Ajker Patrika

সাবেক ৭ বিচারপতির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১৩: ০৯
সাবেক ৭ বিচারপতির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন

সাবেক তিন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করা হয়েছে। আজ বুধবার আইনজীবী মো. ইউনুস আলী আকন্দ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করেন। 

আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আবেদনকারী আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ। 

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাঁরা হলেন—সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক, সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। 

অন্যরা হলেন—আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী, মির্জা হোসেন হায়দার, আবু বকর সিদ্দিকী ও মো. নুরুজ্জামান। 

এ বিষয়ে ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আদালত অবমাননা আইন, ১৯২৬ লঙ্ঘন করে শুনানির সুযোগ না দিয়ে আদালত অবমাননার নামে তাঁকে শাস্তি দিয়েছেন। প্রথমবার ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শুনানির সুযোগ না দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্র্যাকটিস সাসপেন্ডসহ আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়। দ্বিতীয়বার একই বছরের ১২ অক্টোবর তিন মাস প্র্যাকটিস সাসপেন্ডসহ জরিমানা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় পার্টিকে (জাপা) মাঠে নামতে না দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। দলটির কার্যালয় নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৭ তম সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন তিনি।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই। জাতীয় পার্টিকে মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না—এ অভিযোগটি সঠিক নয়। জাতীয় পার্টির কার্যালয় নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা রয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ, বডি ওর্ন ক্যামেরা কেনা, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান প্রশিক্ষণ আগামী জানুয়ারিতে সম্পন্ন হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘যেকোনো প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রশিক্ষণ অনস্বীকার্য। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তাই আমরা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, নিরাপদ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ চলমান রেখেছি, যা আগামী জানুয়ারিতে সম্পূর্ণ শেষ হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে, যা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলবে। তাই এবার সূর্যের আলো চলে গেলেও ভোট গণনা করতে হবে। সে জন্য সব ভোটকেন্দ্রে যেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

জুলাই জাদুঘর উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আগে আমরা এর নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলাপ করেছি, যাতে দর্শনার্থীরা নিরাপদে জাদুঘরে আসা-যাওয়া করতে পারে।’

রংপুরে এক পুলিশ সদস্যের বাবা-মাকে হত্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’

ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, আইজিপি বাহারুল আলম, বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান’, ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা চেয়ে বললেন ফজলুর রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৭
বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে আদালত অবমাননার অভিযোগের মুখে ট্রাইব্যুনালের তলবে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান।

আজ সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাসে দাঁড়িয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বিচারকদের উদ্দেশে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান। আমার বয়স ৭৮ বছর। এরকম কথা জীবনে কখনো বলিনি। এই কথা এমন হবে বুঝতে পারিনি।’

কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত এই প্রার্থী লিখিতভাবে আগেই নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পর আজ সশরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তাঁকে ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

গত ২৩ নভেম্বর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে অতিথি হয়ে যান ফজলুর রহমান। টকশোর একপর্যায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রসঙ্গ ওঠে। এ সময় তিনি ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করেন, আদালতের নিরপেক্ষতায় হস্তক্ষেপকারী ‘অভ্যন্তরীণ বন্দোবস্ত’ রয়েছে বলে দাবি এবং প্রসিকিউশন প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য করেন।

প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল তাঁকে তলব করেন এবং তাঁর সব একাডেমিক ও বার কাউন্সিলের সনদ সঙ্গে নিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা ১১টার দিকে আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে আসেন ফজলুর রহমান।

ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক এজলাসে আসেন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। ফজলুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

শুরুতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানি করবেন।’ পরে রুহুল কুদ্দুস কাজল দাঁড়িয়ে বলেন, ‘ফজলুর রহমান সিনিয় আইনজীবী, পলিটিশিয়ান ও মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর বক্তব্যের বিষয়ে আমরা লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছি।’

ফজলুর রহমান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন, পরে আদালত তাঁকে বসার অনুমতি দেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘প্রসিকিউশন আগে বলুক।’ এরপর প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘চ্যানেল ২৪-এর মুক্তবাক অনুষ্ঠানে ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি, এই কোর্ট আমি মানি না। প্রতিদিন বলছি এই কোর্ট আমি মানি না।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা একটু ফজলুর রহমানকে শুনতে চাই।’ ফজলুর রহমান দাঁড়ালে ট্রাইব্যুনাল তাঁর কাছে জানতে চান তিনি এসব কথা বলেছেন কি না? ফজলুর রহমান জবাবে বলেন, ‘আমি এভাবে বলিনি।’

এ সময় ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ‘আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা ওনার কাছ থেকে শুনি। উনি যদি বলেন, এগুলো বলিনি, একভাবে কনসিডার করব, আর যদি বলেন বলেছি, আরও বলব, তাহলে অন্যভাবে কনসিডার (বিবেচনা) করব।’

কাজল বলেন, ‘আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘ওনাকে তো আমরা চিনি। তিনি সিনিয়ির পলিটিক্যাল লিডার, সিনিয়র আইনজীবী। কথা হলো তিনি আরও বলবেন কি না? তিনি যা বলেছেন, তা শুধু বাংলাদেশ না সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে। তিনি এসব বললে মানুষ কি মনে করবে?’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এখানে শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অপরাধেরই বিচার হবে না, আইনে বলা আছে আইন হওয়ার আগে-পরে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে।’

ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালের বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। তাই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘বাইরে আলোচনা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরে আমরাও তো মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছি। আমার পরিবারে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ‍দিয়েছি, কোন ব্রিজ ভাঙতে হবে দেখিয়ে দিয়েছি, সহযোগিতা করেছি— আমরা মুক্তিযোদ্ধা না, যারা লন্ডনে ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা? কিন্তু আমরা কখনো এগুলো বলি না। এদেশে কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে না। তাই কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের টানবেন না।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘গত ১৫ বছর দেখেছি, আপনি কত অন্যায় আর অবিচারের শিকার। হঠাৎ কেন এমন ইউটার্ন?’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি আপনাদের এত সম্মান করি, আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান। আমার বয়স ৭৮ বছর। এরকম কথা জীবনে কখনো বলিনি।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা আশাকরি আপনারা জুডিশিয়ারিকে গাইড করবেন। ভালো-মন্দ দেখবেন। সরকারকে বলবেন, চিফ জাস্টিসকে বলবেন। যেখানে বলা দরকার সেখানে বলবেন।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘টকশোতে গেলে যা বলতে চাই না, অনেক সময় তাও মুখ থেকে বের করে ফেলে। এখন সিনিয়ির আইনজীবী বলেন আর মুক্তিযোদ্ধা বলেন—এখন আর সমাজে সম্মানটা পাওয়া যায় না। ফজলুর রহমান এরকম কথা বলবেন, তা কি বিশ্বাসযোগ্য? আদালত সবার ওপরে। বিচার বিভাগ না থাকলে রাষ্ট্র বরবাদ হয়ে যাবে। তারপরও তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন।’

পরে ফজলুর রহমানের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘অল দ্য বেস্ট। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জন ট্রাইব্যুনালে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৮
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে তাঁদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে মামলার অগ্রগতি নিয়ে আজ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

আজকে যাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রীরা হলেন—সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প-বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।

তাঁদের মধ্যে সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও পলকের বিরুদ্ধে আলাদা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দিয়েছে প্রসিকিউশন। হানাসুল হক ইনুর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণও চলছে।

এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে নির্বিচার হত্যার দায়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে কারফিউ দিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর পৃথক মামলায় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে আজকের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। ওই দিন প্রসিকিউশনের পক্ষে দুই মাস সময় চাইলে এ আদেশ দেওয়া হয়। গত ২০ জুলাইও তদন্তের জন্য আরও তিন মাস সময় চেয়ে আবেদন করে প্রসিকিউশন। তবে প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় নতুন করে সময় দেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে গত ২০ এপ্রিল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জনকে হাজির করা হয়েছিল। সেদিন এ ঘটনায় তদন্তে আরও তিন মাস সময় চান প্রসিকিউশন। পরে ২০ জুলাই দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ আসামিদের আনা হয়। সব মিলিয়ে একসময়ের হেভিওয়েট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে পৃথক চার্জ জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ‘অভ্যুদয় ঠেকাতে’ জাতিসংঘে ভোট পাস

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশের ‘অভ্যুদয় ঠেকাতে’ জাতিসংঘে ভোট পাস

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহটি কাটল। অনিবার্য বিজয়ের পথে এগিয়ে চলেছে বাংলার মুক্তিবাহিনী। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ডিসেম্বরের ৭ তারিখ রাতে (বিশ্বের এ প্রান্তে ততক্ষণে ৮ তারিখ) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ পূর্ব পাকিস্তানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ভারত-পাকিস্তান উভয় পক্ষের সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস করে। যুক্তরাষ্ট্রের আনা প্রস্তাবটি ১০৪-১১ ভোটে গৃহীত হয়।

জাতিসংঘে উপমহাদেশের রাজনীতির এই অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির আলোচনা তাড়াহুড়োর মধ্য দিয়েই এগিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, সাধারণ পরিষদের অধিকাংশ সদস্য দেশই এ প্রস্তাবের মর্ম বুঝতে পারেনি। নয় মাস যুদ্ধের পর ওই সময় যুদ্ধবিরতি মানেই গণহত্যার শিকার হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া বাঙালিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানোর এই আন্তর্জাতিক কূটকৌশল ভোটে জিতে গেলেও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র সমাজতন্ত্রী অন্য কয়েকটি দেশ এবং প্রতিবেশী ভারত ও ভুটান অটল থাকে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ১০টি দেশ ভোটদানে বিরত থেকেছিল।

৮ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী সকাল থেকেই ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক অবস্থানে কয়েকবার বিমান হামলা চালায়। এদিন পাকিস্তানি বিমানবাহিনী পাল্টা হামলা চালাতে পারেনি। পূর্ব পাকিস্তান সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। এদিন আবার সরকারি রেডিওতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ এবং ব্ল্যাকআউটের (ঘরের আলো যাতে জ্বালানো না হয় বা বাইরে যায়) নির্দেশ প্রচার করা হলো। এ নির্দেশনা আগে থেকেই বহাল ছিল। সম্ভবত পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির চাপে বিচলিত হয়ে নতুন করে আদেশটি জারি করে।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন দেশের সহকারী প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জাতিসংঘে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

৮ ডিসেম্বর রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়ে। পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রণক্ষেত্রে ভারতের বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অগ্রগতি প্রায় থেমে যায়। যশোরের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও পাকিস্তানি সেনারা সরে যায়। কুমিল্লার এক অংশের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। অন্য অংশের পাশ কাটিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মিত্র বাহিনী এগোতে থাকে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এহেন বেহাল সামরিক পরিস্থিতির মধ্যে নির্মম স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথিত ‘ওয়াদা’ বাস্তবায়ন করতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নুরুল আমিন ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।

৮ তারিখ রাতেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সংক্ষিপ্ত ভাষণ প্রচারিত হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে চিরতরে আঘাত করার ডাক দেন তিনি। দুদিন আগে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তিনি ভুটান এবং ভারতের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাজউদ্দীন আহমদ আশা প্রকাশ করেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশও এখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত