হামিদ মীর

নিজের চেনা-পরিচিত বিশ্ব বদলে দিতে প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই একটি দিন আসে। পাকিস্তানে সেই দিন কি এল? সম্ভবত এবং সেদিনটি বোধ হয় ৯ মে। ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তানের পুরোনো ভবন, রাওয়ালপিন্ডির চারটি মেট্রো বাসস্টেশন ও কর্পস কমান্ডার হাউস ভাঙচুর চালায় ওই দিন। লাহোরের বেশ কয়েকটি শহরে জাতীয় বীরদের স্মৃতিস্তম্ভ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়েও হামলা হয়।
কারণ, ওই দিনই আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসান (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দেশজুড়ে সহিংসতা চালান তাঁরা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে হামলাকারী চার নারীসহ আরও কয়েকজনের ছবিও প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেনের হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিবাসন নীতির পরিবর্তন করেছে। ফলে জাতিগত বিদ্বেষ, ঘৃণা ও অপরাধ বেড়েছে। বলা বাহুল্য, নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসবাদী হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে বদলে দিয়েছে। আর নাইন-ফাইভ (৯ মে) বদলে দিয়েছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ওই দিনের সহিংসতাকে ‘ইমরান খানের নাইন-ইলেভেন’ বলে অভিহিত করেছেন। সেদিনই ইমরান নিজেই নিজের কবর খুঁড়েছেন।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, ৯ মের ভাঙচুর ও হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেনের হামলার মতো। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘ইমরান খান ও তাঁর সমর্থকেরা সন্ত্রাসীদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ৯ মেকে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
যাঁরা পাকিস্তানের বাইরে আছেন, তাঁরা হয়তো নাইন-ফাইভের সঙ্গে নাইন-ইলেভেনের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের ঘটনা ঘটিয়েছিল বহিরাগত সন্ত্রাসীরা, আর পাকিস্তানে নাইন-ফাইভের ঘটনা ঘটিয়েছে ভেতরের মানুষেরাই। তাঁরা কেউ ভারত বা অন্য কোনো দেশ থেকে আসেননি। তারা সবাই পাকিস্তানি এবং অনেকের অতীত সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

লাহোরের ধনী ও সুশিক্ষিত নারী খাদিজা শাহকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। তিনি ৯ মে লাহোরে কর্প কমান্ডার হাউসের সামনে সহিংস বিক্ষোভে যোগ দেন। বিক্ষোভকারীরা সেদিন কর্প কমান্ডার হাউসে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই ঘটনায় ২৩ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ নওয়াজের নাতনি, তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. সালমান শাহের মেয়েও। তিন সন্তানের জননী এই নারী পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার।
লাহোরের কর্প কমান্ডার হাউসকে ‘জিন্নাহ হাউস’ও বলা হয়। কারণ, এটি একসময় পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বাসভবন ছিল। পাকিস্তানের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান কখনোই এই বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেননি। তিনি এটিকে ১৯৫৯ সালে কর্প কমান্ডারের বাসভবন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গ্রেপ্তারের দুই দিন পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইমরান খানকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে সরকার ৯ মের হামলার ঘটনায় সারা দেশ থেকে পিটিআইয়ের সাড়ে চার হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে। ইমরান সরকারের মানবাধিকারমন্ত্রী ছিলেন ড. শিরিন মাজারি। ওই দিন তিনি কোনো বিক্ষোভে যোগ দেননি; সহিংসতায় প্ররোচনা দিয়েছেন এমন প্রমাণও নেই। উপরন্তু তিনি থাকেন ইসলামাবাদে। তবু তাঁকে পুরোনো কালাকানুনে (মেইনটেন্যান্স অব পাবলিক অর্ডার) গ্রেপ্তার করা হয়।

ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ৯ মের পর শিরিনকে তিনবার জামিন দিয়েছেন এবং প্রতিবারই জামিনে মুক্তির পরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশেষে গতকাল বুধবার তিনি পিটিআই থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
সরকারের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা এমন অনেক নারীকে আমি চিনি, যারা পিটিআইয়ের সক্রিয় কর্মী নন। তাঁরা মূলত ক্রিকেটার ইমরান খানের ভক্ত। তারপরও গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁদের এখন এদিক-ওদিক পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ফাইয়াজ উল হাসান চৌহানও পিটিআই ছেড়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ইমরান খান পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ চান।
অন্যদিকে ইমরান খান দাবি করেছেন, তাঁর দল কখনোই সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেনি। তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নাইন-ফাইভের সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত করেন।
প্রথম দিকে ইমরান খান বলেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকে কিছু গোপন সমর্থন এবং বিচার বিভাগের কাছ থেকে প্রকাশ্য সমর্থন আশা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন পরই দেখা গেল, ইমরান কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছেন।

সেনাবাহিনী তাঁর ওপর আগের চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে। কারণ, ৯ মে একটি টার্নিং পয়েন্ট। ওই দিন ইমরান খান দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের (সামরিক বাহিনী) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শহুরে অভিজাতদের উসকে দিয়েছিলেন।
খাদিজা শাহ তেমনই একজন নারী। তিনি পাঞ্জাবের সুশিক্ষিত শহুরে অভিজাতদের প্রতিনিধিত্ব করেন। খাদিজারা দীর্ঘদিন ধরে সামরিক স্বৈরশাসকদের স্বাভাবিক মিত্র ছিল। কিন্তু এখন সেই অভিজাতরা আর্মি জেনারেলদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবার ‘ভারত কার্ড’ খেলা শুরু হয়েছে। ইমরান খানের রাজনৈতিক বিরোধীরা বলছেন, ভারতীয় মিডিয়া ইমরান খানের প্রশংসা করছে। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমের আনুকূল্য পাচ্ছেন।
ভারতীয় সাংবাদিক সুশান্ত সারিনের একটি ভিডিও ক্লিপ পাকিস্তানের প্রায় সব টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। ভিডিওতে সারিন বলছেন, ‘ইমরান খান তাঁর স্বপ্ন। কারণ তিনি পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছেন।’ এসব কারণে অনেকেই ইমরানকে ভারতীয় এজেন্ট বলছেন।
এর আগে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহকে এফ এম আইয়ুব খান ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, বেনজির ভুট্টোকে জেনারেল জিয়া ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন এবং জেনারেল মোশাররফের সমর্থকেরা নওয়াজ শরিফকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন।
এমন পরিস্থিতিতে পিটিআই নেতাদের মনোবল ভেঙে গেছে। তাঁরা অনেকেই পিটিআই ছেড়ে যাচ্ছেন। গভীর এক সুড়ঙ্গের দিকে ইমরান খান এগিয়ে যাচ্ছেন কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন।
শাহবাজ শরিফের সরকার ইতিমধ্যে সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের অধীনে পাঞ্জাব এবং খাইবার-পাখতুনখাওয়া পাশাপাশি রাজধানী ইসলামাবাদেও সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। সরকার বলছে, ১৯৫২ সালের পাকিস্তান সামরিক আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত সামরিক আদালতে সামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার হবে।

সামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে জড়িতদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শাস্তি দেওয়া উচিত এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে সেনা আইনে বেসামরিক নাগরিকদের বিচার করলে, তা বিতর্কিত হয়ে উঠবে। সামরিক আদালত পাকিস্তানে নতুন কিছু নয়, কিন্তু এই আদালত পাকিস্তানের গণতন্ত্রের চেহারাকে কলঙ্কিত করবে নিঃসন্দেহে।
চলতি বছর পাকিস্তানে নির্বাচনের বছর। এ বছরের আগস্টে বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। আগামী অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা। দেওয়ানি আদালতে আগস্টের আগে ৯ মের আসামিদের বিচার শেষ করা কঠিন হবে। তবে সামরিক আদালত আগস্টের আগে বিচার শেষ করার চেষ্টা করবে এবং যদি ইমরান খান আগস্টের আগে দোষী সাব্যস্ত না হন, তাহলে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে।
পাকিস্তান ২২ কোটি মানুষের একটি দেশ। তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম সেনাবাহিনী রয়েছে। সেনাবাহিনী ১৯৪৭ সাল থেকে ৩৩ বছর ধরে সরাসরি পাকিস্তান শাসন করেছে এবং এটি এখনো দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান সামরিক শাসনের দিকে যাচ্ছে নাকি ইমরান খান বিচার বিভাগের সাহায্যে যুদ্ধে জয়ী হতে যাচ্ছেন, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সম্প্রতি আমার দেখা হয়েছে। আলভি সব সময় ইমরানকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তবে এবার তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার, তিনি সতর্ক। ইমরান খানের অন্য সমর্থকদের মতোই আলভিকে বিষণ্ন দেখা গেছে। তিনি নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নন এবং মার্শাল ল জারির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। তাঁকে ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, ‘৯ মের সহিংসতার জন্য প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনা নয়।’ আমি তখন হেসে বললাম, ‘জনসম্মুখে স্বীকারোক্তি দিলে তাঁকে সামরিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক ভাষা এবং মুখের অভিব্যক্তি দেখে যতটুকু বুঝলাম, তিনি ইমরান খানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। কারণ, বিরোধীদলীয় নেতা থাকার সময় ইমরান তাঁকে দুবার কারাগারে পাঠিয়েছিলেন।
আমি নির্বাচন সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা এই বছরের অক্টোবরে নির্বাচন করতে যাচ্ছি।’

এটি ইমরান খানের জন্য সুসংবাদ। তবে শাহবাজ তাঁকে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেবেন বলে মনে হয় না।
কোনো সন্দেহ নেই যে ইমরান খান গভীর সংকটে পড়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। ইমরান খানের দল ভেঙে গেছে। বিচার বিভাগের একটি অংশ তাঁর পক্ষে অবস্থান নিলেও এখন অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাইছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র জানে, জেনারেলেরা ইমরানকে ‘জিন’ বানিয়েছিল এবং সেই জেনারেলরাই জিনটিকে বোতলে ভরার চেষ্টা করছেন।
ইমরান খানই পাকিস্তানের প্রথম নেতা, যিনি এমন গভীর সমস্যায় পড়েছেন। এর আগে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জেনারেল আইয়ুব খান লালন-পালন করেছিলেন এবং জেনারেল জিয়া তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দলকে নির্মূল করা হয়নি। তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টো দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তাঁর নাতি বিলাওয়াল এখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নওয়াজকে জেনারেল জিয়া রাজনীতিতে উঠিয়ে এনেছিলেন এবং জেনারেল মোশাররফ তাঁকে উৎখাত করেন। কিন্তু তাঁর ভাই এখন পাকিস্তান শাসন করছেন। শাহবাজ শরিফ ইমরান খানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা বা গ্রেপ্তার করতে পারেন। কিন্তু তাঁকে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে পারবেন কি? কারণ, শরিফ সরকারের খারাপ শাসন ও অর্থনৈতিক ভুলই ইমরান খানের সবচেয়ে বড় শক্তি।
পছন্দ করুন বা না করুন, ইমরান খান এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি তাঁর রাজনৈতিক ভুলের জন্য এখন মাশুল দিচ্ছেন। কারণ, তিনি কখনোই দলকে গণতান্ত্রিক নীতিতে দলকে সংগঠিত করেননি। প্রধানমন্ত্রী নয়, রাজার মতো দেশ চালাচ্ছিলেন। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল। উল্টো তিনি সেনাবাহিনীর বদলি ও পদায়নে হস্তক্ষেপ শুরু করে ‘আসল প্রভুদের’ বিরক্ত করেন।
নিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বানচালের চেষ্টায় ইমরান খান জাতীয় পরিষদও ভেঙে দেন। কিন্ত তাঁর সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। গত বছরের ২৫ মে এবং ২৬ নভেম্বর বিপুল সমর্থক নিয়ে ইসলামাবাদ দখল করার চেষ্টা করেছিলেন ইমরান। তাঁর সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেন। তিনি ভেবেছিলেন, তিনি সরকারকে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারেন। কিন্তু তিনি আবারও ব্যর্থ হন।
ইমরান কখনোই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপে বসার চেষ্টা করেননি। তিনি কখনোই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে একমত হওয়ার চেষ্টা করেননি যে সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বুঝতে শুরু করেছে, আইনের শাসনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান। সেনাবাহিনীকে অবশ্যই রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। ইমরান খানের মতো সেনাবাহিনীর পিঠে চড়ে ক্ষমতায় যাওয়া যে ঠিক নয়, তা রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত।
নওয়াজ শরিফের মতোই রাজনীতিতে ব্রাত্যজন হতে পারেন ইমরান খান। মনে রাখা দরকার, নওয়াজের বিরুদ্ধে ‘ভারত কার্ড’ ভয়ংকরভাবে ব্যবহার করা হয়। তাঁকে ‘মোদি কা ইয়ার’ বলেছিলেন ইমরান খান। এখন একই কার্ড খেলছে শাহবাজ শরিফরা।
শাহবাজ শরিফেরা ৯ মেকে ইমরান খানের জন্য ‘নাইন-ইলেভেনে’ পরিণত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি মনে করি, নওয়াজ শরিফ দেশে ফিরতে পারলে ইমরান খানও ফিরতে পারবেন, হয়তো কয়েক বছর পর। তিনি এখন খাদের কিনারে, কিন্তু একেবারে ফুরিয়ে যাননি।
জিও নিউজে প্রকাশিত পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মিরের লেখা অনুবাদ করেছেন মারুফ ইসলাম

নিজের চেনা-পরিচিত বিশ্ব বদলে দিতে প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই একটি দিন আসে। পাকিস্তানে সেই দিন কি এল? সম্ভবত এবং সেদিনটি বোধ হয় ৯ মে। ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তানের পুরোনো ভবন, রাওয়ালপিন্ডির চারটি মেট্রো বাসস্টেশন ও কর্পস কমান্ডার হাউস ভাঙচুর চালায় ওই দিন। লাহোরের বেশ কয়েকটি শহরে জাতীয় বীরদের স্মৃতিস্তম্ভ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়েও হামলা হয়।
কারণ, ওই দিনই আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসান (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দেশজুড়ে সহিংসতা চালান তাঁরা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে হামলাকারী চার নারীসহ আরও কয়েকজনের ছবিও প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেনের হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিবাসন নীতির পরিবর্তন করেছে। ফলে জাতিগত বিদ্বেষ, ঘৃণা ও অপরাধ বেড়েছে। বলা বাহুল্য, নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসবাদী হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে বদলে দিয়েছে। আর নাইন-ফাইভ (৯ মে) বদলে দিয়েছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ওই দিনের সহিংসতাকে ‘ইমরান খানের নাইন-ইলেভেন’ বলে অভিহিত করেছেন। সেদিনই ইমরান নিজেই নিজের কবর খুঁড়েছেন।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, ৯ মের ভাঙচুর ও হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেনের হামলার মতো। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘ইমরান খান ও তাঁর সমর্থকেরা সন্ত্রাসীদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ৯ মেকে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
যাঁরা পাকিস্তানের বাইরে আছেন, তাঁরা হয়তো নাইন-ফাইভের সঙ্গে নাইন-ইলেভেনের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের ঘটনা ঘটিয়েছিল বহিরাগত সন্ত্রাসীরা, আর পাকিস্তানে নাইন-ফাইভের ঘটনা ঘটিয়েছে ভেতরের মানুষেরাই। তাঁরা কেউ ভারত বা অন্য কোনো দেশ থেকে আসেননি। তারা সবাই পাকিস্তানি এবং অনেকের অতীত সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

লাহোরের ধনী ও সুশিক্ষিত নারী খাদিজা শাহকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। তিনি ৯ মে লাহোরে কর্প কমান্ডার হাউসের সামনে সহিংস বিক্ষোভে যোগ দেন। বিক্ষোভকারীরা সেদিন কর্প কমান্ডার হাউসে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই ঘটনায় ২৩ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ নওয়াজের নাতনি, তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. সালমান শাহের মেয়েও। তিন সন্তানের জননী এই নারী পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার।
লাহোরের কর্প কমান্ডার হাউসকে ‘জিন্নাহ হাউস’ও বলা হয়। কারণ, এটি একসময় পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বাসভবন ছিল। পাকিস্তানের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান কখনোই এই বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেননি। তিনি এটিকে ১৯৫৯ সালে কর্প কমান্ডারের বাসভবন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গ্রেপ্তারের দুই দিন পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইমরান খানকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে সরকার ৯ মের হামলার ঘটনায় সারা দেশ থেকে পিটিআইয়ের সাড়ে চার হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে। ইমরান সরকারের মানবাধিকারমন্ত্রী ছিলেন ড. শিরিন মাজারি। ওই দিন তিনি কোনো বিক্ষোভে যোগ দেননি; সহিংসতায় প্ররোচনা দিয়েছেন এমন প্রমাণও নেই। উপরন্তু তিনি থাকেন ইসলামাবাদে। তবু তাঁকে পুরোনো কালাকানুনে (মেইনটেন্যান্স অব পাবলিক অর্ডার) গ্রেপ্তার করা হয়।

ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ৯ মের পর শিরিনকে তিনবার জামিন দিয়েছেন এবং প্রতিবারই জামিনে মুক্তির পরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশেষে গতকাল বুধবার তিনি পিটিআই থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
সরকারের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা এমন অনেক নারীকে আমি চিনি, যারা পিটিআইয়ের সক্রিয় কর্মী নন। তাঁরা মূলত ক্রিকেটার ইমরান খানের ভক্ত। তারপরও গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁদের এখন এদিক-ওদিক পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ফাইয়াজ উল হাসান চৌহানও পিটিআই ছেড়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ইমরান খান পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ চান।
অন্যদিকে ইমরান খান দাবি করেছেন, তাঁর দল কখনোই সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেনি। তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নাইন-ফাইভের সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত করেন।
প্রথম দিকে ইমরান খান বলেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকে কিছু গোপন সমর্থন এবং বিচার বিভাগের কাছ থেকে প্রকাশ্য সমর্থন আশা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন পরই দেখা গেল, ইমরান কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছেন।

সেনাবাহিনী তাঁর ওপর আগের চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে। কারণ, ৯ মে একটি টার্নিং পয়েন্ট। ওই দিন ইমরান খান দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের (সামরিক বাহিনী) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শহুরে অভিজাতদের উসকে দিয়েছিলেন।
খাদিজা শাহ তেমনই একজন নারী। তিনি পাঞ্জাবের সুশিক্ষিত শহুরে অভিজাতদের প্রতিনিধিত্ব করেন। খাদিজারা দীর্ঘদিন ধরে সামরিক স্বৈরশাসকদের স্বাভাবিক মিত্র ছিল। কিন্তু এখন সেই অভিজাতরা আর্মি জেনারেলদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবার ‘ভারত কার্ড’ খেলা শুরু হয়েছে। ইমরান খানের রাজনৈতিক বিরোধীরা বলছেন, ভারতীয় মিডিয়া ইমরান খানের প্রশংসা করছে। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমের আনুকূল্য পাচ্ছেন।
ভারতীয় সাংবাদিক সুশান্ত সারিনের একটি ভিডিও ক্লিপ পাকিস্তানের প্রায় সব টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। ভিডিওতে সারিন বলছেন, ‘ইমরান খান তাঁর স্বপ্ন। কারণ তিনি পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছেন।’ এসব কারণে অনেকেই ইমরানকে ভারতীয় এজেন্ট বলছেন।
এর আগে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহকে এফ এম আইয়ুব খান ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, বেনজির ভুট্টোকে জেনারেল জিয়া ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন এবং জেনারেল মোশাররফের সমর্থকেরা নওয়াজ শরিফকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন।
এমন পরিস্থিতিতে পিটিআই নেতাদের মনোবল ভেঙে গেছে। তাঁরা অনেকেই পিটিআই ছেড়ে যাচ্ছেন। গভীর এক সুড়ঙ্গের দিকে ইমরান খান এগিয়ে যাচ্ছেন কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন।
শাহবাজ শরিফের সরকার ইতিমধ্যে সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের অধীনে পাঞ্জাব এবং খাইবার-পাখতুনখাওয়া পাশাপাশি রাজধানী ইসলামাবাদেও সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। সরকার বলছে, ১৯৫২ সালের পাকিস্তান সামরিক আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত সামরিক আদালতে সামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার হবে।

সামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে জড়িতদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শাস্তি দেওয়া উচিত এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে সেনা আইনে বেসামরিক নাগরিকদের বিচার করলে, তা বিতর্কিত হয়ে উঠবে। সামরিক আদালত পাকিস্তানে নতুন কিছু নয়, কিন্তু এই আদালত পাকিস্তানের গণতন্ত্রের চেহারাকে কলঙ্কিত করবে নিঃসন্দেহে।
চলতি বছর পাকিস্তানে নির্বাচনের বছর। এ বছরের আগস্টে বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। আগামী অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা। দেওয়ানি আদালতে আগস্টের আগে ৯ মের আসামিদের বিচার শেষ করা কঠিন হবে। তবে সামরিক আদালত আগস্টের আগে বিচার শেষ করার চেষ্টা করবে এবং যদি ইমরান খান আগস্টের আগে দোষী সাব্যস্ত না হন, তাহলে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে।
পাকিস্তান ২২ কোটি মানুষের একটি দেশ। তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম সেনাবাহিনী রয়েছে। সেনাবাহিনী ১৯৪৭ সাল থেকে ৩৩ বছর ধরে সরাসরি পাকিস্তান শাসন করেছে এবং এটি এখনো দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান সামরিক শাসনের দিকে যাচ্ছে নাকি ইমরান খান বিচার বিভাগের সাহায্যে যুদ্ধে জয়ী হতে যাচ্ছেন, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সম্প্রতি আমার দেখা হয়েছে। আলভি সব সময় ইমরানকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তবে এবার তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার, তিনি সতর্ক। ইমরান খানের অন্য সমর্থকদের মতোই আলভিকে বিষণ্ন দেখা গেছে। তিনি নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নন এবং মার্শাল ল জারির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। তাঁকে ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, ‘৯ মের সহিংসতার জন্য প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনা নয়।’ আমি তখন হেসে বললাম, ‘জনসম্মুখে স্বীকারোক্তি দিলে তাঁকে সামরিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক ভাষা এবং মুখের অভিব্যক্তি দেখে যতটুকু বুঝলাম, তিনি ইমরান খানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। কারণ, বিরোধীদলীয় নেতা থাকার সময় ইমরান তাঁকে দুবার কারাগারে পাঠিয়েছিলেন।
আমি নির্বাচন সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা এই বছরের অক্টোবরে নির্বাচন করতে যাচ্ছি।’

এটি ইমরান খানের জন্য সুসংবাদ। তবে শাহবাজ তাঁকে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেবেন বলে মনে হয় না।
কোনো সন্দেহ নেই যে ইমরান খান গভীর সংকটে পড়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। ইমরান খানের দল ভেঙে গেছে। বিচার বিভাগের একটি অংশ তাঁর পক্ষে অবস্থান নিলেও এখন অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাইছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র জানে, জেনারেলেরা ইমরানকে ‘জিন’ বানিয়েছিল এবং সেই জেনারেলরাই জিনটিকে বোতলে ভরার চেষ্টা করছেন।
ইমরান খানই পাকিস্তানের প্রথম নেতা, যিনি এমন গভীর সমস্যায় পড়েছেন। এর আগে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জেনারেল আইয়ুব খান লালন-পালন করেছিলেন এবং জেনারেল জিয়া তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দলকে নির্মূল করা হয়নি। তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টো দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তাঁর নাতি বিলাওয়াল এখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নওয়াজকে জেনারেল জিয়া রাজনীতিতে উঠিয়ে এনেছিলেন এবং জেনারেল মোশাররফ তাঁকে উৎখাত করেন। কিন্তু তাঁর ভাই এখন পাকিস্তান শাসন করছেন। শাহবাজ শরিফ ইমরান খানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা বা গ্রেপ্তার করতে পারেন। কিন্তু তাঁকে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে পারবেন কি? কারণ, শরিফ সরকারের খারাপ শাসন ও অর্থনৈতিক ভুলই ইমরান খানের সবচেয়ে বড় শক্তি।
পছন্দ করুন বা না করুন, ইমরান খান এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি তাঁর রাজনৈতিক ভুলের জন্য এখন মাশুল দিচ্ছেন। কারণ, তিনি কখনোই দলকে গণতান্ত্রিক নীতিতে দলকে সংগঠিত করেননি। প্রধানমন্ত্রী নয়, রাজার মতো দেশ চালাচ্ছিলেন। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল। উল্টো তিনি সেনাবাহিনীর বদলি ও পদায়নে হস্তক্ষেপ শুরু করে ‘আসল প্রভুদের’ বিরক্ত করেন।
নিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বানচালের চেষ্টায় ইমরান খান জাতীয় পরিষদও ভেঙে দেন। কিন্ত তাঁর সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। গত বছরের ২৫ মে এবং ২৬ নভেম্বর বিপুল সমর্থক নিয়ে ইসলামাবাদ দখল করার চেষ্টা করেছিলেন ইমরান। তাঁর সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেন। তিনি ভেবেছিলেন, তিনি সরকারকে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারেন। কিন্তু তিনি আবারও ব্যর্থ হন।
ইমরান কখনোই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপে বসার চেষ্টা করেননি। তিনি কখনোই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে একমত হওয়ার চেষ্টা করেননি যে সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বুঝতে শুরু করেছে, আইনের শাসনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান। সেনাবাহিনীকে অবশ্যই রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। ইমরান খানের মতো সেনাবাহিনীর পিঠে চড়ে ক্ষমতায় যাওয়া যে ঠিক নয়, তা রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত।
নওয়াজ শরিফের মতোই রাজনীতিতে ব্রাত্যজন হতে পারেন ইমরান খান। মনে রাখা দরকার, নওয়াজের বিরুদ্ধে ‘ভারত কার্ড’ ভয়ংকরভাবে ব্যবহার করা হয়। তাঁকে ‘মোদি কা ইয়ার’ বলেছিলেন ইমরান খান। এখন একই কার্ড খেলছে শাহবাজ শরিফরা।
শাহবাজ শরিফেরা ৯ মেকে ইমরান খানের জন্য ‘নাইন-ইলেভেনে’ পরিণত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি মনে করি, নওয়াজ শরিফ দেশে ফিরতে পারলে ইমরান খানও ফিরতে পারবেন, হয়তো কয়েক বছর পর। তিনি এখন খাদের কিনারে, কিন্তু একেবারে ফুরিয়ে যাননি।
জিও নিউজে প্রকাশিত পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মিরের লেখা অনুবাদ করেছেন মারুফ ইসলাম

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

নিজের চেনা-পরিচিত বিশ্ব বদলে দিতে প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই একটি দিন আসে। পাকিস্তানে সেই ‘একদিন’ কি এসেছে? সম্ভবত এসেছে এবং ৯ মে ছিল সেই দিন। ওই দিন ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তানের পুরোনো ভবন, রাওয়ালপিন্ডিতে চারটি মেট্রো বাসস্টেশন ও কর্পস কমান্ডার হাউস ভাঙচুর চালিয়েছিল
২৫ মে ২০২৩
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নিজের চেনা-পরিচিত বিশ্ব বদলে দিতে প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই একটি দিন আসে। পাকিস্তানে সেই ‘একদিন’ কি এসেছে? সম্ভবত এসেছে এবং ৯ মে ছিল সেই দিন। ওই দিন ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তানের পুরোনো ভবন, রাওয়ালপিন্ডিতে চারটি মেট্রো বাসস্টেশন ও কর্পস কমান্ডার হাউস ভাঙচুর চালিয়েছিল
২৫ মে ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

নিজের চেনা-পরিচিত বিশ্ব বদলে দিতে প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই একটি দিন আসে। পাকিস্তানে সেই ‘একদিন’ কি এসেছে? সম্ভবত এসেছে এবং ৯ মে ছিল সেই দিন। ওই দিন ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তানের পুরোনো ভবন, রাওয়ালপিন্ডিতে চারটি মেট্রো বাসস্টেশন ও কর্পস কমান্ডার হাউস ভাঙচুর চালিয়েছিল
২৫ মে ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

নিজের চেনা-পরিচিত বিশ্ব বদলে দিতে প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই একটি দিন আসে। পাকিস্তানে সেই ‘একদিন’ কি এসেছে? সম্ভবত এসেছে এবং ৯ মে ছিল সেই দিন। ওই দিন ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তানের পুরোনো ভবন, রাওয়ালপিন্ডিতে চারটি মেট্রো বাসস্টেশন ও কর্পস কমান্ডার হাউস ভাঙচুর চালিয়েছিল
২৫ মে ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে