Ajker Patrika

সংকটের মধ্যেও আসছে উচ্চাশার বাজেট

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ১৬ মে ২০২৪, ১২: ১১
সংকটের মধ্যেও আসছে উচ্চাশার বাজেট

অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে এসে ঠেকেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। ডলারের দর একলাফে ৭ টাকা বাড়ানোর পর খোলাবাজারে ডলার আরও দুষ্প্রাপ্য হয়েছে। আমদানি কড়াকড়ির কারণে ব্যবসায় চলছে স্লথগতি। ফলে রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি পড়ছে। তহবিলসংকটে ঠিকমতো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে ডলারে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি শোধের। ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফও বাজেট প্রণয়নে সরকারকে চাপে রেখেছে। এমন একটি সময়ে প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্ত, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের পর্যালোচনা থেকে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, অর্থনীতির নানা সংকটেও সরকার ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে বড় বাজেটই করতে যাচ্ছে। ফলে আসছে বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর বর্তমান বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বর্তমানটির চেয়ে আসছে বাজেটের আকার বেড়েছে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। নতুন বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে কর রাজস্ব থেকে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরে ঘাটতির কারণে ২০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়। ফলে সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে সরকারের ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার কর রাজস্ব আদায় করার কথা।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা চাই ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট। আশা করি সরকার সে রকমই একটি বাজেট দেবে। বাজেট এমন হওয়া উচিত, যাতে সরকারও রাজস্ব পায়, আবার আমাদের শিল্পও সুরক্ষিত থাকে।’

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর পর্যাপ্ত তহবিলসংকট ও খরচে কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কাটছাঁট করা হয়। তারপরও কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন হয়নি। আসছে অর্থবছরেও সরকার প্রয়োজনের বাইরে কোনো প্রকল্প অনুমোদন দিতে চায় না। এমনকি বড় বড় প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রেও রক্ষণশীলতা বজায় রাখা হবে। এমন বাস্তবতায় আসছে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগের এডিপি থেকে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে নতুন এডিপিতে। তবে বিশ্লেষকেরা জানান, বিদ্যমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটিও বড় এডিপি। এর বাস্তবায়ন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। আর নতুন বাজেটের জন্য মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৬ শতাংশ। বিশ্লেষকেরা জানান, প্রবৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির দুটি লক্ষ্য অর্জনও কঠিন। কারণ সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে ধীরগতি চলছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দেওয়া ও টাকার প্রবাহ কমাতে কড়াকড়ি আরোপ করে রেখেছে। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। তাই প্রবৃদ্ধির গতি বাড়বে এমনটিও ভাবার কারণ নেই। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতিও কোনোভাবেই কমছে না। উল্টো বাড়ছে। ফলে সামনে মূল্যস্ফীতি কমে সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে আসবে এমনটিও মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা। তাঁরা জানান, সম্প্রতি ডলারের দর বাড়ানোর ফলে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের পণ্য আমদানির খরচ আরেক দফা বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটিও বাজারে পণ্যের দামে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

জানা যায়, আসছে বাজেটে যেসব লক্ষ্য ধরা হয়েছে, এর প্রতিটিই উচ্চাভিলাষী। কারণ বড় বাজেট বাস্তবায়নের জন্য যে তহবিল সরকার পরিকল্পনা করছে, তার জোগান দেওয়া চ্যালেঞ্জের। রাজস্ব আদায় হচ্ছে না ঠিকমতো। প্রতিবছরই বড় রাজস্ব লক্ষ্য শেষ পর্যন্ত কাটছাঁট করে ছোট করা হয়। সেটিও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় না। আর এবার যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হচ্ছে। আইএমএফের শর্ত মেনে বিভিন্ন খাতের করছাড় কমানো হচ্ছে। এর ফলে এমন সব খাতের কর অবকাশ উঠে যাবে, যার ফলে শিল্পগুলোর প্রসার বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কর্মসংস্থানও সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক পণ্যে আসছে বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, আইএমএফের চাপে পণ্য আমদানিতে শূন্য শুল্ক প্রথা তুলে দেওয়ার পথে রয়েছে এনবিআর। গুটি কয়েক বিশেষ অত্যাবশ্যক বিবেচনায় শূন্য শুল্ক থাকলেও বেশির ভাগ পণ্যেই এবার শুল্ক বসতে পারে। ফলে এসব পণ্য বাজারে এলে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা ভোক্তার ঘাড়েই পড়বে।

এসব ব্যাপারে এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাজস্ব আয়ের স্বার্থে আইএমএফের কিছু কিছু পরামর্শ ভালো। যারা করছাড় নিয়ে নিজেদের সক্ষম করে তুলতে পেরেছে, তাদের বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তবে ঢালাও কর অবকাশ তুলে দেওয়ার বিষয়টি কিছু কিছু শিল্পের প্রসার কমিয়ে দেবে। এতে কর্মসংস্থান কমে যাবে। তা ছাড়া ব্যক্তির ন্যূনতম কর এবার না বসালেই ভালো।

এনবিআরের শুল্ক ও ভ্যাট শাখার সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান পাটোয়ারি বলেন, রাজস্ব আদায় করতে হলে সরকারকে কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর নতুন সরকারের প্রথম দিকেই এসব সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেদিক থেকে আসছে বাজেটে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে রাজস্বের জন্য ইতিবাচক হবে। তবে পুরো কর আদায়ের কৌশল যেন ব্যবসা-বিনিয়োগবান্ধব হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিসিআইয়ের সাধারণ সভা: ভ্যাট ও করকাঠামো যুক্তিসংগত করার দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ভ্যাট ও করকাঠামোকে আরও যুক্তিসংগত করার দাবি তুলেছে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে যুক্ত উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। পাশাপাশি, সকল শিল্প এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহকে নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে উৎপাদন কার্যক্রম বাধাহীনভাবে চলতে পারে।

গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁরা বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, শিল্পের প্রতিযোগিতা বজায় রাখা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া অত্যাবশ্যক।

সভায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের উৎপাদনশীল শিল্পকে শক্তিশালী রাখতে সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখা, সুষ্ঠু উৎপাদন ও কার্যক্রম নিশ্চিত করতে মসৃণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। আয়বৈষম্য কমানো এবং টেকসই এমএসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ ও শিল্পের যৌথ উদ্যোগ অপরিহার্য। বিসিআই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করছে, যাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, শিল্প প্রতিযোগিতামূলক থাকে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভ্যাট ও করকাঠামো সহজ, উদ্যোক্তাবান্ধব ও উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে লক্ষ্য করেই তৈরি হওয়া উচিত। তাঁরা আরও বলেন, পণ্য টেস্টিং এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়াকে উদ্যোক্তাবান্ধব করা, নতুন উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপের সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি। এসব পদক্ষেপ দেশীয় শিল্পে নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতা ধরে রাখবে।

সভায় শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং সাবেক সভাপতি এ টি এম ওয়াজিউল্লাহর জন্য। এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। সভা পরিচালনা করেন বিসিআই সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. হেলাল উদ্দিন। সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, বিগত ৩৮তম সাধারণ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিসিআই কার্যক্রম ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অডিটেড হিসাব অনুমোদন এবং নতুন অডিটর নিয়োগের বিষয়ও অনুমোদিত হয়। সভায় অংশ নেন বিসিআই সদস্য ও সাবেক নেতা শাহেদুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের যে আশঙ্কাজনক উত্থান ঘটেছে, তার সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়ছে গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তায়। নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুরক্ষাকাঠামোই কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘাটতি অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং খাতের সংকট কেবল সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং এর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়বে সাধারণ গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষার ওপর, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২৪টি ব্যাংকে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বিপরীতে এসব ব্যাংক রাখতে পেরেছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এতে সম্মিলিত সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।

এক বছর আগের সেপ্টেম্বরে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা (২ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি)। ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এই প্রবণতা স্বাভাবিক কোনো আর্থিক চক্রের ফল নয়; এটি দীর্ঘদিন ধরে আড়াল করে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রকৃত চিত্র সামনে আসার পরিণতি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পালাবদলের পর ব্যাংকিং খাতে পুনর্গঠিত, পুনঃ তফসিলকৃত, অবলোপনকৃত ও আদালতে আটকে থাকা ঋণসহ মোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মোট অঙ্ক প্রায় সাড়ে ১০ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং মন্দমানের কুঋণ ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি মানে সরাসরি আমানতকারীর ঝুঁকি। তাঁর মতে, গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ব্যাংক এমন অবস্থায় আছে, তারা ন্যূনতম সঞ্চিতিও গড়ে তুলতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সময়মতো প্রভিশন না রাখতে পারলে সেই ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ হওয়া উচিত।

ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী, সাধারণ শ্রেণির ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা লোকসান শ্রেণির খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, কম আমানত প্রবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক আর্থিক সংকটে ব্যাংকগুলোর সেই সক্ষমতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, খেলাপি ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দ্রুত বৃদ্ধিই প্রভিশন ঘাটতির মূল কারণ। সরকারের পালাবদলের পর এসব ঝুঁকি প্রকাশ্যে আসায় ব্যাংকিং খাতের ভেতরের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ডাইনামিক প্রভিশনিং চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এই ডাইনামিক প্রভিশনিং চালু হলে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়বে, মূলধনের চাপ কমবে এবং কুঋণ হ্রাস পেলে প্রভিশন ঘাটতিও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেবিএস হোল্ডিংসের ফ্ল্যাট কিনলে বিশেষ ছাড় পাবেন প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

প্রাইম ব্যাংক পিএলসি দেশের শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।

সম্প্রতি জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই অংশীদারত্বের আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা পাবেন, যা তাঁদের দেশের প্রিমিয়াম রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ আরও সহজলভ্য করবে।

চুক্তিতে প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন মামুর আহমেদ এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল হক।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেটস জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মো. বেলায়েত হোসেনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের লাইফস্টাইলভিত্তিক মানসম্পন্ন সেবা ও আর্থিক সমাধান প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, যা গ্রাহকদের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুনরায় বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবার নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। তিনি আম্বার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং দেশের টেক্সটাইল শিল্পে একজন উদ্যোক্তা।

গত ২৫ নভেম্বর বিটিএমএর গুলশান কার্যালয়ে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিটিএমএ।

এতে বলা হয়, বিটিএমএর তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্টও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. শামীম ইসলাম, ফ্যাব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. আবুল কালাম ও টেক্সটাইল প্রোডাক্ট প্রসেসের ক্যাটাগরি থেকে শফিকুল ইসলাম সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত