Ajker Patrika

‘বিমানের বকেয়া মওকুফ করতে পারব না, এটা অর্থ মন্ত্রণালয় পারবে’ 

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
‘বিমানের বকেয়া মওকুফ করতে পারব না, এটা অর্থ মন্ত্রণালয় পারবে’ 

রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বকেয়া প্রতি মাসেই বাড়ছে। বেবিচক জানিয়েছে, বিমানের বকেয়ার পরিমাণ ৮ হাজার ৮০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে মূল বিল ৯৮৮ কোটি ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ২১৭ টাকা, ভ্যাট ও আয়কর ৪৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং সারচার্জ ৬ হাজার ৬৬১ কোটি টাকার বেশি। বিমান সারচার্জ মওকুফ চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিমানের সারচার্জসহ পুঞ্জীভূত বকেয়া মওকুফ করতে বেবিচককে নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। কিন্তু বেবিচকের তাতে সায় নেই। এ বিষয়ে নিজেদের অভিমত জানিয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে। বেবিচকের অভিযোগ, দেনা পরিশোধে বিমান অনেক বছর ধরেই গড়িমসি করছে।

মন্ত্রণালয়ের বিমান অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের সই করা নির্দেশনায় পুঞ্জীভূত বকেয়ার ওপর সারচার্জ (প্রতি মাসে ৬ শতাংশ হারে) মওকুফ করতেও বলা হয়। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিমানের দেনার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।

বিমানের সারচার্জ মওকুফের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বেবিচক। বেবিচক বিমানের সারচার্জ মওকুফ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতা বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আমরা বিমানের বকেয়া মওকুফ করতে পারব না, এটা অর্থ মন্ত্রণালয় পারবে। এ ছাড়া বেবিচকের চলমান অনেকগুলো প্রকল্পে অর্থসংকট রয়েছে। কিছুদিন পর বিদেশি ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বকেয়া মওকুফ করতে পারি না।’

বেবিচকের অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেবিচককে প্রতিবছর অনাদায়ি অর্থের ওপর ২৫ শতাংশ হারে সরকারি কোষাগারে আয়কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে, বিমানের বিপুল বকেয়ার কারণে একদিকে যেমন পাওনা রাজস্ব আদায় থেকে বেবিচক বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে অনাদায়ি অর্থের ওপর সরকারি কোষাগারে আয়কর পরিশোধের মাধ্যমে বেবিচক আর্থিকভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

১ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে সারচার্জ মওকুফের বিষয়ে আপত্তি জানানোর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বেবিচক চেয়ারম্যান। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে বৈদেশিক ঋণ, সরকারি ঋণ ও অনুদানসহ নিজস্ব অর্থায়নে বেবিচক বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ঋণের ডিএসএল পরিশোধ, নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ সংস্থানসহ জনবলের বেতন-ভাতা, প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহ, সরকারি কোষাগারে এনটিআর (কর ব্যতীত রাজস্ব) ও আয়কর পরিশোধের জন্য নিরবচ্ছিন্ন অর্থ প্রবাহ ঠিক রাখতে সারচার্জসহ বিমানের বকেয়া মওকুফ করা সমীচীন হবে না।’ 

হিসাবেও গরমিল 
বেবিচকের চিঠিতে আরও বলা হয়, ১৫ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এক চিঠিতে ক্রমপুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা উল্লেখ করেছে, যা সঠিক নয়। ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত বিমানের কাছে বেবিচকের বকেয়ার পরিমাণ ৮ হাজার ৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। 

মূল বকেয়া দিতে আগ্রহী বিমান
বেবিচকের মূল বকেয়া দিতে বিমান সব সময় আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. যাহিদ হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেবিচকের মূল বকেয়া দিতে আমরা সব সময় আগ্রহী ছিলাম। তবে সারচার্জ বিষয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। তাই সারচার্জ মওকুফের জন্য বেশ কয়েকবার আবেদন জানিয়েছি।’ যাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘শুনেছি সারচার্জ মওকুফের বিষয়ে মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে, তবে অফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি।’ 

এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর বিমানের এমডি যাহিদ হোসেন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বিমান দেশের জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে ব্যবসা পরিচালনা করে। এ অবস্থায় বেবিচক কর্তৃক দাবিকৃত পুঞ্জীভূত বকেয়ার ওপর সারচার্জ (প্রতি মাসে ৬ শতাংশ হারে) মওকুফ করে জাতীয় পতাকাবাহী বিমানকে আর্থিক কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা করতে সহযোগিতা প্রয়োজন।’ 

আগেও সারচার্জ মওকুফ
জানা যায়, ১৯৭২ সালে যাত্রা করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সব সময় বকেয়ার ভার বয়েই চলেছে। বেবিচকের তথ্যমতে, ২০০৭ সালে বিমানের মূল বকেয়া ৫৭৩ কোটি টাকা সরকারের অন্য সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। আর সারচার্জ ১ হাজার ২১৬ কোটি টাকা মওকুফ করে দেওয়া হয়। ২০০৭ সালের পর থেকে বকেয়া জমছে। 

বিমান ছাড় পেলে প্রাইভেট এয়ারলাইনসেরও পাওয়া উচিত
এ বিষয়ে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিভিল এভিয়েশন আর মন্ত্রণালয় দুই রকম সিদ্ধান্ত নিলে তো বোঝা মুশকিল। সিভিল এভিয়েশন বিমান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।’ এই এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘এক দেশে দুই রকম নিয়ম হতে পারে না; বিমানের জন্য এক রকম, প্রাইভেট এয়ারলাইনসের জন্য আরেক রকম। বিমানের যদি সারচার্জ মওকুফ করা হয়, অন্য প্রাইভেট এয়ারলাইনসেরও একই সুযোগ পাওয়া উচিত। এ ছাড়া বছরে ৭২ শতাংশ সারচার্জ পৃথিবীর কোথাও নেই। এটাকে কমিয়ে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে আনা হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা ও নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় বিপিজেএর নিন্দা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা ও নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় বিপিজেএর নিন্দা

দেশের পাঠকপ্রিয় দুই সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং প্রবীণ সাংবাদিক ও দ্য নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে নাজেহাল ও হেনস্তা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজেএ)।

আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি হারুন জামিল ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী লিথো এই প্রতিবাদ জানান।

বিপিজেএ নেতারা বলেন, সংবাদপত্রের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা স্বাধীন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য।

বিবৃতিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, সমাজে ভিন্নমত থাকবেই এবং মতের ভিন্নতা একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে সহায়তা করে। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধমূলক কাজ নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার দায় দুষ্কৃতকারীদের। নেতারা বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢালাওভাবে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করা চরম অন্যায়।

বিবৃতিতে নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশে যখন একটি সুস্থ ধারার রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার একটি অপচেষ্টা হতে পারে।

বিপিজেএ অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৬
প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ন্যক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে সংগঠন দুটি।

আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জ্ঞাপন ও শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।

এতে বলা হয়, ‘এই হামলা শুধু গণমাধ্যমের ওপর নয়, এটা আমাদের সমাজের ওপর, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ। সর্বোপরি বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ। গভীর রাতের ওই হামলায় প্রতিষ্ঠান দুটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সম্পদহানির পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায় এবং দায়িত্বহীনতারও স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব মনে করে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শুরু থেকেই মব ভায়োলেন্স (সংগঠিত) প্রতিরোধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার যে ধারাবাহিকতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, সর্বশেষ ঘটনা তার আরেকটি ভয়াবহ উদাহরণ। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা প্রমাণ করে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

একই সঙ্গে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব ছায়ানটে হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে ফোন করে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন এবং পাশে আছেন বলে জানান। তবে এই হামলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। বিবৃতি বা আশ্বাস নয়, অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারসহ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্তায় ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে উদ্বেগ, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানালেন জাতিসংঘের ফলকার তুর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১৭
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হাদির মৃত্যুর ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দায়ীদের জবাবদিহি এবং আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।’

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ফলকার তুর্ক সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধ কেবল বিভাজন বাড়াবে এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।’

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়টিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল উল্লেখ করে ফলকার তুর্ক বলেন, ‘এই সময়ে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি, যেখানে জনজীবনে সবার নিরাপদ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকবে।’

ফলকার তুর্ক আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ অস্থিরতা যাতে আর না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার প্রতিবাদে গণমাধ্যমের ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর সংঘটিত ও অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক হামলার ঘটনাকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি, নাগরিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টার্গেটেড শুটিংয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতারই প্রতিফলন। এর ফলে গণরোষ থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি আরও বেড়েছে, যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বিজয়ের দাবিদার কিছু শক্তির আক্রোশপূর্ণ ও প্রতিশোধপ্রবণ আচরণ রাষ্ট্র ও সমাজে নতুন ধরনের দমনমূলক প্রবণতা তৈরি করছে। এর সরাসরি শিকার হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং অতীতে অনুরূপ সংকটে নতজানু অবস্থান গ্রহণ করে রাষ্ট্র নিজেই অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে।

টিআইবি জানায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে আক্রমণ এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়। বরং এসবই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও স্বাধীন মতপ্রকাশকে পরিকল্পিতভাবে দমনের জ্বলন্ত উদাহরণ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে যেভাবে মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত হয়েছিল, আজ সেই একই দমনমূলক বাস্তবতা নতুন রূপে ফিরে আসছে। যারা বিগত ১৬ বছর অধিকার হরণের শিকার হয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনের বিজয়ী হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন, তাঁদেরই একাংশের হাতে আজ মুক্ত গণমাধ্যম ও ভিন্নমতের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও মূল্যবোধ চরম হুমকির মুখে পড়ছে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও বহু সংস্কৃতির সহাবস্থানের যে স্বপ্ন একাত্তর ও জুলাই ধারণ করেছিল, তা আজ গভীর সংকটে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল পতিত শক্তির ইন্ধনে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি এবং মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর, সমন্বিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং একাত্তর ও জুলাইয়ের মৌলিক আদর্শ আরও গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত