Ajker Patrika

বিলাসবহুল লঞ্চটিতে নামেমাত্র ছিল নিরাপত্তা সরঞ্জাম

আল-আমিন রাজু, ঝালকাঠি থেকে
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৯
বিলাসবহুল লঞ্চটিতে নামেমাত্র ছিল নিরাপত্তা সরঞ্জাম

ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচল করা অভিযান-১০ ছিল এই রুটের অন্যতম বিলাসবহুল লঞ্চ। যাত্রীদের বিলাসবহুল আলিশান প্রাসাদের স্বাদ দেওয়ার সব ধরনের আয়োজন থাকলেও নামেমাত্র ছিল জরুরি মুহূর্তে জীবন রক্ষার সরঞ্জাম। 

ঝালকাঠি সদরের লঞ্চঘাটের টার্মিনালে বেঁধে রাখা আগুনে পুড়ে যাওয়া অভিযান-১০ লঞ্চটি ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।

লঞ্চটির নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার কিছু অংশ ছিল ডেকের যাত্রীদের জন্য। আর দ্বিতীয় তলার অর্ধেক অংশ এবং তৃতীয় তলার পুরোটাই ছিল কেবিন যাত্রীদের জন্য। অভিযান-১০ লঞ্চে সিঙ্গেল ও ডাবল মিলিয়ে শতাধিক কেবিন ছিল। আর এসব কেবিনে পাঁচ তারকা মানের হোটেলের মতো সব ধরনের আয়োজন ছিল। শুধু ছিল না অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও জরুরি মুহূর্তে পানিতে লাফিয়ে জীবন বাঁচানোর বয়া।

অভিযান-১০-এর ডেকের যাত্রীদের জন্য নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় ৫০টিরও কম বয়া ছিল। দ্বিতীয় তলার কেবিন ব্লকে দুই পাশ মিলিয়ে ৮ থেকে ১০টি বয়া রাখার স্থান ছিল আর তৃতীয় তলায় ৫৮টি সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিনের জন্য সব মিলিয়ে ২০টি বয়া রাখার স্থান ছিল। অর্থাৎ শতাধিক কেবিনের জন্য মাত্র ৩০টি বয়া রাখার স্থানের চিহ্ন পাওয়া গেছে। 

হাজারের বেশি যাত্রী বহনকারী বিলাসবহুল অভিযান-১০ লঞ্চ যাত্রীসেবায় আকৃষ্ট করলেও উপেক্ষিত থেকে গেছে লঞ্চে ওঠা যাত্রীদের জীবন রক্ষার বিষয়টি। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র যেন আরেক শুভংকরের ফাঁকি। পুরো লঞ্চটিতে মাত্র তিনটি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র পাওয়া গেছে। সেটিও ইঞ্জিনরুমের পাশে। 

এ ছাড়া লঞ্চের রান্নাঘর ছিল ইঞ্জিনরুমের মাত্র ১০ ফুটের মধ্যে, চায়ের ক্যানটিন ছিল ১৫ ফুটের মধ্যে। ছিল না জরুরি মুহূর্তে বের হওয়ার কোনো উপায়। লঞ্চ থেকে যাত্রীদের বের হওয়ার দরজাটি তিন ফুটেরও কম। সেখান দিয়ে একসঙ্গে দুজন বের হওয়াই কষ্টকর। 

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পানির লাইনের ব্যবস্থা থাকলেও ছিল না ব্যবহার করার ব্যবস্থা। এমনকি আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পরও অব্যবহৃত থেকে গেছে সেই পানির লাইন।

যাত্রীদের জন্য রাখা জীবনরক্ষা সামগ্রী বয়া রাখা ছিল অন্তত ১২ ফুট উচ্চতায়, যা দেখে গতকাল শনিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা মন্তব্য করেছেন, এই বয়া কীভাবে পাবে যাত্রীরা। বাস্তবে ঘটেছেও তাই। লঞ্চে থাকা অল্পসংখ্যক যে বয়া ছিল, তার বেশির ভাগই থেকে গেছে লঞ্চে। কিছু আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে আর কিছু বয়া আগুনে খানিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও টিকে গেছে যাত্রীদের জীবন নিয়ে অবহেলা আর লোক দেখানোর প্রতিবাদ হিসেবে। 

বয়া রাখার স্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঘটনার পরদিন লঞ্চটি পরিদর্শনে আশা সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানও। 

দুর্ঘটনার তৃতীয় দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুনে পুড়ে যাওয়া অভিযান-১০ লঞ্চটি পরিদর্শনে যান ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দলটি অভিযান-১০ ঘুরে দেখেছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে মাদারীপুরে মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর প্রতিনিধি
হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে মাদারীপুরে মহাসড়ক অবরোধ

ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মাদারীপুর মোস্তফাপুরের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার মোস্তফাপুরে জড়ো হন তাঁরা। পরে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

অবরোধ চলাকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় ব্যানার-ফ্যাস্টুন হাতে স্লোগান দেন বক্তারা। পরে সোয়া ৩টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ সময় মাদারীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, এনসিপির জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. হাসিবুল্লাহ, যুগ্ম সমন্বয়কারী রুবেল মৃধা, কার্যকরী সদস্য হাফেজ আব্দুর রহিম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক নেয়ামত উল্লাহ, সাবেক সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম সানি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা: ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার বিচার দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। আজ শুক্রবার বেলা ২টা থেকে নরসিংদী শহরের গুরুত্বপূর্ণ জেলখানা মোড় এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তাঁরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেন।

অবরোধের ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দূরপাল্লার যাত্রী ও চালকেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন এনসিপির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল এবং জামায়াতের প্রার্থী ইব্রাহিম ভূইয়া। এ ছাড়া নরসিংদী ছাত্র ঐক্য জোটের নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তারা হাদি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবি জানান।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিকেল ৪টার দিকে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা তাঁর উদ্দেশে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ প্রতিবেদন পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহারের কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শনিবারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি পরীক্ষা স্থগিত

গাজীপুর প্রতিনিধি
শনিবারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি পরীক্ষা স্থগিত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের এলএলবি প্রথম পর্বের শনিবারের (২০ ডিসেম্বর) ইকুইটি, ট্রাস্ট, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার ও হিন্দু আইন বিষয়ের পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিতকৃত পরীক্ষার সময়সূচি পরে জানানো হবে।

আজ শুক্রবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ২০২৪ সালের এলএলবি প্রথম পর্বের অন্যান্য পরীক্ষার সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যু: ঝিনাইদহে আ.লীগের ২ নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ শহরে আজ শুক্রবার সকালে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহ শহরে আজ শুক্রবার সকালে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহ শহরে আওয়ামী লীগের দুই নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের দুই নেতার বাড়িতে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়।/

রাতেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী শহরে টহল বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। আজ শুক্রবার সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে পুলিশ অবস্থান করছে।

জানা গেছে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে শহরে বিক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভ করেন। এরপর তাঁরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসের বাড়িতে ও অফিসে ভাঙচুরসহ আসবাব আগুন ধরিয়ে দেন। এর আগে বাসার দ্বিতীয়তলায় ভাঙচুর করা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এরপর শহরের হাটের রাস্তায় সদর পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মাসুমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই সময় বিক্ষুব্ধরা সাবেক সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।

এদিকে এসব ঘটনার পর থেকেই শহরে জোরদার করা হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা। শহরের হামদহ, মনুমেন্ট, পোস্ট অফিস মোড়, স্মৃতিসৌধ এলাকাসহ অন্য স্থানে টহলে রয়েছে পুলিশ।

জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসের কার্যালয়ে কর্মরত অসিম বলেন, ‘হঠাৎ রাতে একদল মানুষ এতে ভাঙচুর শুরু করে। বাসার নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ফাইলপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

ঝিনাইদহ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে সারা দেশের মতো আমাদেরও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত