ইশতিয়াক হাসান

লোভাছড়ায় যাওয়ার ইচ্ছাটা মনে পুষে রেখেছিলাম অন্তত এক যুগ। তখন এনায়েত মাওলার বই পড়ে জেনেছিলাম পাহাড়-অরণ্য, বন্যপ্রাণী, চা-বাগান আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর এই মায়াবী রাজ্যের কথা। তবে যাওয়ার সুযোগ মিলল গত বছর, অর্থাৎ ২০২২-এর মে মাসে।
প্রথমে কানাইঘাট
সিলেটে পৌঁছেছিলাম রাত আড়াইটায়। বাস যে এভাবে গোটা পথটা উড়িয়ে আনবে, তা কে জানত! বিপদ আর কাকে বলে। সঙ্গে স্ত্রী পুনম আর মেয়ে ওয়াফিকা আছে। এই রাতে কোথায় যাই? অতএব, রাতের বাকি সময়টা কোনোমতে কাটালাম বাস কাউন্টারের পাশের এক হোটেলে।
সকাল ৮টায় কানাইঘাটের বাস ধরলাম কদমতলী বাজার থেকে। লোভাছড়া পড়েছে এই উপজেলায়। ঈদের পরপর হওয়ায় শহরে মানুষ কম। সকাল হওয়ায় আরও সুনসান। তাই কোনো রেস্তোরাঁ খোলা পাইনি। খালি পেটেই স্ত্রী-কন্যা নিয়ে উঠতে হয়েছে।
মোটামুটি সোয়া ঘণ্টার পথ কানাইঘাট বাজার। বাজারে পৌঁছার আগেই একটা দৃশ্য দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। হাতের বাঁয়ে বিশাল পাহাড় আমাদের সঙ্গী হয়েছে। বহু দূরে ওই পাহাড়, তার পরও মনে হচ্ছিল যেন হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়।
আমরা ধরলাম জলের পথ
লোভাছড়া যাওয়া যায় দুইভাবে—একটি হলো নদী ধরে, অপরটি সড়কপথে। তবে লোভাছড়ায় যাওয়ার রাস্তাটার অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়, জানা ছিল আগেই। তাই বাজারে হালকা-পাতলা নাশতা সেরে সুরমা নদীর ঘাটে চলে এলাম। আমাদের লোভাছড়া ঘুরিয়ে আনার জন্য বারো শ টাকায় একটা নৌকা ভাড়া করলাম।
জাল দিয়ে বাঘ ধরা
সুরমার জল কেটে এগোচ্ছে আমাদের নৌকা। দূরে পাওয়া যাচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের আভাস। এর মধ্যে আলাপ জমালাম মাঝির সঙ্গে। বিষয়বস্তু প্রিয় বন্যপ্রাণী। কানাইঘাটের নাম শুনলেই আমার মাথায় প্রথম যে বিষয়টা এল—সীমান্ত পেরিয়ে আসা চিতা বাঘ আর জাল দিয়ে তাদের ধরার গল্প। মাঝি জানাল, বিশেষ করে শীতের সময় ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসে চিতা বাঘ। একবার এপারে এলে অবশ্য রেহাই নেই। নদীতে মাছ ধরার কারণে এখানকার প্রতি বাড়িতেই থাকে নিদেনপক্ষে একটি-দুটি জাল। চিতা বাঘটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে জাল দিয়ে ধরে ফেলতে কোনো সমস্যা হয়নি। একবার জালে আটকালে হয় মারা পড়ে, না হয় স্থান হয় চিড়িয়াখানায়। অবশ্য গত কয়েক বছর চিতা বাঘ আসার খবর মেলেনি। পাহাড় ডিঙিয়ে আসা চিতাদের কথা ভেবে বুকটা কেমন হু হু করে উঠল।
তিন নদী এক হলো যেখানে
আমাদের নৌকা ইঞ্জিনের শক্তিতে চলছে দ্রুত। মাঝে মাঝে ওদিক থেকে নৌকা আসছে, এগুলো অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দায় বোঝাই। রোদের কারণে কেউ কেউ মাথায় ছাতা দিয়ে রেখেছে। ছোট ছোট নৌকাও আছে। এগুলোতে একজন বা দুজন মানুষ। জেলেদের নৌকা। নদীতে মাছ আছে বেশ। জেলেদের নৌকা আর বিভিন্ন জায়গায় ফেলা জাল দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না। দূরের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় যতই কাছে আসছে, আমার আগ্রহ জলের জীবন থেকে সেদিকে বেশি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
এক জায়গায় এসে হঠাৎ অনেক চওড়া হয়ে গেল নদী। অবশ্য একটু খেয়াল করতেই বুঝলাম এখানে তিন নদী এসে মিশেছে। আমরা এসেছি সুরমা ধরে। আর মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানলাম, বাকি দুটি হলো বরাক আর লোভাছড়া।
আশ্চর্য সুন্দর নদী লোভাছড়া
আমাদের নৌকা এখন চলেছে লোভাছড়া ধরে। নাম লোভাছড়া হলেও এটি আদপে একটি নদী। নদীর জল আশ্চর্য স্বচ্ছ। তলার পাথর দেখা যায়। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় এখন অনেক কাছে। সীমান্তের ওই পারের পাহাড়েই জন্ম এই নদীর। তবে নদী ধরে আরও এগোনোর আগেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলো আমাদের।
লোভাছড়ায় নদীর পাশাপাশি আমাদের প্রধান দুই গন্তব্য এখানে ব্রিটিশ আমলে বানানো ঝুলন্ত সেতু আর লোভাছড়ার চা-বাগান। মাঝি জানাল, চা-বাগানের ভেতর দিয়ে ওই ঝুলন্ত সেতুতে যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তার চেয়ে সে বাঁয়ের ছড়াটা ধরে ওই সেতুর কাছে পৌঁছাতে পারে। বাঁয়ে তাকিয়ে দেখলাম ছোট্ট এক ছড়া ঢুকে গেছে ভেতরে। ছড়ায় নৌকাভ্রমণের লোভে রাজি হয়ে গেলাম প্রস্তাবে।
এনায়েত মাওলার ট্রেইল ধরে
মনে আছে, লেখার শুরুতে বলেছিলাম এনায়েত মাওলার বই পড়ে এক যুগ আগেই জেনেছিলাম লোভাছড়ার কথা? মাঝি ছোট্ট, সরু ছড়ায় নৌকাটা ঢোকাতে থাকুক, এই ফাঁকে এনায়েত মাওলার বিষয়টা খোলাসা করা যাক। বাংলাদেশের সিলেট আর পার্বত্য অঞ্চলের পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর খোঁজ-খবর পেতে হলে পড়তে হবে এনায়েত মাওলার লেখা ‘যখন শিকরি ছিলাম’ বইটি। এতেই জানতে পারি নুনাছড়া আর লোভাছড়া চা-বাগান, স্কটিশ চা-বাগানের মালিক ফারগুসন সাহেব আর অদ্ভুত সুন্দর এক নদী লোভাছড়ার কথা। এক বন্ধুসহ এখানে এসেছিলেন এনায়েত মাওলা, ৭০ বছর আগে, সেই ১৯৫১-৫২ সালের দিকে। তখন এদিককার জঙ্গল চষে বেড়িয়েছিলেন। সীমান্তের এপাড়-ওপার বাদ রাখেননি কিছুই। বন্ধু শিকার করেছিলেন বিশাল এক সম্বার হরিণ। আর এনায়েত মাওলা, আস্ত এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
ছড়া ধরে চলা
গত কয়েক দিন বৃষ্টি হয়নি। তাই ছড়ায় পানি একটু কম। তারপর আবার একটু পর পর কড়া মোচর নিয়েছে ছড়াটি। তাই নৌযাত্রাটি হলো রীতিমতো রোমাঞ্চকর। হঠাৎ হঠাৎ ছড়ার মাঝ বরাবর নৌকা দাঁড় করিয়ে রাখা। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। সামনে, ডানে সবুজ ছোট টিলা আর পাহাড়ের রাজ্য। একটু পরে আরেক বাধা ছড়াপথে। কিনারে কাদাময় পানিতে মহানন্দে খেলা করছে একদল মহিষ। আমাদের দেখে নাক ফুলাল। তবে আক্রমণের কোনো অভিসন্ধি চোখে পড়ল না। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে এগোলাম আমরা। সামনে একের পর এক পাহাড় দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দেখলাম ছড়ার পাড়ে কাদায় শরীরের রং বদলে দিয়ে মহিষের আরও বড় একটা দল চড়ে বেড়াচ্ছে।
ব্রিটিশ আমলের এক ঝুলন্ত সেতু
একটু পর ছড়ার পানি এত কমে গেল, এগোনো মুশকিল। মাঝি বলল, নৌকা থেকে নেমে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই আমরা ঝুলন্ত সেতুতে পৌঁছে যাব। অতএব, তাকে আর নৌকা রেখে আমরা হাঁটা ধরলাম। পাহাড়-জঙ্গলে গেলে ওয়াফিকার তিন ভয় কেঁচো, জোঁক আর সাপ। এখানে ওর মনে পড়ল জোঁকের কথা। ঝোপঝাড় ডিঙিয়ে যাওয়ার সময় তাই চেহারা ফ্যাকাশে তার। শেষ পর্যন্ত মিনিট দশেক হাঁটতেই পৌঁছে গেলাম চা-বাগানের রাজ্যে। মাঝখানে সেই ঝুলন্ত সেতু।
চারপাশে চা-বাগানের মাঝে একমাত্র কৃত্রিম এক কাঠামো এই ঝুলন্ত সেতু। তবে কীভাবে যেন বাগান আর প্রকৃতির অংশ হয়ে গেছে সেতুটি। যদ্দুর জানা যায়, ইংরেজ আমলে ১৯২৫ সালে এই সেতু বানানো হয় লোভাছড়ায় যাতায়াতের জন্য। অর্থাৎ, এটি প্রায় শত বছরের পুরোনো। এখন সেতুটিতে মরচে পড়ে গেছে, এখানে-সেখানে ভাঙা। আমরা এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। সেতুতে উঠে দেখলাম চারপাশের পাহাড় আর চা-বাগান রাজ্যের আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য।
লোভাছড়া নদী আর চা-বাগান
এদিক দিয়ে বাংলোয় গেলে বেশ সময় লাগব। পথও চেনা নেই। আমাদের মাঝিও অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা সেতু দর্শন শেষে ফিরে গেলাম নৌকায়। স্রোতের অনুকূলে থাকায় এবার আর ঝামেলা হলো না। দ্রুতই পৌঁছে গেলাম লোভাছড়া নদীতে। তারপর একেবারে চা-বাগানের ঘাটে। এখানে নদী আরও সুন্দর। স্বচ্ছ জলে পাথরের সংখ্যা আরও বেশি। মনে হচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়কে হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারব। লোভাছড়া নদী এঁকেবেঁকে পাহাড়রাজ্যের ভেতর দিয়ে হারিয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে।
আরও কিছু পর্যটক এসেছেন নৌকায় চেপে। আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। আমরাও নেমে পড়লাম নৌকা থেকে। একটু হাঁটতেই চলে এলাম চা-বাগানের রাজ্যে। এনায়েত মাওলার লোভাছড়া চা-বাগান। দুই পাশে চা-বাগান, একটু দূরে লোভাছড়া নদী, আরও দূরে পাহাড়রাজ্য—সব মিলিয়ে আমি যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
চা-বাগানের বাংলো আর ফারগুসন সাহেব
এখন চা-বাগানের দেখাশোনা করছেন ফারগুসন সাহেবের আত্মীয়রাই। ওই পরিবারের সদস্য ইউসফু ভাই আমার এক সহকর্মীর স্বামীর বন্ধু। অতএব, চা-বাগানে ঢোকার অনুমতি পেতে বেগ পেতে হলো না। গেট পেরিয়ে চা-বাগানের ভেতর দিয়ে কিছুটা এগোতেই একটা টিলা। চড়াই বেয়ে উঠতে একটা বড় সমতল জায়গা। আর সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ওটা। এর কথাও শুনেছিলাম। লোভাছড়া চা-বাগানের বাংলোগুলোর একটি। তবে এর ভিন্নতা চেহারা আর নির্মাণ উপকরণে। বেশ অনেকটুকু জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলোটার মূল আকর্ষণ এর বিশাল শণের ছাউনিটা। শণের চালার এমন বিশাল বাংলো দেশে আর কোথাও আছে কি না, আমার জানা নেই।
অনেক গল্প
বাংলোয় ঢুকে গল্প হলো ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে। জানালেন, জেমস আর্থার ফারগুসন সাহেব ছিলেন তাঁর নানির বাবা। ফারগুসন সাহেব এদেশীয় নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন। বাগানটা অনেক দিন বন্ধ ছিল। পরে আবার চালু হয়। এখন উৎপাদনও শুরু করেছেন তাঁরা। ঘুরিয়ে দেখালেন বাংলোটা। জানালেন, তাঁর নানি জুন ফারগুসন ছিলেন এই চা-বাগানের ম্যানেজার। জানলাম মেলা মায়া হরিণ, বুনো শূকর আর বনমোরগ আছে তাঁদের চা-বাগানের এলাকায়। মাঝে মাঝে দেখা মেলে শজারু আর বনরুইয়ের। এগুলোর জন্য রীতিমতো সংরক্ষিত এলাকা এই চা-বাগান। এখানে কেউ বন্যপ্রাণী শিকার করে না। বছর দশ-বারো আগে একটা কালো চিতা ধরা পড়ার গল্পও বললেন। অবশ্য ওটাকে বাঁচানো যায়নি। তখনই মনে পড়ল কাছাকাছি সময়ে এই এলাকায় কালো সোনালি বিড়াল ধরা পড়ার কথা শুনেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মুনতাসীর আকাশ ভাইয়ের কাছ থেকে। হতে পারে ইউসুফ ভাই যে কালো চিতার কথা বলেছেন, সেটা সোনালি বিড়ালের কালো রূপভেদ। সাধারণের চোখে এই দুটোকে আলাদা করা কঠিন। তারপর তাঁদের বিশাল ঘোড়াগুলো দেখালেন। ঢাকার অস্থিচর্মসার ঘোড়া দেখে অভ্যস্ত ওয়াফিকা চকচকে চামড়ার বিশাল ঘোড়াগুলো দেখে তো মহাখুশি।
অভিমানী চিতা বাঘ
লোভাছড়ার জল কেটে ফিরছে আমাদের নৌকা। তবে আশ্চর্য সুন্দর নদী কিংবা সবুজ পাহাড়—কোনোটিতেই মনোযোগ নেই আমার। মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপের শেষ কথাগুলো। একসময় নাকি বাংলোর হাতা থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যেত চিতা বাঘেরা। আর এদিকের পাহাড়ে এলেই চিতারা জানান দিত তাদের করাতচেরা ডাকে। তবে বছর চার-পাঁচ হলো বাংলোর চৌহদ্দিতে দেখা মেলে না হলুদে কালো ফোঁটার আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীদের। সীমান্তের ওপাশে দেওয়া কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আর চিতা বাঘেরা এই রাজ্যে আসতে পারে না? নাকি খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় পেরিয়ে সগোত্রীয়দের এদিকে এসে আর ফিরে না যেতে দেখেই অভিমানে লোভাছড়ার বন-পাহাড়ে বেড়াতে আসা বাদ দিয়েছে প্রিয় চিতা বাঘেরা? মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল আর আকাশপথ—তিনভাবেই যেতে পারবেন সিলেটে। তারপর শহরের কদমতলী থেকে বাসে চেপে কানাইঘাটে চলে যাবেন। সিলেট শহরের ধোপাদীঘির পাড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপেও যেতে পারবেন কানাইঘাটে। সেখান থেকে লোভাছড়ায় আসা-যাওয়ার ভাড়া বারো শ থেকে দেড় হাজার টাকা। লোভাছড়া বা কানাইঘাটে থাকার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় থাকতে হবে সিলেটের কোনো হোটেলে।

লোভাছড়ায় যাওয়ার ইচ্ছাটা মনে পুষে রেখেছিলাম অন্তত এক যুগ। তখন এনায়েত মাওলার বই পড়ে জেনেছিলাম পাহাড়-অরণ্য, বন্যপ্রাণী, চা-বাগান আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর এই মায়াবী রাজ্যের কথা। তবে যাওয়ার সুযোগ মিলল গত বছর, অর্থাৎ ২০২২-এর মে মাসে।
প্রথমে কানাইঘাট
সিলেটে পৌঁছেছিলাম রাত আড়াইটায়। বাস যে এভাবে গোটা পথটা উড়িয়ে আনবে, তা কে জানত! বিপদ আর কাকে বলে। সঙ্গে স্ত্রী পুনম আর মেয়ে ওয়াফিকা আছে। এই রাতে কোথায় যাই? অতএব, রাতের বাকি সময়টা কোনোমতে কাটালাম বাস কাউন্টারের পাশের এক হোটেলে।
সকাল ৮টায় কানাইঘাটের বাস ধরলাম কদমতলী বাজার থেকে। লোভাছড়া পড়েছে এই উপজেলায়। ঈদের পরপর হওয়ায় শহরে মানুষ কম। সকাল হওয়ায় আরও সুনসান। তাই কোনো রেস্তোরাঁ খোলা পাইনি। খালি পেটেই স্ত্রী-কন্যা নিয়ে উঠতে হয়েছে।
মোটামুটি সোয়া ঘণ্টার পথ কানাইঘাট বাজার। বাজারে পৌঁছার আগেই একটা দৃশ্য দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। হাতের বাঁয়ে বিশাল পাহাড় আমাদের সঙ্গী হয়েছে। বহু দূরে ওই পাহাড়, তার পরও মনে হচ্ছিল যেন হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়।
আমরা ধরলাম জলের পথ
লোভাছড়া যাওয়া যায় দুইভাবে—একটি হলো নদী ধরে, অপরটি সড়কপথে। তবে লোভাছড়ায় যাওয়ার রাস্তাটার অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়, জানা ছিল আগেই। তাই বাজারে হালকা-পাতলা নাশতা সেরে সুরমা নদীর ঘাটে চলে এলাম। আমাদের লোভাছড়া ঘুরিয়ে আনার জন্য বারো শ টাকায় একটা নৌকা ভাড়া করলাম।
জাল দিয়ে বাঘ ধরা
সুরমার জল কেটে এগোচ্ছে আমাদের নৌকা। দূরে পাওয়া যাচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের আভাস। এর মধ্যে আলাপ জমালাম মাঝির সঙ্গে। বিষয়বস্তু প্রিয় বন্যপ্রাণী। কানাইঘাটের নাম শুনলেই আমার মাথায় প্রথম যে বিষয়টা এল—সীমান্ত পেরিয়ে আসা চিতা বাঘ আর জাল দিয়ে তাদের ধরার গল্প। মাঝি জানাল, বিশেষ করে শীতের সময় ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসে চিতা বাঘ। একবার এপারে এলে অবশ্য রেহাই নেই। নদীতে মাছ ধরার কারণে এখানকার প্রতি বাড়িতেই থাকে নিদেনপক্ষে একটি-দুটি জাল। চিতা বাঘটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে জাল দিয়ে ধরে ফেলতে কোনো সমস্যা হয়নি। একবার জালে আটকালে হয় মারা পড়ে, না হয় স্থান হয় চিড়িয়াখানায়। অবশ্য গত কয়েক বছর চিতা বাঘ আসার খবর মেলেনি। পাহাড় ডিঙিয়ে আসা চিতাদের কথা ভেবে বুকটা কেমন হু হু করে উঠল।
তিন নদী এক হলো যেখানে
আমাদের নৌকা ইঞ্জিনের শক্তিতে চলছে দ্রুত। মাঝে মাঝে ওদিক থেকে নৌকা আসছে, এগুলো অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দায় বোঝাই। রোদের কারণে কেউ কেউ মাথায় ছাতা দিয়ে রেখেছে। ছোট ছোট নৌকাও আছে। এগুলোতে একজন বা দুজন মানুষ। জেলেদের নৌকা। নদীতে মাছ আছে বেশ। জেলেদের নৌকা আর বিভিন্ন জায়গায় ফেলা জাল দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না। দূরের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় যতই কাছে আসছে, আমার আগ্রহ জলের জীবন থেকে সেদিকে বেশি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
এক জায়গায় এসে হঠাৎ অনেক চওড়া হয়ে গেল নদী। অবশ্য একটু খেয়াল করতেই বুঝলাম এখানে তিন নদী এসে মিশেছে। আমরা এসেছি সুরমা ধরে। আর মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানলাম, বাকি দুটি হলো বরাক আর লোভাছড়া।
আশ্চর্য সুন্দর নদী লোভাছড়া
আমাদের নৌকা এখন চলেছে লোভাছড়া ধরে। নাম লোভাছড়া হলেও এটি আদপে একটি নদী। নদীর জল আশ্চর্য স্বচ্ছ। তলার পাথর দেখা যায়। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় এখন অনেক কাছে। সীমান্তের ওই পারের পাহাড়েই জন্ম এই নদীর। তবে নদী ধরে আরও এগোনোর আগেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলো আমাদের।
লোভাছড়ায় নদীর পাশাপাশি আমাদের প্রধান দুই গন্তব্য এখানে ব্রিটিশ আমলে বানানো ঝুলন্ত সেতু আর লোভাছড়ার চা-বাগান। মাঝি জানাল, চা-বাগানের ভেতর দিয়ে ওই ঝুলন্ত সেতুতে যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তার চেয়ে সে বাঁয়ের ছড়াটা ধরে ওই সেতুর কাছে পৌঁছাতে পারে। বাঁয়ে তাকিয়ে দেখলাম ছোট্ট এক ছড়া ঢুকে গেছে ভেতরে। ছড়ায় নৌকাভ্রমণের লোভে রাজি হয়ে গেলাম প্রস্তাবে।
এনায়েত মাওলার ট্রেইল ধরে
মনে আছে, লেখার শুরুতে বলেছিলাম এনায়েত মাওলার বই পড়ে এক যুগ আগেই জেনেছিলাম লোভাছড়ার কথা? মাঝি ছোট্ট, সরু ছড়ায় নৌকাটা ঢোকাতে থাকুক, এই ফাঁকে এনায়েত মাওলার বিষয়টা খোলাসা করা যাক। বাংলাদেশের সিলেট আর পার্বত্য অঞ্চলের পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর খোঁজ-খবর পেতে হলে পড়তে হবে এনায়েত মাওলার লেখা ‘যখন শিকরি ছিলাম’ বইটি। এতেই জানতে পারি নুনাছড়া আর লোভাছড়া চা-বাগান, স্কটিশ চা-বাগানের মালিক ফারগুসন সাহেব আর অদ্ভুত সুন্দর এক নদী লোভাছড়ার কথা। এক বন্ধুসহ এখানে এসেছিলেন এনায়েত মাওলা, ৭০ বছর আগে, সেই ১৯৫১-৫২ সালের দিকে। তখন এদিককার জঙ্গল চষে বেড়িয়েছিলেন। সীমান্তের এপাড়-ওপার বাদ রাখেননি কিছুই। বন্ধু শিকার করেছিলেন বিশাল এক সম্বার হরিণ। আর এনায়েত মাওলা, আস্ত এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
ছড়া ধরে চলা
গত কয়েক দিন বৃষ্টি হয়নি। তাই ছড়ায় পানি একটু কম। তারপর আবার একটু পর পর কড়া মোচর নিয়েছে ছড়াটি। তাই নৌযাত্রাটি হলো রীতিমতো রোমাঞ্চকর। হঠাৎ হঠাৎ ছড়ার মাঝ বরাবর নৌকা দাঁড় করিয়ে রাখা। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। সামনে, ডানে সবুজ ছোট টিলা আর পাহাড়ের রাজ্য। একটু পরে আরেক বাধা ছড়াপথে। কিনারে কাদাময় পানিতে মহানন্দে খেলা করছে একদল মহিষ। আমাদের দেখে নাক ফুলাল। তবে আক্রমণের কোনো অভিসন্ধি চোখে পড়ল না। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে এগোলাম আমরা। সামনে একের পর এক পাহাড় দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দেখলাম ছড়ার পাড়ে কাদায় শরীরের রং বদলে দিয়ে মহিষের আরও বড় একটা দল চড়ে বেড়াচ্ছে।
ব্রিটিশ আমলের এক ঝুলন্ত সেতু
একটু পর ছড়ার পানি এত কমে গেল, এগোনো মুশকিল। মাঝি বলল, নৌকা থেকে নেমে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই আমরা ঝুলন্ত সেতুতে পৌঁছে যাব। অতএব, তাকে আর নৌকা রেখে আমরা হাঁটা ধরলাম। পাহাড়-জঙ্গলে গেলে ওয়াফিকার তিন ভয় কেঁচো, জোঁক আর সাপ। এখানে ওর মনে পড়ল জোঁকের কথা। ঝোপঝাড় ডিঙিয়ে যাওয়ার সময় তাই চেহারা ফ্যাকাশে তার। শেষ পর্যন্ত মিনিট দশেক হাঁটতেই পৌঁছে গেলাম চা-বাগানের রাজ্যে। মাঝখানে সেই ঝুলন্ত সেতু।
চারপাশে চা-বাগানের মাঝে একমাত্র কৃত্রিম এক কাঠামো এই ঝুলন্ত সেতু। তবে কীভাবে যেন বাগান আর প্রকৃতির অংশ হয়ে গেছে সেতুটি। যদ্দুর জানা যায়, ইংরেজ আমলে ১৯২৫ সালে এই সেতু বানানো হয় লোভাছড়ায় যাতায়াতের জন্য। অর্থাৎ, এটি প্রায় শত বছরের পুরোনো। এখন সেতুটিতে মরচে পড়ে গেছে, এখানে-সেখানে ভাঙা। আমরা এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। সেতুতে উঠে দেখলাম চারপাশের পাহাড় আর চা-বাগান রাজ্যের আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য।
লোভাছড়া নদী আর চা-বাগান
এদিক দিয়ে বাংলোয় গেলে বেশ সময় লাগব। পথও চেনা নেই। আমাদের মাঝিও অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা সেতু দর্শন শেষে ফিরে গেলাম নৌকায়। স্রোতের অনুকূলে থাকায় এবার আর ঝামেলা হলো না। দ্রুতই পৌঁছে গেলাম লোভাছড়া নদীতে। তারপর একেবারে চা-বাগানের ঘাটে। এখানে নদী আরও সুন্দর। স্বচ্ছ জলে পাথরের সংখ্যা আরও বেশি। মনে হচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়কে হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারব। লোভাছড়া নদী এঁকেবেঁকে পাহাড়রাজ্যের ভেতর দিয়ে হারিয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে।
আরও কিছু পর্যটক এসেছেন নৌকায় চেপে। আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। আমরাও নেমে পড়লাম নৌকা থেকে। একটু হাঁটতেই চলে এলাম চা-বাগানের রাজ্যে। এনায়েত মাওলার লোভাছড়া চা-বাগান। দুই পাশে চা-বাগান, একটু দূরে লোভাছড়া নদী, আরও দূরে পাহাড়রাজ্য—সব মিলিয়ে আমি যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
চা-বাগানের বাংলো আর ফারগুসন সাহেব
এখন চা-বাগানের দেখাশোনা করছেন ফারগুসন সাহেবের আত্মীয়রাই। ওই পরিবারের সদস্য ইউসফু ভাই আমার এক সহকর্মীর স্বামীর বন্ধু। অতএব, চা-বাগানে ঢোকার অনুমতি পেতে বেগ পেতে হলো না। গেট পেরিয়ে চা-বাগানের ভেতর দিয়ে কিছুটা এগোতেই একটা টিলা। চড়াই বেয়ে উঠতে একটা বড় সমতল জায়গা। আর সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ওটা। এর কথাও শুনেছিলাম। লোভাছড়া চা-বাগানের বাংলোগুলোর একটি। তবে এর ভিন্নতা চেহারা আর নির্মাণ উপকরণে। বেশ অনেকটুকু জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলোটার মূল আকর্ষণ এর বিশাল শণের ছাউনিটা। শণের চালার এমন বিশাল বাংলো দেশে আর কোথাও আছে কি না, আমার জানা নেই।
অনেক গল্প
বাংলোয় ঢুকে গল্প হলো ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে। জানালেন, জেমস আর্থার ফারগুসন সাহেব ছিলেন তাঁর নানির বাবা। ফারগুসন সাহেব এদেশীয় নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন। বাগানটা অনেক দিন বন্ধ ছিল। পরে আবার চালু হয়। এখন উৎপাদনও শুরু করেছেন তাঁরা। ঘুরিয়ে দেখালেন বাংলোটা। জানালেন, তাঁর নানি জুন ফারগুসন ছিলেন এই চা-বাগানের ম্যানেজার। জানলাম মেলা মায়া হরিণ, বুনো শূকর আর বনমোরগ আছে তাঁদের চা-বাগানের এলাকায়। মাঝে মাঝে দেখা মেলে শজারু আর বনরুইয়ের। এগুলোর জন্য রীতিমতো সংরক্ষিত এলাকা এই চা-বাগান। এখানে কেউ বন্যপ্রাণী শিকার করে না। বছর দশ-বারো আগে একটা কালো চিতা ধরা পড়ার গল্পও বললেন। অবশ্য ওটাকে বাঁচানো যায়নি। তখনই মনে পড়ল কাছাকাছি সময়ে এই এলাকায় কালো সোনালি বিড়াল ধরা পড়ার কথা শুনেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মুনতাসীর আকাশ ভাইয়ের কাছ থেকে। হতে পারে ইউসুফ ভাই যে কালো চিতার কথা বলেছেন, সেটা সোনালি বিড়ালের কালো রূপভেদ। সাধারণের চোখে এই দুটোকে আলাদা করা কঠিন। তারপর তাঁদের বিশাল ঘোড়াগুলো দেখালেন। ঢাকার অস্থিচর্মসার ঘোড়া দেখে অভ্যস্ত ওয়াফিকা চকচকে চামড়ার বিশাল ঘোড়াগুলো দেখে তো মহাখুশি।
অভিমানী চিতা বাঘ
লোভাছড়ার জল কেটে ফিরছে আমাদের নৌকা। তবে আশ্চর্য সুন্দর নদী কিংবা সবুজ পাহাড়—কোনোটিতেই মনোযোগ নেই আমার। মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপের শেষ কথাগুলো। একসময় নাকি বাংলোর হাতা থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যেত চিতা বাঘেরা। আর এদিকের পাহাড়ে এলেই চিতারা জানান দিত তাদের করাতচেরা ডাকে। তবে বছর চার-পাঁচ হলো বাংলোর চৌহদ্দিতে দেখা মেলে না হলুদে কালো ফোঁটার আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীদের। সীমান্তের ওপাশে দেওয়া কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আর চিতা বাঘেরা এই রাজ্যে আসতে পারে না? নাকি খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় পেরিয়ে সগোত্রীয়দের এদিকে এসে আর ফিরে না যেতে দেখেই অভিমানে লোভাছড়ার বন-পাহাড়ে বেড়াতে আসা বাদ দিয়েছে প্রিয় চিতা বাঘেরা? মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল আর আকাশপথ—তিনভাবেই যেতে পারবেন সিলেটে। তারপর শহরের কদমতলী থেকে বাসে চেপে কানাইঘাটে চলে যাবেন। সিলেট শহরের ধোপাদীঘির পাড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপেও যেতে পারবেন কানাইঘাটে। সেখান থেকে লোভাছড়ায় আসা-যাওয়ার ভাড়া বারো শ থেকে দেড় হাজার টাকা। লোভাছড়া বা কানাইঘাটে থাকার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় থাকতে হবে সিলেটের কোনো হোটেলে।
ইশতিয়াক হাসান

লোভাছড়ায় যাওয়ার ইচ্ছাটা মনে পুষে রেখেছিলাম অন্তত এক যুগ। তখন এনায়েত মাওলার বই পড়ে জেনেছিলাম পাহাড়-অরণ্য, বন্যপ্রাণী, চা-বাগান আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর এই মায়াবী রাজ্যের কথা। তবে যাওয়ার সুযোগ মিলল গত বছর, অর্থাৎ ২০২২-এর মে মাসে।
প্রথমে কানাইঘাট
সিলেটে পৌঁছেছিলাম রাত আড়াইটায়। বাস যে এভাবে গোটা পথটা উড়িয়ে আনবে, তা কে জানত! বিপদ আর কাকে বলে। সঙ্গে স্ত্রী পুনম আর মেয়ে ওয়াফিকা আছে। এই রাতে কোথায় যাই? অতএব, রাতের বাকি সময়টা কোনোমতে কাটালাম বাস কাউন্টারের পাশের এক হোটেলে।
সকাল ৮টায় কানাইঘাটের বাস ধরলাম কদমতলী বাজার থেকে। লোভাছড়া পড়েছে এই উপজেলায়। ঈদের পরপর হওয়ায় শহরে মানুষ কম। সকাল হওয়ায় আরও সুনসান। তাই কোনো রেস্তোরাঁ খোলা পাইনি। খালি পেটেই স্ত্রী-কন্যা নিয়ে উঠতে হয়েছে।
মোটামুটি সোয়া ঘণ্টার পথ কানাইঘাট বাজার। বাজারে পৌঁছার আগেই একটা দৃশ্য দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। হাতের বাঁয়ে বিশাল পাহাড় আমাদের সঙ্গী হয়েছে। বহু দূরে ওই পাহাড়, তার পরও মনে হচ্ছিল যেন হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়।
আমরা ধরলাম জলের পথ
লোভাছড়া যাওয়া যায় দুইভাবে—একটি হলো নদী ধরে, অপরটি সড়কপথে। তবে লোভাছড়ায় যাওয়ার রাস্তাটার অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়, জানা ছিল আগেই। তাই বাজারে হালকা-পাতলা নাশতা সেরে সুরমা নদীর ঘাটে চলে এলাম। আমাদের লোভাছড়া ঘুরিয়ে আনার জন্য বারো শ টাকায় একটা নৌকা ভাড়া করলাম।
জাল দিয়ে বাঘ ধরা
সুরমার জল কেটে এগোচ্ছে আমাদের নৌকা। দূরে পাওয়া যাচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের আভাস। এর মধ্যে আলাপ জমালাম মাঝির সঙ্গে। বিষয়বস্তু প্রিয় বন্যপ্রাণী। কানাইঘাটের নাম শুনলেই আমার মাথায় প্রথম যে বিষয়টা এল—সীমান্ত পেরিয়ে আসা চিতা বাঘ আর জাল দিয়ে তাদের ধরার গল্প। মাঝি জানাল, বিশেষ করে শীতের সময় ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসে চিতা বাঘ। একবার এপারে এলে অবশ্য রেহাই নেই। নদীতে মাছ ধরার কারণে এখানকার প্রতি বাড়িতেই থাকে নিদেনপক্ষে একটি-দুটি জাল। চিতা বাঘটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে জাল দিয়ে ধরে ফেলতে কোনো সমস্যা হয়নি। একবার জালে আটকালে হয় মারা পড়ে, না হয় স্থান হয় চিড়িয়াখানায়। অবশ্য গত কয়েক বছর চিতা বাঘ আসার খবর মেলেনি। পাহাড় ডিঙিয়ে আসা চিতাদের কথা ভেবে বুকটা কেমন হু হু করে উঠল।
তিন নদী এক হলো যেখানে
আমাদের নৌকা ইঞ্জিনের শক্তিতে চলছে দ্রুত। মাঝে মাঝে ওদিক থেকে নৌকা আসছে, এগুলো অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দায় বোঝাই। রোদের কারণে কেউ কেউ মাথায় ছাতা দিয়ে রেখেছে। ছোট ছোট নৌকাও আছে। এগুলোতে একজন বা দুজন মানুষ। জেলেদের নৌকা। নদীতে মাছ আছে বেশ। জেলেদের নৌকা আর বিভিন্ন জায়গায় ফেলা জাল দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না। দূরের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় যতই কাছে আসছে, আমার আগ্রহ জলের জীবন থেকে সেদিকে বেশি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
এক জায়গায় এসে হঠাৎ অনেক চওড়া হয়ে গেল নদী। অবশ্য একটু খেয়াল করতেই বুঝলাম এখানে তিন নদী এসে মিশেছে। আমরা এসেছি সুরমা ধরে। আর মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানলাম, বাকি দুটি হলো বরাক আর লোভাছড়া।
আশ্চর্য সুন্দর নদী লোভাছড়া
আমাদের নৌকা এখন চলেছে লোভাছড়া ধরে। নাম লোভাছড়া হলেও এটি আদপে একটি নদী। নদীর জল আশ্চর্য স্বচ্ছ। তলার পাথর দেখা যায়। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় এখন অনেক কাছে। সীমান্তের ওই পারের পাহাড়েই জন্ম এই নদীর। তবে নদী ধরে আরও এগোনোর আগেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলো আমাদের।
লোভাছড়ায় নদীর পাশাপাশি আমাদের প্রধান দুই গন্তব্য এখানে ব্রিটিশ আমলে বানানো ঝুলন্ত সেতু আর লোভাছড়ার চা-বাগান। মাঝি জানাল, চা-বাগানের ভেতর দিয়ে ওই ঝুলন্ত সেতুতে যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তার চেয়ে সে বাঁয়ের ছড়াটা ধরে ওই সেতুর কাছে পৌঁছাতে পারে। বাঁয়ে তাকিয়ে দেখলাম ছোট্ট এক ছড়া ঢুকে গেছে ভেতরে। ছড়ায় নৌকাভ্রমণের লোভে রাজি হয়ে গেলাম প্রস্তাবে।
এনায়েত মাওলার ট্রেইল ধরে
মনে আছে, লেখার শুরুতে বলেছিলাম এনায়েত মাওলার বই পড়ে এক যুগ আগেই জেনেছিলাম লোভাছড়ার কথা? মাঝি ছোট্ট, সরু ছড়ায় নৌকাটা ঢোকাতে থাকুক, এই ফাঁকে এনায়েত মাওলার বিষয়টা খোলাসা করা যাক। বাংলাদেশের সিলেট আর পার্বত্য অঞ্চলের পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর খোঁজ-খবর পেতে হলে পড়তে হবে এনায়েত মাওলার লেখা ‘যখন শিকরি ছিলাম’ বইটি। এতেই জানতে পারি নুনাছড়া আর লোভাছড়া চা-বাগান, স্কটিশ চা-বাগানের মালিক ফারগুসন সাহেব আর অদ্ভুত সুন্দর এক নদী লোভাছড়ার কথা। এক বন্ধুসহ এখানে এসেছিলেন এনায়েত মাওলা, ৭০ বছর আগে, সেই ১৯৫১-৫২ সালের দিকে। তখন এদিককার জঙ্গল চষে বেড়িয়েছিলেন। সীমান্তের এপাড়-ওপার বাদ রাখেননি কিছুই। বন্ধু শিকার করেছিলেন বিশাল এক সম্বার হরিণ। আর এনায়েত মাওলা, আস্ত এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
ছড়া ধরে চলা
গত কয়েক দিন বৃষ্টি হয়নি। তাই ছড়ায় পানি একটু কম। তারপর আবার একটু পর পর কড়া মোচর নিয়েছে ছড়াটি। তাই নৌযাত্রাটি হলো রীতিমতো রোমাঞ্চকর। হঠাৎ হঠাৎ ছড়ার মাঝ বরাবর নৌকা দাঁড় করিয়ে রাখা। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। সামনে, ডানে সবুজ ছোট টিলা আর পাহাড়ের রাজ্য। একটু পরে আরেক বাধা ছড়াপথে। কিনারে কাদাময় পানিতে মহানন্দে খেলা করছে একদল মহিষ। আমাদের দেখে নাক ফুলাল। তবে আক্রমণের কোনো অভিসন্ধি চোখে পড়ল না। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে এগোলাম আমরা। সামনে একের পর এক পাহাড় দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দেখলাম ছড়ার পাড়ে কাদায় শরীরের রং বদলে দিয়ে মহিষের আরও বড় একটা দল চড়ে বেড়াচ্ছে।
ব্রিটিশ আমলের এক ঝুলন্ত সেতু
একটু পর ছড়ার পানি এত কমে গেল, এগোনো মুশকিল। মাঝি বলল, নৌকা থেকে নেমে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই আমরা ঝুলন্ত সেতুতে পৌঁছে যাব। অতএব, তাকে আর নৌকা রেখে আমরা হাঁটা ধরলাম। পাহাড়-জঙ্গলে গেলে ওয়াফিকার তিন ভয় কেঁচো, জোঁক আর সাপ। এখানে ওর মনে পড়ল জোঁকের কথা। ঝোপঝাড় ডিঙিয়ে যাওয়ার সময় তাই চেহারা ফ্যাকাশে তার। শেষ পর্যন্ত মিনিট দশেক হাঁটতেই পৌঁছে গেলাম চা-বাগানের রাজ্যে। মাঝখানে সেই ঝুলন্ত সেতু।
চারপাশে চা-বাগানের মাঝে একমাত্র কৃত্রিম এক কাঠামো এই ঝুলন্ত সেতু। তবে কীভাবে যেন বাগান আর প্রকৃতির অংশ হয়ে গেছে সেতুটি। যদ্দুর জানা যায়, ইংরেজ আমলে ১৯২৫ সালে এই সেতু বানানো হয় লোভাছড়ায় যাতায়াতের জন্য। অর্থাৎ, এটি প্রায় শত বছরের পুরোনো। এখন সেতুটিতে মরচে পড়ে গেছে, এখানে-সেখানে ভাঙা। আমরা এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। সেতুতে উঠে দেখলাম চারপাশের পাহাড় আর চা-বাগান রাজ্যের আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য।
লোভাছড়া নদী আর চা-বাগান
এদিক দিয়ে বাংলোয় গেলে বেশ সময় লাগব। পথও চেনা নেই। আমাদের মাঝিও অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা সেতু দর্শন শেষে ফিরে গেলাম নৌকায়। স্রোতের অনুকূলে থাকায় এবার আর ঝামেলা হলো না। দ্রুতই পৌঁছে গেলাম লোভাছড়া নদীতে। তারপর একেবারে চা-বাগানের ঘাটে। এখানে নদী আরও সুন্দর। স্বচ্ছ জলে পাথরের সংখ্যা আরও বেশি। মনে হচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়কে হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারব। লোভাছড়া নদী এঁকেবেঁকে পাহাড়রাজ্যের ভেতর দিয়ে হারিয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে।
আরও কিছু পর্যটক এসেছেন নৌকায় চেপে। আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। আমরাও নেমে পড়লাম নৌকা থেকে। একটু হাঁটতেই চলে এলাম চা-বাগানের রাজ্যে। এনায়েত মাওলার লোভাছড়া চা-বাগান। দুই পাশে চা-বাগান, একটু দূরে লোভাছড়া নদী, আরও দূরে পাহাড়রাজ্য—সব মিলিয়ে আমি যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
চা-বাগানের বাংলো আর ফারগুসন সাহেব
এখন চা-বাগানের দেখাশোনা করছেন ফারগুসন সাহেবের আত্মীয়রাই। ওই পরিবারের সদস্য ইউসফু ভাই আমার এক সহকর্মীর স্বামীর বন্ধু। অতএব, চা-বাগানে ঢোকার অনুমতি পেতে বেগ পেতে হলো না। গেট পেরিয়ে চা-বাগানের ভেতর দিয়ে কিছুটা এগোতেই একটা টিলা। চড়াই বেয়ে উঠতে একটা বড় সমতল জায়গা। আর সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ওটা। এর কথাও শুনেছিলাম। লোভাছড়া চা-বাগানের বাংলোগুলোর একটি। তবে এর ভিন্নতা চেহারা আর নির্মাণ উপকরণে। বেশ অনেকটুকু জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলোটার মূল আকর্ষণ এর বিশাল শণের ছাউনিটা। শণের চালার এমন বিশাল বাংলো দেশে আর কোথাও আছে কি না, আমার জানা নেই।
অনেক গল্প
বাংলোয় ঢুকে গল্প হলো ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে। জানালেন, জেমস আর্থার ফারগুসন সাহেব ছিলেন তাঁর নানির বাবা। ফারগুসন সাহেব এদেশীয় নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন। বাগানটা অনেক দিন বন্ধ ছিল। পরে আবার চালু হয়। এখন উৎপাদনও শুরু করেছেন তাঁরা। ঘুরিয়ে দেখালেন বাংলোটা। জানালেন, তাঁর নানি জুন ফারগুসন ছিলেন এই চা-বাগানের ম্যানেজার। জানলাম মেলা মায়া হরিণ, বুনো শূকর আর বনমোরগ আছে তাঁদের চা-বাগানের এলাকায়। মাঝে মাঝে দেখা মেলে শজারু আর বনরুইয়ের। এগুলোর জন্য রীতিমতো সংরক্ষিত এলাকা এই চা-বাগান। এখানে কেউ বন্যপ্রাণী শিকার করে না। বছর দশ-বারো আগে একটা কালো চিতা ধরা পড়ার গল্পও বললেন। অবশ্য ওটাকে বাঁচানো যায়নি। তখনই মনে পড়ল কাছাকাছি সময়ে এই এলাকায় কালো সোনালি বিড়াল ধরা পড়ার কথা শুনেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মুনতাসীর আকাশ ভাইয়ের কাছ থেকে। হতে পারে ইউসুফ ভাই যে কালো চিতার কথা বলেছেন, সেটা সোনালি বিড়ালের কালো রূপভেদ। সাধারণের চোখে এই দুটোকে আলাদা করা কঠিন। তারপর তাঁদের বিশাল ঘোড়াগুলো দেখালেন। ঢাকার অস্থিচর্মসার ঘোড়া দেখে অভ্যস্ত ওয়াফিকা চকচকে চামড়ার বিশাল ঘোড়াগুলো দেখে তো মহাখুশি।
অভিমানী চিতা বাঘ
লোভাছড়ার জল কেটে ফিরছে আমাদের নৌকা। তবে আশ্চর্য সুন্দর নদী কিংবা সবুজ পাহাড়—কোনোটিতেই মনোযোগ নেই আমার। মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপের শেষ কথাগুলো। একসময় নাকি বাংলোর হাতা থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যেত চিতা বাঘেরা। আর এদিকের পাহাড়ে এলেই চিতারা জানান দিত তাদের করাতচেরা ডাকে। তবে বছর চার-পাঁচ হলো বাংলোর চৌহদ্দিতে দেখা মেলে না হলুদে কালো ফোঁটার আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীদের। সীমান্তের ওপাশে দেওয়া কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আর চিতা বাঘেরা এই রাজ্যে আসতে পারে না? নাকি খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় পেরিয়ে সগোত্রীয়দের এদিকে এসে আর ফিরে না যেতে দেখেই অভিমানে লোভাছড়ার বন-পাহাড়ে বেড়াতে আসা বাদ দিয়েছে প্রিয় চিতা বাঘেরা? মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল আর আকাশপথ—তিনভাবেই যেতে পারবেন সিলেটে। তারপর শহরের কদমতলী থেকে বাসে চেপে কানাইঘাটে চলে যাবেন। সিলেট শহরের ধোপাদীঘির পাড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপেও যেতে পারবেন কানাইঘাটে। সেখান থেকে লোভাছড়ায় আসা-যাওয়ার ভাড়া বারো শ থেকে দেড় হাজার টাকা। লোভাছড়া বা কানাইঘাটে থাকার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় থাকতে হবে সিলেটের কোনো হোটেলে।

লোভাছড়ায় যাওয়ার ইচ্ছাটা মনে পুষে রেখেছিলাম অন্তত এক যুগ। তখন এনায়েত মাওলার বই পড়ে জেনেছিলাম পাহাড়-অরণ্য, বন্যপ্রাণী, চা-বাগান আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর এই মায়াবী রাজ্যের কথা। তবে যাওয়ার সুযোগ মিলল গত বছর, অর্থাৎ ২০২২-এর মে মাসে।
প্রথমে কানাইঘাট
সিলেটে পৌঁছেছিলাম রাত আড়াইটায়। বাস যে এভাবে গোটা পথটা উড়িয়ে আনবে, তা কে জানত! বিপদ আর কাকে বলে। সঙ্গে স্ত্রী পুনম আর মেয়ে ওয়াফিকা আছে। এই রাতে কোথায় যাই? অতএব, রাতের বাকি সময়টা কোনোমতে কাটালাম বাস কাউন্টারের পাশের এক হোটেলে।
সকাল ৮টায় কানাইঘাটের বাস ধরলাম কদমতলী বাজার থেকে। লোভাছড়া পড়েছে এই উপজেলায়। ঈদের পরপর হওয়ায় শহরে মানুষ কম। সকাল হওয়ায় আরও সুনসান। তাই কোনো রেস্তোরাঁ খোলা পাইনি। খালি পেটেই স্ত্রী-কন্যা নিয়ে উঠতে হয়েছে।
মোটামুটি সোয়া ঘণ্টার পথ কানাইঘাট বাজার। বাজারে পৌঁছার আগেই একটা দৃশ্য দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। হাতের বাঁয়ে বিশাল পাহাড় আমাদের সঙ্গী হয়েছে। বহু দূরে ওই পাহাড়, তার পরও মনে হচ্ছিল যেন হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়।
আমরা ধরলাম জলের পথ
লোভাছড়া যাওয়া যায় দুইভাবে—একটি হলো নদী ধরে, অপরটি সড়কপথে। তবে লোভাছড়ায় যাওয়ার রাস্তাটার অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়, জানা ছিল আগেই। তাই বাজারে হালকা-পাতলা নাশতা সেরে সুরমা নদীর ঘাটে চলে এলাম। আমাদের লোভাছড়া ঘুরিয়ে আনার জন্য বারো শ টাকায় একটা নৌকা ভাড়া করলাম।
জাল দিয়ে বাঘ ধরা
সুরমার জল কেটে এগোচ্ছে আমাদের নৌকা। দূরে পাওয়া যাচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের আভাস। এর মধ্যে আলাপ জমালাম মাঝির সঙ্গে। বিষয়বস্তু প্রিয় বন্যপ্রাণী। কানাইঘাটের নাম শুনলেই আমার মাথায় প্রথম যে বিষয়টা এল—সীমান্ত পেরিয়ে আসা চিতা বাঘ আর জাল দিয়ে তাদের ধরার গল্প। মাঝি জানাল, বিশেষ করে শীতের সময় ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসে চিতা বাঘ। একবার এপারে এলে অবশ্য রেহাই নেই। নদীতে মাছ ধরার কারণে এখানকার প্রতি বাড়িতেই থাকে নিদেনপক্ষে একটি-দুটি জাল। চিতা বাঘটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে জাল দিয়ে ধরে ফেলতে কোনো সমস্যা হয়নি। একবার জালে আটকালে হয় মারা পড়ে, না হয় স্থান হয় চিড়িয়াখানায়। অবশ্য গত কয়েক বছর চিতা বাঘ আসার খবর মেলেনি। পাহাড় ডিঙিয়ে আসা চিতাদের কথা ভেবে বুকটা কেমন হু হু করে উঠল।
তিন নদী এক হলো যেখানে
আমাদের নৌকা ইঞ্জিনের শক্তিতে চলছে দ্রুত। মাঝে মাঝে ওদিক থেকে নৌকা আসছে, এগুলো অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দায় বোঝাই। রোদের কারণে কেউ কেউ মাথায় ছাতা দিয়ে রেখেছে। ছোট ছোট নৌকাও আছে। এগুলোতে একজন বা দুজন মানুষ। জেলেদের নৌকা। নদীতে মাছ আছে বেশ। জেলেদের নৌকা আর বিভিন্ন জায়গায় ফেলা জাল দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না। দূরের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় যতই কাছে আসছে, আমার আগ্রহ জলের জীবন থেকে সেদিকে বেশি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
এক জায়গায় এসে হঠাৎ অনেক চওড়া হয়ে গেল নদী। অবশ্য একটু খেয়াল করতেই বুঝলাম এখানে তিন নদী এসে মিশেছে। আমরা এসেছি সুরমা ধরে। আর মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানলাম, বাকি দুটি হলো বরাক আর লোভাছড়া।
আশ্চর্য সুন্দর নদী লোভাছড়া
আমাদের নৌকা এখন চলেছে লোভাছড়া ধরে। নাম লোভাছড়া হলেও এটি আদপে একটি নদী। নদীর জল আশ্চর্য স্বচ্ছ। তলার পাথর দেখা যায়। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় এখন অনেক কাছে। সীমান্তের ওই পারের পাহাড়েই জন্ম এই নদীর। তবে নদী ধরে আরও এগোনোর আগেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলো আমাদের।
লোভাছড়ায় নদীর পাশাপাশি আমাদের প্রধান দুই গন্তব্য এখানে ব্রিটিশ আমলে বানানো ঝুলন্ত সেতু আর লোভাছড়ার চা-বাগান। মাঝি জানাল, চা-বাগানের ভেতর দিয়ে ওই ঝুলন্ত সেতুতে যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তার চেয়ে সে বাঁয়ের ছড়াটা ধরে ওই সেতুর কাছে পৌঁছাতে পারে। বাঁয়ে তাকিয়ে দেখলাম ছোট্ট এক ছড়া ঢুকে গেছে ভেতরে। ছড়ায় নৌকাভ্রমণের লোভে রাজি হয়ে গেলাম প্রস্তাবে।
এনায়েত মাওলার ট্রেইল ধরে
মনে আছে, লেখার শুরুতে বলেছিলাম এনায়েত মাওলার বই পড়ে এক যুগ আগেই জেনেছিলাম লোভাছড়ার কথা? মাঝি ছোট্ট, সরু ছড়ায় নৌকাটা ঢোকাতে থাকুক, এই ফাঁকে এনায়েত মাওলার বিষয়টা খোলাসা করা যাক। বাংলাদেশের সিলেট আর পার্বত্য অঞ্চলের পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর খোঁজ-খবর পেতে হলে পড়তে হবে এনায়েত মাওলার লেখা ‘যখন শিকরি ছিলাম’ বইটি। এতেই জানতে পারি নুনাছড়া আর লোভাছড়া চা-বাগান, স্কটিশ চা-বাগানের মালিক ফারগুসন সাহেব আর অদ্ভুত সুন্দর এক নদী লোভাছড়ার কথা। এক বন্ধুসহ এখানে এসেছিলেন এনায়েত মাওলা, ৭০ বছর আগে, সেই ১৯৫১-৫২ সালের দিকে। তখন এদিককার জঙ্গল চষে বেড়িয়েছিলেন। সীমান্তের এপাড়-ওপার বাদ রাখেননি কিছুই। বন্ধু শিকার করেছিলেন বিশাল এক সম্বার হরিণ। আর এনায়েত মাওলা, আস্ত এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
ছড়া ধরে চলা
গত কয়েক দিন বৃষ্টি হয়নি। তাই ছড়ায় পানি একটু কম। তারপর আবার একটু পর পর কড়া মোচর নিয়েছে ছড়াটি। তাই নৌযাত্রাটি হলো রীতিমতো রোমাঞ্চকর। হঠাৎ হঠাৎ ছড়ার মাঝ বরাবর নৌকা দাঁড় করিয়ে রাখা। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। সামনে, ডানে সবুজ ছোট টিলা আর পাহাড়ের রাজ্য। একটু পরে আরেক বাধা ছড়াপথে। কিনারে কাদাময় পানিতে মহানন্দে খেলা করছে একদল মহিষ। আমাদের দেখে নাক ফুলাল। তবে আক্রমণের কোনো অভিসন্ধি চোখে পড়ল না। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে এগোলাম আমরা। সামনে একের পর এক পাহাড় দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দেখলাম ছড়ার পাড়ে কাদায় শরীরের রং বদলে দিয়ে মহিষের আরও বড় একটা দল চড়ে বেড়াচ্ছে।
ব্রিটিশ আমলের এক ঝুলন্ত সেতু
একটু পর ছড়ার পানি এত কমে গেল, এগোনো মুশকিল। মাঝি বলল, নৌকা থেকে নেমে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই আমরা ঝুলন্ত সেতুতে পৌঁছে যাব। অতএব, তাকে আর নৌকা রেখে আমরা হাঁটা ধরলাম। পাহাড়-জঙ্গলে গেলে ওয়াফিকার তিন ভয় কেঁচো, জোঁক আর সাপ। এখানে ওর মনে পড়ল জোঁকের কথা। ঝোপঝাড় ডিঙিয়ে যাওয়ার সময় তাই চেহারা ফ্যাকাশে তার। শেষ পর্যন্ত মিনিট দশেক হাঁটতেই পৌঁছে গেলাম চা-বাগানের রাজ্যে। মাঝখানে সেই ঝুলন্ত সেতু।
চারপাশে চা-বাগানের মাঝে একমাত্র কৃত্রিম এক কাঠামো এই ঝুলন্ত সেতু। তবে কীভাবে যেন বাগান আর প্রকৃতির অংশ হয়ে গেছে সেতুটি। যদ্দুর জানা যায়, ইংরেজ আমলে ১৯২৫ সালে এই সেতু বানানো হয় লোভাছড়ায় যাতায়াতের জন্য। অর্থাৎ, এটি প্রায় শত বছরের পুরোনো। এখন সেতুটিতে মরচে পড়ে গেছে, এখানে-সেখানে ভাঙা। আমরা এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। সেতুতে উঠে দেখলাম চারপাশের পাহাড় আর চা-বাগান রাজ্যের আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য।
লোভাছড়া নদী আর চা-বাগান
এদিক দিয়ে বাংলোয় গেলে বেশ সময় লাগব। পথও চেনা নেই। আমাদের মাঝিও অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা সেতু দর্শন শেষে ফিরে গেলাম নৌকায়। স্রোতের অনুকূলে থাকায় এবার আর ঝামেলা হলো না। দ্রুতই পৌঁছে গেলাম লোভাছড়া নদীতে। তারপর একেবারে চা-বাগানের ঘাটে। এখানে নদী আরও সুন্দর। স্বচ্ছ জলে পাথরের সংখ্যা আরও বেশি। মনে হচ্ছে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়কে হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারব। লোভাছড়া নদী এঁকেবেঁকে পাহাড়রাজ্যের ভেতর দিয়ে হারিয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে।
আরও কিছু পর্যটক এসেছেন নৌকায় চেপে। আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। আমরাও নেমে পড়লাম নৌকা থেকে। একটু হাঁটতেই চলে এলাম চা-বাগানের রাজ্যে। এনায়েত মাওলার লোভাছড়া চা-বাগান। দুই পাশে চা-বাগান, একটু দূরে লোভাছড়া নদী, আরও দূরে পাহাড়রাজ্য—সব মিলিয়ে আমি যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
চা-বাগানের বাংলো আর ফারগুসন সাহেব
এখন চা-বাগানের দেখাশোনা করছেন ফারগুসন সাহেবের আত্মীয়রাই। ওই পরিবারের সদস্য ইউসফু ভাই আমার এক সহকর্মীর স্বামীর বন্ধু। অতএব, চা-বাগানে ঢোকার অনুমতি পেতে বেগ পেতে হলো না। গেট পেরিয়ে চা-বাগানের ভেতর দিয়ে কিছুটা এগোতেই একটা টিলা। চড়াই বেয়ে উঠতে একটা বড় সমতল জায়গা। আর সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ওটা। এর কথাও শুনেছিলাম। লোভাছড়া চা-বাগানের বাংলোগুলোর একটি। তবে এর ভিন্নতা চেহারা আর নির্মাণ উপকরণে। বেশ অনেকটুকু জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলোটার মূল আকর্ষণ এর বিশাল শণের ছাউনিটা। শণের চালার এমন বিশাল বাংলো দেশে আর কোথাও আছে কি না, আমার জানা নেই।
অনেক গল্প
বাংলোয় ঢুকে গল্প হলো ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে। জানালেন, জেমস আর্থার ফারগুসন সাহেব ছিলেন তাঁর নানির বাবা। ফারগুসন সাহেব এদেশীয় নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন। বাগানটা অনেক দিন বন্ধ ছিল। পরে আবার চালু হয়। এখন উৎপাদনও শুরু করেছেন তাঁরা। ঘুরিয়ে দেখালেন বাংলোটা। জানালেন, তাঁর নানি জুন ফারগুসন ছিলেন এই চা-বাগানের ম্যানেজার। জানলাম মেলা মায়া হরিণ, বুনো শূকর আর বনমোরগ আছে তাঁদের চা-বাগানের এলাকায়। মাঝে মাঝে দেখা মেলে শজারু আর বনরুইয়ের। এগুলোর জন্য রীতিমতো সংরক্ষিত এলাকা এই চা-বাগান। এখানে কেউ বন্যপ্রাণী শিকার করে না। বছর দশ-বারো আগে একটা কালো চিতা ধরা পড়ার গল্পও বললেন। অবশ্য ওটাকে বাঁচানো যায়নি। তখনই মনে পড়ল কাছাকাছি সময়ে এই এলাকায় কালো সোনালি বিড়াল ধরা পড়ার কথা শুনেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মুনতাসীর আকাশ ভাইয়ের কাছ থেকে। হতে পারে ইউসুফ ভাই যে কালো চিতার কথা বলেছেন, সেটা সোনালি বিড়ালের কালো রূপভেদ। সাধারণের চোখে এই দুটোকে আলাদা করা কঠিন। তারপর তাঁদের বিশাল ঘোড়াগুলো দেখালেন। ঢাকার অস্থিচর্মসার ঘোড়া দেখে অভ্যস্ত ওয়াফিকা চকচকে চামড়ার বিশাল ঘোড়াগুলো দেখে তো মহাখুশি।
অভিমানী চিতা বাঘ
লোভাছড়ার জল কেটে ফিরছে আমাদের নৌকা। তবে আশ্চর্য সুন্দর নদী কিংবা সবুজ পাহাড়—কোনোটিতেই মনোযোগ নেই আমার। মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপের শেষ কথাগুলো। একসময় নাকি বাংলোর হাতা থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যেত চিতা বাঘেরা। আর এদিকের পাহাড়ে এলেই চিতারা জানান দিত তাদের করাতচেরা ডাকে। তবে বছর চার-পাঁচ হলো বাংলোর চৌহদ্দিতে দেখা মেলে না হলুদে কালো ফোঁটার আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীদের। সীমান্তের ওপাশে দেওয়া কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আর চিতা বাঘেরা এই রাজ্যে আসতে পারে না? নাকি খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় পেরিয়ে সগোত্রীয়দের এদিকে এসে আর ফিরে না যেতে দেখেই অভিমানে লোভাছড়ার বন-পাহাড়ে বেড়াতে আসা বাদ দিয়েছে প্রিয় চিতা বাঘেরা? মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল আর আকাশপথ—তিনভাবেই যেতে পারবেন সিলেটে। তারপর শহরের কদমতলী থেকে বাসে চেপে কানাইঘাটে চলে যাবেন। সিলেট শহরের ধোপাদীঘির পাড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপেও যেতে পারবেন কানাইঘাটে। সেখান থেকে লোভাছড়ায় আসা-যাওয়ার ভাড়া বারো শ থেকে দেড় হাজার টাকা। লোভাছড়া বা কানাইঘাটে থাকার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় থাকতে হবে সিলেটের কোনো হোটেলে।

ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম—দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলে জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ জানেন, কোন খাবার রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, খাবার খাওয়ার সময়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ...
৩ ঘণ্টা আগে
জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। স্নিগ্ধ সকাল। মহাসড়কে সূর্যের আভা পড়েছে তির্যকভাবে। আমরা যাচ্ছি সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ভারত সীমান্ত গোয়া ধর্মপাশা উপজেলায় মহিষখোলা গ্রামে। সেখানে ঘুমিয়ে আছেন একাত্তরের বীর শহীদেরা।
৯ ঘণ্টা আগে
ঝরনাপাখি। নামে যার সঙ্গে ঝরনা জড়িয়ে, তার সঙ্গে ঝরনার সম্পর্ক যে নিবিড় হবে, সেটা না বললেও চলে। এই অপার্থিব সুন্দর পাখির বাহারি বাংলা নামের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ—নীলাম্বর জলখঞ্জরী, নীল পানগির্দি, ঝরনাপাখি, নীল কপালিগির্দি, নীলচে লালগির্দি ইত্যাদি।
১০ ঘণ্টা আগে
বছরের শেষের দিকে এসে পর্যটন খাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভারতের পর্যটন প্রসার বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে। দেশটির এই অবস্থায় লাভবান হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিযোগীরা।
১০ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম—দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলে জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ জানেন, কোন খাবার রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, খাবার খাওয়ার সময়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যেখানে শর্করাজাতীয় খাবার বিপাকের জন্য শরীরে যতটুকু ইনসুলিন প্রয়োজন হয়, ততটুকু থাকে না। আপনারা জেনে থাকবেন, ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়—টাইপ-১ ও টাইপ-২। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন একেবারেই থাকে না। তাই রোগ ধরা পড়ার সময় থেকে ইনসুলিন নিতে হয়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন থাকে, কিন্তু ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের জন্য তা কাজ করতে পারে না। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগে শর্করাজাতীয় খাবারের বিপাকে সমস্যা হয়, তাই আমরা চিকিৎসকেরা এ ধরনের খাবার; যেমন চিনি, মিষ্টি, ভাত, মিষ্টি ফল, মধু ইত্যাদি পরিমাণমতো খেতে বলি। ডা. মাজহারুল হক তানিম, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ
কেন খাবারের সময় মেনে চলা জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একই সময়ে নিয়মিত খাবার ও প্রয়োজন অনুযায়ী হালকা নাশতা খেলে রক্তে শর্করা তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে এবং শরীরের শক্তির মাত্রাও বজায় থাকে। বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এবং সেই সব টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করেন।
খাবার বাদ দিলে কী সমস্যা হয়
খাবার না খেলে অনেক সময় পরে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এতে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। আবার নিয়মিত খাবার না খেলে রাতে ঘুমের মধ্যেও রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যাকে বলা হয় রাতের হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এটি বিপজ্জনক হতে পারে; কারণ, ঘুমের মধ্যে অনেক সময় বোঝা যায় না কী হচ্ছে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করা কমে গেলেও কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। একে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া আন অ্যাওয়ারনেস। এটি গাড়ি চালানো বা ব্যায়ামের সময় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
সকালের নাশতা গুরুত্বপূর্ণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সকালের নাশতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর নাশতা দিনের শুরুতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সারা দিন শক্তি ধরে রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে ভালোভাবে খেয়ে দুপুর ও রাতের খাবার তুলনামূলক হালকা রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিনের প্রয়োজনও কমে। অন্যদিকে, নাশতা বাদ দিলে বিকেল ও রাতে রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ পরে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন।
দুপুর ও রাতের খাবার
দুপুর ও রাতের খাবারে প্রতিদিন প্রায় একই পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রাখা ভালো। এতে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খুব দেরিতে রাতের খাবার খাওয়া উচিত নয়। ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময়ে রাতের খাবার খেলে ওজন এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নাশতার প্রয়োজন
সব ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত নাশতার প্রয়োজন হয় না। রক্তে শর্করার মাত্রা ও ক্ষুধার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। তবে ইনসুলিন গ্রহণকারী বা যাঁদের রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হালকা নাশতা উপকারী হতে পারে। রাতে রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে ঘুমের আগে অল্প নাশতা উপকারী হতে পারে।
ব্যায়াম ও খাবারের সময়
খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর হালকা ব্যায়াম করলে রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে; বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। তবে যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ নেন, তাঁদের ব্যায়ামের আগে বা পরে সামান্য খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ব্যায়ামের সময় পেশি বেশি গ্লুকোজ ব্যবহার করে, ফলে রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে। তাই ব্যায়ামের সময় খাবার ও ইনসুলিনের সমন্বয় চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত।
নিজের জন্য সঠিক পরিকল্পনা কীভাবে করবেন
ডায়াবেটিসে খাবারের সময় ও ধরন ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে পরিকল্পনা করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো—
চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে খাবারের সময়সূচি ঠিক করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
সূত্র: হেলথ

ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম—দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলে জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ জানেন, কোন খাবার রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, খাবার খাওয়ার সময়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যেখানে শর্করাজাতীয় খাবার বিপাকের জন্য শরীরে যতটুকু ইনসুলিন প্রয়োজন হয়, ততটুকু থাকে না। আপনারা জেনে থাকবেন, ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়—টাইপ-১ ও টাইপ-২। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন একেবারেই থাকে না। তাই রোগ ধরা পড়ার সময় থেকে ইনসুলিন নিতে হয়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন থাকে, কিন্তু ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের জন্য তা কাজ করতে পারে না। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগে শর্করাজাতীয় খাবারের বিপাকে সমস্যা হয়, তাই আমরা চিকিৎসকেরা এ ধরনের খাবার; যেমন চিনি, মিষ্টি, ভাত, মিষ্টি ফল, মধু ইত্যাদি পরিমাণমতো খেতে বলি। ডা. মাজহারুল হক তানিম, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ
কেন খাবারের সময় মেনে চলা জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একই সময়ে নিয়মিত খাবার ও প্রয়োজন অনুযায়ী হালকা নাশতা খেলে রক্তে শর্করা তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে এবং শরীরের শক্তির মাত্রাও বজায় থাকে। বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এবং সেই সব টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করেন।
খাবার বাদ দিলে কী সমস্যা হয়
খাবার না খেলে অনেক সময় পরে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এতে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। আবার নিয়মিত খাবার না খেলে রাতে ঘুমের মধ্যেও রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যাকে বলা হয় রাতের হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এটি বিপজ্জনক হতে পারে; কারণ, ঘুমের মধ্যে অনেক সময় বোঝা যায় না কী হচ্ছে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করা কমে গেলেও কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। একে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া আন অ্যাওয়ারনেস। এটি গাড়ি চালানো বা ব্যায়ামের সময় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
সকালের নাশতা গুরুত্বপূর্ণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সকালের নাশতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর নাশতা দিনের শুরুতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সারা দিন শক্তি ধরে রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে ভালোভাবে খেয়ে দুপুর ও রাতের খাবার তুলনামূলক হালকা রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিনের প্রয়োজনও কমে। অন্যদিকে, নাশতা বাদ দিলে বিকেল ও রাতে রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ পরে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন।
দুপুর ও রাতের খাবার
দুপুর ও রাতের খাবারে প্রতিদিন প্রায় একই পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রাখা ভালো। এতে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খুব দেরিতে রাতের খাবার খাওয়া উচিত নয়। ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময়ে রাতের খাবার খেলে ওজন এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নাশতার প্রয়োজন
সব ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত নাশতার প্রয়োজন হয় না। রক্তে শর্করার মাত্রা ও ক্ষুধার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। তবে ইনসুলিন গ্রহণকারী বা যাঁদের রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হালকা নাশতা উপকারী হতে পারে। রাতে রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে ঘুমের আগে অল্প নাশতা উপকারী হতে পারে।
ব্যায়াম ও খাবারের সময়
খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর হালকা ব্যায়াম করলে রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে; বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। তবে যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ নেন, তাঁদের ব্যায়ামের আগে বা পরে সামান্য খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ব্যায়ামের সময় পেশি বেশি গ্লুকোজ ব্যবহার করে, ফলে রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে। তাই ব্যায়ামের সময় খাবার ও ইনসুলিনের সমন্বয় চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত।
নিজের জন্য সঠিক পরিকল্পনা কীভাবে করবেন
ডায়াবেটিসে খাবারের সময় ও ধরন ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে পরিকল্পনা করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো—
চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে খাবারের সময়সূচি ঠিক করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
সূত্র: হেলথ

লোভাছড়ায় যাওয়ার ইচ্ছাটা মনে পুষে রেখেছিলাম অন্তত এক যুগ। তখন এনায়েত মাওলার বই পড়ে জেনেছিলাম পাহাড়-অরণ্য, বন্যপ্রাণী, চা-বাগান আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর এই মায়াবী রাজ্যের কথা। তবে যাওয়ার সুযোগ মিলল গত বছর, অর্থাৎ ২০২২-এর মে মাসে। সিলেটের কানাইঘাট বাজারে পৌঁছার আগেই একটা দৃশ্য দেখে মনটা আনন্দে
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। স্নিগ্ধ সকাল। মহাসড়কে সূর্যের আভা পড়েছে তির্যকভাবে। আমরা যাচ্ছি সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ভারত সীমান্ত গোয়া ধর্মপাশা উপজেলায় মহিষখোলা গ্রামে। সেখানে ঘুমিয়ে আছেন একাত্তরের বীর শহীদেরা।
৯ ঘণ্টা আগে
ঝরনাপাখি। নামে যার সঙ্গে ঝরনা জড়িয়ে, তার সঙ্গে ঝরনার সম্পর্ক যে নিবিড় হবে, সেটা না বললেও চলে। এই অপার্থিব সুন্দর পাখির বাহারি বাংলা নামের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ—নীলাম্বর জলখঞ্জরী, নীল পানগির্দি, ঝরনাপাখি, নীল কপালিগির্দি, নীলচে লালগির্দি ইত্যাদি।
১০ ঘণ্টা আগে
বছরের শেষের দিকে এসে পর্যটন খাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভারতের পর্যটন প্রসার বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে। দেশটির এই অবস্থায় লাভবান হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিযোগীরা।
১০ ঘণ্টা আগেসুমন্ত গুপ্ত

জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। স্নিগ্ধ সকাল। মহাসড়কে সূর্যের আভা পড়েছে তির্যকভাবে। আমরা যাচ্ছি সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ভারত সীমান্ত গোয়া ধর্মপাশা উপজেলায় মহিষখোলা গ্রামে। সেখানে ঘুমিয়ে আছেন একাত্তরের বীর শহীদেরা।
প্রকৃতির পালাবদলে শীতকাল এসেছে। তাই প্রকৃতির মাঝে চলেছে ঋতুবরণের পালা। আমরা চলেছি নতুন গন্তব্যে। পাগলা বাজারে এসে নামলাম। ঢুকে পড়লাম দয়াল মিষ্টান্ন ভান্ডারে। গরম-গরম পরোটা আর ভাজি দেওয়া হলো। পেটপূজা শেষ করে আমরা এগিয়ে চললাম গন্তব্যের পানে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসে পৌঁছালাম সুনামগঞ্জ শহরে। সেখান থেকে যেতে হবে তাহিরপুর। প্রায় আড়াই ঘণ্টা যাত্রা শেষে হাজির হলাম সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের রোজ গার্ডেনে। এখানে দুপুরের খাওয়া শেষে আবারও রওনা দিলাম তাহিরপুরের দিকে।
গ্রামীণ পথে চলার মজাই আলাদা। দুই পাশে ধানখেত। মাঝ দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। প্রায়
দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এসে আমরা পৌঁছালাম তাহিরপুর বাজারে। এবার আমাদের পাড়ি দিতে
হবে টাঙ্গুয়ার হাওর। সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। মনে মনে সবাই খুশিই হলাম টাঙ্গুয়ার হাওর দেখা যাবে বলে। বাহন রয়েছে দুই ধরনের—ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর স্পিডবোট। আমরা চেপে বসলাম ইঞ্জিন নৌকায়।
টাঙ্গুয়ার ঢেউয়ের তালে তালে এগিয়ে চলছি। নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবনধারা আমাদের মোহিত করছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে পৌঁছালাম ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর গ্রামে। সেখানে জন্য অপেক্ষা করছিলেন সোহাগ আর মুনিম নামে দুজন। আমরা চেপে বসলাম দুই চাকার বাহনে। এখান থেকে মহিষখোলা গ্রামের দূরত্ব ১০ মিনিট। এই বাইকে করেই সেখানে যেতে হবে। সময়মতো পৌঁছানো গেল মহিষখোলা গ্রামে।
শান্ত নীরব পরিবেশ। ঘাসফড়িং মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। এগিয়ে চললাম মহিষখোলা নদীর পূর্বপাড় ঘেঁষে একখানা প্রায় নিশ্চিহ্ন টিনের ঘরের উদ্দেশে। এর অস্তিত্ব সরেজমিনে দেখেও কল্পনায় তার পূর্ণ রূপ দেখা কল্পনাবিলাসীদের জন্যও হয়তো দুরূহ হবে। তার আশপাশে ৪২ বছর ধরে মানুষের ছোঁয়া পড়েনি, তাই জঙ্গলাকীর্ণ। সেই ঘরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নিতেন। পাকিস্তানি হানাদারদের মাঝেমধ্যে ধরে বন্দী করেও রাখতেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এই অঞ্চল ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সাব-সেক্টর। এর পশ্চিমে গা ঘেঁষে মহিষখোলা নদী, উত্তরে ২০০ গজের মধ্যে ভারত সীমান্তে মেঘালয় পর্বতমালা, পূর্বে সংখ্যাহীন খালবিল এবং বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওর। এর সঙ্গে রাগে-অনুরাগে জড়িয়ে আছে আরেকটি স্নিগ্ধ নদী—জাদুকাটা। শ্রীচৈতন্যের জ্যেষ্ঠ পার্ষদ অদ্বৈতাচার্য এই নদীপারের সন্তান ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক ভয়াল সংঘর্ষ হয়। এতে অনেক যোদ্ধা মারা যান। মহিষখোলা নদীর পাড়ঘেঁষা সেই বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় তখনই, শহীদ যোদ্ধাদের গণকবর রচিত হয় তারই এদিক-সেদিক। তারপর ৪২ বছর লতা-গুল্ম-বৃক্ষের চাদরে ঢাকা ছিল এই ইতিহাস। বলছিলেন আমাদের সঙ্গী স্থপতি রাজন দাস। তিনি এখানে তৈরি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মারক। এখানে শায়িত আছেন একাত্তরের শহীদ হওয়া বীর প্রাণেরা।
পূর্ব-পশ্চিম অক্ষ বরাবর সমান্তরাল দুটি সুউচ্চ দেয়াল ৯ ফুট বেদির ওপর এসে দাঁড়ায়, তার ওপর ছায়া হয়ে ছাদ এসে বসে। সিঁড়ি ভেঙে পূর্ব দিকের প্রবেশবিন্দুতে চোখ রাখলে পশ্চিমের নদী আর তার গায়ে এসে পড়া আকাশ দেখা যায়। পূর্ব-পশ্চিম উন্মুক্ত হওয়ায় দুই দেয়ালের ঘর রচিত হয়ে যায়। উত্তর-দক্ষিণের ২৭ ফুট উঁচু দেয়ালে ব্যাকরণ ভেঙে অনেক ছোট-বড় জানালা আড়াল খুলে আলোর উৎস হয়ে ওঠে। ঠিক চোখ মেলে তাকানোর মতো। ‘যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ’ তারা তো বদ্ধ ঘরে থাকে না, যে ঘরে দোর-জানালায় অর্গল টানা, যে ঘরে আলোর ঝলক নেই, দোলা নেই, সে ঘরে স্বাধীনতা প্রবেশ করে না! তাই ‘সব কয়টা জানালা’ই খুলে রাখা হয়েছে। জানালা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যাংশ, যার ব্যবহারিক ও মনস্তাত্ত্বিক মূল্য অতুলনীয়। এটি আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ের মতো।
চোখ দিয়ে যেমন আমাদের দেহ-ঘরে আলো প্রবেশ করে, আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা চোখ দিয়ে হয়, তেমনই দেয়ালকে মুক্তি দেয় জানালা। তবেই দেয়ালের চোখ ফুটে আলো-বাতাস প্রবেশ করে গৃহে প্রাণের সঞ্চার হয়। এ জন্যই ‘খোলা জানালা’ আর ‘স্বাধীনতার চেতনা’ সমার্থক হয়ে উঠেছে। বেদির তিন দিক ঘিরে রয়েছে পানির আধার, যা পশ্চিমে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। প্রতি বর্ষাতেই মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল নামলে নদী উপচে বেদির তলায় কিছুক্ষণের জন্য হাঁটুপানি জমে। এটা হাওরাঞ্চলের চেনা দৃশ্য। এভাবে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে ‘সব কটা জানালা’ খুলে আমাদের ডাকছে ওরা, ‘যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ’।
যাবেন কীভাবে
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি এনা, হানিফ, শ্যামলী, ইউনিকসহ অনেক কোম্পানির বাস এই পথে চলাচল করে। তবে অবশ্যই অগ্রিম টিকিট কেটে রাখুন। তাহলে ঝামেলায় পড়তে হবে না। সুনামগঞ্জ শহরে এসে এম এ খান সেতুর কাছে পাবেন মোটরবাইক অথবা গাড়ি। সেগুলোতে যেতে হবে তাহিরপুর বাজার। সেখান থেকে নৌকায় করে যেতে হবে মধ্যনগর গ্রামে। মধ্যনগর থেকে মহিষখোলা গ্রাম ১০ মিনিটের রাস্তা। দল বেঁধে ঘুরতে গেলেই বেশি আনন্দ করতে পারবেন।

জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। স্নিগ্ধ সকাল। মহাসড়কে সূর্যের আভা পড়েছে তির্যকভাবে। আমরা যাচ্ছি সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ভারত সীমান্ত গোয়া ধর্মপাশা উপজেলায় মহিষখোলা গ্রামে। সেখানে ঘুমিয়ে আছেন একাত্তরের বীর শহীদেরা।
প্রকৃতির পালাবদলে শীতকাল এসেছে। তাই প্রকৃতির মাঝে চলেছে ঋতুবরণের পালা। আমরা চলেছি নতুন গন্তব্যে। পাগলা বাজারে এসে নামলাম। ঢুকে পড়লাম দয়াল মিষ্টান্ন ভান্ডারে। গরম-গরম পরোটা আর ভাজি দেওয়া হলো। পেটপূজা শেষ করে আমরা এগিয়ে চললাম গন্তব্যের পানে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসে পৌঁছালাম সুনামগঞ্জ শহরে। সেখান থেকে যেতে হবে তাহিরপুর। প্রায় আড়াই ঘণ্টা যাত্রা শেষে হাজির হলাম সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের রোজ গার্ডেনে। এখানে দুপুরের খাওয়া শেষে আবারও রওনা দিলাম তাহিরপুরের দিকে।
গ্রামীণ পথে চলার মজাই আলাদা। দুই পাশে ধানখেত। মাঝ দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। প্রায়
দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এসে আমরা পৌঁছালাম তাহিরপুর বাজারে। এবার আমাদের পাড়ি দিতে
হবে টাঙ্গুয়ার হাওর। সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। মনে মনে সবাই খুশিই হলাম টাঙ্গুয়ার হাওর দেখা যাবে বলে। বাহন রয়েছে দুই ধরনের—ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর স্পিডবোট। আমরা চেপে বসলাম ইঞ্জিন নৌকায়।
টাঙ্গুয়ার ঢেউয়ের তালে তালে এগিয়ে চলছি। নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবনধারা আমাদের মোহিত করছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে পৌঁছালাম ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর গ্রামে। সেখানে জন্য অপেক্ষা করছিলেন সোহাগ আর মুনিম নামে দুজন। আমরা চেপে বসলাম দুই চাকার বাহনে। এখান থেকে মহিষখোলা গ্রামের দূরত্ব ১০ মিনিট। এই বাইকে করেই সেখানে যেতে হবে। সময়মতো পৌঁছানো গেল মহিষখোলা গ্রামে।
শান্ত নীরব পরিবেশ। ঘাসফড়িং মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। এগিয়ে চললাম মহিষখোলা নদীর পূর্বপাড় ঘেঁষে একখানা প্রায় নিশ্চিহ্ন টিনের ঘরের উদ্দেশে। এর অস্তিত্ব সরেজমিনে দেখেও কল্পনায় তার পূর্ণ রূপ দেখা কল্পনাবিলাসীদের জন্যও হয়তো দুরূহ হবে। তার আশপাশে ৪২ বছর ধরে মানুষের ছোঁয়া পড়েনি, তাই জঙ্গলাকীর্ণ। সেই ঘরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নিতেন। পাকিস্তানি হানাদারদের মাঝেমধ্যে ধরে বন্দী করেও রাখতেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এই অঞ্চল ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সাব-সেক্টর। এর পশ্চিমে গা ঘেঁষে মহিষখোলা নদী, উত্তরে ২০০ গজের মধ্যে ভারত সীমান্তে মেঘালয় পর্বতমালা, পূর্বে সংখ্যাহীন খালবিল এবং বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওর। এর সঙ্গে রাগে-অনুরাগে জড়িয়ে আছে আরেকটি স্নিগ্ধ নদী—জাদুকাটা। শ্রীচৈতন্যের জ্যেষ্ঠ পার্ষদ অদ্বৈতাচার্য এই নদীপারের সন্তান ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক ভয়াল সংঘর্ষ হয়। এতে অনেক যোদ্ধা মারা যান। মহিষখোলা নদীর পাড়ঘেঁষা সেই বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় তখনই, শহীদ যোদ্ধাদের গণকবর রচিত হয় তারই এদিক-সেদিক। তারপর ৪২ বছর লতা-গুল্ম-বৃক্ষের চাদরে ঢাকা ছিল এই ইতিহাস। বলছিলেন আমাদের সঙ্গী স্থপতি রাজন দাস। তিনি এখানে তৈরি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মারক। এখানে শায়িত আছেন একাত্তরের শহীদ হওয়া বীর প্রাণেরা।
পূর্ব-পশ্চিম অক্ষ বরাবর সমান্তরাল দুটি সুউচ্চ দেয়াল ৯ ফুট বেদির ওপর এসে দাঁড়ায়, তার ওপর ছায়া হয়ে ছাদ এসে বসে। সিঁড়ি ভেঙে পূর্ব দিকের প্রবেশবিন্দুতে চোখ রাখলে পশ্চিমের নদী আর তার গায়ে এসে পড়া আকাশ দেখা যায়। পূর্ব-পশ্চিম উন্মুক্ত হওয়ায় দুই দেয়ালের ঘর রচিত হয়ে যায়। উত্তর-দক্ষিণের ২৭ ফুট উঁচু দেয়ালে ব্যাকরণ ভেঙে অনেক ছোট-বড় জানালা আড়াল খুলে আলোর উৎস হয়ে ওঠে। ঠিক চোখ মেলে তাকানোর মতো। ‘যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ’ তারা তো বদ্ধ ঘরে থাকে না, যে ঘরে দোর-জানালায় অর্গল টানা, যে ঘরে আলোর ঝলক নেই, দোলা নেই, সে ঘরে স্বাধীনতা প্রবেশ করে না! তাই ‘সব কয়টা জানালা’ই খুলে রাখা হয়েছে। জানালা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যাংশ, যার ব্যবহারিক ও মনস্তাত্ত্বিক মূল্য অতুলনীয়। এটি আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ের মতো।
চোখ দিয়ে যেমন আমাদের দেহ-ঘরে আলো প্রবেশ করে, আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা চোখ দিয়ে হয়, তেমনই দেয়ালকে মুক্তি দেয় জানালা। তবেই দেয়ালের চোখ ফুটে আলো-বাতাস প্রবেশ করে গৃহে প্রাণের সঞ্চার হয়। এ জন্যই ‘খোলা জানালা’ আর ‘স্বাধীনতার চেতনা’ সমার্থক হয়ে উঠেছে। বেদির তিন দিক ঘিরে রয়েছে পানির আধার, যা পশ্চিমে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। প্রতি বর্ষাতেই মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল নামলে নদী উপচে বেদির তলায় কিছুক্ষণের জন্য হাঁটুপানি জমে। এটা হাওরাঞ্চলের চেনা দৃশ্য। এভাবে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে ‘সব কটা জানালা’ খুলে আমাদের ডাকছে ওরা, ‘যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ’।
যাবেন কীভাবে
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি এনা, হানিফ, শ্যামলী, ইউনিকসহ অনেক কোম্পানির বাস এই পথে চলাচল করে। তবে অবশ্যই অগ্রিম টিকিট কেটে রাখুন। তাহলে ঝামেলায় পড়তে হবে না। সুনামগঞ্জ শহরে এসে এম এ খান সেতুর কাছে পাবেন মোটরবাইক অথবা গাড়ি। সেগুলোতে যেতে হবে তাহিরপুর বাজার। সেখান থেকে নৌকায় করে যেতে হবে মধ্যনগর গ্রামে। মধ্যনগর থেকে মহিষখোলা গ্রাম ১০ মিনিটের রাস্তা। দল বেঁধে ঘুরতে গেলেই বেশি আনন্দ করতে পারবেন।

লোভাছড়ায় যাওয়ার ইচ্ছাটা মনে পুষে রেখেছিলাম অন্তত এক যুগ। তখন এনায়েত মাওলার বই পড়ে জেনেছিলাম পাহাড়-অরণ্য, বন্যপ্রাণী, চা-বাগান আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর এই মায়াবী রাজ্যের কথা। তবে যাওয়ার সুযোগ মিলল গত বছর, অর্থাৎ ২০২২-এর মে মাসে। সিলেটের কানাইঘাট বাজারে পৌঁছার আগেই একটা দৃশ্য দেখে মনটা আনন্দে
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম—দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলে জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ জানেন, কোন খাবার রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, খাবার খাওয়ার সময়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ...
৩ ঘণ্টা আগে
ঝরনাপাখি। নামে যার সঙ্গে ঝরনা জড়িয়ে, তার সঙ্গে ঝরনার সম্পর্ক যে নিবিড় হবে, সেটা না বললেও চলে। এই অপার্থিব সুন্দর পাখির বাহারি বাংলা নামের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ—নীলাম্বর জলখঞ্জরী, নীল পানগির্দি, ঝরনাপাখি, নীল কপালিগির্দি, নীলচে লালগির্দি ইত্যাদি।
১০ ঘণ্টা আগে
বছরের শেষের দিকে এসে পর্যটন খাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভারতের পর্যটন প্রসার বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে। দেশটির এই অবস্থায় লাভবান হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিযোগীরা।
১০ ঘণ্টা আগেনাকিব বাপ্পি

ঝরনাপাখি। নামে যার সঙ্গে ঝরনা জড়িয়ে, তার সঙ্গে ঝরনার সম্পর্ক যে নিবিড় হবে, সেটা না বললেও চলে। এই অপার্থিব সুন্দর পাখির বাহারি বাংলা নামের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ—নীলাম্বর জলখঞ্জরী, নীল পানগির্দি, ঝরনাপাখি, নীল কপালিগির্দি, নীলচে লালগির্দি ইত্যাদি।
ইংরেজিতে এর নাম প্লাম্বিয়াস ওয়াটার রেডস্টার্ট; আর দাঁতভাঙা বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিকিউরাস ফুলিগিনোসাস।
ডিসেম্বরের শুরুর দিকের ঘটনা। মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ডে এই পাখির আগমন ঘটেছে—খবরটি পেয়েই মন অস্থির হয়ে উঠল। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন আলোকচিত্রী এর ছবি পোস্ট করে যেন সেই অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন। ভাবছি কী করা যায়! ঠিক তখন কাকতালীয়ভাবে সিলেট থেকে অতি প্রিয় এক আলোকচিত্রীর কল পেলাম। আমি কল রিসিভ করতেই তিনি বললেন, ‘চলে আসো।’ তারপর জানালেন কারা কারা থাকবেন, কখন উপস্থিত হবেন ইত্যাদি তথ্য।
পরদিন রাতের বাসে কয়েকজন মিলে রওনা দিলাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
ভোরে পৌঁছে দেখি, ফটোগ্রাফার শামীম ভাই আর তাঁর সঙ্গী-সাথিরা ছবি তোলা শুরু করে দিয়েছেন। ফলে ‘মহাশয়কে’ খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ পেতে হলো না। দীর্ঘ সময় নিয়ে মন-প্রাণ ভরে ছবি তুললাম। মাঝেমধ্যে ক্যামেরার শাটার চাপা থামিয়ে চর্মচক্ষু দিয়েও তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুলিনি।
আকারে অত্যন্ত ছোট এই পাখির পুরুষ প্রজাতির গড় ওজন প্রায় ২২ গ্রাম আর স্ত্রী পাখির ১৮ গ্রাম। এত হালকা শরীরে কী পাহাড়সম সৌন্দর্যই না বয়ে বেড়ায় এরা!
শীতকালে পাহাড়ি নদীর ধারে এই ঝরনাপাখি অস্থায়ী নীড় বানায়। শীত বিদায় নিতেই চলে যায় গ্রীষ্মের গন্তব্যে। সেখানে পৌঁছেই সংসার গড়ায় মনোযোগী হয়। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। স্ত্রী নীল পানগির্দি সাধারণত তিন অথবা চারটি হালকা গোলাপি-ধূসর কিংবা হালকা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। ডিমে তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সে একাই দায়িত্ব পালন করে। তবে ছানা লালন-পালনের দায়িত্ব পুরুষটির কাঁধেও সমানভাবে বর্তায়।
বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এদের দেখা মেলে।
সবশেষে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে সাগরনালে নীলপরীর সন্ধানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, যা প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ভিন্ন এক গল্প। সেটি অন্য সময়ের জন্য তোলা থাক।
ক্যামেরা ব্যাগে নেওয়ার আগমুহূর্তে পাখিটি পানি আর মাটির সীমানাস্থলে এমনভাবে এসে বসল, দৃশ্যটা যেন এক ইলিউশন। মনে হলো, একটি পাখি হুট করে দুটো পাখি হয়ে গেছে। মনে মনে ‘ঝরনার জলে কার ছায়া গো’ বলতে বলতে সেদিনের মতো ক্লিক করলাম ঝরনাপাখির শেষ ছবিটি।
ছবি ও লেখা: নাকিব বাপ্পি

ঝরনাপাখি। নামে যার সঙ্গে ঝরনা জড়িয়ে, তার সঙ্গে ঝরনার সম্পর্ক যে নিবিড় হবে, সেটা না বললেও চলে। এই অপার্থিব সুন্দর পাখির বাহারি বাংলা নামের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ—নীলাম্বর জলখঞ্জরী, নীল পানগির্দি, ঝরনাপাখি, নীল কপালিগির্দি, নীলচে লালগির্দি ইত্যাদি।
ইংরেজিতে এর নাম প্লাম্বিয়াস ওয়াটার রেডস্টার্ট; আর দাঁতভাঙা বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিকিউরাস ফুলিগিনোসাস।
ডিসেম্বরের শুরুর দিকের ঘটনা। মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ডে এই পাখির আগমন ঘটেছে—খবরটি পেয়েই মন অস্থির হয়ে উঠল। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন আলোকচিত্রী এর ছবি পোস্ট করে যেন সেই অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন। ভাবছি কী করা যায়! ঠিক তখন কাকতালীয়ভাবে সিলেট থেকে অতি প্রিয় এক আলোকচিত্রীর কল পেলাম। আমি কল রিসিভ করতেই তিনি বললেন, ‘চলে আসো।’ তারপর জানালেন কারা কারা থাকবেন, কখন উপস্থিত হবেন ইত্যাদি তথ্য।
পরদিন রাতের বাসে কয়েকজন মিলে রওনা দিলাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
ভোরে পৌঁছে দেখি, ফটোগ্রাফার শামীম ভাই আর তাঁর সঙ্গী-সাথিরা ছবি তোলা শুরু করে দিয়েছেন। ফলে ‘মহাশয়কে’ খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ পেতে হলো না। দীর্ঘ সময় নিয়ে মন-প্রাণ ভরে ছবি তুললাম। মাঝেমধ্যে ক্যামেরার শাটার চাপা থামিয়ে চর্মচক্ষু দিয়েও তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুলিনি।
আকারে অত্যন্ত ছোট এই পাখির পুরুষ প্রজাতির গড় ওজন প্রায় ২২ গ্রাম আর স্ত্রী পাখির ১৮ গ্রাম। এত হালকা শরীরে কী পাহাড়সম সৌন্দর্যই না বয়ে বেড়ায় এরা!
শীতকালে পাহাড়ি নদীর ধারে এই ঝরনাপাখি অস্থায়ী নীড় বানায়। শীত বিদায় নিতেই চলে যায় গ্রীষ্মের গন্তব্যে। সেখানে পৌঁছেই সংসার গড়ায় মনোযোগী হয়। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। স্ত্রী নীল পানগির্দি সাধারণত তিন অথবা চারটি হালকা গোলাপি-ধূসর কিংবা হালকা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। ডিমে তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সে একাই দায়িত্ব পালন করে। তবে ছানা লালন-পালনের দায়িত্ব পুরুষটির কাঁধেও সমানভাবে বর্তায়।
বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এদের দেখা মেলে।
সবশেষে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে সাগরনালে নীলপরীর সন্ধানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, যা প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ভিন্ন এক গল্প। সেটি অন্য সময়ের জন্য তোলা থাক।
ক্যামেরা ব্যাগে নেওয়ার আগমুহূর্তে পাখিটি পানি আর মাটির সীমানাস্থলে এমনভাবে এসে বসল, দৃশ্যটা যেন এক ইলিউশন। মনে হলো, একটি পাখি হুট করে দুটো পাখি হয়ে গেছে। মনে মনে ‘ঝরনার জলে কার ছায়া গো’ বলতে বলতে সেদিনের মতো ক্লিক করলাম ঝরনাপাখির শেষ ছবিটি।
ছবি ও লেখা: নাকিব বাপ্পি

লোভাছড়ায় যাওয়ার ইচ্ছাটা মনে পুষে রেখেছিলাম অন্তত এক যুগ। তখন এনায়েত মাওলার বই পড়ে জেনেছিলাম পাহাড়-অরণ্য, বন্যপ্রাণী, চা-বাগান আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর এই মায়াবী রাজ্যের কথা। তবে যাওয়ার সুযোগ মিলল গত বছর, অর্থাৎ ২০২২-এর মে মাসে। সিলেটের কানাইঘাট বাজারে পৌঁছার আগেই একটা দৃশ্য দেখে মনটা আনন্দে
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম—দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলে জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ জানেন, কোন খাবার রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, খাবার খাওয়ার সময়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ...
৩ ঘণ্টা আগে
জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। স্নিগ্ধ সকাল। মহাসড়কে সূর্যের আভা পড়েছে তির্যকভাবে। আমরা যাচ্ছি সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ভারত সীমান্ত গোয়া ধর্মপাশা উপজেলায় মহিষখোলা গ্রামে। সেখানে ঘুমিয়ে আছেন একাত্তরের বীর শহীদেরা।
৯ ঘণ্টা আগে
বছরের শেষের দিকে এসে পর্যটন খাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভারতের পর্যটন প্রসার বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে। দেশটির এই অবস্থায় লাভবান হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিযোগীরা।
১০ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

বছরের শেষের দিকে এসে পর্যটন খাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভারতের পর্যটন প্রসার বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে। দেশটির এই অবস্থায় লাভবান হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিযোগীরা।
ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘স্কিফট’ তাদের প্রতিবেদনে সরকারি মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংকের একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, বৈশ্বিক ভ্রমণ দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার করা সত্ত্বেও ভারত পর্যটনের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক ভ্রমণ করেছে। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। মহামারি-পরবর্তী ভ্রমণ প্রবণতার হার বাড়া, উন্নত বিমান সংযোগ এবং শিথিল ভিসা নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে।
‘স্কিফট’ জানিয়েছে, ভারত এই প্রবৃদ্ধির সামান্য অংশ ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ট্যাক্স টিএমআই জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চে ২৬ দশমিক ১৫ লাখ পর্যটকের তুলনায় এপ্রিল থেকে জুনে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমন (এফটিএ) কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৪৮ লাখে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে কিছুটা বেড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর সংসদে একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে মোট বিদেশি পর্যটক আগমন দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক ৮৩ লাখ।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রান্তিক ভিত্তিতে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমনের তথ্য পেশ করেন। সেই সংখ্যাগুলো হলো জানুয়ারি-মার্চ বা প্রথম প্রান্তিক: ২৬ দশমিক ১৫ লাখ, এপ্রিল-জুন বা দ্বিতীয় প্রান্তিক: ১৬ দশমিক ৪৮ লাখ এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর বা তৃতীয় প্রান্তিক: ১৯ দশমিক ২০ লাখ।
শেখাওয়াত সংসদে তাঁর লিখিত জবাবে আরও জানান, বিদেশি পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ার মূল কারণ বাংলাদেশ থেকে আসার সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়া। এ ছাড়া তিনি আরও কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণের ধরনে মৌসুমি তারতম্য, চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন দেশ-নির্দিষ্ট গতিশীলতা।
শেখাওয়াত বলেন, পর্যটনমন্ত্রী ভারতকে একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আকর্ষণীয় বৈশ্বিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে।
এদিকে ভ্রমণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতের পর্যটনশিল্পের জন্য আরও একটি কঠিন বছর পার হতে চলেছে।
সূত্র: স্কিফট, ট্যাক্স টিএমআই, মিন্ট

বছরের শেষের দিকে এসে পর্যটন খাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভারতের পর্যটন প্রসার বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে। দেশটির এই অবস্থায় লাভবান হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিযোগীরা।
ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘স্কিফট’ তাদের প্রতিবেদনে সরকারি মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংকের একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, বৈশ্বিক ভ্রমণ দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার করা সত্ত্বেও ভারত পর্যটনের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক ভ্রমণ করেছে। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। মহামারি-পরবর্তী ভ্রমণ প্রবণতার হার বাড়া, উন্নত বিমান সংযোগ এবং শিথিল ভিসা নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে।
‘স্কিফট’ জানিয়েছে, ভারত এই প্রবৃদ্ধির সামান্য অংশ ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ট্যাক্স টিএমআই জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চে ২৬ দশমিক ১৫ লাখ পর্যটকের তুলনায় এপ্রিল থেকে জুনে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমন (এফটিএ) কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৪৮ লাখে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে কিছুটা বেড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর সংসদে একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে মোট বিদেশি পর্যটক আগমন দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক ৮৩ লাখ।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রান্তিক ভিত্তিতে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমনের তথ্য পেশ করেন। সেই সংখ্যাগুলো হলো জানুয়ারি-মার্চ বা প্রথম প্রান্তিক: ২৬ দশমিক ১৫ লাখ, এপ্রিল-জুন বা দ্বিতীয় প্রান্তিক: ১৬ দশমিক ৪৮ লাখ এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর বা তৃতীয় প্রান্তিক: ১৯ দশমিক ২০ লাখ।
শেখাওয়াত সংসদে তাঁর লিখিত জবাবে আরও জানান, বিদেশি পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ার মূল কারণ বাংলাদেশ থেকে আসার সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়া। এ ছাড়া তিনি আরও কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণের ধরনে মৌসুমি তারতম্য, চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন দেশ-নির্দিষ্ট গতিশীলতা।
শেখাওয়াত বলেন, পর্যটনমন্ত্রী ভারতকে একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আকর্ষণীয় বৈশ্বিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে।
এদিকে ভ্রমণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতের পর্যটনশিল্পের জন্য আরও একটি কঠিন বছর পার হতে চলেছে।
সূত্র: স্কিফট, ট্যাক্স টিএমআই, মিন্ট

লোভাছড়ায় যাওয়ার ইচ্ছাটা মনে পুষে রেখেছিলাম অন্তত এক যুগ। তখন এনায়েত মাওলার বই পড়ে জেনেছিলাম পাহাড়-অরণ্য, বন্যপ্রাণী, চা-বাগান আর আশ্চর্য সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর এই মায়াবী রাজ্যের কথা। তবে যাওয়ার সুযোগ মিলল গত বছর, অর্থাৎ ২০২২-এর মে মাসে। সিলেটের কানাইঘাট বাজারে পৌঁছার আগেই একটা দৃশ্য দেখে মনটা আনন্দে
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম—দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলে জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ জানেন, কোন খাবার রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, খাবার খাওয়ার সময়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ...
৩ ঘণ্টা আগে
জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। স্নিগ্ধ সকাল। মহাসড়কে সূর্যের আভা পড়েছে তির্যকভাবে। আমরা যাচ্ছি সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ভারত সীমান্ত গোয়া ধর্মপাশা উপজেলায় মহিষখোলা গ্রামে। সেখানে ঘুমিয়ে আছেন একাত্তরের বীর শহীদেরা।
৯ ঘণ্টা আগে
ঝরনাপাখি। নামে যার সঙ্গে ঝরনা জড়িয়ে, তার সঙ্গে ঝরনার সম্পর্ক যে নিবিড় হবে, সেটা না বললেও চলে। এই অপার্থিব সুন্দর পাখির বাহারি বাংলা নামের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ—নীলাম্বর জলখঞ্জরী, নীল পানগির্দি, ঝরনাপাখি, নীল কপালিগির্দি, নীলচে লালগির্দি ইত্যাদি।
১০ ঘণ্টা আগে