Ajker Patrika

আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামার আশা সরকারের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বাজেট ব‍্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে মূল্যস্ফীতি, মজুরি প্রবৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন, আর্থিক ও বৈদেশিক খাত, চলতি হিসাব, প্রবাসী আয়, আমদানি ও ঋণপত্র নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে ২০২৬ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

এতে আরও বলা হয়, ১২ মাসের গড় হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বিগত জুন ২০২৩-এর পর প্রথম চলতি বছরের নভেম্বরে ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চ ২০২৩-এ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ পেরিয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়। তবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) ইতিমধ্যে চলতি বছরের জুন মাসে ৯ শতাংশের নিচে চলে আসে এবং নভেম্বরে এটি আরও কমে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়। আশা করা যায়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে আগামী জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

মজুরি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেক বেশি, যার ফলে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় কমে আসছিল। তবে চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য অনেকটাই কমে এসেছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) যথাক্রমে ৮ দশমিক ২৯ ও ৮ দশমিক ০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড়েছিল ৯ দশমিক ০২ ও ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। ফলে বিগত বছরগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে প্রকৃত আয়ের পরিমাণ অনেক কমলেও বর্তমান অর্থবছরে এই অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে উত্তরণ সাধিত হবে।

কৃষি উৎপাদনের বিষয়ে বলা হয়, কৃষি খাতে যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার ফলে বিগত অর্থবছরে বোরো মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় আমন ধানেরও ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে মর্মে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, চলতি ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন ১৬০ দশমিক ৯৫ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। অবশিষ্ট ফসল কাটা হলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি, আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় মোট উৎপাদন ৭ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়েছে। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের ভারসাম্যহীনতা ইতিমধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে চলে এসেছে।

চলতি ১৮ ডিসেম্বর গ্রোস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগস্ট ২০২৪ মাসে ছিল মাত্র ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়ে আসা, প্রবাসী আয়ের গতি বৃদ্ধি এবং দেশের আর্থিক খাতে সম্প্রতি সুদের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে আরও বাড়বে।

বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল এবং ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে -১৮ দশমিক ৭, -১১ দশমিক ৬, ও -৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আর্থিক খাতে সুব্যবস্থাপনা ও অর্থ পাচার রোধের ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে এটি হয়েছে মাত্র ১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এটি হয়েছে ৭৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে পাঁচ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার এবং একই সময়ে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও উৎপাদনশীল করতে আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত বিধিনিষেধ অপসারণ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে আমদানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল -১ দশমিক ২ শতাংশ (ঋণাত্মক), যা বর্তমান অর্থবছরের (২০২৫-২৬) একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

মূলধনি যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল -৩২ দশমিক ৮ শতাংশ (ঋণাত্মক), যা বর্তমান অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ, যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশে। আর্থিক অব্যবস্থাপনার ফলে দেশের ইমেজের নিম্নগতি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে, যার উদাহরণ ঋণপত্র খোলার হার ও ট্রেড ফাইন্যান্সিং সহজতর হওয়া।

এই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ