এম এম আকাশ

বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মতভেদ চলছে। এই মতভেদকে সাধারণত দুইভাবে দেখা হয়। কেউ কেউ একে আদর্শগত দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ একে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা রক্ষার বিরোধ হিসেবে দেখেন। দুইভাবেই দেখা যেতে পারে। দুটির মধ্যেই আংশিক সত্য রয়েছে। কোন অংশটা প্রধান তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে এবং ঐতিহাসিক কারণে তা অস্বাভাবিক নয়। পঁচাত্তরের আগে-পরে আওয়ামী লীগের আদর্শ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার মাত্রা অবশ্যই এক রকম নয়। আবার জিয়া-উত্তর খালেদা-তারেকের নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং অতীতের জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিও এক রকম নয়।
সুতরাং গতির মধ্যেই দল দুটির বিচার করা উচিত। তবে তারপরও আমরা বর্তমান মুহূর্তে এসে দেখব যে তাদের পার্থক্যগুলো ক্রমেই কমে এসেছে, কমতে কমতে তা এখন অধিকাংশ মানুষের চোখে ক্ষমতা রক্ষা ও ক্ষমতা দখলের পার্থক্যে পর্যবসিত হয়েছে। যদিও কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে বা বিশেষ প্রশ্নে মন্দের ভালো কে, তা নিয়ে চুলচেরা অনেক বিতর্ক থাকতে পারে।
আদর্শ হিসেবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিএনপির ইতিহাসের থেকে আলাদা। আওয়ামী লীগ দীর্ঘকালের পুরোনো দল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে, যদিও তখনো আওয়ামী লীগে কনফেডারেশন ও আমেরিকাপন্থী একটি শক্তি উপস্থিত ছিল। অন্যদিকে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পরে সামরিক চ্যানেলের মধ্য থেকে জন্ম নিয়েছে এবং তারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আদর্শ হিসেবে ধারণ করে। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ বলতে আসলে কোন জাতীয়তাবাদকে বোঝানো হচ্ছে, তা অস্পষ্ট।
‘বংগ’ নামে একটি বৃহৎ এলাকা আদিকাল থেকেই বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও নানা ঐতিহ্যসম্পন্ন নৃগোষ্ঠী-অধ্যুষিত অঞ্চল। এই অঞ্চল ১৯৭১ সালে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পর এর নাগরিকেরা তাঁদের পাসপোর্টে নিজেদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। সুতরাং ‘বাংলাদেশি’ শব্দটি নাগরিকত্বের সূচক, জাতীয়তার সূচক নয়। তবে এই যুক্তি মেনে নিলে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে বিভিন্ন জাতির পার্থক্যের স্বীকৃতিও দিতে হবে। বাংলাদেশকে বহুজাতিক দেশ হিসেবে মেনে বিভিন্ন জাতিসত্তার ন্যায্য অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদ হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ; যা রাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে, আবার রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও পার্থক্য মেনে নিতে পারে। এ জন্য কেউ ভারতের নাগরিক হয়েও বাঙালি হতে পারেন। আবার কেউ বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও অবাঙালি হতে পারেন। নাগরিকত্ব রাষ্ট্রীয় আইনের ওপর নির্ভরশীল এবং কোনো কোনো রাষ্ট্রের আইনে একাধিক নাগরিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য প্রবাসী বাঙালিদের বাঙালি ও বাংলাদেশি দুটো পরিচয়ই সত্য ধরা হয় এবং বাংলাদেশে তাঁদের ভোটাধিকার আছে। তবে আলাদাভাবে জাতীয়তা নির্ধারিত হয় ভাষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইত্যাদি অনেক কিছুর ঐতিহাসিক বিবর্তন ও সমপাতন দ্বারা।সেই হিসেবে ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জাতিগতভাবে বাঙালি বা অন্য কোনো জাতির সদস্য হতে পারেন। একক নাগরিক পরিচিতি যেমন নানা জাতি দ্বারা গঠিত হতে পারে, তেমনি একক জাতীয় পরিচিতির মধ্যেও নানা দেশের নাগরিক থাকতে পারেন।
‘যুদ্ধাপরাধী’দের বিচারের প্রশ্নে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, গণজাগরণ মঞ্চ হচ্ছে নাস্তিকদের মঞ্চ। অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চকে তখন আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল। যদিও সেখানে তাদের কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। সেই সমর্থনের কারণেই ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অনেক স্বাধীনতাবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী এখনো বহাল তবিয়তে আমাদের আশপাশে আছেন, যাঁরা আইনের দৃষ্টিতে ক্রিমিনাল নন এবং সেই অর্থে প্রত্যক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়তো করেননি, কিন্তু মনেপ্রাণে স্বাধীনতাবিরোধী বা ‘পাকিস্তানপন্থী’ রয়ে গেছেন।
একসময়ের চীনপন্থী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মুসলিম লীগপন্থী অনেকেই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। স্বাধীনতার পর যখন বিএনপি তৈরি হলো, তখন তাঁদের অনেকেই বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হন। একসময় পাকিস্তানের মিত্র চীনের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। চীনের সঙ্গে তখন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা ছিল না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, চীনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।
বিএনপির সঙ্গে হয়তো এখন চীনের এতটা ঘনিষ্ঠতা নেই। কারণ, চীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পদ্মা সেতুসহ অনেক মেগা প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। তবে সাবেক চীনপন্থীরা এখন নানা দলে বিভক্ত হয়ে কেউ আওয়ামী সমর্থক, কেউবা বিএনপির সমর্থক, কেউ কেউ আবার পৃথক দল বানিয়ে আওয়ামী সমর্থক হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলই বর্তমানে সরাসরি চীনের বিরোধিতা করছে না।
অন্যদিকে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের শক্তিশালী একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের পক্ষে রাখতে চাইছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, আমেরিকা তাঁকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। সুতরাং মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব এই মুহূর্তে বাড়ার দিকে। এখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বাধীনতাসংগ্রামের বন্ধু ভারতের দূরত্ব বেড়েছে কি না, তেমন একটি প্রশ্নও উঠে আসে। এটা ঠিক যে বিএনপি যখন প্রথম ক্ষমতায় ছিল, তখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব বেড়েছিল; বিশেষ করে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের দ্বন্দ্ব ছিল।
ভারত একসময় মনে করত, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘সাত রাজ্য’ এলাকায় যেসব ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আন্দোলন রয়েছে, তাদের জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে এনে আশ্রয় দেবেন। একই সঙ্গে আমরা পরবর্তী সময়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথাও জানি। নিজস্ব স্বার্থ বিবেচনা করলে ভারত হয়তো এখনো বাংলাদেশে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না; বরং আওয়ামী লীগকেই দেখতে চাইবে। বিএনপি অবশ্য ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতকে এখন শত্রু না বলে নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখতে চায় (ভারত সম্পর্কে বিএনপির শেষ বিবৃতি দ্রষ্টব্য)
শুধু ইতিহাস ও বৈদেশিক নীতি নয়, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থান অভ্যন্তরীণ জাতীয় প্রশ্নেও পৃথক। এসব কারণে অনেকেই এটাকে বলেন আদর্শগত মৌলিক বিরোধ। কিন্তু আমি এটাকে মৌলিক শ্রেণি-বিরোধ হিসেবে দেখি না। কারণ যে মৌলিক অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে একটি সরকারের শ্রেণিচরিত্র নির্ধারিত হয়, সেটি উভয়েরই এক। তারা উভয়েই বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে এবং বর্তমানে দুটি দল যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই হচ্ছেন বড় ব্যবসায়ী, ধনিক শ্রেণির সদস্য।
মধ্যবিত্ত স্তরের মানুষ তাঁদের দলে প্রচুর পরিমাণে থাকলেও তাঁরা তাঁদের দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন না অথবা এবং একে অনিবার্য বলে মেনে নিয়েছেন। ‘মিশ্র অর্থনীতি’, ‘কল্যাণ পুঁজিবাদ’ বা ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ এসব কথা আওয়ামী মহলে আগে অনেক উচ্চারিত হলেও এখন তা উচ্চারিত হচ্ছে না। এখন প্রবৃদ্ধি ও অবাধ বাজারই আওয়ামী লীগের মূল ভাবাদর্শ, সেটা বিএনপিরও বটে। দুই দলের মূল পরিচালক শক্তিও হচ্ছে সেই বড় ধনী পরিবারগুলো, রাষ্ট্রীয় ধনতন্ত্রের গর্ভেই যাদের জন্ম এবং এখনো রাষ্ট্রক্ষমতাকে আশ্রয় করেই টিকে আছে ও বিকশিত হতে চাইছে। তাই রাষ্ট্রক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তাদের রয়েছে একধরনের নিরন্তর প্রতিযোগিতা।
সম্প্রতি আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে বড় ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথাই জোরের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। এটা পরিষ্কার যে ব্যবসায়ীরা সব সময় চান সরকার তাঁদের অনুকূলে থাকুক।কারণ আমাদের এখানে মূলত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুঁজিবাদ (স্টেট স্পন্সরড ক্যাপিটালিজম) গড়ে উঠেছে। এর বৈশিষ্ট্য হলো ত্রিভুজ ক্ষমতাকাঠামো। ত্রিভুজ ক্ষমতাকাঠামো হলো সুযোগসন্ধানী ‘অসৎ ব্যবসায়ী’, ‘অসৎ রাজনীতিবিদ’ ও ‘অসৎ আমলাদের’ একটি যোগসাজশ (নেক্সাস)। সত্যিকার অর্থে তাঁরাই দেশ চালান।
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে-ই সরকারে থাকুক না কেন এই ক্ষমতাকাঠামো একই থাকবে। কারণ তাঁরাই অর্থ সরবরাহ বা বিনিয়োগ করে দলগুলোকে চালান। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্বটা তাই বহুলাংশে ক্ষমতা রক্ষা করার এবং ক্ষমতা দখল করার দ্বন্দ্ব। এটা নতুন কিছু নয়। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও এ জন্যই ধনপতি হেনরি ফোর্ড বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট যে-ই জিতুক না কেন, আমি কখনো হারি না।’
ধর্মীয় ইস্যুতেও বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য কমে গেছে। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো—ইসলামপন্থী দলগুলোকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের পক্ষে নিয়ে আসা এবং নিজেকে এমনকি ‘কওমি জননী’ হিসেবে তুলে ধরা। এখন উভয় দলের সাধারণ সমর্থকের মধ্যে নানা মৌলিক নীতিগত বিষয়ে পার্থক্য খুঁজে বের করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
দুটি দলের সাধারণ অসচেতন সমর্থকদের মধ্যে এখন দৃশ্যমান পার্থক্য হলো—একদল শুধু বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম প্রচার করে, আরেক দল শুধু জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম প্রচার করে। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মনে করেন, অতীতে আদর্শের ছিটেফোঁটা যা-ই থাকুক না কেন বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বটি দুটি ‘টোটেম’ নিয়ে দুটি ট্রাইবের ঝগড়ায় পরিণত হয়েছে।এটা এত বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে যে রাজনৈতিক যুদ্ধে জয়-পরাজয়টা বর্তমানে জীবন-মরণ সমস্যায় এবং বৈরিতামূলক গোত্রীয় দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে দুটি দলের জন্যই। এ ক্ষেত্রে তাই সহজে কোনো মীমাংসা হবে না।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ

বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মতভেদ চলছে। এই মতভেদকে সাধারণত দুইভাবে দেখা হয়। কেউ কেউ একে আদর্শগত দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ একে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা রক্ষার বিরোধ হিসেবে দেখেন। দুইভাবেই দেখা যেতে পারে। দুটির মধ্যেই আংশিক সত্য রয়েছে। কোন অংশটা প্রধান তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে এবং ঐতিহাসিক কারণে তা অস্বাভাবিক নয়। পঁচাত্তরের আগে-পরে আওয়ামী লীগের আদর্শ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার মাত্রা অবশ্যই এক রকম নয়। আবার জিয়া-উত্তর খালেদা-তারেকের নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং অতীতের জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিও এক রকম নয়।
সুতরাং গতির মধ্যেই দল দুটির বিচার করা উচিত। তবে তারপরও আমরা বর্তমান মুহূর্তে এসে দেখব যে তাদের পার্থক্যগুলো ক্রমেই কমে এসেছে, কমতে কমতে তা এখন অধিকাংশ মানুষের চোখে ক্ষমতা রক্ষা ও ক্ষমতা দখলের পার্থক্যে পর্যবসিত হয়েছে। যদিও কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে বা বিশেষ প্রশ্নে মন্দের ভালো কে, তা নিয়ে চুলচেরা অনেক বিতর্ক থাকতে পারে।
আদর্শ হিসেবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিএনপির ইতিহাসের থেকে আলাদা। আওয়ামী লীগ দীর্ঘকালের পুরোনো দল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে, যদিও তখনো আওয়ামী লীগে কনফেডারেশন ও আমেরিকাপন্থী একটি শক্তি উপস্থিত ছিল। অন্যদিকে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পরে সামরিক চ্যানেলের মধ্য থেকে জন্ম নিয়েছে এবং তারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আদর্শ হিসেবে ধারণ করে। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ বলতে আসলে কোন জাতীয়তাবাদকে বোঝানো হচ্ছে, তা অস্পষ্ট।
‘বংগ’ নামে একটি বৃহৎ এলাকা আদিকাল থেকেই বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও নানা ঐতিহ্যসম্পন্ন নৃগোষ্ঠী-অধ্যুষিত অঞ্চল। এই অঞ্চল ১৯৭১ সালে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পর এর নাগরিকেরা তাঁদের পাসপোর্টে নিজেদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। সুতরাং ‘বাংলাদেশি’ শব্দটি নাগরিকত্বের সূচক, জাতীয়তার সূচক নয়। তবে এই যুক্তি মেনে নিলে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে বিভিন্ন জাতির পার্থক্যের স্বীকৃতিও দিতে হবে। বাংলাদেশকে বহুজাতিক দেশ হিসেবে মেনে বিভিন্ন জাতিসত্তার ন্যায্য অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদ হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ; যা রাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে, আবার রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও পার্থক্য মেনে নিতে পারে। এ জন্য কেউ ভারতের নাগরিক হয়েও বাঙালি হতে পারেন। আবার কেউ বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও অবাঙালি হতে পারেন। নাগরিকত্ব রাষ্ট্রীয় আইনের ওপর নির্ভরশীল এবং কোনো কোনো রাষ্ট্রের আইনে একাধিক নাগরিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য প্রবাসী বাঙালিদের বাঙালি ও বাংলাদেশি দুটো পরিচয়ই সত্য ধরা হয় এবং বাংলাদেশে তাঁদের ভোটাধিকার আছে। তবে আলাদাভাবে জাতীয়তা নির্ধারিত হয় ভাষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইত্যাদি অনেক কিছুর ঐতিহাসিক বিবর্তন ও সমপাতন দ্বারা।সেই হিসেবে ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জাতিগতভাবে বাঙালি বা অন্য কোনো জাতির সদস্য হতে পারেন। একক নাগরিক পরিচিতি যেমন নানা জাতি দ্বারা গঠিত হতে পারে, তেমনি একক জাতীয় পরিচিতির মধ্যেও নানা দেশের নাগরিক থাকতে পারেন।
‘যুদ্ধাপরাধী’দের বিচারের প্রশ্নে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, গণজাগরণ মঞ্চ হচ্ছে নাস্তিকদের মঞ্চ। অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চকে তখন আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল। যদিও সেখানে তাদের কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। সেই সমর্থনের কারণেই ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অনেক স্বাধীনতাবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী এখনো বহাল তবিয়তে আমাদের আশপাশে আছেন, যাঁরা আইনের দৃষ্টিতে ক্রিমিনাল নন এবং সেই অর্থে প্রত্যক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়তো করেননি, কিন্তু মনেপ্রাণে স্বাধীনতাবিরোধী বা ‘পাকিস্তানপন্থী’ রয়ে গেছেন।
একসময়ের চীনপন্থী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মুসলিম লীগপন্থী অনেকেই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। স্বাধীনতার পর যখন বিএনপি তৈরি হলো, তখন তাঁদের অনেকেই বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হন। একসময় পাকিস্তানের মিত্র চীনের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। চীনের সঙ্গে তখন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা ছিল না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, চীনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।
বিএনপির সঙ্গে হয়তো এখন চীনের এতটা ঘনিষ্ঠতা নেই। কারণ, চীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পদ্মা সেতুসহ অনেক মেগা প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। তবে সাবেক চীনপন্থীরা এখন নানা দলে বিভক্ত হয়ে কেউ আওয়ামী সমর্থক, কেউবা বিএনপির সমর্থক, কেউ কেউ আবার পৃথক দল বানিয়ে আওয়ামী সমর্থক হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলই বর্তমানে সরাসরি চীনের বিরোধিতা করছে না।
অন্যদিকে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের শক্তিশালী একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের পক্ষে রাখতে চাইছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, আমেরিকা তাঁকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। সুতরাং মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব এই মুহূর্তে বাড়ার দিকে। এখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বাধীনতাসংগ্রামের বন্ধু ভারতের দূরত্ব বেড়েছে কি না, তেমন একটি প্রশ্নও উঠে আসে। এটা ঠিক যে বিএনপি যখন প্রথম ক্ষমতায় ছিল, তখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব বেড়েছিল; বিশেষ করে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের দ্বন্দ্ব ছিল।
ভারত একসময় মনে করত, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘সাত রাজ্য’ এলাকায় যেসব ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আন্দোলন রয়েছে, তাদের জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে এনে আশ্রয় দেবেন। একই সঙ্গে আমরা পরবর্তী সময়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথাও জানি। নিজস্ব স্বার্থ বিবেচনা করলে ভারত হয়তো এখনো বাংলাদেশে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না; বরং আওয়ামী লীগকেই দেখতে চাইবে। বিএনপি অবশ্য ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতকে এখন শত্রু না বলে নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখতে চায় (ভারত সম্পর্কে বিএনপির শেষ বিবৃতি দ্রষ্টব্য)
শুধু ইতিহাস ও বৈদেশিক নীতি নয়, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থান অভ্যন্তরীণ জাতীয় প্রশ্নেও পৃথক। এসব কারণে অনেকেই এটাকে বলেন আদর্শগত মৌলিক বিরোধ। কিন্তু আমি এটাকে মৌলিক শ্রেণি-বিরোধ হিসেবে দেখি না। কারণ যে মৌলিক অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে একটি সরকারের শ্রেণিচরিত্র নির্ধারিত হয়, সেটি উভয়েরই এক। তারা উভয়েই বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে এবং বর্তমানে দুটি দল যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই হচ্ছেন বড় ব্যবসায়ী, ধনিক শ্রেণির সদস্য।
মধ্যবিত্ত স্তরের মানুষ তাঁদের দলে প্রচুর পরিমাণে থাকলেও তাঁরা তাঁদের দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন না অথবা এবং একে অনিবার্য বলে মেনে নিয়েছেন। ‘মিশ্র অর্থনীতি’, ‘কল্যাণ পুঁজিবাদ’ বা ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ এসব কথা আওয়ামী মহলে আগে অনেক উচ্চারিত হলেও এখন তা উচ্চারিত হচ্ছে না। এখন প্রবৃদ্ধি ও অবাধ বাজারই আওয়ামী লীগের মূল ভাবাদর্শ, সেটা বিএনপিরও বটে। দুই দলের মূল পরিচালক শক্তিও হচ্ছে সেই বড় ধনী পরিবারগুলো, রাষ্ট্রীয় ধনতন্ত্রের গর্ভেই যাদের জন্ম এবং এখনো রাষ্ট্রক্ষমতাকে আশ্রয় করেই টিকে আছে ও বিকশিত হতে চাইছে। তাই রাষ্ট্রক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তাদের রয়েছে একধরনের নিরন্তর প্রতিযোগিতা।
সম্প্রতি আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে বড় ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথাই জোরের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। এটা পরিষ্কার যে ব্যবসায়ীরা সব সময় চান সরকার তাঁদের অনুকূলে থাকুক।কারণ আমাদের এখানে মূলত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুঁজিবাদ (স্টেট স্পন্সরড ক্যাপিটালিজম) গড়ে উঠেছে। এর বৈশিষ্ট্য হলো ত্রিভুজ ক্ষমতাকাঠামো। ত্রিভুজ ক্ষমতাকাঠামো হলো সুযোগসন্ধানী ‘অসৎ ব্যবসায়ী’, ‘অসৎ রাজনীতিবিদ’ ও ‘অসৎ আমলাদের’ একটি যোগসাজশ (নেক্সাস)। সত্যিকার অর্থে তাঁরাই দেশ চালান।
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে-ই সরকারে থাকুক না কেন এই ক্ষমতাকাঠামো একই থাকবে। কারণ তাঁরাই অর্থ সরবরাহ বা বিনিয়োগ করে দলগুলোকে চালান। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্বটা তাই বহুলাংশে ক্ষমতা রক্ষা করার এবং ক্ষমতা দখল করার দ্বন্দ্ব। এটা নতুন কিছু নয়। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও এ জন্যই ধনপতি হেনরি ফোর্ড বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট যে-ই জিতুক না কেন, আমি কখনো হারি না।’
ধর্মীয় ইস্যুতেও বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য কমে গেছে। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো—ইসলামপন্থী দলগুলোকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের পক্ষে নিয়ে আসা এবং নিজেকে এমনকি ‘কওমি জননী’ হিসেবে তুলে ধরা। এখন উভয় দলের সাধারণ সমর্থকের মধ্যে নানা মৌলিক নীতিগত বিষয়ে পার্থক্য খুঁজে বের করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
দুটি দলের সাধারণ অসচেতন সমর্থকদের মধ্যে এখন দৃশ্যমান পার্থক্য হলো—একদল শুধু বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম প্রচার করে, আরেক দল শুধু জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম প্রচার করে। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মনে করেন, অতীতে আদর্শের ছিটেফোঁটা যা-ই থাকুক না কেন বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বটি দুটি ‘টোটেম’ নিয়ে দুটি ট্রাইবের ঝগড়ায় পরিণত হয়েছে।এটা এত বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে যে রাজনৈতিক যুদ্ধে জয়-পরাজয়টা বর্তমানে জীবন-মরণ সমস্যায় এবং বৈরিতামূলক গোত্রীয় দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে দুটি দলের জন্যই। এ ক্ষেত্রে তাই সহজে কোনো মীমাংসা হবে না।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ
এম এম আকাশ

বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মতভেদ চলছে। এই মতভেদকে সাধারণত দুইভাবে দেখা হয়। কেউ কেউ একে আদর্শগত দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ একে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা রক্ষার বিরোধ হিসেবে দেখেন। দুইভাবেই দেখা যেতে পারে। দুটির মধ্যেই আংশিক সত্য রয়েছে। কোন অংশটা প্রধান তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে এবং ঐতিহাসিক কারণে তা অস্বাভাবিক নয়। পঁচাত্তরের আগে-পরে আওয়ামী লীগের আদর্শ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার মাত্রা অবশ্যই এক রকম নয়। আবার জিয়া-উত্তর খালেদা-তারেকের নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং অতীতের জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিও এক রকম নয়।
সুতরাং গতির মধ্যেই দল দুটির বিচার করা উচিত। তবে তারপরও আমরা বর্তমান মুহূর্তে এসে দেখব যে তাদের পার্থক্যগুলো ক্রমেই কমে এসেছে, কমতে কমতে তা এখন অধিকাংশ মানুষের চোখে ক্ষমতা রক্ষা ও ক্ষমতা দখলের পার্থক্যে পর্যবসিত হয়েছে। যদিও কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে বা বিশেষ প্রশ্নে মন্দের ভালো কে, তা নিয়ে চুলচেরা অনেক বিতর্ক থাকতে পারে।
আদর্শ হিসেবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিএনপির ইতিহাসের থেকে আলাদা। আওয়ামী লীগ দীর্ঘকালের পুরোনো দল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে, যদিও তখনো আওয়ামী লীগে কনফেডারেশন ও আমেরিকাপন্থী একটি শক্তি উপস্থিত ছিল। অন্যদিকে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পরে সামরিক চ্যানেলের মধ্য থেকে জন্ম নিয়েছে এবং তারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আদর্শ হিসেবে ধারণ করে। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ বলতে আসলে কোন জাতীয়তাবাদকে বোঝানো হচ্ছে, তা অস্পষ্ট।
‘বংগ’ নামে একটি বৃহৎ এলাকা আদিকাল থেকেই বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও নানা ঐতিহ্যসম্পন্ন নৃগোষ্ঠী-অধ্যুষিত অঞ্চল। এই অঞ্চল ১৯৭১ সালে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পর এর নাগরিকেরা তাঁদের পাসপোর্টে নিজেদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। সুতরাং ‘বাংলাদেশি’ শব্দটি নাগরিকত্বের সূচক, জাতীয়তার সূচক নয়। তবে এই যুক্তি মেনে নিলে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে বিভিন্ন জাতির পার্থক্যের স্বীকৃতিও দিতে হবে। বাংলাদেশকে বহুজাতিক দেশ হিসেবে মেনে বিভিন্ন জাতিসত্তার ন্যায্য অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদ হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ; যা রাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে, আবার রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও পার্থক্য মেনে নিতে পারে। এ জন্য কেউ ভারতের নাগরিক হয়েও বাঙালি হতে পারেন। আবার কেউ বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও অবাঙালি হতে পারেন। নাগরিকত্ব রাষ্ট্রীয় আইনের ওপর নির্ভরশীল এবং কোনো কোনো রাষ্ট্রের আইনে একাধিক নাগরিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য প্রবাসী বাঙালিদের বাঙালি ও বাংলাদেশি দুটো পরিচয়ই সত্য ধরা হয় এবং বাংলাদেশে তাঁদের ভোটাধিকার আছে। তবে আলাদাভাবে জাতীয়তা নির্ধারিত হয় ভাষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইত্যাদি অনেক কিছুর ঐতিহাসিক বিবর্তন ও সমপাতন দ্বারা।সেই হিসেবে ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জাতিগতভাবে বাঙালি বা অন্য কোনো জাতির সদস্য হতে পারেন। একক নাগরিক পরিচিতি যেমন নানা জাতি দ্বারা গঠিত হতে পারে, তেমনি একক জাতীয় পরিচিতির মধ্যেও নানা দেশের নাগরিক থাকতে পারেন।
‘যুদ্ধাপরাধী’দের বিচারের প্রশ্নে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, গণজাগরণ মঞ্চ হচ্ছে নাস্তিকদের মঞ্চ। অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চকে তখন আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল। যদিও সেখানে তাদের কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। সেই সমর্থনের কারণেই ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অনেক স্বাধীনতাবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী এখনো বহাল তবিয়তে আমাদের আশপাশে আছেন, যাঁরা আইনের দৃষ্টিতে ক্রিমিনাল নন এবং সেই অর্থে প্রত্যক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়তো করেননি, কিন্তু মনেপ্রাণে স্বাধীনতাবিরোধী বা ‘পাকিস্তানপন্থী’ রয়ে গেছেন।
একসময়ের চীনপন্থী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মুসলিম লীগপন্থী অনেকেই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। স্বাধীনতার পর যখন বিএনপি তৈরি হলো, তখন তাঁদের অনেকেই বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হন। একসময় পাকিস্তানের মিত্র চীনের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। চীনের সঙ্গে তখন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা ছিল না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, চীনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।
বিএনপির সঙ্গে হয়তো এখন চীনের এতটা ঘনিষ্ঠতা নেই। কারণ, চীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পদ্মা সেতুসহ অনেক মেগা প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। তবে সাবেক চীনপন্থীরা এখন নানা দলে বিভক্ত হয়ে কেউ আওয়ামী সমর্থক, কেউবা বিএনপির সমর্থক, কেউ কেউ আবার পৃথক দল বানিয়ে আওয়ামী সমর্থক হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলই বর্তমানে সরাসরি চীনের বিরোধিতা করছে না।
অন্যদিকে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের শক্তিশালী একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের পক্ষে রাখতে চাইছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, আমেরিকা তাঁকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। সুতরাং মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব এই মুহূর্তে বাড়ার দিকে। এখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বাধীনতাসংগ্রামের বন্ধু ভারতের দূরত্ব বেড়েছে কি না, তেমন একটি প্রশ্নও উঠে আসে। এটা ঠিক যে বিএনপি যখন প্রথম ক্ষমতায় ছিল, তখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব বেড়েছিল; বিশেষ করে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের দ্বন্দ্ব ছিল।
ভারত একসময় মনে করত, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘সাত রাজ্য’ এলাকায় যেসব ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আন্দোলন রয়েছে, তাদের জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে এনে আশ্রয় দেবেন। একই সঙ্গে আমরা পরবর্তী সময়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথাও জানি। নিজস্ব স্বার্থ বিবেচনা করলে ভারত হয়তো এখনো বাংলাদেশে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না; বরং আওয়ামী লীগকেই দেখতে চাইবে। বিএনপি অবশ্য ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতকে এখন শত্রু না বলে নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখতে চায় (ভারত সম্পর্কে বিএনপির শেষ বিবৃতি দ্রষ্টব্য)
শুধু ইতিহাস ও বৈদেশিক নীতি নয়, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থান অভ্যন্তরীণ জাতীয় প্রশ্নেও পৃথক। এসব কারণে অনেকেই এটাকে বলেন আদর্শগত মৌলিক বিরোধ। কিন্তু আমি এটাকে মৌলিক শ্রেণি-বিরোধ হিসেবে দেখি না। কারণ যে মৌলিক অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে একটি সরকারের শ্রেণিচরিত্র নির্ধারিত হয়, সেটি উভয়েরই এক। তারা উভয়েই বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে এবং বর্তমানে দুটি দল যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই হচ্ছেন বড় ব্যবসায়ী, ধনিক শ্রেণির সদস্য।
মধ্যবিত্ত স্তরের মানুষ তাঁদের দলে প্রচুর পরিমাণে থাকলেও তাঁরা তাঁদের দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন না অথবা এবং একে অনিবার্য বলে মেনে নিয়েছেন। ‘মিশ্র অর্থনীতি’, ‘কল্যাণ পুঁজিবাদ’ বা ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ এসব কথা আওয়ামী মহলে আগে অনেক উচ্চারিত হলেও এখন তা উচ্চারিত হচ্ছে না। এখন প্রবৃদ্ধি ও অবাধ বাজারই আওয়ামী লীগের মূল ভাবাদর্শ, সেটা বিএনপিরও বটে। দুই দলের মূল পরিচালক শক্তিও হচ্ছে সেই বড় ধনী পরিবারগুলো, রাষ্ট্রীয় ধনতন্ত্রের গর্ভেই যাদের জন্ম এবং এখনো রাষ্ট্রক্ষমতাকে আশ্রয় করেই টিকে আছে ও বিকশিত হতে চাইছে। তাই রাষ্ট্রক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তাদের রয়েছে একধরনের নিরন্তর প্রতিযোগিতা।
সম্প্রতি আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে বড় ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথাই জোরের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। এটা পরিষ্কার যে ব্যবসায়ীরা সব সময় চান সরকার তাঁদের অনুকূলে থাকুক।কারণ আমাদের এখানে মূলত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুঁজিবাদ (স্টেট স্পন্সরড ক্যাপিটালিজম) গড়ে উঠেছে। এর বৈশিষ্ট্য হলো ত্রিভুজ ক্ষমতাকাঠামো। ত্রিভুজ ক্ষমতাকাঠামো হলো সুযোগসন্ধানী ‘অসৎ ব্যবসায়ী’, ‘অসৎ রাজনীতিবিদ’ ও ‘অসৎ আমলাদের’ একটি যোগসাজশ (নেক্সাস)। সত্যিকার অর্থে তাঁরাই দেশ চালান।
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে-ই সরকারে থাকুক না কেন এই ক্ষমতাকাঠামো একই থাকবে। কারণ তাঁরাই অর্থ সরবরাহ বা বিনিয়োগ করে দলগুলোকে চালান। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্বটা তাই বহুলাংশে ক্ষমতা রক্ষা করার এবং ক্ষমতা দখল করার দ্বন্দ্ব। এটা নতুন কিছু নয়। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও এ জন্যই ধনপতি হেনরি ফোর্ড বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট যে-ই জিতুক না কেন, আমি কখনো হারি না।’
ধর্মীয় ইস্যুতেও বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য কমে গেছে। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো—ইসলামপন্থী দলগুলোকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের পক্ষে নিয়ে আসা এবং নিজেকে এমনকি ‘কওমি জননী’ হিসেবে তুলে ধরা। এখন উভয় দলের সাধারণ সমর্থকের মধ্যে নানা মৌলিক নীতিগত বিষয়ে পার্থক্য খুঁজে বের করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
দুটি দলের সাধারণ অসচেতন সমর্থকদের মধ্যে এখন দৃশ্যমান পার্থক্য হলো—একদল শুধু বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম প্রচার করে, আরেক দল শুধু জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম প্রচার করে। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মনে করেন, অতীতে আদর্শের ছিটেফোঁটা যা-ই থাকুক না কেন বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বটি দুটি ‘টোটেম’ নিয়ে দুটি ট্রাইবের ঝগড়ায় পরিণত হয়েছে।এটা এত বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে যে রাজনৈতিক যুদ্ধে জয়-পরাজয়টা বর্তমানে জীবন-মরণ সমস্যায় এবং বৈরিতামূলক গোত্রীয় দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে দুটি দলের জন্যই। এ ক্ষেত্রে তাই সহজে কোনো মীমাংসা হবে না।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ

বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মতভেদ চলছে। এই মতভেদকে সাধারণত দুইভাবে দেখা হয়। কেউ কেউ একে আদর্শগত দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ একে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা রক্ষার বিরোধ হিসেবে দেখেন। দুইভাবেই দেখা যেতে পারে। দুটির মধ্যেই আংশিক সত্য রয়েছে। কোন অংশটা প্রধান তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে এবং ঐতিহাসিক কারণে তা অস্বাভাবিক নয়। পঁচাত্তরের আগে-পরে আওয়ামী লীগের আদর্শ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার মাত্রা অবশ্যই এক রকম নয়। আবার জিয়া-উত্তর খালেদা-তারেকের নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং অতীতের জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিও এক রকম নয়।
সুতরাং গতির মধ্যেই দল দুটির বিচার করা উচিত। তবে তারপরও আমরা বর্তমান মুহূর্তে এসে দেখব যে তাদের পার্থক্যগুলো ক্রমেই কমে এসেছে, কমতে কমতে তা এখন অধিকাংশ মানুষের চোখে ক্ষমতা রক্ষা ও ক্ষমতা দখলের পার্থক্যে পর্যবসিত হয়েছে। যদিও কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে বা বিশেষ প্রশ্নে মন্দের ভালো কে, তা নিয়ে চুলচেরা অনেক বিতর্ক থাকতে পারে।
আদর্শ হিসেবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিএনপির ইতিহাসের থেকে আলাদা। আওয়ামী লীগ দীর্ঘকালের পুরোনো দল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে, যদিও তখনো আওয়ামী লীগে কনফেডারেশন ও আমেরিকাপন্থী একটি শক্তি উপস্থিত ছিল। অন্যদিকে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পরে সামরিক চ্যানেলের মধ্য থেকে জন্ম নিয়েছে এবং তারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আদর্শ হিসেবে ধারণ করে। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ বলতে আসলে কোন জাতীয়তাবাদকে বোঝানো হচ্ছে, তা অস্পষ্ট।
‘বংগ’ নামে একটি বৃহৎ এলাকা আদিকাল থেকেই বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও নানা ঐতিহ্যসম্পন্ন নৃগোষ্ঠী-অধ্যুষিত অঞ্চল। এই অঞ্চল ১৯৭১ সালে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পর এর নাগরিকেরা তাঁদের পাসপোর্টে নিজেদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। সুতরাং ‘বাংলাদেশি’ শব্দটি নাগরিকত্বের সূচক, জাতীয়তার সূচক নয়। তবে এই যুক্তি মেনে নিলে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে বিভিন্ন জাতির পার্থক্যের স্বীকৃতিও দিতে হবে। বাংলাদেশকে বহুজাতিক দেশ হিসেবে মেনে বিভিন্ন জাতিসত্তার ন্যায্য অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদ হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ; যা রাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে, আবার রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও পার্থক্য মেনে নিতে পারে। এ জন্য কেউ ভারতের নাগরিক হয়েও বাঙালি হতে পারেন। আবার কেউ বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও অবাঙালি হতে পারেন। নাগরিকত্ব রাষ্ট্রীয় আইনের ওপর নির্ভরশীল এবং কোনো কোনো রাষ্ট্রের আইনে একাধিক নাগরিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য প্রবাসী বাঙালিদের বাঙালি ও বাংলাদেশি দুটো পরিচয়ই সত্য ধরা হয় এবং বাংলাদেশে তাঁদের ভোটাধিকার আছে। তবে আলাদাভাবে জাতীয়তা নির্ধারিত হয় ভাষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইত্যাদি অনেক কিছুর ঐতিহাসিক বিবর্তন ও সমপাতন দ্বারা।সেই হিসেবে ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জাতিগতভাবে বাঙালি বা অন্য কোনো জাতির সদস্য হতে পারেন। একক নাগরিক পরিচিতি যেমন নানা জাতি দ্বারা গঠিত হতে পারে, তেমনি একক জাতীয় পরিচিতির মধ্যেও নানা দেশের নাগরিক থাকতে পারেন।
‘যুদ্ধাপরাধী’দের বিচারের প্রশ্নে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, গণজাগরণ মঞ্চ হচ্ছে নাস্তিকদের মঞ্চ। অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চকে তখন আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল। যদিও সেখানে তাদের কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। সেই সমর্থনের কারণেই ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অনেক স্বাধীনতাবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী এখনো বহাল তবিয়তে আমাদের আশপাশে আছেন, যাঁরা আইনের দৃষ্টিতে ক্রিমিনাল নন এবং সেই অর্থে প্রত্যক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়তো করেননি, কিন্তু মনেপ্রাণে স্বাধীনতাবিরোধী বা ‘পাকিস্তানপন্থী’ রয়ে গেছেন।
একসময়ের চীনপন্থী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মুসলিম লীগপন্থী অনেকেই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। স্বাধীনতার পর যখন বিএনপি তৈরি হলো, তখন তাঁদের অনেকেই বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হন। একসময় পাকিস্তানের মিত্র চীনের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। চীনের সঙ্গে তখন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা ছিল না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, চীনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।
বিএনপির সঙ্গে হয়তো এখন চীনের এতটা ঘনিষ্ঠতা নেই। কারণ, চীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পদ্মা সেতুসহ অনেক মেগা প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। তবে সাবেক চীনপন্থীরা এখন নানা দলে বিভক্ত হয়ে কেউ আওয়ামী সমর্থক, কেউবা বিএনপির সমর্থক, কেউ কেউ আবার পৃথক দল বানিয়ে আওয়ামী সমর্থক হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলই বর্তমানে সরাসরি চীনের বিরোধিতা করছে না।
অন্যদিকে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের শক্তিশালী একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের পক্ষে রাখতে চাইছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, আমেরিকা তাঁকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। সুতরাং মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব এই মুহূর্তে বাড়ার দিকে। এখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বাধীনতাসংগ্রামের বন্ধু ভারতের দূরত্ব বেড়েছে কি না, তেমন একটি প্রশ্নও উঠে আসে। এটা ঠিক যে বিএনপি যখন প্রথম ক্ষমতায় ছিল, তখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব বেড়েছিল; বিশেষ করে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের দ্বন্দ্ব ছিল।
ভারত একসময় মনে করত, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘সাত রাজ্য’ এলাকায় যেসব ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আন্দোলন রয়েছে, তাদের জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে এনে আশ্রয় দেবেন। একই সঙ্গে আমরা পরবর্তী সময়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথাও জানি। নিজস্ব স্বার্থ বিবেচনা করলে ভারত হয়তো এখনো বাংলাদেশে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না; বরং আওয়ামী লীগকেই দেখতে চাইবে। বিএনপি অবশ্য ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতকে এখন শত্রু না বলে নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখতে চায় (ভারত সম্পর্কে বিএনপির শেষ বিবৃতি দ্রষ্টব্য)
শুধু ইতিহাস ও বৈদেশিক নীতি নয়, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থান অভ্যন্তরীণ জাতীয় প্রশ্নেও পৃথক। এসব কারণে অনেকেই এটাকে বলেন আদর্শগত মৌলিক বিরোধ। কিন্তু আমি এটাকে মৌলিক শ্রেণি-বিরোধ হিসেবে দেখি না। কারণ যে মৌলিক অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে একটি সরকারের শ্রেণিচরিত্র নির্ধারিত হয়, সেটি উভয়েরই এক। তারা উভয়েই বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে এবং বর্তমানে দুটি দল যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই হচ্ছেন বড় ব্যবসায়ী, ধনিক শ্রেণির সদস্য।
মধ্যবিত্ত স্তরের মানুষ তাঁদের দলে প্রচুর পরিমাণে থাকলেও তাঁরা তাঁদের দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন না অথবা এবং একে অনিবার্য বলে মেনে নিয়েছেন। ‘মিশ্র অর্থনীতি’, ‘কল্যাণ পুঁজিবাদ’ বা ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ এসব কথা আওয়ামী মহলে আগে অনেক উচ্চারিত হলেও এখন তা উচ্চারিত হচ্ছে না। এখন প্রবৃদ্ধি ও অবাধ বাজারই আওয়ামী লীগের মূল ভাবাদর্শ, সেটা বিএনপিরও বটে। দুই দলের মূল পরিচালক শক্তিও হচ্ছে সেই বড় ধনী পরিবারগুলো, রাষ্ট্রীয় ধনতন্ত্রের গর্ভেই যাদের জন্ম এবং এখনো রাষ্ট্রক্ষমতাকে আশ্রয় করেই টিকে আছে ও বিকশিত হতে চাইছে। তাই রাষ্ট্রক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তাদের রয়েছে একধরনের নিরন্তর প্রতিযোগিতা।
সম্প্রতি আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে বড় ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথাই জোরের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। এটা পরিষ্কার যে ব্যবসায়ীরা সব সময় চান সরকার তাঁদের অনুকূলে থাকুক।কারণ আমাদের এখানে মূলত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুঁজিবাদ (স্টেট স্পন্সরড ক্যাপিটালিজম) গড়ে উঠেছে। এর বৈশিষ্ট্য হলো ত্রিভুজ ক্ষমতাকাঠামো। ত্রিভুজ ক্ষমতাকাঠামো হলো সুযোগসন্ধানী ‘অসৎ ব্যবসায়ী’, ‘অসৎ রাজনীতিবিদ’ ও ‘অসৎ আমলাদের’ একটি যোগসাজশ (নেক্সাস)। সত্যিকার অর্থে তাঁরাই দেশ চালান।
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে-ই সরকারে থাকুক না কেন এই ক্ষমতাকাঠামো একই থাকবে। কারণ তাঁরাই অর্থ সরবরাহ বা বিনিয়োগ করে দলগুলোকে চালান। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্বটা তাই বহুলাংশে ক্ষমতা রক্ষা করার এবং ক্ষমতা দখল করার দ্বন্দ্ব। এটা নতুন কিছু নয়। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও এ জন্যই ধনপতি হেনরি ফোর্ড বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট যে-ই জিতুক না কেন, আমি কখনো হারি না।’
ধর্মীয় ইস্যুতেও বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য কমে গেছে। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো—ইসলামপন্থী দলগুলোকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের পক্ষে নিয়ে আসা এবং নিজেকে এমনকি ‘কওমি জননী’ হিসেবে তুলে ধরা। এখন উভয় দলের সাধারণ সমর্থকের মধ্যে নানা মৌলিক নীতিগত বিষয়ে পার্থক্য খুঁজে বের করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
দুটি দলের সাধারণ অসচেতন সমর্থকদের মধ্যে এখন দৃশ্যমান পার্থক্য হলো—একদল শুধু বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম প্রচার করে, আরেক দল শুধু জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম প্রচার করে। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মনে করেন, অতীতে আদর্শের ছিটেফোঁটা যা-ই থাকুক না কেন বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বটি দুটি ‘টোটেম’ নিয়ে দুটি ট্রাইবের ঝগড়ায় পরিণত হয়েছে।এটা এত বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে যে রাজনৈতিক যুদ্ধে জয়-পরাজয়টা বর্তমানে জীবন-মরণ সমস্যায় এবং বৈরিতামূলক গোত্রীয় দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে দুটি দলের জন্যই। এ ক্ষেত্রে তাই সহজে কোনো মীমাংসা হবে না।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মতভেদ চলছে। এই মতভেদকে সাধারণত দুইভাবে দেখা হয়। কেউ কেউ একে আদর্শগত দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ একে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা রক্ষার বিরোধ হিসেবে দেখেন।
১৩ নভেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মতভেদ চলছে। এই মতভেদকে সাধারণত দুইভাবে দেখা হয়। কেউ কেউ একে আদর্শগত দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ একে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা রক্ষার বিরোধ হিসেবে দেখেন।
১৩ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মতভেদ চলছে। এই মতভেদকে সাধারণত দুইভাবে দেখা হয়। কেউ কেউ একে আদর্শগত দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ একে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা রক্ষার বিরোধ হিসেবে দেখেন।
১৩ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মতভেদ চলছে। এই মতভেদকে সাধারণত দুইভাবে দেখা হয়। কেউ কেউ একে আদর্শগত দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ একে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা রক্ষার বিরোধ হিসেবে দেখেন।
১৩ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫