
মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক শান্ত বলে গত সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতেই ছিল জো বাইডেনের প্রশাসন। এই অঞ্চলকে ঘিরে নিজের দ্বিমুখী কৌশল নীরবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই কৌশল হলো একদিকে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় মধ্যস্থতা করা, অন্যদিকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষকে আটকে রাখা।
গত শনিবার ইসরায়েলের ভেতরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশ্রস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সেই কৌশলকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। হামাস যোদ্ধারা গেরিলা কায়দায় চারদিক থেকে ইসরায়েলের শহরগুলোতে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং অনেককে অপহরণ করা হয়েছে।
প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল গাজার উপকূলীয় ছিটমহল গুঁড়িয়ে দিচ্ছে; শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। পুরো গাজাকে অবরুদ্ধ করে পানি, বিদ্যুৎ, খাবারসহ জরুরি পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এখন নতুন করে স্থলপথে হামলার পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনিদের কঠিন সংঘাতকে কিছুটা দূরেই সরিয়ে রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই এমন এক সংকটের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলেন, যেটা তাকে মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। পাশাপাশি তাকে কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে অস্বস্তিকর জোট গঠনের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
এর ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে এক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়লেন বাইডেন। কারণ, এই সংঘাতে একদিকে যেমন তেলের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতিতে আটকে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে এখন সম্পদ ও মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে হবে।
বাইডেনের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের যুগান্তকারী চুক্তির প্রচেষ্টাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে হামাসের হামলা। যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও ইরান হামাসের দীর্ঘকালের হিতৈষী। আর তাই ইরানের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি আরও বৈরী হয়ে উঠছে।
যদিও দীর্ঘদিনের দুই শত্রু ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা সংকট কাটিয়ে উঠে সফল হবে বলে আশা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞই সে ক্ষেত্রে হতাশা ছাড়া আর কিছু দেখছেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান জন অল্টারম্যানের সুরে সেই হতাশা স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষ্যের বিপরীতে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকীকরণের সমস্ত প্রচেষ্টা যে অদূর ভবিষ্যতের জন্য আটকে গেল, তা খুব সহজেই বলা যায়।’
সৌদি আরব ও ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই মিত্র। এদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার বাইডেনের প্রচেষ্টা মার্কিন প্রশাসনের কাছে একইসঙ্গে তেহরানের বিরুদ্ধে এবং তেলসমৃদ্ধ উপসাগরে চীনের প্রবেশে মোকাবিলায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ার কৌশল।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা স্থগিত বা পিছিয়ে গেছে—এমন কড়া কথা তিনি বলতে চান না। তবে ওয়াশিংটন আপাতত শুধু ইসরায়েলকে ‘আত্মরক্ষায়’ সহায়তা দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলছেন, নতুন এই যুদ্ধের পরে স্বাভাবিকীকরণের গন্তব্যে যাবে না আরবের পথ। কারণ, এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলা গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।
সৌদি আরব সংশ্লিষ্ট এক সূত্র একই সুরে গলা মিলিয়ে বলছে, আরেকটি আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কথা বলা বোধহয় কঠিন হবে।
তবে ইসরায়েল-সৌদি আরব নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে। অনেকেই এই প্রচেষ্টাকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে চাপিয়ে রাখা হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্র ‘ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে’ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনের সাবেক উপদেষ্টা খালেদ এলজিন্দি।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটে কর্মরত এই কূটনীতিক বলেন, ‘এখন আমরা যা যা দেখছি, তা কেন দেখছি বুঝতে হলে এই যে অবহেলা তাকে বিবেচনায় নিতে হবে।’
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক সূত্রগুলোর মতে, ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে ইসরাইলকে নিরাপত্তা দেওয়া মেনে নিচ্ছে না হামাস। কারণ, তাহলে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক যত দূর এগিয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘকাল স্থগিত থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনা আবার চালু করার চেষ্টার জন্য এটি সঠিক সময় নয়। কারণ, উভয় পক্ষ থেকে অনড় অবস্থানের অভিযোগ আছে। তবে ইরানকে ঠেকাতে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য সৌদি আরব দীর্ঘমেয়াদে আলোচনার টেবিলে ফিরতে পারে বলে মনে করেন প্যানিকফ।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা এবং আমেরিকানসহ বহু জিম্মিকে মুক্ত করার প্রচেষ্টার মধ্যেও বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল খুঁজতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
কিন্তু হামাসের হামলা ও জিম্মি সংকটের মুখে পড়া নেতানিয়াহু কোনো ছাড় দেবেন না বলেই মনে হয়। কারণ, এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের চাওয়া অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বড় ধাক্কা খেল চীনের উচ্চাভিলাষ ও ভারতের করিডর
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠার চীনা উচ্চাভিলাষ এই হামলায় বড় ধাক্কা খেয়েছে। গত মার্চে চীনের মধ্যস্ততায় সৌদি-ইরান চুক্তির পর ওয়াশিংটনের দীর্ঘ আধিপত্য বলয়ে থাকা এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের নজরকাড়া উপস্থিতি নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে বেশ হই চই হয়। বিশ্বজুড়ে ‘হটস্পট ইস্যু’ বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় চীন গঠনমূলক অবদান রাখবে বলে তখন দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই ঘোষণা দেন।
কিন্তু হামলার পর চীন সরকারের মুখপাত্র যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তাতে হামাসকে নিন্দা না জানিয়ে ‘উত্তেজনা প্রশমনের’ ডাক দেওয়া হয় এবং সংকট মোকাবিলায় ফিলিস্তিনে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ‘দুই রাষ্ট্র নীতি’ গ্রহণে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে চীনের শীর্ষ নেতা সি চিনপিং মুখ খুলেননি।
চীন-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রোনিনজেনের সহকারী অধ্যাপক বিল ফিগোয়েরোয়া। তিনি বলছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চীনের বড় খেলোয়াড় হয়ে ওঠার যে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল, এই যুদ্ধ নিঃসন্দেহে তাতে ফুটো তৈরি করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনা কুড়ালেও চীনের এই ‘ঝুঁকি এড়িয়ে চলা’র নীতি নতুন নয়, গতানুতিক কূটনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জন্য অবদান রাখার হাকডাক করে চীন যে ভাবমূর্তি তৈরি করল, তাতে চিড় ধরাল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। আর তাই চীনকে কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
এদিকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলার যে নীতি নয়াদিল্লি বহুদিন ধরে অনুসরণ করে আসছিল, তা যাবৎকালে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। এই যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক মাস আগে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডর (আইএমইসি) প্রকল্পের ঘোষণা আসে।
কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর আরব বিশ্বের পরিবর্তিত অবস্থানের প্রেক্ষাপটে এই করিডরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এর মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।সেটা আরব দেশগুলো মেনে নেবে না। আর এই করিডর যেহেতু ইসরাইলকে সংযুক্ত করবে, সেহেতু এই উদ্যোগ যে অদূর ভবিষ্যতে আলোর দেখবে তা আশা করা কঠিন।
জল্পনায় ইরানের উসকানি
হামাসের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানবিষয়ক নীতি পর্যালোচনায় বাধ্য হতে পারে। কারণ, ইরান হামলায় জড়িত বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে তেহরানের সরাসরি জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। দেশটি হামাসের হামলার প্রশংসা করলেও এতে ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
যদিও ইসরায়েল অভিযোগ, তেহরান হামাসকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে বলে। দ্য গার্ডিয়ানের কূটনীতি-বিষয়ক সম্পাদক প্যাট্রিক উইনটরের মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে ইরান অসম্ভব করে তুলতে চায়।
হামাসের হামলার পেছনে আল আকসা মসজিদ নিয়ে উসকানি দেওয়াসহ নেতানিয়াহু জোটের কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রভাবক হিসেবে কাজ করলেও ইরান ও তার মদদপুষ্ট বাহিনীর দীর্ঘদিনের কৌশলগত অবস্থানকে খারিজ করা যাবে না।
উইনটর বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র সহজে শেকড় গাঁড়বে বলে মনে করে ইরান। আর একবার যদি সেটা সফল হয়, তাহলে ফিলিস্তিনিরা তাদের মদতদাতা হারাবে।
‘উপসাগরের যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে মদদ দিয়েছে, তারা ভুল ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়েছে’ বলে কয়েক দিন আগে কড়া সাংকেতিক বার্তা দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘যেসব সরকার ইহুদিবাদী শাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জুয়া খেলায় মত্ত, তারা ক্ষতির মুখে পড়বে।’
তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন ইসলামিক জিহাদের প্রধান জিয়াদ আল-নাখালা। গত শুক্রবার তিনি বলেন, ‘যারা ইহুদিবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে ছুটছেন, তাঁরা এরই মধ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, ফিলিস্তিন আমাদের নয়, আল আকসা মসজিদসহ জেরুজালেমও নয়।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাসের এক হামলায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে খ্যাতি ধসে গেছে। এর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে ‘ছায়া যুদ্ধে’ ইরানের সাহস বাড়বে। দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে ‘প্রক্সি যুদ্ধে’ অর্থাৎ তার পক্ষ হয়ে প্রতিবেশীদের ব্যবহার করবে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক প্যানিকফ বলেন, ‘ইরান এখন আর নিরুৎসাহে বসে থাকবে না। কারণ, তাহলে সরকার সামরিক সংঘাতে জড়িত হতে বা ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক নয় বলে ভাবমূর্তি তৈরি হবে।’
কিন্তু গত মাসে মার্কিন বন্দী বিনিময়ের জন্য ইরানের ৬০০ কোটি ডলারের তহবিল অবমুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রিপাবলিকানদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে। সে কারণেই ইরানকে নতুন করে হিসাব-নিকাশ করতে হতে পারে। যদিও ন্দী বিনিময়ের উদ্যোগকে ‘আস্থা তৈরির পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
কোন পথে যাবে সৌদি আরব
হামাসের হামলা থেকে সৃষ্ট যুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সৌদি আরব। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সব পক্ষীয় উদ্যোগের সঙ্গেই আছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে নতুন রাজতন্ত্র। সৌদি আরব যেমন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং ইসরায়েলের প্রযুক্তির জন্যও ক্ষুধার্ত। তার উপর ওয়াশিংটনের কাছ থেকেও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা চায় রিয়াদ।
গত সেপ্টেম্বরে বাহরাইনকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর চেয়ে শক্তিশালী না হলেও সমকক্ষ অস্ত্র এবং বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি চায় সৌদি আরব। আবার ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ শুরুর দৃশ্যমান অগ্রগতিও দেখতে চায় দেশটি। আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে সৌদি আরব সফরে কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের।
কিন্তু এর মধ্যেই ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। হামাসের হামলার পর রিয়াদ প্রাথমিক যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা থেকে কূটনৈতিক পরিণতি নিয়ে ভাবনা আন্দাজ করা যায়। সেখানে ফিলিস্তিনের ‘উপদল ও দখলদার বাহিনীর’ মধ্যে ‘অভূতপূর্ব পরিস্থিতি’র কথা তুলে ধরে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব।
ইসরায়েলের নাম না ধরে ‘টানা দখলদারিত্ব, বৈধ অধিকার থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে বঞ্চিত রাখা এবং পবিত্র স্থানে (আকসা) যাওয়া নিষেধাজ্ঞা এবং পদ্ধতিগত উসকানির পুনরাবৃত্তির ফলে পরিস্থিতি যে বিস্ফোরিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, সে বিষয়ে আগের সতর্কবাণী’ স্মরণ করিয়ে দেয় রিয়াদ। ফিলিস্তিনে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দিয়েছে রিয়াদ। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়ায় তো ইসরায়েলের খুশি হওয়ার কথা না।
পরিস্থিতি নিয়ে ব্লিঙ্কেন, ইইউ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল ও উপসাগরীয় প্রতিটি দেশের প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই আলোচনার ফল মিলতে পারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে। তবে অনেক পশ্চিমা কূটনীতিক গোপনে স্বীকার করেছেন, নিজেদের নীতির কারণেই মধ্যপ্রাচ্য সংকট তাঁদের নাগালের বাইরে।
তবে প্রকৃত কূটনৈতিক আলোচনা গোপনেই হবে। স্বল্প মেয়াদে তুরস্ক ও মিসর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে। নির্বাচনের দুই মাস বাকি থাকতে মিশর গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ হজম করতে পারবে না। এদিকে হিজবুল্লাহও গাজায় ব্যাপক হামলার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে মিসরের মাধ্যমে ইসরায়েলকে আগেই বার্তাও পাঠিয়েছে। তবু ইসরায়েল হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে এবং এখন স্থলভাগ দিয়ে গাজায় প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু হিজবুল্লাহও পাল্টা হামলায় অংশ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা প্রশমনে, স্থলভাগে হামলার পরিকল্পনা বন্ধ রাখতে, হামাসকে আলোচনায় বাধ্য করতে গাজার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার মতো পদক্ষেপের সীমাবদ্ধ থাকতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানাচ্ছে। এদিকে দেশের ভেতর থেকেও শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি উঠছে। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে নেতানিয়াহু আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছেন। রাজনৈতিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে এর মধ্যেই জাতীয় সরকারও গঠন করেছেন তিনি।
অনেকে বলছেন, ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের ছয় মাসের মধ্যে গোল্ডা মেয়ারের প্রধানমন্ত্রীর পদে চলে গিয়েছিল। তারপর মেনাখেম বিগিন এসে ১৯৭৮ সালে মিশরের আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির পথ করে দিয়েছিলেন। তবে এই মুহূর্তে তেমন আশাবাদী ঘটনাবলির পুনরাবৃত্তির কল্পনা কঠিন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনে কোন ধরনের কূটনীতি সফল হবে— সেটাই দেখার অপেক্ষা।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, ফরেন পলিসি, আল-জাজিরা

মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক শান্ত বলে গত সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতেই ছিল জো বাইডেনের প্রশাসন। এই অঞ্চলকে ঘিরে নিজের দ্বিমুখী কৌশল নীরবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই কৌশল হলো একদিকে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় মধ্যস্থতা করা, অন্যদিকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষকে আটকে রাখা।
গত শনিবার ইসরায়েলের ভেতরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশ্রস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সেই কৌশলকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। হামাস যোদ্ধারা গেরিলা কায়দায় চারদিক থেকে ইসরায়েলের শহরগুলোতে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং অনেককে অপহরণ করা হয়েছে।
প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল গাজার উপকূলীয় ছিটমহল গুঁড়িয়ে দিচ্ছে; শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। পুরো গাজাকে অবরুদ্ধ করে পানি, বিদ্যুৎ, খাবারসহ জরুরি পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এখন নতুন করে স্থলপথে হামলার পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনিদের কঠিন সংঘাতকে কিছুটা দূরেই সরিয়ে রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই এমন এক সংকটের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলেন, যেটা তাকে মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। পাশাপাশি তাকে কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে অস্বস্তিকর জোট গঠনের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
এর ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে এক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়লেন বাইডেন। কারণ, এই সংঘাতে একদিকে যেমন তেলের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতিতে আটকে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে এখন সম্পদ ও মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে হবে।
বাইডেনের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের যুগান্তকারী চুক্তির প্রচেষ্টাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে হামাসের হামলা। যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও ইরান হামাসের দীর্ঘকালের হিতৈষী। আর তাই ইরানের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি আরও বৈরী হয়ে উঠছে।
যদিও দীর্ঘদিনের দুই শত্রু ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা সংকট কাটিয়ে উঠে সফল হবে বলে আশা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞই সে ক্ষেত্রে হতাশা ছাড়া আর কিছু দেখছেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান জন অল্টারম্যানের সুরে সেই হতাশা স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষ্যের বিপরীতে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকীকরণের সমস্ত প্রচেষ্টা যে অদূর ভবিষ্যতের জন্য আটকে গেল, তা খুব সহজেই বলা যায়।’
সৌদি আরব ও ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই মিত্র। এদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার বাইডেনের প্রচেষ্টা মার্কিন প্রশাসনের কাছে একইসঙ্গে তেহরানের বিরুদ্ধে এবং তেলসমৃদ্ধ উপসাগরে চীনের প্রবেশে মোকাবিলায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ার কৌশল।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা স্থগিত বা পিছিয়ে গেছে—এমন কড়া কথা তিনি বলতে চান না। তবে ওয়াশিংটন আপাতত শুধু ইসরায়েলকে ‘আত্মরক্ষায়’ সহায়তা দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলছেন, নতুন এই যুদ্ধের পরে স্বাভাবিকীকরণের গন্তব্যে যাবে না আরবের পথ। কারণ, এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলা গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।
সৌদি আরব সংশ্লিষ্ট এক সূত্র একই সুরে গলা মিলিয়ে বলছে, আরেকটি আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কথা বলা বোধহয় কঠিন হবে।
তবে ইসরায়েল-সৌদি আরব নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে। অনেকেই এই প্রচেষ্টাকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে চাপিয়ে রাখা হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্র ‘ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে’ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনের সাবেক উপদেষ্টা খালেদ এলজিন্দি।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটে কর্মরত এই কূটনীতিক বলেন, ‘এখন আমরা যা যা দেখছি, তা কেন দেখছি বুঝতে হলে এই যে অবহেলা তাকে বিবেচনায় নিতে হবে।’
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক সূত্রগুলোর মতে, ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে ইসরাইলকে নিরাপত্তা দেওয়া মেনে নিচ্ছে না হামাস। কারণ, তাহলে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক যত দূর এগিয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘকাল স্থগিত থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনা আবার চালু করার চেষ্টার জন্য এটি সঠিক সময় নয়। কারণ, উভয় পক্ষ থেকে অনড় অবস্থানের অভিযোগ আছে। তবে ইরানকে ঠেকাতে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য সৌদি আরব দীর্ঘমেয়াদে আলোচনার টেবিলে ফিরতে পারে বলে মনে করেন প্যানিকফ।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা এবং আমেরিকানসহ বহু জিম্মিকে মুক্ত করার প্রচেষ্টার মধ্যেও বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল খুঁজতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
কিন্তু হামাসের হামলা ও জিম্মি সংকটের মুখে পড়া নেতানিয়াহু কোনো ছাড় দেবেন না বলেই মনে হয়। কারণ, এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের চাওয়া অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বড় ধাক্কা খেল চীনের উচ্চাভিলাষ ও ভারতের করিডর
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠার চীনা উচ্চাভিলাষ এই হামলায় বড় ধাক্কা খেয়েছে। গত মার্চে চীনের মধ্যস্ততায় সৌদি-ইরান চুক্তির পর ওয়াশিংটনের দীর্ঘ আধিপত্য বলয়ে থাকা এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের নজরকাড়া উপস্থিতি নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে বেশ হই চই হয়। বিশ্বজুড়ে ‘হটস্পট ইস্যু’ বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় চীন গঠনমূলক অবদান রাখবে বলে তখন দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই ঘোষণা দেন।
কিন্তু হামলার পর চীন সরকারের মুখপাত্র যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তাতে হামাসকে নিন্দা না জানিয়ে ‘উত্তেজনা প্রশমনের’ ডাক দেওয়া হয় এবং সংকট মোকাবিলায় ফিলিস্তিনে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ‘দুই রাষ্ট্র নীতি’ গ্রহণে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে চীনের শীর্ষ নেতা সি চিনপিং মুখ খুলেননি।
চীন-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রোনিনজেনের সহকারী অধ্যাপক বিল ফিগোয়েরোয়া। তিনি বলছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চীনের বড় খেলোয়াড় হয়ে ওঠার যে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল, এই যুদ্ধ নিঃসন্দেহে তাতে ফুটো তৈরি করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনা কুড়ালেও চীনের এই ‘ঝুঁকি এড়িয়ে চলা’র নীতি নতুন নয়, গতানুতিক কূটনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জন্য অবদান রাখার হাকডাক করে চীন যে ভাবমূর্তি তৈরি করল, তাতে চিড় ধরাল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। আর তাই চীনকে কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
এদিকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলার যে নীতি নয়াদিল্লি বহুদিন ধরে অনুসরণ করে আসছিল, তা যাবৎকালে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। এই যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক মাস আগে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডর (আইএমইসি) প্রকল্পের ঘোষণা আসে।
কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর আরব বিশ্বের পরিবর্তিত অবস্থানের প্রেক্ষাপটে এই করিডরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এর মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।সেটা আরব দেশগুলো মেনে নেবে না। আর এই করিডর যেহেতু ইসরাইলকে সংযুক্ত করবে, সেহেতু এই উদ্যোগ যে অদূর ভবিষ্যতে আলোর দেখবে তা আশা করা কঠিন।
জল্পনায় ইরানের উসকানি
হামাসের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানবিষয়ক নীতি পর্যালোচনায় বাধ্য হতে পারে। কারণ, ইরান হামলায় জড়িত বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে তেহরানের সরাসরি জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। দেশটি হামাসের হামলার প্রশংসা করলেও এতে ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
যদিও ইসরায়েল অভিযোগ, তেহরান হামাসকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে বলে। দ্য গার্ডিয়ানের কূটনীতি-বিষয়ক সম্পাদক প্যাট্রিক উইনটরের মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে ইরান অসম্ভব করে তুলতে চায়।
হামাসের হামলার পেছনে আল আকসা মসজিদ নিয়ে উসকানি দেওয়াসহ নেতানিয়াহু জোটের কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রভাবক হিসেবে কাজ করলেও ইরান ও তার মদদপুষ্ট বাহিনীর দীর্ঘদিনের কৌশলগত অবস্থানকে খারিজ করা যাবে না।
উইনটর বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র সহজে শেকড় গাঁড়বে বলে মনে করে ইরান। আর একবার যদি সেটা সফল হয়, তাহলে ফিলিস্তিনিরা তাদের মদতদাতা হারাবে।
‘উপসাগরের যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে মদদ দিয়েছে, তারা ভুল ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়েছে’ বলে কয়েক দিন আগে কড়া সাংকেতিক বার্তা দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘যেসব সরকার ইহুদিবাদী শাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জুয়া খেলায় মত্ত, তারা ক্ষতির মুখে পড়বে।’
তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন ইসলামিক জিহাদের প্রধান জিয়াদ আল-নাখালা। গত শুক্রবার তিনি বলেন, ‘যারা ইহুদিবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে ছুটছেন, তাঁরা এরই মধ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, ফিলিস্তিন আমাদের নয়, আল আকসা মসজিদসহ জেরুজালেমও নয়।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাসের এক হামলায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে খ্যাতি ধসে গেছে। এর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে ‘ছায়া যুদ্ধে’ ইরানের সাহস বাড়বে। দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে ‘প্রক্সি যুদ্ধে’ অর্থাৎ তার পক্ষ হয়ে প্রতিবেশীদের ব্যবহার করবে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক প্যানিকফ বলেন, ‘ইরান এখন আর নিরুৎসাহে বসে থাকবে না। কারণ, তাহলে সরকার সামরিক সংঘাতে জড়িত হতে বা ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক নয় বলে ভাবমূর্তি তৈরি হবে।’
কিন্তু গত মাসে মার্কিন বন্দী বিনিময়ের জন্য ইরানের ৬০০ কোটি ডলারের তহবিল অবমুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রিপাবলিকানদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে। সে কারণেই ইরানকে নতুন করে হিসাব-নিকাশ করতে হতে পারে। যদিও ন্দী বিনিময়ের উদ্যোগকে ‘আস্থা তৈরির পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
কোন পথে যাবে সৌদি আরব
হামাসের হামলা থেকে সৃষ্ট যুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সৌদি আরব। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সব পক্ষীয় উদ্যোগের সঙ্গেই আছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে নতুন রাজতন্ত্র। সৌদি আরব যেমন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং ইসরায়েলের প্রযুক্তির জন্যও ক্ষুধার্ত। তার উপর ওয়াশিংটনের কাছ থেকেও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা চায় রিয়াদ।
গত সেপ্টেম্বরে বাহরাইনকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর চেয়ে শক্তিশালী না হলেও সমকক্ষ অস্ত্র এবং বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি চায় সৌদি আরব। আবার ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ শুরুর দৃশ্যমান অগ্রগতিও দেখতে চায় দেশটি। আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে সৌদি আরব সফরে কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের।
কিন্তু এর মধ্যেই ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। হামাসের হামলার পর রিয়াদ প্রাথমিক যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা থেকে কূটনৈতিক পরিণতি নিয়ে ভাবনা আন্দাজ করা যায়। সেখানে ফিলিস্তিনের ‘উপদল ও দখলদার বাহিনীর’ মধ্যে ‘অভূতপূর্ব পরিস্থিতি’র কথা তুলে ধরে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব।
ইসরায়েলের নাম না ধরে ‘টানা দখলদারিত্ব, বৈধ অধিকার থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে বঞ্চিত রাখা এবং পবিত্র স্থানে (আকসা) যাওয়া নিষেধাজ্ঞা এবং পদ্ধতিগত উসকানির পুনরাবৃত্তির ফলে পরিস্থিতি যে বিস্ফোরিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, সে বিষয়ে আগের সতর্কবাণী’ স্মরণ করিয়ে দেয় রিয়াদ। ফিলিস্তিনে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দিয়েছে রিয়াদ। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়ায় তো ইসরায়েলের খুশি হওয়ার কথা না।
পরিস্থিতি নিয়ে ব্লিঙ্কেন, ইইউ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল ও উপসাগরীয় প্রতিটি দেশের প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই আলোচনার ফল মিলতে পারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে। তবে অনেক পশ্চিমা কূটনীতিক গোপনে স্বীকার করেছেন, নিজেদের নীতির কারণেই মধ্যপ্রাচ্য সংকট তাঁদের নাগালের বাইরে।
তবে প্রকৃত কূটনৈতিক আলোচনা গোপনেই হবে। স্বল্প মেয়াদে তুরস্ক ও মিসর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে। নির্বাচনের দুই মাস বাকি থাকতে মিশর গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ হজম করতে পারবে না। এদিকে হিজবুল্লাহও গাজায় ব্যাপক হামলার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে মিসরের মাধ্যমে ইসরায়েলকে আগেই বার্তাও পাঠিয়েছে। তবু ইসরায়েল হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে এবং এখন স্থলভাগ দিয়ে গাজায় প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু হিজবুল্লাহও পাল্টা হামলায় অংশ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা প্রশমনে, স্থলভাগে হামলার পরিকল্পনা বন্ধ রাখতে, হামাসকে আলোচনায় বাধ্য করতে গাজার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার মতো পদক্ষেপের সীমাবদ্ধ থাকতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানাচ্ছে। এদিকে দেশের ভেতর থেকেও শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি উঠছে। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে নেতানিয়াহু আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছেন। রাজনৈতিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে এর মধ্যেই জাতীয় সরকারও গঠন করেছেন তিনি।
অনেকে বলছেন, ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের ছয় মাসের মধ্যে গোল্ডা মেয়ারের প্রধানমন্ত্রীর পদে চলে গিয়েছিল। তারপর মেনাখেম বিগিন এসে ১৯৭৮ সালে মিশরের আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির পথ করে দিয়েছিলেন। তবে এই মুহূর্তে তেমন আশাবাদী ঘটনাবলির পুনরাবৃত্তির কল্পনা কঠিন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনে কোন ধরনের কূটনীতি সফল হবে— সেটাই দেখার অপেক্ষা।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, ফরেন পলিসি, আল-জাজিরা

মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক শান্ত বলে গত সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতেই ছিল জো বাইডেনের প্রশাসন। এই অঞ্চলকে ঘিরে নিজের দ্বিমুখী কৌশল নীরবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই কৌশল হলো একদিকে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় মধ্যস্থতা করা, অন্যদিকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষকে আটকে রাখা।
গত শনিবার ইসরায়েলের ভেতরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশ্রস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সেই কৌশলকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। হামাস যোদ্ধারা গেরিলা কায়দায় চারদিক থেকে ইসরায়েলের শহরগুলোতে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং অনেককে অপহরণ করা হয়েছে।
প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল গাজার উপকূলীয় ছিটমহল গুঁড়িয়ে দিচ্ছে; শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। পুরো গাজাকে অবরুদ্ধ করে পানি, বিদ্যুৎ, খাবারসহ জরুরি পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এখন নতুন করে স্থলপথে হামলার পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনিদের কঠিন সংঘাতকে কিছুটা দূরেই সরিয়ে রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই এমন এক সংকটের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলেন, যেটা তাকে মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। পাশাপাশি তাকে কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে অস্বস্তিকর জোট গঠনের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
এর ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে এক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়লেন বাইডেন। কারণ, এই সংঘাতে একদিকে যেমন তেলের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতিতে আটকে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে এখন সম্পদ ও মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে হবে।
বাইডেনের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের যুগান্তকারী চুক্তির প্রচেষ্টাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে হামাসের হামলা। যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও ইরান হামাসের দীর্ঘকালের হিতৈষী। আর তাই ইরানের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি আরও বৈরী হয়ে উঠছে।
যদিও দীর্ঘদিনের দুই শত্রু ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা সংকট কাটিয়ে উঠে সফল হবে বলে আশা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞই সে ক্ষেত্রে হতাশা ছাড়া আর কিছু দেখছেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান জন অল্টারম্যানের সুরে সেই হতাশা স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষ্যের বিপরীতে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকীকরণের সমস্ত প্রচেষ্টা যে অদূর ভবিষ্যতের জন্য আটকে গেল, তা খুব সহজেই বলা যায়।’
সৌদি আরব ও ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই মিত্র। এদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার বাইডেনের প্রচেষ্টা মার্কিন প্রশাসনের কাছে একইসঙ্গে তেহরানের বিরুদ্ধে এবং তেলসমৃদ্ধ উপসাগরে চীনের প্রবেশে মোকাবিলায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ার কৌশল।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা স্থগিত বা পিছিয়ে গেছে—এমন কড়া কথা তিনি বলতে চান না। তবে ওয়াশিংটন আপাতত শুধু ইসরায়েলকে ‘আত্মরক্ষায়’ সহায়তা দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলছেন, নতুন এই যুদ্ধের পরে স্বাভাবিকীকরণের গন্তব্যে যাবে না আরবের পথ। কারণ, এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলা গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।
সৌদি আরব সংশ্লিষ্ট এক সূত্র একই সুরে গলা মিলিয়ে বলছে, আরেকটি আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কথা বলা বোধহয় কঠিন হবে।
তবে ইসরায়েল-সৌদি আরব নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে। অনেকেই এই প্রচেষ্টাকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে চাপিয়ে রাখা হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্র ‘ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে’ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনের সাবেক উপদেষ্টা খালেদ এলজিন্দি।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটে কর্মরত এই কূটনীতিক বলেন, ‘এখন আমরা যা যা দেখছি, তা কেন দেখছি বুঝতে হলে এই যে অবহেলা তাকে বিবেচনায় নিতে হবে।’
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক সূত্রগুলোর মতে, ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে ইসরাইলকে নিরাপত্তা দেওয়া মেনে নিচ্ছে না হামাস। কারণ, তাহলে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক যত দূর এগিয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘকাল স্থগিত থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনা আবার চালু করার চেষ্টার জন্য এটি সঠিক সময় নয়। কারণ, উভয় পক্ষ থেকে অনড় অবস্থানের অভিযোগ আছে। তবে ইরানকে ঠেকাতে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য সৌদি আরব দীর্ঘমেয়াদে আলোচনার টেবিলে ফিরতে পারে বলে মনে করেন প্যানিকফ।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা এবং আমেরিকানসহ বহু জিম্মিকে মুক্ত করার প্রচেষ্টার মধ্যেও বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল খুঁজতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
কিন্তু হামাসের হামলা ও জিম্মি সংকটের মুখে পড়া নেতানিয়াহু কোনো ছাড় দেবেন না বলেই মনে হয়। কারণ, এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের চাওয়া অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বড় ধাক্কা খেল চীনের উচ্চাভিলাষ ও ভারতের করিডর
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠার চীনা উচ্চাভিলাষ এই হামলায় বড় ধাক্কা খেয়েছে। গত মার্চে চীনের মধ্যস্ততায় সৌদি-ইরান চুক্তির পর ওয়াশিংটনের দীর্ঘ আধিপত্য বলয়ে থাকা এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের নজরকাড়া উপস্থিতি নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে বেশ হই চই হয়। বিশ্বজুড়ে ‘হটস্পট ইস্যু’ বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় চীন গঠনমূলক অবদান রাখবে বলে তখন দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই ঘোষণা দেন।
কিন্তু হামলার পর চীন সরকারের মুখপাত্র যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তাতে হামাসকে নিন্দা না জানিয়ে ‘উত্তেজনা প্রশমনের’ ডাক দেওয়া হয় এবং সংকট মোকাবিলায় ফিলিস্তিনে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ‘দুই রাষ্ট্র নীতি’ গ্রহণে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে চীনের শীর্ষ নেতা সি চিনপিং মুখ খুলেননি।
চীন-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রোনিনজেনের সহকারী অধ্যাপক বিল ফিগোয়েরোয়া। তিনি বলছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চীনের বড় খেলোয়াড় হয়ে ওঠার যে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল, এই যুদ্ধ নিঃসন্দেহে তাতে ফুটো তৈরি করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনা কুড়ালেও চীনের এই ‘ঝুঁকি এড়িয়ে চলা’র নীতি নতুন নয়, গতানুতিক কূটনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জন্য অবদান রাখার হাকডাক করে চীন যে ভাবমূর্তি তৈরি করল, তাতে চিড় ধরাল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। আর তাই চীনকে কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
এদিকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলার যে নীতি নয়াদিল্লি বহুদিন ধরে অনুসরণ করে আসছিল, তা যাবৎকালে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। এই যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক মাস আগে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডর (আইএমইসি) প্রকল্পের ঘোষণা আসে।
কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর আরব বিশ্বের পরিবর্তিত অবস্থানের প্রেক্ষাপটে এই করিডরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এর মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।সেটা আরব দেশগুলো মেনে নেবে না। আর এই করিডর যেহেতু ইসরাইলকে সংযুক্ত করবে, সেহেতু এই উদ্যোগ যে অদূর ভবিষ্যতে আলোর দেখবে তা আশা করা কঠিন।
জল্পনায় ইরানের উসকানি
হামাসের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানবিষয়ক নীতি পর্যালোচনায় বাধ্য হতে পারে। কারণ, ইরান হামলায় জড়িত বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে তেহরানের সরাসরি জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। দেশটি হামাসের হামলার প্রশংসা করলেও এতে ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
যদিও ইসরায়েল অভিযোগ, তেহরান হামাসকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে বলে। দ্য গার্ডিয়ানের কূটনীতি-বিষয়ক সম্পাদক প্যাট্রিক উইনটরের মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে ইরান অসম্ভব করে তুলতে চায়।
হামাসের হামলার পেছনে আল আকসা মসজিদ নিয়ে উসকানি দেওয়াসহ নেতানিয়াহু জোটের কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রভাবক হিসেবে কাজ করলেও ইরান ও তার মদদপুষ্ট বাহিনীর দীর্ঘদিনের কৌশলগত অবস্থানকে খারিজ করা যাবে না।
উইনটর বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র সহজে শেকড় গাঁড়বে বলে মনে করে ইরান। আর একবার যদি সেটা সফল হয়, তাহলে ফিলিস্তিনিরা তাদের মদতদাতা হারাবে।
‘উপসাগরের যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে মদদ দিয়েছে, তারা ভুল ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়েছে’ বলে কয়েক দিন আগে কড়া সাংকেতিক বার্তা দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘যেসব সরকার ইহুদিবাদী শাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জুয়া খেলায় মত্ত, তারা ক্ষতির মুখে পড়বে।’
তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন ইসলামিক জিহাদের প্রধান জিয়াদ আল-নাখালা। গত শুক্রবার তিনি বলেন, ‘যারা ইহুদিবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে ছুটছেন, তাঁরা এরই মধ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, ফিলিস্তিন আমাদের নয়, আল আকসা মসজিদসহ জেরুজালেমও নয়।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাসের এক হামলায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে খ্যাতি ধসে গেছে। এর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে ‘ছায়া যুদ্ধে’ ইরানের সাহস বাড়বে। দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে ‘প্রক্সি যুদ্ধে’ অর্থাৎ তার পক্ষ হয়ে প্রতিবেশীদের ব্যবহার করবে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক প্যানিকফ বলেন, ‘ইরান এখন আর নিরুৎসাহে বসে থাকবে না। কারণ, তাহলে সরকার সামরিক সংঘাতে জড়িত হতে বা ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক নয় বলে ভাবমূর্তি তৈরি হবে।’
কিন্তু গত মাসে মার্কিন বন্দী বিনিময়ের জন্য ইরানের ৬০০ কোটি ডলারের তহবিল অবমুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রিপাবলিকানদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে। সে কারণেই ইরানকে নতুন করে হিসাব-নিকাশ করতে হতে পারে। যদিও ন্দী বিনিময়ের উদ্যোগকে ‘আস্থা তৈরির পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
কোন পথে যাবে সৌদি আরব
হামাসের হামলা থেকে সৃষ্ট যুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সৌদি আরব। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সব পক্ষীয় উদ্যোগের সঙ্গেই আছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে নতুন রাজতন্ত্র। সৌদি আরব যেমন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং ইসরায়েলের প্রযুক্তির জন্যও ক্ষুধার্ত। তার উপর ওয়াশিংটনের কাছ থেকেও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা চায় রিয়াদ।
গত সেপ্টেম্বরে বাহরাইনকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর চেয়ে শক্তিশালী না হলেও সমকক্ষ অস্ত্র এবং বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি চায় সৌদি আরব। আবার ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ শুরুর দৃশ্যমান অগ্রগতিও দেখতে চায় দেশটি। আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে সৌদি আরব সফরে কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের।
কিন্তু এর মধ্যেই ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। হামাসের হামলার পর রিয়াদ প্রাথমিক যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা থেকে কূটনৈতিক পরিণতি নিয়ে ভাবনা আন্দাজ করা যায়। সেখানে ফিলিস্তিনের ‘উপদল ও দখলদার বাহিনীর’ মধ্যে ‘অভূতপূর্ব পরিস্থিতি’র কথা তুলে ধরে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব।
ইসরায়েলের নাম না ধরে ‘টানা দখলদারিত্ব, বৈধ অধিকার থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে বঞ্চিত রাখা এবং পবিত্র স্থানে (আকসা) যাওয়া নিষেধাজ্ঞা এবং পদ্ধতিগত উসকানির পুনরাবৃত্তির ফলে পরিস্থিতি যে বিস্ফোরিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, সে বিষয়ে আগের সতর্কবাণী’ স্মরণ করিয়ে দেয় রিয়াদ। ফিলিস্তিনে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দিয়েছে রিয়াদ। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়ায় তো ইসরায়েলের খুশি হওয়ার কথা না।
পরিস্থিতি নিয়ে ব্লিঙ্কেন, ইইউ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল ও উপসাগরীয় প্রতিটি দেশের প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই আলোচনার ফল মিলতে পারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে। তবে অনেক পশ্চিমা কূটনীতিক গোপনে স্বীকার করেছেন, নিজেদের নীতির কারণেই মধ্যপ্রাচ্য সংকট তাঁদের নাগালের বাইরে।
তবে প্রকৃত কূটনৈতিক আলোচনা গোপনেই হবে। স্বল্প মেয়াদে তুরস্ক ও মিসর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে। নির্বাচনের দুই মাস বাকি থাকতে মিশর গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ হজম করতে পারবে না। এদিকে হিজবুল্লাহও গাজায় ব্যাপক হামলার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে মিসরের মাধ্যমে ইসরায়েলকে আগেই বার্তাও পাঠিয়েছে। তবু ইসরায়েল হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে এবং এখন স্থলভাগ দিয়ে গাজায় প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু হিজবুল্লাহও পাল্টা হামলায় অংশ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা প্রশমনে, স্থলভাগে হামলার পরিকল্পনা বন্ধ রাখতে, হামাসকে আলোচনায় বাধ্য করতে গাজার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার মতো পদক্ষেপের সীমাবদ্ধ থাকতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানাচ্ছে। এদিকে দেশের ভেতর থেকেও শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি উঠছে। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে নেতানিয়াহু আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছেন। রাজনৈতিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে এর মধ্যেই জাতীয় সরকারও গঠন করেছেন তিনি।
অনেকে বলছেন, ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের ছয় মাসের মধ্যে গোল্ডা মেয়ারের প্রধানমন্ত্রীর পদে চলে গিয়েছিল। তারপর মেনাখেম বিগিন এসে ১৯৭৮ সালে মিশরের আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির পথ করে দিয়েছিলেন। তবে এই মুহূর্তে তেমন আশাবাদী ঘটনাবলির পুনরাবৃত্তির কল্পনা কঠিন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনে কোন ধরনের কূটনীতি সফল হবে— সেটাই দেখার অপেক্ষা।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, ফরেন পলিসি, আল-জাজিরা

মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক শান্ত বলে গত সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতেই ছিল জো বাইডেনের প্রশাসন। এই অঞ্চলকে ঘিরে নিজের দ্বিমুখী কৌশল নীরবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই কৌশল হলো একদিকে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় মধ্যস্থতা করা, অন্যদিকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষকে আটকে রাখা।
গত শনিবার ইসরায়েলের ভেতরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশ্রস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সেই কৌশলকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। হামাস যোদ্ধারা গেরিলা কায়দায় চারদিক থেকে ইসরায়েলের শহরগুলোতে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং অনেককে অপহরণ করা হয়েছে।
প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল গাজার উপকূলীয় ছিটমহল গুঁড়িয়ে দিচ্ছে; শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। পুরো গাজাকে অবরুদ্ধ করে পানি, বিদ্যুৎ, খাবারসহ জরুরি পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এখন নতুন করে স্থলপথে হামলার পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনিদের কঠিন সংঘাতকে কিছুটা দূরেই সরিয়ে রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই এমন এক সংকটের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলেন, যেটা তাকে মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। পাশাপাশি তাকে কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে অস্বস্তিকর জোট গঠনের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
এর ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে এক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়লেন বাইডেন। কারণ, এই সংঘাতে একদিকে যেমন তেলের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতিতে আটকে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে এখন সম্পদ ও মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে হবে।
বাইডেনের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের যুগান্তকারী চুক্তির প্রচেষ্টাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে হামাসের হামলা। যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও ইরান হামাসের দীর্ঘকালের হিতৈষী। আর তাই ইরানের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি আরও বৈরী হয়ে উঠছে।
যদিও দীর্ঘদিনের দুই শত্রু ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা সংকট কাটিয়ে উঠে সফল হবে বলে আশা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞই সে ক্ষেত্রে হতাশা ছাড়া আর কিছু দেখছেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান জন অল্টারম্যানের সুরে সেই হতাশা স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষ্যের বিপরীতে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকীকরণের সমস্ত প্রচেষ্টা যে অদূর ভবিষ্যতের জন্য আটকে গেল, তা খুব সহজেই বলা যায়।’
সৌদি আরব ও ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই মিত্র। এদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার বাইডেনের প্রচেষ্টা মার্কিন প্রশাসনের কাছে একইসঙ্গে তেহরানের বিরুদ্ধে এবং তেলসমৃদ্ধ উপসাগরে চীনের প্রবেশে মোকাবিলায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ার কৌশল।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা স্থগিত বা পিছিয়ে গেছে—এমন কড়া কথা তিনি বলতে চান না। তবে ওয়াশিংটন আপাতত শুধু ইসরায়েলকে ‘আত্মরক্ষায়’ সহায়তা দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলছেন, নতুন এই যুদ্ধের পরে স্বাভাবিকীকরণের গন্তব্যে যাবে না আরবের পথ। কারণ, এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলা গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।
সৌদি আরব সংশ্লিষ্ট এক সূত্র একই সুরে গলা মিলিয়ে বলছে, আরেকটি আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কথা বলা বোধহয় কঠিন হবে।
তবে ইসরায়েল-সৌদি আরব নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে। অনেকেই এই প্রচেষ্টাকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে চাপিয়ে রাখা হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্র ‘ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে’ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনের সাবেক উপদেষ্টা খালেদ এলজিন্দি।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটে কর্মরত এই কূটনীতিক বলেন, ‘এখন আমরা যা যা দেখছি, তা কেন দেখছি বুঝতে হলে এই যে অবহেলা তাকে বিবেচনায় নিতে হবে।’
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক সূত্রগুলোর মতে, ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে ইসরাইলকে নিরাপত্তা দেওয়া মেনে নিচ্ছে না হামাস। কারণ, তাহলে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক যত দূর এগিয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘকাল স্থগিত থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনা আবার চালু করার চেষ্টার জন্য এটি সঠিক সময় নয়। কারণ, উভয় পক্ষ থেকে অনড় অবস্থানের অভিযোগ আছে। তবে ইরানকে ঠেকাতে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য সৌদি আরব দীর্ঘমেয়াদে আলোচনার টেবিলে ফিরতে পারে বলে মনে করেন প্যানিকফ।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা এবং আমেরিকানসহ বহু জিম্মিকে মুক্ত করার প্রচেষ্টার মধ্যেও বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল খুঁজতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
কিন্তু হামাসের হামলা ও জিম্মি সংকটের মুখে পড়া নেতানিয়াহু কোনো ছাড় দেবেন না বলেই মনে হয়। কারণ, এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের চাওয়া অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বড় ধাক্কা খেল চীনের উচ্চাভিলাষ ও ভারতের করিডর
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠার চীনা উচ্চাভিলাষ এই হামলায় বড় ধাক্কা খেয়েছে। গত মার্চে চীনের মধ্যস্ততায় সৌদি-ইরান চুক্তির পর ওয়াশিংটনের দীর্ঘ আধিপত্য বলয়ে থাকা এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের নজরকাড়া উপস্থিতি নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে বেশ হই চই হয়। বিশ্বজুড়ে ‘হটস্পট ইস্যু’ বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় চীন গঠনমূলক অবদান রাখবে বলে তখন দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই ঘোষণা দেন।
কিন্তু হামলার পর চীন সরকারের মুখপাত্র যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তাতে হামাসকে নিন্দা না জানিয়ে ‘উত্তেজনা প্রশমনের’ ডাক দেওয়া হয় এবং সংকট মোকাবিলায় ফিলিস্তিনে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ‘দুই রাষ্ট্র নীতি’ গ্রহণে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে চীনের শীর্ষ নেতা সি চিনপিং মুখ খুলেননি।
চীন-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রোনিনজেনের সহকারী অধ্যাপক বিল ফিগোয়েরোয়া। তিনি বলছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চীনের বড় খেলোয়াড় হয়ে ওঠার যে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল, এই যুদ্ধ নিঃসন্দেহে তাতে ফুটো তৈরি করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনা কুড়ালেও চীনের এই ‘ঝুঁকি এড়িয়ে চলা’র নীতি নতুন নয়, গতানুতিক কূটনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জন্য অবদান রাখার হাকডাক করে চীন যে ভাবমূর্তি তৈরি করল, তাতে চিড় ধরাল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। আর তাই চীনকে কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
এদিকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলার যে নীতি নয়াদিল্লি বহুদিন ধরে অনুসরণ করে আসছিল, তা যাবৎকালে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। এই যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক মাস আগে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডর (আইএমইসি) প্রকল্পের ঘোষণা আসে।
কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর আরব বিশ্বের পরিবর্তিত অবস্থানের প্রেক্ষাপটে এই করিডরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এর মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।সেটা আরব দেশগুলো মেনে নেবে না। আর এই করিডর যেহেতু ইসরাইলকে সংযুক্ত করবে, সেহেতু এই উদ্যোগ যে অদূর ভবিষ্যতে আলোর দেখবে তা আশা করা কঠিন।
জল্পনায় ইরানের উসকানি
হামাসের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানবিষয়ক নীতি পর্যালোচনায় বাধ্য হতে পারে। কারণ, ইরান হামলায় জড়িত বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে তেহরানের সরাসরি জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। দেশটি হামাসের হামলার প্রশংসা করলেও এতে ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
যদিও ইসরায়েল অভিযোগ, তেহরান হামাসকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে বলে। দ্য গার্ডিয়ানের কূটনীতি-বিষয়ক সম্পাদক প্যাট্রিক উইনটরের মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে ইরান অসম্ভব করে তুলতে চায়।
হামাসের হামলার পেছনে আল আকসা মসজিদ নিয়ে উসকানি দেওয়াসহ নেতানিয়াহু জোটের কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রভাবক হিসেবে কাজ করলেও ইরান ও তার মদদপুষ্ট বাহিনীর দীর্ঘদিনের কৌশলগত অবস্থানকে খারিজ করা যাবে না।
উইনটর বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র সহজে শেকড় গাঁড়বে বলে মনে করে ইরান। আর একবার যদি সেটা সফল হয়, তাহলে ফিলিস্তিনিরা তাদের মদতদাতা হারাবে।
‘উপসাগরের যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে মদদ দিয়েছে, তারা ভুল ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়েছে’ বলে কয়েক দিন আগে কড়া সাংকেতিক বার্তা দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘যেসব সরকার ইহুদিবাদী শাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জুয়া খেলায় মত্ত, তারা ক্ষতির মুখে পড়বে।’
তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন ইসলামিক জিহাদের প্রধান জিয়াদ আল-নাখালা। গত শুক্রবার তিনি বলেন, ‘যারা ইহুদিবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে ছুটছেন, তাঁরা এরই মধ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, ফিলিস্তিন আমাদের নয়, আল আকসা মসজিদসহ জেরুজালেমও নয়।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাসের এক হামলায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে খ্যাতি ধসে গেছে। এর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে ‘ছায়া যুদ্ধে’ ইরানের সাহস বাড়বে। দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে ‘প্রক্সি যুদ্ধে’ অর্থাৎ তার পক্ষ হয়ে প্রতিবেশীদের ব্যবহার করবে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক প্যানিকফ বলেন, ‘ইরান এখন আর নিরুৎসাহে বসে থাকবে না। কারণ, তাহলে সরকার সামরিক সংঘাতে জড়িত হতে বা ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক নয় বলে ভাবমূর্তি তৈরি হবে।’
কিন্তু গত মাসে মার্কিন বন্দী বিনিময়ের জন্য ইরানের ৬০০ কোটি ডলারের তহবিল অবমুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রিপাবলিকানদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে। সে কারণেই ইরানকে নতুন করে হিসাব-নিকাশ করতে হতে পারে। যদিও ন্দী বিনিময়ের উদ্যোগকে ‘আস্থা তৈরির পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
কোন পথে যাবে সৌদি আরব
হামাসের হামলা থেকে সৃষ্ট যুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সৌদি আরব। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সব পক্ষীয় উদ্যোগের সঙ্গেই আছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে নতুন রাজতন্ত্র। সৌদি আরব যেমন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং ইসরায়েলের প্রযুক্তির জন্যও ক্ষুধার্ত। তার উপর ওয়াশিংটনের কাছ থেকেও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা চায় রিয়াদ।
গত সেপ্টেম্বরে বাহরাইনকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর চেয়ে শক্তিশালী না হলেও সমকক্ষ অস্ত্র এবং বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি চায় সৌদি আরব। আবার ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ শুরুর দৃশ্যমান অগ্রগতিও দেখতে চায় দেশটি। আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে সৌদি আরব সফরে কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের।
কিন্তু এর মধ্যেই ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। হামাসের হামলার পর রিয়াদ প্রাথমিক যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা থেকে কূটনৈতিক পরিণতি নিয়ে ভাবনা আন্দাজ করা যায়। সেখানে ফিলিস্তিনের ‘উপদল ও দখলদার বাহিনীর’ মধ্যে ‘অভূতপূর্ব পরিস্থিতি’র কথা তুলে ধরে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব।
ইসরায়েলের নাম না ধরে ‘টানা দখলদারিত্ব, বৈধ অধিকার থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে বঞ্চিত রাখা এবং পবিত্র স্থানে (আকসা) যাওয়া নিষেধাজ্ঞা এবং পদ্ধতিগত উসকানির পুনরাবৃত্তির ফলে পরিস্থিতি যে বিস্ফোরিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, সে বিষয়ে আগের সতর্কবাণী’ স্মরণ করিয়ে দেয় রিয়াদ। ফিলিস্তিনে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দিয়েছে রিয়াদ। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়ায় তো ইসরায়েলের খুশি হওয়ার কথা না।
পরিস্থিতি নিয়ে ব্লিঙ্কেন, ইইউ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল ও উপসাগরীয় প্রতিটি দেশের প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই আলোচনার ফল মিলতে পারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে। তবে অনেক পশ্চিমা কূটনীতিক গোপনে স্বীকার করেছেন, নিজেদের নীতির কারণেই মধ্যপ্রাচ্য সংকট তাঁদের নাগালের বাইরে।
তবে প্রকৃত কূটনৈতিক আলোচনা গোপনেই হবে। স্বল্প মেয়াদে তুরস্ক ও মিসর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে। নির্বাচনের দুই মাস বাকি থাকতে মিশর গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ হজম করতে পারবে না। এদিকে হিজবুল্লাহও গাজায় ব্যাপক হামলার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে মিসরের মাধ্যমে ইসরায়েলকে আগেই বার্তাও পাঠিয়েছে। তবু ইসরায়েল হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে এবং এখন স্থলভাগ দিয়ে গাজায় প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু হিজবুল্লাহও পাল্টা হামলায় অংশ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা প্রশমনে, স্থলভাগে হামলার পরিকল্পনা বন্ধ রাখতে, হামাসকে আলোচনায় বাধ্য করতে গাজার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার মতো পদক্ষেপের সীমাবদ্ধ থাকতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানাচ্ছে। এদিকে দেশের ভেতর থেকেও শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি উঠছে। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়ে নেতানিয়াহু আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছেন। রাজনৈতিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে এর মধ্যেই জাতীয় সরকারও গঠন করেছেন তিনি।
অনেকে বলছেন, ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের ছয় মাসের মধ্যে গোল্ডা মেয়ারের প্রধানমন্ত্রীর পদে চলে গিয়েছিল। তারপর মেনাখেম বিগিন এসে ১৯৭৮ সালে মিশরের আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির পথ করে দিয়েছিলেন। তবে এই মুহূর্তে তেমন আশাবাদী ঘটনাবলির পুনরাবৃত্তির কল্পনা কঠিন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনে কোন ধরনের কূটনীতি সফল হবে— সেটাই দেখার অপেক্ষা।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, ফরেন পলিসি, আল-জাজিরা

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক শান্ত বলে গত সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতেই ছিল জো বাইডেনের প্রশাসন। কিন্তু গত শনিবার ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলার পর গাজার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ সেই আশাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীন, ভারত, সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্ট সব দেশকে কৌশল নিয়ে নতুন করে ভ
১২ অক্টোবর ২০২৩
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক শান্ত বলে গত সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতেই ছিল জো বাইডেনের প্রশাসন। কিন্তু গত শনিবার ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলার পর গাজার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ সেই আশাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীন, ভারত, সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্ট সব দেশকে কৌশল নিয়ে নতুন করে ভ
১২ অক্টোবর ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক শান্ত বলে গত সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতেই ছিল জো বাইডেনের প্রশাসন। কিন্তু গত শনিবার ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলার পর গাজার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ সেই আশাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীন, ভারত, সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্ট সব দেশকে কৌশল নিয়ে নতুন করে ভ
১২ অক্টোবর ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক শান্ত বলে গত সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতেই ছিল জো বাইডেনের প্রশাসন। কিন্তু গত শনিবার ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলার পর গাজার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ সেই আশাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীন, ভারত, সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্ট সব দেশকে কৌশল নিয়ে নতুন করে ভ
১২ অক্টোবর ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে