Ajker Patrika

এ যে দেখি চোরের হাট-বাজার...

মহিউদ্দিন খান মোহন
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ১১: ৪৩
এ যে দেখি চোরের হাট-বাজার...

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, রাজস্বের মতিউর রহমান, একই বিভাগের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুন, সিলেটের কর কমিশনার এনামুল হক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি কামরুল হাসান, পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আবেদ আলী, পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর—তাঁরা একেকজন এখন ‘বিখ্যাত’ ব্যক্তি।

স্বীয় কর্মগুণে তাঁরা রাতারাতি ‘স্বনামধন্য’ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। স্বনামধন্য বলছি এ জন্য যে তাঁদের নাম শুনলে কাউকে বলে দিতে হয় না, তিনি কে এবং কেনইবা খ্যাতি অর্জন করেছেন। সংবাদপত্র, টেলিভিশনের খবরে তাঁরা এখন শিরোনাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। তাঁদের এই বিখ্যাত হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে এক কালো অধ্যায়। সে কাহিনি সরকারি পদে থেকে ক্ষমতা ও সুযোগের অপব্যবহার করে শত থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার।

আচ্ছা, তাঁদের যদি ‘চোর’ বলে সম্বোধন করি, তাহলে কি কারও আপত্তি আছে? কিংবা কোনো আইনি জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা আছে? থাকলেও কোনো আপত্তি নেই। কেননা, অভিধানে চোরের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে, তাতে এই ব্যক্তিরা ওই অভিধায় অভিহিত হওয়ার যোগ্যতা ও অধিকার রাখেন।

উইকিপিডিয়ার চুরির সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘চুরি হলো কোনো ব্যক্তির যথাযথ মালিক বা তাঁর পক্ষে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা সম্মতি ব্যতীত সম্পত্তি বা পরিষেবাগুলো হস্তগত করার কাজ, যা এর সঠিক মালিককে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে।’ আর যে ওই কাজে লিপ্ত হয়, তাকে বলে ‘চোর’। চুরির আরও কয়েকটি সমার্থক শব্দ রয়েছে—যেমন ডাকাতি, লুণ্ঠন, আত্মসাৎ ইত্যাদি। আমাদের এ দেশ বা রাষ্ট্রটির মালিক জনগণ। সংবিধানে তা-ই লেখা আছে।

আর সরকার হলো জনগণের পক্ষে দেশ বা রাষ্ট্রকে পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষ। তো সেই জনগণ বা সরকারের অগোচরে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করে সরকারি পদে থাকার সুযোগের অপব্যবহার করে গোপনে অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদ অর্জন করাকে তো চুরিই বলা যায়। সে হিসেবে উপরোল্লিখিত ‘মহাজন’ ব্যক্তিদের চোর সম্বোধনে ‘কসুর’ হওয়ার কথা নয়। চোর সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে একজন সেদিন বলছিলেন, যে গেরস্তের ঘরে সিঁধ কেটে চুরি করে, সে যেমন চোর, আর যে ব্যক্তিটি স্যুট-টাই পরে অফিসে বসে কলম ঘুরিয়ে অবৈধ আয় করে, সে-ও চোর।

পার্থক্য সিঁধকাটা চোরকে ভোররাতে খালের পানিতে গোসল করে শরীরের মাটি পরিষ্কার করতে হয়, আর অফিশিয়াল চোরদের সেটা দরকার হয় না। তাদের পোশাক-আশাক থাকে পরিষ্কার, তারা সমাজে চলাফেরা করে সাধুবেশে।

ওপরে যাঁদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের কীর্তি-কাহিনি এখন সবাই জানেন। আর এই জানার কৃতিত্ব সরকারি কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের নয়। পুরোটাই গণমাধ্যমের। কেউ হয়তো বলতে পারেন, নিজে গণমাধ্যমকর্মী বিধায় আমি এ কথা বলছি। কিন্তু একটু পর্যালোচনা করলেই এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এযাবৎ দেশের যত বড় বড় পুকুর ডাকাতির খবর জনসমক্ষে এসেছে, তার সবই গণমাধ্যমে উঠে আসার পর জনগণ জানতে পেরেছে। আর তার পরপরই সরকারি সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশনকেও কাছা মেরে মাঠে নামতে দেখা গেছে। এ যেন সেই ‘মরা সাপের গায়ে লাঠি দিয়ে দুইটি আঘাত করে সাপ মারতে হয় এভাবে’—বলা গ্রামের সেই ‘সাহসী’ মানুষটির উদাহরণ। একেবারে তরতাজা উদাহরণটি দিই।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালকের শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার খবরটি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুসন্ধানী রিপোর্টেই প্রথম তুলে ধরা হয়েছিল। এরপর অপরাপর সংবাদমাধ্যমে তাদের কুকীর্তির খবর ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। গাড়িচালক আবেদ আলীসহ পিএসসির যে ১৭ জন এখন পুলিশের খাঁচায় বন্দী, তাঁদের চিনিয়ে দিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো।

পিএসসির ওই ‘কীর্তিমান’দের মধ্যে চালক আবেদ আলীর নাম এখন সবার মুখে মুখে। খবরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারবার করে তাঁর কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য, ঢাকা-মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সম্পদ গড়ার কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। একটা ভিডিও ক্লিপ দেখলাম, একজন সাংবাদিক আবেদ আলীকে প্রশ্ন করছেন, ‘ড্রাইভারি করে আপনি এত টাকার মালিক হলেন কী করে?’ তিনি উত্তরে বলছিলেন, ‘ড্রাইভারি চাকরি করেছি তো ১৫ বছর আগে, এখন তো আমি ব্যবসায়ী।’ বটে, তিনি এখন একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী।

কিন্তু স্বল্প বেতনের একজন চালক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করার মতো বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় পেলেন? পত্রিকায় দেখলাম, তিনি তাঁর এলাকায় নাকি প্রচুর দান-খয়রাত করতেন। তিনি ও তাঁর ছেলে সোহানুর রহমান সিয়াম চলাফেরা করতেন কোটি টাকা দামের গাড়িতে।

আবেদ আলীর খায়েশ হয়েছিল উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে দেশ ও জনগণের অধিকতর খেদমতের। এ উদ্দেশ্যে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত পোস্টারও লাগিয়েছিলেন এলাকায়। ছেলে সিয়ামকে ঢুকিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগে। অবশ্য পিতার দুর্নীতির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পুত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে সংগঠন থেকে।

আলোচ্য আবেদ আলী একজন ‘আধুনিক’ চোর—তাতে সন্দেহ নেই। তবে সুরতে, লেবাসে তাঁকে সন্দেহ করার উপায় নেই। একটি ছবি এখন ফেসবুকে ভাইরাল। একটি ধু ধু বালুচরে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করছেন শ্মশ্রুধারী আবেদ আলী। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ও মাথায় নকশাদার টুপিওয়ালা আবেদ আলীকে দেখে সন্দেহ করার উপায় নেই, তিনি ‘সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়’।

যে কারও মনে হওয়াটা স্বাভাবিক, ‘লোকটা কী পরহেজগার! নামাজের সময় হওয়ায় বালুচরেই তা আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেছে!’ আরও কয়েকটি ছবি দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। কোথাও তিনি বাসে বা প্লেনে বসে নামাজ আদায় করছেন, কোথাও কোনো এক মসজিদে বক্তৃতা করছেন। একটি ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। তিনি বলছেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস করে যা কামিয়েছি, তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি।’ কত বড় স্পর্ধা এই চোরের! অবৈধ আয়ের টাকা আল্লাহর রাস্তায় নাকি খরচ করেছেন!

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এরা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌতুক নকশার সেই চাকরিপ্রার্থী, যাকে বেতন কত চাও জিজ্ঞেস করায় বলেছিল, ‘যদি আমার শুধু ঘরের কাজ করতে হয়, তাহলে বেতন দিবেন আট শ ট্যাকা। যদি ঘরের কাজ এবং বাজার করতে হয়, বেতন দিবেন চার শ ট্যাকা। আর যদি সেই সাথে দোকানের ক্যাশেও বসতে হয়, তাইলে কোনো বেতন দেওন লাগব না।’ এরপর গৃহকর্ত্রী বললেন, ‘শোনো বাপু, ঘরদোর সাফসুতরো রাখবে। আমি কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করি।’ চাকরিপ্রার্থী বলে, ‘আপনে কোনো চিন্তা করবেন না। আমারে খালি এক মাস সময় দেন। দেখবেন আমি আপনের ঘরদোর এমুনভাবে সাফ করুম, যে ঘরে ঢুইকা বুঝতেই পারবেন না, আপনে কোন ঘরে ঢুকছেন।’ অর্থাৎ সে ঘরের সবকিছু চুরি করে সাফ করে ফেলবে।

সাধক-বাউল লালন শাহের একটি গান আছে, ‘বেদ বিধির পর শাস্ত্র কানা/ আর এক কানা মন আমার/ এসব দেখি কানার হাটবাজার।’ যেভাবে সরকারি দপ্তরগুলোয় দুর্নীতিবাজ-চোরদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, তাতে কেউ যদি গান রচনা করে—‘এ যে দেখি চোরের হাট-বাজার’—তাহলে খুব একটা অসংগত হবে বলে মনে হয় না।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত