ঘরের মাঠে ২০১৫ সালের পর থেকে কত বাঘা বাঘা শক্তিই তো বাংলাদেশের কাছে পাত্তা পায়নি। সেখানে আয়ারল্যান্ড আর এমন কি! আজ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আইরিশদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটির আগে এমন কোনো ভাবনা আপনার মাথায় কাজ করছে? করাটা অস্বাভাবিক নয়।
তবে আপনি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে হলে অন্য বিষয়। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের সঙ্গে হাই ভোল্টেজ সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ। যেটা ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ ছিল। যদিও দুই দল বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেলেছিল তার আগেই। আয়ারল্যান্ড সিরিজকে সেই অর্থে একটু কম গুরুত্বের তালিকায় ফেলাই যায়। সিরিজটা ওয়ানডে সুপার লিগেরও অংশ নয়। ব্যাপারটা গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এক সংবাদকর্মী মনে করিয়ে প্রশ্ন করতেই হাথুরুসিংহে মুখে একটা হাসির রেখা ছড়িয়ে বললেন, ‘খুবই বিপজ্জনক। একদমই না।’
হাথুরুসিংহের কথার অনুবাদ যেটা দাঁড়ায়, আয়ারল্যান্ড সহজ প্রতিপক্ষ ভেবে স্বস্তির চিন্তার ত্রিসীমানায় আসাও বিপদের কারণ হতে পারে।
ইংল্যান্ডের মতো আয়ারল্যান্ডের জন্যও তাঁর দলের মানসিকতার জায়গাটা একই রকম। তবে হাথুরু এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দল কাউকে ভয় পায় না। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, জয় ভিন্ন অন্য কিছু ভাবার উপায় নেই। সে ক্ষেত্রে এই সিরিজটা কি অধিনায়ক তামিম ইকবালের জন্য একটু বেশি চ্যালেঞ্জের? হাথুরু এটা একদমই নাকচ করে দিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিমের নেতৃত্বে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য ইংলিশদের ধবলধোলাই করে ইতিহাস রচনা করেছে সাকিব আল হাসানের দল। চ্যালেঞ্জটা তাই শুধু তামিমের অধিনায়কত্বের নয়, খেলোয়াড়দের টি-টোয়েন্টি মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে আরেকটা সংস্করণে মানিয়ে নেওয়ারও। বিশ্বকাপ সামনে রেখে এই সিরিজে বাংলাদেশ দলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখা যেতে পারে; বিশেষ করে মিডল অর্ডারে। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বিশ্রামে। তাঁর জায়গা নিয়েছেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা তৌহিদ হৃদয় ও দলে ফেরা ইয়াসির আলী রাব্বি।
ধারণা করা হচ্ছিল, আয়ারল্যান্ড সিরিজে যাঁদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা ভালো করলে মাহমুদউল্লাহর দলে ঢোকা আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে। হাথুরুসিংহের কথায় অবশ্য এটা মনে হওয়ার কারণ নেই, ‘আমি মনে করি না, সে অতীত হয়ে গেছে। আমরা যেটা করতে চাইছি, বিশ্বকাপের আগে আমাদের খেলোয়াড়দের পুল বড় করতে। এর মানে এই নয় যে কেউ ভালো করলেই মাহমুদউল্লাহ শেষ।’ কিছুটা চোট-শঙ্কা নিয়ে আয়ারল্যান্ড সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল অনুশীলনে ফুটবল খেলতে গিয়ে মুখে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে যেতে হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। সিটি স্ক্যানে খারাপ কিছু আসেনি। এরপর তাঁকে চোখের চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। আজ তাঁর খেলা না খেলা নিশ্চিত করতে পারেননি বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী।
শঙ্কা আছে তামিম ইকবালকে নিয়েও। তাঁর ভাইরাস-জাতীয় কোনো সংক্রমণ হয়েছে। যদিও দেবাশীষ জানিয়েছেন, তাঁদের দিক থেকে তামিমের খেলতে কোনো বাধা নেই। গতকাল নেটে তাসকিন আহমেদ-হাসান মাহমুদদের বিপক্ষে বেশ সাবলীল খেলেছেন। ব্যাটিংয়ের মাঝে এবং অনুশীলনের পরে হাথুরুসিংহের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা করতে দেখে গেছে তামিমকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খুব বেশি হাসেনি তাঁর ব্যাট। সিলেটের ব্যাটিং-সহায়ক উইকেটে নিজেকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা করতেই পারেন তামিম।
২০০৮ সালের পর প্রথমবার বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে এসেছে আয়ারল্যান্ড। সব মিলিয়ে মুখোমুখি ১০ লড়াইয়ে বাংলাদেশের ৭ জয়ের বিপরীতে আয়ারল্যান্ড জিতেছে ২ ম্যাচ। একটি পরিত্যক্ত। একদিক থেকে ফেরা হচ্ছে সিলেট ভেন্যুরও। এই মাঠে ২০২০ সালের মার্চে শেষবার খেলেছে বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এখানে চার ওয়ানডে খেলে অপরাজেয় বাংলাদেশ। পঞ্চমটাতেও নিশ্চয় ব্যতিক্রম কিছু চাওয়ার কথা নয়।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে