Ajker Patrika

উত্তীর্ণ কমিশন, ‘কষ্টের’ জয় বাহার-রিফাতের

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ১০: ২৫
উত্তীর্ণ কমিশন, ‘কষ্টের’ জয় বাহার-রিফাতের

১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন হয়ে গেল। একই দিনে দেশে কয়েকটি উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউপি নির্বাচন ও উপনির্বাচনও হয়েছে। তবে সবার চোখ ছিল কুসিক নির্বাচনের প্রতি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় গণমাধ্যমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে নানা খবর, আলোচনা, পর্যালোচনা নিয়মিত বিষয় ছিল। এর প্রধান কারণ, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। অন্য নির্বাচনগুলোও একই দিনে হওয়ায় এগুলোও গুরুত্ব পাওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও গণমাধ্যমে তা ঘটতে দেখা যায়নি।

সিটি করপোরেশনের মর্যাদাই বোধ হয় আলাদা! তাই কুসিক নির্বাচন নিয়ে প্রথম থেকেই গণমাধ্যমগুলো সজাগ ছিল। মেয়র পদে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে আরফানুল হক রিফাতকে মনোনয়ন দিয়েছে। বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় অটল থেকেছে। কিন্তু বিএনপির দুজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। তাঁদের একজন দুবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, অন্যজন স্বেচ্ছাসেবক দলের নিজাম উদ্দিন কায়সার। দুজনকেই বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম এবং কামরুল আহসানসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কুসিক নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে মাত্র ৩৪৩ ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করেন। সব প্রার্থী সারা দিন নির্বাচনে নিজ নিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও দিন শেষে বোঝা যাচ্ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে রিফাত বনাম সাক্কুর মধ্যে।

ফলাফল গণনার শুরুতেই সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট হতে থাকে। যদিও মধ্যখানে কিছুক্ষণ রিফাত প্রায় ৮-১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ক্রমেই উভয়ের ভোটের ব্যবধান কমতে কমতে ওপর এবং নিচে নামার চক্র তৈরি হতে থাকে। তখন জয়-পরাজয়ের ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার শেষ মুহূর্তে উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা হট্টগোলের কারণে কিছু সময় ফলাফল ঘোষণা বন্ধ রেখে শেষ কেন্দ্রের ফলাফলগুলো দ্রুত ঘোষণা করেন। তাতে রিফাতের ৫০ হাজার ৩১০ এবং সাক্কুর ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট হওয়ায় রিটার্নিং অফিসার বেসরকারিভাবে রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। সাক্কু এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। আগে থেকেই দুজনের ফলাফলের মধ্যে যে ধরনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছিল তাতে জয়-পরাজয়টি শেষ মুহূর্তে কেবল সামান্য ভোটে নির্ধারিত হবে, সেটি অনুমান করা যাচ্ছিল, ঘটেছেও তা-ই। রিফাত হেরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। শেষ ৪-৫টি কেন্দ্রের ফলাফলেই চূড়ান্ত বিজয়ী বা পরাজিত হওয়ার ভাগ্য নির্ধারণ করছিল। সাক্কু যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলো লিখিতভাবে করলে নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারে। কিন্তু ইভিএমের কেন্দ্রভিত্তিক গণনা করা ফলাফল সেই মুহূর্তে সাক্কুর দাবি মোতাবেক পরিবর্তন করার সুযোগ বা প্রয়োজনীয়তা রিটার্নিং কর্মকর্তার থাকার কোনো কারণ দেখি না।

তা ছাড়া, সিইসি এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় অবস্থান কারও অজানা নয়। আমরা আশা করব, নতুন কমিশন সাক্কুর অভিযোগের যথার্থ জবাব দেবে। রিফাতের কর্মীদের ভোট গণনাস্থলে গিয়ে এভাবে মুহুর্মুহু স্লোগান ও উত্তেজনা ছড়ানোতে অংশ নেওয়া দেশের টিভি দর্শকদের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য হয়নি। এর ফলে সাক্কুর সমর্থকদের মধ্যেও অতি উত্তেজনা ছড়াতে সুযোগ করে দিয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি সেই মুহূর্তে মোটেও এভাবে মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রয়োজন ছিল না। রিটার্নিং কর্মকর্তার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের আহ্বান কিংবা নির্দেশ কাউকে না দিয়ে বসে থাকাটিও যথার্থ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরং স্বীয় উদ্যোগেই দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিল। কুসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত দিনগুলোতে কিংবা নির্বাচনের দিন কোথাও কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এটি সবার কাছেই প্রশংসনীয় হয়েছিল। প্রচারকালে মূল তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু কারও কর্মীদের মধ্যে কোনো ছোটখাটো মারামারিও হয়নি বলেই সবাই জানে। কিন্তু শেষ কয়েকটি মুহূর্তে কেন স্লোগান-পাল্টা স্লোগানে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থকেরা এভাবে উত্তেজনা ছড়ালেন, সেটি কারও বোধগম্য নয়। তবে জয়-পরাজয়ের দোলাচলে যখন শেষ মুহূর্তে রিফাতের সমর্থকেরা গণনাস্থলে মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছিলেন তখন দর্শক হিসেবে আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, মাঠের শেষ ফলে রিফাতের জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই সমর্থকেরা এভাবে স্লোগান তুলেছিলেন। পরাজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকলে অনেকেই হয়তো ঘটনাস্থল ত্যাগ করতেন। কিন্তু তারপরও তাঁদের ওই উত্তেজনাটুকু না ছড়ালেই ভালো হতো। সাক্কু ফলাফলে ইঞ্জিনিয়ারিং করার অভিযোগ আনার তাৎক্ষণিক কোনো সুযোগ পেতেন না।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারীকুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। কিন্তু ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪ জন, বাতিল হয়েছে ৩১৯ ভোট। মোট ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সিইসি নির্বাচন শেষে ঢাকা থেকে কুমিল্লার নির্বাচনের সামগ্রিক চিত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। বর্তমান কমিশনের জন্য এটা একটি টেস্ট কেস ছিল। সে ক্ষেত্রে তারা সামগ্রিক বিচারে উত্তীর্ণ হওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েছিল। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অংশীজনের সবাই যাঁর যাঁর দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করেছিলেন। এ কারণে নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং অংশগ্রহণও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে সব মহলই মনে করছে।

এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কুমিল্লার ভোটার এবং দেশের অনেকেরই অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। কারণ, কুমিল্লা একসময় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এই শহরে মরহুম আফজল খান এবং এমপি বাহারের দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব আওয়ামী লীগকে কখনো ঐক্যবদ্ধ হতে দেয়নি। ২০১২ সালে প্রথম কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হন সাক্কুর কাছে। পরের নির্বাচনেও সাক্কু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। দুই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হন। সেই পরাজয়ের নেতৃত্বেও আফজল-বাহার দ্বন্দ্বের কথা উচ্চারিত হয়েছে। সাক্কুকে বাহার আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এবার মনোনয়ন দানে বাহারের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন রিফাত। কিন্তু আওয়ামী লীগে মেয়র পদে নির্বাচন করার মতো যোগ্য প্রার্থীর অভাব ছিল না, যাঁরা অনায়াসে বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে পারতেন। কিন্তু সেটি ঘটেনি। এর ফলে সাধারণ ভোটার এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ যেমন ছিল, নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণেও তেমন স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায়নি। এর প্রভাব নির্বাচনে কতটা পড়েছে, সেটি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। তা ছাড়া, এমপি বাহার কুমিল্লায় থাকা না-থাকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি দেওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি একটা বড় ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করেছিল। রিফাতকে জয়ী করে ঢাকায় যাবেন—এমন বক্তব্য দানটিও তাঁর অবস্থান থেকে সেই সময় সচেতন ভোটারদের কাছে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে। সামগ্রিকভাবে কুসিক নির্বাচনে যা পাওয়া গেল, তাতে আওয়ামী লীগের সন্তুষ্ট হওয়ার খুব বেশি সুযোগ রয়েছে বলে মনে হয় না।

অন্যদিকে বিএনপির সাবেক দুই নেতা বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে নির্বাচনটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে সাহায্য করেছেন। তাঁরা দুজন না দাঁড়িয়ে একজন দাঁড়ালে রিফাতের গোমতী নদীতে ভেসে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। নির্বাচনী প্রচারকালেও রিফাতের বক্তব্য, আচরণ টিভি দর্শকদের খুব আকর্ষণ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। সত্যিকার অর্থে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে একটি জনবসতিপূর্ণ নগরীতে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রার্থী কুমিল্লাবাসী পেয়েছেন বলে হয় না। রিফাত দায়িত্ব নিয়ে কী করতে পারবেন, সেটি কেবল ৫ বছর পর বোঝা যাবে। সাক্কু ১০ বছর কী করতে পেরেছেন? তারপরও তাঁর এবার শক্ত অবস্থানের পেছনে ভোটারদের কী বার্তা পাওয়া গেল, সেটি কোন ধরনের ভোটার ও সমর্থক, তা কান দিয়ে শুনতে হবে, মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করতে হবে। ১৫ জুন কুমিল্লা শহরের পাশাপাশি পাঁচটি পৌরসভা, চারটি উপজেলা পরিষদ এবং দেড় শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেসব নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। ইভিএম নিয়ে ধীরগতির একটি অভিযোগ সর্বত্রই শোনা গেছে। তবে গণমাধ্যমে কুসিক নির্বাচন ওই সব নির্বাচনকে স্থান দেয়নি। তারপরও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে অনেকটাই সফল হয়েছে বলা যায়। আগামী দিনে আরও বেশ কিছু সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আউয়াল কমিশনকে ক্রমাগত পরীক্ষা দিয়েই যেতে হবে। সেই পরীক্ষায় তাদের সাফল্যেই জনগণের সাফল্য নির্ভর করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত