Ajker Patrika

এই সরকারকে যেতেই হবে...কীভাবে যাবে

এই সরকারকে যেতেই হবে...কীভাবে যাবে

সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, এই তথ্য পাকিস্তানিদের কাছে থাকলে নির্বাচনটি নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতো কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের যথেষ্ট কারণ আছে। আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অনীহার বিষয়টি রাজনীতিসচেতন মহলে খুব অস্পষ্ট ছিল বলে 
মনে হয় না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ভালো করবে কিন্তু সেটা যে সরকার গঠনের মতো ভালো হবে, সেটা বুঝতে পারলে নির্বাচন ভণ্ডুল করার ব্যবস্থা হয়তো করা হতো।

আমরা যারা তখন ছাত্র আন্দোলনের তরুণ কর্মী, কিন্তু আওয়ামী লীগ করিনি, তারা তো দূরের কথা, আমাদের অনেক নেতার কাছেও সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিজয়ের বিষয়টি খুব বিবেচনায় ছিল বলে আমার অন্তত মনে হয়নি। যাঁরা আওয়ামী লীগ করতেন, তাঁরা হয়তো জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন, তবে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে মাত্র দুটি আসন ছাড়া বাকি সব আসন আওয়ামী লীগের দখলে যাবে, এতটা হয়তো তাঁরাও আশা করেননি। প্রসঙ্গত, কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলা যেতে পারে। আমার নিজের নির্বাচনী এলাকা পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ ছাড়াও একাধিক প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে অন্য প্রার্থীরা হয়তো অধিক যোগ্যতরও ছিলেন। আমরা ছিলাম ন্যাপের প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম রহমানের পক্ষে। তিনি ছিলেন একজন ঝানু আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। সে জন্য স্বাভাবিকভাবে আমাদের কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দিতে বলিনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থাও আমাদের এলাকায় ন্যাপের চেয়ে ভালো ছিল না। তবে নির্বাচনী প্রচারের সময়ই আমরা টের পেয়েছিলাম 
যে নৌকার পক্ষে একটি স্বতঃস্ফূর্ত জোয়ার তৈরি হয়েছে। মানুষ প্রার্থী দেখে নয়, মার্কা দেখে ভোট দিতে প্রস্তুত হয়েছে।

এখন আমার মনে হয়, কীভাবে সেই সময় এটা সম্ভব হয়েছিল? প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের মানুষ কীভাবে, কার আহ্বানে অমন করে নৌকার পেছনে কাতারবন্দী হয়েছিল? তখন তো এখনকার মতো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা ছিল না। আমরা ন্যাপের পক্ষ থেকে কত পরিকল্পিতভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। উঠোন বৈঠক, পাড়া বৈঠক, হাটসভা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা ন্যাপের বক্তব্য মানুষকে জানানোর চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগ এসবের কিছুই করেনি। তারপরও মানুষ ন্যাপের দিকে না ঝুঁকে আওয়ামী লীগের দিকেই ঝুঁকেছে।

এত বছর পরে সত্তরের নির্বাচনের ফল নিয়ে ভাবতে বসে মনে হচ্ছে, আমরা আওয়ামী লীগ না করলেও মনে মনে হয়তো আওয়ামী লীগের জয়ই প্রত্যাশা করেছিলাম। সে জন্যই আমাদের প্রার্থীর পরাজয় এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় আমাদের অনেককেই অখুশি না করে উৎফুল্ল করেছিল। আমরা যেন মনে মনে চাইছিলাম, আমাদের এলাকায় আমাদের প্রার্থী জিতুক আর সারা দেশে জিতুক আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে গিয়েছিল। আমাদের প্রার্থীর ছোট ভাই মোহাম্মদ সুলতান, যিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির কট্টর সমালোচক এবং ব্যক্তিগতভাবে শেখ মুজিবের প্রতিও যাঁর বীতরাগ গোপন ছিল না, তিনিও সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছিলেন এই বলে যে শেখ মুজিব যদি ক্ষমতায় গিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন, তাহলে কমিউনিস্টরা মুক্ত পরিবেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। কমিউনিস্ট বলতে তিনি তখন মস্কো এবং পিকিংপন্থী—দুই গ্রুপকেই বুঝিয়েছিলেন কি না, সে প্রশ্ন তখন অবশ্য করা হয়নি। তবে তিনি ছিলেন পিকিংপন্থী এবং মস্কো লাইনের ঘোরতর বিরোধী।

মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি। বায়ান্নর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সময়ের দাবি পূরণের লক্ষ্য সামনে রেখেই জন্ম হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের। এ দেশে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের পাশাপাশি বাম-প্রগতিশীল চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে ছাত্র ইউনিয়নের অবদান একক সংগঠন হিসেবে সবচেয়ে বেশি। মোহাম্মদ সুলতানের আরেকটি বড় কীর্তি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশের প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’র প্রকাশক ছিলেন তিনি। এই সংকলনের রাজনৈতিক-সাহিত্যিক-সামাজিক গুরুত্ব এককথায় অপরিসীম। সরাসরি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে, বিশেষ করে চীনপন্থার অনুসারী হয়ে মোহাম্মদ সুলতান তাঁর মেধার অপচয় ঘটিয়েছেন কি? প্রখর রাজনৈতিক জ্ঞানের অধিকারী হলেও সাধারণ মানুষের মন-মেজাজ বোঝার ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল বলেই কি তিনি রাজনীতির মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েছিলেন?

সত্তরের নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর মোহাম্মদ সুলতানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি একটু চিন্তিত হয়ে জবাব দিয়েছিলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মনোভাব যতটুকু বুঝি, তাতে এটা জোর দিয়েই বলতে পারি যে তারা আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা ছাড়বে না। পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ভুট্টো খুব খারাপ মানুষ। ইয়াহিয়ার সঙ্গে মিলে তিনি শেষ পর্যন্ত কী করবেন বুঝতে পারছি না। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে, শেখ মুজিবকে ক্ষমতায় যেতে হলে সশস্ত্র পথেই যেতে হবে। 

মোহাম্মদ সুলতানের কথা তখন আমার খুব পছন্দ হয়নি। ভোটে জেতা দলকে আবার ক্ষমতার বাইরে রাখা যায় নাকি? মোহাম্মদ সুলতান নিজে সশস্ত্র বিপ্লবের রাজনীতির পক্ষে বলেই হয়তো তাঁর মাথায় সশস্ত্র উপায়ের কথা ঘুরছে। কিন্তু তিন মাস যেতে না-যেতেই নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আমাদের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র পথে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার পথে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। যদিও বঙ্গবন্ধু তাঁর সাতই মার্চের ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন, যার যা আছে তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন, তবুও এটা এখন স্বীকার করতেই হবে যে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার প্রস্তুতি আসলে কারোরই ছিল না—না রাজনৈতিক নেতৃত্বের, না জনসাধারণের। সত্তরের নির্বাচনে যাঁরা আওয়ামী লীগকে, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন তাঁরাও সবাই নিশ্চয়ই পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে ছিলেন না। থাকলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন হয়েছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি ঠিকই, কিন্তু বিজয়ের ধারায় থাকতে পারিনি। এর বড় কারণ হয়তো এটাই, স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য যে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক এবং মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন, সেটা আমাদের ছিল না।

দেশে আবারও একটি নির্বাচন আসছে। ওই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করলেও বিএনপি আছে এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য সরকারের ওপর আমেরিকাসহ কিছু পশ্চিমা দেশের চাপ থাকলেও নির্দলীয় বা নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা নিয়ে কোনো চাপের কথা শোনা যায় না। সেই জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আওয়ামী লীগের চাওয়া একই—অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। 

অন্যদিকে বিদেশি দূতাবাসে ঘন ঘন যাতায়াতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হঠাৎ সেদিন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারত কী বলল, এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমাদের দরকার, আমাদের মানুষ কী বলে। মানুষ খুব পরিষ্কার করে বলছে, বিদায় হও। আর সময় নেই। যেতে হবে। এই সরকারকে যেতেই হবে।’  

সরকারকে যে যেতেই হবে, মানুষের এই বার্তা মির্জা ফখরুল কীভাবে পেয়েছেন? রাজপথে বিএনপির যে আন্দোলনের ভাব দেখা যাচ্ছে, তা কি খুব উৎসাহিত হওয়ার মতো? শুধু এক বা একাধিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণে কখনো গণ-অভ্যুত্থান হয় না। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সম্পৃক্ততা ছাড়া গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার নজির নেই। গণ-অভ্যুত্থানের আকাশকুসুম কল্পনা বাদ নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ধারায় সবার আস্থা স্থাপনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ পক্ষে না থাকলে ভোট কারচুপি করে পার পাওয়া সহজ হয় না।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ইমরান খান ‘গাদ্দার’ শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত—পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতি

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

বিয়ে করলেন হান্নান মাসউদ, কনে কে

বিচারকদের নিরাপত্তায় গা ছাড়া ভাব

ভারতীয় রুপি এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হলো যেভাবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ইমরান খান ‘গাদ্দার’ শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত—পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতি

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

বিয়ে করলেন হান্নান মাসউদ, কনে কে

বিচারকদের নিরাপত্তায় গা ছাড়া ভাব

ভারতীয় রুপি এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হলো যেভাবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ইমরান খান ‘গাদ্দার’ শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত—পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতি

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

বিয়ে করলেন হান্নান মাসউদ, কনে কে

বিচারকদের নিরাপত্তায় গা ছাড়া ভাব

ভারতীয় রুপি এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হলো যেভাবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ইমরান খান ‘গাদ্দার’ শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত—পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতি

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

বিয়ে করলেন হান্নান মাসউদ, কনে কে

বিচারকদের নিরাপত্তায় গা ছাড়া ভাব

ভারতীয় রুপি এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হলো যেভাবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ইমরান খান ‘গাদ্দার’ শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত—পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতি

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

বিয়ে করলেন হান্নান মাসউদ, কনে কে

বিচারকদের নিরাপত্তায় গা ছাড়া ভাব

ভারতীয় রুপি এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হলো যেভাবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত