Ajker Patrika

ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙার সময় বন্ধ ছিল সিসি ক্যামেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ২৬
ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙার সময় বন্ধ ছিল সিসি ক্যামেরা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি যখন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন বন্ধ ছিল রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। চলচ্চিত্রকর্মীরা সিসি ক্যামেরার ডিভিআরে বাড়ি ভাঙার কোনো ভিডিও ফুটেজ পাননি। 

বাড়িটি ভেঙে ফেলার পর গতকাল বুধবার চলচ্চিত্রকর্মীরা ওই কলেজ থেকে সিসি ক্যামেরার ডিভিআর জব্দ করে নিয়ে যান। তখন নির্মাতা তাওকীর শাইক বলেছিলেন, ‘আমরা সিসি ক্যামেরার ডিভিআর নিয়েছি। আমরা দেখব, এটা কারা ভেঙেছে। ফুটেজ না থাকলে এর দায় নিতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। যদি কলেজ কর্তৃপক্ষই বাড়ি ভাঙে তাহলে অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে হবে।’ 

ডিভিআর যাচাই করার পর ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর শাহরিয়ার কামাল এক ফেসবুক পোস্টে জানান, ডিভিআরে বাড়িটি ভাঙার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। বাড়িটি যখন ভাঙা হয়, তখন সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছিল। 

শাহরিয়ার কামাল ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ওনারা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) ৬ তারিখ রাত থেকে বাড়ি ভাঙার কথা আমাদের জানান। কিন্তু ফুটেজ চেক করে আমরা পাই ৬ আগস্ট দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা চালু ছিল। তার পর থেকে ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফুটেজ চেক করতে গিয়ে ডিভিআর বন্ধ রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখানে বোঝা যায় গলদ কিসে আছে।’

তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরার ডিভিআর চেক করার সময় রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক কলেজের দুজন প্রতিনিধি, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির তিনজন প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। শাহরিয়ার কামাল মনে করছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরা বন্ধ রেখে পরিকল্পিতভাবে বাড়িটি ভেঙে ফেলেছে। 

৬ আগস্ট দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা চালু ছিল। এ সময় ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি অক্ষত দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত রাজশাহী নগরীর মিয়াপাড়া এলাকার এই পৈতৃক বাড়িতে কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের সময় কেটেছে। এ বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও। এই বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি ১৯৮৯ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেয়। 

এরপর জায়গাটির উত্তরে গড়ে তোলা হয়েছে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের আধুনিক ভবন। এ ভবনের দক্ষিণ অংশে ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত পুরোনো বাড়ির ঘরগুলো দাঁড়িয়ে ছিল। বাড়িটি অপসারণ করে সেখানে অন্য স্থাপনা করার চেষ্টা অনেক আগে থেকেই করছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

সাংস্কৃতিককর্মীদের বাধার মুখে বারবার তা বন্ধ হয়েছে। সাংস্কৃতিককর্মীদের দাবির মুখে বাড়িটি সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এর মধ্যেই চলমান অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে ৬ ও ৭ আগস্ট গোপনে বাড়িটি ভেঙে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। এখন সেখানে ভাঙা বাড়ির ইটগুলো স্তূপাকারে রয়েছে। ঋত্বিকের আর তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই।

কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের দাবি করেন, ৬ আগস্ট কিছু ছাত্র এসে প্রথমে বাড়িটি ভাঙতে শুরু করেন। পরে ভাঙা বাড়ি তাঁরা শ্রমিক এনে ‘পরিষ্কার’ করতে শুরু করেন। নিজেরাই বাড়িটি ভেঙে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করছেন অধ্যক্ষ। 

সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিও শুনলাম যে সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। এর আগেও একবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন সিসি ক্যামেরায় কোনো সমস্যা আছে কি না তা আমি জানি না।’ 

অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান জানান, তাঁর কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহিনুল হাসান। অধ্যক্ষ দাবি করেন, ৬ আগস্ট ভাঙা বাড়ির ইট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার কারণে কলেজে যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি বিষয়টি কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহিনুল হাসানকে ফোন করে জানান এবং তাঁর অনুমতি নিয়ে তিনি পরিষ্কার করার কাজে হাত দেন। 

ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির উত্তরে গড়ে তোলা হয়েছে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের আধুনিক ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা এ বাড়ি কারা ভেঙেছে, তা তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। গতকাল বুধবার এই তদন্ত কমিটি করার পর আজ বৃহস্পতিবার কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহিনুল হাসান প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। 

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, ঋত্বিক কুমার ঘটকের বাড়িটি স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মীরাই রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আছে। এর মধ্যেই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। যারাই এ বাড়ি ভাঙে না কেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে ভবন নির্মাণে পাইলিংয়ের সময় ধসে পড়ল আরেক ভবন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। এতে ভবনটিসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনে অবস্থিত আরএফএল কোম্পানির বেস্ট বাই শোরুম। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন সেখানে কর্মরতরা। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনমালিকের অভিযোগ, নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের বলা হলেও কর্ণপাত না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

আজ শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলি স্বর্ণকারপট্টির মুজিব সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের একাধিক টিম।

সরেজমিন দেখা গেছে, একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছিল। নির্মাণাধীন এই ভবনের মালিক স্থানীয় সঞ্জয় কর্মকার, অজয় কর্মকার ও সেলিম নামে আরেক ব্যক্তি। পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পার্শ্ববর্তী ভবনসংলগ্ন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা বা প্যারাসাইলিং ব্যবস্থা ছিল না। এই অবস্থায় পাইলিংয়ের (নিচের অংশ) কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন নির্মাণশ্রমিকেরা। হঠাৎ করেই ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে দৌড়ে সরে পড়েন নির্মাণশ্রমিক ও শোরুমটির কর্মচারীরা।

বেস্ট বাইয়ের কর্মীরা জানান, তারা সকালে এসে ফ্লোরের টাইলসে ফাটল দেখতে পান। ফাটল ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে ক্যাশ কাউন্টার টেবিলটা সরিয়ে ফেলেন, এর মধ্যেই ধসে পড়ে ভবনের এক পাশ।

ধসে পড়া ভবন ও বেস্ট বাই ফ্রাঞ্চাইজের মালিক মনিরা খাতুনের দাবি, এ ঘটনায় তাঁর ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং তিনি এর বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বারবার নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের সতর্ক করা হয়েছে এবং নিয়ম মেনে কাজ করতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা রাতের আঁধারে আমার ভবনের নিচের মাটি সরিয়ে ফেলেছে, যার কারণে আজকের এই দুর্ঘটনা। পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী ৩ ফুট দূরত্ব রেখে কাজ করার কথা থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আজ সকালে উল্টো আমার কর্মচারীদের হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়।’

একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘটনাস্থলে ছুটে আসা শহরের বাসিন্দা ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোজাফফর আলী মুসা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণ করতে হলে পৌরসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হয় এবং তা সঠিকভাবে তদারকির দায়িত্ব তাদের। যদি সঠিকভাবে তদারকি হতো তাহলে এমন দুর্ঘটনা না-ও ঘটতে পারত।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ভবনমালিকদের একজন সঞ্জয় সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থলে আসা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মাসুদ আলম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তবে কোনো অভিযোগ পায়নি পুলিশ। অভিযোগ পেলে সেটা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পৌরসভার প্রশাসক ও ফরিদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. সোহরাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত