Ajker Patrika

লোভাছড়া: পাহাড়, নদী, চা-বাগানের মায়াবী রাজ্য

ইশতিয়াক হাসান
লোভাছড়া: পাহাড়, নদী, চা-বাগানের মায়াবী রাজ্য

লোভাছড়ায় যাওয়ার ইচ্ছাটা মনে পুষে রেখেছিলাম অন্তত এক যুগ। তখন এনায়েত মাওলার বই পড়ে জেনেছিলাম পাহাড়-অরণ্য, বন্যপ্রাণী, চা-বাগান আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর এই মায়াবী রাজ্যের কথা। তবে যাওয়ার সুযোগ মিলল গত বছর, অর্থাৎ ২০২২-এর মে মাসে। 

প্রথমে কানাইঘাট
সিলেটে পৌঁছেছিলাম রাত আড়াইটায়। বাস যে এভাবে গোটা পথটা উড়িয়ে আনবে, তা কে জানত! বিপদ আর কাকে বলে। সঙ্গে স্ত্রী পুনম আর মেয়ে ওয়াফিকা আছে। এই রাতে কোথায় যাই? অতএব, রাতের বাকি সময়টা কোনোমতে কাটালাম বাস কাউন্টারের পাশের এক হোটেলে। 
সকাল ৮টায় কানাইঘাটের বাস ধরলাম কদমতলী বাজার থেকে। লোভাছড়া পড়েছে এই উপজেলায়। ঈদের পরপর হওয়ায় শহরে মানুষ কম। সকাল হওয়ায় আরও সুনসান। তাই কোনো রেস্তোরাঁ খোলা পাইনি। খালি পেটেই স্ত্রী-কন্যা নিয়ে উঠতে হয়েছে। 
মোটামুটি সোয়া ঘণ্টার পথ কানাইঘাট বাজার। বাজারে পৌঁছার আগেই একটা দৃশ্য দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। হাতের বাঁয়ে বিশাল পাহাড় আমাদের সঙ্গী হয়েছে। বহু দূরে ওই পাহাড়, তার পরও মনে হচ্ছিল যেন হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়। 

আমরা ধরলাম জলের পথ
লোভাছড়া যাওয়া যায় দুইভাবে—একটি হলো নদী ধরে, অপরটি সড়কপথে। তবে লোভাছড়ায় যাওয়ার রাস্তাটার অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়, জানা ছিল আগেই। তাই বাজারে হালকা-পাতলা নাশতা সেরে সুরমা নদীর ঘাটে চলে এলাম। আমাদের লোভাছড়া ঘুরিয়ে আনার জন্য বারো শ টাকায় একটা নৌকা ভাড়া করলাম। 

লোভাছড়ায় নৌকা নিয়ে এক জেলেজাল দিয়ে বাঘ ধরা
সুরমার জল কেটে এগোচ্ছে আমাদের নৌকা। দূরে পাওয়া যাচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের আভাস। এর মধ্যে আলাপ জমালাম মাঝির সঙ্গে। বিষয়বস্তু প্রিয় বন্যপ্রাণী। কানাইঘাটের নাম শুনলেই আমার মাথায় প্রথম যে বিষয়টা এল—সীমান্ত পেরিয়ে আসা চিতা বাঘ আর জাল দিয়ে তাদের ধরার গল্প। মাঝি জানাল, বিশেষ করে শীতের সময় ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসে চিতা বাঘ। একবার এপারে এলে অবশ্য রেহাই নেই। নদীতে মাছ ধরার কারণে এখানকার প্রতি বাড়িতেই থাকে নিদেনপক্ষে একটি-দুটি জাল। চিতা বাঘটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে জাল দিয়ে ধরে ফেলতে কোনো সমস্যা হয়নি। একবার জালে আটকালে হয় মারা পড়ে, না হয় স্থান হয় চিড়িয়াখানায়। অবশ্য গত কয়েক বছর চিতা বাঘ আসার খবর মেলেনি। পাহাড় ডিঙিয়ে আসা চিতাদের কথা ভেবে বুকটা কেমন হু হু করে উঠল।

তিন নদী এক হলো যেখানে
আমাদের নৌকা ইঞ্জিনের শক্তিতে চলছে দ্রুত। মাঝে মাঝে ওদিক থেকে নৌকা আসছে, এগুলো অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দায় বোঝাই। রোদের কারণে কেউ কেউ মাথায় ছাতা দিয়ে রেখেছে। ছোট ছোট নৌকাও আছে। এগুলোতে একজন বা দুজন মানুষ। জেলেদের নৌকা। নদীতে মাছ আছে বেশ। জেলেদের নৌকা আর বিভিন্ন জায়গায় ফেলা জাল দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না। দূরের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় যতই কাছে আসছে, আমার আগ্রহ জলের জীবন থেকে সেদিকে বেশি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। 
এক জায়গায় এসে হঠাৎ অনেক চওড়া হয়ে গেল নদী। অবশ্য একটু খেয়াল করতেই বুঝলাম এখানে তিন নদী এসে মিশেছে। আমরা এসেছি সুরমা ধরে। আর মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানলাম, বাকি দুটি হলো বরাক আর লোভাছড়া। 

ছড়ার পাড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে মহিষআশ্চর্য সুন্দর নদী লোভাছড়া
আমাদের নৌকা এখন চলেছে লোভাছড়া ধরে। নাম লোভাছড়া হলেও এটি আদপে একটি নদী। নদীর জল আশ্চর্য স্বচ্ছ। তলার পাথর দেখা যায়। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় এখন অনেক কাছে। সীমান্তের ওই পারের পাহাড়েই জন্ম এই নদীর। তবে নদী ধরে আরও এগোনোর আগেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলো আমাদের। 
লোভাছড়ায় নদীর পাশাপাশি আমাদের প্রধান দুই গন্তব্য এখানে ব্রিটিশ আমলে বানানো ঝুলন্ত সেতু আর লোভাছড়ার চা-বাগান। মাঝি জানাল, চা-বাগানের ভেতর দিয়ে ওই ঝুলন্ত সেতুতে যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তার চেয়ে সে বাঁয়ের ছড়াটা ধরে ওই সেতুর কাছে পৌঁছাতে পারে। বাঁয়ে তাকিয়ে দেখলাম ছোট্ট এক ছড়া ঢুকে গেছে ভেতরে। ছড়ায় নৌকাভ্রমণের লোভে রাজি হয়ে গেলাম প্রস্তাবে। 

এনায়েত মাওলার ট্রেইল ধরে
মনে আছে, লেখার শুরুতে বলেছিলাম এনায়েত মাওলার বই পড়ে এক যুগ আগেই জেনেছিলাম লোভাছড়ার কথা? মাঝি ছোট্ট, সরু ছড়ায় নৌকাটা ঢোকাতে থাকুক, এই ফাঁকে এনায়েত মাওলার বিষয়টা খোলাসা করা যাক। বাংলাদেশের সিলেট আর পার্বত্য অঞ্চলের পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর খোঁজ-খবর পেতে হলে পড়তে হবে এনায়েত মাওলার লেখা ‘যখন শিকরি ছিলাম’ বইটি। এতেই জানতে পারি নুনাছড়া আর লোভাছড়া চা-বাগান, স্কটিশ চা-বাগানের মালিক ফারগুসন সাহেব আর অদ্ভুত সুন্দর এক নদী লোভাছড়ার কথা। এক বন্ধুসহ এখানে এসেছিলেন এনায়েত মাওলা, ৭০ বছর আগে, সেই ১৯৫১-৫২ সালের দিকে। তখন এদিককার জঙ্গল চষে বেড়িয়েছিলেন। সীমান্তের এপাড়-ওপার বাদ রাখেননি কিছুই। বন্ধু শিকার করেছিলেন বিশাল এক সম্বার হরিণ। আর এনায়েত মাওলা, আস্ত এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। 

ছড়ার পরেই সবুজ পাহাড়ছড়া ধরে চলা
গত কয়েক দিন বৃষ্টি হয়নি। তাই ছড়ায় পানি একটু কম। তারপর আবার একটু পর পর কড়া মোচর নিয়েছে ছড়াটি। তাই নৌযাত্রাটি হলো রীতিমতো রোমাঞ্চকর। হঠাৎ হঠাৎ ছড়ার মাঝ বরাবর নৌকা দাঁড় করিয়ে রাখা। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। সামনে, ডানে সবুজ ছোট টিলা আর পাহাড়ের রাজ্য। একটু পরে আরেক বাধা ছড়াপথে। কিনারে কাদাময় পানিতে মহানন্দে খেলা করছে একদল মহিষ। আমাদের দেখে নাক ফুলাল। তবে আক্রমণের কোনো অভিসন্ধি চোখে পড়ল না। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে এগোলাম আমরা। সামনে একের পর এক পাহাড় দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দেখলাম ছড়ার পাড়ে কাদায় শরীরের রং বদলে দিয়ে মহিষের আরও বড় একটা দল চড়ে বেড়াচ্ছে। 

ব্রিটিশ আমলের এক ঝুলন্ত সেতু
একটু পর ছড়ার পানি এত কমে গেল, এগোনো মুশকিল। মাঝি বলল, নৌকা থেকে নেমে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই আমরা ঝুলন্ত সেতুতে পৌঁছে যাব। অতএব, তাকে আর নৌকা রেখে আমরা হাঁটা ধরলাম। পাহাড়-জঙ্গলে গেলে ওয়াফিকার তিন ভয় কেঁচো, জোঁক আর সাপ। এখানে ওর মনে পড়ল জোঁকের কথা। ঝোপঝাড় ডিঙিয়ে যাওয়ার সময় তাই চেহারা ফ্যাকাশে তার। শেষ পর্যন্ত মিনিট দশেক হাঁটতেই পৌঁছে গেলাম চা-বাগানের রাজ্যে। মাঝখানে সেই ঝুলন্ত সেতু। 

লোভাছড়া যাত্রায় আমাদের মাঝিচারপাশে চা-বাগানের মাঝে একমাত্র কৃত্রিম এক কাঠামো এই ঝুলন্ত সেতু। তবে কীভাবে যেন বাগান আর প্রকৃতির অংশ হয়ে গেছে সেতুটি। যদ্দুর জানা যায়, ইংরেজ আমলে ১৯২৫ সালে এই সেতু বানানো হয় লোভাছড়ায় যাতায়াতের জন্য। অর্থাৎ, এটি প্রায় শত বছরের পুরোনো। এখন সেতুটিতে মরচে পড়ে গেছে, এখানে-সেখানে ভাঙা। আমরা এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। সেতুতে উঠে দেখলাম চারপাশের পাহাড় আর চা-বাগান রাজ্যের আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য। 

লোভাছড়া নদী আর চা-বাগান
এদিক দিয়ে বাংলোয় গেলে বেশ সময় লাগব। পথও চেনা নেই। আমাদের মাঝিও অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা সেতু দর্শন শেষে ফিরে গেলাম নৌকায়। স্রোতের অনুকূলে থাকায় এবার আর ঝামেলা হলো না। দ্রুতই পৌঁছে গেলাম লোভাছড়া নদীতে। তারপর একেবারে চা-বাগানের ঘাটে। এখানে নদী আরও সুন্দর। স্বচ্ছ জলে পাথরের সংখ্যা আরও বেশি। মনে হচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়কে হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারব। লোভাছড়া নদী এঁকেবেঁকে পাহাড়রাজ্যের ভেতর দিয়ে হারিয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে। 
আরও কিছু পর্যটক এসেছেন নৌকায় চেপে। আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। আমরাও নেমে পড়লাম নৌকা থেকে। একটু হাঁটতেই চলে এলাম চা-বাগানের রাজ্যে। এনায়েত মাওলার লোভাছড়া চা-বাগান। দুই পাশে চা-বাগান, একটু দূরে লোভাছড়া নদী, আরও দূরে পাহাড়রাজ্য—সব মিলিয়ে আমি যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়লাম। 

ব্রিটিশ আমলের সেই ঝুলন্ত সেতুচা-বাগানের বাংলো আর ফারগুসন সাহেব
এখন চা-বাগানের দেখাশোনা করছেন ফারগুসন সাহেবের আত্মীয়রাই। ওই পরিবারের সদস্য ইউসফু ভাই আমার এক সহকর্মীর স্বামীর বন্ধু। অতএব, চা-বাগানে ঢোকার অনুমতি পেতে বেগ পেতে হলো না। গেট পেরিয়ে চা-বাগানের ভেতর দিয়ে কিছুটা এগোতেই একটা টিলা। চড়াই বেয়ে উঠতে একটা বড় সমতল জায়গা। আর সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ওটা। এর কথাও শুনেছিলাম। লোভাছড়া চা-বাগানের বাংলোগুলোর একটি। তবে এর ভিন্নতা চেহারা আর নির্মাণ উপকরণে। বেশ অনেকটুকু জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলোটার মূল আকর্ষণ এর বিশাল শণের ছাউনিটা। শণের চালার এমন বিশাল বাংলো দেশে আর কোথাও আছে কি না, আমার জানা নেই। 

ওই দেখা যায় লোভাছড়া, তারপর পাহাড়অনেক গল্প
বাংলোয় ঢুকে গল্প হলো ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে। জানালেন, জেমস আর্থার ফারগুসন সাহেব ছিলেন তাঁর নানির বাবা। ফারগুসন সাহেব এদেশীয় নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন। বাগানটা অনেক দিন বন্ধ ছিল। পরে আবার চালু হয়। এখন উৎপাদনও শুরু করেছেন তাঁরা। ঘুরিয়ে দেখালেন বাংলোটা। জানালেন, তাঁর নানি জুন ফারগুসন ছিলেন এই চা-বাগানের ম্যানেজার। জানলাম মেলা মায়া হরিণ, বুনো শূকর আর বনমোরগ আছে তাঁদের চা-বাগানের এলাকায়। মাঝে মাঝে দেখা মেলে শজারু আর বনরুইয়ের। এগুলোর জন্য রীতিমতো সংরক্ষিত এলাকা এই চা-বাগান। এখানে কেউ বন্যপ্রাণী শিকার করে না। বছর দশ-বারো আগে একটা কালো চিতা ধরা পড়ার গল্পও বললেন। অবশ্য ওটাকে বাঁচানো যায়নি। তখনই মনে পড়ল কাছাকাছি সময়ে এই এলাকায় কালো সোনালি বিড়াল ধরা পড়ার কথা শুনেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মুনতাসীর আকাশ ভাইয়ের কাছ থেকে। হতে পারে ইউসুফ ভাই যে কালো চিতার কথা বলেছেন, সেটা সোনালি বিড়ালের কালো রূপভেদ। সাধারণের চোখে এই দুটোকে আলাদা করা কঠিন। তারপর তাঁদের বিশাল ঘোড়াগুলো দেখালেন। ঢাকার অস্থিচর্মসার ঘোড়া দেখে অভ্যস্ত ওয়াফিকা চকচকে চামড়ার বিশাল ঘোড়াগুলো দেখে তো মহাখুশি। 

ছনের ছাদের সেই বাংলোর সামনে চড়ছে ঘোড়াঅভিমানী চিতা বাঘ
লোভাছড়ার জল কেটে ফিরছে আমাদের নৌকা। তবে আশ্চর্য সুন্দর নদী কিংবা সবুজ পাহাড়—কোনোটিতেই মনোযোগ নেই আমার। মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপের শেষ কথাগুলো। একসময় নাকি বাংলোর হাতা থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যেত চিতা বাঘেরা। আর এদিকের পাহাড়ে এলেই চিতারা জানান দিত তাদের করাতচেরা ডাকে। তবে বছর চার-পাঁচ হলো বাংলোর চৌহদ্দিতে দেখা মেলে না হলুদে কালো ফোঁটার আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীদের। সীমান্তের ওপাশে দেওয়া কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আর চিতা বাঘেরা এই রাজ্যে আসতে পারে না? নাকি খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় পেরিয়ে সগোত্রীয়দের এদিকে এসে আর ফিরে না যেতে দেখেই অভিমানে লোভাছড়ার বন-পাহাড়ে বেড়াতে আসা বাদ দিয়েছে প্রিয় চিতা বাঘেরা? মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল। 

আশ্চর্য সুন্দর পাহাড়রাজ্যকীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল আর আকাশপথ—তিনভাবেই যেতে পারবেন সিলেটে। তারপর শহরের কদমতলী থেকে বাসে চেপে কানাইঘাটে চলে যাবেন। সিলেট শহরের ধোপাদীঘির পাড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপেও যেতে পারবেন কানাইঘাটে। সেখান থেকে লোভাছড়ায় আসা-যাওয়ার ভাড়া বারো শ থেকে দেড় হাজার টাকা। লোভাছড়া বা কানাইঘাটে থাকার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় থাকতে হবে সিলেটের কোনো হোটেলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অতিরিক্ত মিষ্টি বা খাবার খাওয়ার পর সামলে নেবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। ছবি: পেক্সেলস
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। ছবি: পেক্সেলস

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি ঘটে। অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি চিনি বা ক্যালরি খেয়ে ফেলার পরদিন সকালে আমাদের মনে দানা বাঁধে অপরাধ বোধ, আর শুরু হয় নিজেকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পালা। আমরা ভাবি, আজ খাবার না খেয়ে বা খুব কম খেয়ে আগের রাতের ঘাটতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই অভ্যাসটিই আমাদের স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।

অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। এর জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া বা ক্লিনসিং করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রচুর পানি পান, হালকা ব্যায়াম, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার এবং নিজের প্রতি মমতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাই সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য গড়ে ওঠে আপনার বড় ক্যানভাসের জীবনধারা দিয়ে, একটি মাত্র রাত দিয়ে নয়। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান ভিক্টোরিয়া হুইটিংটন এবং সাম্প্রতিক পুষ্টি গবেষণার আলোকে জেনে নিন, একদিনের অনিয়ম সামলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বিজ্ঞানসম্মত উপায়।

অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। ছবি: পেক্সেলস
অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। ছবি: পেক্সেলস

১. নিজেকে বঞ্চিত করবেন না

বেশি খেয়ে ফেলার পরদিন না খেয়ে থাকা বা খুব অল্প খাওয়ার যে প্রবণতা, তা আসলে উল্টো ফল আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে খাবারের প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আবার অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। তাই অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেলার পরদিন খাবার কমিয়ে দেওয়ার বদলে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভালো ফ্যাটের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ।

২. সকালের নাশতা হোক প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ

অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। গবেষণা বলছে, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাশতা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার যোগ করলে তা রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং সারা দিন আপনাকে তৃপ্ত রাখে। খাবার বাদ দিলে শরীরে ‘ঘ্রেলিন’ বা ক্ষুধা উদ্দীপক হরমোন বেড়ে যায়, যা দিনশেষে আপনাকে আবারও বেশি খেতে প্ররোচিত করতে পারে।

৩. শরীরকে সচল রাখুন এবং পানি পান করুন

অতিরিক্ত খাওয়ার পর শরীরে যে অলসতা বা ভারী ভাব কাজ করে, তার পেছনে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার বড় ভূমিকা থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়া সহজ হয়। পাশাপাশি হালকা শারীরিক পরিশ্রম বা অল্প হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। এতে আমাদের পেশিগুলো রক্তে জমে থাকা শর্করাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

যারা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তারা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। ছবি: পেক্সেলস
যারা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তারা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। ছবি: পেক্সেলস

৪. ‘পারফেকশন’ নয়, গুরুত্ব দিন সামগ্রিক অভ্যাসে

পুষ্টিবিদ হুইটিংটন জোর দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য মূলত আপনার নিয়মিত অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে, কোনো একদিনের অনিয়মের ওপর নয়। নার্সেস হেলথ স্টাডির মতো বড় বড় গবেষণাও বলছে, কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের খাদ্যাভ্যাস নয়; বরং আপনার দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ধরনই নির্ধারণ করে আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি। তাই একদিন বেশি খেয়ে ফেললে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্য মানে নিখুঁত হওয়া নয়; বরং একটি সুস্থ ধারায় থাকা।

৫. নিজের প্রতি সদয় হোন

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, নিজেকে ক্ষমা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বোঝার চেষ্টা করুন, সে মুহূর্তে আপনার কিসের প্রয়োজন ছিল। সমালোচনা নয়, কৌতূহলী মন নিয়ে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করলে আপনি ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

সূত্র: ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক তরুণের হাত ধরে ভাগ্য ফিরল পুরো গ্রামের

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
নেপালের তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই এর হাত ধরে বদলে গেছে তাঁর গ্রামের কৃষির চিত্র। গ্রামের ৩৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টি পরিবার এখন কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী। ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট
নেপালের তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই এর হাত ধরে বদলে গেছে তাঁর গ্রামের কৃষির চিত্র। গ্রামের ৩৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টি পরিবার এখন কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী। ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট

‘চাকরি ছেড়ে কৃষিতে লাখপতি’ কিংবা ‘যুবকের ভাগ্য ফিরল কৃষিতে’। এমন সংবাদ আমরা প্রায়ই দেখি সংবাদমাধ্যমে। এই যুবকেরা কখনো কখনো নীরবে বদলে দেয় পুরো জনপদের শত শত কৃষকের জীবন। এসব ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটে, তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটে থাকে। নেপালেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। তা প্রকাশিত হয়েছে দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’-এ।

হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প। সেখানে এই সোনালি-হলুদ ফলটি বদলে দিয়েছে শত শত কৃষকের ভাগ্য এবং পুরো গ্রামের জীবনযাত্রা।

ঘরের আঙিনায় চকচকে সাফল্য

এই পরিবর্তনের উজ্জ্বল প্রতীক তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে প্রায় এক দশক হাড়ভাঙা খাটুনির পর কিছু অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পৈতৃক জমিতে প্রচলিত দানাদার শস্যের চাষ বাদ দিয়ে তৈরি করেন কমলার বাগান। আজ তাঁর ৫৩৫টি কমলাগাছ ফলে ভরপুর। গত বছর ১৭০ কুইন্টাল কমলা বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ রুপি আয় করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় ২০০ কুইন্টাল উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। রেবতি বলেন, ‘বিদেশের চাকরির চেয়ে কমলার চাষ আমার জীবনকে বেশি বদলে দিয়েছে। এখন আর আমাকে বাজারের পেছনে ছুটতে হয় না। ফল পাকার আগেই ব্যবসায়ীরা এসে বাগান বুক করে নেন।’ কমলার আয়েই তিনি সিমলেতে আড়াই তলা একটি পাকা বাড়ি তুলেছেন।

পেনশনের চেয়েও বেশি আয়

শুধু তরুণেরাই নন, এ বিপ্লবে শামিল হয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও। তাঁদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি টেকনিশিয়ান দধি রাম গৌতম। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিক কমলা চাষ করছেন। তাঁর ২৫০টি গাছের কমলা থেকে বছরে যে আয় হয়, তা তাঁর সরকারি পেনশনের চেয়ে তিন গুণ বেশি। বুটওয়াল, পাল্পা ও পোখারা থেকে ব্যবসায়ীরা গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে নগদ টাকায় কমলা কিনে নিয়ে যান।

কমলা চাষে এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্ড চেয়ারম্যান চন্দ্রকান্ত পাউডেল তাঁর জনসেবামূলক কাজের পাশাপাশি ৬০০টি কমলাগাছের বিশাল বাগান সামলাচ্ছেন। এ বছর শিলাবৃষ্টি বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার, যা আরও বেশি লাভের আশা জোগাচ্ছে।

কমলার এক নতুন হাব

পাণিনি-১-এর সলেরি টোল গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কমলার বাগান রয়েছে। গ্রামের কৃষকেরা নিজেদের সংগঠিত করতে গঠন করেছেন পাখাপানি কৃষক দল। ৪৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টিই এখন এই দলের সদস্য। গ্রামের বড় চাষি টুক বাহাদুর দারলামি গত বছর ৩ দশমিক ৫ লাখ রুপি আয় করেছেন কমলা চাষ করে। তিনি জানিয়েছেন, পুরো সলেরি গ্রাম এখন কমলার হাবে পরিণত হয়েছে। ফলে তাঁদের জমিগুলো আর অনাবাদি থাকছে না এবং গ্রাম থেকে মানুষের শহরে চলে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে।

অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব

কৃষকদের এ সাফল্যে হাত বাড়িয়েছে অ্যাগ্রিকালচার নলেজ সেন্টার। সেচের সুবিধার জন্য তারা বড় বড় পানির ট্যাংক তৈরি করে দিয়েছে গ্রামটিতে। কৃষি টেকনিশিয়ান শারদা আচার্যের মতে, সিমলে গ্রামের এই ব্যাপক সাফল্য দেখে প্রতিবেশী গ্রামগুলোও এখন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে ঝুঁকছে। শুধু সিমলে গ্রাম থেকেই বছরে ৩ কোটি রুপিরও বেশি কমলা বিক্রি হয়। গত বছর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কমলার দাম ছিল ৬০ রুপি। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ রুপিতে। কমলার আয়ে কৃষকেরা সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিচ্ছেন, ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন এবং গবাদিপশুর আধুনিক খামার গড়ে তুলছেন।

আরঘাখাঁচির এই জনপদে কমলা এখন আর কেবল একটি ফল নয়—স্বনির্ভরতার প্রতীক। যখন পুরো গ্রাম কমলার হলুদ রঙে ঝলমল করে ওঠে, তখন তা কেবল ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয় না; বরং এক সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের গল্প শোনায়।

সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে ত্বক সজীব ও ব্রণ দূর করতে ব্যবহার করুন বেসনে তৈরি এ প্যাকগুলো

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাক ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে। ছবি: ফ্রিপিক
বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাক ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে। ছবি: ফ্রিপিক

রূপচর্চায় বেসন খুব পরিচিত একটি উপকরণ। একসময় ত্বক পরিষ্কার করতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহার করা হতো। শীতে ত্বকের নির্জীব ভাব নিয়ে যাঁরা চিন্তায় রয়েছেন, তাঁরা সহজলভ্য এই উপকরণটি রোজকার ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে নানা উপকার পেতে পারেন।

এ কথা তো সবাই জানেন, শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি ত্বক দূষণমুক্ত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।

বেসন ও এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেলের প্যাক

বেসনের সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা যায় ফেসপ্যাক। ছবি: ফ্রিপিক
বেসনের সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা যায় ফেসপ্যাক। ছবি: ফ্রিপিক

পুরো শরীরের ত্বকে মাখার জন্য বেসন নিন। এতে কয়েক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ দুধ মেশাতে পারেন। প্যাক তৈরিতে যতটুকু পানি প্রয়োজন, তা যোগ করুন। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন আধা শুকনো হওয়া পর্যন্ত। এরপর আলতো করে কুসুম গরম পানিতে পুরো শরীর ধুয়ে নিন। নারকেল তেল ও দুধ রুক্ষ ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও ময়শ্চারাইজ করে। পাশাপাশি এ প্যাক ত্বকের ডিপ ক্লিনজিংয়েও সহায়তা করে। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাদের জন্য এ প্যাক খুবই ভালো কাজ করে।

বেসন, টক দই ও হলুদের প্যাক

এ সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পুরো শরীরে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে শরীর আলতো ঘষে প্যাক দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। টক দই ত্বকের আর্দ্রতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবেও দুর্দান্ত কাজ করে। অন্যদিকে হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগছোপ কমায় ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

বেসন ও গাঁদা ফুল বাটার প্যাক

বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল বাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাক মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও নরম করতে এ প্যাক ভালো কাজ করে। যাঁদের ত্বকে ব্রণ ও দাগ রয়েছে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই প্যাক মুখে ব্যবহার করতে পারেন।

ডিপ ক্লিনজিং প্যাক

যাঁরা সকালে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ফেসওয়াশ ব্যবহার এড়াতে চান তাঁরা ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিন সকালে। এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হবে ও ধীরে ধীরে জেল্লাদার হয়ে উঠবে।

বেসন, মধু ও গোলাপজল

বেসন, মধু, গোলাপজল ও অল্প পানি মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকাতে শুরু করলে হালকা করে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বক নরম রাখে। গোলাপজল ত্বক সতেজ করতে সাহায্য করে। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই একটি ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

মেছতার দাগ হালকা করতে

বেসনের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মেছতার ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করুন। দাগ কমে এলে ধীরে ধীরে প্যাক ব্যবহারও কমিয়ে আনুন। যেমন সপ্তাহে একবার, তারপর ১৫ দিনে একবার, তারপর মাসে একবার। এভাবে এই প্যাক ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ একেবারে হালকা হয়ে আসবে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকাল যেভাবে সেলিব্রেট করতে পারেন

ফারিয়া রহমান খান 
বছরের এই শেষ সময়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে নতুন বছর শুরুর প্রস্তুতি নিন। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
বছরের এই শেষ সময়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে নতুন বছর শুরুর প্রস্তুতি নিন। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু সুন্দর করে সেলিব্রেট করতে পারেন।

আলো ও উষ্ণতার আমেজ

শীতকাল মানেই ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে ঘরে কিছু ওয়ার্ম লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। রাতে ছাদে বা উঠানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে এর চারপাশে বসুন। আগুনের উষ্ণতা একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। এটি শুধু যে অন্ধকার দূর করে, তা-ই নয়; বরং শীতে একটা সুন্দর, স্নিগ্ধ ও উষ্ণ ভাব এনে দেয়। আগুনের তাপের সঙ্গে এই আয়োজনে থাকে সম্পর্কের উত্তাপও।

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন। এতে ইতিবাচক শক্তি পাবেন নতুন বছরে। ছবি: পেক্সেলস
পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন। এতে ইতিবাচক শক্তি পাবেন নতুন বছরে। ছবি: পেক্সেলস

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন

শীতকালে ঘর পরিষ্কার করে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন। নেতিবাচকতা দূর করতে ঘর পরিষ্কার করে ধূপ বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। আবার শীতের আমেজ আনতে ঘরে দারুচিনি, এলাচি বা লবঙ্গ জাতীয় মসলার সুগন্ধ ব্যবহার করুন। চুলায় পানি গরম করে তাতে এসব দিয়ে ফুটতে দিন, ধীরে ধীরে পুরো বাসায় সুবাস ছড়িয়ে পড়বে। ঘর পরিষ্কার থাকলে মনও শান্ত থাকে আর নতুন দিনগুলোকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

একটা সালতামামি হয়ে যাক

এ সময়টিতে নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এ বছর কী কী ভালো-খারাপ হলো বা কী কী শিখলেন, তা নিয়ে একটু ভাবুন। একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। যেসব অভ্যাস এখন আর আপনার কাজে আসছে না, সেগুলো বাদ দিয়ে নিজের ভালো হয়—এমন কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলুন। নতুন বছরে কী কী করতে চান, সে লক্ষ্য ঠিক করে লিখে রাখুন।

বছর শেষের শীতকালে একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
বছর শেষের শীতকালে একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

জীবনে ছোট-বড় যা কিছু ভালো আছে, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। একটি তালিকা তৈরি করুন, যেখানে আপনার অর্জন, প্রিয় মানুষ, ব্যক্তিগত ভালো লাগা ও সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা লিখে রাখবেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মনে শান্তি পাবেন এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবেন।

নিজের যত্ন নিন

শীতকাল হলো নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার সময়। প্রতিদিন হালকা ইয়োগা, হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে শরীর সচল রাখুন। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন এবং নিজেকে কিছু উপহার দিন। নিজের জন্য সময় বের করে নিজের অস্তিত্ব সেলিব্রেট করার জন্য শীতকাল হলো উপযুক্ত সময়।

প্রকৃতি মন ভালো করার ওষুধ। শীতকালে অপেক্ষাকৃত কম কাজের চাপের সময় প্রকৃতি উপভোগ করুন। ছবি: ফ্রিপিক
প্রকৃতি মন ভালো করার ওষুধ। শীতকালে অপেক্ষাকৃত কম কাজের চাপের সময় প্রকৃতি উপভোগ করুন। ছবি: ফ্রিপিক

প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন

শীতের সকাল বা বিকেলে প্রকৃতির কাছে থাকার চেষ্টা করুন। শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন এবং শীতের নরম রোদ গায়ে মাখুন, যা আপনার মন ভালো করার পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাবে। শীতকালীন ফুলগাছ বারান্দায় রাখুন ও মাটির তৈরি জিনিস দিয়ে ঘর সাজান। দেখবেন এই ছোট কাজগুলো ঘরে একটা স্নিগ্ধ ও সতেজ ভাব আনবে।

প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান

শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিঠার আয়োজন করুন। একসঙ্গে গল্প, হাসি আর খাবার সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করবে এবং সময় আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।

এবার ‘না’ বলতে শিখুন

শীতকাল মানেই বিভিন্ন রকম দাওয়াত। সেগুলোকে পাশে রেখে সামাজিক বা অন্যান্য কাজের চাপ এড়িয়ে চলুন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে বা কোনো কাজ করতে যদি একেবারেই ইচ্ছা না করে তবে, অযথা চাপ অনুভব না করে বিনীতভাবে এড়িয়ে চলুন। এ সময় নিজের বিশ্রাম ও মানসিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই বেশি জরুরি।

সূত্র: রিদমস অব প্লে ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত