Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক কাজ

ড. আর এম দেবনাথ
অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক কাজ

প্রথম ধাক্কা, দ্বিতীয় ধাক্কা, অর্থনীতি এখন তৃতীয় ধাক্কার মুখোমুখি। এই লেখা যখন লিখছি, তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়ে কাজকর্ম শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী, তা দেশের মানুষের কাছে খুব স্পষ্ট বলে মনে হয় না। তবে ২০২০ সালে ‘কোভিড-১৯’ যে ধাক্কা আমাদের দিয়েছিল, যে বিপদে ফেলেছিল, তার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। অথচ ওই ধাক্কা আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে ভীষণভাবে নড়বড়ে করে দেয়। আমাদের ‘স্ট্রাগল’ ছিল নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশ হওয়ার। ২০১১-১২ থেকে অবিরাম উচ্চ প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল অর্থনীতিতে। চারদিকে প্রশংসা। রিজার্ভ বাড়ছে, রপ্তানি বাড়ছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে, ব্যয়বহুল বড় বড় অবকাঠামো গড়ে উঠছে। গড়ে উঠছে বড় আকারের মধ্যবিত্ত। এক-দেড় কোটি লোক দেশের বাইরে। মাসে দেড়-দুই বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠায়। দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে। সাক্ষরতার হার বাড়ছে। মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়ছে।

শিশুমৃত্যুর হার কমছে। মাতৃমৃত্যুর হার কমছে। অর্থনীতি এবং সামাজিক সূচকগুলো চকচকে। আমরা উড়ছি আকাশে। কেউ ভাবিনি হঠাৎ চীন থেকে এক অজানা-অচেনা ‘ভাইরাস’ এসে আমাদের থামিয়ে দেবে। ঘরে ঘরে আর্তনাদ, হাজার হাজার লোক মারা গেছে। চিকিৎসা নেই, হাসপাতাল ভর্তি রোগীতে। অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়ে গেছে। মিল-কারখানা বন্ধ। মানুষে মানুষে যোগাযোগ পর্যন্ত বন্ধ। উন্নয়ন তো দূরের কথা, ‘ত্রাহি মধুসূদন’ অবস্থা।

হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক এক বিখ্যাত শিল্পপতি সিঙ্গাপুর, চীন থেকে ডাক্তার এনেও মৃত্যুবরণ করলেন ‘কোভিড-১৯’-এর কাছে। মৃত্যুর আগে বললেন, ‘ডাক্তার, তোমরা আমাকে বাঁচাও। আমি আমার সব সম্পদ তোমাদের লিখে দেব।’ বোঝা যাচ্ছে কী বিপদ গেছে, কী ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছিলাম আমরা। হয়ে পড়েছিলাম তিন-চার দশক আগের উন্নত এক শ্রীলঙ্কার মতো। ভীষণ গর্বের ব্যাপার। না, বিধাতা আমাদের এই অগ্রগতি সহ্য করলেন না। ২০১৮-১৯-এর ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ হারের প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ‘জিডিপি’ প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অথচ টানা সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রেকর্ড আমরা গড়েছিলাম।

করোনা গেল। লক্ষাধিক কোটি টাকার প্রণোদনা কর্মসূচি দিয়ে কোনোমতে অর্থনীতি ধরে রাখার চেষ্টা হয়েছে। ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছুটা ‘রিকভারি’ করলাম আমরা। কিন্তু দুই নম্বর মারাত্মক ধাক্কা এবার এল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে। ১৯৭২-৭৫ সালের মতো জিনিসপত্রের দাম বেড়ে দেড়-দুই গুণ। ডলার রিজার্ভ অর্ধেক। ডলারের দাম ৮৫-৮৬ থেকে এখন ১২০-১২৫ টাকা। আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে আমাদের বারোটা বেজে গেল। রপ্তানির হিসাব এখন মেলে না। যত বলেছি, তার চেয়ে অনেক কম আসল রপ্তানি। আমদানি হচ্ছে প্রচুর। এক বছর তো আমদানি হয়ে গেল ৮৫-৯০ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন সমান শতকোটি) ডলারের পণ্য।

কী আমদানি হচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে আমদানি? আসলে হচ্ছে অর্থ পাচার। খুব দুর্নীতি বেড়ে গেল। এখন দেখা যাচ্ছে রাজস্ব আয়ের হিসাবও ঠিক নয়। ২০২৩-২৪-এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধন করে হয় ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।

‘এনবিআর’ বলছে, আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। অথচ প্রধান হিসাবরক্ষক অফিস থেকে বলছে, তারা পেয়েছে মাত্র ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। নেই ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এই যে লুকোচুরির ফল কী? ফল হচ্ছে সরকারি ঋণ বাড়ছে। সুদের পরিমাণ বাড়ছে। সরকার বাজার থেকে সমানে উচ্চ সুদে ঋণ নিচ্ছে। বেসরকারি খাত ঋণের জন্য চিৎকার করছে। কাঁচামালের অভাব, যন্ত্রপাতির অভাব, মধ্যবর্তী পণ্যের অভাব। কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। দারিদ্র্য বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি তুঙ্গে।

বন্যা, খরা ইত্যাদি কারণ, সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ইত্যাদি জিনিসপত্রের দামকে আকাশে তুলেছে। মানুষ পড়েছে ভীষণ কষ্টে। অথচ দেশে তৈরি হয়েছে বেনজীর ও মতিউরের মতো বড় বড় চোর। সরকার সব বুঝেশুনে মূল্যস্ফীতি রোধে ঘোষণা করেছে অনেক নীতি। মুদ্রানীতি ‘টাইট’ করা হয়েছে। রাজস্ব নীতিতে পরিবর্তন এনে ২০-২৫টি নিত্যপণ্য আমদানিতে হ্রাস করা হয়েছে কাস্টমস ডিউটি। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘টিসিবি’র মাধ্যমে ভোগ্যপণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। ১ কোটি গরিবকে খাওয়াতে গিয়ে খরচ করেছে বিপুল টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কোনোক্রমে থামানো যাচ্ছে না।

এই প্রেক্ষাপটে ঘটে যায় সরকারের পতন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেছেন। সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাঁরা শপথ নিয়েছেন ৮ আগস্ট। সম্পূর্ণ নতুন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি। দৃশ্যত গভীরভাবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ব্যাংকে ব্যাংকে অসন্তোষ। মিল-কারখানা সব এখনো চালু হয়নি। পুলিশের সব সদস্য এখনো কাজে নামেনি। রাস্তাঘাট নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্রছাত্রীরা। রপ্তানি বাণিজ্য বিঘ্নিত, পাইকারি-খুচরা বাজারের চেইন বিঘ্নিত—এসব অবশ্যই অপ্রত্যাশিত। অর্থনৈতিক ধাক্কা। এটা ‘তৃতীয় ধাক্কা’, যা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক। আগের দুটো ধাক্কা ছিল শুধুই অর্থনৈতিক। এই অর্থে এবারের ধাক্কা সুদূরপ্রসারী। কী থেকে কী হয়ে গেল, কেউ এখনো বুঝতে পারছে না। তবে এটা বোঝা যায়, পূর্বতন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল, অসন্তোষ ছিল। এরই প্রেক্ষাপটে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে তার সামনে অনেক কাজ। মূল্যস্ফীতি রোধ, ঘুষ-দুর্নীতি রোধ, অর্থ পাচার বন্ধ করা, ব্যাংকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে অনেক কাজ।

বহুল আলোচিত সমস্যা। সব জমা হয়েছে গত ১০-১৫ বছরে। কার্পেটের নিচে ময়লা জমেছে। দুর্গন্ধময় ময়লা। মানুষ সহ্য করতে পারছে না। মানুষ বাজারের অত্যাচার থেকে মুক্তি চায়। ব্যবসায়ী-আমলা ‘কাম’ রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত ‘অ্যালায়েন্সের’ শাসন চায় বলে মনে হয় না। এটা আসলে ‘বণিকের’ অত্যাচারী শাসন। অসহ্য এই শাসন।

অতএব এবারের এই ধাক্কা শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিকও। আগের দুটো ছিল সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক। এবার রাজনীতি যোগ হয়েছে। অথচ আমাদের সামনে ছিল কত কাজ। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা। ইতিমধ্যেই অর্থনীতিতে আমরা বিশ্বের ৩৫তম। নিম্নমধ্য আয়ে উত্তরণ ঘটবে ২০২৬ সালে। নতুন বিশ্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গড়ে ওঠা অর্থ, মুদ্রা, ব্যবসায়িক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ভেঙে যাচ্ছে। গাজা-ইসরায়েল সংঘাত চলছে। ইরানে পরিবর্তন এসেছে। শ্রীলঙ্কা শান্ত হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অস্থিতিশীল। বিশ্বের সব দেশ এক চরম দুর্দশার মধ্যে। অস্থিতিশীলতা, বেকারত্ব, সম্পদের কেন্দ্রীভূতকরণ, বৈষম্য ইত্যাদি বাড়ছে। বিশ্বের উগ্রমূর্তি দেখা যাচ্ছে ভারতের ধনী পরিবারে। আমাদের ধনীদের মধ্যেও এই একই প্রবণতা। বড়, খুবই বড় সংকট। কথা উঠেছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এখন কি তাহলে তলে পড়ে যাবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান?

শুধু দুর্নীতি দমন নয়, অনেক সমস্যা। উন্নয়নের পাশাপাশি এসবও জমা হয়েছে। ঋণগ্রস্ত দেশ, সুদে-আসলে দেনা সহ্যসীমার বাইরে। রপ্তানিতে ভাটা। রেমিট্যান্স আগের মতো নেই। রিজার্ভ পরিস্থিতি খারাপ। কাঁচামালের অভাব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব সমস্যা মোকাবিলা করবে, নাকি অতিসত্বর নির্বাচন দিয়ে তারা ঘরে ফিরে যাবে? কিন্তু মনে হচ্ছে সরকারের অ্যাজেন্ডা অনেক বড়।

ছাত্ররা রাষ্ট্রীয় সংস্কার চায়। প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার চায়। মনে হয় সংবিধান পরিবর্তনও চায়। এসব তো দীর্ঘমেয়াদি কাজ। অল্প সময়ে কি তা সম্ভব? এসব প্রশ্ন বিবেচনায় নিলে এবারের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ধাক্কাটি আমাদের জাতীয় জীবনে মাইলফলক হয়ে থাকবে। অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা নাকি শান্তি ও উন্নয়ন—এই প্রশ্নের মুখোমুখি আমরা। অতীতে এমন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ফলাফল বলা যায় শূন্য। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা কী চেয়েছিলাম, এখন কী অবস্থা? বড় বড় প্রশ্ন। সমাধানের স্থায়ী রূপ কি দিতে পারবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার?

ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়ায় টিউশন ফি নেই

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়ায় টিউশন ফি নেই

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়ায় টিউশন ফি নেই

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়ায় টিউশন ফি নেই

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়ায় টিউশন ফি নেই

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত