Ajker Patrika

কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন: সিঙ্গাপুর বনাম বাংলাদেশ

কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন: সিঙ্গাপুর বনাম বাংলাদেশ

গণতন্ত্র নিয়ে আমাদের দেশে একধরনের আদিখ্যেতা আছে। আমরা কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলি বটে, তবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি আমাদের প্রকৃত আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ কতটুকু, সে প্রশ্ন করাই যায়। আমাদের কাছে গণতন্ত্র হলো পাঁচ বছর পর ভোট দিতে পারা।

ভোট দিয়ে কাউকে জিতিয়ে বা কাউকে হারিয়ে দিতে পারলেই আমরা খুশি। যাঁদের আমরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করি, তাঁরা আচার-আচরণে কতটুকু গণতান্ত্রিক তা আর আমাদের দেখার বিষয় নয়। দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলকে দেখুন। দল পরিচালনায় গণতন্ত্রের তেমন চর্চা আছে কি? দলের সম্মেলন নিয়মিত হয় না। নির্ধারিত সময়ের পরে যদিওবা সম্মেলন হয়, কিন্তু কমিটি গঠন হয় না। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা চেয়ারপারসন ও মহাসচিব নির্বাচন করে পুরো কমিটি গঠনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় দিনের পর দিন।

সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা হয় না কেন? দলীয় সভাগুলোতে দলপ্রধানের ইচ্ছার বাইরে কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কি গ্রহণ করা হয়? আলোচনা হয়, বিভিন্ন জন ভিন্ন ভিন্ন মত দেন এবং তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় দলীয় প্রধানের ওপর। এটা কেমন গণতন্ত্র? আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্র হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে বিএনপি ক্লান্তিহীন। বিএনপি কবে, কীভাবে গণতন্ত্রকে উজ্জীবিত করেছে, সে প্রশ্ন করা যাবে না। মোটাদাগে আমাদের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গণতন্ত্র মানে একে অপরের লাগামহীন বিরোধিতা করা। বিএনপি গণতন্ত্র বলতে বোঝে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো। আর আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র হলো বিএনপিকে যেকোনোভাবে প্রতিরোধ করা।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই দলই কার্যত শক্তি প্রয়োগের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। ভোটের মাঠেও কিন্তু এই শক্তির প্রতিযোগিতাই বড় হয়ে ওঠে। একসময় রাজনৈতিক দলগুলোতে কিছুটা হলেও নীতি-আদর্শের প্রতিযোগিতা ছিল। দিন দিন সেটা কমে আসছে। এখন প্রতিযোগিতা অর্থের। আগে রাজনীতিবিদেরা ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা নিয়ে দল চালালেও ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত হতেন না। কারণ মনে করা হতো রাজনীতি ও ব্যবসা এক নয়। ব্যবসার মূল লক্ষ্য মুনাফা আর রাজনীতির মূল লক্ষ্য ছিল জনকল্যাণ। এখন রাজনীতিই হয়েছে ব্যবসা। তাই ব্যবসায়ীরা আর চাঁদা দিয়ে মন্ত্রী লালনপালন না করে নিজেরাই মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে যোগ দিয়েছেন।

জনকল্যাণ এখন আর রাজনীতির লক্ষ্য নয়। রাজনীতির লক্ষ্য ক্ষমতা আর ক্ষমতা মানেই দুর্নীতি। এই যে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের লুটপাটের বিরুদ্ধে এত গলা ফাটাচ্ছে, এটা কি এ জন্য যে তারা ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করবে? না, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়।

তারা ক্ষমতার বাইরে থাকায় বড় ধরনের দুর্নীতি করতে পারছে না। এখন মনোনয়ন দিয়ে কিংবা দলের পদ বিক্রি করে সবাই তো দুর্নীতি করতে পারছে না। কিন্তু ক্ষমতায় থাকলে এখন আওয়ামী লীগের কেউ কেউ যেমন বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন, তেমনি বিএনপির লোকজনও হতে চান। সে জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে যেকোনো উপায়ে টেনে নামানোর জন্য বিএনপির এত আকুলতা। কেউ যদি মনে করে থাকেন, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য কিংবা দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার জন্য, তাহলে ভুল ভাবছেন।

প্রতিযোগিতাটা ভালো হওয়ার জন্য নয়। প্রতিযোগিতা হচ্ছে, ওরা খেয়ে খেয়ে পেট ফুলিয়ে ঢোল করছে, আর আমরা না খেয়ে কেমন হালকা-পাতলা হয়ে ঘুরছি।

খাওয়া না-খাওয়া ও পাওয়া না-পাওয়ার লড়াই শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি করছে, তা কিন্তু নয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরও কিন্তু এই লড়াই চলছে। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থেকেও যাঁরা ভাগ্য বদলাতে পারেননি, না-পাওয়া, না-খাওয়ার দলে আছেন, এখন তাঁরা পাওয়া, খাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নির্বাচন এলে প্রার্থী হওয়ার জন্য এখন লোকের অভাব হয় না। একজনকে মনোনয়ন দিলে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যান।

এরপর শুরু হয় টাকার খেলা। এই যে সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলো, অনেকটাই একতরফা ও পাতানো নির্বাচন, অথচ কত কাণ্ডই না ঘটল। আওয়ামী লীগের চিরবৈরী বিএনপি নির্বাচনে ছিল না। এরপরও কেন্দ্র দখল, জাল ভোট কি হয়নি? ‘আমরা আর মামুরা’ মিলে যে প্রতিযোগিতা, তাতেও অভিযোগের শেষ নেই। পরাজিত হলেই কারচুপি আর জিতলে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন।

কেউ হারতে না চাইলে গণতন্ত্র কীভাবে সংহত হবে? ভোটের জন্য, অর্থাৎ ভোটের অধিকারের জন্য এখন অনেকেই কত আলাপ-বিলাপ করছেন। ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ যদি আবার বাধামুক্ত হয়, তাহলে কি দেশে মানুষের আর কোনো সমস্যা-সংকট থাকবে না? ঘুষ-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি থাকবে না? শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে? নাকি আওয়ামী লীগের খারাপের বদলে বিএনপির খারাপটা মেনে নেওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হবে?

আমাদের একটি প্রবণতা হলো এক দলের শাসন বছরের পর বছর চললে বিরক্ত লাগে। সে জন্য আমরা শাসক দল বদলাতে চাই কিন্তু অব্যবস্থা বদলাতে চাই না। গণতন্ত্র সীমিত হোক কিন্তু শাসনটা ভালো হোক, অন্যায় অনিয়ম কমুক—এ কথা জোর দিয়ে বলার মুরোদ কিংবা সাহস আমাদের অনেকেরই নেই।

অথচ মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ কিংবা সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান—দুজনই উদার গণতন্ত্রের পথ পরিহার করে লিমিটেড ডেমোক্রেসি, অর্থাৎ সীমিত গণতন্ত্রের পথেই হেঁটেছেন। তাঁরা অর্থনীতির ক্ষেত্রে উদার ছিলেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে ছিলেন অনুদার। কিন্তু তাতে কি এমন ক্ষতি হয়েছে? বরং সিঙ্গাপুরে এখন তিন হাজার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সদর দপ্তর, অন্যদিকে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গণতন্ত্রের নিট ফলাফল হচ্ছে ঢাকায় একটিও মাল্টিন্যাশনালের হেড অফিস নেই। সিঙ্গাপুরে লি কুয়ানের সময়ে বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের চর্চা হলে দেশটি আরও কত দূর এগিয়ে যেত অথবা পিছিয়ে পড়ত, সে কথা না বলে অন্তত এটুকু তো বলা যায়—গণতন্ত্রের চর্চা করে আমরাই কর্মসংস্থানের জন্য ওই দেশে যাচ্ছি, ওরা আমাদের দেশে আসছে না।

প্রাকৃতিক সম্পদহীন একটি বন্দর-রাষ্ট্রের যে চোখধাঁধানো সমৃদ্ধি, এর মূলে রয়েছে লি কুয়ানের বাস্তববাদিতা, গণতন্ত্র বলি আর একনায়কতন্ত্র বা কর্তৃত্ববাদই বলি—বাস্তববাদিতাই আসল কথা। বাস্তববাদিতার কারণে গণতন্ত্রচর্চা ছাড়াই এশিয়ায়, বিশেষ করে চীন ও তাইওয়ান তরতর করে এগিয়ে গেছে। এরা হয়তো ভেবে দেখেছে, গণতন্ত্রে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক প্রক্রিয়ার দরকার হয়, তাতে বিলম্ব ঘটে।আবার ভোট-রাজনীতি করতে হয় বলে জনকল্যাণকর অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না; তাই সীমিত গণতন্ত্রই আমাদের ভালো।

প্রশ্ন উঠতেই পারে, সীমিত গণতন্ত্র আবার কী? গণতন্ত্র তো অখণ্ড। সীমিত গণতন্ত্র বোধ হয় এমন তন্ত্র, যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে না এমন নয়, তবে সুশাসনের পথে যিনি বাধা হয়ে উঠতে চাইবেন, তাঁকে প্রতিহত করা হবে।

আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক বলে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান তাঁর শাসনকালের গোড়া থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর এবং অনমনীয়। কোনো ধরনের অনিয়মকে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, কঠোর শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে অগ্রসর না হলে, আইন বা ব্যবস্থা মেনে না চললে একটি দেশ উন্নত হতে পারে না, সভ্য হতে পারে না। সিঙ্গাপুরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো সুযোগ নেই।
লি তাঁর সহযোগীদেরও এতটুকু ছাড় দিতেন না। উপযুক্ত, দক্ষ, বিষয়-অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। তাঁদের পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা দেওয়া হতো। বিনিময়ে তাঁদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হতো শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে।

লির এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তেহ চেয়াং ওয়ানকে জাতীয় উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী ছিলেন। তেহর বিরুদ্ধে শেষ দিকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠলে তিনি লিকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা বা দুর্নীতি দমন সংস্থা যেন একটু নমনীয়তা দেখায়।

লি তাঁর বন্ধু এবং সহকর্মী তেহকে বলেছিলেন, তদন্ত সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাকে সে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে সিস্টেম ভেঙে পড়বে। আর সিস্টেম একবার ভেঙে পড়লে, সিঙ্গাপুরও আর অগ্রসর হবে না। তেহ যা বোঝার বুঝে নিয়েছিলেন। বাসায় ফিরে একটি সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেছিলেন ১৯৮৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর। নোটে নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিজেই নিজের সর্বোচ্চ শাস্তি বেছে নেওয়ার কথা লিখেছিলেন।

প্রিয় সহযোদ্ধার এই পরিণতিতে বেদনাবিদ্ধ হলেও লি তাঁর শোকবাণীতে বলেছিলেন, দেশের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে মন্ত্রী হলেই কারও আইন, বিচার বা তদন্ত-প্রক্রিয়ার বাইরে থাকার অধিকার তৈরি হয় না। তেহর প্রতি তিনি নমনীয়তা দেখালে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ত।

তাতে হয়তো তেহর জীবন কিছুটা দীর্ঘ হতো, কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়ত সিঙ্গাপুরের শাসনব্যবস্থা। ব্যক্তির প্রতি আবেগ বা ভালোবাসা না দেখিয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর দৃঢ়তা দেখাতে পেরেছিলেন বলেই লির সিঙ্গাপুর একটি ছোট্ট দেশ হয়েও বড় দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে।

আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তেমন কঠোর মনোভাব দেখাতে পারবে? বিএনপি বা অন্য কোনো দলের কিংবা নির্দলের সরকার পারবে? আমরা বিরুদ্ধ মত বন্ধ করতে কঠোরতা দেখাই আর দুর্নীতি-অনিয়মের প্রতি উদারতা দেখাই। মানুষের অভিজ্ঞতা তিক্ত বলেই এখন পরিবর্তনের হাওয়ায় তারা উন্মাতাল হয়ে ওঠে না।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত