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদে ঢামেকে কর্মবিরতি, শত শত রোগীর দুর্ভোগ

ঢামেক প্রতিবেদক
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ৫১
চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদে ঢামেকে কর্মবিরতি, শত শত রোগীর দুর্ভোগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকেরা। অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলে এক চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগসহ সব ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। এ সময় হাসপাতালে শত শত রোগীর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ দিকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সব বিভাগের প্রধানসহ চিকিৎসকদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেছেন।

আজ রোববার সকালে চিকিৎসকেরা কজে যোগ দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান তারা। সবশেষ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের কক্ষ বন্ধ করে দেন। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার।

এরপর থেকেই ঢাকা মেডিকেলের সামনে ভিড় বাড়তে থাকে রোগীদের। চিকিৎসক না পেয়ে হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে চলে গেছে দেখা গেছে অধিকাংশকে।

নরসিংদী থেকে সুমন নামে এক রোগীকে নিয়ে এসেছেন স্বজনরা। তবে হাসপাতাল আসার পর চিকিৎসক না পেয়ে তাঁরা অ্যাম্বুলেন্স করে অন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

সুমনের ভাই মো. কবির হোসেন বলেন, ‘সকালেই নরসিংদী হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল পাঠানো হয় রোগীকে। এখানে আসার পর দেখি জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। ডাক্তারদের রুমও সব বন্ধ করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি করছেন এটি শুনে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানেও চিকিৎসক আছেন কিনা জানি না।’

সিয়াম নামে দুই বছরের শিশুকে নিয়ে আসেন তার বাবা-মা। জরুরি বিভাগের সামনে তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। শিশুটির মা বলেন, প্রচণ্ড জ্বর হচ্ছে শিশুটির। এ জন্য সকালে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো চিকিৎসক দেখাতে পারিনি। কখন দেখাতে পারব তাও জানি না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, আজ সকাল ৮টার পর থেকে সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছে চিকিৎসকেরা। এতে জরুরি বিভাগে রোগীরা ভোগান্তিতে পরে। 

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে গতকাল শনিবার এক চিকিৎসককে মারধর করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকেরা অভিযুক্তদের ধরে শাস্তি নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা আলটিমেটাম দেন। তা না হলে হাসপাতালে শাটডাউনের ঘোষণা দেন। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘোষণা দেন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।

বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার। ছবি: আজকের পত্রিকাশিক্ষার্থী ও চিকিৎসকেরা জানান, মাঝে মধ্যেই হেনস্তা ও মারধরের শিকার হন চিকিৎসকেরা। রোগী মারা গেলে অবহেলা, ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে এমন অভিযোগ শোনা যায়। এবার এমনই ঘটনা ঘটেছে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে। অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে ইমরান নামে এক চিকিৎসককে মারধর করে কিছু শিক্ষার্থী। কিন্তু ওই রোগীর বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। কয়েক দিন আগেও জরুরি বিভাগে এক চিকিৎসক হেনস্তার শিকার হোন। 

তারা শনিবার রাতে জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত না করলে সব চিকিৎসক মিলে হাসপাতালে স্ট্রাইক করবেন। রাত ১০টা থেকে ঢাকা মেডিকেলসহ দেশের সকল হাসপাতালে চিকিৎসকদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান তাঁরা।

এ সময় কলেজর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ‘তারা দুইভাবে অপরাধ করেছে, একটা ফিজিক্যাল অ্যাসাল্ট, আরেকটা সরকারি কাজে বাধা দান। আমাদের একটু সময় দিলে দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’ 

এর আগে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত আহসানুল ইসলাম দীপ্ত (২৪) নামে এক শিক্ষার্থী ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় চিকিৎসার অবহেলা মৃত্যুর অভিযোগ এনে এক চিকিৎসককে মারধর করে কিছু শিক্ষার্থী।

নিহত শিক্ষার্থীর বড় বোন সানজিদা আফরিন জানান, তাদের বাড়ি গাইবান্ধা সদরে। বাবার নাম শহিদুল ইসলাম। বর্তমানে মোহাম্মদপুর এলাকায় ভাড়া থাকেন। দীপ্ত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। শুক্রবার রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে কুর্মিটোলা যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ন। পরে পথচারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আজ দুপুরের দিকে খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসে জানতে পারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে দীপ্ত  মারা গেছে।

ক্যান্টনমেন্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আগস্টিন মিলটন ডি কস্তা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ওই শিক্ষার্থী। স্বজনদের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরে ১৯ মামলার আসামি ‘ত্রাস সোহাগ’ গ্রেপ্তার

­যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৩
গ্রেপ্তার সোহাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার সোহাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের ঝিকরগাছার আলোচিত সন্ত্রাসী ১৯ মামলার আসামি সোহাগ খানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে যশোর ডিবি পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে যশোর শহরের কালেক্টরেট ভবনের পশ্চিম পাশের রাস্তা থেকে (প্যারিস রোড) তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার সোহাগ খান ঝিকরগাছার পুরন্দরপুর মহল্লার আব্দুল আজিজ খানের ছেলে। এলাকায় তিনি ‘ত্রাস সোহাগ’ হিসেবে পরিচিত।

পুলিশের মিডিয়া সেল জানায়, গত ১০ অক্টোবর ঝিকরগাছার কাউরিয়া এলাকায় সোহাগের হাঁসের খামারে অভিযান চালানো হয়। সেখানে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চারজনকে আটক করে পুলিশ। সোহাগ তখন পালিয়ে যান। ওই খামার থেকে চায়নিজ কুড়াল, খেলনা পিস্তল, লোহার শাবল, ওয়াকিটকি, ওজন মাপার ডিজিটাল যন্ত্র, করাত, জ্যাকেটসহ ডাকাতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। তখন থেকে পুলিশ সোহাগের খোঁজ করতে থাকে।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবুল বাশার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আজ বিকেলে সোহাগ খানকে প্যারিস রোড থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোহাগের বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, মাদকসহ ১৯টি মামলা রয়েছে। তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহে হোস্টেল থেকে কলেজছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহ নগরীর কলেজ রোড এলাকার একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে তাসফিয়া আক্তার নিগার নামের এক কলেজশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার দিকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলেছে, ওই ছাত্রী রুমের ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার বাড়ি জেলার ত্রিশাল উপজেলায়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থী নগরীর মুসলিম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার মৃত্যুতে সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

হোস্টেলের ছাত্রীরা জানায়, আজ বেলা ৩টার পর থেকে নিগারের কক্ষ ভেতর থেকে দরজা লাগানো ছিল। বারবার ডাকাডাকির পরও দরজা খোলেনি। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে। কী কারণে আত্মহত্যা করেছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুস সাকিব বলেন, কলেজশিক্ষার্থী নিগার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। তবে কী কারণে করেছে, তা জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাখিও তো গান গায়, পাখির নীড় ভাঙবে কবে—সংস্কৃতিকর্মীর জিজ্ঞাসা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের সামনে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ও সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের সামনে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ও সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘মানুষ গান গায়, তাই তাঁর ঘর ভাঙো, বাড়ি ভাঙো, ইশকুল ভাঙো। পাখিও তো গান গায়...পাখির নীড় ভাঙবে কবে?’—এমন প্রশ্ন করেছেন বিপ্লব নামের একজন সংস্কৃতিকর্মী। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের সামনে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

সংস্কৃতিকর্মী বিপ্লব বলেন, ‘‘মানুষ গান গায়, তাই তাঁর ঘর ভাঙো, বাড়ি ভাঙো, ইশকুল ভাঙো। পাখিও তো গান গায়...পাখির নীড় ভাঙবে কবে?’’ আমি এই লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছি। কারণ, মানুষের গান গাওয়াতে যদি ঘরবাড়ি ভাঙা হয়, তার মানে পাখিরাও তো গান গায়, তাই বলে তাদের বাড়িও ভাঙতে হবে? এই অসভ্যতা আমরা এই দেশে চাই না। আমরা এর প্রতিকার চাই।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে গানে গানে সংহতি সমাবেশের আয়োজনের মাধ্যমে সংস্কৃতি স্থাপনার ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশে এক হাজারের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মী পার্থ তানভীর।

প্রতিবাদী সংহতি সমাবেশে ‘চল চল চল! ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’, ‘মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা’, ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল, মোরা বিধাতার মতো নির্ভয়, মোরা প্রকৃতির মতো সচ্ছল’, ‘মানুষ হ, মানুষ হ, আবার তোরা মানুষ হ’-সহ নানান গান গাওয়া হয়। এরপরে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সমাপ্তি করা হয় সংহতি সমাবেশ।

ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী লাইসা আহমদ লিসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কথা খুবই স্পষ্ট, এ ধরনের আক্রমণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এর আগেও আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি, আজও জানালাম। আমাদের সংস্কৃতিচর্চার পথে কোনো বাধা আমরা মানি না। আমরা আমাদের কাজ করে যাব এবং আশা রাখি, আপনাদের মতো মিডিয়া থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন এবং থাকবেন। আমাদের যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন রাখবই, আপনাদের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলবই। সকলের মঙ্গল হোক।’

ছায়ানট ভবন আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতি অনুরাগী যাঁরা আজকের সংহতি সমাবেশে যোগদান করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে ছায়ানট সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ‘উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও সাম্প্রতিককালে দেশের বাউলসমাজের ওপরও একটি মহল সহিংস আক্রমণ চালিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালিয়ে আবহমান বাংলার সংস্কৃতিচর্চা থেকে আমাদের নিবৃত্ত করতে উদ্যত। এসব কর্মকাণ্ড বাঙালি জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির ওপরে আঘাত হানছে।’

ছায়ানট সভাপতি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে চলা শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নিরপরাধ হত্যা দেশবাসীর নিরাপত্তা বিপন্ন করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মোদ্যোগ গ্রহণ জাতিসত্তা ও সংস্কৃতি সুরক্ষায় সমাজকে সক্রিয় করে তুলবে। নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটুক। বাঙালির সংস্কৃতির যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন হোক। দেশে ও বিদেশের যে অগণিত মানুষ আমাদের প্রতিবাদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন, ছায়ানট তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

সংস্কৃতিকর্মী হামিন আহমেদ বলেন, ‘চাপিয়ে দেওয়ার মতবাদ কখনো গ্রহণ করিনি আর করবও না। আমাদের সংস্কৃতি ব্যাহত করতে কেউ পারবে না।’

শিরোনামহীন ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন মানব না। শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে চাই। দরকার হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রোডম্যাপ দিক—সংস্কৃতি কীভাবে চলবে সেই ব্যাপারে। কেউ যদি সংস্কৃতি বন্ধ করে দিতে চায়, সেটাও বলুক। কিন্তু এমন আক্রমণ মানা হবে না।’

সংস্কৃতিকর্মী সম্রাট বলেন, ‘আমরা আর্টিস্ট যারা আছি, আমরা চাই স্বাধীনতা। আর্ট করার মতো স্বাধীনতা চাই। আমরা যাতে বাধাবিপত্তি ছাড়াই করতে পারি, সেটাই চাই।’

সংস্কৃতিকর্মী বান্টি বলেন, ‘গানের মাধ্যমে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। সব সময় বাঙালিরা প্রতিবাদ জানাই। সেটা বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে। খুব কমসংখ্যক মানুষ শান্তি চায় না, তারাই এগুলো আক্রমণ করে।’

সংস্কৃতিকর্মী ইতি গোমস্তা বলেন, ‘এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমরা ব্যথিত হয়েছি। আমরা কোনো ধরনের অন্যায় আপস করি না, অন্যায়মূলক কাজও করি না। তাই সামনে অন্যায় কাজ হলে প্রতিবাদ করেই যাব।’

বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম প্রধান বাতিঘর এই ‘ছায়ানটে’ গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) গভীর রাতে একদল উন্মত্ত জনতা রাজধানীর ধানমন্ডির শংকর এলাকায় অবস্থিত ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে ভয়াবহ হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাট চালায়। অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক এই প্রতিষ্ঠানের ওপর এমন আঘাত দেশের সাংস্কৃতিক ও সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

ওই আক্রমণের ঘটনায় গত শুক্রবার ৩০০ থেকে ৩৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটি করেন ছায়ানটের প্রধান ব্যবস্থাপক দুলাল ঘোষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা মামলা: ফয়সালদের ৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১২
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন এ নির্দেশ দেন।

হাদি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ নির্দেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে একটি চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা হাদিকে মাথায় গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। তিন দিন পর ১৮ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

ফয়সাল করিম মাসুদকে আসামি করে ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। হাদি মারা যাওয়ার পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আদালতকে আজ আবেদনে বলেন, প্রধান আসামি ফয়সালকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। তদন্তকালে জানা গেছে, ফয়সাল করিম এবং তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে।

পাশাপাশি অভিযুক্ত ফয়সাল করিম এবং তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা রয়েছে। এসব অর্থ কোথা থেকে এল, কীভাবে এল—তা তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। এসব অর্থ যেন ফয়সাল ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্টরা তুলে নিতে না পারে, সে জন্য ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত