Ajker Patrika

ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশ–পাকিস্তান–রাশিয়ার সঙ্গে যে মিল দেখছেন কেজরিওয়াল

ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশ–পাকিস্তান–রাশিয়ার সঙ্গে যে মিল দেখছেন কেজরিওয়াল

ভারতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কথিত আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আদালতের নির্দেশে অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এরপরই নির্বাচনী প্রচারে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি। রাজনীতি ও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও রাশিয়ার প্রসঙ্গ। ভারতের বিদ্যমান পরিস্থিতিকে তিনি এসব দেশের সঙ্গে তুলনা করছেন। তাঁর অভিযোগ এই তিন দেশের ক্ষমতাসীনদের মতো নরেন্দ্র মোদি সরকারও বিরোধীদের ঠেকাতে খড়গহস্ত হয়েছেন। 

কেজরিওয়াল বলেন, জামিন পেয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দেখেছেন, তাঁকে যেভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা নিয়ে দিল্লির মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এতে আখেরে বিজেপিই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। জাতীয় পর্যায়ে মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এবার বিজেপি–আরএসএস ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে না—এটিকে এবারের নির্বাচনের বিজেপির বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন তিনি। এ ছাড়া নরেন্দ্র মোদির পর প্রধানমন্ত্রী পদে অমিত শাহকে বসানো নিয়ে খোদ বিজেপির নেতাদের মধ্যে বিভেদ গভীর হচ্ছে বলেও মনে করছেন তিনি। 

কেজরিওয়ালের আশা, এবারের নির্বাচনে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ৩০০ টিরও বেশি আসনে জিতবে। তাঁর আশঙ্কা, মোদি সরকার যেভাবে গণতন্ত্র ও সংবিধানকে ধ্বংস করার কাজ করেছে, আবার ক্ষমতায় এলে সব বিরোধী নেতাকে জেলে পুরে দেবে। তবে জোট জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সে বিষয়ে ৪ জুনের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

আম আদমি পার্টির (আপ) এ শীর্ষ নেতার মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের একনায়কত্বের ইস্যুটি এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজেপি আর আগের মতো অবস্থানে নেই। এবার বড় পরিবর্তনের সাক্ষী থাকবে দেশ। তিনি বলেন, তাঁকে জেলে রেখে বিজেপি আপকে ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তা ভেস্তে গেছে। 

এবারের নির্বাচনেও ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণের চেষ্টা, বিশেষ করে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে মুসলিমদের প্রসঙ্গ বারবার উঠে আসা প্রসঙ্গে কেজরিওয়াল বলেন, মানুষ এখন বিজেপির কাছ থেকে এমন হাস্যকর কথা শুনে শুনে ক্লান্ত। কখনো তারা বলে বিরোধী জোটের নেতারা তোমার জল কেড়ে নেবে, কখনো বলে বিদ্যুৎ কেটে দেবে, কখনো বলে মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে, কখনো বলে রিজার্ভেশন শেষ করে দেবে। জনগণ মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের সমাধান চায়। 

নির্বাচনী প্রচারে বিরোধীদের পক্ষ থেকে সরকারের দুর্নীতি ও স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার উল্লেখ প্রসঙ্গে আপ নেতা বলেন, স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি হলো নির্বাচনী বন্ড। প্রতিটি নির্বাচনী বন্ডের পেছনে রয়েছে বিজেপির দুর্নীতির পুরো কাহিনি। এর মাধ্যমে বিজেপি যা দান পেয়েছে, তার বিনিময়ে কেউ না কেউ লাভবান হয়েছে। জোট সরকার গঠিত হলে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুদানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি। 

দেশ খুব দ্রুত একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে মন্তব্য করে কেজরিওয়াল বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার প্রথমে (ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী) হেমন্ত সোরেনকে এবং তারপর আমাকে গ্রেপ্তার করে। আমাকে গ্রেপ্তার করে তারা দেশের মানুষকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছে, কেজরিওয়ালকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করতে পারলে যে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব। এগুলো একনায়কতন্ত্রের লক্ষণ। 

নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হলে বিজেপি সংবিধান পরিবর্তন করবে এবং দেশে স্বৈরাচারী শাসন চলবে বলে আশঙ্কা করেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তৃতীয় মেয়াদে বিজেপি শাসিত ভারত কেমন হবে সে চিত্র বর্ণনায় কেজরিওয়াল বলেন, হয় কোনো নির্বাচন হবে না, অথবা নির্বাচন হবে রাশিয়ার মতো, যেখানে পুতিন হয় বিরোধীদের জেলবন্দী করেছেন বা তাদের হত্যা করেছেন। এরপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি ৮৭ শতাংশ ভোট পান। বাংলাদেশ সরকার সবাইকে জেলে রেখে বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন। পাকিস্তানে, তারা ইমরান খানকে জেলে দেয়, তাঁর দল, তাঁর প্রতীক কেড়ে নেয় এবং জয়ী হয়। আমাদের দেশেও এ ধরনের নির্বাচন হবে। পুরো বিরোধীরা জেলে থাকবে এবং তারা ভোট পেতে থাকবে। এবারও ওরা আমাকে জেলে দিল, মণীশ সিসোদিয়াকে জেলে দিল, আমাদের দলের পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে জেলে দিল। তারা আমাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে চলেছে; তারা কংগ্রেসের হিসাব জব্দ করেছে। হেমন্ত সোরেনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, তারা এনসিপিকে দুই ভাগে ভাগ করেছে, তাদের প্রতীক কেড়ে নিয়েছে। তারা শিবসেনাকে বিভক্ত করে তাদের প্রতীক কেড়ে নেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের অনেক মন্ত্রীকে জেলে পাঠানো হয়েছে, স্ট্যালিন সরকারের মন্ত্রীদের মতোই। আমরা কীভাবে লড়াই করছি তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। 

এ সাক্ষাৎকারের চীন–ভারত সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে, চীন অনেক জায়গায় অবৈধভাবে ভারতীয় জমি দখল করেছে এবং সেখানে তারা তাদের পরিকাঠামো নির্মাণ করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, মোদী সরকার শুধু তা উপেক্ষাই করেনি, এই ইস্যুতে দেশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও করেছে। মোদীর প্রিয় কিছু বন্ধুর চিনের সঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে বলেই তারা এটা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইমরান খানের জন্য ইলন মাস্কের কাছে জেমিমার আবেদন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রাক্তন স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ অভিযোগ করেছেন, এক্স প্ল্যাটফর্মে তাঁর পোস্ট ফিল্টার করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার এ নিয়ে এক্স-এর মালিক ইলন মাস্কের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

গোল্ডস্মিথ অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের হাতে ইমরান খানের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আইনি জটিলতা নিয়ে তাঁর করা পোস্টগুলো জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তিনি ইলন মাস্ককে তাঁর অ্যাকাউন্টে ‘দৃশ্যমানতা ফিল্টারিং’ (visibility filtering) নামে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তা দ্রুত সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছেন।

এক্স হ্যান্ডলে করা পোস্টে জেমিমা বলেন, তাঁর ছেলেদের তাদের বাবার সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইমরান খানকে ২২ মাস ধরে অবৈধভাবে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পিটিআই নেতা একজন মৌলিক মানবিক অধিকারহীন রাজনৈতিক বন্দী—এই কথা বিশ্বকে জানানোর জন্য এক্স-ই তাঁর কাছে একমাত্র জায়গা। তিনি অভিযোগ, পাকিস্তান এবং বিশ্বব্যাপী তাঁর পোস্টের ‘রিচ’ প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি লেখেন, ‘আপনি বাকস্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কথা বলার স্বাধীনতা, কিন্তু কেউ শুনতে পাবে না, এমনটা নয়।’

এর আগেও জেমিমা অভিযোগ করেছিলেন যে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাঁর ছেলেদের বাবার সাথে কথা বলতে বাধা দিচ্ছে এবং তারা দেশে আসার চেষ্টা করলে তাদের গ্রেফতার করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, ইমরান খানের প্রতি হওয়া দুর্ব্যবহারের বিষয়ে তাঁর বোন আলিমা খানও গত সপ্তাহে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত বুধবার আদিয়ালা জেলের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ‘আমরা গত ৮ মাস ধরে এখানে আসছি। প্রতি মঙ্গলবার আমরা এখানে এসে বসে থাকি। আমাদের ইমরান খানের সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয় না। তারা তাকে নির্যাতন করছে। তাকে অবৈধভাবে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তাদের উচিত ইমরান খানের উপর এই নির্যাতন বন্ধ করা।’

উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইমরান খানকে ইচ্ছেমতো আটক রাখার কারণে পাকিস্তান সরকারের সমালোচনা করেছিল। তাঁরা জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইমরান খানের কারাদণ্ড স্পষ্টতই তাঁকে রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এপস্টাইন ফাইল: নতুন ছবিতে বিল ক্লিনটন ও বিল গেটসসহ প্রভাবশালী অনেকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২০
নতুন প্রকাশিত ছবিতে বিল ক্লিনটন ও বিল গেটসের মতো প্রভাবশালীদের দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত
নতুন প্রকাশিত ছবিতে বিল ক্লিনটন ও বিল গেটসের মতো প্রভাবশালীদের দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

যৌন পাচারকারী জেফরি এপস্টাইনের এস্টেট থেকে হাউস ডেমোক্র্যাটদের প্রকাশিত ১৯টি নতুন ছবিতে দেখা গেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর পূর্বসূরি বিল ক্লিনটন এবং ব্রিটেনের সাবেক রাজপুত্র অ্যান্ড্রুকে। ২০১৯ সালে যৌন পাচারের অভিযোগে জেল হেফাজতে থাকাকালে এপস্টাইনের মৃত্যু হয়। সেই এস্টেট থেকে হাউস ওভারসাইট কমিটি ৯৫ হাজার ছবি হাতে পেয়েছে। এর মধ্য থেকে প্রথম ধাপে ১৯টি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকাশিত ছবিগুলোতে কোনো ক্যাপশন বা প্রেক্ষাপট না থাকলেও এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সাদা-কালো ছবিতে তাঁকে ছয়জন নারীর সঙ্গে দেখা গেছে। যদিও ট্রাম্প একসময় এপস্টাইনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, তবে যৌন পাচারের অভিযোগ ওঠার অনেক আগেই তিনি এপস্টাইন থেকে দূরত্ব তৈরি করেন বলে জানা যায়।

এ ছাড়া ছবিগুলোতে স্টিভ ব্যানন, বিল গেটস, রিচার্ড ব্র্যানসন, হার্ভার্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামারস এবং আইনজীবী অ্যালান ডারশোভিৎজ-সহ আরও বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দেখা গেছে। অন্য একটি ছবিতে ট্রাম্পের ক্যারিক্যাচার (ব্যঙ্গচিত্র) এবং ‘I’m HUUUUGE!’ লেখাসহ কনডমের একটি বাটি দেখা যায়, যার পাশে ‘$ 4.50’ মূল্যের একটি সাইনও রয়েছে।

এর আগে অবশ্য এপস্টাইনের ব্যক্তিগত জেটে ভ্রমণ করার কথা স্বীকার করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তবে তাঁর মুখপাত্রের মাধ্যমে তিনি জানান, এপস্টাইনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। অন্যদিকে এপস্টাইনের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার পর প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাঁর রাজকীয় উপাধি ও বিশেষাধিকার হারিয়েছেন; যদিও তিনি কোনো ভুল করার কথা অস্বীকার করেছেন।

ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছে, বিচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত মামলার নথিপত্রের বাইরে এই ছবিগুলো প্রকাশের ফলে এপস্টাইন তদন্তে নথি প্রকাশে ট্রাম্প প্রশাসনের আগের অনীহার বিপরীতে চাপ বাড়ানো সম্ভব হবে।

ওভারসাইট কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট রবার্ট গার্সিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউসের এই লুকোচুরির সমাপ্তি ঘটানোর এবং জেফরি এপস্টাইন ও তাঁর ক্ষমতাধর বন্ধুদের শিকার হওয়া মানুষদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার সময় এসেছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই ছবিগুলো এপস্টাইন এবং বিশ্বের কিছু ক্ষমতাধর পুরুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলেছে। আমরা সত্য প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত থামব না। বিচার বিভাগকে অবিলম্বে সব নথি প্রকাশ করতে হবে।’

উল্লেখ্য, রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি ইতিমধ্যে এপস্টাইন এস্টেট থেকে পাওয়া হাজার হাজার নথি, ই-মেইল এবং কথোপকথন প্রকাশ করেছে। সেই ই-মেইলগুলোতে এপস্টাইন দাবি করেছেন, ট্রাম্প এপস্টাইনের অন্যতম প্রধান অভিযোগকারী ভার্জিনিয়া জিওফ্রির (প্রয়াত) সঙ্গে ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছেন’। ট্রাম্প ‘মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন’। যদিও তরুণীদের প্রলুব্ধ করে বেআইনি কাজে ব্যবহার করার কারণে এপস্টাইনকে তাঁর মার-এ-লাগো ক্লাব থেকে বের করে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লাতিন আমেরিকাজুড়ে শিগগির ‘স্থল অভিযান’ শুরু করবেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০০
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ অংশ হিসেবে লাতিন আমেরিকায় মাদক চক্রগুলোর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তাঁর এই ঘোষণা মূলত এই অঞ্চলে সামরিক পদক্ষেপ সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেয়। তবে তিনি কখন বা কোথায় আক্রমণ শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করেননি।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম চোশুন ইলবোর খবরে বলা হয়েছে, গতকাল ১২ ডিসেম্বর ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সমুদ্রপথে প্রবেশকারী ৯৬ শতাংশ মাদক আটকে দিয়েছি। আমরা এখন স্থল অভিযান শুরু করব, আর স্থলভাগ অনেক সহজ। এটি শিগগির ঘটবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর বা যুদ্ধ মন্ত্রণালয় (মিনিস্ট্রি অব ওয়ার) সেপ্টেম্বর থেকে ভেনেজুয়েলার নিকটবর্তী ক্যারিবীয় সাগর এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরসহ লাতিন আমেরিকার অন্যান্য উপকূলীয় জলসীমায় ‘মাদক পরিবহনকারী জাহাজ’ হিসেবে চিহ্নিত জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে আসছে। এতে বিপুল প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

এর আগে গত আগস্টে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ‘বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মাদক পাচারকারী’র তকমা দেন ট্রাম্প। তাঁকে আটকের তথ্যের জন্য পুরস্কার ২৫ মিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০ মিলিয়ন ডলার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প সমুদ্রপথের চাপ ছাড়াও বারবার স্থল অভিযানের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও আগে এই ধরনের মন্তব্য মাদুরো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। ট্রাম্প এবার বলেছেন যে স্থল হামলা শুধু ভেনেজুয়েলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য যে ভেনেজুয়েলাই হতে হবে, এমনটি নয়। যারা আমাদের দেশে মাদক নিয়ে আসে, তাদের সবাইকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।’

ট্রাম্প প্রশাসন মাদক সমস্যাকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে দেখছে এবং মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইকে কার্যত একটি ‘যুদ্ধ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সামরিক পদক্ষেপের বৈধতা বারবার তুলে ধরেছে। ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, যদি মাদকের অতিরিক্ত মাত্রায় মৃত্যুর সংখ্যাকে যুদ্ধের হতাহতের মতো করে গণনা করা হয়; তবে ‘এটি একটি তুলনাহীন যুদ্ধ হবে।’

ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে স্থল হামলা চালাবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্য এর আগে ‘সামরিক অভিযানের জন্য সুস্পষ্ট আইনি ভিত্তির অভাব’ উল্লেখ করেছেন। ব্লুমবার্গ মূল্যায়ন করেছে যে ‘স্থল হামলা লাতিন আমেরিকান অঞ্চলে পরিস্থিতির গুরুতর বৃদ্ধি বোঝাবে।’

এই বিষয়ে মাদুরো বলেছেন, ‘যদি আমরা কোনো বিদেশি আক্রমণের মুখোমুখি হই, তবে শ্রমিক শ্রেণিকে সাধারণ ধর্মঘট ও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আরও উগ্র বিপ্লব অনুসরণ করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতেই হতে পারে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, সেনা প্রস্তুত করছে ইন্দোনেশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৫
১৫ মাসের সামরিক অভিযানে গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ। ফাইল ছবি
১৫ মাসের সামরিক অভিযানে গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ। ফাইল ছবি

আগামী বছরের শুরুর দিকেই গাজায় জাতিসংঘ অনুমোদিত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই বাহিনীতে যোগ দিতে সেনা প্রস্তুত করতে শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আগামী মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক সেনা মোতায়েন করা হতে পারে, যারা জাতিসংঘের অনুমোদিত একটি স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠন করবে। তবে ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্র করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী হামাসের সঙ্গে লড়াই করবে না। তাঁরা বলেন, বহু দেশ এতে অবদান রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং মার্কিন কর্মকর্তারা বর্তমানে এই বাহিনীর আকার, কাঠামো, বাসস্থান, প্রশিক্ষণ এবং নিয়মাবলি নিয়ে কাজ করছেন।

কর্মকর্তারা জানান, গাজার জন্য আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর পরিকল্পনা করতে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে দোহায় অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে একটি সম্মেলনের আয়োজন করবে। তাঁরা বলেন, ২৫টির বেশি দেশ এই সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে নেতৃত্ব কাঠামো এবং গাজা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

কর্মকর্তারা জানান, একজন আমেরিকান টু-স্টার জেনারেলকে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এই বাহিনী মোতায়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রথম ধাপে দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে ১০ অক্টোবর একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি শুরু হয় এবং হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে ও ইসরায়েল আটক ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে দিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের জন্য বর্তমানে পর্দার আড়ালে অনেক নীরবে পরিকল্পনা চলছে। আমরা একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে চাই।’

এদিকে ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে—তারা গাজায় স্বাস্থ্য ও নির্মাণ-সংক্রান্ত কাজের জন্য ২০ হাজার পর্যন্ত সৈন্য মোতায়েন করতে প্রস্তুত। ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রিকো সিরাইত বলেন, ‘এটি এখনো পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে।’

‘আমরা এখন মোতায়েন করা বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তুত করছি।’

ইসরায়েল এখনো গাজার ৫৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাকি হামাস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাস করে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এই পরিকল্পনার অনুমোদন দেবে তথাকথিত বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ। এই বাহিনী বর্তমানে ইসরায়েলের দখলে থাকা এলাকায় মোতায়েন করা হবে। এরপর ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা অনুসারে আন্তর্জাতিক এই বাহিনী নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করলে ইসরায়েলি সেনারা ‘নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত মানদণ্ড, মাইলফলক এবং সময়সীমার ভিত্তিতে’ ধীরে ধীরে সরে যাবে।

১৭ নভেম্বর গৃহীত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব বোর্ড অব পিস এবং এর সঙ্গে কাজ করা দেশগুলোকে আইএসএফ প্রতিষ্ঠা করার অনুমোদন দিয়েছে। ট্রাম্প বুধবার বলেছেন, কোন বিশ্বনেতারা ‘বোর্ড অব পিসে’ থাকবেন, তা আগামী বছরের শুরুতে ঘোষণা করা হবে।

নিরাপত্তা পরিষদ আইএসএফকে নতুন প্রশিক্ষিত ও পরীক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করে নিরাপত্তা স্থিতিশীল করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে ‘গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার মাধ্যমে, যার মধ্যে সামরিক, সন্ত্রাসী এবং আক্রমণাত্মক পরিকাঠামো ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণ প্রতিরোধ, সেই সঙ্গে অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে অস্ত্রের স্থায়ীভাবে অপসারণও অন্তর্ভুক্ত।’

তবে এটি ঠিক কীভাবে কাজ করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বৃহস্পতিবার উল্লেখ করেছেন, আইএসএফকে নিরাপত্তা পরিষদ গাজাকে ‘সমস্ত প্রয়োজনীয় উপায়ে’ নিরস্ত্রীকরণের জন্য অনুমোদন দিয়েছে, যার অর্থ বলপ্রয়োগ।

তবে হামাস জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি আলোচনা করেনি এবং গোষ্ঠীটির অবস্থান হলো, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা নিরস্ত্র হবে না।

বিপরীতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপটি নিরস্ত্রীকরণ এবং অস্ত্র প্রত্যাহারের দিকে এগোবে।

তিনি বলেন, ‘এখন একটি প্রশ্ন উঠেছে: আমেরিকায় আমাদের বন্ধুরা এই কাজটি করার জন্য একটি বহুজাতিক টাস্ক ফোর্স প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতে চায়।’

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, আমি এটিকে স্বাগত জানাই। এখানে কি স্বেচ্ছাসেবকেরা আছেন? আসতে পারেন। আমরা জানি, এই বাহিনী কিছু নির্দিষ্ট কাজ করতে পারে...কিন্তু কিছু জিনিস তাদের ক্ষমতার বাইরে এবং সম্ভবত মূল কাজটি তাদের ক্ষমতার বাইরে; তবে আমরা তা দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত