Ajker Patrika

গুঁড়িয়ে দেওয়া স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ওপর বিএনপি নেতাদের দোকান নির্মাণ

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৪, ১১: ২৬
গুঁড়িয়ে দেওয়া স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ওপর বিএনপি নেতাদের দোকান নির্মাণ

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চিত্রা নদীর পারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তৈরি করা হয়েছিল স্বাধীনতা চত্বর। পরে এই চত্বরেই নির্মাণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পালন করা হতো স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল থেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। এখন সেই জায়গায় দোকান তুলছেন চার বিএনপি নেতা-কর্মী। 

স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর এবং সেই জায়গায় দোকান নির্মাণ করায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে গত সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে যশোরের বাঘারপাড়ায় বিজয় উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন ছাত্র-জনতা। তাঁরা বিজয়ের আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন। বিজয় মিছিলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। বিজয় উল্লাসের পাশাপাশি একশ্রেণির লোকজন স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে হামলা চালান। তাঁরা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, পরদিন মঙ্গলবার বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উদ্দীন, তাঁর ফুফাতো ভাই বাঘারপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দাউদ হোসেন, বাঘারপাড়া পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহিম এবং বিএনপির কর্মী মহাসিন আলী স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের দখল নেন। ওই দিন তাঁরা বৈদ্যুতিক কাটার দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের লোহার রড কেটে ফেলেন। এরপর তাঁরা গুঁড়িয়ে দেওয়া স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় দোকানঘর তোলা শুরু করেন। 

সরেজমিন দেখা গেছে, বাঘারপাড়া উপজেলার বাঘারপাড়া বাজারের মাঝ দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে গেছে চিত্রা নদী। নদীর দক্ষিণ তীরে চাড়াভিটা-নারিকেলবাড়িয়া সড়কের পাশে স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসস্তূপের কিছুটা অংশ রয়ে গেছে এখনো। সড়ক থেকে ধ্বংসস্তূপের মাঝ বরাবর প্রস্থ রেখে সড়কের পাশে প্রায় ৬০ ফুট লম্বা দোকানঘর তোলা হয়েছে। প্রথমে ইট দিয়ে ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে। এরপর কংক্রিটের খুঁটি পোঁতা হয়েছে। টিন দিয়ে ছাউনি ও বেড়া দেওয়া হয়েছে। দোকানের কিছু অংশের চারপাশ এবং কিছু অংশের সামনে এখনো বেড়া দেওয়া হয়নি। 

বিএনপি নেতা সদর উদ্দীন বলেন, ‘ওই জায়গা আগে খাস ছিল। পরে আমি সরকারের নিকট থেকে সেখানকার পাঁচ শতক জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত নেই। এরপর সেখানে আমি একতলা একটি পাকা ভবন নির্মাণ করি। সেখানে আমি ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ব্যবসা করি। কিন্তু ২০০৬ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় সরকার ওই জমি নিয়ে নেয়। তারা আমার ভবনটি ভেঙে ফেলে। এরপর সরকার সেই জায়গায় প্রথমে স্বাধীনতা চত্বর এবং পরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে।’ 
 
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেয়। কেউ যাতে দখল না করতে পারে সে জন্য আমি সড়ক ঘেঁষে একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেছি। পরে পুরো জায়গায় স্থায়ীভাবে ভবন নির্মাণ করব।’ 

বাঘারপাড়া উপজেলার চিত্রা নদীর পারে স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা অপর বিএনপি নেতা দাউদ হোসেন বলেন, ‘সোমবার ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেয়। আমরা অনেক চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারিনি। এরপর ওই জায়গায় সদর উদ্দীন এবং আব্দুর রহিম টিনের ঘর তুলেছেন। স্বাধীনতা চত্বরের বাইরে নদীর সঙ্গে কিছুটা ফাঁকা জায়গা ছিল। জায়গাটা খাস। আমি সেখানে কয়েকটি পিলার পুঁতে রেখেছি। আমার পাশে মহাসীন আলী ঘর তুলেছেন। এই নিয়ে কথা উঠলে আমি সেখান থেকে পিলারগুলো সরিয়ে নেব।’ 

কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ২০০৯ সালে উপজেলা প্রশাসন চিত্রা নদীর পারে মাটি ভরাট করে স্বাধীনতা চত্বর তৈরি করে। তখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবছর ২৬ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে স্বাধীনতা চত্বরে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করতেন। সাধারণ মানুষও সেখানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করতেন। ২০১৮ সালে উপজেলা প্রশাসন স্বাধীনতা চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। সেখানে উপজেলার সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের ফলক ছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ স্মৃতিস্তম্ভ ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করতেন। কিন্তু স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেওয়া এবং সেখানে দোকান নির্মাণ করায় তাঁরা হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। 

বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী বলেন, ‘স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। হামলা চালিয়ে সেটি ভেঙে ফেলায় হতবাক হয়েছি। ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙা এবং সেখানে দোকান নির্মাণের নিন্দা জানাই। যারা এসব করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ 

বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামছুর রহমান বলেন, ‘কিছু লোকের খারাপ কাজের জন্য দলের বদনাম হবে—এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যারা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় দোকান নির্মাণ করেছে তাদের দ্রুত দোকান ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবারের মধ্যে দোকান সরিয়ে না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাটহাজারীতে বৈঠকে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
নিহত রবিউল ইসলাম ওরফে বাবু। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রবিউল ইসলাম ওরফে বাবু। ছবি: সংগৃহীত

হাটহাজারীতে বিয়ের সামাজিক বৈঠকে (পানসল্লা) ছুরিকাঘাতে মো. রবিউল ইসলাম ওরফে বাবু (৪০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৮টার দিকে উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন এলাকার মুছা সওদাগরের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত রবিউল ইসলাম মুছা সওদাগর বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক কোম্পানির বড় ছেলে। তিনি নাজিরহাট ঘাট স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে মুছা সওদাগরের বাড়িতে একটি বিয়ের প্রস্তুতিমূলক সামাজিক বৈঠক (পানসল্লা) চলছিল। এ সময় বৈঠকে রবিউল ইসলামের সঙ্গে একই বাড়ির জসিমের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে জসিম ঘর থেকে চাকু এনে বাবুর গলায় আঘাত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই রবিউল ইসলামের মৃত্যু হয়।

ছুরিকাঘাতের সময় উপস্থিত রবিউল ইসলাম বাবুর ভাই ইমরুল হোসেন বাচ্চু (৩৫) ও চাচাতো ভাই ইমন (২১) বাবুকে উদ্ধার করতে গেলে জসিম তাঁদেরকেও চাকু দিয়ে আঘাত করেন। আহত দুজনকে নাজিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জসিমকে আটক করে হাটহাজারী মডেল থানা-পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এখন ঘটনাস্থলে আছি। স্থানীয় উত্তেজিত জনতার কারণে এখন পর্যন্ত জসিমকে হেফাজতে নেওয়া সম্ভব হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে আজ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১২
হালকা কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। গরুর গায়ে কাপড় জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। গরুর গায়ে কাপড় জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা প্রতিদিনই বাড়ছে। আজ এই মৌসুমের সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। সকাল ৯টায় রেকর্ড হওয়া এই তাপমাত্রায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত কয়েক দিন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। শুক্রবার ১২, বৃহস্পতিবার ছিল ১২ দশমিক ৫, বুধবার ১২ দশমিক ২, মঙ্গলবার ১১ দশমিক ৭, সোমবার ১৩ দশমিক ৩, রোববার ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ২৭ ডিগ্রি।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষের চলাচল কম। কেউ কেউ গরম কাপড় জড়িয়ে কাজে বের হলেও অনেকেই শীতের তীব্রতার কারণে ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সূর্য ওঠার পরও রোদের তাপ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে নদীতে বালুশ্রমিকেরা শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। সকাল থেকেই নদীতে নেমে বালু তুলতে হয় তাঁদের। শীতের পানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

করতোয়া নদীর বালুশ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভোরে নদীর পানি এত ঠান্ডা থাকে যে শরীর জমে আসে। তবু কাজ না করলে ঘরে খাবার জুটবে না। হাত-পা অসাড় হয়ে আসে, অনেক সময় দাঁড়িয়েও থাকা যায় না। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করাও কষ্টকর হয়ে পড়ছে।’

দিনমজুর আসিমদ্দিন জানান, শীতের জন্য কাজ কমে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা কাঁপতে থাকে। শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। সর্দি-কাশি, জ্বর, অ্যালার্জি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীদের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসকদের মতে, হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলছে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকা মানুষ বেশি ঝুঁকিতে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘শীত আরও কিছুদিন বাড়তে পারে। আজ তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে; সামনে তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনসিপির জেলা ও নগর আহ্বায়ক দুই মেরুতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩০
মোবাশ্বের আলী ও সাইফুল ইসলাম
মোবাশ্বের আলী ও সাইফুল ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা ও মহানগরের বিরোধ এখন তুঙ্গে। জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আওয়ামী দোসর অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে মাঠে নেমেছেন নগর আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলীর অনুসারীরা।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সাইফুলের ছবি ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ছড়িয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার ওপর দুই হাতে পিস্তল নিয়ে গুলি করা রুবেলের সঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনে থাকার ভিডিও। তাই তাঁকে আওয়ামী দোসর আখ্যা দিয়ে তাঁর পদত্যাগ চাওয়া হচ্ছে।

গত ২৯ নভেম্বর এনসিপির জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এতে আহ্বায়ক করা হয় সাইফুল ইসলামকে। তখন থেকেই মহানগর নেতা মোবাশ্বের আলীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব। এখন তা প্রকাশ্যে এসেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯ নভেম্বর ১০৫ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। পরদিন কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা সংবাদ সম্মেলন করে সাইফুলের পদত্যাগ দাবি করেন। পরদিন পর্যটন মোটেলে পরিচিতি সভায় গিয়ে মহানগর যুবশক্তি ও ছাত্রশক্তির কিছু নেতা-কর্মী সভা পণ্ড করার চেষ্টা করেন। সেদিন সাইফুল ইসলামকে কারণ দেখিয়ে পাঁচজন পদত্যাগ করেন। বুধবার পদত্যাগ করেন আরও পাঁচজন।

এদিকে মহানগর ছাত্র ও যুবশক্তি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছুসংখ্যক জুলাই যোদ্ধা গত বুধবার সন্ধ্যায় নগরের চণ্ডীপুর কদমতলা মোড়ে মশাল মিছিল করেন। সাইফুলের কোচিং সেন্টারে তালা লাগিয়ে দেন।

সেদিন তাঁরা সাইফুলের পদত্যাগের দাবিতে এনসিপির মহানগর কার্যালয়ে তালা দেন। এতে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন নগর আহ্বায়ক মোবাশ্বের। পরে রাতে তালা কেটে কার্যালয় থেকে বের হন তিনি। সেই রাতেই নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি এখন প্রাণসংশয়ে আছেন। নানা রকম হুমকির কথা জেনেছেন। তাঁর কিছু হলে নগর কমিটির নেতারা দায়ী থাকবেন।

নগর আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জেলা আহ্বায়ক বলেন, ‘তিনি আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন। আগে ইনডিরেক্টলি তাঁর লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে লাগিয়েছেন। এখন ডিরেক্টলি করছেন।’

জানতে চাইলে মোবাশ্বের আলী বলেন, সাইফুল ইসলাম চিহ্নিত আওয়ামী দোসর। কেন্দ্রকে সব বলেছি। এই ছেলেরা আন্দোলন করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের দাবির সঙ্গে একমত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রণোদনার পরও গম আবাদ ছাড়ছেন চাষিরা

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কৃষি বিভাগের নানা প্রণোদনা, উঠান বৈঠক, প্রদর্শনী আর বীজ-সার সহায়তা সত্ত্বেও ঠাকুরগাঁও জেলায় গম চাষ উদ্বেগজনক হারে কমছে। গত পাঁচ মৌসুমে জেলায় গমের আবাদি জমি কমেছে ২৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর। কৃষকেরা বলছেন, ভুট্টা ও সরিষার মতো ফসল গমের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ দিচ্ছে বলে তাঁরা গম ছেড়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল, উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ টন। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ২০২৪-২৫ মৌসুমে আবাদ নেমেছে ২১ হাজার ৫০ হেক্টরে; উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৮৩ হাজার ৬০৮ টন।

চলতি ২০২৫-২৬ রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টন। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতেই দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন, গত মৌসুমের চেয়েও এবার লক্ষ্যমাত্রা অনেক কম পূরণ হবে।

এ নিয়ে কথা হয় সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কৃষক নূরে আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গমের জন্য লম্বা শীত লাগে। এখন শীত কমে গেছে, আবার বীজ ভালো পাওয়া যায় না, শ্রমিকও পাওয়া যায় না।

লাভও কম।’ একই এলাকার কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভুট্টায় সেচ কম লাগে, পরিচর্যা কম, খরচ কম। বিঘায় ৪০-৪৫ মণ ফলন হয়। গমে ১৩-১৪ মণ। দামও ভুট্টার ভালো পাই। তাই কয়েক বছর ধরে ভুট্টাতেই ঝুঁকছি।’

সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দেবেশ চন্দ্র রায় জানান, তিনি আগে ১০ বিঘা জমিতে গম করতেন। এখন পুরোটাই ভুট্টা।

‘বিঘায় খরচের দ্বিগুণের বেশি লাভ হয় ভুট্টায়। গমে লোকসানের ভয় থাকে। হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়নের কৃষক জাহের আলী

বলেন, ‘আগে পাঁচ-ছয় বিঘা গম করতাম। এখন এক বিঘাও করি না। সব জমিতে ভুট্টা।’

জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসিরুল আলম বলেন, জেলায় মাছ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার বেড়েছে ব্যাপক। প্রাণিখাদ্য তৈরিতে ভুট্টার চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে কৃষকেরা ভুট্টার দিকে ঝুঁকছেন। তিনি জানান, ভুট্টার প্রণোদনা এখন বন্ধ করে গমের প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৫০০ কৃষককে ২৭ হাজার ৫০০ বিঘা জমির জন্য ২০ কেজি করে বীজ ও ২০ কেজি করে সার দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও জেলার উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকেরা লাভের ফসলের দিকে যাচ্ছেন। গমের পরিবর্তে ভুট্টা ও সরিষায় ঝুঁকছেন। তবু গমের আবাদ বাড়াতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রণোদনার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।’

তবে কৃষকের মুখে একই কথা—লাভ না হলে প্রণোদনা দিয়েও গম চাষ বাড়ানো যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত