Ajker Patrika

রাজনীতিতে অতি আত্মবিশ্বাসের বিপদ

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
রাজনীতিতে অতি আত্মবিশ্বাসের বিপদ

রাজনীতিতে আত্মবিশ্বাস এবং অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা হিসাব-নিকাশে মেলানো যায় না। এ ক্ষেত্রে বেশি সাবধানী হতে হবে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে। কারণ তাদের রাজনীতি ও ভোট অনেকটাই বাস্তব রাজনীতির ওপর নির্ভরশীল।

ব্যক্তি, দল ও সরকারের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব মোটেও কাম্য নয়। তবে সেই আত্মবিশ্বাস হতে হয় বাস্তব অবস্থার ওপর নির্ভর করে। বাস্তবতাবিবর্জিত আত্মবিশ্বাস কখনো সফল হয় না। সুতরাং আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যক্তি, দল ও সরকার সব সময় যেন বাস্তবতাবোধে তাড়িত হয়—এটিই কাম্য। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের নামে যখন এই তিন ক্ষেত্রে অতি আত্মবিশ্বাস ভর করে, তখন মুখে যতই ভালো কথা বলা হোক না কেন, বাস্তবে এর বিপদ এড়ানো অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব ব্যাপার হওয়া ছাড়া অন্য কিছু আশা করা যায় না। এ বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করছি এ কারণে যে, বাংলাদেশে প্রায়ই রাজনৈতিক দল ও সরকারের মধ্যে অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাসী যেকোনো কর্মকাণ্ড শেষ পর্যন্ত বিপদ ডেকে আনতে দেখা যায়। তখন অনেকেরই করার কিছু থাকে না। এই সত্য সংশ্লিষ্টরা জানেন না, তা বলছি না; তবে তাঁরা তা উপলব্ধি করতে প্রায়ই ব্যর্থতার পরিচয় দেন, তেমন অভিজ্ঞতা থেকেই কথাগুলো বলার চেষ্টা করা।

সম্প্রতি বিএনপি দেশে সরকারবিরোধী একটি আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। সেটা তারা করতেই পারে। সেই অধিকার তাদের আছেও। কিন্তু আন্দোলন গড়ে ওঠার আগেই বিএনপির নেতাদের মুখ থেকে এমন কিছু কথাবার্তা, হুমকি-ধমকি, ডেডলাইন দেওয়া এবং ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়ার গ্যারান্টি দেওয়ার মতো উচ্চারণ শুনে মনে হচ্ছে দলটি এখনই আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। আত্মবিশ্বাস পর্যন্ত থাকা মোটেও অন্যায় কিছু নয়, কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাসের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটি বলা মুশকিল। বিএনপি অতীতেও অতি আত্মবিশ্বাসী হয়েই ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে দেশে যে নৈরাজ্য তৈরি করেছিল, তারপর কী হয়েছিল সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৫ সালে টানা ৯৩ দিন অবরোধ ও হরতাল ছেড়ে শেষ পর্যন্ত তাদের ঘরে চলে যেতে হয়। এবার বিএনপি সবে দু-একটি সভা-সমাবেশ শুরু করেছে, এরই মধ্যে নেতাদের কেউ কেউ ১০ ডিসেম্বর ডেডলাইন দিয়ে ফেলেছেন, ওই দিন থেকে বাংলাদেশ নাকি খালেদা জিয়ার নির্দেশে চলবে! তারেক রহমান বিদেশ থেকে দেশে এসে জাতির হাল ধরবেন! আওয়ামী লীগের নেতারা দেশ থেকে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না!—এমন সব দাবি করা হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সে কারণে সরকারকে সেলফ এক্সিট নেওয়ার তাগাদা দিয়েছেন। অন্যান্য নেতাও প্রায় একই ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন।

বলা হচ্ছে যে এবার দেশে গণ-অভ্যুত্থান হবে, আবার কেউ কেউ বলছেন গণ-আন্দোলন হবে। দুটো তো চরিত্রগতভাবে আলাদা এবং জনগণের ওপর নির্ভরশীল বিষয়।

বিএনপির নেতাদের মধ্যে যাঁরা টিভি-টক শোতে আলোচক হিসেবে অংশ নিচ্ছেন, তারাও শেখ হাসিনা সরকারের পতন সম্পর্কে যেন নিশ্চিত হয়ে কথা বলছেন। সেই পতন কেউ কেউ এই ডিসেম্বরেই হবে বলেও দাবি করছেন। নেতা-কর্মীদের মধ্যেও এমন একটি অতি আত্মবিশ্বাসী ভাব তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের অতি আত্মবিশ্বাসী অবস্থা ২০১৩-১৫ সালেও লক্ষ করা গেছে। এমনকি ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি জোটের নেতারা ৩১ ডিসেম্বর সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুংকার দিয়েছিলেন। দাবি করা হয়েছিল, ৩০ ডিসেম্বর দেশে ‘নির্বাচনী বিপ্লব’ ঘটে যাবে। সুতরাং নির্বাচনের পরে সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের দেখে নেওয়া হবে বলেও আ স ম আবদুর রবসহ অনেকেই হুমকি দিয়েছিলেন। এ সবই ছিল তাঁদের অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার মানসিকতা। এবারও সেই সিনড্রোম শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ২০১৩-১৫ এবং ২০১৮-এর অভিজ্ঞতা তাদের একেবারেই আত্মঘাতী ফল ভোগ করতে হয়েছে।

এবার কী হবে, আমরা জ্যোতিষীর মতো কিছু বলতে পারছি না। তবে বিএনপি ও এর জোটভুক্ত দলগুলোর নেতারা, যাঁদের বেশির ভাগই দেশের মানুষের কাছে অপরিচিত, তাঁরাও শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং নিজেদের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ব্যাপারে অতি আত্মবিশ্বাসী ভাব প্রকাশ করছেন, তা গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা লক্ষ করছি।

এখানে দু-একটি বিষয়ে বাস্তবতার অবতারণা করা যেতে পারে। প্রথমত, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এবং সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় তিনি বাসায় অবস্থান করছেন। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। সেটি তিনি বা তাঁকে দিয়ে করানোর চেষ্টা করা হলে সরকার নিশ্চয়ই আইনানুগ পন্থা অনুসরণ করবে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ রোগী বলে দেশবাসী জানে। বিএনপি গত চার-পাঁচ বছর ধরে সেই দাবি করে আসছে; তাঁকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দাবি তাঁরা করছেন। এখন তাঁরা যদি বলেন যে ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে তিনি দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব নেবেন, তাহলে তাঁদের এত দিনকার কথার মধ্যে যে সত্যতা ছিল না, সেটি প্রমাণিত হয়ে যাবে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টিও আইনগতভাবে বেশ জটিল। সুতরাং এ দুই শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপির যেসব কথাবার্তা, তার মধ্যে বাস্তবতার বিস্তর অনুপস্থিতি রয়েছে। ফলে এই আন্দোলনে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের নেতৃত্বে সবটাই বিএনপি নেতাদের মুখের কথা। বাস্তবে তাতে আস্থা স্থাপন করা মোটেও সহজ নয়।

ফলে মাত্র দুই মাস পরে বাংলাদেশে সরকার উৎখাত এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল করার দাবি অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়াকেও বোধ হয় ছাড়িয়ে যেতে পারে। তার পরও যদি বিএনপি অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ে, তাহলে দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া কারও করার কিছু থাকবে না।

অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বে নামসর্বস্ব অনেকগুলো দল নিয়ে গড়ে ওঠা জোটের পক্ষ থেকে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়া, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া ইত্যাদি একের পর এক দাবি শুনে আসছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদকসহ আরও কয়েকজন বিএনপি নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য ও হুংকারের জবাব গণমাধ্যমে দিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগ দৃশ্যত তেমন কোনো জনসভা কিংবা আলোচনা সভায় বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিশেষ কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না। শেখ হাসিনা দেশে গত ১৩ বছর আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছেন, তাতে জনগণের বড় অংশ এর মূল্যায়ন করবে। দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, হচ্ছে, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রবাহ, ডিজিটালাইজেশন, দেশে-বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, কূটনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে সাফল্য এনেছেন, তার ফলে বেশির ভাগ মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন দেবে। দেশে গ্রামীণ সমাজ এবং শহরের মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত, এমনকি দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শেখ হাসিনার শাসনামলে নানাভাবে উপকৃত হয়েছে এবং এর সুফল আওয়ামী লীগ কমবেশি পাবেই—আওয়ামী লীগের মধ্যে এ নিয়ে একধরনের আত্মবিশ্বাস নাকি অতি আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ধারণা যদি আওয়ামী লীগের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকে, তাহলে এর সুফল তারা কতটা ঘরে তুলে নিতে পারবে, তা সামনের দিনগুলোতে কমবেশি বোঝা যাবে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে শেখ হাসিনার সরকার দেশে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাঁক পরিবর্তনের সূচনা করেছিল, ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করেছিল, ১৯৯৮-এর বন্যা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিল এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রেখেছিল। তখন নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে একধরনের অতি আত্মবিশ্বাস ছিল। হয়তো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বাস্তবতা অনুকূলে যেত, কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্য আরেকটি কৃত্রিম বাস্তবতা গভীরে লুক্কায়িত ছিল, যা আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য কেউ বুঝতেও পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার মুহূর্ত থেকেই সবকিছু পাল্টে যেতে থাকে। পরবর্তী অবস্থা সবারই জানা বিষয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে মাঠের বাস্তবতা একভাবে তৈরি হয়েছিল, কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য বাস্তবতা দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। সেটি অনেকে দেখতেও পারেনি, বুঝতেও পারেনি; যা স্পষ্ট হয়েছে নির্বাচনের পর।

সে কারণে আওয়ামী লীগ যেখানে নির্বাচনের আগে বিজয় সম্পর্কে অতি আত্মবিশ্বাসী ছিল, নির্বাচনের পরে তাকে সবচেয়ে বেশি গ্লানিতে পড়তে হয়েছিল। অন্যদিকে বিএনপি বাহ্যিকভাবে কোনো উচ্ছ্বাসও দেখায়নি, কিন্তু ধর্ম ও ভারতবিরোধিতার কার্ড প্রকাশ্যেই খেলেছে; গোপনে শুধু জামায়াতের সঙ্গে ভোট ভাগাভাগির আঁতাতটা সেরে নিয়েছে, তাতেই তাদের কেল্লাফতে। আওয়ামী লীগ এবং আটদলীয় জোটের প্রার্থীরা নিজেদের পরাজয়টা শুধু দেখে দেখেই বরণ করে নিলেন। সে কারণে বলছি, রাজনীতিতে আত্মবিশ্বাস এবং অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা হিসাব-নিকাশে মেলানো যায় না। এ ক্ষেত্রে বেশি সাবধানি হতে হবে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে। কারণ, তাদের রাজনীতি ও ভোট অনেকটাই বাস্তব রাজনীতির ওপর নির্ভরশীল। বিএনপি এবং অন্যদের বিষয়টি যে আলাদা, সেটি তাদের অতীত ও বর্তমান ধ্যানধারণা থেকেই বুঝে নিতে হচ্ছে। তার পরও রাজনীতিতে কী হবে কী হবে না, তা আগাম বলা যাবে না।

সুতরাং আত্মবিশ্বাস ও অতি আত্মবিশ্বাস সবার জন্য একরকম হয় না; বিশেষত বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনোটাই আগে থেকে অনুমান করা যাবে না।

লেখক: মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত