Ajker Patrika

সরকারের আশ্বাস প্রতিপালিত হবে কি?

এ কে এম শামসুদ্দিন
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ০২
সরকারের আশ্বাস প্রতিপালিত হবে কি?

আমি যখন স্কুলে পড়ি, তখন আমাদের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন, যাঁকে আমরা যমের মতো ভয় পেতাম। নাম সিদ্ধেশ্বর হালদার। ভীষণ রাগী কিন্তু বিদ্বান ও পণ্ডিত ছিলেন। তিনি আমাদের অঙ্কের ক্লাস নিতেন। ক্লাসে মনোযোগী না হলে প্রচণ্ড রেগে যেতেন। স্যারের অঙ্কের পাণ্ডিত্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। তাঁর একটি বিশেষ গুণ ছিল। সমাজে নিজেদের ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য তিনি প্রতিদিন অঙ্ক করানো শেষে একটি করে উপদেশ দিতেন। তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। কদিন বাদেই এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা। সিদ্ধেশ্বর স্যারের শেষ ক্লাস। তিনি সবার উদ্দেশে বললেন, ‘তোদের সঙ্গে আজই আমার শেষ ক্লাস। তোরা স্কুলজীবন শেষ করে কলেজে যাবি, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে নতুন নতুন পেশায় জড়িয়ে পড়বি। একটা কথা মনে রাখিস, নিজ থেকে কেউ কাউকে সম্মান দেয় না। নিজের কাজ ও ভালো আচার-আচরণের বিনিময়ে সম্মান অর্জন করতে হয়। আত্মমর্যাদাশীল ব্যক্তিরাই সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকেন। যিনি নিজেকে সম্মান করতে জানেন না, তিনি অন্যের সম্মানও আশা করতে পারেন না। একজন মানুষের আত্মসম্মানবোধ বড় অমূল্য সম্পদ। এই আত্মসম্মান সারা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে তৈরি হয়। অভিজ্ঞতা যদি ভালো হয়, তাহলে উচ্চ আত্মসম্মানবোধ তৈরি হবে। আর যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে তার বিপরীত হবে।’

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল যেদিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তখন সেই সিদ্ধেশ্বর হালদার স্যারের কথাই মনে পড়ছিল আমার। জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে গিয়ে তাঁদের জীবনহানির আশঙ্কা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছিলেন। সরকারের উঁচু মহলের বিশেষ অনুরোধে তিনি সস্ত্রীক গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের কাছে। পিতাসম দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের বুঝিয়ে অনশন ভাঙাতে রাজি করিয়েছেন। জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী গোটা জাতি, বিশেষ করে বর্তমান সরকারকে আশঙ্কামুক্ত করেছেন। এ কাজটি করে তাঁরা অকৃত্রিম মহানুভবতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। এই শিক্ষক দম্পতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন অনেক আগেই; কিন্তু তাঁরা এখনো শিক্ষার্থীদের কাছে সমভাবে জনপ্রিয় ও আস্থার জায়গা। যে কাজটি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির অনেক আগেই করা উচিত ছিল, সে কাজটিই অধ্যাপক জাফর ইকবাল করে দেখিয়েছেন।

আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করেছি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে শিক্ষামন্ত্রী ঢাকায় বসে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। তিনি টেলিফোনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও তাঁদের কাছে যাননি। ৭১ টিভির একটি টক শোর আলোচক জ ই মামুন সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে কেন গেলেন না—জিজ্ঞেস করতে দীপু মনি বলেছিলেন, ‘দেখেন, সবকিছুর একটা সময় আছে। সঠিক সময়, সঠিক কাজটি করতে হয়। অর্থাৎ “রাইট টাইম”। এখন ড. জাফর অনশন ভাঙিয়েছেন, আমি টেলিফোনে ওনাদের উপস্থিতিতেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

জাফর ইকবাল অনশন ভাঙানোর পরপর সাংবাদিকদের বলেছেন, উচ্চপর্যায়ের কিছু ব্যক্তির অনুরোধে একটি শর্তে এই কাজে রাজি হয়েছেন যে শিক্ষার্থীদের সব দাবি সরকার মেনে নেবে। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, উপাচার্যের অপসারণের দাবি যদি সরকার না মানে, তখন আপনার কী অবস্থান হবে? উত্তরে তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু প্রশাসন আন্দোলনকে ভণ্ডুল করতে যেসব পথ বেছে নিয়েছে, তা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়। আর এই শিক্ষার্থীদের দাবি সরকার যদি না মানে, সেটা হবে তাঁর এবং দেশের প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

 শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রিয় শিক্ষকের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের অপসারণের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গত ২৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছে। তারপর বেশ কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও উপাচার্যের পদত্যাগ অথবা অপসারণের কোনো উদ্যোগ সরকার নিয়েছে কি না, জানা যায়নি। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের আস্থার প্রতিদান দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এই আশ্বাসের ওপর কতটুকু ভরসা করা যায়, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে। অতীতে শিক্ষার্থীদের এমন অনেক আন্দোলনের মুখে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে তা মানেনি। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুই পরিবহন মালিকদের চাপে আজও রক্ষা করা হয়নি।

অতীতে দেখা গেছে, আন্দোলন তীব্র হলে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের সঙ্গে হেলমেট পার্টি, হাতুড়ি পার্টি লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, শত শত বেনামি মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ এবং ছাত্রীবান্ধব, দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষকদের সামনেই অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা যখন উপাচার্যকে ঘেরাও করেন, তখন যে পুলিশি আক্রমণ হয়েছিল, তা ছিল আরও ভয়াবহ। দেশবাসী আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করেছে, পুলিশি অ্যাকশনের পর শিক্ষার্থীরা যখন উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে চলে গেল, তখন সরকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝানোর জন্য সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সেখানে পাঠাল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা কী? তাঁরা কোন প্রটোকলে সেখানে গিয়েছিলেন? তাঁরা কি সেই অধিকার রাখেন? বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে যে দেশের যেকোনো সমস্যা সমাধানে স্থান-কাল-পাত্রনির্বিশেষে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা নাক গলানোর অধিকার রাখেন!

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনায় সরকার আরও একটি বেঠিক কাজ করেছে। তা হলো, আন্দোলনরত ছাত্রদের অর্থ সাহায্য করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পাঁচ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনকারীদের অর্থ সাহায্য করলে অপরাধ হয়, এটা বাংলাদেশের কোন আইনে লেখা আছে? ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সময়ও। তখন মিরপুর-১৪ এলাকায় মধ্যবয়সী একজন ভদ্রমহিলা আন্দোলনকারী ক্ষুধার্ত শিক্ষার্থীদের খাবার খাইয়েছিলেন। তাঁর সেই খাওয়ানোর দৃশ্য মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে তা ভাইরাল হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ভদ্রমহিলার থানা-পুলিশের হয়রানির সংবাদও তখন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল।

সমাজে একটি কথা প্রচলন আছে, ক্ষমতাসীনেরা বিরোধী দলকে যত না ভয় পায়, তার চেয়েও বেশি ভয় পায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে। মামলা-হামলার ভয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ঘরমুখো হয়ে পড়ায় সরকার বেশ স্বস্তিতেই আছে বলে মনে হয়। তারা জানে রাজনৈতিক আন্দোলনে সব স্তরের মানুষ শরিক না-ও হতে পারে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে সমাজের সবারই একটা নৈতিক সমর্থন থাকে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের যেকোনো আন্দোলন দানা বাঁধলে সরকারকে বেশ উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়। এসব আন্দোলনকে তখন রাজনৈতিক রং দেওয়ার অপচেষ্টাও চলে; যাতে সাধারণ মানুষ আন্দোলনকারীদের ভুল বোঝে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বাইরের ইন্ধন আছে বলে রং লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী মিডিয়ায় দেওয়া বক্তব্যে এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। সরকারের ভিত শক্ত হলে এসব আন্দোলনে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা নয়। আমলা, প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণতান্ত্রিক সরকারের শক্ত ভিত হতে পারে না। দেশের জনগণই হলো একটি দেশের সবচেয়ে শক্ত ভিত। বর্তমার সরকার নিজেদের জনসমর্থিত বলে দাবি করে থাকে। তাই ছাত্রদের কোনো ন্যায়সংগত দাবিতে সরকারের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

এখন সবাই অপেক্ষা করছেন জাফর ইকবালের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দেওয়া আশ্বাস সরকার রক্ষা করে কি না। কোনো ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়া ঠিক হবে না। সরকার যদি মনে করে অনশন ভাঙার পর উপাচার্যের অপসারণের দাবি থেকে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে সরে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ‘ছাইচাপা দেওয়া আগুন’ নিয়ে নাড়াচাড়া না করাই ভালো। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত উপাচার্যকে অপসারণ করাই উত্তম হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলে সরকারের পরাজয় হবে—এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই; বরং উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করে অন্যান্য উপাচার্যকে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া সরকারের জন্যই ভালো হবে। এর ফলে তাঁরা নিজেদের কোনো অনিয়ম ও গাফিলতি থাকলে সংশোধনের আগাম সুযোগ পাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত