Ajker Patrika

ভুলের পক্ষে কুযুক্তি নয়

ভুলের পক্ষে কুযুক্তি নয়

লাশ নিয়ে রাজনীতি, লাশের পরিচয় নিয়ে রাজনীতি আমাদের দেশে নতুন নয়। আসলে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করলেও রাজনীতিকে এখনো অ্যানালগ বা অতীতের ধারায় রেখে দিয়েছি। রাস্তা দখল, লাশ ফেলে দেওয়া, লাশ নিয়ে মিছিল করা—এগুলো যেমন পাকিস্তান আমলে ছিল, তেমনি বাংলাদেশ আমলেও আছে। অবশ্য শুধু আমাদের দেশ কেন, প্রতিবেশী বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতেও কি কাড়াকাড়ি ও মারামারির রাজনীতি কম চলছে? মানুষকে পক্ষে আনার জন্য আগে তবু রাজনৈতিক দলের নেতারা মানুষের কাছে যাওয়ার গরজ বোধ করতেন। সভা-সমাবেশের আয়োজন করে নিজ দলের কর্মসূচি মানুষের সামনে ব্যাখ্যা করতেন, অন্যদের চেয়ে তাঁরা কোথায় কোথায় আলাদা, তা বুঝিয়ে মানুষকে পক্ষে টানার চেষ্টা করতেন। এখন আর বুঝিয়ে পক্ষে আনার চেষ্টা নেই, এখনকার রাজনীতি হলো ‘ধর তক্তা মার পেরেক’। চলছে ভয় দেখিয়ে জয় করার খেলা। মানুষের বড় সমাবেশ ঘটিয়ে শক্তি প্রদর্শন না করে বোমা ফাটিয়ে শক্তি দেখানো হয়।

কয়েক দিন ধরে দেশের রাজনীতির মাঠ হঠাৎ গরম হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বর্তমান সরকারকে, অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু এই আবদার সরকার কেন রাখবে? ক্ষমতাসীন সরকার পদত্যাগ করে কোন গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়? ৯০ দিন অনির্বাচিত ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন, এটা কেমন গণতন্ত্র! অনির্বাচিতরা নির্বাচন পরিচালনা করলে সেটা সহি নির্বাচন হবে বলে আমাদের নাগরিক সমাজের যাঁরা হইচই করছেন, তাঁরা কার্যত রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করার জন্য উদ্ভট সমাধানের পক্ষেই ওকালতি করছেন নাকি? একদিকে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার দাবি তোলা হবে, অন্যদিকে অনির্বাচিত কোনো শক্তি ক্ষমতা দখল করলে তারও নিন্দা জানানো হবে। এই স্ববিরোধিতাই কি আমাদের রাজনীতির গোড়ায় গলদ নয়?

আমি এটা মনে করি যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দুর্বল হয় আর বিএনপি দুর্বল হয় বিরোধী দলে থাকলে। আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, তা হওয়ার দরকারও নেই। তবে লক্ষ করলে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? বিএনপি সেই ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতার বাইরে আছে। টানা এত বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি কি দুর্বল হয়নি? বিএনপি দুর্বল হয়েছে রাজনৈতিকভাবে এবং সাংগঠনিকভাবেও। আর সে জন্যই বারবার সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর কথা বললেও বাস্তবে মাঠের দখল নিতে পারে না। তাদের শক্তিমত্তা নিয়ে সরকার ও সরকারি দল ঠাট্টা-মশকরা করতে দ্বিধা করে না।

আবার আওয়ামী লীগ যে টানা এত বছর ক্ষমতায় আছে, তাতে কি দলটির সাংগঠনিক শক্তি সংহত হয়েছে, নাকি ক্ষমতায় থাকায় দলটি সরকারের পেটে ঢুকে পড়েছে? আওয়ামী লীগের সরকার এখন পরিণত হয়েছে সরকারের আওয়ামী লীগে। সরকার পরিচালনায় আমলানির্ভরতা রাজনৈতিক দলের শক্তির পরিচয় বহন করে না। 
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলেও বাধা না দিয়ে চা খাওয়াবেন বলে গণমাধ্যমে খবর ছাপা হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার বুঝি রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমপক্ষে ২০টি স্থানে বিএনপির মিছিল-সমাবেশ হয় পুলিশ, না হয় আওয়ামী লীগ ঘরানার কোনো না কোনো সংগঠনের হামলার শিকার হয়েছে। শুধু মিছিল-সমাবেশে বাধা দেওয়া নয়, বিএনপি নেতাদের অফিস-বাসায় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালিয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে।

এর মধ্যে ভোলা এবং নারায়ণগঞ্জে বিএনপির তিনজন নিহতও হয়েছেন। ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিচয় নিয়ে বিতর্ক না হলেও নারায়ণগঞ্জে নিহত শাওনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে টানাটানি হচ্ছে। শাওন আওয়ামী লীগের সমর্থক না বিএনপির, সেটা নিয়ে বিতর্কের চেয়ে জরুরি হলো, তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা। যেহেতু দুই দলই শাওনকে নিজেদের বলে দাবি করছে, সেহেতু তাঁর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিও নিশ্চয়ই দুই দলই করবে। এ ক্ষেত্রে অন্তত দুই দলের ঐক্য হওয়ার সুযোগ আছে। দেখা যাক, শাওনের রাজনৈতিক পরিচয় শেষ পর্যন্ত কোন দলের পক্ষে যায়!

বিভুরঞ্জন সরকার

প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না বলার পর এই সব হামলা-আক্রমণের ঘটনা কেন ঘটছে? বিএনপির আন্দোলন করার মুরোদ নেই, বিএনপি দুর্বল বা শেষ হয়ে গেছে–এসব কথা তো মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা প্রায়ই বলেন। সরকার নিশ্চয়ই বিরোধী দলের চেয়ে শক্তিমান এবং সক্ষম। সে জন্যই বিএনপির ওপর সরকারি দলের হামলাকে দুর্বলের প্রতি সবলের আক্রমণ হিসেবেই মানুষ দেখবে। আর সাধারণত দুর্বলের প্রতি মানুষের সমর্থন-সহানুভূতি থাকে বেশি। বিএনপির প্রতি নতুন উদ্যমে সরকার ও সরকার-সমর্থকদের চড়াও হওয়ার ঘটনায় কেউ কেউ এই প্রশ্নও তুলছেন যে সরকার কি তাহলে ভয় পেয়েছে? অথবা আগামী নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখার জন্য এই চোখরাঙানি কি না?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আমি তো আন্দোলন করার কথা বলছি। আমি তো বলেছি মিছিল করেন, মিটিং করেন শান্তিপূর্ণ। কেউ কিচ্ছু বলবে না। যেখানে শান্তিপূর্ণ হচ্ছে, সেখানে তো কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু এরা তো মাঠে নেমেই আগে কোথায়, কাকে আক্রমণ করবে, কীভাবে একটা অবস্থা তৈরি করবে, এটা করার একটা কারণ আছে, এমনি মিছিল হলে তো মিডিয়াতে কভারেজ পাবে না। মিডিয়াতে কভারেজ বাড়ানোর জন্যই তারা এমন একটা ঘটনা ঘটাবে, তারা যেন একটু...পায়।’

বিএনপি এবং মিডিয়াকে একসঙ্গে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে প্রধানমন্ত্রী এরপর বলেছেন, ‘আমি বলেছি পুলিশকে কিছু না বলার জন্য। এটা ঠিক। কিন্তু পুলিশ তো আগ বাড়িয়ে কিছু করেনি।... ওনাদের কথায় মনে হয়, তারা বোম ছুড়বে, লাঠি মারবে, ঢিল মারবে, গুলি করবে, সব করবে, তাদের কিছু বলা যাবে না।...পুলিশ বাদ দেন, যেকোনো একটা মানুষ যদি আক্রান্ত হয়, তার নিজেকে বাঁচাবার অধিকার আছে। সেটা কি নাই? নাকি পুলিশ হলে, তারা আক্রান্ত হলে, নিজেকে রক্ষা করবার কোনো অধিকার থাকবে না?’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এটা মনে হচ্ছে, পুলিশ যে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিচ্ছে না, তার জন্য দায়ী বিএনপি। বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ কিংবা আন্দোলন করতে পারে না বলেই পুলিশকে লাঠি বা গুলির প্রয়োগ ঘটাতে হয়। আমরা যদি এটা ধরেও নিই যে বিএনপি পুলিশের ওপর আগ বাড়িয়ে ঢিল ছোড়ে বলেই পুলিশ পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয় বলে একটি কথা চালু আছে। কিন্তু ঢিলের বদলে গুলি কেন? বলা হতে পারে, পুলিশের হাতে ঢিল বা পাটকেল থাকে না, থাকে বন্দুক ও গুলি। তাই বিএনপির মিছিল-সমাবেশ থেকে ঢিল ছুড়লে পুলিশকে গুলিই ছুড়তে হয়। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তায় নামেন কেন? বিএনপির মিছিল-সমাবেশ যদি শান্তিশৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের শান্তি রক্ষার দায়িত্ব কে দিয়েছে–সে প্রশ্ন করাই যায়।

বিএনপির যেমন আন্দোলন-সমাবেশ-বিক্ষোভ করার অধিকার আছে, তেমনি সরকারেরও দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের হেফাজত করা। আন্দোলনের নামে সহিংসতা করার অধিকার কারও নেই। অধিকারের সঙ্গে দায়িত্বের সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। এখন সমস্যা হচ্ছে, বিরোধী দল যখন অধিকার প্রয়োগের কথা বলে, তখন দায়িত্বশীলতার কথা ভুলে যায়। আবার সরকার যখন দায়িত্ব পালনের কথা বলে, তখন অধিকারের কথা মনে রাখে না।

আমাদের দেশের রাজনীতির এই এক গভীর সংকট। একপেশে মনোভাব নিয়ে চলা। সরকারে থাকলে এক রকম কথা বা কৌশল, বিরোধী দলে থাকলে ভিন্ন কথা, ভিন্ন কৌশল। এখন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, তাই তারা মানুষের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আবার বিএনপি এখন বিরোধী দলে, তারা ভুলে গেছে ক্ষমতায় থাকতে বিরোধী দলের অধিকার সম্পর্কে তাদের অবস্থান কেমন ছিল। ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও’ বলে যে কথাটি বহুকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তা মনে রাখে না।

নারায়ণগঞ্জে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির সমাবেশে বাধা দেওয়ার কারণ সম্পর্কে পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেছেন, ‘বিএনপি বিনা অনুমতিতে রাস্তা আটকে রেখে মিছিল-সমাবেশ করছিল।’ এখানেও দুটি প্রশ্ন আছে। প্রথম প্রশ্ন, সভা-সমাবেশ করা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। কাজেই সভা-সমাবেশ করতে অনুমতি লাগবে কেন?

দ্বিতীয় প্রশ্ন, এই যে সভা-সমাবেশ করার জন্য পূর্ব অনুমতির বিষয়টি কি আওয়ামী লীগ চালু করেছে? নাকি আগে থেকেই ছিল? বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন এই মৌলিক অধিকারবিরোধী বিধানটি বাতিল করেনি কেন? নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে যে নিয়মের চর্চা করেছে, আওয়ামী লীগও তা-ই করছে? কেউ বলতে পারেন, আওয়ামী লীগ কেন বিএনপির জুতো পায়ে দিয়ে পথ চলবে? তখন আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা বলবেন, বিএনপির খারাপটা মানুষ সহ্য করলে আওয়ামী লীগেরটা অসহ্য লাগে কেন?

এসব বিতর্কের আসলে শেষ নেই। কার কথা মনে নেই, কিন্তু কথাটি প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে উদ্ধৃত করছি। কথাটি হলো ‘জ্ঞানী ভুল করলে অনুতপ্ত হয় আর নির্বোধ ভুল করলে ভুলের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করায়।’

লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত