Ajker Patrika

টিটিই শফিকুলের বর্ণনায় সেদিনের ঘটনা

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ মে ২০২২, ১৪: ৫৮
টিটিই শফিকুলের বর্ণনায় সেদিনের ঘটনা

দেশব্যাপী আলোচনায় আসা পাবনার ঈশ্বরদীর রেলওয়ের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের পর তিনি সেদিন কী ঘটেছিল সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

আজ রোববার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে পাকশীতে তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হন শফিকুল। এর আগে তিনি পাকশীর বিভাগীয় সদর দপ্তরে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে সেদিন যা ঘটেছিল তার বর্ণনা দেন। 

ওই দিন ও পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার রাতে দায়িত্ব পালনের জন্য আমি স্টেশনে আসি। ঈশ্বরদীর ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গাড়ি (ট্রেন) আসার পর আমাকে জানানো হয় সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) মো. নুরুল আলম স্যারের অনুরোধে তিনজন যাত্রী ট্রেনে উঠেছেন। তাঁরা এসি কেবিন যেটা ফাঁকা আছে সেখানে উঠেছেন। তখন আমি বললাম যে, তাহলে কী এসিও স্যারকে ফোন করে জেনে নেব যে তাঁরা কীভাবে যাবে? যেহেতু তাঁরা বলেছেন বিনা টিকিটের যাত্রী। আমি তখন এসিও স্যারকে ফোন দিই, তখন স্যার বলেন ‘হ্যাঁ রেলমন্ত্রীর আত্মীয় আছে তিনজন, ওরা এসি রুমের কেবিনে যাবে।’

শফিকুল ইসলাম বলেন ‘আমি তখন বলেছি, স্যার আসলে তাদের তো কোনো টিকিট-মিকিট নাই, তাহলে কী করি? তখন স্যার বলেন, ‘‘তাহলে তাঁদের সাধারণ মানের যে টিকিট আছে, ওটা করে দিয়েন।’’ তারপর যাত্রীদের সঙ্গে আমার কোনো সাক্ষাৎ বা কোনো কিছুই হয়নি। ট্রেনের গার্ডরাও আমাকে কোনো ইনফরমেশন দেননি যে, তারা ফ্রি যাবেন কিনা বা এ রকম কিছু। হয়তো স্যারের সঙ্গে তাদের (গার্ড) কথা হতে পারে। কিন্তু আমার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তারপর যথারীতি গাড়ি (ট্রেন) চালু হলে আমি চেকিং শুরু করি।’

টিটিই শফিকুল বলেন, ‘ট্রেনে চেকিং শুরুর সময় ট্রেনের অপারেটরকে জিজ্ঞেস করলাম কোন কেবিনে তাঁরা (মন্ত্রীর আত্মীয়) আছেন? আমাকে দেখানোর পর আমি সেখানে যাই। আমি তাঁদের (যাত্রীদের) সম্মানের সঙ্গে বললাম, আপনাদের তো মনে হয় কোনো টিকিট-মিকিট নাই। আমাকে এসিও স্যার যেহেতু বলেছেন, তাই আপনাদের নরমাল রুমের যে ভাড়া সেটা দিন, আমি টিকিটের ব্যবস্থা করে দিই। তখন তাঁরা বলেন, ‘‘কত টাকা ভাড়া?’’ আমি বললাম, ‘‘তিনজনের জনপ্রতি ৩৫০ টাকা হারে ১ হাজার ৫০ টাকা। এ সময় তারা ১ হাজার টাকার একটা নোট এবং ৫০ টাকার একটা নোট বের করে দেন। আমি তাদের ভাড়া আদায়ের রশিদ দিয়ে চলে গেছি। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে আমার আর কোনো কথা-বার্তা হয়নি।’

মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় পাওয়ার পরও তাদের জরিমানা করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে টিটিই শফিকুল বলেন, ‘হ্যাঁ, বাড়তি ভাড়ার টিকিট ছাড়া আমি যেহেতু টিকিট ইস্যু করতে পারি না, তাই তাঁদের জরিমানাসহ টিকিট দিয়েছি। ঈশ্বরদী থেকে ঢাকার কাউন্টার ভাড়া ২৯৫ টাকা, জরিমানাসহ জনপ্রতি ৩৫০ টাকা করে ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়েছি।’

বাগ্‌বিতণ্ডার ব্যাপারে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে তাঁদের এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাঁরা কী কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেন, আমি সেটা জানি না, বলতেও পারব না।’ 

মাদকাসক্তের অভিযোগের ব্যাপারে টিটিই শফিকুল বলেন, ‘আমি মাদক সেবন তো দূরের কথা, আমি বিড়ি-সিগারেটও খাই না। এমনকি চা স্টলে চা-ও খাই না। চাকরিজীবনে এটি আমার প্রথম সাময়িক বরখাস্তের ঘটনা। আমি যদি মাদকাসক্ত হতাম, তাহলে এত দিন এভাবে সুনামের সঙ্গে চাকরি করতে পারতাম না।’

শফিকুল দাবি করে বলেন, ‘চাকরির প্রথম দিনই ৭৮ হাজার ৪৩৬ টাকা রাজস্ব জমা দিয়েছি। আমি মানসিক বিকারগ্রস্ত নই, অথচ আমাকে এমন অপবাদ দেওয়া হয়েছে।’ 

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকাগামী আন্তনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে এসি রুমে ওঠেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ের তিন যাত্রী। মাঝপথে তাঁদের বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের দায়ে জরিমানা করে সাময়িক বরখাস্ত হন টিটিই শফিকুল ইসলাম। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশব্যাপী সমালোচনার শুরু হয়। 

এই সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে চোর ধরতে গিয়ে পরিত্যক্ত ঘরে মিলল নিখোঁজ ব্যবসায়ীর লাশ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
লাশ উদ্ধারের পর নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবি: আজকের পত্রিকা
লাশ উদ্ধারের পর নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে নিখোঁজের আড়াই মাস পর একটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘর থেকে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের পারুলী নদীর ওপর নির্মিত পরিত্যক্ত বেইলি ব্রিজের নিচে থাকা ওই ঘর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত ব্যবসায়ীর নাম মো. আসাদুজ্জামান সরকার ওরফে আসাদ (৫০)। তিনি রাজাবাড়ি ইউনিয়নের মিটালু গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং রাজাবাড়ি বাজারে একটি ফার্নিচারের দোকান পরিচালনা করতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোরের দিকে রাজাবাড়ি বাজারে চোর প্রবেশ করেছে—এমন খবরে বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন চোরকে ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে ব্রিজের নিচে পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে চোর খুঁজতে গিয়ে একটি মরদেহ দেখতে পান তাঁরা। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

নিহতের ছেলে জনি সরকার জানান, চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে তাঁর বাবা বাড়ি থেকে দোকানের উদ্দেশে বের হন। রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ করা হলেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

জনি সরকার বলেন, ‘আজ দুপুরে জানতে পারি বাজারের পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘরে মরদেহ পড়ে আছে। এসে বাবার পরনের গেঞ্জি, লুঙ্গি ও দাঁড়ি দেখে মরদেহ শনাক্ত করি। কীভাবে বাবার মৃত্যু হয়েছে বা কে জড়িত—কিছুই বুঝতে পারছি না।’

রাজাবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বাজারে চোর ঢুকেছে বলে নিরাপত্তা প্রহরীরা চিৎকার দেন। তখন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দিয়ে পরিত্যক্ত ঘরে ঢুকে মরদেহ দেখতে পান।

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সঞ্জয় সাহা বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে ভারতীয় হাইকমিশন ও মিডিয়া ভবনে নিরাপত্তা জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীর জাকির হোসেন সড়কের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান, নিরাপত্তাচৌকি। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম নগরীর জাকির হোসেন সড়কের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান, নিরাপত্তাচৌকি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর এলাকাটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সেখানে সেনাবাহিনীর সাতটি গাড়ি ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। একই সঙ্গে মিডিয়াপাড়া হিসেবে পরিচিত নগরের কাজীর দেউড়িতে একটি ভবনসহ প্রেসক্লাবের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে খুলশীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিস ও নগরের কাজীর দেউড়ি, জামালখানসহ আশপাশে এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ভারতীয় হাইকমিশন ও বাসভবনের সামনের এক অংশের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে সামান্য দূরে পুলিশের একটি দল সন্দেহজনক গাড়িগুলোকে থামিয়ে তল্লাশি করছে।

এদিকে মিডিয়া ভবনখ্যাত নগরের কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত কর্ণফুলী টাওয়ারের সামনেসহ আশপাশে সকাল থেকে পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে। ওই ভবনে ডেইলি স্টার, আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টিভি চ্যানেল রয়েছে। ঢাকায় ভাঙচুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখানকার সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে।

এর আগ বৃহস্পতিবার রাতে ওসমান হাদির হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ চলাকালে খুলশীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, একটি পক্ষ বিক্ষোভ শেষ করে চলে যাওয়ার প্রায় পাঁচ মিনিট পর হঠাৎ ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে আবার ওই কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর তারা কার্যালয় লক্ষ্য করে বাইরে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে কার্যালয়ের ভেতরে দায়িত্বে থাকা তিন পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
হত্যার শিকার দিপু চন্দ্র দাসের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হত্যার শিকার দিপু চন্দ্র দাসের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার শিকার দিপু চন্দ্র দাসের (২৮) পরিবার দাবি করেছে, কোম্পানির লোকজনই তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

নিহত দিপু চন্দ্র দাসের বোন চম্পা দাস বিলাপ করে বলেন, ‘আমার ভাই বিএ পাস। সে সাধারণ বাটন মোবাইল ব্যবহার করত। ধর্ম নিয়ে তার যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। নবীকে নিয়ে কটূক্তি করার মতো মানুষ সে নয়। উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল—এমন কথা শুনেছি। সেই কারণেই হয়তো তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, কোম্পানির লোকজন চাইলে তাঁকে জনতার হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশের কাছে দিতে পারতেন। তাহলে এমন নির্মম মৃত্যু হতো না।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকায় একটি অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর মরদেহে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অর্ধদগ্ধ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

নিহত দিপু চন্দ্র দাস জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়াকান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি দুই বছর ধরে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকার পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেডে কাজ করছিলেন।

কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ড ফিরোজ মিয়া দাবি করেন, দিপু চন্দ্র দাস ধর্মীয় বিষয়ে কটূক্তি করেছেন—এমন অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। তিনি ক্ষমা না চাওয়ায় বিষয়টি কোম্পানির ভেতরে ও বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বাইরের লোকজন কারখানার গেটের সামনে জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তাঁকে জনতার হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং মরদেহ গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে এ বিষয়ে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে গেটে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি।

নিহতের বাবা রবি চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার ছেলে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করলে দেশে আইন আছে, আইনের মাধ্যমেই বিচার হতো। আমরা গরিব বলে ছেলের জীবন রক্ষা করতে পারিনি।’

নিহতের স্ত্রী মেঘনা রানী বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান আজ বাবা-হারা। অভাবের সংসার নিয়ে কোথায় যাব, বুঝতে পারছি না। এই হত্যার বিচার চাই।’

ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির হত্যাকাণ্ডকে ‘ব্যবহার করে’ উচ্ছৃঙ্খলতার নিন্দা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৮
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ৭ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। ফাইল ছবি
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ৭ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। ফাইল ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। একই সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চের নেতার হত্যাকারীদের ও তাদের পেছনের শক্তির বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ৭ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করা এই জোট।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নিয়ে গঠিত জোটটি আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, ওসমান হাদির শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সারা দেশে তাঁর সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। একই সঙ্গে ওসমান হাদির ওপর ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনায় এবং সার্বিকভাবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন, গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট দেশের বিভিন্ন স্থানে এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে চলমান উচ্ছৃঙ্খলতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

জোটের শীর্ষ নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত কাইয়ূম ও মজিবুর রহমান মঞ্জু যৌথ বিবৃতিতে বলেন, পরাজিত ও পলাতক হাসিনার খুনি-সন্ত্রাসী, ভারতীয় আগ্রাসনবাদী ও দেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দোসরেরা মিলে দেশে চরম অরাজকতা তৈরি করতে চান। দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তারা তৈরি করতে চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ বানচাল করে এ দেশে অগণতান্ত্রিক তৃতীয় শক্তির উত্থান তারা করতে চায়।

তাদেরই উসকানিতে গতকাল রাতে একাধিক পত্রিকা অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কূটনীতিকের বাসভবনে হামলা হয়েছে; দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও জুলাইয়ের অন্যতম পক্ষশক্তি নূরুল কবীরকে নাজেহাল করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান নেতারা।

বিবৃতিতে জোটের শীর্ষ তিন নেতা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে শোকসন্তপ্ত জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। খুনি, সন্ত্রাসী ও দেশবিরোধী শক্তির উসকানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত