Ajker Patrika

বিশ্বের মানুষের মাথাপিছু ঋণ এখন সাড়ে ১২ লাখ টাকা

আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৩, ০১: ০৪
বিশ্বের মানুষের মাথাপিছু ঋণ এখন সাড়ে ১২ লাখ টাকা

নজিরবিহীনভাবে বিশ্বের মানুষের মাথাপিছু ঋণ বেড়ে গেছে। সামগ্রিকভাবে বেড়েছে বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণও। জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন আঙ্কটাডের গ্লোবাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯২ ট্রিলিয়ন বা ৯২ লাখ কোটি ডলারে। বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ধরে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বের সামগ্রিক এবং মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ নিয়ে জাতিসংঘ এই প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। কোভিড-১৯ মহামারির মতো বৈশ্বিক দুর্যোগ এই ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

গ্লোবাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের সামগ্রিক ৯২ ট্রিলিয়ন বা ৯২ হাজার বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্য সবচেয়ে বেশি ঋণ যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটি এককভাবে মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে রেখেছে। দেশটির মোট ঋণের পরিমাণ ৩০ হাজার ৯৮৫ বিলিয়ন ডলার।

বৈশ্বিক ঋণ গ্রহণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটির মোট ঋণ ১৩ হাজার ৯৫৫ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় অবস্থানেই এশিয়ার দেশ জাপান। দেশটির মোট ঋণ ১১ হাজার ৬১ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। ব্রিটিশদের মোট ঋণ ৩ হাজার ১৫২ বিলিয়ন ডলার। এর পরেই রয়েছে ফ্রান্স। দেশটির মোট ঋণ ৩ হাজার ৯২ বিলিয়ন ডলার। 

 debt-02২ হাজার ৯১১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে তালিকার ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ইতালি। পিছিয়ে নেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতও। বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশটির মোট ঋণ ২ হাজার ৮১৫ বিলিয়ন ডলার। ভারতের থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই ইউরোপের ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল হার্ট’ খ্যাত জার্মানিও। দেশটির মোট ঋণ ২ হাজার ৭১১ বিলিয়ন ডলার। 

বিশ্বে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ব্রাজিলও এই তালিকায় রয়েছে। দেশটির মোট ঋণ ১ হাজার ৬৫৩ বিলিয়ন ডলার। প্রায় কাছাকাছি রয়েছে স্পেন। দেশটির ঋণ ১ হাজার ৫৬৮ বিলিয়ন ডলার। ঋণের দিক থেকে শীর্ষ তালিকার নিচের দিকে থাকা দুটি দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া এবং মেক্সিকো। অস্ট্রেলিয়ার ৯৪৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ আর মেক্সিকোর ঋণের পরিমান ৭৯২ বিলিয়ন ডলার। 

প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের মোট ঋণের ৩০ শতাংশ নিয়ে রেখেছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। বর্তমানে যে ঋণ রয়েছে তা ২০০০ সালের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি। এই ঋণ ২০২২ সালে বিশ্বের মোট জিডিপির (১০৩ ট্রিলিয়ন ডলার) প্রায় কাছাকাছি। প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের ৩৩০ কোটি মানুষ এমন সব দেশে বাস করেন যেসব দেশ ঋণের সুদ পরিশোধের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করে তা সেসব দেশের স্বাস্থ্য বা শিক্ষা খাতে ব্যয়ের চেয়েও বেশি। 

debt-03প্রতিবেদন অনুসারে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকারি ঋণ দিন দিন ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। উচ্চ হারে ঋণের বোঝা বহনকারী দেশের সংখ্যা বাড়ছেই। ২০২০ সালে অন্তত ৭০টি দেশের সরকারি ঋণ তাদের জিডিপির ৬০ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০২২ সালে অবশ্য সেটি কমে ৬০–এ নেমেছে। 

আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার মধ্যেই অসাম্য গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বৈশ্বিক দক্ষিণের ঘাড়েই ঋণের বোঝা বেশি। এর পেছনে রয়েছে বৈদিশক ঋণ, নানামুখী সংকট এবং ঋণের পেছনে উচ্চ ও ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধি। 

এছাড়া বিদেশি মুদ্রায় বেশি বেশি ঋণ নেওয়ার কারণে এসব দেশ বহির্বিশ্বের অভিঘাতের প্রতি দিন দিন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। 

দেখা যাচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্ধেকই বৈদেশিক রাজস্বের কমপক্ষে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ বৈদেশিক ঋণের পেছনে বরাদ্দ রাখছে। 

বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেসরকারি ঋণদাতাদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। এতে ঋণ আরও বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে, সেই সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়াতেও জটিলতা বাড়ছে। 

অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি বড় চিত্র উঠে এসেছে বৈশ্বিক উত্তর ও বৈশ্বিক দক্ষিণের মধ্যে ঋণের প্রকৃতিতে। উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশের চেয়ে অনেক কম ঋণগ্রহীতা হলেও তাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। এতে করে কিছু দেশ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে। একদিকে ঋণ পরিশোধ অন্যদিকে নাগরিকদের পেছনে ব্যয় এর দুটোর ভারসাম্য করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। 

debt-01ঋণের সুদ পরিশোধের পেছনে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যয়ের হার দিন দিন বাড়ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উন্নয়নশীল দেশের নিট সুদ পরিশোধের পরিমাণ রাজস্বের ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো সরকারি ঋণের সুদ পরিশোধের পেছনে ক্রমবর্ধমান হারে রাষ্ট্রীয় সম্পদ খরচ করে ফেলছে। নাগরিকদের কল্যাণে ব্যয়ের তুলনায় সুদ পরিশোধে খরচ দ্রুত বাড়ছে। অনেক দেশ জনগণের কল্যাণে ব্যয়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধেই বেশি অর্থ ব্যয় করছে। উন্নয়ন ব্যয়কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে সুদের পরিশোধে ব্যয়। 

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমাদের অর্ধেক বিশ্বই উন্নয়ন নামের বিপর্যয়ের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। ঋণ সংকট এই বিপর্যয়কে আরও উসকে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সেকেলে অর্থব্যবস্থার কারণেই অস্থিরভাবে এই ঋণ বেড়ে যেতে পেরেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিসিআইয়ের সাধারণ সভা: ভ্যাট ও করকাঠামো যুক্তিসংগত করার দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ভ্যাট ও করকাঠামোকে আরও যুক্তিসংগত করার দাবি তুলেছে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে যুক্ত উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। পাশাপাশি, সকল শিল্প এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহকে নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে উৎপাদন কার্যক্রম বাধাহীনভাবে চলতে পারে।

গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁরা বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, শিল্পের প্রতিযোগিতা বজায় রাখা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া অত্যাবশ্যক।

সভায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের উৎপাদনশীল শিল্পকে শক্তিশালী রাখতে সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখা, সুষ্ঠু উৎপাদন ও কার্যক্রম নিশ্চিত করতে মসৃণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। আয়বৈষম্য কমানো এবং টেকসই এমএসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ ও শিল্পের যৌথ উদ্যোগ অপরিহার্য। বিসিআই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করছে, যাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, শিল্প প্রতিযোগিতামূলক থাকে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভ্যাট ও করকাঠামো সহজ, উদ্যোক্তাবান্ধব ও উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে লক্ষ্য করেই তৈরি হওয়া উচিত। তাঁরা আরও বলেন, পণ্য টেস্টিং এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়াকে উদ্যোক্তাবান্ধব করা, নতুন উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপের সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি। এসব পদক্ষেপ দেশীয় শিল্পে নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতা ধরে রাখবে।

সভায় শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং সাবেক সভাপতি এ টি এম ওয়াজিউল্লাহর জন্য। এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। সভা পরিচালনা করেন বিসিআই সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. হেলাল উদ্দিন। সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, বিগত ৩৮তম সাধারণ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিসিআই কার্যক্রম ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অডিটেড হিসাব অনুমোদন এবং নতুন অডিটর নিয়োগের বিষয়ও অনুমোদিত হয়। সভায় অংশ নেন বিসিআই সদস্য ও সাবেক নেতা শাহেদুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের যে আশঙ্কাজনক উত্থান ঘটেছে, তার সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়ছে গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তায়। নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুরক্ষাকাঠামোই কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘাটতি অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং খাতের সংকট কেবল সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং এর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়বে সাধারণ গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষার ওপর, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২৪টি ব্যাংকে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বিপরীতে এসব ব্যাংক রাখতে পেরেছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এতে সম্মিলিত সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।

এক বছর আগের সেপ্টেম্বরে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা (২ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি)। ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এই প্রবণতা স্বাভাবিক কোনো আর্থিক চক্রের ফল নয়; এটি দীর্ঘদিন ধরে আড়াল করে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রকৃত চিত্র সামনে আসার পরিণতি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পালাবদলের পর ব্যাংকিং খাতে পুনর্গঠিত, পুনঃ তফসিলকৃত, অবলোপনকৃত ও আদালতে আটকে থাকা ঋণসহ মোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মোট অঙ্ক প্রায় সাড়ে ১০ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং মন্দমানের কুঋণ ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি মানে সরাসরি আমানতকারীর ঝুঁকি। তাঁর মতে, গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ব্যাংক এমন অবস্থায় আছে, তারা ন্যূনতম সঞ্চিতিও গড়ে তুলতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সময়মতো প্রভিশন না রাখতে পারলে সেই ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ হওয়া উচিত।

ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী, সাধারণ শ্রেণির ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা লোকসান শ্রেণির খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, কম আমানত প্রবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক আর্থিক সংকটে ব্যাংকগুলোর সেই সক্ষমতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, খেলাপি ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দ্রুত বৃদ্ধিই প্রভিশন ঘাটতির মূল কারণ। সরকারের পালাবদলের পর এসব ঝুঁকি প্রকাশ্যে আসায় ব্যাংকিং খাতের ভেতরের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ডাইনামিক প্রভিশনিং চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এই ডাইনামিক প্রভিশনিং চালু হলে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়বে, মূলধনের চাপ কমবে এবং কুঋণ হ্রাস পেলে প্রভিশন ঘাটতিও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেবিএস হোল্ডিংসের ফ্ল্যাট কিনলে বিশেষ ছাড় পাবেন প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

প্রাইম ব্যাংক পিএলসি দেশের শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।

সম্প্রতি জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই অংশীদারত্বের আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা পাবেন, যা তাঁদের দেশের প্রিমিয়াম রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ আরও সহজলভ্য করবে।

চুক্তিতে প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন মামুর আহমেদ এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল হক।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেটস জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মো. বেলায়েত হোসেনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের লাইফস্টাইলভিত্তিক মানসম্পন্ন সেবা ও আর্থিক সমাধান প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, যা গ্রাহকদের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুনরায় বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবার নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। তিনি আম্বার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং দেশের টেক্সটাইল শিল্পে একজন উদ্যোক্তা।

গত ২৫ নভেম্বর বিটিএমএর গুলশান কার্যালয়ে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিটিএমএ।

এতে বলা হয়, বিটিএমএর তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্টও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. শামীম ইসলাম, ফ্যাব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. আবুল কালাম ও টেক্সটাইল প্রোডাক্ট প্রসেসের ক্যাটাগরি থেকে শফিকুল ইসলাম সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত