Ajker Patrika

উচ্চশিক্ষার ব্যয় বেড়েই চলেছে

রবিউল আলম, ঢাকা
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮: ৪৯
উচ্চশিক্ষার ব্যয়  বেড়েই চলেছে

সাতক্ষীরার দরিদ্র মৎস্যজীবী আজিত বিশ্বাসের তিন মেয়ের মধ্যে বড় মারুফা খাতুন এবার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে তাঁর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থসংকট।

একই সমস্যায় পড়েছিলেন ভ্যানে করে গাছ বিক্রির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের তাজগীর হোসেন। তিনি এবার খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

এই দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁদের খবর সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানা গেছে, তাঁদের স্বপ্নপূরণের সারথি হতে কেউ কেউ এগিয়ে এসেছেন। আর যাঁদের হয়নি তাঁরা ধারদেনা করে কোনোমতে ভর্তি হয়েছেন। তবে ব্যয়বহুল এই উচ্চশিক্ষায় টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় প্রতিমুহূর্তে তাঁদের ওপর ভর করে আশঙ্কা।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল বা প্রকৌশল ছাড়াও সাধারণ বিষয়ে পড়াশোনার খরচ বাড়ছে। ফলে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা দিনদিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী কাজী ইয়াসমিন আরা বীথি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বছরের পর বছর বিভিন্ন ফি বৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের পথে বড় একটি বাধা।

সবকিছুর দাম বাড়ছে, এ অজুহাত দিয়ে উচ্চশিক্ষার খরচ বাড়ানো অযৌক্তিক। কারণ, শিক্ষা তো বাজারের অন্য দশটা পণ্যের মতো নয়।

আয় বাড়াতে হবে

খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আয় বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ২০ বছর মেয়াদি কৌশলপত্রের পরামর্শ অনুযায়ী, দেশে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৫ বছরে সন্ধ্যা কোর্স চালু হয়েছে। সন্ধ্যা কোর্সের অধীনে এমবিএসহ নানা ডিগ্রি নিতে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা করে খরচ হচ্ছে।

শিক্ষাবিস্তারে এই সন্ধ্যা কোর্স চালু বলা হলেও কোর্সগুলোর এত বিপুল অর্থ নেওয়ার প্রক্রিয়াকে সনদ বিক্রি করে টাকা আয়ের পন্থা হিসেবে দেখছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, শুধু সন্ধ্যা কোর্স নয়, ইউজিসির কৌশলপত্রের পর গত ১৫ বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ছোট থেকে শুরু করে মাঝারি ও বড় আয়োজনের অধিকাংশেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগো ব্যবহার কয়েক গুণ বেড়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপও এর একটি অংশ। তবে এখনো উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি।

ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় ছিল কমপক্ষে ৭২ হাজার ৮৯২ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে এ ব্যয় ৩ থেকে ৪ গুণ বা এরও বেশি। কোর্স ফি, ল্যাব ফি, ভর্তি ফি, অন্যান্য খরচসহ ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর এক বছরের প্রাতিষ্ঠানিক খরচ প্রায় আড়াই লাখ টাকা।

অন্যদিকে জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া একই সময়ে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭৮৬ টাকা। এই ব্যয়ের বাইরেও প্রতিবছর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয়। গত কয়েক বছর এই খরচ ক্রমেই বাড়ছে।

Captureগত কয়েক বছর উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন বর্ষে ভর্তি ফি, হলের বিভিন্ন ফিসহ নানা রকমের ফি কয়েক গুণ বেড়েছে। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে হল স্থাপনা চাঁদাসহ মোট খরচ ছিল ১ হাজার ৩৭০ টাকা। অথচ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১০০ টাকায়।

এ ছাড়া এই সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয়ও বেড়েছে কয়েক গুণ। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় ছিল সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে এই আয়ের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৬৪ কোটি ৫২ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এই ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টির অভ্যন্তরীণ আয় বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। স্বাভাবিকভাবেই অভ্যন্তরীণ এই আয়ের প্রায় সবটুকুই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ফি বাবদ আদায় করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

প্রাথমিকেও বাড়ছে খরচ

শুধু উচ্চশিক্ষা নয় প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও পড়াশোনার খরচ বৃদ্ধিও কোনো অংশে কম নয়। বরং সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় অনেক বেশি করতে হয় অভিভাবকদের।

বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন পুরান ঢাকার রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমার দুই সন্তানের একজন নবম এবং আরেকজন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। দুই সন্তানের টিউশনি বাবদ ৮ হাজার টাকাসহ পড়াশোনার খরচ মেটাতেই আয়ের এক-তৃতীয়াংশ চলে যায়। তার ওপর রয়েছে বাসাভাড়া আর অন্য খরচ। ফলে এত টাকা আয় করেও মাস শেষে কিছুই থাকে না।

`বাংলাদেশ টিউটর প্রোভাইডারস’ অ্যাসোসিয়েশনের মতে, গত ৫ বছরে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া বৃদ্ধিসহ কয়েকটি কারণে টিউশন ফি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এ ছাড়া ইউনেসকোর ২০২১-২২ গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে বলছে, বাংলাদেশের প্রায় ৭ শতাংশ পরিবারকে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ঋণ নিতে হয়।

মন্ত্রীর বক্তব্য ও বিতর্ক

এদিকে কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছে সরকার। সম্প্রতি সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে পড়ার সংস্কৃতি থেকে সরে আসা দরকার। ঠিক তেমনি যাঁদের দেওয়ার ক্ষমতা আছে, শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা আছে, তাঁরা সেই ব্যয়ভার বহন করেই শিক্ষা গ্রহণ করবেন।

শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদও করেছে কয়েকটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠন। তারা বলছে, ইউজিসির কৌশলপত্রে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকে উৎসাহিত করছে। শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য তারই প্রতিফলন।

তবে শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন। তিনি বলেন, শিক্ষা একপ্রকার বিনিয়োগ। তাই অন্য জিনিসের সঙ্গে এর তুলনা হওয়া সমীচীন নয়। নাগরিকের জন্য শিক্ষায় এই বিনিয়োগের মূল দায়িত্ব সরকারের। উল্টো সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অভ্যন্তরীণ আয় আরও বাড়াতে চাপ দিচ্ছে।

উচ্চশিক্ষা সবার জন্য না

সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত ফির চাপ নয়, বরং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উৎসাহিত করি। গবেষণা করলে বিদেশ থেকে তহবিল আসবে। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব আয় বাড়বে।’ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যকর সংযোগ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এটা হলে শিক্ষকেরা শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবেন। এর বিনিময়ে তাঁরা ভালো তহবিল পাবেন। এটা করতে পারলে আয় বাড়ানো কঠিন কাজ না। তবে এটাও মনে রাখা দরকার উচ্চশিক্ষা একেবারে সবার জন্য না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত