Ajker Patrika

মসজিদে যে ৫ ভুল করবেন না

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২২, ১১: ৩২
মসজিদে যে ৫ ভুল করবেন না

মসজিদের নির্দিষ্ট কিছু আদব আছে। অনেকেই মসজিদে গিয়ে এমন সব ভুল ও অসংলগ্ন আচরণ করে বসেন, যা অন্য মুসল্লিদের ভোগান্তির কারণ হয় অথবা মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনার বিপরীত হয়। মসজিদে ধীরে সুস্থে আদব বজায় রেখে প্রশান্ত চিত্তে ইবাদত করা উচিত। এখানে মসজিদে মুসল্লিদের পাঁচটি সাধারণ ভুলের আলোচনা করা হলো—

১. দৌড়ে জামাতে অংশ নেওয়া
ইমাম রুকুতে চলে গেলে জামাত ধরার জন্য অনেকেই দৌড় দেন। এই কাজ মহানবী (সা.) মোটেই পছন্দ করতেন না। তাই এ ব্যাপারে সাহাবিদের নিষেধ করেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু কাতাদা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আমরা নবী (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ পড়ছিলাম, নামাজে তিনি ছোটাছুটির শব্দ শুনতে পান। নামাজ শেষে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কী করছিলে?’ তারা বলল, ‘আমরা নামাজের জন্য তাড়াহুড়ো করে আসছিলাম।’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘এমন কাজ কখনো করো না। শান্তিপূর্ণ ও ধীরস্থিরে নামাজে আসবে। তাতে যে কয় রাকাত ইমামের সঙ্গে পাবে, তা পড়ে নেবে, আর যা ছুটে যায় তা ইমামের নামাজের পর পূর্ণ করে নেবে।’ (বুখারি) 

২. কাউকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়া
মসজিদে গিয়ে মানুষের কষ্ট হয় এমন কাজ করা ঠিক নয়। অনেক সময় দেখা যায়, মসজিদে অনেক মানুষ বসে আছেন। শেষ সময়ে এসে কেউ একজন কাতার ঠেলে ওপরের কাতারে চলে যাচ্ছেন। অনেক সময় মুসল্লিদের ডিঙিয়ে অত্যন্ত বিশ্রীভাবে সামনে যান, যা মোটেও ঠিক নয়। হাদিসে এসেছে, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক লোক সবার ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে আসছিল। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘বসো! তুমি মানুষকে কষ্ট দিলে।’ (আবু দাউদ) 

৩. কাতার পূর্ণ না করা
কাতার পূর্ণ করার নিয়ম হলো, প্রথমে ইমামের সোজা পেছনে দাঁড়াবে, তারপর ডানে ও বাঁয়ে সমানভাবে মুসল্লি যোগ হতে থাকবে। এভাবে এক কাতার পূর্ণ হলে একই নিয়মে পরবর্তী কাতার পূর্ণ করবে। এই নিয়মের বিপরীতে গিয়ে এক কাতার খালি রেখে পরের কাতারে দাঁড়ানো অথবা একপাশ থেকে দাঁড়ানো সুন্নতের খেলাপ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাতার মিলিত করে, আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে দেন। আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করে, আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন।’ (নাসায়ি) 

৪. তাকবিরে তাহরিমা না পড়ে রুকু করা
প্রচলিত আরেকটি ভুল হলো, তাড়াহুড়ো করে এসে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহ আকবার’ না বলে রুকুতে চলে যাওয়া। ইমামের সঙ্গে জামাত ধরতে অনেক সময় এমনটি করেন অনেকে। রুকুর জন্য তাকবির পড়লে তা তাকবিরে তাহরিমা হবে না। আর তাকবিরে তাহরিমা না পড়লে নামাজ হবে না। কারণ নামাজে তাকবিরে তাহরিমা বলা ফরজ। তাই প্রথমে আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করতে হবে, এরপর আবার আল্লাহু আকবার বলে রুকু করতে হবে। এ বিষয়ে অধিক তাড়াহুড়া বা অবহেলা করলে নামাজ শুদ্ধ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। (ফতোয়া শামি: ১ / ৪৪২-৪৫২, আল-বাহরুর রায়েক: ২ / ২৭৬)

৫. নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া
নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে চলাচল করা বৈধ নয়। অর্থাৎ, মুসল্লির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে না। সোজা মুসল্লির সামনে থেকে ডানে বা বাঁয়ে সরে গেলে অসুবিধা নেই। অতিক্রম করতে হলে আনুমানিক এক ফুট উচ্চতার কোনো কিছু সামনে রেখে যেতে হবে। অবশ্য দুই কাতার সামনে দিয়ে গেলে বা মসজিদ অনেক বড় হলে গুনাহ হবে না। নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়ার গুনাহ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘নামাজের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কী পরিমাণ পাপ রয়েছে, তবে তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হতো।’ বর্ণনাকারী আবু নসর বলেন, ‘আমার মনে পড়ে না ৪০ দিন, না ৪০ মাস, না ৪০ বছর বলেছেন।’ (বুখারি)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়ার ভয়াবহ পরিণতি

শরিফ আহমাদ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জুমার দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। জুমার নামাজ প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ত্যাগ করো। এটিই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারো।’ (সুরা জুমুআ: ৯) তাই আল্লাহর আদেশ মেনে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর এই আদেশ অমান্য করে, জুমার নামাজ ত্যাগ করে, তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁরা রাসুল (সা.)-কে মিম্বরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, ‘মানুষ যেন জুমার নামাজ ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে মোহর এঁটে দেবেন। এরপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৮৬৫)

মুনাফিক ব্যক্তি ছাড়া কোনো মুসলমান ফরজ নামাজ ত্যাগ করতে পারে না। নামাজ আদায়ে বিলম্ব হলে প্রকৃত মুমিনের হৃদয়ে অপরাধপ্রবণতা কাজ করে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশেষ অপারগতা ছাড়া জুমার নামাজ তরক করে, তার নামে মুনাফিক উপাধি লেখা হয় এমন কিতাবে, যার লেখা মোছা যায় না এবং পরিবর্তনও করা যায় না।’ (কিতাবুল উম্ম: ১/২৩৯)

শুক্রবার জুমার নামাজ ছুটে গেলে সেদিনের জোহরের নামাজ আদায় করতে হয়। নামাজের কাফফারা দিতে হয়। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা ওজরে জুমার নামাজ ত্যাগ করে, সে যেন এক দিনার সদকা করে। যদি তার পক্ষে এক দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) সদকা করা সম্ভব না হয়, তবে যেন অর্ধ দিনার সদকা করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১০৫৩)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১০ মিনিট
ফজর০৫: ১১ মিনিট০৬: ৩০ মিনিট
জুমা১১: ৫৩ মিনিট০৩: ৩৬ মিনিট
আসর০৩: ৩৭ মিনিট০৫: ১২ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৪ মিনিট০৬: ৩২ মিনিট
এশা০৬: ৩৩ মিনিট০৫: ১০ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মহানবী (সা.)-এর বিজয় উদ্‌যাপন ও আমাদের শিক্ষা

মুনীরুল ইসলাম
মহানবী (সা.)-এর বিজয় উদ্‌যাপন ও আমাদের শিক্ষা

বিজয় মানুষের চিরন্তন স্বপ্ন। এই শব্দের মধ্যে আছে পরিশ্রমের দীপ্তি, ত্যাগের চিহ্ন ও আনন্দের সূর্যোদয়। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, বিজয় মানে আত্মতৃপ্তি নয়, বরং বিনয়; উল্লাস নয়, কৃতজ্ঞতা; প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা। বিজয় ইসলামে একধরনের আত্মশুদ্ধি, যেখানে মানুষ আল্লাহর সামনে নত হয়ে বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ—সকল প্রশংসা আল্লাহর।’

ইসলামে বিজয়ের ধারণা

মানবসমাজে বিজয়ের অর্থ সাধারণত ক্ষমতা, প্রভাব, জয় বা আধিপত্য। কিন্তু ইসলামে বিজয় হলো আল্লাহর সাহায্যের প্রকাশ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বিজয় তো শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকেই।’ (সুরা আনফাল: ১০)। অর্থাৎ মুসলমান বিশ্বাস করে, যখন সে জয়লাভ করে, তখন তা নিজের বীরত্বের নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছা ও রহমতের ফল। সুতরাং ইসলামে বিজয় কখনো অহংকারে শেষ হয় না; বরং শুরু হয় কৃতজ্ঞতায়।

বিজয়ের প্রকৃত অর্থ ইসলামে দুটি স্তরে প্রকাশিত—১. বাহ্যিক বিজয়; যেমন যুদ্ধক্ষেত্র, ন্যায় প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের পরাজয়। ২. অভ্যন্তরীণ বিজয়; যেমন আত্মসংযম, নফসের ওপর জয়, পাপ থেকে বিরত থাকা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমরা ছোট জিহাদ থেকে ফিরে এলাম, এখন বড় জিহাদ শুরু হলো নিজের নফসের বিরুদ্ধে।’ অর্থাৎ সত্যিকারের বিজয় হলো, নিজের ভেতরের অন্ধকারকে পরাজিত করা।

মহানবী (সা.)-এর বিজয় উদ্‌যাপনের রীতি

ইসলামে বিজয় উদ্‌যাপনের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে। ইতিহাসে একাধিক যুদ্ধ ও শান্তিচুক্তির মাধ্যমে তিনি আল্লাহর সাহায্যে বিজয় অর্জন করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই তাঁর আচরণ ছিল অনন্য।

ক. ফাতহে মক্কা—বিনয়ের মহাগাথা: হিজরি অষ্টম সনে মক্কা বিজয়ের মুহূর্তে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন শহরে প্রবেশ করলেন, তাঁর মাথা উটের কুঁজে নত ছিল। তিনি কোনো সোনার আসনে বসে প্রবেশ করেননি, বরং বলেছিলেন, ‘আজ প্রতিশোধের দিন নয়; আজ ক্ষমার দিন।’ এই বাক্য ইতিহাসে মানবিকতার এক অমর দলিল হয়ে আছে। শত্রুরা যারা তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল, আজ তারা সবাই তাঁর করুণার কারণে মুক্ত। মহানবী (সা.) ঘোষণা করলেন, ‘তোমরা সবাই মুক্ত।’ বিজয়ের এই দিন ছিল না রক্তের উল্লাসে ভরা; বরং ছিল ক্ষমা, কৃতজ্ঞতা ও আল্লাহর প্রশংসায় পূর্ণ।

খ. বদর ও হুনাইন যুদ্ধের শিক্ষা: বদর ছিল ইসলামের প্রথম সামরিক বিজয়। মহানবী (সা.) সেদিন সারা রাত আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছেন, কেঁদেছেন, নামাজে দীর্ঘ কিয়াম করেছেন। তিনি জানতেন, এই বিজয় তাঁর নয়, এটি আল্লাহর অনুগ্রহ।

হুনাইন যুদ্ধে মুসলমানেরা সংখ্যায় বেশি ছিল, কিন্তু কিছু সময়ের জন্য তারা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে পড়েছিল। কোরআনে আল্লাহ সতর্ক করলেন, ‘যখন তোমরা নিজেদের সংখ্যায় গর্ব করেছিলে, তখন তা তোমাদের কোনো উপকারে আসেনি।’ (সুরা তওবা: ২৫)। এই আয়াত মুসলমানদের মনে করিয়ে দেয়, অহংকার বিজয়কে পরাজয়ে রূপ দিতে পারে।

ইসলামের ইতিহাসে বিজয় উদ্‌যাপনের উদাহরণ

ক. সালাহউদ্দিন আইয়ুবির জেরুজালেম জয়: ক্রুসেডারদের থেকে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের পর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি শহরে প্রবেশ করলেন; সেখানে ছিল না কোনো যুদ্ধডঙ্কা, ছিল না কোনো প্রতিহিংসা। তিনি গির্জাগুলো রক্ষা করলেন, খ্রিষ্টানদের নিরাপত্তা দিলেন এবং প্রথমেই মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করে নফল নামাজ আদায় করলেন। তাঁর মুখে ছিল একটিই কথা, ‘এই বিজয় আমাদের নয়, আল্লাহর।’

খ. তারিক বিন জিয়াদের স্পেন বিজয়: স্পেনে প্রবেশের আগে তারিক বিন জিয়াদ তাঁর সৈন্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘পেছনে সমুদ্র, সামনে শত্রু। আমরা একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল।’ বিজয়ের পর তিনি মসজিদ নির্মাণ করেন, শিক্ষার প্রসার ঘটান, দাস মুক্ত করেন। কোনো রাজকীয় উৎসব নয়, বরং ছিল ইবাদতের উৎসব।

গ. সুলতান মাহমুদ গজনবির হিন্দুস্তান জয়: সুলতান মাহমুদ গজনবি প্রতিবার বিজয়ের পর নিজেকে ‘আল্লাহর এক দাস’ বলতেন, কখনো ‘সম্রাট’ উপাধি নেননি। যুদ্ধলব্ধ সম্পদ তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা ও দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করতেন।

বিজয়ের পর সমাজের দায়িত্ব

ইসলামে বিজয়ের পর সমাজে ন্যায়, শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজয় তখনই অর্থবহ, যখন তা দুর্বলদের মুক্তি দেয়, নির্যাতিতদের আশ্রয় দেয়। বিজয় যদি অন্যায় টিকিয়ে রাখে, অত্যাচার বাঁচিয়ে রাখে, তবে তা বিজয় নয়। ইসলামে বিজয় মানে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের অবসান।

আজকের যুগে বিজয় মানে মিডিয়া কভারেজ, আতশবাজি, মিছিল, গান-বাদ্য ও নৃত্যের আসর। অনেক মুসলমানও পশ্চিমা ধাঁচে উৎসব পালন করে। কিন্তু এসব আচরণ ইসলামি সংস্কৃতির পরিপন্থী। ইসলাম শিক্ষা দেয়, বিজয়ের পর যত বড় আনন্দ, তত বড় দায়িত্ব। বিজয়ের পর যদি কেউ গরিবদের খাওয়ায়, নামাজে দীর্ঘ সিজদায় যায়, কোরআন পাঠ করে, দোয়া করে; তবেই সে ইসলামি বিজয় উদ্‌যাপন করেছে। আজ মুসলমানদের বিজয় শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়; তা হতে পারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে, শিক্ষায়, বিজ্ঞানে, নৈতিকতায়, মানবসেবায়।

ইসলামে বিজয় মানে উৎসব নয়, আত্মসমর্পণ। এটি এক আধ্যাত্মিক উপলব্ধি, যেখানে মানুষ নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে, আল্লাহর অনুগ্রহে মাথা নত করে। যে মুহূর্তে মহানবী (সা.) মক্কা জয় করলেন, তখন তাঁর চারপাশে ছিল হাজারো সৈন্য, তবু তাঁর চোখে ছিল অশ্রু, ঠোঁটে ছিল কৃতজ্ঞতার তাসবিহ। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিজয় সেদিন উদ্‌যাপিত হয়েছিল এক নীরব সিজদায়। আজও যে মুসলমান বিজয়ের পর সিজদায় পড়ে যায়, গরিবকে খাওয়ায়, ক্ষমা করে, অহংকার ত্যাগ করে; সেই মানুষই সত্যিকারের বিজয়ী।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম; পরিচালক, সম্পাদনা কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

একসঙ্গে দুজন সালাম দিলে উত্তর দেবেন কে?

মুফতি শাব্বির আহমদ
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: কারও সঙ্গে দেখা হলে অনেক সময় দেখা যায়, দুজনেই একসঙ্গে সালাম দিয়ে ফেলি? এ ক্ষেত্রে কার সালাম গ্রহণ করা হবে এবং কে উত্তর দেবে? এ বিষয়ে ইসলামের বিধান জানালে উপকৃত হবো।

কৌশিক ইসলাম, ধানমন্ডি, ঢাকা।

উত্তর: আপনার প্রশ্নটি খুবই বাস্তবসম্মত এবং দৈনন্দিন জীবনে বহুবার সম্মুখীন হওয়া একটি বিষয়। ইসলামে সালাম হলো শান্তির অভিবাদন, যা মুসলমানদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভালোবাসা ও ইমান বৃদ্ধি করে। সালাম দেওয়া সুন্নত হলেও এর জবাব দেওয়া ওয়াজিব। এই প্রেক্ষাপটে, দুজন ব্যক্তি যদি একই সময়ে একে অপরকে সালাম দেন, তাহলে ইসলামি শরিয়তে এর সমাধান নিম্নরূপ:

১. যদি দুজন একসঙ্গে সালাম দেন: যদি দুজন ব্যক্তি প্রায় একই মুহূর্তে বা একসঙ্গে একে অপরকে সালাম দেন (অর্থাৎ আগে-পরে হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট না হয়), তবে ইসলামি আইন ও ফিকাহ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রত্যেকের ওপর একে অপরের সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক হবে। অর্থাৎ যেহেতু উভয়ই প্রাথমিক অবস্থায় সালাম দিয়েছেন, তাই প্রত্যেকেই তাঁর সঙ্গীর সালামের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব বহন করবেন। প্রত্যেকেই তাঁর সঙ্গীর সালামের উত্তর ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ’ বলে দেবেন। এটি সালামের ওয়াজিব হক আদায় করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়।

২. যদি সালাম আগে-পরে হয়ে যায়: যদি দেখা যায় যে, সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে সামান্য আগে-পরে হয়ে গেছে (যদিও মনে হচ্ছে একসঙ্গে দেওয়া হয়েছে), তাহলে বিধানটি ভিন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সালামটি পূর্ববর্তী সালামের জবাব হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যক্তি ‘ক’ প্রথমে সালাম দিলেন এবং মুহূর্তের মধ্যে ব্যক্তি ‘খ’ও সালাম দিলেন। এক্ষেত্রে ‘খ’-এর দেওয়া সালামটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘ক’-এর সালামের জবাব হিসেবে ধর্তব্য হয়ে যাবে। তাই এই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে (আগে-পরে হলে) পরবর্তী সময়ে কারও জন্যই পুনরায় জবাব দেওয়া আবশ্যক হবে না।

তবে প্রথম ক্ষেত্রে যদি নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় যে দুজনই প্রায় একযোগে দিয়েছেন, তখন প্রত্যেকে উত্তর দেওয়া উত্তম ও ওয়াজিব।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

সালামের এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটির ক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় মনে রাখা ভালো:

  • জবাব দেওয়া ওয়াজিব: সালাম দেওয়া সুন্নত হলেও এর জবাব দেওয়া ওয়াজিব। তাই কেউ সালাম দিলে স্পষ্টভাবে তা শুনিয়ে জবাব দিতে হবে।
  • আদব রক্ষার্থে পাল্টা সালাম নয়: বড় বা শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি সালাম দিলে অনেকে আদব দেখানোর জন্য সালামের জবাব না দিয়ে পাল্টা সালাম দিয়ে থাকেন। এটি নিয়ম পরিপন্থী। বরং সালামের জবাব স্পষ্ট করে দিয়ে যদি কোনো কথা বলতে চান, তবে তা বলাই শ্রেয়।
  • অসুবিধাজনক অবস্থায় সালাম পরিহার: এমন অবস্থায় কাউকে সালাম দেওয়া উচিত নয়, যখন তাঁর জন্য সালামের জবাব দেওয়া কষ্টকর বা অপছন্দনীয় হয় (যেমন প্রস্রাবরত অবস্থায়, বাথরুমের ভেতরে বা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ আমলে মগ্ন থাকা অবস্থায়)।

সুতরাং, আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়—একসঙ্গে দুজনই সালাম দিলে প্রত্যেককেই তাঁর সঙ্গীর সালামের জবাব দিতে হবে, যেন সালামের ওয়াজিব হক আদায় হয়।

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত