ইশতিয়াক হাসান

আশ্চর্য সুন্দর পাহাড়, ঝিরঝির করে বয়ে চলা শীতল জলের নদী, পাহাড়চূড়ার বৌদ্ধমন্দির—সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের মতো চমৎকার ভ্রমণ গন্তব্য আছে কমই।
ভুটানি রীতির বাড়ি-ঘরগুলোও নজর কাড়ে পর্যটকদের। লাল-সাদা রঙের কাঠের সামনের অংশ, ছোট জানালা, ঢালু ছাদ প্রতিটি বাড়ির। তেমনি মৌসুমে আপেল, কমলাসহ নানা ধরনের বাগানের সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারবেন। হরেক জাতের বন্যপ্রাণীর আবাসও দেশটিতে। আবহাওয়াও খুব আরামদায়ক। হবে না-ই বা কেন? এটি যে কার্বন নেগেটিভ কান্ট্রি (যে পরিমাণ কার্বন ছাড়ে, তার চেয়ে শোষণক্ষমতা বেশি)। ভুটানে অসাধারণ সুন্দর সব জায়গার মধ্যে আপাতত ১০টিকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
১. থিম্পু
ভুটানের রাজধানী শহরটিতে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। পাহাড়চূড়ার বুদ্ধ পয়েন্টের বড় আকর্ষণ গৌতম বুদ্ধের বিশাল এক সোনালি মূর্তি। ২০০৬ সালে কাজ শুরু হলেও ১৬৯ ফুট উঁচু বুদ্ধ ভাস্কর্য এবং অন্যান্য মূর্তিসহ গোটা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন হয় ২০১৫। কয়েকটা সিঁড়ি পেরিয়ে ভেতরে গিয়ে ছোট ছোট আরও অনেক বুদ্ধমূর্তির দেখা পাবেন।
বিভিন্ন তাকে সাজিয়ে রাখা। সঙ্গের গাইড যখন জানাবেন আট ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এক লাখ এবং ১২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ২৫ হাজার ব্রোঞ্জের বুদ্ধ স্ট্যাচু আছে এখানে, তখন রীতিমতো চমকাবেন।
বিশাল চত্বর থেকে উপভোগ করবেন চারপাশের তুষারের টুপি পরা উঁচু সব পর্বতের রূপ। চত্বরে বেশ কিছু মাঝারি আকারের মূর্তি আছে। বুদ্ধ পয়েন্ট এখন থিম্পুর অঘোষিত প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
শহরের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পাহাড়ি নদী চু মুগ্ধ করবে আপনাকে। শহর থেকে গাড়িতে চেপে মিনিট পনেরো-কুড়ি গেলে পৌঁছে যাবেন ‘জিগমে দরজি ন্যাশনাল পার্কে’। এই বনের আয়তন কম নয়, ৪ হাজার ৩১৬ বর্গকিলোমিটার। গোটা ভুটানের প্রায় ৯ ভাগের এক ভাগ। মোটামুটি ১ হাজার ৬০০ থেকে ৭ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতার এলাকা আছে এর আওতায়। ট্র্যাকারদের স্বর্গরাজ্য জিগমে দর্জি জাতীয় উদ্যান, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার প্রচুর ট্র্যাকার এই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। বনে বাঘ ছাড়া মিলবে মেঘলা চিতা, মাস্ক ডিয়ার, বন্য কুকুর, হিমালয়ান কালো ভালুক, লাল পান্ডার মতো প্রাণীদের। হিমালয়ের তুষারছাওয়া উঁচু সব শৃঙ্গও পড়েছে এর সীমানায়। ভুটানের জাতীয় প্রাণী টাকিনও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এই জঙ্গলে। আধা গরু-আধা ছাগল বলতে পারেন এই জন্তুটিকে। অবশ্য এই প্রাণীকে সহজে দেখতে চাইলে যেতে পারেন থিম্পুর টাকিন রিজার্ভে।
২. পারো
পারোর কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর আশ্চর্য সুন্দর বিমানবন্দরটির কথা। প্লেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আরামদায়ক, শীতল এক বাতাস আপনার শরীর জুড়িয়ে দেবে। রানওয়ের পরেই পাহাড়সারি মনটা ভালো করে দেবে। নেট ঘেঁটে যতটা জানতে পেরেছি, পারো শহরটা গড়ে উঠেছে বেশি দিন হয়নি, ১৯৮৫ সালে একটা মূল সড়ক দিয়ে এর শুরু। তখন এর দুই পাশে ছিল কেবল বর্ণিল সব দোকান। ধীরে ধীরে আরও দালানকোঠা হয়।
ভুটানের জাতীয় জাদুঘর পারোতেই। পাহাড়ের ওপরে। মূল ভবনটি গোল, ঐতিহ্যবাহী লাল-সাদা এক দালান। তা জং নামে পরিচিত বহু পুরোনো এই বিল্ডিংটাকে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়ানচুকের নির্দেশে ১৯৬৮ সালে সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। তা জং মানে হলো ওয়াচ টাওয়ার। সত্যি এখানে দাঁড়ালে নিচের পারো উপত্যকা নিমেষে চোখের সামনে চলে আসবে। তবে প্রথমে নজর যাবে দুটি জংয়ের দিকে। বেশি মশহুর রিনপাং জং। এটা একই সঙ্গে দুর্গ এবং বৌদ্ধমন্দির বা গুম্ফা। এখন পারোর প্রশাসনিক সদর দপ্তর। এখান থেকে সবুজ পারো উপত্যকায়, মাঝে মাঝে বর্ণিল সব ভুটানি বাড়ি-ঘর, ফসলের খেত চোখ জুড়িয়ে দেবে।
শহরের বাইরের দিকটা কেমন মায়া মাখানো। বড় জায়গা নিয়ে কয়েকটা রিসোর্ট, ভুটানিদের ছোট ফার্ম হাউস, চাষ করা জমিগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পারো শহর কেটে চলে গেছে ভুটানের বড় নদীগুলোর একটি পা চু।
৩. টাইগার নেস্ট
ভুটানের নাম শুনলে কোন দৃশ্যটা সবার আগে মনের পর্দায় ভাসতে থাকে, বলুন তো? আমিই বলে দিচ্ছি, উঁচু পাহাড়ের চাতালে ঝুলতে থাকা অনিন্দ্যসুন্দর এক মনাস্ট্রি বা গুম্ফা। কথাটা আমার নিজের বেলায়ও খাটে। প্রথম যখন ভুটান ভ্রমণের কথা ভাবছিলাম, মাথায় ঘুরছিল টাইগার নেস্ট বা পারো টেকটসাংয়ের ছবিই। পারো শহর থেকে টাইগার নেস্টের নিচের পার্ক মতো জায়গাটিতে পৌঁছাতে মিনিট ২৫-৩০ লাগবে। ঢংঢং শব্দে কয়েকটা সেতু পেরোবেন পথে। এর মধ্যে একটা বেশ বড়। টাইগার নেস্ট বা ‘বাঘের বাসা’র মূল প্রবেশপথের বাইরে হরেক জাতের স্যুভেনির নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। কতক দূর যেতেই মোটামুটি খোলামেলা, তবে একটু এবড়োখেবড়ো এক জমিতে অনেকগুলো ঘোড়া চড়তে দেখবেন। যাঁরা পাহাড় বাইতে সাহস করেন না, তাঁদের চূড়ায় পৌঁছে দেবে এই ঘোড়া।
গাছপালাময় এক জায়গা থেকেই ট্রেকিং আর হাইকিংয়ের পথের শুরু। কয়েকটি বোর্ডে এই ট্রেইলে কী ধরনের পাখির দেখা মিলতে পারে তা ছবিসহ চিহ্নিত করা হয়েছে। টাইগার নেস্টে উঠতে হয় ঘোরানো-প্যাঁচানো অনেকটা পথ পেরিয়ে। গুম্ফাটা সাগর সমতল থেকে ৩১০০ মিটার উচ্চতায়!
আপনার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে এর নাম টাইগার নেস্ট কেন? বাঘের বাসা আছে কি? ১৬৯২ সালে প্রথম তৈরি হয় এটি। কথিত আছে গুরু রিনপোচ একটা বাঘিনীর পিঠে চড়ে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তারের জন্য তিব্বত থেকে এখানে এসেছিলেন। তাই এমন নামকরণ। অপর একটি কিংবদন্তি বলছে, গুরু তাঁর এক অভিজাত ভক্তের পীড়াপীড়িতে তাঁকে বাঘিনী বানিয়ে পিঠে সওয়ার হয়ে ওঠেন উঁচু পাহাড়টিতে। ওই বাঘিনী নাকি উড়ে পেরিয়েছিল দূরত্বটা।
৪. চেলালা পাস
গাড়িতে করে যাওয়া যায় ভুটানের এমন সবচেয়ে উঁচু জায়গা চেলালা পাস। উচ্চতা ৩ হাজার ৯৮৮ মিটার। পাহাড়ি রাস্তাটা ভয়ানক আঁকাবাঁকা, বিপজ্জনক। অবশ্য ভুটানের চালকেরা সাধারণত গাড়ি চালান সতর্কতার সঙ্গে। কখনো কখনো দূরে পাহাড়ের গায়ে টাইগার নেস্টটের চেহারাও দেখবেন চেলালা পাসে যাওয়ার পথে। উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভূপ্রকৃতিতে বৈচিত্র্য নজর কাড়বে। নতুন নতুন প্রজাতির গাছের সঙ্গে পরিচিত হবেন। শীতও বাড়বে। এখানে শীতে এত্তো বরফ পড়ে যে অনেক সময় এই পথ বন্ধ হয়ে যায়। রেসকিউ পার্টি এসে বরফ পরিষ্কার করলেই তবে গাড়ি চলে। এদিকে রাস্তা সরু। উল্টো পাশ থেকে গাড়ি আসে কি না, বুঝতে সতর্ক থাকতে হয়।
চেলালায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামলেই মনে হবে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছেন। পাহাড়ের ওপরের দোকান থেকে গরম-গরম পাকোরা, বেসনে চুবানো ফুলকপি খেয়ে উষ্ণতা খুঁজতে পারেন।
পাহাড়ে কিনারে দাঁড়াতেই হিমালয়ের তুষারঢাকা পর্বতমালাগুলো নজর কাড়বে। নিচে এক পাশে পারো ভ্যালি, আরেক পাশে হা ভ্যালি। ওপর থেকে এই উপত্যকার দৃশ্য দেখে চোখ জুড়াবে।
৫. দোচুলা পাস
থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার পথে পড়ে দোচুলা পাস। সাগর সমতল থেকে প্রায় ৩ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতায় এটি। এখান থেকে হিমালয়ের উঁচু উঁচু বরফঢাকা চূড়াগুলো দেখা যায়। তবে শর্ত আছে একটা, আকাশ থাকতে হবে পরিষ্কার। এদের মধ্যে আছে ভুটানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট মাসানগাংও। দোচুলা পাসের মূল আকর্ষণ এখানকার স্তুপাগুলো। সাদা-লালে মেশানো এখানকার ১০৮ স্তুপা দেখে চোখ জুড়াবে। বৌদ্ধভিক্ষুদের ধ্যানের জায়গা স্তুপা। এই স্তুপাগুলো বানানো হয় কুইন মাদার আসি দরজি ওয়াংমো ওয়ানচুকের নির্দেশে, ২০০৪ সালে। একটা গুম্ফাও আছে দোচুলায়। অবশ্য ভুটানে দেখা বিভিন্ন প্রাচীন, পুরোনো গুম্ফাগুলোর তুলনায় এটা নেহাত ছোট।
জায়গাটি পড়েছে ভুটানের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সীমানায়। চারপাশে তাই লম্বা লম্বা গাছের রাজত্ব। আশপাশে সাইপ্রেস, ওক ও বার্চ গাছের রাজত্ব। পার্কের সীমানায় হেঁটে বেড়ানোর কয়েকটি ট্রেইল আছে, বিশেষ করে রডোডেনড্রন ট্রেইলটা অনেক সুন্দর। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা, ভুটানের বড় দুটি জঙ্গল জিগমে দর্জি ও জিগমে সিঙ্গির মাঝে প্রাকৃতিক করিডর এই উদ্যান। তাই এখানে বাঘ, চিতা বাঘ আর লাল পান্ডার মতো দুর্লভ বন্য জন্তুর দেখা পাওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য সময় ও ধৈর্য দুটোই চাই।
৬. পুনাখা
দোচুলা পাসের পর পুনাখা যাওয়ার পথটা ভারি সুন্দর। ডান পাশে গা ঘেঁষেই উঠে গেছে পাহাড়। তাই তাকিয়ে বেশি কিছু দেখতে পাবেন না। তবে বাঁয়ে তাকালেই চোখ জুড়াবে। একটু দূরে গাছপালায় ঢাকা সবুজ পাহাড়, এখানে-সেখানে দৃষ্টিনন্দন সব বাড়িঘর। কিছুক্ষণ পর বেশ উঁচুতে কয়েকটা স্থাপনা দেখবেন, ওটা নানারি। নারী ভিক্ষুরা ওখানে প্রশিক্ষণ নেন, ধ্যান করেন। বাঁয়ে নদীও চলবে।
পুনাখায় ঢুকে ভেতরের একটা রাস্তা ধরে কিছু দূর গেলে ডান পাশে পাবেন অপরূপ এক নদী। পাথরের ওপর দিয়ে ঝিরঝির করে বয়ে চলেছে জল। ওপরে সেতু। দূরে দেখা দিল পুনাখা জং। একই সঙ্গে দুর্গ আর ধর্মীয় কাঠামো বলতে পারেন এই জংকে। পুনাখা জং তৈরি হয়েছে সেই ১৬৩৭-৩৮ সালে। এখন পুনাখা জেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর। ভুটানি স্থাপত্যরীতিতে তৈরি দালানটি মুগ্ধ করবে আপনাকে। পুনাখা জংয়ের সীমানায় ঢুকতে হয় নদীর ওপর একটা সেতু পেরিয়ে। পুনাখা উপত্যকার দুই নদীর মাঝখানে জংটি। আদপে পো চু হলো নদ, মো চু নদী। পো চোর উৎপত্তি পুনাখার পাহাড়ের হিমবাহের বরফগলা পানিতে হলেও মো চু এসেছে সেই তিব্বতের লাসা থেকে। কাঠের ব্রিজের ওপর থেকে নিচে নদীর স্বচ্ছ জলে মাছ দেখা যায়।
জংয়ের পেছনের গেট পেরিয়ে রওনা দেবেন ঝুলন্ত সেতুর দিকে। প্রথমে দুই পশে গাছপালার গার্ড দেওয়া পাকা সড়ক, তারপর পাহাড়ের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মেঠোপথে। ৫০০ ফুটের বেশি লম্বা ঝুলন্ত সেতুটা সাং চু নদীর ওপর। দুই পাশে সিমেন্টের ব্লকের মাঝখানে শক্ত তার দিয়ে তৈরি। হাঁটার সময় সেতুর সঙ্গে দুলতে থাকবেন আপনিও। সেতুর গায়ে অনেক রঙিন পতাকা, সব সময়ই নাকি এই সেতুতে এমন অজস্র পতাকা ঝোলে অশুভ আত্মাদের দূরে রাখতে। ঝুলন্ত সেতু থেকে নিচের নদীটা ধরা দেবে আরও মোহনীয় চেহারায়। রাফটিং করতে দেখবেন মানুষকে। ওপাশে পাহাড়, সমতলে ধানখেত—সবকিছুই দারুণ! এই সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ তো বটেই; বিভিন্ন গবাদিপশুও চলাচল করে।
৭. বুমথাং উপত্যকা
ভুটানিদের কাছে ধর্মীয় দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটি। প্রায় ২ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বুমথামে অনেক পুরোনো বৌদ্ধমন্দির আছে।
পর্যটকদের, বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুব প্রিয় এক গন্তব্য এটি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে তাঁদের। পুনাখা থেকে বুমথাং যাওয়ার পথে খাড়া পাহাড়ের ওপর মেঘের রাজ্যে ট্রংসা জংও পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। ওই পথেই বেশ কয়েকটি ঝর্ণাও চোখে পড়ে। এগুলোর জল অবশ্য শীতে জমে বরফ হয়ে থাকে। প্রচুর আপেল বাগানেরও দেখা মেলে এই উপত্যকায়। অনেক পর্যটকই একে আদর করে ডাকেন ‘পুবের সুইজারল্যান্ড’। নানা ধরনের উৎসবের জন্যও বিখ্যাত জায়গাটি।
৮. হা ভ্যালি
হা ভ্যালি বা হা উপত্যকা ইদানীং ভুটানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের খুব প্রিয় এক গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটি বিখ্যাত এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এর পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি দুর্গ ও বৌদ্ধমন্দির আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম লাখাং কারপো (সাদা মন্দির) ও লাখাং নাগপো (কালো মন্দির), ১০০ বছরের পুরোনো মন্দির তাগচু গোয়েম্বা। দবিজ জং নামে পাহাড়চূড়ার পাঁচতলা দুর্গটিও এখানকার বিখ্যাত গন্তব্যগুলোর একটি। পারো থেকে দূরত্ব বেশি না হওয়ায় অনায়াসে সেখানে একটি কিংবা দুটি দিন কাটাতে পারেন।
৯. ফুন্টসলিং
বিশেষ করে যেসব বাংলাদেশি পর্যটক ভারত হয়ে ভুটানে ঢোকেন, তাঁদের কাছে বেশ পরিচিত ফুন্টসলিং। ছোট্ট এই শহরে আছে কুমির প্রজননকেন্দ্র, ভুটান গেট, মনাস্ট্রি। ফুন্টসলিংয়ের উঁচুনিচু রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা। রাস্তার পাশেই ছোট-বড় শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাহারি ফুলের দোকান পাবেন। বাজারে আশপাশের পাহাড়ে উৎপাদিত নানা ফল পাবেন। মোটের ওপর নীরব, শান্তিময় প্রাকৃতিক পরিবেশে যাঁরা দুটি দিন কাটাতে চান, তাঁরা ভুটান ভ্রমণের সময় শহরটির জন্য দুটি দিন রাখতে পারেন।
১০. ওয়াংদুয়ে ফোদরাং
ভুটানের আর একটি বিখ্যাত গন্তব্য। পুনাখার দক্ষিণে অবস্থিত ওয়াংদুয়ে ফোদরাং সেন্ট্রাল হাইওয়ে ধরে মধ্য ভুটানে পৌঁছার আগে সর্বশেষ শহর। ওয়াংদুয়ে ফোদরাং উপত্যকার ওপরের অংশ পশু চারণভূমি হিসেবে খুব বিখ্যাত। বাঁশের নানা সামগ্রী এবং স্লেট ও নানান পাথর কুঁদে তৈরি বিভিন্ন জিনিসের জন্যও আলাদা নাম আছে জায়গাটির।
পুনাখা চু ও তাং চু নদীর সংযোগস্থলে এক পাহাড়ের ওপর অবস্থিত ওয়াংদুয়ে ফোদরাং জংও আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
সূত্র. হিমালয়ান গ্লেসিয়ার. কম, থ্রিলো ফিলিয়া ডট কম, উইকিপিডিয়া
ভ্রমণ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

আশ্চর্য সুন্দর পাহাড়, ঝিরঝির করে বয়ে চলা শীতল জলের নদী, পাহাড়চূড়ার বৌদ্ধমন্দির—সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের মতো চমৎকার ভ্রমণ গন্তব্য আছে কমই।
ভুটানি রীতির বাড়ি-ঘরগুলোও নজর কাড়ে পর্যটকদের। লাল-সাদা রঙের কাঠের সামনের অংশ, ছোট জানালা, ঢালু ছাদ প্রতিটি বাড়ির। তেমনি মৌসুমে আপেল, কমলাসহ নানা ধরনের বাগানের সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারবেন। হরেক জাতের বন্যপ্রাণীর আবাসও দেশটিতে। আবহাওয়াও খুব আরামদায়ক। হবে না-ই বা কেন? এটি যে কার্বন নেগেটিভ কান্ট্রি (যে পরিমাণ কার্বন ছাড়ে, তার চেয়ে শোষণক্ষমতা বেশি)। ভুটানে অসাধারণ সুন্দর সব জায়গার মধ্যে আপাতত ১০টিকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
১. থিম্পু
ভুটানের রাজধানী শহরটিতে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। পাহাড়চূড়ার বুদ্ধ পয়েন্টের বড় আকর্ষণ গৌতম বুদ্ধের বিশাল এক সোনালি মূর্তি। ২০০৬ সালে কাজ শুরু হলেও ১৬৯ ফুট উঁচু বুদ্ধ ভাস্কর্য এবং অন্যান্য মূর্তিসহ গোটা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন হয় ২০১৫। কয়েকটা সিঁড়ি পেরিয়ে ভেতরে গিয়ে ছোট ছোট আরও অনেক বুদ্ধমূর্তির দেখা পাবেন।
বিভিন্ন তাকে সাজিয়ে রাখা। সঙ্গের গাইড যখন জানাবেন আট ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এক লাখ এবং ১২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ২৫ হাজার ব্রোঞ্জের বুদ্ধ স্ট্যাচু আছে এখানে, তখন রীতিমতো চমকাবেন।
বিশাল চত্বর থেকে উপভোগ করবেন চারপাশের তুষারের টুপি পরা উঁচু সব পর্বতের রূপ। চত্বরে বেশ কিছু মাঝারি আকারের মূর্তি আছে। বুদ্ধ পয়েন্ট এখন থিম্পুর অঘোষিত প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
শহরের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পাহাড়ি নদী চু মুগ্ধ করবে আপনাকে। শহর থেকে গাড়িতে চেপে মিনিট পনেরো-কুড়ি গেলে পৌঁছে যাবেন ‘জিগমে দরজি ন্যাশনাল পার্কে’। এই বনের আয়তন কম নয়, ৪ হাজার ৩১৬ বর্গকিলোমিটার। গোটা ভুটানের প্রায় ৯ ভাগের এক ভাগ। মোটামুটি ১ হাজার ৬০০ থেকে ৭ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতার এলাকা আছে এর আওতায়। ট্র্যাকারদের স্বর্গরাজ্য জিগমে দর্জি জাতীয় উদ্যান, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার প্রচুর ট্র্যাকার এই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। বনে বাঘ ছাড়া মিলবে মেঘলা চিতা, মাস্ক ডিয়ার, বন্য কুকুর, হিমালয়ান কালো ভালুক, লাল পান্ডার মতো প্রাণীদের। হিমালয়ের তুষারছাওয়া উঁচু সব শৃঙ্গও পড়েছে এর সীমানায়। ভুটানের জাতীয় প্রাণী টাকিনও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এই জঙ্গলে। আধা গরু-আধা ছাগল বলতে পারেন এই জন্তুটিকে। অবশ্য এই প্রাণীকে সহজে দেখতে চাইলে যেতে পারেন থিম্পুর টাকিন রিজার্ভে।
২. পারো
পারোর কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর আশ্চর্য সুন্দর বিমানবন্দরটির কথা। প্লেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আরামদায়ক, শীতল এক বাতাস আপনার শরীর জুড়িয়ে দেবে। রানওয়ের পরেই পাহাড়সারি মনটা ভালো করে দেবে। নেট ঘেঁটে যতটা জানতে পেরেছি, পারো শহরটা গড়ে উঠেছে বেশি দিন হয়নি, ১৯৮৫ সালে একটা মূল সড়ক দিয়ে এর শুরু। তখন এর দুই পাশে ছিল কেবল বর্ণিল সব দোকান। ধীরে ধীরে আরও দালানকোঠা হয়।
ভুটানের জাতীয় জাদুঘর পারোতেই। পাহাড়ের ওপরে। মূল ভবনটি গোল, ঐতিহ্যবাহী লাল-সাদা এক দালান। তা জং নামে পরিচিত বহু পুরোনো এই বিল্ডিংটাকে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়ানচুকের নির্দেশে ১৯৬৮ সালে সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। তা জং মানে হলো ওয়াচ টাওয়ার। সত্যি এখানে দাঁড়ালে নিচের পারো উপত্যকা নিমেষে চোখের সামনে চলে আসবে। তবে প্রথমে নজর যাবে দুটি জংয়ের দিকে। বেশি মশহুর রিনপাং জং। এটা একই সঙ্গে দুর্গ এবং বৌদ্ধমন্দির বা গুম্ফা। এখন পারোর প্রশাসনিক সদর দপ্তর। এখান থেকে সবুজ পারো উপত্যকায়, মাঝে মাঝে বর্ণিল সব ভুটানি বাড়ি-ঘর, ফসলের খেত চোখ জুড়িয়ে দেবে।
শহরের বাইরের দিকটা কেমন মায়া মাখানো। বড় জায়গা নিয়ে কয়েকটা রিসোর্ট, ভুটানিদের ছোট ফার্ম হাউস, চাষ করা জমিগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পারো শহর কেটে চলে গেছে ভুটানের বড় নদীগুলোর একটি পা চু।
৩. টাইগার নেস্ট
ভুটানের নাম শুনলে কোন দৃশ্যটা সবার আগে মনের পর্দায় ভাসতে থাকে, বলুন তো? আমিই বলে দিচ্ছি, উঁচু পাহাড়ের চাতালে ঝুলতে থাকা অনিন্দ্যসুন্দর এক মনাস্ট্রি বা গুম্ফা। কথাটা আমার নিজের বেলায়ও খাটে। প্রথম যখন ভুটান ভ্রমণের কথা ভাবছিলাম, মাথায় ঘুরছিল টাইগার নেস্ট বা পারো টেকটসাংয়ের ছবিই। পারো শহর থেকে টাইগার নেস্টের নিচের পার্ক মতো জায়গাটিতে পৌঁছাতে মিনিট ২৫-৩০ লাগবে। ঢংঢং শব্দে কয়েকটা সেতু পেরোবেন পথে। এর মধ্যে একটা বেশ বড়। টাইগার নেস্ট বা ‘বাঘের বাসা’র মূল প্রবেশপথের বাইরে হরেক জাতের স্যুভেনির নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। কতক দূর যেতেই মোটামুটি খোলামেলা, তবে একটু এবড়োখেবড়ো এক জমিতে অনেকগুলো ঘোড়া চড়তে দেখবেন। যাঁরা পাহাড় বাইতে সাহস করেন না, তাঁদের চূড়ায় পৌঁছে দেবে এই ঘোড়া।
গাছপালাময় এক জায়গা থেকেই ট্রেকিং আর হাইকিংয়ের পথের শুরু। কয়েকটি বোর্ডে এই ট্রেইলে কী ধরনের পাখির দেখা মিলতে পারে তা ছবিসহ চিহ্নিত করা হয়েছে। টাইগার নেস্টে উঠতে হয় ঘোরানো-প্যাঁচানো অনেকটা পথ পেরিয়ে। গুম্ফাটা সাগর সমতল থেকে ৩১০০ মিটার উচ্চতায়!
আপনার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে এর নাম টাইগার নেস্ট কেন? বাঘের বাসা আছে কি? ১৬৯২ সালে প্রথম তৈরি হয় এটি। কথিত আছে গুরু রিনপোচ একটা বাঘিনীর পিঠে চড়ে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তারের জন্য তিব্বত থেকে এখানে এসেছিলেন। তাই এমন নামকরণ। অপর একটি কিংবদন্তি বলছে, গুরু তাঁর এক অভিজাত ভক্তের পীড়াপীড়িতে তাঁকে বাঘিনী বানিয়ে পিঠে সওয়ার হয়ে ওঠেন উঁচু পাহাড়টিতে। ওই বাঘিনী নাকি উড়ে পেরিয়েছিল দূরত্বটা।
৪. চেলালা পাস
গাড়িতে করে যাওয়া যায় ভুটানের এমন সবচেয়ে উঁচু জায়গা চেলালা পাস। উচ্চতা ৩ হাজার ৯৮৮ মিটার। পাহাড়ি রাস্তাটা ভয়ানক আঁকাবাঁকা, বিপজ্জনক। অবশ্য ভুটানের চালকেরা সাধারণত গাড়ি চালান সতর্কতার সঙ্গে। কখনো কখনো দূরে পাহাড়ের গায়ে টাইগার নেস্টটের চেহারাও দেখবেন চেলালা পাসে যাওয়ার পথে। উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভূপ্রকৃতিতে বৈচিত্র্য নজর কাড়বে। নতুন নতুন প্রজাতির গাছের সঙ্গে পরিচিত হবেন। শীতও বাড়বে। এখানে শীতে এত্তো বরফ পড়ে যে অনেক সময় এই পথ বন্ধ হয়ে যায়। রেসকিউ পার্টি এসে বরফ পরিষ্কার করলেই তবে গাড়ি চলে। এদিকে রাস্তা সরু। উল্টো পাশ থেকে গাড়ি আসে কি না, বুঝতে সতর্ক থাকতে হয়।
চেলালায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামলেই মনে হবে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছেন। পাহাড়ের ওপরের দোকান থেকে গরম-গরম পাকোরা, বেসনে চুবানো ফুলকপি খেয়ে উষ্ণতা খুঁজতে পারেন।
পাহাড়ে কিনারে দাঁড়াতেই হিমালয়ের তুষারঢাকা পর্বতমালাগুলো নজর কাড়বে। নিচে এক পাশে পারো ভ্যালি, আরেক পাশে হা ভ্যালি। ওপর থেকে এই উপত্যকার দৃশ্য দেখে চোখ জুড়াবে।
৫. দোচুলা পাস
থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার পথে পড়ে দোচুলা পাস। সাগর সমতল থেকে প্রায় ৩ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতায় এটি। এখান থেকে হিমালয়ের উঁচু উঁচু বরফঢাকা চূড়াগুলো দেখা যায়। তবে শর্ত আছে একটা, আকাশ থাকতে হবে পরিষ্কার। এদের মধ্যে আছে ভুটানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট মাসানগাংও। দোচুলা পাসের মূল আকর্ষণ এখানকার স্তুপাগুলো। সাদা-লালে মেশানো এখানকার ১০৮ স্তুপা দেখে চোখ জুড়াবে। বৌদ্ধভিক্ষুদের ধ্যানের জায়গা স্তুপা। এই স্তুপাগুলো বানানো হয় কুইন মাদার আসি দরজি ওয়াংমো ওয়ানচুকের নির্দেশে, ২০০৪ সালে। একটা গুম্ফাও আছে দোচুলায়। অবশ্য ভুটানে দেখা বিভিন্ন প্রাচীন, পুরোনো গুম্ফাগুলোর তুলনায় এটা নেহাত ছোট।
জায়গাটি পড়েছে ভুটানের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সীমানায়। চারপাশে তাই লম্বা লম্বা গাছের রাজত্ব। আশপাশে সাইপ্রেস, ওক ও বার্চ গাছের রাজত্ব। পার্কের সীমানায় হেঁটে বেড়ানোর কয়েকটি ট্রেইল আছে, বিশেষ করে রডোডেনড্রন ট্রেইলটা অনেক সুন্দর। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা, ভুটানের বড় দুটি জঙ্গল জিগমে দর্জি ও জিগমে সিঙ্গির মাঝে প্রাকৃতিক করিডর এই উদ্যান। তাই এখানে বাঘ, চিতা বাঘ আর লাল পান্ডার মতো দুর্লভ বন্য জন্তুর দেখা পাওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য সময় ও ধৈর্য দুটোই চাই।
৬. পুনাখা
দোচুলা পাসের পর পুনাখা যাওয়ার পথটা ভারি সুন্দর। ডান পাশে গা ঘেঁষেই উঠে গেছে পাহাড়। তাই তাকিয়ে বেশি কিছু দেখতে পাবেন না। তবে বাঁয়ে তাকালেই চোখ জুড়াবে। একটু দূরে গাছপালায় ঢাকা সবুজ পাহাড়, এখানে-সেখানে দৃষ্টিনন্দন সব বাড়িঘর। কিছুক্ষণ পর বেশ উঁচুতে কয়েকটা স্থাপনা দেখবেন, ওটা নানারি। নারী ভিক্ষুরা ওখানে প্রশিক্ষণ নেন, ধ্যান করেন। বাঁয়ে নদীও চলবে।
পুনাখায় ঢুকে ভেতরের একটা রাস্তা ধরে কিছু দূর গেলে ডান পাশে পাবেন অপরূপ এক নদী। পাথরের ওপর দিয়ে ঝিরঝির করে বয়ে চলেছে জল। ওপরে সেতু। দূরে দেখা দিল পুনাখা জং। একই সঙ্গে দুর্গ আর ধর্মীয় কাঠামো বলতে পারেন এই জংকে। পুনাখা জং তৈরি হয়েছে সেই ১৬৩৭-৩৮ সালে। এখন পুনাখা জেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর। ভুটানি স্থাপত্যরীতিতে তৈরি দালানটি মুগ্ধ করবে আপনাকে। পুনাখা জংয়ের সীমানায় ঢুকতে হয় নদীর ওপর একটা সেতু পেরিয়ে। পুনাখা উপত্যকার দুই নদীর মাঝখানে জংটি। আদপে পো চু হলো নদ, মো চু নদী। পো চোর উৎপত্তি পুনাখার পাহাড়ের হিমবাহের বরফগলা পানিতে হলেও মো চু এসেছে সেই তিব্বতের লাসা থেকে। কাঠের ব্রিজের ওপর থেকে নিচে নদীর স্বচ্ছ জলে মাছ দেখা যায়।
জংয়ের পেছনের গেট পেরিয়ে রওনা দেবেন ঝুলন্ত সেতুর দিকে। প্রথমে দুই পশে গাছপালার গার্ড দেওয়া পাকা সড়ক, তারপর পাহাড়ের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মেঠোপথে। ৫০০ ফুটের বেশি লম্বা ঝুলন্ত সেতুটা সাং চু নদীর ওপর। দুই পাশে সিমেন্টের ব্লকের মাঝখানে শক্ত তার দিয়ে তৈরি। হাঁটার সময় সেতুর সঙ্গে দুলতে থাকবেন আপনিও। সেতুর গায়ে অনেক রঙিন পতাকা, সব সময়ই নাকি এই সেতুতে এমন অজস্র পতাকা ঝোলে অশুভ আত্মাদের দূরে রাখতে। ঝুলন্ত সেতু থেকে নিচের নদীটা ধরা দেবে আরও মোহনীয় চেহারায়। রাফটিং করতে দেখবেন মানুষকে। ওপাশে পাহাড়, সমতলে ধানখেত—সবকিছুই দারুণ! এই সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ তো বটেই; বিভিন্ন গবাদিপশুও চলাচল করে।
৭. বুমথাং উপত্যকা
ভুটানিদের কাছে ধর্মীয় দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটি। প্রায় ২ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বুমথামে অনেক পুরোনো বৌদ্ধমন্দির আছে।
পর্যটকদের, বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুব প্রিয় এক গন্তব্য এটি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে তাঁদের। পুনাখা থেকে বুমথাং যাওয়ার পথে খাড়া পাহাড়ের ওপর মেঘের রাজ্যে ট্রংসা জংও পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। ওই পথেই বেশ কয়েকটি ঝর্ণাও চোখে পড়ে। এগুলোর জল অবশ্য শীতে জমে বরফ হয়ে থাকে। প্রচুর আপেল বাগানেরও দেখা মেলে এই উপত্যকায়। অনেক পর্যটকই একে আদর করে ডাকেন ‘পুবের সুইজারল্যান্ড’। নানা ধরনের উৎসবের জন্যও বিখ্যাত জায়গাটি।
৮. হা ভ্যালি
হা ভ্যালি বা হা উপত্যকা ইদানীং ভুটানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের খুব প্রিয় এক গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটি বিখ্যাত এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এর পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি দুর্গ ও বৌদ্ধমন্দির আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম লাখাং কারপো (সাদা মন্দির) ও লাখাং নাগপো (কালো মন্দির), ১০০ বছরের পুরোনো মন্দির তাগচু গোয়েম্বা। দবিজ জং নামে পাহাড়চূড়ার পাঁচতলা দুর্গটিও এখানকার বিখ্যাত গন্তব্যগুলোর একটি। পারো থেকে দূরত্ব বেশি না হওয়ায় অনায়াসে সেখানে একটি কিংবা দুটি দিন কাটাতে পারেন।
৯. ফুন্টসলিং
বিশেষ করে যেসব বাংলাদেশি পর্যটক ভারত হয়ে ভুটানে ঢোকেন, তাঁদের কাছে বেশ পরিচিত ফুন্টসলিং। ছোট্ট এই শহরে আছে কুমির প্রজননকেন্দ্র, ভুটান গেট, মনাস্ট্রি। ফুন্টসলিংয়ের উঁচুনিচু রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা। রাস্তার পাশেই ছোট-বড় শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাহারি ফুলের দোকান পাবেন। বাজারে আশপাশের পাহাড়ে উৎপাদিত নানা ফল পাবেন। মোটের ওপর নীরব, শান্তিময় প্রাকৃতিক পরিবেশে যাঁরা দুটি দিন কাটাতে চান, তাঁরা ভুটান ভ্রমণের সময় শহরটির জন্য দুটি দিন রাখতে পারেন।
১০. ওয়াংদুয়ে ফোদরাং
ভুটানের আর একটি বিখ্যাত গন্তব্য। পুনাখার দক্ষিণে অবস্থিত ওয়াংদুয়ে ফোদরাং সেন্ট্রাল হাইওয়ে ধরে মধ্য ভুটানে পৌঁছার আগে সর্বশেষ শহর। ওয়াংদুয়ে ফোদরাং উপত্যকার ওপরের অংশ পশু চারণভূমি হিসেবে খুব বিখ্যাত। বাঁশের নানা সামগ্রী এবং স্লেট ও নানান পাথর কুঁদে তৈরি বিভিন্ন জিনিসের জন্যও আলাদা নাম আছে জায়গাটির।
পুনাখা চু ও তাং চু নদীর সংযোগস্থলে এক পাহাড়ের ওপর অবস্থিত ওয়াংদুয়ে ফোদরাং জংও আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
সূত্র. হিমালয়ান গ্লেসিয়ার. কম, থ্রিলো ফিলিয়া ডট কম, উইকিপিডিয়া
ভ্রমণ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
ইশতিয়াক হাসান

আশ্চর্য সুন্দর পাহাড়, ঝিরঝির করে বয়ে চলা শীতল জলের নদী, পাহাড়চূড়ার বৌদ্ধমন্দির—সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের মতো চমৎকার ভ্রমণ গন্তব্য আছে কমই।
ভুটানি রীতির বাড়ি-ঘরগুলোও নজর কাড়ে পর্যটকদের। লাল-সাদা রঙের কাঠের সামনের অংশ, ছোট জানালা, ঢালু ছাদ প্রতিটি বাড়ির। তেমনি মৌসুমে আপেল, কমলাসহ নানা ধরনের বাগানের সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারবেন। হরেক জাতের বন্যপ্রাণীর আবাসও দেশটিতে। আবহাওয়াও খুব আরামদায়ক। হবে না-ই বা কেন? এটি যে কার্বন নেগেটিভ কান্ট্রি (যে পরিমাণ কার্বন ছাড়ে, তার চেয়ে শোষণক্ষমতা বেশি)। ভুটানে অসাধারণ সুন্দর সব জায়গার মধ্যে আপাতত ১০টিকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
১. থিম্পু
ভুটানের রাজধানী শহরটিতে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। পাহাড়চূড়ার বুদ্ধ পয়েন্টের বড় আকর্ষণ গৌতম বুদ্ধের বিশাল এক সোনালি মূর্তি। ২০০৬ সালে কাজ শুরু হলেও ১৬৯ ফুট উঁচু বুদ্ধ ভাস্কর্য এবং অন্যান্য মূর্তিসহ গোটা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন হয় ২০১৫। কয়েকটা সিঁড়ি পেরিয়ে ভেতরে গিয়ে ছোট ছোট আরও অনেক বুদ্ধমূর্তির দেখা পাবেন।
বিভিন্ন তাকে সাজিয়ে রাখা। সঙ্গের গাইড যখন জানাবেন আট ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এক লাখ এবং ১২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ২৫ হাজার ব্রোঞ্জের বুদ্ধ স্ট্যাচু আছে এখানে, তখন রীতিমতো চমকাবেন।
বিশাল চত্বর থেকে উপভোগ করবেন চারপাশের তুষারের টুপি পরা উঁচু সব পর্বতের রূপ। চত্বরে বেশ কিছু মাঝারি আকারের মূর্তি আছে। বুদ্ধ পয়েন্ট এখন থিম্পুর অঘোষিত প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
শহরের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পাহাড়ি নদী চু মুগ্ধ করবে আপনাকে। শহর থেকে গাড়িতে চেপে মিনিট পনেরো-কুড়ি গেলে পৌঁছে যাবেন ‘জিগমে দরজি ন্যাশনাল পার্কে’। এই বনের আয়তন কম নয়, ৪ হাজার ৩১৬ বর্গকিলোমিটার। গোটা ভুটানের প্রায় ৯ ভাগের এক ভাগ। মোটামুটি ১ হাজার ৬০০ থেকে ৭ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতার এলাকা আছে এর আওতায়। ট্র্যাকারদের স্বর্গরাজ্য জিগমে দর্জি জাতীয় উদ্যান, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার প্রচুর ট্র্যাকার এই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। বনে বাঘ ছাড়া মিলবে মেঘলা চিতা, মাস্ক ডিয়ার, বন্য কুকুর, হিমালয়ান কালো ভালুক, লাল পান্ডার মতো প্রাণীদের। হিমালয়ের তুষারছাওয়া উঁচু সব শৃঙ্গও পড়েছে এর সীমানায়। ভুটানের জাতীয় প্রাণী টাকিনও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এই জঙ্গলে। আধা গরু-আধা ছাগল বলতে পারেন এই জন্তুটিকে। অবশ্য এই প্রাণীকে সহজে দেখতে চাইলে যেতে পারেন থিম্পুর টাকিন রিজার্ভে।
২. পারো
পারোর কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর আশ্চর্য সুন্দর বিমানবন্দরটির কথা। প্লেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আরামদায়ক, শীতল এক বাতাস আপনার শরীর জুড়িয়ে দেবে। রানওয়ের পরেই পাহাড়সারি মনটা ভালো করে দেবে। নেট ঘেঁটে যতটা জানতে পেরেছি, পারো শহরটা গড়ে উঠেছে বেশি দিন হয়নি, ১৯৮৫ সালে একটা মূল সড়ক দিয়ে এর শুরু। তখন এর দুই পাশে ছিল কেবল বর্ণিল সব দোকান। ধীরে ধীরে আরও দালানকোঠা হয়।
ভুটানের জাতীয় জাদুঘর পারোতেই। পাহাড়ের ওপরে। মূল ভবনটি গোল, ঐতিহ্যবাহী লাল-সাদা এক দালান। তা জং নামে পরিচিত বহু পুরোনো এই বিল্ডিংটাকে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়ানচুকের নির্দেশে ১৯৬৮ সালে সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। তা জং মানে হলো ওয়াচ টাওয়ার। সত্যি এখানে দাঁড়ালে নিচের পারো উপত্যকা নিমেষে চোখের সামনে চলে আসবে। তবে প্রথমে নজর যাবে দুটি জংয়ের দিকে। বেশি মশহুর রিনপাং জং। এটা একই সঙ্গে দুর্গ এবং বৌদ্ধমন্দির বা গুম্ফা। এখন পারোর প্রশাসনিক সদর দপ্তর। এখান থেকে সবুজ পারো উপত্যকায়, মাঝে মাঝে বর্ণিল সব ভুটানি বাড়ি-ঘর, ফসলের খেত চোখ জুড়িয়ে দেবে।
শহরের বাইরের দিকটা কেমন মায়া মাখানো। বড় জায়গা নিয়ে কয়েকটা রিসোর্ট, ভুটানিদের ছোট ফার্ম হাউস, চাষ করা জমিগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পারো শহর কেটে চলে গেছে ভুটানের বড় নদীগুলোর একটি পা চু।
৩. টাইগার নেস্ট
ভুটানের নাম শুনলে কোন দৃশ্যটা সবার আগে মনের পর্দায় ভাসতে থাকে, বলুন তো? আমিই বলে দিচ্ছি, উঁচু পাহাড়ের চাতালে ঝুলতে থাকা অনিন্দ্যসুন্দর এক মনাস্ট্রি বা গুম্ফা। কথাটা আমার নিজের বেলায়ও খাটে। প্রথম যখন ভুটান ভ্রমণের কথা ভাবছিলাম, মাথায় ঘুরছিল টাইগার নেস্ট বা পারো টেকটসাংয়ের ছবিই। পারো শহর থেকে টাইগার নেস্টের নিচের পার্ক মতো জায়গাটিতে পৌঁছাতে মিনিট ২৫-৩০ লাগবে। ঢংঢং শব্দে কয়েকটা সেতু পেরোবেন পথে। এর মধ্যে একটা বেশ বড়। টাইগার নেস্ট বা ‘বাঘের বাসা’র মূল প্রবেশপথের বাইরে হরেক জাতের স্যুভেনির নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। কতক দূর যেতেই মোটামুটি খোলামেলা, তবে একটু এবড়োখেবড়ো এক জমিতে অনেকগুলো ঘোড়া চড়তে দেখবেন। যাঁরা পাহাড় বাইতে সাহস করেন না, তাঁদের চূড়ায় পৌঁছে দেবে এই ঘোড়া।
গাছপালাময় এক জায়গা থেকেই ট্রেকিং আর হাইকিংয়ের পথের শুরু। কয়েকটি বোর্ডে এই ট্রেইলে কী ধরনের পাখির দেখা মিলতে পারে তা ছবিসহ চিহ্নিত করা হয়েছে। টাইগার নেস্টে উঠতে হয় ঘোরানো-প্যাঁচানো অনেকটা পথ পেরিয়ে। গুম্ফাটা সাগর সমতল থেকে ৩১০০ মিটার উচ্চতায়!
আপনার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে এর নাম টাইগার নেস্ট কেন? বাঘের বাসা আছে কি? ১৬৯২ সালে প্রথম তৈরি হয় এটি। কথিত আছে গুরু রিনপোচ একটা বাঘিনীর পিঠে চড়ে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তারের জন্য তিব্বত থেকে এখানে এসেছিলেন। তাই এমন নামকরণ। অপর একটি কিংবদন্তি বলছে, গুরু তাঁর এক অভিজাত ভক্তের পীড়াপীড়িতে তাঁকে বাঘিনী বানিয়ে পিঠে সওয়ার হয়ে ওঠেন উঁচু পাহাড়টিতে। ওই বাঘিনী নাকি উড়ে পেরিয়েছিল দূরত্বটা।
৪. চেলালা পাস
গাড়িতে করে যাওয়া যায় ভুটানের এমন সবচেয়ে উঁচু জায়গা চেলালা পাস। উচ্চতা ৩ হাজার ৯৮৮ মিটার। পাহাড়ি রাস্তাটা ভয়ানক আঁকাবাঁকা, বিপজ্জনক। অবশ্য ভুটানের চালকেরা সাধারণত গাড়ি চালান সতর্কতার সঙ্গে। কখনো কখনো দূরে পাহাড়ের গায়ে টাইগার নেস্টটের চেহারাও দেখবেন চেলালা পাসে যাওয়ার পথে। উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভূপ্রকৃতিতে বৈচিত্র্য নজর কাড়বে। নতুন নতুন প্রজাতির গাছের সঙ্গে পরিচিত হবেন। শীতও বাড়বে। এখানে শীতে এত্তো বরফ পড়ে যে অনেক সময় এই পথ বন্ধ হয়ে যায়। রেসকিউ পার্টি এসে বরফ পরিষ্কার করলেই তবে গাড়ি চলে। এদিকে রাস্তা সরু। উল্টো পাশ থেকে গাড়ি আসে কি না, বুঝতে সতর্ক থাকতে হয়।
চেলালায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামলেই মনে হবে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছেন। পাহাড়ের ওপরের দোকান থেকে গরম-গরম পাকোরা, বেসনে চুবানো ফুলকপি খেয়ে উষ্ণতা খুঁজতে পারেন।
পাহাড়ে কিনারে দাঁড়াতেই হিমালয়ের তুষারঢাকা পর্বতমালাগুলো নজর কাড়বে। নিচে এক পাশে পারো ভ্যালি, আরেক পাশে হা ভ্যালি। ওপর থেকে এই উপত্যকার দৃশ্য দেখে চোখ জুড়াবে।
৫. দোচুলা পাস
থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার পথে পড়ে দোচুলা পাস। সাগর সমতল থেকে প্রায় ৩ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতায় এটি। এখান থেকে হিমালয়ের উঁচু উঁচু বরফঢাকা চূড়াগুলো দেখা যায়। তবে শর্ত আছে একটা, আকাশ থাকতে হবে পরিষ্কার। এদের মধ্যে আছে ভুটানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট মাসানগাংও। দোচুলা পাসের মূল আকর্ষণ এখানকার স্তুপাগুলো। সাদা-লালে মেশানো এখানকার ১০৮ স্তুপা দেখে চোখ জুড়াবে। বৌদ্ধভিক্ষুদের ধ্যানের জায়গা স্তুপা। এই স্তুপাগুলো বানানো হয় কুইন মাদার আসি দরজি ওয়াংমো ওয়ানচুকের নির্দেশে, ২০০৪ সালে। একটা গুম্ফাও আছে দোচুলায়। অবশ্য ভুটানে দেখা বিভিন্ন প্রাচীন, পুরোনো গুম্ফাগুলোর তুলনায় এটা নেহাত ছোট।
জায়গাটি পড়েছে ভুটানের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সীমানায়। চারপাশে তাই লম্বা লম্বা গাছের রাজত্ব। আশপাশে সাইপ্রেস, ওক ও বার্চ গাছের রাজত্ব। পার্কের সীমানায় হেঁটে বেড়ানোর কয়েকটি ট্রেইল আছে, বিশেষ করে রডোডেনড্রন ট্রেইলটা অনেক সুন্দর। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা, ভুটানের বড় দুটি জঙ্গল জিগমে দর্জি ও জিগমে সিঙ্গির মাঝে প্রাকৃতিক করিডর এই উদ্যান। তাই এখানে বাঘ, চিতা বাঘ আর লাল পান্ডার মতো দুর্লভ বন্য জন্তুর দেখা পাওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য সময় ও ধৈর্য দুটোই চাই।
৬. পুনাখা
দোচুলা পাসের পর পুনাখা যাওয়ার পথটা ভারি সুন্দর। ডান পাশে গা ঘেঁষেই উঠে গেছে পাহাড়। তাই তাকিয়ে বেশি কিছু দেখতে পাবেন না। তবে বাঁয়ে তাকালেই চোখ জুড়াবে। একটু দূরে গাছপালায় ঢাকা সবুজ পাহাড়, এখানে-সেখানে দৃষ্টিনন্দন সব বাড়িঘর। কিছুক্ষণ পর বেশ উঁচুতে কয়েকটা স্থাপনা দেখবেন, ওটা নানারি। নারী ভিক্ষুরা ওখানে প্রশিক্ষণ নেন, ধ্যান করেন। বাঁয়ে নদীও চলবে।
পুনাখায় ঢুকে ভেতরের একটা রাস্তা ধরে কিছু দূর গেলে ডান পাশে পাবেন অপরূপ এক নদী। পাথরের ওপর দিয়ে ঝিরঝির করে বয়ে চলেছে জল। ওপরে সেতু। দূরে দেখা দিল পুনাখা জং। একই সঙ্গে দুর্গ আর ধর্মীয় কাঠামো বলতে পারেন এই জংকে। পুনাখা জং তৈরি হয়েছে সেই ১৬৩৭-৩৮ সালে। এখন পুনাখা জেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর। ভুটানি স্থাপত্যরীতিতে তৈরি দালানটি মুগ্ধ করবে আপনাকে। পুনাখা জংয়ের সীমানায় ঢুকতে হয় নদীর ওপর একটা সেতু পেরিয়ে। পুনাখা উপত্যকার দুই নদীর মাঝখানে জংটি। আদপে পো চু হলো নদ, মো চু নদী। পো চোর উৎপত্তি পুনাখার পাহাড়ের হিমবাহের বরফগলা পানিতে হলেও মো চু এসেছে সেই তিব্বতের লাসা থেকে। কাঠের ব্রিজের ওপর থেকে নিচে নদীর স্বচ্ছ জলে মাছ দেখা যায়।
জংয়ের পেছনের গেট পেরিয়ে রওনা দেবেন ঝুলন্ত সেতুর দিকে। প্রথমে দুই পশে গাছপালার গার্ড দেওয়া পাকা সড়ক, তারপর পাহাড়ের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মেঠোপথে। ৫০০ ফুটের বেশি লম্বা ঝুলন্ত সেতুটা সাং চু নদীর ওপর। দুই পাশে সিমেন্টের ব্লকের মাঝখানে শক্ত তার দিয়ে তৈরি। হাঁটার সময় সেতুর সঙ্গে দুলতে থাকবেন আপনিও। সেতুর গায়ে অনেক রঙিন পতাকা, সব সময়ই নাকি এই সেতুতে এমন অজস্র পতাকা ঝোলে অশুভ আত্মাদের দূরে রাখতে। ঝুলন্ত সেতু থেকে নিচের নদীটা ধরা দেবে আরও মোহনীয় চেহারায়। রাফটিং করতে দেখবেন মানুষকে। ওপাশে পাহাড়, সমতলে ধানখেত—সবকিছুই দারুণ! এই সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ তো বটেই; বিভিন্ন গবাদিপশুও চলাচল করে।
৭. বুমথাং উপত্যকা
ভুটানিদের কাছে ধর্মীয় দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটি। প্রায় ২ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বুমথামে অনেক পুরোনো বৌদ্ধমন্দির আছে।
পর্যটকদের, বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুব প্রিয় এক গন্তব্য এটি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে তাঁদের। পুনাখা থেকে বুমথাং যাওয়ার পথে খাড়া পাহাড়ের ওপর মেঘের রাজ্যে ট্রংসা জংও পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। ওই পথেই বেশ কয়েকটি ঝর্ণাও চোখে পড়ে। এগুলোর জল অবশ্য শীতে জমে বরফ হয়ে থাকে। প্রচুর আপেল বাগানেরও দেখা মেলে এই উপত্যকায়। অনেক পর্যটকই একে আদর করে ডাকেন ‘পুবের সুইজারল্যান্ড’। নানা ধরনের উৎসবের জন্যও বিখ্যাত জায়গাটি।
৮. হা ভ্যালি
হা ভ্যালি বা হা উপত্যকা ইদানীং ভুটানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের খুব প্রিয় এক গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটি বিখ্যাত এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এর পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি দুর্গ ও বৌদ্ধমন্দির আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম লাখাং কারপো (সাদা মন্দির) ও লাখাং নাগপো (কালো মন্দির), ১০০ বছরের পুরোনো মন্দির তাগচু গোয়েম্বা। দবিজ জং নামে পাহাড়চূড়ার পাঁচতলা দুর্গটিও এখানকার বিখ্যাত গন্তব্যগুলোর একটি। পারো থেকে দূরত্ব বেশি না হওয়ায় অনায়াসে সেখানে একটি কিংবা দুটি দিন কাটাতে পারেন।
৯. ফুন্টসলিং
বিশেষ করে যেসব বাংলাদেশি পর্যটক ভারত হয়ে ভুটানে ঢোকেন, তাঁদের কাছে বেশ পরিচিত ফুন্টসলিং। ছোট্ট এই শহরে আছে কুমির প্রজননকেন্দ্র, ভুটান গেট, মনাস্ট্রি। ফুন্টসলিংয়ের উঁচুনিচু রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা। রাস্তার পাশেই ছোট-বড় শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাহারি ফুলের দোকান পাবেন। বাজারে আশপাশের পাহাড়ে উৎপাদিত নানা ফল পাবেন। মোটের ওপর নীরব, শান্তিময় প্রাকৃতিক পরিবেশে যাঁরা দুটি দিন কাটাতে চান, তাঁরা ভুটান ভ্রমণের সময় শহরটির জন্য দুটি দিন রাখতে পারেন।
১০. ওয়াংদুয়ে ফোদরাং
ভুটানের আর একটি বিখ্যাত গন্তব্য। পুনাখার দক্ষিণে অবস্থিত ওয়াংদুয়ে ফোদরাং সেন্ট্রাল হাইওয়ে ধরে মধ্য ভুটানে পৌঁছার আগে সর্বশেষ শহর। ওয়াংদুয়ে ফোদরাং উপত্যকার ওপরের অংশ পশু চারণভূমি হিসেবে খুব বিখ্যাত। বাঁশের নানা সামগ্রী এবং স্লেট ও নানান পাথর কুঁদে তৈরি বিভিন্ন জিনিসের জন্যও আলাদা নাম আছে জায়গাটির।
পুনাখা চু ও তাং চু নদীর সংযোগস্থলে এক পাহাড়ের ওপর অবস্থিত ওয়াংদুয়ে ফোদরাং জংও আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
সূত্র. হিমালয়ান গ্লেসিয়ার. কম, থ্রিলো ফিলিয়া ডট কম, উইকিপিডিয়া
ভ্রমণ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

আশ্চর্য সুন্দর পাহাড়, ঝিরঝির করে বয়ে চলা শীতল জলের নদী, পাহাড়চূড়ার বৌদ্ধমন্দির—সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের মতো চমৎকার ভ্রমণ গন্তব্য আছে কমই।
ভুটানি রীতির বাড়ি-ঘরগুলোও নজর কাড়ে পর্যটকদের। লাল-সাদা রঙের কাঠের সামনের অংশ, ছোট জানালা, ঢালু ছাদ প্রতিটি বাড়ির। তেমনি মৌসুমে আপেল, কমলাসহ নানা ধরনের বাগানের সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারবেন। হরেক জাতের বন্যপ্রাণীর আবাসও দেশটিতে। আবহাওয়াও খুব আরামদায়ক। হবে না-ই বা কেন? এটি যে কার্বন নেগেটিভ কান্ট্রি (যে পরিমাণ কার্বন ছাড়ে, তার চেয়ে শোষণক্ষমতা বেশি)। ভুটানে অসাধারণ সুন্দর সব জায়গার মধ্যে আপাতত ১০টিকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
১. থিম্পু
ভুটানের রাজধানী শহরটিতে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। পাহাড়চূড়ার বুদ্ধ পয়েন্টের বড় আকর্ষণ গৌতম বুদ্ধের বিশাল এক সোনালি মূর্তি। ২০০৬ সালে কাজ শুরু হলেও ১৬৯ ফুট উঁচু বুদ্ধ ভাস্কর্য এবং অন্যান্য মূর্তিসহ গোটা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন হয় ২০১৫। কয়েকটা সিঁড়ি পেরিয়ে ভেতরে গিয়ে ছোট ছোট আরও অনেক বুদ্ধমূর্তির দেখা পাবেন।
বিভিন্ন তাকে সাজিয়ে রাখা। সঙ্গের গাইড যখন জানাবেন আট ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এক লাখ এবং ১২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ২৫ হাজার ব্রোঞ্জের বুদ্ধ স্ট্যাচু আছে এখানে, তখন রীতিমতো চমকাবেন।
বিশাল চত্বর থেকে উপভোগ করবেন চারপাশের তুষারের টুপি পরা উঁচু সব পর্বতের রূপ। চত্বরে বেশ কিছু মাঝারি আকারের মূর্তি আছে। বুদ্ধ পয়েন্ট এখন থিম্পুর অঘোষিত প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
শহরের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পাহাড়ি নদী চু মুগ্ধ করবে আপনাকে। শহর থেকে গাড়িতে চেপে মিনিট পনেরো-কুড়ি গেলে পৌঁছে যাবেন ‘জিগমে দরজি ন্যাশনাল পার্কে’। এই বনের আয়তন কম নয়, ৪ হাজার ৩১৬ বর্গকিলোমিটার। গোটা ভুটানের প্রায় ৯ ভাগের এক ভাগ। মোটামুটি ১ হাজার ৬০০ থেকে ৭ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতার এলাকা আছে এর আওতায়। ট্র্যাকারদের স্বর্গরাজ্য জিগমে দর্জি জাতীয় উদ্যান, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার প্রচুর ট্র্যাকার এই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। বনে বাঘ ছাড়া মিলবে মেঘলা চিতা, মাস্ক ডিয়ার, বন্য কুকুর, হিমালয়ান কালো ভালুক, লাল পান্ডার মতো প্রাণীদের। হিমালয়ের তুষারছাওয়া উঁচু সব শৃঙ্গও পড়েছে এর সীমানায়। ভুটানের জাতীয় প্রাণী টাকিনও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এই জঙ্গলে। আধা গরু-আধা ছাগল বলতে পারেন এই জন্তুটিকে। অবশ্য এই প্রাণীকে সহজে দেখতে চাইলে যেতে পারেন থিম্পুর টাকিন রিজার্ভে।
২. পারো
পারোর কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর আশ্চর্য সুন্দর বিমানবন্দরটির কথা। প্লেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আরামদায়ক, শীতল এক বাতাস আপনার শরীর জুড়িয়ে দেবে। রানওয়ের পরেই পাহাড়সারি মনটা ভালো করে দেবে। নেট ঘেঁটে যতটা জানতে পেরেছি, পারো শহরটা গড়ে উঠেছে বেশি দিন হয়নি, ১৯৮৫ সালে একটা মূল সড়ক দিয়ে এর শুরু। তখন এর দুই পাশে ছিল কেবল বর্ণিল সব দোকান। ধীরে ধীরে আরও দালানকোঠা হয়।
ভুটানের জাতীয় জাদুঘর পারোতেই। পাহাড়ের ওপরে। মূল ভবনটি গোল, ঐতিহ্যবাহী লাল-সাদা এক দালান। তা জং নামে পরিচিত বহু পুরোনো এই বিল্ডিংটাকে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়ানচুকের নির্দেশে ১৯৬৮ সালে সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। তা জং মানে হলো ওয়াচ টাওয়ার। সত্যি এখানে দাঁড়ালে নিচের পারো উপত্যকা নিমেষে চোখের সামনে চলে আসবে। তবে প্রথমে নজর যাবে দুটি জংয়ের দিকে। বেশি মশহুর রিনপাং জং। এটা একই সঙ্গে দুর্গ এবং বৌদ্ধমন্দির বা গুম্ফা। এখন পারোর প্রশাসনিক সদর দপ্তর। এখান থেকে সবুজ পারো উপত্যকায়, মাঝে মাঝে বর্ণিল সব ভুটানি বাড়ি-ঘর, ফসলের খেত চোখ জুড়িয়ে দেবে।
শহরের বাইরের দিকটা কেমন মায়া মাখানো। বড় জায়গা নিয়ে কয়েকটা রিসোর্ট, ভুটানিদের ছোট ফার্ম হাউস, চাষ করা জমিগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পারো শহর কেটে চলে গেছে ভুটানের বড় নদীগুলোর একটি পা চু।
৩. টাইগার নেস্ট
ভুটানের নাম শুনলে কোন দৃশ্যটা সবার আগে মনের পর্দায় ভাসতে থাকে, বলুন তো? আমিই বলে দিচ্ছি, উঁচু পাহাড়ের চাতালে ঝুলতে থাকা অনিন্দ্যসুন্দর এক মনাস্ট্রি বা গুম্ফা। কথাটা আমার নিজের বেলায়ও খাটে। প্রথম যখন ভুটান ভ্রমণের কথা ভাবছিলাম, মাথায় ঘুরছিল টাইগার নেস্ট বা পারো টেকটসাংয়ের ছবিই। পারো শহর থেকে টাইগার নেস্টের নিচের পার্ক মতো জায়গাটিতে পৌঁছাতে মিনিট ২৫-৩০ লাগবে। ঢংঢং শব্দে কয়েকটা সেতু পেরোবেন পথে। এর মধ্যে একটা বেশ বড়। টাইগার নেস্ট বা ‘বাঘের বাসা’র মূল প্রবেশপথের বাইরে হরেক জাতের স্যুভেনির নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। কতক দূর যেতেই মোটামুটি খোলামেলা, তবে একটু এবড়োখেবড়ো এক জমিতে অনেকগুলো ঘোড়া চড়তে দেখবেন। যাঁরা পাহাড় বাইতে সাহস করেন না, তাঁদের চূড়ায় পৌঁছে দেবে এই ঘোড়া।
গাছপালাময় এক জায়গা থেকেই ট্রেকিং আর হাইকিংয়ের পথের শুরু। কয়েকটি বোর্ডে এই ট্রেইলে কী ধরনের পাখির দেখা মিলতে পারে তা ছবিসহ চিহ্নিত করা হয়েছে। টাইগার নেস্টে উঠতে হয় ঘোরানো-প্যাঁচানো অনেকটা পথ পেরিয়ে। গুম্ফাটা সাগর সমতল থেকে ৩১০০ মিটার উচ্চতায়!
আপনার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে এর নাম টাইগার নেস্ট কেন? বাঘের বাসা আছে কি? ১৬৯২ সালে প্রথম তৈরি হয় এটি। কথিত আছে গুরু রিনপোচ একটা বাঘিনীর পিঠে চড়ে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তারের জন্য তিব্বত থেকে এখানে এসেছিলেন। তাই এমন নামকরণ। অপর একটি কিংবদন্তি বলছে, গুরু তাঁর এক অভিজাত ভক্তের পীড়াপীড়িতে তাঁকে বাঘিনী বানিয়ে পিঠে সওয়ার হয়ে ওঠেন উঁচু পাহাড়টিতে। ওই বাঘিনী নাকি উড়ে পেরিয়েছিল দূরত্বটা।
৪. চেলালা পাস
গাড়িতে করে যাওয়া যায় ভুটানের এমন সবচেয়ে উঁচু জায়গা চেলালা পাস। উচ্চতা ৩ হাজার ৯৮৮ মিটার। পাহাড়ি রাস্তাটা ভয়ানক আঁকাবাঁকা, বিপজ্জনক। অবশ্য ভুটানের চালকেরা সাধারণত গাড়ি চালান সতর্কতার সঙ্গে। কখনো কখনো দূরে পাহাড়ের গায়ে টাইগার নেস্টটের চেহারাও দেখবেন চেলালা পাসে যাওয়ার পথে। উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভূপ্রকৃতিতে বৈচিত্র্য নজর কাড়বে। নতুন নতুন প্রজাতির গাছের সঙ্গে পরিচিত হবেন। শীতও বাড়বে। এখানে শীতে এত্তো বরফ পড়ে যে অনেক সময় এই পথ বন্ধ হয়ে যায়। রেসকিউ পার্টি এসে বরফ পরিষ্কার করলেই তবে গাড়ি চলে। এদিকে রাস্তা সরু। উল্টো পাশ থেকে গাড়ি আসে কি না, বুঝতে সতর্ক থাকতে হয়।
চেলালায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামলেই মনে হবে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছেন। পাহাড়ের ওপরের দোকান থেকে গরম-গরম পাকোরা, বেসনে চুবানো ফুলকপি খেয়ে উষ্ণতা খুঁজতে পারেন।
পাহাড়ে কিনারে দাঁড়াতেই হিমালয়ের তুষারঢাকা পর্বতমালাগুলো নজর কাড়বে। নিচে এক পাশে পারো ভ্যালি, আরেক পাশে হা ভ্যালি। ওপর থেকে এই উপত্যকার দৃশ্য দেখে চোখ জুড়াবে।
৫. দোচুলা পাস
থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার পথে পড়ে দোচুলা পাস। সাগর সমতল থেকে প্রায় ৩ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতায় এটি। এখান থেকে হিমালয়ের উঁচু উঁচু বরফঢাকা চূড়াগুলো দেখা যায়। তবে শর্ত আছে একটা, আকাশ থাকতে হবে পরিষ্কার। এদের মধ্যে আছে ভুটানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট মাসানগাংও। দোচুলা পাসের মূল আকর্ষণ এখানকার স্তুপাগুলো। সাদা-লালে মেশানো এখানকার ১০৮ স্তুপা দেখে চোখ জুড়াবে। বৌদ্ধভিক্ষুদের ধ্যানের জায়গা স্তুপা। এই স্তুপাগুলো বানানো হয় কুইন মাদার আসি দরজি ওয়াংমো ওয়ানচুকের নির্দেশে, ২০০৪ সালে। একটা গুম্ফাও আছে দোচুলায়। অবশ্য ভুটানে দেখা বিভিন্ন প্রাচীন, পুরোনো গুম্ফাগুলোর তুলনায় এটা নেহাত ছোট।
জায়গাটি পড়েছে ভুটানের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সীমানায়। চারপাশে তাই লম্বা লম্বা গাছের রাজত্ব। আশপাশে সাইপ্রেস, ওক ও বার্চ গাছের রাজত্ব। পার্কের সীমানায় হেঁটে বেড়ানোর কয়েকটি ট্রেইল আছে, বিশেষ করে রডোডেনড্রন ট্রেইলটা অনেক সুন্দর। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা, ভুটানের বড় দুটি জঙ্গল জিগমে দর্জি ও জিগমে সিঙ্গির মাঝে প্রাকৃতিক করিডর এই উদ্যান। তাই এখানে বাঘ, চিতা বাঘ আর লাল পান্ডার মতো দুর্লভ বন্য জন্তুর দেখা পাওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য সময় ও ধৈর্য দুটোই চাই।
৬. পুনাখা
দোচুলা পাসের পর পুনাখা যাওয়ার পথটা ভারি সুন্দর। ডান পাশে গা ঘেঁষেই উঠে গেছে পাহাড়। তাই তাকিয়ে বেশি কিছু দেখতে পাবেন না। তবে বাঁয়ে তাকালেই চোখ জুড়াবে। একটু দূরে গাছপালায় ঢাকা সবুজ পাহাড়, এখানে-সেখানে দৃষ্টিনন্দন সব বাড়িঘর। কিছুক্ষণ পর বেশ উঁচুতে কয়েকটা স্থাপনা দেখবেন, ওটা নানারি। নারী ভিক্ষুরা ওখানে প্রশিক্ষণ নেন, ধ্যান করেন। বাঁয়ে নদীও চলবে।
পুনাখায় ঢুকে ভেতরের একটা রাস্তা ধরে কিছু দূর গেলে ডান পাশে পাবেন অপরূপ এক নদী। পাথরের ওপর দিয়ে ঝিরঝির করে বয়ে চলেছে জল। ওপরে সেতু। দূরে দেখা দিল পুনাখা জং। একই সঙ্গে দুর্গ আর ধর্মীয় কাঠামো বলতে পারেন এই জংকে। পুনাখা জং তৈরি হয়েছে সেই ১৬৩৭-৩৮ সালে। এখন পুনাখা জেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর। ভুটানি স্থাপত্যরীতিতে তৈরি দালানটি মুগ্ধ করবে আপনাকে। পুনাখা জংয়ের সীমানায় ঢুকতে হয় নদীর ওপর একটা সেতু পেরিয়ে। পুনাখা উপত্যকার দুই নদীর মাঝখানে জংটি। আদপে পো চু হলো নদ, মো চু নদী। পো চোর উৎপত্তি পুনাখার পাহাড়ের হিমবাহের বরফগলা পানিতে হলেও মো চু এসেছে সেই তিব্বতের লাসা থেকে। কাঠের ব্রিজের ওপর থেকে নিচে নদীর স্বচ্ছ জলে মাছ দেখা যায়।
জংয়ের পেছনের গেট পেরিয়ে রওনা দেবেন ঝুলন্ত সেতুর দিকে। প্রথমে দুই পশে গাছপালার গার্ড দেওয়া পাকা সড়ক, তারপর পাহাড়ের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মেঠোপথে। ৫০০ ফুটের বেশি লম্বা ঝুলন্ত সেতুটা সাং চু নদীর ওপর। দুই পাশে সিমেন্টের ব্লকের মাঝখানে শক্ত তার দিয়ে তৈরি। হাঁটার সময় সেতুর সঙ্গে দুলতে থাকবেন আপনিও। সেতুর গায়ে অনেক রঙিন পতাকা, সব সময়ই নাকি এই সেতুতে এমন অজস্র পতাকা ঝোলে অশুভ আত্মাদের দূরে রাখতে। ঝুলন্ত সেতু থেকে নিচের নদীটা ধরা দেবে আরও মোহনীয় চেহারায়। রাফটিং করতে দেখবেন মানুষকে। ওপাশে পাহাড়, সমতলে ধানখেত—সবকিছুই দারুণ! এই সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ তো বটেই; বিভিন্ন গবাদিপশুও চলাচল করে।
৭. বুমথাং উপত্যকা
ভুটানিদের কাছে ধর্মীয় দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটি। প্রায় ২ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বুমথামে অনেক পুরোনো বৌদ্ধমন্দির আছে।
পর্যটকদের, বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুব প্রিয় এক গন্তব্য এটি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে তাঁদের। পুনাখা থেকে বুমথাং যাওয়ার পথে খাড়া পাহাড়ের ওপর মেঘের রাজ্যে ট্রংসা জংও পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। ওই পথেই বেশ কয়েকটি ঝর্ণাও চোখে পড়ে। এগুলোর জল অবশ্য শীতে জমে বরফ হয়ে থাকে। প্রচুর আপেল বাগানেরও দেখা মেলে এই উপত্যকায়। অনেক পর্যটকই একে আদর করে ডাকেন ‘পুবের সুইজারল্যান্ড’। নানা ধরনের উৎসবের জন্যও বিখ্যাত জায়গাটি।
৮. হা ভ্যালি
হা ভ্যালি বা হা উপত্যকা ইদানীং ভুটানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের খুব প্রিয় এক গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটি বিখ্যাত এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এর পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি দুর্গ ও বৌদ্ধমন্দির আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম লাখাং কারপো (সাদা মন্দির) ও লাখাং নাগপো (কালো মন্দির), ১০০ বছরের পুরোনো মন্দির তাগচু গোয়েম্বা। দবিজ জং নামে পাহাড়চূড়ার পাঁচতলা দুর্গটিও এখানকার বিখ্যাত গন্তব্যগুলোর একটি। পারো থেকে দূরত্ব বেশি না হওয়ায় অনায়াসে সেখানে একটি কিংবা দুটি দিন কাটাতে পারেন।
৯. ফুন্টসলিং
বিশেষ করে যেসব বাংলাদেশি পর্যটক ভারত হয়ে ভুটানে ঢোকেন, তাঁদের কাছে বেশ পরিচিত ফুন্টসলিং। ছোট্ট এই শহরে আছে কুমির প্রজননকেন্দ্র, ভুটান গেট, মনাস্ট্রি। ফুন্টসলিংয়ের উঁচুনিচু রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা। রাস্তার পাশেই ছোট-বড় শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাহারি ফুলের দোকান পাবেন। বাজারে আশপাশের পাহাড়ে উৎপাদিত নানা ফল পাবেন। মোটের ওপর নীরব, শান্তিময় প্রাকৃতিক পরিবেশে যাঁরা দুটি দিন কাটাতে চান, তাঁরা ভুটান ভ্রমণের সময় শহরটির জন্য দুটি দিন রাখতে পারেন।
১০. ওয়াংদুয়ে ফোদরাং
ভুটানের আর একটি বিখ্যাত গন্তব্য। পুনাখার দক্ষিণে অবস্থিত ওয়াংদুয়ে ফোদরাং সেন্ট্রাল হাইওয়ে ধরে মধ্য ভুটানে পৌঁছার আগে সর্বশেষ শহর। ওয়াংদুয়ে ফোদরাং উপত্যকার ওপরের অংশ পশু চারণভূমি হিসেবে খুব বিখ্যাত। বাঁশের নানা সামগ্রী এবং স্লেট ও নানান পাথর কুঁদে তৈরি বিভিন্ন জিনিসের জন্যও আলাদা নাম আছে জায়গাটির।
পুনাখা চু ও তাং চু নদীর সংযোগস্থলে এক পাহাড়ের ওপর অবস্থিত ওয়াংদুয়ে ফোদরাং জংও আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
সূত্র. হিমালয়ান গ্লেসিয়ার. কম, থ্রিলো ফিলিয়া ডট কম, উইকিপিডিয়া
ভ্রমণ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৩ ঘণ্টা আগে
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৫ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৬ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
১১ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং এর পেছনের উপকারী দিকগুলো।
ভিডিও গেম
ভিডিও গেম খেলাকে আমরা সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে ভিডিও গেম খেললে জ্ঞানের ক্ষমতা এবং মনোযোগ উন্নত হতে পারে। এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে।
কফি পান করা
কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। কফি পানকে অনেকে নেতিবাচক মনে করলেও, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এমনকি পার্কিনসন রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় প্রায় ২০০ গবেষণা বিশ্লেষণ করে উপসংহারে পৌঁছানো হয়েছে যে গর্ভাবস্থা ছাড়া স্বাভাবিক মাত্রায় কফি পান নিরাপদ। পরিমাণ হতে হবে প্রতিদিন ৩-৪ কাপ। এমনকি এটি সামগ্রিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
অলসতা বা বিরক্তিবোধ
বিরক্তিবোধ করা; যাকে আমরা বোরনেস বলি, একে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। কিন্তু এটি মস্তিষ্ককে ঘুরে বেড়ানোর এবং বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয়। যেখান থেকে মূলত সৃজনশীলতা এবং নতুন ধারণার জন্ম দেয়। মেয়ো ক্লিনিকের মতে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য সামান্য বিরক্তি ভালো হতে পারে। এটি সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের উদ্দীপনা জোগায়, পাশাপাশি মস্তিষ্ককে রিচার্জের সময় দেয়।

আলু খাওয়া
আলু খাওয়াকে অনেকে খারাপ বলে মনে করেন। অথচ আলু পুষ্টি ও ফাইবারের ভান্ডার। আলু মূলত ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে ভরপুর একটি সবজি; বিশেষ করে যখন খোসাসহ খাওয়া হয়। তবে হ্যাঁ, আলুর মূল সমস্যা এর রান্নার পদ্ধতিতে। আলু সাধারণত ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত পদ্ধতিতে রান্নার কারণে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু সেদ্ধ, সেঁকা বা বাষ্পে তৈরি আলু অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ইউসি ডেভিস হেলথ আমেরিকানদের বেশি বেশি আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
অস্থির আচরণ
স্কুলজীবনে অস্থির হয়ে নড়াচড়া করার জন্য হয়তো অনেক বকা খেতে হয়েছে। বাড়িতে শিক্ষকেরা কমপ্লেনও করেন, আপনার শিশুটি খুব বেশি চঞ্চল। কিন্তু গবেষণা বলছে এই অভ্যাস শরীরের জন্য ভালো হতে পারে! মেয়ো ক্লিনিকের জেমস লেভিনের গবেষণা অনুসারে, যাঁরা অস্থিরভাবে নড়াচড়া করেন, তাঁরা প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ কিলোক্যালোরি পর্যন্ত ক্যালরি বার্ন করতে পারেন। অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায়, এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে, মানসিক চাপ কমাতে এবং সম্ভবত দীর্ঘকাল বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।

খারাপ মেজাজ ও কান্নাকাটি
সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নেতিবাচক আবেগসহ সব ধরনের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া ভালো মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কান্না পেলে কাঁদুন। কিংবা মেজাজ খারাপ হলে মনের কথা বলে ফেলুন। কান্না শুধু আবেগের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নয়, এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, কান্নার মাধ্যমে অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন নির্গত হয়, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় ব্যথা উপশম করতে পারে। তেমনই একাকিত্বকে নেতিবাচকভাবে দেখা হলেও, এটি মনোযোগ বৃদ্ধি করে, সৃজনশীলতা বাড়ায়, আত্ম-প্রতিফলন ঘটায় এবং সামাজিক শক্তিকে রিচার্জ করতে সাহায্য করে।
ফ্রিজে রাখা ফল ও সবজি
অনেকের ধারণা, টাটকা ফল ও সবজির চেয়ে ফ্রোজেন ফল ও সবজি কম পুষ্টিকর। কিন্তু এই ধারণা ভুল। ফল ও সবজিকে সর্বোচ্চ পরিপক্বতার সময়ে ‘ফ্ল্যাশ-ফ্রিজ’ করা হলে সেগুলোর প্রায় সব পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে। ইউনিভার্সিটি অব চেস্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটির মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে ফ্রোজেন উৎপাদনে ফ্রিজে রাখা সমপরিমাণ তাজা পণ্যের চেয়ে বেশি পুষ্টি ছিল।
সূর্যের আলো
অতিরিক্ত সূর্যালোকে থাকা ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ালেও, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে নিয়মিত, পরিমিত সূর্যরশ্মি গ্রহণ প্রয়োজন। ওয়েবএমডির মতে, অবস্থানের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন সাধারণত ৫-৩০ মিনিট সূর্যের আলো শরীরে লাগানো উপকারী এবং নিরাপদ।
সূত্র: মেয়ো ক্লিনিক, শো বিজ ডেইলি

আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং এর পেছনের উপকারী দিকগুলো।
ভিডিও গেম
ভিডিও গেম খেলাকে আমরা সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে ভিডিও গেম খেললে জ্ঞানের ক্ষমতা এবং মনোযোগ উন্নত হতে পারে। এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে।
কফি পান করা
কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। কফি পানকে অনেকে নেতিবাচক মনে করলেও, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এমনকি পার্কিনসন রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় প্রায় ২০০ গবেষণা বিশ্লেষণ করে উপসংহারে পৌঁছানো হয়েছে যে গর্ভাবস্থা ছাড়া স্বাভাবিক মাত্রায় কফি পান নিরাপদ। পরিমাণ হতে হবে প্রতিদিন ৩-৪ কাপ। এমনকি এটি সামগ্রিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
অলসতা বা বিরক্তিবোধ
বিরক্তিবোধ করা; যাকে আমরা বোরনেস বলি, একে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। কিন্তু এটি মস্তিষ্ককে ঘুরে বেড়ানোর এবং বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয়। যেখান থেকে মূলত সৃজনশীলতা এবং নতুন ধারণার জন্ম দেয়। মেয়ো ক্লিনিকের মতে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য সামান্য বিরক্তি ভালো হতে পারে। এটি সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের উদ্দীপনা জোগায়, পাশাপাশি মস্তিষ্ককে রিচার্জের সময় দেয়।

আলু খাওয়া
আলু খাওয়াকে অনেকে খারাপ বলে মনে করেন। অথচ আলু পুষ্টি ও ফাইবারের ভান্ডার। আলু মূলত ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে ভরপুর একটি সবজি; বিশেষ করে যখন খোসাসহ খাওয়া হয়। তবে হ্যাঁ, আলুর মূল সমস্যা এর রান্নার পদ্ধতিতে। আলু সাধারণত ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত পদ্ধতিতে রান্নার কারণে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু সেদ্ধ, সেঁকা বা বাষ্পে তৈরি আলু অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ইউসি ডেভিস হেলথ আমেরিকানদের বেশি বেশি আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
অস্থির আচরণ
স্কুলজীবনে অস্থির হয়ে নড়াচড়া করার জন্য হয়তো অনেক বকা খেতে হয়েছে। বাড়িতে শিক্ষকেরা কমপ্লেনও করেন, আপনার শিশুটি খুব বেশি চঞ্চল। কিন্তু গবেষণা বলছে এই অভ্যাস শরীরের জন্য ভালো হতে পারে! মেয়ো ক্লিনিকের জেমস লেভিনের গবেষণা অনুসারে, যাঁরা অস্থিরভাবে নড়াচড়া করেন, তাঁরা প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ কিলোক্যালোরি পর্যন্ত ক্যালরি বার্ন করতে পারেন। অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায়, এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে, মানসিক চাপ কমাতে এবং সম্ভবত দীর্ঘকাল বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।

খারাপ মেজাজ ও কান্নাকাটি
সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নেতিবাচক আবেগসহ সব ধরনের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া ভালো মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কান্না পেলে কাঁদুন। কিংবা মেজাজ খারাপ হলে মনের কথা বলে ফেলুন। কান্না শুধু আবেগের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নয়, এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, কান্নার মাধ্যমে অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন নির্গত হয়, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় ব্যথা উপশম করতে পারে। তেমনই একাকিত্বকে নেতিবাচকভাবে দেখা হলেও, এটি মনোযোগ বৃদ্ধি করে, সৃজনশীলতা বাড়ায়, আত্ম-প্রতিফলন ঘটায় এবং সামাজিক শক্তিকে রিচার্জ করতে সাহায্য করে।
ফ্রিজে রাখা ফল ও সবজি
অনেকের ধারণা, টাটকা ফল ও সবজির চেয়ে ফ্রোজেন ফল ও সবজি কম পুষ্টিকর। কিন্তু এই ধারণা ভুল। ফল ও সবজিকে সর্বোচ্চ পরিপক্বতার সময়ে ‘ফ্ল্যাশ-ফ্রিজ’ করা হলে সেগুলোর প্রায় সব পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে। ইউনিভার্সিটি অব চেস্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটির মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে ফ্রোজেন উৎপাদনে ফ্রিজে রাখা সমপরিমাণ তাজা পণ্যের চেয়ে বেশি পুষ্টি ছিল।
সূর্যের আলো
অতিরিক্ত সূর্যালোকে থাকা ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ালেও, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে নিয়মিত, পরিমিত সূর্যরশ্মি গ্রহণ প্রয়োজন। ওয়েবএমডির মতে, অবস্থানের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন সাধারণত ৫-৩০ মিনিট সূর্যের আলো শরীরে লাগানো উপকারী এবং নিরাপদ।
সূত্র: মেয়ো ক্লিনিক, শো বিজ ডেইলি

আশ্চর্য সুন্দর পাহাড়, ঝিরঝির করে বয়ে চলা শীতল জলের নদী, পাহাড়চূড়ার বৌদ্ধমন্দির—সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের মতো চমৎকার ভ্রমণ গন্তব্য আছে কমই। ভুটানি রীতির বাড়ি-ঘরগুলোও নজর কাড়ে পর্যটকদের। লাল-সাদা রঙের কাঠের সামনের অংশ, ছোট জানালা, ঢালু ছাদ প্রতিটি বাড়ির। তেমনি মৌসুমে আপেল, কমলাসহ নানা ধর
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৫ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৬ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
১১ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির সঙ্গে ড্রেনে ফেলেন, সেগুলো সহজে পাইপ বন্ধ করে দিতে পারে আপনার অজান্তে।
বাড়তি রান্নার তেল
বড় ভুল হলো ব্যবহার শেষে গরম অবস্থায় অতিরিক্ত তেল সিংকে ঢেলে দেওয়া। গরম অবস্থায় তরল থাকলেও পাইপের ভেতরে ঠান্ডা পরিবেশে তেল দ্রুত শক্ত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে এই স্তর মোটা হয় এবং এর সঙ্গে অন্য খাবারের কণা আটকে পাইপ পুরোপুরি জ্যাম হয়ে যায়। ব্যবহার শেষে তেল একটি বোতলে জমিয়ে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তা বোতলসহ ময়লার ঝুরিতে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
কফির গুঁড়া
অনেকেই ভাবেন কফির গুঁড়া এত সূক্ষ্ম যে সিংকে ফেললে কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু পানি লাগলে এটি দলা পাকিয়ে ঘন পুরু স্তর তৈরি করে, যা পাইপের বাঁক বা জোড়ায় গিয়ে আটকে যায়। ধীরে ধীরে এই স্তর শক্ত হয়ে ব্লক সৃষ্টি করে। কফির গুঁড়া ডাস্টবিনে ফেলাই ভালো অথবা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ড্রেন ক্লিনার
শোনা যায়, ব্লক খুলতে এগুলো খুব কার্যকর। কিন্তু একই সঙ্গে এগুলো পাইপের শত্রুও বটে। বেশির ভাগ ক্লিনারে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা ব্লক খুললেও প্লাস্টিক বা ধাতব পাইপের আবরণের ক্ষতি করে। দীর্ঘ মেয়াদে লিক বা পাইপ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। পরিবেশের জন্যও এগুলো ক্ষতিকর। প্রয়োজন হলে পাইপের ব্লক খুলতে বেকিং সোডা ও ভিনেগারের মতো প্রাকৃতিক মিশ্রণ নিরাপদ।
বিড়ালের লিটার
প্যাকেটে ‘ফ্লাশেবল’ লেখা থাকলেও এগুলো কখনোই টয়লেটে ফেলা উচিত নয়। বিড়ালের লিটার সাধারণত ক্লে, সিলিকা বা জেল জাতীয় উপাদানে তৈরি, যা পানি পেলেই ফুলে ওঠে এবং শক্ত দলা তৈরি করে। পাইপে ঢোকার পর এগুলো দ্রুত ব্লক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী পানির উৎসও দূষিত করতে পারে।
বাড়তি ওষুধ
পুরোনো বা বাড়তি ওষুধ টয়লেটে ফেললে সেগুলো ব্লক সৃষ্টি করে না বটে; কিন্তু সেটা না করলেও এগুলো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। পানি শোধনাগারগুলো এ ধরনের রাসায়নিক ফিল্টার করতে পারে না। ফলে ওষুধের উপাদান নদী, হ্রদ এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে গিয়ে ক্ষতি করে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া ভালো।
আঁশযুক্ত খাবার
ভাত, নুডলস, পাস্তা বা পাউরুটির মতো খাবার পানিতে ফুলে আঠালো মণ্ড তৈরি করে এবং পাইপে আটকে যায়। ভুট্টার খোসার মতো আঁশযুক্ত খাবার সহজে পচে না এবং পাইপের বাঁকে জট বেঁধে ব্লক সৃষ্টি করে।
ডিমের খোসা
ডিমের ভাঙা খোসা ভঙ্গুর হলেও পাইপে গিয়ে এগুলো বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। খোসার ভাঙা অংশ অনেকটা বালুর মতো এবং তেল বা খাবারের কণার সঙ্গে মিশে শক্ত সিমেন্টের মতো স্তর তৈরি করে।
রং
বাড়ির রঙে থাকা রাসায়নিক পাইপের ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি ড্রেনে গেলে এসব রাসায়নিক পানি দূষিত করে। তাই ব্যবহার শেষে রং কখনোই সিংক বা টয়লেটে ঢালবেন না। লেবেলে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো ফেলা উচিত।
ফলের স্টিকার
ফলের গায়ে থাকা ছোট স্টিকারগুলো খুব শক্তভাবে লেগে থাকে। ড্রেনে গেলে এগুলো পানি শোধনাগারের ফিল্টারে আটকে থাকে ও পাইপে বাধা তৈরি করে। স্টিকারগুলো আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
ফল বা খাবারের শক্ত বিচি
পাইপ কোনোভাবেই ফলের শক্ত বিচি বা হাড়ের মতো শক্ত জিনিস সামলানোর মতো করে তৈরি নয়। এগুলো গারবেজ ডিস্পোজারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পাইপের ভেতর মারাত্মক জ্যাম তৈরি করে।
বাড়ির পাইপলাইন সচল রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সামান্য সচেতনতা হাজার টাকার ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির সঙ্গে ড্রেনে ফেলেন, সেগুলো সহজে পাইপ বন্ধ করে দিতে পারে আপনার অজান্তে।
বাড়তি রান্নার তেল
বড় ভুল হলো ব্যবহার শেষে গরম অবস্থায় অতিরিক্ত তেল সিংকে ঢেলে দেওয়া। গরম অবস্থায় তরল থাকলেও পাইপের ভেতরে ঠান্ডা পরিবেশে তেল দ্রুত শক্ত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে এই স্তর মোটা হয় এবং এর সঙ্গে অন্য খাবারের কণা আটকে পাইপ পুরোপুরি জ্যাম হয়ে যায়। ব্যবহার শেষে তেল একটি বোতলে জমিয়ে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তা বোতলসহ ময়লার ঝুরিতে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
কফির গুঁড়া
অনেকেই ভাবেন কফির গুঁড়া এত সূক্ষ্ম যে সিংকে ফেললে কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু পানি লাগলে এটি দলা পাকিয়ে ঘন পুরু স্তর তৈরি করে, যা পাইপের বাঁক বা জোড়ায় গিয়ে আটকে যায়। ধীরে ধীরে এই স্তর শক্ত হয়ে ব্লক সৃষ্টি করে। কফির গুঁড়া ডাস্টবিনে ফেলাই ভালো অথবা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ড্রেন ক্লিনার
শোনা যায়, ব্লক খুলতে এগুলো খুব কার্যকর। কিন্তু একই সঙ্গে এগুলো পাইপের শত্রুও বটে। বেশির ভাগ ক্লিনারে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা ব্লক খুললেও প্লাস্টিক বা ধাতব পাইপের আবরণের ক্ষতি করে। দীর্ঘ মেয়াদে লিক বা পাইপ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। পরিবেশের জন্যও এগুলো ক্ষতিকর। প্রয়োজন হলে পাইপের ব্লক খুলতে বেকিং সোডা ও ভিনেগারের মতো প্রাকৃতিক মিশ্রণ নিরাপদ।
বিড়ালের লিটার
প্যাকেটে ‘ফ্লাশেবল’ লেখা থাকলেও এগুলো কখনোই টয়লেটে ফেলা উচিত নয়। বিড়ালের লিটার সাধারণত ক্লে, সিলিকা বা জেল জাতীয় উপাদানে তৈরি, যা পানি পেলেই ফুলে ওঠে এবং শক্ত দলা তৈরি করে। পাইপে ঢোকার পর এগুলো দ্রুত ব্লক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী পানির উৎসও দূষিত করতে পারে।
বাড়তি ওষুধ
পুরোনো বা বাড়তি ওষুধ টয়লেটে ফেললে সেগুলো ব্লক সৃষ্টি করে না বটে; কিন্তু সেটা না করলেও এগুলো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। পানি শোধনাগারগুলো এ ধরনের রাসায়নিক ফিল্টার করতে পারে না। ফলে ওষুধের উপাদান নদী, হ্রদ এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে গিয়ে ক্ষতি করে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া ভালো।
আঁশযুক্ত খাবার
ভাত, নুডলস, পাস্তা বা পাউরুটির মতো খাবার পানিতে ফুলে আঠালো মণ্ড তৈরি করে এবং পাইপে আটকে যায়। ভুট্টার খোসার মতো আঁশযুক্ত খাবার সহজে পচে না এবং পাইপের বাঁকে জট বেঁধে ব্লক সৃষ্টি করে।
ডিমের খোসা
ডিমের ভাঙা খোসা ভঙ্গুর হলেও পাইপে গিয়ে এগুলো বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। খোসার ভাঙা অংশ অনেকটা বালুর মতো এবং তেল বা খাবারের কণার সঙ্গে মিশে শক্ত সিমেন্টের মতো স্তর তৈরি করে।
রং
বাড়ির রঙে থাকা রাসায়নিক পাইপের ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি ড্রেনে গেলে এসব রাসায়নিক পানি দূষিত করে। তাই ব্যবহার শেষে রং কখনোই সিংক বা টয়লেটে ঢালবেন না। লেবেলে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো ফেলা উচিত।
ফলের স্টিকার
ফলের গায়ে থাকা ছোট স্টিকারগুলো খুব শক্তভাবে লেগে থাকে। ড্রেনে গেলে এগুলো পানি শোধনাগারের ফিল্টারে আটকে থাকে ও পাইপে বাধা তৈরি করে। স্টিকারগুলো আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
ফল বা খাবারের শক্ত বিচি
পাইপ কোনোভাবেই ফলের শক্ত বিচি বা হাড়ের মতো শক্ত জিনিস সামলানোর মতো করে তৈরি নয়। এগুলো গারবেজ ডিস্পোজারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পাইপের ভেতর মারাত্মক জ্যাম তৈরি করে।
বাড়ির পাইপলাইন সচল রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সামান্য সচেতনতা হাজার টাকার ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

আশ্চর্য সুন্দর পাহাড়, ঝিরঝির করে বয়ে চলা শীতল জলের নদী, পাহাড়চূড়ার বৌদ্ধমন্দির—সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের মতো চমৎকার ভ্রমণ গন্তব্য আছে কমই। ভুটানি রীতির বাড়ি-ঘরগুলোও নজর কাড়ে পর্যটকদের। লাল-সাদা রঙের কাঠের সামনের অংশ, ছোট জানালা, ঢালু ছাদ প্রতিটি বাড়ির। তেমনি মৌসুমে আপেল, কমলাসহ নানা ধর
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৩ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৬ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
১১ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

আশ্চর্য সুন্দর পাহাড়, ঝিরঝির করে বয়ে চলা শীতল জলের নদী, পাহাড়চূড়ার বৌদ্ধমন্দির—সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের মতো চমৎকার ভ্রমণ গন্তব্য আছে কমই। ভুটানি রীতির বাড়ি-ঘরগুলোও নজর কাড়ে পর্যটকদের। লাল-সাদা রঙের কাঠের সামনের অংশ, ছোট জানালা, ঢালু ছাদ প্রতিটি বাড়ির। তেমনি মৌসুমে আপেল, কমলাসহ নানা ধর
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৩ ঘণ্টা আগে
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৫ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
১১ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

আশ্চর্য সুন্দর পাহাড়, ঝিরঝির করে বয়ে চলা শীতল জলের নদী, পাহাড়চূড়ার বৌদ্ধমন্দির—সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের মতো চমৎকার ভ্রমণ গন্তব্য আছে কমই। ভুটানি রীতির বাড়ি-ঘরগুলোও নজর কাড়ে পর্যটকদের। লাল-সাদা রঙের কাঠের সামনের অংশ, ছোট জানালা, ঢালু ছাদ প্রতিটি বাড়ির। তেমনি মৌসুমে আপেল, কমলাসহ নানা ধর
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৩ ঘণ্টা আগে
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৫ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৬ ঘণ্টা আগে