Ajker Patrika

জনগণের সঙ্গে পুলিশের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮: ২৫
জনগণের সঙ্গে পুলিশের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

জনগণের সমস্যাকে আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে, সে জন্য জনগণের সঙ্গে পুলিশের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পুলিশের নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আজ রোববার রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে বাংলাদেশও পারে, বাংলাদেশকে আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। নির্বাচনের ইশতেহার আমরা বাস্তবায়ন করেছি। এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পালা। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট দেশ। স্মার্ট প্রশাসন ও স্মার্ট পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সাহসী ভূমিকা রেখেছে পুলিশ। এই সফলতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও প্রশংসিত হয়েছে। ‘৯৯৯’ চালুর পর থেকে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এই নম্বরে ফোন করে মানুষ সহজেই বিপদে-আপদে পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে। তবে পুলিশকে মানুষের আরও আস্থা অর্জন করতে হবে। মানুষ বিপদে পড়লে যেন পুলিশের সহযোগিতা সহজেই পায়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারে পুলিশ এখন দক্ষতা দেখাচ্ছে। এর ফলে অনেক অপরাধও কমে এসেছে। 

সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা 

গত ১৪ বছরে সরকারের নানা উন্নয়নের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই উন্নয়ন সমানভাবে তৃণমূলে পৌঁছে দিয়েছি। তবে এখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এই মন্দা থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যাতে পড়ে না থাকে, সে বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে।’ 

কুচকাওয়াজে প্যারেড অ্যাডজুট্যান্ট সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেন ও শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শুভ্র দেব প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কুচকাওয়াজে ১২ জন নারী কর্মকর্তাসহ ৯৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন। 

অনুষ্ঠানে এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করায় বেস্ট একাডেমিক শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর কবির, অশ্বারোহণে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, বেস্ট ইন ফিল্ড শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শুভ্র দেব, বেস্ট শুটার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল রানা এবং বেস্ট প্রবেশনার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সাকিবুল আলম ভূঁইয়াকে ট্রফি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। 

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল আবু হাসান মুহম্মদ তারিকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, নবীন অফিসারদের অভিভাবকসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‎পুলিশ সদরদপ্তরে ৬ ডিআইজিকে রদবদল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

‎পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ ছয়টি ডিআইজি পদে রদবদল করা হয়েছে। বর্তমানে কর্মরত ও সদ্য যোগদান করা ছয়জন ডিআইজিকে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।‎

‎আজ সোমবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সই করা এক অফিস আদেশে এ রদবদল করা হয়েছে।‎

‎ছয়জনের মধ্যে— পুলিশ সদরদপ্তরের লজিস্টিকস বিভাগের ডিআইজি খোন্দকার নজমুল হাসানকে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে, তাপতুন নাসরীনকে ডিআইজি হেডকোয়ার্টার্সে, আশিক সাঈদকে ডিআইজি ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টে, সারোয়ার মুর্শেদ শামীমকে লজিস্টিকসে, আতিকুর রহমানকে ফিন্যান্সে এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে ডেভেলপমেন্টের ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামার আশা সরকারের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বাজেট ব‍্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে মূল্যস্ফীতি, মজুরি প্রবৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন, আর্থিক ও বৈদেশিক খাত, চলতি হিসাব, প্রবাসী আয়, আমদানি ও ঋণপত্র নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে ২০২৬ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

এতে আরও বলা হয়, ১২ মাসের গড় হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বিগত জুন ২০২৩-এর পর প্রথম চলতি বছরের নভেম্বরে ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চ ২০২৩-এ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ পেরিয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়। তবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) ইতিমধ্যে চলতি বছরের জুন মাসে ৯ শতাংশের নিচে চলে আসে এবং নভেম্বরে এটি আরও কমে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়। আশা করা যায়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে আগামী জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

মজুরি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেক বেশি, যার ফলে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় কমে আসছিল। তবে চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য অনেকটাই কমে এসেছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) যথাক্রমে ৮ দশমিক ২৯ ও ৮ দশমিক ০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড়েছিল ৯ দশমিক ০২ ও ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। ফলে বিগত বছরগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে প্রকৃত আয়ের পরিমাণ অনেক কমলেও বর্তমান অর্থবছরে এই অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে উত্তরণ সাধিত হবে।

কৃষি উৎপাদনের বিষয়ে বলা হয়, কৃষি খাতে যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার ফলে বিগত অর্থবছরে বোরো মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় আমন ধানেরও ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে মর্মে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, চলতি ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন ১৬০ দশমিক ৯৫ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। অবশিষ্ট ফসল কাটা হলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি, আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় মোট উৎপাদন ৭ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়েছে। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের ভারসাম্যহীনতা ইতিমধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে চলে এসেছে।

চলতি ১৮ ডিসেম্বর গ্রোস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগস্ট ২০২৪ মাসে ছিল মাত্র ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়ে আসা, প্রবাসী আয়ের গতি বৃদ্ধি এবং দেশের আর্থিক খাতে সম্প্রতি সুদের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে আরও বাড়বে।

বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল এবং ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে -১৮ দশমিক ৭, -১১ দশমিক ৬, ও -৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আর্থিক খাতে সুব্যবস্থাপনা ও অর্থ পাচার রোধের ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে এটি হয়েছে মাত্র ১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এটি হয়েছে ৭৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে পাঁচ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার এবং একই সময়ে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও উৎপাদনশীল করতে আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত বিধিনিষেধ অপসারণ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে আমদানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল -১ দশমিক ২ শতাংশ (ঋণাত্মক), যা বর্তমান অর্থবছরের (২০২৫-২৬) একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

মূলধনি যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল -৩২ দশমিক ৮ শতাংশ (ঋণাত্মক), যা বর্তমান অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ, যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশে। আর্থিক অব্যবস্থাপনার ফলে দেশের ইমেজের নিম্নগতি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে, যার উদাহরণ ঋণপত্র খোলার হার ও ট্রেড ফাইন্যান্সিং সহজতর হওয়া।

এই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের দিল্লি ও আগরতলা মিশন থেকে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনের সামনে এ-সংক্রান্ত নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

দিল্লিতে বাংলাদেশ ভবনের সামনে হট্টগোল ও হুমকির অভিযোগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আর উত্তেজনার মধ্যে সাময়িকভাবে ভিসা কার্যক্রম বন্ধের এ খবর এল।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় দুটি পত্রিকা অফিস ও ছায়ানট ভবনে হামলা হয়। সেই রাতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে একদল মানুষ বিক্ষোভ দেখায়, সে সময় মিশনে ঢিলও ছোড়া হয়।

এরপর চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক) কার্যক্রম গতকাল রোববার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভালুকার একটি কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তাঁর লাশ গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর শনিবার রাতে দিল্লিতে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’ নামের এক সংগঠনের ২০-২৫ জন সদস্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদকে উদ্ধৃত করে গতকাল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে কিছু কথাবার্তা (তারা) বলছে—হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে হবে; হাইকমিশনারকে ধরো। পরে তারা মেইন গেটের সামনে এসে কিছুক্ষণ চিৎকার করে। তারা চিৎকার করে চলে গেছে—এতটুকুই আমি জানি।’

সেই খবরের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এ ঘটনা নিয়ে আমরা বাংলাদেশি কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা লক্ষ করেছি। বাস্তবতা হলো, ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০-২৫ জন যুবক জড়ো হয়েছিল। ওই যুবকেরা ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দিচ্ছিল এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছিল।’

মুখপাত্র স্পষ্ট করে বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা হাইকমিশনের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করেনি বা কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করেনি।’

সেখানে মোতায়েন থাকা পুলিশ সদস্যরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ জনসমক্ষে পাওয়া যাচ্ছে।

বিবৃতিতে রণধীর জয়সওয়াল আরও উল্লেখ করেন, ‘ভারত বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে। আমাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারতের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। আমরা দীপু চন্দ্র দাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছি।’

রণধীর আরও বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারতের মাটিতে অবস্থিত সব বিদেশি মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘নয়াদিল্লি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

তবে ভারতের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দিল্লিতে কূটনৈতিক এলাকার গভীরে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের সামনে ‘হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের বিক্ষোভকারীদের আসার সুযোগ করে দেওয়া’ হয়েছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারতীয় প্রেসনোটে যে কথা বলা হয়েছে, এটা আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করি এ জন্য যে, বিষয়টি যত সহজভাবে উত্থাপন করা হয়েছে, আসলে অত সহজ না।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের মিশন, বাংলাদেশের মিশন কূটনৈতিক এলাকার গভীরে অবস্থিত। এমন না যে এটা বাইরে কোনো জায়গায় অথবা কূটনৈতিক এলাকার শুরুতে, তা কিন্তু না। তারা বলছে, ২০-২৫ জনের একটা দল, হতে পারে। হয়তো একটু কমবেশি হতে পারে সংখ্যাটা। কিন্তু সেটা কথা না। একটা হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের ২৫ বা ৩০ জনের একটা দল এত দূর পর্যন্ত আসতে পারবে কেন, একটা স্যানিটাইজড এলাকার মধ্যে? তার মানে তাদের আসতে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে হোক তারা এসেছে, আসতে পারার কথা না কিন্তু নরমালি।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘সেখানে তারা দাঁড়িয়ে যে শুধু ওই হিন্দু নাগরিকের হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিয়ে চলে গেছে, তা না। তারা আরও অনেক কিছু বলেছে, সেটা আমরা জানি এবং আমাদের পত্রপত্রিকায় যে রিপোর্টটা আসছে, সেটাকে যে তারা বলতেছে যে ‘মিসলিডিং’, এটাও সত্য না। আমাদের পত্রপত্রিকায় মোটামুটি সঠিক রিপোর্টই এসেছে, যেটুকু আমরা তথ্য পেয়েছি। আমার কাছে প্রমাণ নেই যে তাকে (হাইকমিশনার) হত্যার হুমকি দিয়েছে, কিন্তু আমরা এটাও শুনেছি যে, তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সেটা কেউ একজন কথা বলল, সেটার মধ্যে হতে পারে।’

কূটনৈতিক এলাকার এত ভেতরে বিক্ষোভকারীরা কীভাবে যেতে পারল, সেই প্রশ্ন তুলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সাধারণত কোনো প্রটেস্ট গ্রুপ যখন যায়, সেটা আগে থেকে ইনফর্ম করা হয় এবং পুলিশ তাদের একটু দূরে এক জায়গায় আটকে দেয়। কখনো যদি কোনো কাগজপত্র দেওয়ার থাকে, দুজন এসে দিয়ে যায়। এটা হলো নর্ম। সবখানে এটা হয়, আমাদের দেশেও হয়।’

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে আহ্বান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সে বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘একজন বাংলাদেশি নাগরিক নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। এটার সঙ্গে মাইনরিটিজের নিরাপত্তাকে একসঙ্গে করে ফেলার কোনো মানে হয় না। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, যাঁকে হত্যা করা হয়েছে এবং অবিলম্বে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অ্যাকশন নিয়েছে। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন যে, বেশ কিছু অ্যারেস্ট করা হয়েছে। তো, এ ধরনের ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশে ঘটে, তা নয়; এই অঞ্চলের সব দেশেই ঘটে এবং প্রতি দেশের দায়িত্ব হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া, বাংলাদেশ নিচ্ছে। অন্যদেরও উচিত সে রকম ব্যবস্থা নেওয়া। কাজেই, এটা গ্রহণযোগ্য না, যেভাবে এটাকে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ হাইকমিশন এলাকায় নিরাপত্তার নিয়মকানুন সঠিকভাবে ‘রক্ষা করা হয়নি’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, নরমালি সিকিউরিটির যে নিয়মকানুন আছে, সেটা এখানে ঠিকমতো পালিত হয়নি। তারা বলছে যে, আমাদের সব মিশনের নিরাপত্তা দেখছে, আমরা সেটা নোট করেছি।’

কর্মরত কূটনীতিবিদদের নিরাপত্তার খাতিরে বাংলাদেশ মিশনকে সংকুচিত করার কথা সরকার ভাববে কি না, সেই প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি তেমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে আমরা সেটা করব। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা যেটা দেখছি, আমরা এখনো ভরসা রাখছি, ভারত যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে।’

বাংলাদেশ মিশনের নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি ছিল কি-না—এমন প্রশ্নে একসময় দিল্লি মিশনে কাজ করা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাপারটা কিন্তু শুধু যে তারা এখানে এসেছে, দুটো স্লোগান দিয়েছে, তা না। এর ভেতরে কিন্তু একটা পরিবার বাস করে; হাইকমিশনার ও তার পরিবার কিন্তু ওখানে বাস করে। তারা কিন্তু থ্রেটেনড ফিল করেছে এবং তারা কিন্তু আতঙ্কিত হয়েছে, কারণ পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। দুজন গার্ড ছিল, তারা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ এ নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আদালতে হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণের নির্দেশ চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদি (৩৩) ১২ ডিসেম্বর পল্টন থানাধীন বিজয়নগর এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে আহত হন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লাশ দেশে আনা হয় এবং ২০ ডিসেম্বর লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করা হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাশাত জাবীন ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন।

মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ডিএনএ নমুনা সিআইডির প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ জন্য আদালতের নির্দেশ প্রয়োজন।

শুনানি শেষে আদালত নির্দেশ দেন। এ ছাড়া প্রোফাইলিং ও সংরক্ষণ কার্য সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের চিফ ডিএনএ অ্যানালিস্ট ফরেনসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

হাদিকে গুলি করার পর ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। হাদির মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত