তৌহীদ রেজা নূর

এক. বিগত শতাব্দীর প্রায় সূচনালগ্নে যুদ্ধের ভয়াবহতায় তরুণ আর্মেনিয়ান যুবক শগোমন তেহরিলিয়ানের হৃদয় একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ জানত না সে; বিভিন্ন দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না। শুধু খাঁ খাঁ করা হৃদয়ে অনুভব করত এই যুদ্ধ তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, আর বুঝত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীর ওপর নারকীয়তা চরিতার্থ করতে মুখ্যত দায়ী যে ব্যক্তি—তুরস্কের সাবেক মন্ত্রী তালাত পাশা, তাঁর কোনো দিন বিচার হবে না, শাস্তি হবে না; বরং তিনি বীরদর্পে ঘুরে বেড়াবেন সমাজজুড়ে। যুদ্ধে নিজ পরিবারের সদস্যরা হত্যার শিকার হওয়ার পর থেকে মাথায় দারুণ জখম নিয়ে তেহরিলিয়ান ঘুমোতে পারে না–মাঝে মাঝেই ভয়ানক খিঁচুনি হয়। ১৯২০ সালে সুযোগ চলে আসে–বোস্টনভিত্তিক আর্মেনিয়ান প্লট অপারেশন নেমেসিসের পক্ষে তালাত পাশাকে হত্যা করার জন্য নির্বাচিত ও নিযুক্ত হয় সে এবং সফলভাবে হত্যা করে তালাতকে। এই হত্যার অপরাধে বার্লিনের আদালতে চলমান তেহরিলিয়ানের বিচারের ছোট্ট খবরখানা স্থানীয় পোলিশ পত্রিকায় ছাপা হলে পোল্যান্ডের লভভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বের তরুণ শিক্ষার্থী রাফায়েল লেমকিনের নজরে আসে। তৎক্ষণাৎ সে তার একজন অধ্যাপকের কাছে জানতে চায়, আর্মেনিয়ানদের হত্যাযজ্ঞের কারণে তালাতকে গ্রেপ্তার করার ব্যবস্থা না করে কেন তাকে হত্যা করা হলো। উত্তরে শিক্ষক মশাই জানালেন, তালাতকে গ্রেপ্তার করার মতো কোনো আইন নেই। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ধরো, কোনো চাষির ঘরে একঝাঁক মুরগি আছে এবং সে সেগুলোকে মেরে ফেলল, এতে কারও কিছু বলার নেই। কেন সে মেরে ফেলল জানতে চাওয়া মানে, তুমি তার কাজে অযথা নাক গলাচ্ছ, সীমা লঙ্ঘন করছ। শুনে লেমকিন বলে উঠল, একজন তালাত পাশাকে খুন করার জন্য তেহরিলিয়ান অপরাধী নিঃসন্দেহে, কিন্তু যে ব্যক্তি (তালাত পাশা) নিযুত আর্মেনিয়ানকে হত্যার জন্য দায়ী, সে অপরাধী নয়! এর চেয়ে অসংগতিপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না! এ ক্ষেত্রে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে লেমকিন মেলাতেই পারছিলেন না। নাগরিকের কল্যাণ করার কাজে সার্বভৌম রাষ্ট্র ভূমিকা রাখবে—সেটাই কাম্য, কিন্তু সার্বভৌম রাষ্ট্র তো নিযুত নাগরিককে হত্যা করার অধিকার কাউকে দিতে পারে না! এক ভীষণ মানসিক অস্থিরতার মধ্যে পড়লেন লেমকিন। এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধের কি তবে কোনো শাস্তি হবে না? এ ধরনের মনের অস্থিরতা নিয়ে তিনি আইন বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীকে যে নৃশংস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেই নামহীন অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য, বিচারের আওতায় আনার জন্য লেমকিন এর পরবর্তী প্রায় দেড় যুগ এ বিষয়টি নিয়ে নিরন্তরভাবে ভেবেছেন, লিখেছেন এবং নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করে গেছেন।
দুই. জাতি, বর্ণ বা ধর্মভিত্তিক কোনো জনগোষ্ঠীকে সুপরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ যাতে সংঘটিত হতে না পারে, সে জন্য লেমকিন আইনের খসড়া তৈরি করেন। তিনি গুরুত্ব দেন এ ধরনের অপরাধের বিচার ও শাস্তির বিষয়ে। এ ধরনের অপরাধকারীর বিচারের ব্যাপারে সর্বব্যাপী আইনগত অধিকারের (international jurisdiction) কথা ভেবেছেন লেমকিন–যার অর্থ অপরাধকারী যে দেশেই অপরাধ করুক না কেন, তাঁকে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বিচারের আওতায় আনা যাবে, শাস্তি দেওয়া যাবে। এই অপরাধের একটি নাম দেওয়ার জন্য সেদিন অস্থির হয়ে উঠেছিলেন লেমকিন এবং শেষ পর্যন্ত একটি যথার্থ নাম তিনি খুঁজে বের করেছিলেন, ‘জেনোসাইড’। গ্রিক শব্দ genos (জাতি/গোষ্ঠী) এবং লাতিন শব্দ cide (হত্যা)-এর সমন্বয় করে এই Genocide শব্দটি উদ্ভাবন করেন তিনি। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত একগুচ্ছ অপরাধকে তিনি নতুন একটি শব্দ ‘জেনোসাইড’ দিয়ে অভিহিত করলেন। কিছু জরুরি বিষয় সংযোজন-বিয়োজনের লেমকিনের প্রস্তাবিত কনভেনশন ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘে গৃহীত হলো।
তিন. এই কনভেনশনের দ্বিতীয় ধারায় জেনোসাইডের একটা স্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলা হয়, একটা জাতি বা গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত কার্যক্রমগুলো ‘জেনোসাইড’। লক্ষণীয়, এই ধারায় ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’ গুরুত্ব পেয়েছে; অর্থাৎ ধ্বংস করার ইচ্ছাটাও জেনোসাইড।
শারীরিকভাবে হত্যা করা শুধু নয়–নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মানসিক ও শারীরিক নানা ধরনের নির্যাতন করাও জেনোসাইড। একটা জাতি, গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে ফেলার প্রকাশ্য ঘোষণা বা ধ্বংস করার জন্য কাউকে উৎসাহিত করাও জেনোসাইড, যা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। জেনোসাইড সংঘটিত হতে পারে যুদ্ধ কিংবা শান্তিকালীন। যাদের বিরুদ্ধে জেনোসাইড সংঘটিত হয় তারা সক্ষম হলে নিজেরাই বিচারের আয়োজন করতে পারে; না হলে জেনোসাইড থামানো এবং বিচার করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আইনি দায়িত্ব।
১৯৭১ সালের পরিপ্রেক্ষিতে যদি আমরা দেখি, যেসব নির্যাতনমূলক কার্যক্রমকে জেনোসাইড বলা হয়েছে, অর্থাৎ হত্যা, শারীরিক ও মানসিক আঘাত, সম্পদ লুট, ধর্ষণ, ধর্মান্তকরণ—এর সবকিছুই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এসব জেনোসাইডাল অ্যাক্ট সংঘটিত হয়েছে—তা হলো, বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেওয়া। তাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা আমাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধ ঘটিয়েছে, তা জেনোসাইড নিঃসন্দেহে।
এমনকি ধর্ষণেরও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল, ধর্ষণগুলো স্রেফ যৌন তাড়নায় ছিল না। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের সৈনিকদের উসকে দিয়েছিল এবং ধর্মীয় ফতোয়াও জারি করেছিল। এসব ধর্ষণের উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালি জাতিসত্তার স্বকীয়তা শেষ করে দেওয়া, বাঙালি নারীর গর্ভে পাকিস্তানি সন্তান জন্ম দেওয়া, যারা অনুগত থাকবে তাদের পিতৃগোষ্ঠীর প্রতি। জাতি ধ্বংসের এই অভিপ্রায়ই জেনোসাইড। জেনোসাইডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীরাই শুধু নয়, জেনোসাইড সংঘটনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন প্রদানকারীরাও অপরাধী।
জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশনে আর্টিকেল ২-এ জেনোসাইডের সংজ্ঞায় যে ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’-এর কথা বলা হয়েছে, আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে এর শুরু ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ নয়; বরং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সময় থেকেই। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে গুলি করে হত্যা, রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ, আরবি হরফে বাংলা লেখানোর চেষ্টা—এগুলো যেমন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ধ্বংস করার অভিপ্রায়, তেমনি অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাধ্যমে ও বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাঙালি ‘প্রকৃত মুসলমান নয়’, ‘দুর্বল, কালো, বেঁটে’—এ রকম চিহ্নিত করে বাঙালি জাতির প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। মূলত পাকিস্তানের শুরু থেকেই জেনোসাইডের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে এবং ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাত থেকে এর চূড়ান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
ব্যাপক গণহত্যা এবং এক কোটি মানুষকে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য করার উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা। এর পাশাপাশি সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পীসহ সমাজের মুক্তিকামী প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী শ্রেণি।
চার. মূল কথা, মুক্তিকামী বাঙালিকে ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী খুব ঠান্ডা মাথায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। মাঠে বাস্তবায়নের সময় তারা আরও নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছিল। সেই আক্রমণ এ দেশের দালালগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে সারা দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপ্তি লাভ করেছিল, যার কারণে এ দেশের নিযুত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী এই হত্যাযজ্ঞের অংশভাক হয়ে বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করেছে। ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে যে মূল্য দিতে হয়েছে বাঙালি জাতির, তা তুলনাহীন। নৃশংস জেনোসাইডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করে পরাজিত করেছেন হত্যাকারী বাহিনীকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি অর্জিত হয়নি। তবে আশাপ্রদ ঘটনার সূচনা হয়েছে জেনোসাইড বিষয়ে কাজ করে—এমন তিনটি আমেরিকাভিত্তিক সংগঠন–লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন, জেনোসাইড ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কন্সেন্স-৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ থেকে ২৮ মার্চ ২০২২ সময়সীমার মধ্যে জেনোসাইডের স্বীকৃতিসূচক ঘোষণা দিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানিয়ে রেজল্যুশন জমা দিয়েছেন, যা আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য অপেক্ষমাণ। বিশ্বব্যাপী জেনোসাইড স্কলারদের ফোরাম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের পক্ষ থেকে শিগগিরই স্বীকৃতিসূচক রেজল্যুশন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মানবেতিহাসের বর্বরতম জেনোসাইড যা রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে, তার স্বীকৃতি আদায়ের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ এখনো অনেক দীর্ঘ। আমরা বিশ্বাস করি, সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় দেশে-বিদেশে সবাই মিলে বিরামহীন কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে এই স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা নিশ্চয় সফল হবে।
তৌহীদ রেজা নূর, লেখক, গবেষক

এক. বিগত শতাব্দীর প্রায় সূচনালগ্নে যুদ্ধের ভয়াবহতায় তরুণ আর্মেনিয়ান যুবক শগোমন তেহরিলিয়ানের হৃদয় একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ জানত না সে; বিভিন্ন দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না। শুধু খাঁ খাঁ করা হৃদয়ে অনুভব করত এই যুদ্ধ তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, আর বুঝত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীর ওপর নারকীয়তা চরিতার্থ করতে মুখ্যত দায়ী যে ব্যক্তি—তুরস্কের সাবেক মন্ত্রী তালাত পাশা, তাঁর কোনো দিন বিচার হবে না, শাস্তি হবে না; বরং তিনি বীরদর্পে ঘুরে বেড়াবেন সমাজজুড়ে। যুদ্ধে নিজ পরিবারের সদস্যরা হত্যার শিকার হওয়ার পর থেকে মাথায় দারুণ জখম নিয়ে তেহরিলিয়ান ঘুমোতে পারে না–মাঝে মাঝেই ভয়ানক খিঁচুনি হয়। ১৯২০ সালে সুযোগ চলে আসে–বোস্টনভিত্তিক আর্মেনিয়ান প্লট অপারেশন নেমেসিসের পক্ষে তালাত পাশাকে হত্যা করার জন্য নির্বাচিত ও নিযুক্ত হয় সে এবং সফলভাবে হত্যা করে তালাতকে। এই হত্যার অপরাধে বার্লিনের আদালতে চলমান তেহরিলিয়ানের বিচারের ছোট্ট খবরখানা স্থানীয় পোলিশ পত্রিকায় ছাপা হলে পোল্যান্ডের লভভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বের তরুণ শিক্ষার্থী রাফায়েল লেমকিনের নজরে আসে। তৎক্ষণাৎ সে তার একজন অধ্যাপকের কাছে জানতে চায়, আর্মেনিয়ানদের হত্যাযজ্ঞের কারণে তালাতকে গ্রেপ্তার করার ব্যবস্থা না করে কেন তাকে হত্যা করা হলো। উত্তরে শিক্ষক মশাই জানালেন, তালাতকে গ্রেপ্তার করার মতো কোনো আইন নেই। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ধরো, কোনো চাষির ঘরে একঝাঁক মুরগি আছে এবং সে সেগুলোকে মেরে ফেলল, এতে কারও কিছু বলার নেই। কেন সে মেরে ফেলল জানতে চাওয়া মানে, তুমি তার কাজে অযথা নাক গলাচ্ছ, সীমা লঙ্ঘন করছ। শুনে লেমকিন বলে উঠল, একজন তালাত পাশাকে খুন করার জন্য তেহরিলিয়ান অপরাধী নিঃসন্দেহে, কিন্তু যে ব্যক্তি (তালাত পাশা) নিযুত আর্মেনিয়ানকে হত্যার জন্য দায়ী, সে অপরাধী নয়! এর চেয়ে অসংগতিপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না! এ ক্ষেত্রে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে লেমকিন মেলাতেই পারছিলেন না। নাগরিকের কল্যাণ করার কাজে সার্বভৌম রাষ্ট্র ভূমিকা রাখবে—সেটাই কাম্য, কিন্তু সার্বভৌম রাষ্ট্র তো নিযুত নাগরিককে হত্যা করার অধিকার কাউকে দিতে পারে না! এক ভীষণ মানসিক অস্থিরতার মধ্যে পড়লেন লেমকিন। এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধের কি তবে কোনো শাস্তি হবে না? এ ধরনের মনের অস্থিরতা নিয়ে তিনি আইন বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীকে যে নৃশংস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেই নামহীন অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য, বিচারের আওতায় আনার জন্য লেমকিন এর পরবর্তী প্রায় দেড় যুগ এ বিষয়টি নিয়ে নিরন্তরভাবে ভেবেছেন, লিখেছেন এবং নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করে গেছেন।
দুই. জাতি, বর্ণ বা ধর্মভিত্তিক কোনো জনগোষ্ঠীকে সুপরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ যাতে সংঘটিত হতে না পারে, সে জন্য লেমকিন আইনের খসড়া তৈরি করেন। তিনি গুরুত্ব দেন এ ধরনের অপরাধের বিচার ও শাস্তির বিষয়ে। এ ধরনের অপরাধকারীর বিচারের ব্যাপারে সর্বব্যাপী আইনগত অধিকারের (international jurisdiction) কথা ভেবেছেন লেমকিন–যার অর্থ অপরাধকারী যে দেশেই অপরাধ করুক না কেন, তাঁকে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বিচারের আওতায় আনা যাবে, শাস্তি দেওয়া যাবে। এই অপরাধের একটি নাম দেওয়ার জন্য সেদিন অস্থির হয়ে উঠেছিলেন লেমকিন এবং শেষ পর্যন্ত একটি যথার্থ নাম তিনি খুঁজে বের করেছিলেন, ‘জেনোসাইড’। গ্রিক শব্দ genos (জাতি/গোষ্ঠী) এবং লাতিন শব্দ cide (হত্যা)-এর সমন্বয় করে এই Genocide শব্দটি উদ্ভাবন করেন তিনি। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত একগুচ্ছ অপরাধকে তিনি নতুন একটি শব্দ ‘জেনোসাইড’ দিয়ে অভিহিত করলেন। কিছু জরুরি বিষয় সংযোজন-বিয়োজনের লেমকিনের প্রস্তাবিত কনভেনশন ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘে গৃহীত হলো।
তিন. এই কনভেনশনের দ্বিতীয় ধারায় জেনোসাইডের একটা স্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলা হয়, একটা জাতি বা গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত কার্যক্রমগুলো ‘জেনোসাইড’। লক্ষণীয়, এই ধারায় ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’ গুরুত্ব পেয়েছে; অর্থাৎ ধ্বংস করার ইচ্ছাটাও জেনোসাইড।
শারীরিকভাবে হত্যা করা শুধু নয়–নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মানসিক ও শারীরিক নানা ধরনের নির্যাতন করাও জেনোসাইড। একটা জাতি, গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে ফেলার প্রকাশ্য ঘোষণা বা ধ্বংস করার জন্য কাউকে উৎসাহিত করাও জেনোসাইড, যা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। জেনোসাইড সংঘটিত হতে পারে যুদ্ধ কিংবা শান্তিকালীন। যাদের বিরুদ্ধে জেনোসাইড সংঘটিত হয় তারা সক্ষম হলে নিজেরাই বিচারের আয়োজন করতে পারে; না হলে জেনোসাইড থামানো এবং বিচার করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আইনি দায়িত্ব।
১৯৭১ সালের পরিপ্রেক্ষিতে যদি আমরা দেখি, যেসব নির্যাতনমূলক কার্যক্রমকে জেনোসাইড বলা হয়েছে, অর্থাৎ হত্যা, শারীরিক ও মানসিক আঘাত, সম্পদ লুট, ধর্ষণ, ধর্মান্তকরণ—এর সবকিছুই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এসব জেনোসাইডাল অ্যাক্ট সংঘটিত হয়েছে—তা হলো, বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেওয়া। তাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা আমাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধ ঘটিয়েছে, তা জেনোসাইড নিঃসন্দেহে।
এমনকি ধর্ষণেরও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল, ধর্ষণগুলো স্রেফ যৌন তাড়নায় ছিল না। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের সৈনিকদের উসকে দিয়েছিল এবং ধর্মীয় ফতোয়াও জারি করেছিল। এসব ধর্ষণের উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালি জাতিসত্তার স্বকীয়তা শেষ করে দেওয়া, বাঙালি নারীর গর্ভে পাকিস্তানি সন্তান জন্ম দেওয়া, যারা অনুগত থাকবে তাদের পিতৃগোষ্ঠীর প্রতি। জাতি ধ্বংসের এই অভিপ্রায়ই জেনোসাইড। জেনোসাইডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীরাই শুধু নয়, জেনোসাইড সংঘটনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন প্রদানকারীরাও অপরাধী।
জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশনে আর্টিকেল ২-এ জেনোসাইডের সংজ্ঞায় যে ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’-এর কথা বলা হয়েছে, আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে এর শুরু ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ নয়; বরং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সময় থেকেই। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে গুলি করে হত্যা, রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ, আরবি হরফে বাংলা লেখানোর চেষ্টা—এগুলো যেমন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ধ্বংস করার অভিপ্রায়, তেমনি অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাধ্যমে ও বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাঙালি ‘প্রকৃত মুসলমান নয়’, ‘দুর্বল, কালো, বেঁটে’—এ রকম চিহ্নিত করে বাঙালি জাতির প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। মূলত পাকিস্তানের শুরু থেকেই জেনোসাইডের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে এবং ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাত থেকে এর চূড়ান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
ব্যাপক গণহত্যা এবং এক কোটি মানুষকে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য করার উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা। এর পাশাপাশি সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পীসহ সমাজের মুক্তিকামী প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী শ্রেণি।
চার. মূল কথা, মুক্তিকামী বাঙালিকে ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী খুব ঠান্ডা মাথায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। মাঠে বাস্তবায়নের সময় তারা আরও নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছিল। সেই আক্রমণ এ দেশের দালালগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে সারা দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপ্তি লাভ করেছিল, যার কারণে এ দেশের নিযুত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী এই হত্যাযজ্ঞের অংশভাক হয়ে বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করেছে। ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে যে মূল্য দিতে হয়েছে বাঙালি জাতির, তা তুলনাহীন। নৃশংস জেনোসাইডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করে পরাজিত করেছেন হত্যাকারী বাহিনীকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি অর্জিত হয়নি। তবে আশাপ্রদ ঘটনার সূচনা হয়েছে জেনোসাইড বিষয়ে কাজ করে—এমন তিনটি আমেরিকাভিত্তিক সংগঠন–লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন, জেনোসাইড ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কন্সেন্স-৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ থেকে ২৮ মার্চ ২০২২ সময়সীমার মধ্যে জেনোসাইডের স্বীকৃতিসূচক ঘোষণা দিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানিয়ে রেজল্যুশন জমা দিয়েছেন, যা আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য অপেক্ষমাণ। বিশ্বব্যাপী জেনোসাইড স্কলারদের ফোরাম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের পক্ষ থেকে শিগগিরই স্বীকৃতিসূচক রেজল্যুশন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মানবেতিহাসের বর্বরতম জেনোসাইড যা রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে, তার স্বীকৃতি আদায়ের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ এখনো অনেক দীর্ঘ। আমরা বিশ্বাস করি, সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় দেশে-বিদেশে সবাই মিলে বিরামহীন কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে এই স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা নিশ্চয় সফল হবে।
তৌহীদ রেজা নূর, লেখক, গবেষক
তৌহীদ রেজা নূর

এক. বিগত শতাব্দীর প্রায় সূচনালগ্নে যুদ্ধের ভয়াবহতায় তরুণ আর্মেনিয়ান যুবক শগোমন তেহরিলিয়ানের হৃদয় একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ জানত না সে; বিভিন্ন দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না। শুধু খাঁ খাঁ করা হৃদয়ে অনুভব করত এই যুদ্ধ তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, আর বুঝত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীর ওপর নারকীয়তা চরিতার্থ করতে মুখ্যত দায়ী যে ব্যক্তি—তুরস্কের সাবেক মন্ত্রী তালাত পাশা, তাঁর কোনো দিন বিচার হবে না, শাস্তি হবে না; বরং তিনি বীরদর্পে ঘুরে বেড়াবেন সমাজজুড়ে। যুদ্ধে নিজ পরিবারের সদস্যরা হত্যার শিকার হওয়ার পর থেকে মাথায় দারুণ জখম নিয়ে তেহরিলিয়ান ঘুমোতে পারে না–মাঝে মাঝেই ভয়ানক খিঁচুনি হয়। ১৯২০ সালে সুযোগ চলে আসে–বোস্টনভিত্তিক আর্মেনিয়ান প্লট অপারেশন নেমেসিসের পক্ষে তালাত পাশাকে হত্যা করার জন্য নির্বাচিত ও নিযুক্ত হয় সে এবং সফলভাবে হত্যা করে তালাতকে। এই হত্যার অপরাধে বার্লিনের আদালতে চলমান তেহরিলিয়ানের বিচারের ছোট্ট খবরখানা স্থানীয় পোলিশ পত্রিকায় ছাপা হলে পোল্যান্ডের লভভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বের তরুণ শিক্ষার্থী রাফায়েল লেমকিনের নজরে আসে। তৎক্ষণাৎ সে তার একজন অধ্যাপকের কাছে জানতে চায়, আর্মেনিয়ানদের হত্যাযজ্ঞের কারণে তালাতকে গ্রেপ্তার করার ব্যবস্থা না করে কেন তাকে হত্যা করা হলো। উত্তরে শিক্ষক মশাই জানালেন, তালাতকে গ্রেপ্তার করার মতো কোনো আইন নেই। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ধরো, কোনো চাষির ঘরে একঝাঁক মুরগি আছে এবং সে সেগুলোকে মেরে ফেলল, এতে কারও কিছু বলার নেই। কেন সে মেরে ফেলল জানতে চাওয়া মানে, তুমি তার কাজে অযথা নাক গলাচ্ছ, সীমা লঙ্ঘন করছ। শুনে লেমকিন বলে উঠল, একজন তালাত পাশাকে খুন করার জন্য তেহরিলিয়ান অপরাধী নিঃসন্দেহে, কিন্তু যে ব্যক্তি (তালাত পাশা) নিযুত আর্মেনিয়ানকে হত্যার জন্য দায়ী, সে অপরাধী নয়! এর চেয়ে অসংগতিপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না! এ ক্ষেত্রে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে লেমকিন মেলাতেই পারছিলেন না। নাগরিকের কল্যাণ করার কাজে সার্বভৌম রাষ্ট্র ভূমিকা রাখবে—সেটাই কাম্য, কিন্তু সার্বভৌম রাষ্ট্র তো নিযুত নাগরিককে হত্যা করার অধিকার কাউকে দিতে পারে না! এক ভীষণ মানসিক অস্থিরতার মধ্যে পড়লেন লেমকিন। এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধের কি তবে কোনো শাস্তি হবে না? এ ধরনের মনের অস্থিরতা নিয়ে তিনি আইন বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীকে যে নৃশংস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেই নামহীন অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য, বিচারের আওতায় আনার জন্য লেমকিন এর পরবর্তী প্রায় দেড় যুগ এ বিষয়টি নিয়ে নিরন্তরভাবে ভেবেছেন, লিখেছেন এবং নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করে গেছেন।
দুই. জাতি, বর্ণ বা ধর্মভিত্তিক কোনো জনগোষ্ঠীকে সুপরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ যাতে সংঘটিত হতে না পারে, সে জন্য লেমকিন আইনের খসড়া তৈরি করেন। তিনি গুরুত্ব দেন এ ধরনের অপরাধের বিচার ও শাস্তির বিষয়ে। এ ধরনের অপরাধকারীর বিচারের ব্যাপারে সর্বব্যাপী আইনগত অধিকারের (international jurisdiction) কথা ভেবেছেন লেমকিন–যার অর্থ অপরাধকারী যে দেশেই অপরাধ করুক না কেন, তাঁকে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বিচারের আওতায় আনা যাবে, শাস্তি দেওয়া যাবে। এই অপরাধের একটি নাম দেওয়ার জন্য সেদিন অস্থির হয়ে উঠেছিলেন লেমকিন এবং শেষ পর্যন্ত একটি যথার্থ নাম তিনি খুঁজে বের করেছিলেন, ‘জেনোসাইড’। গ্রিক শব্দ genos (জাতি/গোষ্ঠী) এবং লাতিন শব্দ cide (হত্যা)-এর সমন্বয় করে এই Genocide শব্দটি উদ্ভাবন করেন তিনি। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত একগুচ্ছ অপরাধকে তিনি নতুন একটি শব্দ ‘জেনোসাইড’ দিয়ে অভিহিত করলেন। কিছু জরুরি বিষয় সংযোজন-বিয়োজনের লেমকিনের প্রস্তাবিত কনভেনশন ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘে গৃহীত হলো।
তিন. এই কনভেনশনের দ্বিতীয় ধারায় জেনোসাইডের একটা স্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলা হয়, একটা জাতি বা গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত কার্যক্রমগুলো ‘জেনোসাইড’। লক্ষণীয়, এই ধারায় ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’ গুরুত্ব পেয়েছে; অর্থাৎ ধ্বংস করার ইচ্ছাটাও জেনোসাইড।
শারীরিকভাবে হত্যা করা শুধু নয়–নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মানসিক ও শারীরিক নানা ধরনের নির্যাতন করাও জেনোসাইড। একটা জাতি, গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে ফেলার প্রকাশ্য ঘোষণা বা ধ্বংস করার জন্য কাউকে উৎসাহিত করাও জেনোসাইড, যা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। জেনোসাইড সংঘটিত হতে পারে যুদ্ধ কিংবা শান্তিকালীন। যাদের বিরুদ্ধে জেনোসাইড সংঘটিত হয় তারা সক্ষম হলে নিজেরাই বিচারের আয়োজন করতে পারে; না হলে জেনোসাইড থামানো এবং বিচার করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আইনি দায়িত্ব।
১৯৭১ সালের পরিপ্রেক্ষিতে যদি আমরা দেখি, যেসব নির্যাতনমূলক কার্যক্রমকে জেনোসাইড বলা হয়েছে, অর্থাৎ হত্যা, শারীরিক ও মানসিক আঘাত, সম্পদ লুট, ধর্ষণ, ধর্মান্তকরণ—এর সবকিছুই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এসব জেনোসাইডাল অ্যাক্ট সংঘটিত হয়েছে—তা হলো, বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেওয়া। তাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা আমাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধ ঘটিয়েছে, তা জেনোসাইড নিঃসন্দেহে।
এমনকি ধর্ষণেরও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল, ধর্ষণগুলো স্রেফ যৌন তাড়নায় ছিল না। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের সৈনিকদের উসকে দিয়েছিল এবং ধর্মীয় ফতোয়াও জারি করেছিল। এসব ধর্ষণের উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালি জাতিসত্তার স্বকীয়তা শেষ করে দেওয়া, বাঙালি নারীর গর্ভে পাকিস্তানি সন্তান জন্ম দেওয়া, যারা অনুগত থাকবে তাদের পিতৃগোষ্ঠীর প্রতি। জাতি ধ্বংসের এই অভিপ্রায়ই জেনোসাইড। জেনোসাইডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীরাই শুধু নয়, জেনোসাইড সংঘটনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন প্রদানকারীরাও অপরাধী।
জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশনে আর্টিকেল ২-এ জেনোসাইডের সংজ্ঞায় যে ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’-এর কথা বলা হয়েছে, আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে এর শুরু ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ নয়; বরং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সময় থেকেই। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে গুলি করে হত্যা, রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ, আরবি হরফে বাংলা লেখানোর চেষ্টা—এগুলো যেমন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ধ্বংস করার অভিপ্রায়, তেমনি অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাধ্যমে ও বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাঙালি ‘প্রকৃত মুসলমান নয়’, ‘দুর্বল, কালো, বেঁটে’—এ রকম চিহ্নিত করে বাঙালি জাতির প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। মূলত পাকিস্তানের শুরু থেকেই জেনোসাইডের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে এবং ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাত থেকে এর চূড়ান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
ব্যাপক গণহত্যা এবং এক কোটি মানুষকে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য করার উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা। এর পাশাপাশি সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পীসহ সমাজের মুক্তিকামী প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী শ্রেণি।
চার. মূল কথা, মুক্তিকামী বাঙালিকে ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী খুব ঠান্ডা মাথায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। মাঠে বাস্তবায়নের সময় তারা আরও নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছিল। সেই আক্রমণ এ দেশের দালালগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে সারা দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপ্তি লাভ করেছিল, যার কারণে এ দেশের নিযুত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী এই হত্যাযজ্ঞের অংশভাক হয়ে বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করেছে। ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে যে মূল্য দিতে হয়েছে বাঙালি জাতির, তা তুলনাহীন। নৃশংস জেনোসাইডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করে পরাজিত করেছেন হত্যাকারী বাহিনীকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি অর্জিত হয়নি। তবে আশাপ্রদ ঘটনার সূচনা হয়েছে জেনোসাইড বিষয়ে কাজ করে—এমন তিনটি আমেরিকাভিত্তিক সংগঠন–লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন, জেনোসাইড ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কন্সেন্স-৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ থেকে ২৮ মার্চ ২০২২ সময়সীমার মধ্যে জেনোসাইডের স্বীকৃতিসূচক ঘোষণা দিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানিয়ে রেজল্যুশন জমা দিয়েছেন, যা আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য অপেক্ষমাণ। বিশ্বব্যাপী জেনোসাইড স্কলারদের ফোরাম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের পক্ষ থেকে শিগগিরই স্বীকৃতিসূচক রেজল্যুশন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মানবেতিহাসের বর্বরতম জেনোসাইড যা রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে, তার স্বীকৃতি আদায়ের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ এখনো অনেক দীর্ঘ। আমরা বিশ্বাস করি, সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় দেশে-বিদেশে সবাই মিলে বিরামহীন কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে এই স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা নিশ্চয় সফল হবে।
তৌহীদ রেজা নূর, লেখক, গবেষক

এক. বিগত শতাব্দীর প্রায় সূচনালগ্নে যুদ্ধের ভয়াবহতায় তরুণ আর্মেনিয়ান যুবক শগোমন তেহরিলিয়ানের হৃদয় একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ জানত না সে; বিভিন্ন দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না। শুধু খাঁ খাঁ করা হৃদয়ে অনুভব করত এই যুদ্ধ তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, আর বুঝত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীর ওপর নারকীয়তা চরিতার্থ করতে মুখ্যত দায়ী যে ব্যক্তি—তুরস্কের সাবেক মন্ত্রী তালাত পাশা, তাঁর কোনো দিন বিচার হবে না, শাস্তি হবে না; বরং তিনি বীরদর্পে ঘুরে বেড়াবেন সমাজজুড়ে। যুদ্ধে নিজ পরিবারের সদস্যরা হত্যার শিকার হওয়ার পর থেকে মাথায় দারুণ জখম নিয়ে তেহরিলিয়ান ঘুমোতে পারে না–মাঝে মাঝেই ভয়ানক খিঁচুনি হয়। ১৯২০ সালে সুযোগ চলে আসে–বোস্টনভিত্তিক আর্মেনিয়ান প্লট অপারেশন নেমেসিসের পক্ষে তালাত পাশাকে হত্যা করার জন্য নির্বাচিত ও নিযুক্ত হয় সে এবং সফলভাবে হত্যা করে তালাতকে। এই হত্যার অপরাধে বার্লিনের আদালতে চলমান তেহরিলিয়ানের বিচারের ছোট্ট খবরখানা স্থানীয় পোলিশ পত্রিকায় ছাপা হলে পোল্যান্ডের লভভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বের তরুণ শিক্ষার্থী রাফায়েল লেমকিনের নজরে আসে। তৎক্ষণাৎ সে তার একজন অধ্যাপকের কাছে জানতে চায়, আর্মেনিয়ানদের হত্যাযজ্ঞের কারণে তালাতকে গ্রেপ্তার করার ব্যবস্থা না করে কেন তাকে হত্যা করা হলো। উত্তরে শিক্ষক মশাই জানালেন, তালাতকে গ্রেপ্তার করার মতো কোনো আইন নেই। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ধরো, কোনো চাষির ঘরে একঝাঁক মুরগি আছে এবং সে সেগুলোকে মেরে ফেলল, এতে কারও কিছু বলার নেই। কেন সে মেরে ফেলল জানতে চাওয়া মানে, তুমি তার কাজে অযথা নাক গলাচ্ছ, সীমা লঙ্ঘন করছ। শুনে লেমকিন বলে উঠল, একজন তালাত পাশাকে খুন করার জন্য তেহরিলিয়ান অপরাধী নিঃসন্দেহে, কিন্তু যে ব্যক্তি (তালাত পাশা) নিযুত আর্মেনিয়ানকে হত্যার জন্য দায়ী, সে অপরাধী নয়! এর চেয়ে অসংগতিপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না! এ ক্ষেত্রে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে লেমকিন মেলাতেই পারছিলেন না। নাগরিকের কল্যাণ করার কাজে সার্বভৌম রাষ্ট্র ভূমিকা রাখবে—সেটাই কাম্য, কিন্তু সার্বভৌম রাষ্ট্র তো নিযুত নাগরিককে হত্যা করার অধিকার কাউকে দিতে পারে না! এক ভীষণ মানসিক অস্থিরতার মধ্যে পড়লেন লেমকিন। এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধের কি তবে কোনো শাস্তি হবে না? এ ধরনের মনের অস্থিরতা নিয়ে তিনি আইন বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীকে যে নৃশংস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেই নামহীন অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য, বিচারের আওতায় আনার জন্য লেমকিন এর পরবর্তী প্রায় দেড় যুগ এ বিষয়টি নিয়ে নিরন্তরভাবে ভেবেছেন, লিখেছেন এবং নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করে গেছেন।
দুই. জাতি, বর্ণ বা ধর্মভিত্তিক কোনো জনগোষ্ঠীকে সুপরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ যাতে সংঘটিত হতে না পারে, সে জন্য লেমকিন আইনের খসড়া তৈরি করেন। তিনি গুরুত্ব দেন এ ধরনের অপরাধের বিচার ও শাস্তির বিষয়ে। এ ধরনের অপরাধকারীর বিচারের ব্যাপারে সর্বব্যাপী আইনগত অধিকারের (international jurisdiction) কথা ভেবেছেন লেমকিন–যার অর্থ অপরাধকারী যে দেশেই অপরাধ করুক না কেন, তাঁকে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বিচারের আওতায় আনা যাবে, শাস্তি দেওয়া যাবে। এই অপরাধের একটি নাম দেওয়ার জন্য সেদিন অস্থির হয়ে উঠেছিলেন লেমকিন এবং শেষ পর্যন্ত একটি যথার্থ নাম তিনি খুঁজে বের করেছিলেন, ‘জেনোসাইড’। গ্রিক শব্দ genos (জাতি/গোষ্ঠী) এবং লাতিন শব্দ cide (হত্যা)-এর সমন্বয় করে এই Genocide শব্দটি উদ্ভাবন করেন তিনি। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত একগুচ্ছ অপরাধকে তিনি নতুন একটি শব্দ ‘জেনোসাইড’ দিয়ে অভিহিত করলেন। কিছু জরুরি বিষয় সংযোজন-বিয়োজনের লেমকিনের প্রস্তাবিত কনভেনশন ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘে গৃহীত হলো।
তিন. এই কনভেনশনের দ্বিতীয় ধারায় জেনোসাইডের একটা স্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলা হয়, একটা জাতি বা গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত কার্যক্রমগুলো ‘জেনোসাইড’। লক্ষণীয়, এই ধারায় ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’ গুরুত্ব পেয়েছে; অর্থাৎ ধ্বংস করার ইচ্ছাটাও জেনোসাইড।
শারীরিকভাবে হত্যা করা শুধু নয়–নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মানসিক ও শারীরিক নানা ধরনের নির্যাতন করাও জেনোসাইড। একটা জাতি, গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে ফেলার প্রকাশ্য ঘোষণা বা ধ্বংস করার জন্য কাউকে উৎসাহিত করাও জেনোসাইড, যা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। জেনোসাইড সংঘটিত হতে পারে যুদ্ধ কিংবা শান্তিকালীন। যাদের বিরুদ্ধে জেনোসাইড সংঘটিত হয় তারা সক্ষম হলে নিজেরাই বিচারের আয়োজন করতে পারে; না হলে জেনোসাইড থামানো এবং বিচার করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আইনি দায়িত্ব।
১৯৭১ সালের পরিপ্রেক্ষিতে যদি আমরা দেখি, যেসব নির্যাতনমূলক কার্যক্রমকে জেনোসাইড বলা হয়েছে, অর্থাৎ হত্যা, শারীরিক ও মানসিক আঘাত, সম্পদ লুট, ধর্ষণ, ধর্মান্তকরণ—এর সবকিছুই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এসব জেনোসাইডাল অ্যাক্ট সংঘটিত হয়েছে—তা হলো, বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেওয়া। তাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা আমাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধ ঘটিয়েছে, তা জেনোসাইড নিঃসন্দেহে।
এমনকি ধর্ষণেরও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল, ধর্ষণগুলো স্রেফ যৌন তাড়নায় ছিল না। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের সৈনিকদের উসকে দিয়েছিল এবং ধর্মীয় ফতোয়াও জারি করেছিল। এসব ধর্ষণের উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালি জাতিসত্তার স্বকীয়তা শেষ করে দেওয়া, বাঙালি নারীর গর্ভে পাকিস্তানি সন্তান জন্ম দেওয়া, যারা অনুগত থাকবে তাদের পিতৃগোষ্ঠীর প্রতি। জাতি ধ্বংসের এই অভিপ্রায়ই জেনোসাইড। জেনোসাইডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীরাই শুধু নয়, জেনোসাইড সংঘটনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন প্রদানকারীরাও অপরাধী।
জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশনে আর্টিকেল ২-এ জেনোসাইডের সংজ্ঞায় যে ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’-এর কথা বলা হয়েছে, আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে এর শুরু ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ নয়; বরং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সময় থেকেই। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে গুলি করে হত্যা, রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ, আরবি হরফে বাংলা লেখানোর চেষ্টা—এগুলো যেমন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ধ্বংস করার অভিপ্রায়, তেমনি অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাধ্যমে ও বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাঙালি ‘প্রকৃত মুসলমান নয়’, ‘দুর্বল, কালো, বেঁটে’—এ রকম চিহ্নিত করে বাঙালি জাতির প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। মূলত পাকিস্তানের শুরু থেকেই জেনোসাইডের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে এবং ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাত থেকে এর চূড়ান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
ব্যাপক গণহত্যা এবং এক কোটি মানুষকে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য করার উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা। এর পাশাপাশি সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পীসহ সমাজের মুক্তিকামী প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী শ্রেণি।
চার. মূল কথা, মুক্তিকামী বাঙালিকে ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী খুব ঠান্ডা মাথায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। মাঠে বাস্তবায়নের সময় তারা আরও নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছিল। সেই আক্রমণ এ দেশের দালালগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে সারা দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপ্তি লাভ করেছিল, যার কারণে এ দেশের নিযুত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী এই হত্যাযজ্ঞের অংশভাক হয়ে বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করেছে। ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে যে মূল্য দিতে হয়েছে বাঙালি জাতির, তা তুলনাহীন। নৃশংস জেনোসাইডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করে পরাজিত করেছেন হত্যাকারী বাহিনীকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি অর্জিত হয়নি। তবে আশাপ্রদ ঘটনার সূচনা হয়েছে জেনোসাইড বিষয়ে কাজ করে—এমন তিনটি আমেরিকাভিত্তিক সংগঠন–লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন, জেনোসাইড ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কন্সেন্স-৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ থেকে ২৮ মার্চ ২০২২ সময়সীমার মধ্যে জেনোসাইডের স্বীকৃতিসূচক ঘোষণা দিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানিয়ে রেজল্যুশন জমা দিয়েছেন, যা আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য অপেক্ষমাণ। বিশ্বব্যাপী জেনোসাইড স্কলারদের ফোরাম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের পক্ষ থেকে শিগগিরই স্বীকৃতিসূচক রেজল্যুশন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মানবেতিহাসের বর্বরতম জেনোসাইড যা রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে, তার স্বীকৃতি আদায়ের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ এখনো অনেক দীর্ঘ। আমরা বিশ্বাস করি, সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় দেশে-বিদেশে সবাই মিলে বিরামহীন কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে এই স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা নিশ্চয় সফল হবে।
তৌহীদ রেজা নূর, লেখক, গবেষক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

এক. বিগত শতাব্দীর প্রায় সূচনালগ্নে যুদ্ধের ভয়াবহতায় তরুণ আর্মেনিয়ান যুবক শগোমন তেহরিলিয়ানের হৃদয় একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ জানত না সে; বিভিন্ন দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না। শুধু খাঁ খাঁ করা হৃদয়ে অনুভব করত এই যুদ্ধ তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, আর বুঝত আর
২৫ মার্চ ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

এক. বিগত শতাব্দীর প্রায় সূচনালগ্নে যুদ্ধের ভয়াবহতায় তরুণ আর্মেনিয়ান যুবক শগোমন তেহরিলিয়ানের হৃদয় একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ জানত না সে; বিভিন্ন দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না। শুধু খাঁ খাঁ করা হৃদয়ে অনুভব করত এই যুদ্ধ তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, আর বুঝত আর
২৫ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

এক. বিগত শতাব্দীর প্রায় সূচনালগ্নে যুদ্ধের ভয়াবহতায় তরুণ আর্মেনিয়ান যুবক শগোমন তেহরিলিয়ানের হৃদয় একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ জানত না সে; বিভিন্ন দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না। শুধু খাঁ খাঁ করা হৃদয়ে অনুভব করত এই যুদ্ধ তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, আর বুঝত আর
২৫ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

এক. বিগত শতাব্দীর প্রায় সূচনালগ্নে যুদ্ধের ভয়াবহতায় তরুণ আর্মেনিয়ান যুবক শগোমন তেহরিলিয়ানের হৃদয় একেবারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ জানত না সে; বিভিন্ন দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না। শুধু খাঁ খাঁ করা হৃদয়ে অনুভব করত এই যুদ্ধ তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, আর বুঝত আর
২৫ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫