Ajker Patrika

বিএনপি শক্তি দেখালে আওয়ামী লীগ কী করবে

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৩, ১২: ১১
বিএনপি শক্তি দেখালে আওয়ামী লীগ কী করবে

এ লেখাটি ছাপা হওয়ার দিন, অর্থাৎ ১২ জুলাই রাজধানীতে রাজনৈতিক ‘শক্তি’ দেখাতে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে করবে শান্তি সমাবেশ আর বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বড় শোডাউন করে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা দিয়ে নতুন আন্দোলনের সূচনা করবে। দুই দলের পক্ষ থেকেই ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনার কথা গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে। ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের উপস্থিতিতে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল সমাবেশ করে নিজ নিজ জনপ্রিয়তার পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করবে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান একমুখী নয়। আওয়ামী লীগ চায় আরও এক মেয়াদ সরকারে থাকতে। বিএনপি চায় সরকার ফেলে দিতে। সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক উপায় হলো নির্বাচন। এই নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়েই দুই দলের মতবিরোধ। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির পথে হাঁটতে দুই দলেরই আগ্রহ কম। এই বিরোধ-বিতর্কের সুযোগে বিদেশি কূটনীতিকদের দৌড়াদৌড়ি রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

সরকার পতনের আন্দোলনে গতি সঞ্চারের চেষ্টা বহুদিন ধরেই বিএনপি করছে। বৃহত্তর ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে ২০-দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে বিএনপি নতুন কৌশল নিয়েছে। বিএনপির এখন একাধিক মিত্র জোট। রয়েছে ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং সমমনা গণতান্ত্রিক জোট, অর্থাৎ এক জোট ভেঙে একাধিক জোটকে আন্দোলনের সঙ্গী হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ নামেও বিএনপির সঙ্গে একটি জোট আছে। জামায়াতে ইসলামী নামের দলটি বিএনপির স্বাভাবিক মিত্র হলেও সম্প্রতি এই দুই দলের মধ্যে চলছে মান-অভিমানের খেলা। সব মিলিয়ে হইহই কাণ্ড রইরই ব্যাপার। বিএনপির সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে মোট দলের সংখ্যা কেউ বলছেন ৫৪, কেউ বলছেন ৬৬, আবার কেউ বলছেন সংখ্যা হয়তো শতাধিকও হয়ে যেতে পারে। তবে এই মিত্রদের সংখ্যা অনেক হলেও কার কতটুকু শক্তি আছে তা নিয়ে সংশয় আছে বিএনপির মধ্যেই। সব দল ও নেতার নাম মনে রাখাও কঠিন। আসলে মিত্র নিয়ে বিএনপি সমস্যায়ই পড়েছে। এত দলকে নিয়ে একমত হয়ে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সহজ কথা নয়। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে বিএনপিতে, এমনকি গণতন্ত্র মঞ্চেও। আবার নুরের দল গণ অধিকার পরিষদে তহবিলের স্বচ্ছতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের জেরে দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াকে অব্যাহতি দিয়ে নুর নিজেই দলের প্রধান হয়ে বসেছেন। নুর মনে করছেন, তাঁর গণ অধিকার পরিষদ অনেক বড় দল হয়ে উঠেছে এবং তিনি নিজে একজন বড় জাতীয় নেতা। এহেন নুরকে সামাল দিয়ে বিএনপি কি সঙ্গে রাখতে পারবে?

বিএনপির নেতারা আন্দোলন নিয়ে বড় বড় কথা বললেও বাস্তবে দলটি খুব সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন না। মাস কয়েক আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, কোনো স্বৈরাচারী সরকার আপসে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে চায় না। তাদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটানোর বিকল্প নেই। অতীতে যেমন ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদকে হটিয়েছে। এই সরকারও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেবে—এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র!

বিষয়টি যেন এমন, বিএনপির নেতারা হুইসিল বাজাবেন আর দেশে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে যাবে! এ ধরনের মুখস্থ বক্তৃতা শুনে বিএনপির কর্মীরাও এখন খুশি হন কি না, সেটা এক মস্ত প্রশ্ন। কিছু কিছু ঘটনার জন্য দেশবাসীর একাংশ কিছুটা অসন্তুষ্ট থাকলেও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য মানুষ উসখুস করছে, বাস্তবে কি তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে? ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষের মধ্যে বিএনপি কৌতূহল তৈরি করতে পারলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। বিএনপি যদি সরকারের নিষেধ অমান্য করে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে পারত, তাহলে এটা বোঝা যেত যে সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ার সক্ষমতা বিএনপি অর্জন করেছে। কিন্তু উল্টো বিএনপি সরকারের শর্তেই সমাবেশের জায়গা বদলাতে বাধ্য হয়েছে।

সরকারকে অনির্বাচিত বা অগণতান্ত্রিক যে হিসেবেই বিএনপি উল্লেখ করুক না কেন, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সক্ষমতা দলটি দেখাতে পারছে না।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। সরকার বিএনপির এই দাবি মানবে বলে মনে হয় না। আগেও এই দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করে সফল হয়নি। এবারও হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিএনপিকে আওয়ামী লীগের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে কীভাবে দলটির প্রার্থীদের পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে আনা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করাই কি দলটির জন্য ভালো নয়? ভোটাররা যাতে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, অর্থাৎ আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। গত দুটি সংসদ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, আগামী নির্বাচন যে সেভাবে হবে না, তা তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলছেন।

আমেরিকাসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকদের দৌড়াদৌড়ি কিংবা আমেরিকার ভিসা নীতি দেখে বিএনপি নিজেদের পরিকল্পনা সাজালে ভুল হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আমেরিকার দূরত্ব তৈরির গল্প যদি সত্যও হয়ে থাকে, তাতে বিএনপির খুশিতে আটখানা হওয়ার কিছু আছে কি? গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলা আমেরিকার পুরোনো অভ্যাস। আবার এটাও তো অসত্য নয় যে অতীতে পৃথিবীর অনেক দেশে সামরিক সরকার আমেরিকার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পেরেছিল। নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে মানবাধিকারের বুলি ভুলতে আমেরিকার সময় লাগে না।

রাজনীতি কিংবা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি ওয়ানওয়ে ট্রাফিকের মতো নয়। আমেরিকার ওপর বাংলাদেশের যেমন নির্ভরশীলতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, তেমনি ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের পাশে থাকা আমেরিকারও স্বার্থসংশ্লিষ্ট। বাংলাদেশ যেন সব বিষয়ে ভারত, চীন ও রাশিয়ার ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে না ওঠে, সেটা আমেরিকা নিশ্চিত করতে চায়। বাংলাদেশ একটু ভারসাম্যমূলক কূটনৈতিক অবস্থান বজায় রাখতে পারলে অনেক সংকটই এড়িয়ে চলতে পারবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এই ভারসাম্যের কূটনীতিই অনুসরণ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়ে ওঠার যে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে, তাতে ভূরাজনীতি ও কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব রয়েছে। এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেরও স্বার্থ জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের সবচেয়ে বড় উৎস যেমন চীন, তেমনি রপ্তানির অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে আমেরিকা। এই বাস্তবতায় দেশ দুটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ভৌগোলিক অবস্থান ও কৌশলগত নানা কারণ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তায়ও বাংলাদেশ প্রশংসিত ভূমিকা রাখছে। তাই এখন ঢাকাকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট কোনো জোটে বা প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সতর্ক ও কৌশলী অবস্থানে থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। 
নানা বিবেচনা ও সমীকরণ মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতের জোট কোয়াডে বাংলাদেশ আপাতত যুক্ত হচ্ছে না। তবে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে (আইপিএস) সম্পৃক্ত হচ্ছে।

ভৌগোলিক অবস্থান, উদীয়মান অর্থনীতি ও বিপুল জনশক্তির বড় বাজার বাংলাদেশকে কৌশলগত কারণে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতেও পাশে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর তাদের চিরশত্রু চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়েও তারা অবগত। বাংলাদেশ কোনো বলয়ে থাকবে না স্পষ্ট করলেও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ঐতিহাসিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার সম্পর্ক বজায় রেখেই অগ্রসর হবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। ভারতের কাছেও বাংলাদেশ অগ্রাধিকারের স্থান ধরে রেখেছে। এ অঞ্চলে এখনো ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাই বাইডেন প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশ নীতির খুব একটা হেরফের হওয়ার সুযোগ আছে কি?

বিএনপি রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের আগে এসব বাস্তবতা বিবেচনায় না নিলে আগের নির্বাচনের মতোই ভুল করবে। অসংখ্য ছোট ছোট দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নেমে বড় বড় কথা বলে অযথা উত্তেজনা ছড়ানোর ফল যে ভালো হয় না, বিএনপির নেতৃত্ব ১০ ডিসেম্বরের ঘটনায় নিশ্চয়ই সেটা টের পেয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশগ্রহণ না করে তার পরিণতি কী হবে, তার একটি ছোট রিহার্সাল সম্ভবত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে হয়েছে। বিএনপি ছেড়ে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে জিতিয়ে আনার জন্য শুধু আওয়ামী লীগ নয়, স্থানীয় বিএনপি ও জাতীয় পার্টিও এক হয়েছিল। বিএনপির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি শিক্ষা হতে পারে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত অমান্য করার প্রস্তুতি নেই, সেটা কে বলতে পারে? বিএনপি যে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করেছিল সেটা তো তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত অমান্য করেই। নির্বাচনে অংশ না নেওয়া কিংবা নির্বাচন ভন্ডুল করার পথে না হেঁটে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে আওয়ামী লীগকে শক্ত চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারবে বিএনপি। আর তা না হলে বিএনপিই সম্ভবত আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। বিএনপির উচিত হবে বড় বড় কথা না বলে সংগঠন গুছিয়ে নির্বাচনকে আন্দোলন হিসেবে নিয়ে সরকারকেই চাপের মুখে ফেলা।

বিএনপি সরকার হটানোর তোড়জোড় করবে, আর আওয়ামী লীগ বসে বসে দেখবে, তা কি হওয়ার মতো? রাজনীতিকে বলা হয় কৌশলের খেলা। শেখ হাসিনাকে এই কৌশলের খেলায় বিএনপি কি পরাজিত করতে পেরেছে কখনো?

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত