Ajker Patrika

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় অর্থায়ন স্থগিত করল যেসব দেশ

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ০৫
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় অর্থায়ন স্থগিত করল যেসব দেশ

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কর্মীদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় সংস্থাটিতে অর্থায়ন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিমা বেশ কয়েকটি দেশ। তহবিল স্থগিতের সিদ্ধান্তে শীর্ষ দাতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দিয়ে দেশগুলো বলেছে, ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় অর্থায়ন দেওয়ার মাধ্যমে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলায় ইউএনআরডব্লিউএর একাধিক কর্মী জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সংস্থাটির কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি সাংবাদিকদের এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, সংস্থাটি ইতিমধ্যে অভিযোগ আসা কর্মীদের চাকরিচ্যুত করেছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলায় ইউএনআরডব্লিউএর বেশ কয়েকজন কর্মী জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। সংস্থার মানবিক সহায়তা প্রদানের সক্ষমতা রক্ষা করতে আমি এই সদস্যদের সঙ্গে অবিলম্বে চুক্তি বাতিল করার এবং সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য শিগগিরই তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

যুক্তরাজ্য সরকার এ প্রসঙ্গে বলেছে, তারা ইসরায়েলের অভিযোগে শঙ্কিত। ইউরোপের এই দেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড জাতিসংঘের এই সংস্থাকে অর্থায়ন স্থগিত করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ২৭ সদস্যের ব্লকটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে আরও পদক্ষেপের নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে।

আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে অবশ্য ইউএনআরডব্লিউএর প্রতি অব্যাহত সমর্থন প্রকাশ করে বলেছে যে, সংস্থাটি গাজায় বাস্তুচ্যুত এবং মানবিকভাবে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সংস্থাটির ১২ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। গাজায় ইউএনআরডব্লিউএর ১৩ হাজার কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় সবাই ফিলিস্তিনি স্কুলের শিক্ষক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং ত্রাণকর্মী।

২০২২ সালে ইউএনআরডব্লিউএর শীর্ষস্থানীয় দাতাদের মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। সংস্থাটি বারবারই বলে আসছে, গাজায় তাদের মানবিক সহায়তা পরিচালনার সক্ষমতা ফুরিয়ে আসছে।

জাতিসংঘের সংস্থাটির প্রতি যেসব দেশ সমর্থন বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তাদের প্রশংসা করেছে ইসরায়েল। গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ফিলিস্তিনে সংস্থাটির কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে চায় বলেও জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির পর লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় ফিলিস্তিনিদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক পরিষেবা এবং চাকরি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালে কার্যক্রম শুরু করে ইউএনআরডব্লিউএ। সংস্থাটি গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ার ফিলিস্তিনিদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রদান করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুরো ইউক্রেন দখলের পরিকল্পনা বাদ দেননি পুতিন: মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনার তোড়জোড় চললেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর মূল লক্ষ্য থেকে একচুলও সরে আসেননি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, পুতিন এখনো পুরো ইউক্রেন দখল এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছেন।

গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে পরিচিত ছয়টি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর শান্তি আলোচকেরা বারবার দাবি করছেন, পুতিন এই যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী। তবে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার সময় পুতিনের যে লক্ষ্য ছিল, তা এখনো অপরিবর্তিত। তিনি কেবল ইউক্রেন নয়, বরং ন্যাটোর জোটভুক্ত বাল্টিক দেশগুলো ও পোল্যান্ডের মতো অঞ্চলের জন্যও হুমকি।

ট্রাম্প প্রশাসন চলমান যুদ্ধের ইতি টানার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বশেষ প্রতিবেদন (সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ প্রস্তুতকৃত) বলছে, পুতিন দীর্ঘমেয়াদি আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এদিকে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বর্তমানে ইউক্রেন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ২০ দফার একটি শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন।

সম্প্রতি বার্লিনে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ইউক্রেনকে ন্যাটোর বাইরে কিন্তু ‘আর্টিকেল ৫’-এর মতো শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর অধীনে ইউক্রেনের সীমান্তে ইউরোপীয় বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে। পাশাপাশি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে সেনার সংখ্যা সর্বোচ্চ ৮ লাখে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব রয়েছে, তবে রাশিয়া একে আরও কমানোর দাবি তুলছে।

আলোচনার সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দখল করা ভূখণ্ড। অভিযোগ উঠেছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে দনবাসের অন্য অংশ (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) থেকে সেনা সরিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছেন।

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেন কোনোভাবেই তাদের সার্বভৌম ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে তুলে দেবে না। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা গ্যারান্টি বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তার উত্তর এখনো আমি পাইনি।’

মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে বড় কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না এবং বর্তমানে তাদের সেই সক্ষমতাও নেই। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্বীকার করেছেন, পুতিন কি সত্যিই চুক্তি করতে চান, না পুরো দেশ দখল করতে চান—তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ধনী খদ্দেরদের জন্য কিশোরীদের যেভাবে বাছাই করতেন এপস্টেইন—উঠে এল এফবিআইয়ের তদন্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেফরি এপস্টেইন। ছবি: এএফপি
জেফরি এপস্টেইন। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গত শুক্রবার যে নথিগুলো প্রকাশ করেছে, তাতে জেফরি এপস্টেইনের যৌন নিপীড়নের জন্য মানুষ পাঠিয়ে কীভাবে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে জোগাড় করতেন, তার বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে। তদন্ত নথিগুলো এপস্টেইন ও তাঁর সহযোগীদের কর্মকাণ্ডের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। বিশেষ করে তরুণী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের তাঁকে সরবরাহ করার প্রক্রিয়া এতে স্পষ্ট হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, নথিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কালে বিচার বিভাগের দীর্ঘদিন ধরে প্রতীক্ষিত প্রকাশনার অংশ। তবে এই প্রকাশনা আংশিক এবং ব্যাপকভাবে সম্পাদিত হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে।

প্রকাশিত নথিগুলোর মধ্যে একটি নথি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। নথিটির নম্বর ইএফটিএ–০০০০৪১৭৯। এতে রয়েছে এফবিআইয়ের একটি প্রমাণ-সংক্রান্ত কভার শিট এবং ১৩ পৃষ্ঠার হাতে লেখা তদন্ত নোট। ২০১৯ সালের ২ মে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এসব নোট তৈরি করা হয়। সাক্ষাৎকারদাতার পরিচয় এবং নথির কিছু অংশ গোপন রাখা হয়েছে।

তবে নোটগুলোতে কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে মেয়েদের নিয়োগ, ‘ম্যাসাজ’-এর আড়ালে যৌন নিপীড়ন এবং বয়স ও গায়ের রং নিয়ে এপস্টেইনের নির্দিষ্ট পছন্দ। নোট অনুযায়ী সাক্ষী বলেন, ‘ (এই অংশ মুছে ফেলা হয়েছে)–এর বন্ধুদের বন্ধু। বড় ব্রাজিলিয়ান গ্রুপ। খুবই মরিয়া সময় যাচ্ছে। মেয়েদের সংখ্যা ফুরিয়ে আসছিল।’ নোটে জেফরি এপস্টেইনকে ‘জেই’ আদ্যক্ষরে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই তথাকথিত ‘মরিয়া সময়ে’ একজন ‘বাদামি ত্বকের ডমিনিকান’ মেয়েকে আনা হয়েছিল। কিন্তু নোটে বলা হয়েছে, ‘জেই স্প্যানিশ বা গাঢ় রঙের মেয়ে চায়নি।’ যিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের এপস্টেইনের কাছে নিয়ে আসতেন, তাঁর পরিচয় নথিতে গোপন রাখা হয়েছে। ওই ব্যক্তি এপস্টেইনকে জানান, তিনি তাঁর জন্য ‘তরুণী মেয়েদের’ নিয়ে আসছেন। তবে এপস্টেইন অভিযোগ করেন, ‘হ্যাঁ, কিন্তু বাদামি রঙের না।’

সাক্ষী জানান, তিনি নিশ্চিত নন এপস্টেইন ওই জোগাড়দারকে কোনো অর্থ দিয়েছিলেন কি না। তবে মেয়েটিকে অর্থ দেওয়া হয়েছিল। নোটে আরও উল্লেখ আছে, একটি বাথরুমে ঘটে যাওয়া ঘটনার। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘বাথটাবের কাছে স্তন ও যোনি…সে শাওয়ারে ঢুকে পড়ে এবং তাকে বলে, সে যেন এমন মেয়েদের না আনে যাদের সে পছন্দ করে না…তাকে বলে, খুঁজে যেতে।’

আরও বলা হয়, ‘একপর্যায়ে (নাম মুছে ফেলা হয়েছে) তাকে একটি মেয়ের পরিচয়পত্র চাইতে দেখেছে।’ নোট অনুযায়ী, এপস্টেইন নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন মেয়েটি ১৮ বছরের নিচে কি না। কারণ আগে বেশি বয়সী মেয়েদের আনার ঘটনায় তাঁর আস্থা নষ্ট হয়েছিল।

নোটে সাক্ষী যৌন নিপীড়নের বিবরণও দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, এপস্টেইন ‘অদ্ভুত শব্দ করতেন’ এবং ভুক্তভোগীদের ‘রূঢ়ভাবে’ স্পর্শ করতেন। নথিটিতে কয়েকজন মেয়ের ছবি সংযুক্ত রয়েছে। নোট অনুযায়ী, তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। ছবিগুলোতে তাদের শহরের বিভিন্ন জায়গায় এবং সৈকতে বিকিনিতে দেখা যায়। নোটে নিউইয়র্কের একাধিক স্থানের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে আছে ম্যানহাটনের ৪১ তম স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট, রচেস্টার, ব্রাইটন বিচ এবং একটি হাইস্কুল প্রম।

সাক্ষীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে নোটে থাকা তথ্য এপস্টেইনের ব্রাজিলের শিশুদের প্রতি আগ্রহের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। ফেডারেল অভিযোগপত্রে ‘মাইনর ভিকটিম–১’ হিসেবে চিহ্নিত ব্রাজিলের অভিবাসী মারিনা লাসেরদা ছিলেন মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তিনি গত সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলেন। তিনি জানান, ১৪ বছর বয়স থেকে এপস্টেইনের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। তিনি আরও বলেন, এপস্টেইনের সঙ্গে তিনি একাধিকবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখেছেন। তবে ট্রাম্প এপস্টেইনের কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতেন বলে অস্বীকার করেছেন।

লাসেরদার সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই শেষ পর্যন্ত এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে এপস্টেইন আত্মহত্যা করেন। এপস্টেইনের সহযোগী জ্যাঁ-লুক ব্রুনেল, যিনি তাঁর অর্থায়নে একটি মডেলিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ২০২২ সালে ফ্রান্সে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পাচার ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি এপস্টেইনের জন্য এক হাজারের বেশি মেয়ে ও তরুণী সরবরাহ করেছিলেন।

২০১৯ সালের এপ্রিলে ব্রুনেল ব্রাজিলের একটি মডেলিং এজেন্সিতে যান, যেটির সঙ্গে তাঁর কোম্পানির আগে কাজ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন মডেল পাঠানোর উদ্দেশ্যেই এই সফর করা হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এপস্টেইনের মৃত্যুর পর তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দণ্ডিত ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েলকেও ব্রাজিলের রিভিয়েরা এলাকায় দেখা গেছে বলে জানা যায়। ২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্যারিসের একটি কারাগারে জ্যাঁ-লুক ব্রুনেল আত্মহত্যা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কবিরাজিসহ প্রথাগত চিকিৎসার কার্যকারিতা খতিয়ে দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকায় ভেষজ চিকিৎসকেরা ক্ষত বা ব্যথা উপশমে গাছগাছড়া সংগ্রহ করছেন; চীনে আকুপাংচার বিশেষজ্ঞরা সুচ ব্যবহার করে মাইগ্রেন সারাচ্ছেন; আবার ভারতে যোগীরা ধ্যানচর্চা করছেন—এ ধরনের প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো ক্রমেই কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে এবং এগুলো আরও বেশি মনোযোগ ও গবেষণার দাবি রাখে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক কর্মকর্তা।

ডব্লিউএইচওর গ্লোবাল ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন সেন্টারের প্রধান ডা. শ্যামা কুরুবিল্লার মতে, ঐতিহাসিকভাবে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবের কারণে যেসব প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিকে অনেক সময় অবহেলা করা হয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ বাড়লে সেই ধারণা বদলাতে পারে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শুরুতে বিভিন্ন দেশ সম্মত হয়েছে যে আগামী এক দশকের জন্য ডব্লিউএইচও একটি নতুন বৈশ্বিক প্রথাগত চিকিৎসা কৌশল গ্রহণ করবে।

এই কৌশলের লক্ষ্য—প্রমাণভিত্তিকভাবে স্বাস্থ্য ও কল্যাণে প্রথাগত, পরিপূরক ও সমন্বিত চিকিৎসার সম্ভাবনাময় অবদানকে কাজে লাগানো।

এই কৌশলের আওতায় প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য শক্তিশালী প্রমাণভিত্তি তৈরি, চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তোলা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এসব পদ্ধতিকে আধুনিক জৈব-চিকিৎসাভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কুরুবিল্লা বলেন, ‘এটা ভীষণ রোমাঞ্চকর। আমি বলছি না, আমরা এখনই জানি—কোনটা কাজ করে আর কোনটা করে না। তবে এ মুহূর্তে বিষয়টি জানার বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

প্রথাগত চিকিৎসা বলতে এমন স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেগুলোর উদ্ভব আধুনিক বায়োমেডিসিনের আগেই হয়েছে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতির ধরন নানাবিধ—ভেষজ চা থেকে শুরু করে ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যন্ত।

কুরুবিল্লা বলেন, শত শত বছর ধরে চলে আসা এসব পদ্ধতির মধ্যে অনেকগুলোরই বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জিনোমিক্স ও মস্তিষ্ক স্ক্যানসহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন সেগুলো নতুনভাবে অনুসন্ধান করা সম্ভব।

তাঁর মতে, প্রথাগত চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড ভালো উদাহরণ। দেশটিতে গবেষকেরা প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ ও নথিবদ্ধ করছেন এবং ভেষজ চিকিৎসাকে প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। গত মে মাসে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পেশির ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্যসহ কিছু রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আধুনিক ওষুধের বদলে প্রথাগত চিকিৎসা ব্যবহারের সুপারিশ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত