Ajker Patrika

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন এবার করতেই হবে

হাসান মামুন
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন এবার করতেই হবে

সামনের জাতীয় নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য করা যে জরুরি, সে বিষয়ে অস্পষ্ট হলেও একটা ঐকমত্য গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। কী কী শর্ত পূরণ হলে একটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়, সেটাও অজানা নয়। নির্বাচন সব সময়ই হতে হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ। এই শব্দগুলো আমরা মাথায় গেঁথে নিয়েছিলাম এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আদায় করতে গিয়ে। সে লক্ষ্য অর্জিত হয়েছিল শুধু আন্দোলনে নয়—আন্দোলনকারী দলগুলোর ঐতিহাসিক সমঝোতার মাধ্যমে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় জনপ্রতিনিধিত্ব কায়েমের লক্ষ্যে সাংবিধানিক বিধিবিধানের বাইরে গিয়ে কেবল রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনকালীন সরকার তখন গঠিত হয়েছিল। তার নেতৃত্বে আয়োজিত নির্বাচনটি ‘অংশগ্রহণমূলক’ও হয়। এতটাই অংশগ্রহণমূলক যে ক্ষমতাচ্যুত সেনাশাসকের দল জাতীয় পার্টিও তাতে অংশ নেয় এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসন পেয়ে অনেককে বিস্মিত করে।

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের কথা ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকেও বলা হচ্ছে এটা একপ্রকার স্বীকার করে নিয়ে যে, আগের দুটি নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। দেশে গ্রহণযোগ্যতা পেলে বিদেশেও পেত বৈকি। এ দেশে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ইতিহাসও কম উজ্জ্বল নয়। তাতে বিদেশেও আমাদের মর্যাদা বেড়েছিল। অনেকে আশা করেছিলাম, এই প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রচর্চার পথে অনেক দূর এগিয়ে যাব। সেটা আর হয়নি। হয়নি এ জন্য যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রক্রিয়াটিই বিনষ্ট করে দিয়েছি। এতে রাজনীতির বিবদমান উভয় পক্ষেরই কমবেশি দায় রয়েছে। আমরা সবাই এসব ঘটনার সাক্ষী।

এখন কথা হলো, ২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো নির্বাচন যেহেতু কাম্য নয়; দুইয়ের মধ্যে গড় করে যা পাওয়া যায়, সেটাও যেহেতু কোনো মানদণ্ড নয়, সে ক্ষেত্রে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, কেমন নির্বাচন চাই। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্দলীয় সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন আমরা করেছিলাম, সেগুলোর মধ্যে সেরা কোনটি? এ ব্যাপারেও বিবদমান দলগুলোকে একমত হতে আমরা দেখব না। তারা যেসব নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, সেগুলোকেই হয়তো বলবে গ্রহণযোগ্য! তবে এ কথা ঠিক, ওই চার নির্বাচনের কোনোটিই পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ছিল না। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচনটিও যদি মানদণ্ড হয়, সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠবে—এটি অর্জন কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সম্ভবপর কি না।

নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ধারণা অভিনব বটে। স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় এমন ব্যবস্থা নেই। এর প্রয়োজনও নেই; কেননা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধিব্যবস্থা তারা পাকা করে ফেলেছে। যারা সেটা দীর্ঘ সময়েও করতে পারেনি, তাদের কাতারে আছি আমরা। তবে এমন একটা ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম যে কয়েকটি নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করতে করতে ব্যবস্থাটি সংস্কার করে একটা পর্যায়ে উন্নীত হয়ে গেলে তখন স্বাভাবিক নিয়মেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমরা পারব। আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম, গণতন্ত্রের ন্যূনতম পূর্বশর্ত নির্বাচন আয়োজন ও ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে অন্তত কোনো দুর্গতির মধ্যে আর পড়তে হবে না।

সে আশার গুড়ে বালি ঢেলেছে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা-যাওয়া করা উভয় দলই। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষের ‘অবদান’ আমরা ভুলিনি। দেশের তরুণ ও কিশোর জনগোষ্ঠীর কাছে অবশ্য সবশেষ নির্বাচনগুলোর স্মৃতি তরতাজা, যেগুলো বিতর্কিত বা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা সম্ভবত তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তাদের মধ্যে এমন বাংলাদেশের প্রত্যাশাও বেশি, যেটি নিয়ে তারা গর্ব করতে পারে বিশ্বে। ক্রমে হাতের কাছে আসা প্রযুক্তির কল্যাণে তারা এখন সারা দুনিয়ার খবর পেয়ে যাচ্ছে। উন্নত আর ভালো কিছু অর্জনের আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে বাড়ছে স্বভাবতই। তবে ভালো কিছু পাওয়ার অধিকার সব নাগরিকেরই আছে। এই প্রেক্ষাপটেই আগামী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার দাবি হয়ে উঠেছে জোরদার। দু-দুটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজনে ব্যর্থ সরকারও দৃশ্যত এ দাবি অগ্রাহ্য করতে পারছে না। এটাকে একটা অগ্রগতিও বলা যেতে পারে।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রভাবশালী পশ্চিমা সরকার ও সংস্থাগুলোর বিশেষ আগ্রহও পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অন্তত তাদের তরফ থেকে এমনটি দেখা যায়নি। তখন তারা আমাদের প্রতিবেশী বৃহৎ দেশটির ‘চোখ দিয়ে’ বাংলাদেশের গতি-প্রকৃতিকে দেখত বলে কথা চালু আছে। পরিবর্তিত সময়ে তারা যে এখন নিজ চোখ দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে দেখতে চাইছে, তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের কোনো নির্বাচন নিয়ে এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এত সক্রিয়তা আর কখনো দেখা যায়নি। এই মুহূর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলও দেশে রয়েছে এবং তারা এখানে এসেছে সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও পরিবেশ দেখতে। তাদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই ইইউ আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিগত দুটি নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চাইলেও তাদের ভিসা দেওয়া হয়নি বলে খবর রয়েছে। আর সরকার এবার নিজেই আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছে ইইউ প্রতিনিধিদলকে। তারা নিশ্চয়ই এর প্রশংসা করবে। ইইউ প্রতিনিধিদলটি দীর্ঘদিন এখানে অবস্থান করে রাজনৈতিক দলসহ নির্বাচনের সব পক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে। সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য এবং তাতে প্রকাশিত মনোভাব বুঝে উঠতে চাইছে।

নির্বাচনের প্রধান পক্ষ বা অংশীজন অবশ্য জনগণ এবং নির্দিষ্ট করে বললে ভোটার। সাধারণভাবে তাদের দাবি একটাই—গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তারা নিশ্চয়ই পছন্দমতো দল ও প্রার্থীকে ভোট দিতে চায়। এর উপযুক্ত পরিবেশ চায় তারা। ভোটারদের মধ্যেও স্বভাবতই বিভক্তি রয়েছে, যেমন সব দেশেই থাকে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন নিয়েও তাদের একাংশে মতভেদ থাকতে পারে। কিছু উগ্র সমর্থক থাকে, যারা তাদের পছন্দ করা দলের নেতাদের মতোই চিন্তা করতে অভ্যস্ত। কেমন নির্বাচন হলে তার সমর্থিত দলের ‘সুবিধা’ হবে, সে চিন্তায় তারা মশগুল। আর এটা সব সময়ই দেখতে পাওয়া গেছে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো নির্বাচনী ব্যবস্থাটি ইতিমধ্যে পাকাপোক্ত করে ফেলা গেলে এর মধ্যে সুবিধা নিতে চাওয়া দল ও সমর্থকগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র চিন্তা চর্চার সুযোগ অবশ্য কমত। দুর্ভাগ্যবশত সেটি হয়নি।

আগামী নির্বাচন ঘিরে পশ্চিমা একেকটি প্রতিনিধিদল দেশে এলে এবং তারা চলে যাওয়ার পর একশ্রেণির রাজনীতিক ও তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে এমন আলোচনা প্রাধান্য পেতে দেখি, এটি কার পক্ষে গেল। কার জন্য স্বস্তি এবং কার অস্বস্তি! যারা নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে বা দেখতে চায়, এটা তাদের জন্য অস্বস্তিকর। আমাদের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের আগ্রহ-অনাগ্রহও মূল্যায়ন করা হচ্ছে নিছক দলীয় বিবেচনায়। নির্বাচন সামনে রেখে তার অনেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া ভিসা নীতি ঘিরেও ‘স্বস্তি-অস্বস্তি’র আলোচনা প্রবল হয়ে উঠেছিল। এটা যে ৫০ বছরের বেশি আগে স্বাধীনতা লাভকারী একটি জাতির জন্য লজ্জাজনক, সেই উপলব্ধি তেমন দেখা যায়নি। এত দিন পরও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ—এ জন্য তো নিজেদেরই প্রথম লজ্জিত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যও আমরা ধরে রাখতে পারিনি, যা চরম বেদনাদায়ক।

জাতি হিসেবে আমাদের কোনো সাফল্য নেই, তা তো নয়; বিশেষ করে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সাফল্য অনেক এবং তা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। যেসব পশ্চিমা দেশ ও সংস্থা আগামী নির্বাচন নিয়ে এমনকি আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, তারাই কিন্তু এ দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে থাকে। তারা এক অর্থে এর অংশীদারও। তাদের নেতৃত্বে গঠিত উন্নয়ন সংস্থাগুলো থেকে অব্যাহতভাবে ঋণসহায়তা নিচ্ছি আমরা। তাদের পরামর্শ মেনে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায়ও অগ্রসর হচ্ছি এবং এ ক্ষেত্রে আমাদের বিবদমান দলগুলোয় একটা ঐকমত্যও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘নীতির ধারাবাহিকতা’ও দৃশ্যমান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর দেশগুলো আমাদের প্রধান রপ্তানির গন্তব্যও বটে এবং আমরা তো রপ্তানিমুখী প্রবৃদ্ধিই জোরদার করতে চাইছি।

এসব দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রের মডেলও আমরা অনুসরণ করছি। এর একটা প্রাথমিক আর অবিচ্ছেদ্য উপাদান হলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং এর মাধ্যমে গণতন্ত্রচর্চাকে ক্রমে আরও বাড়িয়ে তোলার সংগ্রাম। সেই কাজে আমরা যে অনেক পিছিয়ে পড়েছি, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। এ কাজে যে দ্রুতই আবার এগিয়ে যেতে হবে, সেই নিশ্চয়তাও জোরদার করা চাই। জাতীয় নির্বাচনের জন্য সময় আছে পাঁচ মাসের বেশি। এটা কম সময়; আবার কমও নয়। নির্ভর করছে আমরা এ সময়টাকে কীভাবে কাজে লাগাই, তার ওপর। যেকোনো উপায়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা এবার করতেই হবে এবং তাতে ঘটাতে হবে জন-ইচ্ছার প্রতিফলন। এটা না ঘটিয়ে আরও দীর্ঘকাল দেশ পরিচালনার আয়োজন অর্থনীতি পরিচালনায়ও সংকট হয়তো আরও বাড়িয়ে তুলবে। কেননা, সরকারে জনপ্রতিনিধিত্বের তীব্র অভাব অর্থনীতিতে উপযুক্ত নীতি আর সিদ্ধান্ত গ্রহণকেও কঠিন করে তোলে, এটা হলো অভিজ্ঞতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষকদের ঢুকতে না দিয়ে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকেরা

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’, মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম

সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা, ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগানে ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত