Ajker Patrika

সংস্কৃতি ধ্বংসের পাঁয়তারা ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা

কুদরত-ই-গুল
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ১৩
সংস্কৃতি ধ্বংসের পাঁয়তারা ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা

তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি জন্ম নিল। মনে হলো নতুন এবং অসীম সম্ভাবনাময় দিগন্তের খিড়কির খিল খুলে গেল চকিতে। সবাই আশা করেছিল প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশের বেড়াজাল ভেঙে গেল। কিন্তু জন্মের পরপরই চরিত্র বদলাতে শুরু করল; পাকিস্তান রাষ্ট্রটি মঞ্চে হাজির হলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির চরিত্রে। মঞ্চ প্রায় একই রকম থাকল, পরিবর্তন হলো কুশীলবের। ফলে সবার স্বপ্ন যেন দৈত্যের দুঃস্বপ্নের মতো গুমরে গুমরে ভেঙে গেল। অনুরাগের জায়গা ক্রমে দখল করল বিরাগ। পূর্ব পাকিস্তানের একদল প্রাজ্ঞ ‘মেধাজীবী’ এটি বুঝতে পেরে বলতে শুরু করলেন, এটি ব্রিটিশ উপনিবেশের সম্প্রসারণ মাত্র। এটি বুঝতে পেরেই কাজী নজরুল ইসলাম বোধ হয় বলেছিলেন, এটি পাকিস্তান নয়; হবে ‘পাপিস্তান’।

বলে নেওয়া দরকার, পাকিস্তানের মতো ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, নিজেদের আধিপত্যকে মজবুত করার জন্য কীভাবে হাজির হয়। তাদের অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে প্রথম এবং অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে জাতীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করা। তারা অবশ্যই প্রথম প্রথম অস্ত্রের অস্তিত্ব জানান দেয় না। তারা দ্রুত বিস্ময়করভাবে সাংস্কৃতিক জীবনকে নানাখানা করতে চায়। তারা সাংস্কৃতিক জীবনের ওপর নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করে উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে নিম্নমান আখ্যা দেয়। তারা এ কাজগুলো করে থাকে প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক যন্ত্রের সহায়তায়। তারা ব্যতিক্রমহীনভাবে নিয়োগ দিয়ে থাকে সরকারের ভাষায় কথা বলা এজেন্টদের। আর অবশ্যই তাদের বিচিত্র প্রোপাগান্ডাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দোসর হিসেবে একশ্রেণির ‘মেধাজীবী’কেও তারা নিয়োগ দিয়ে থাকে; ‘ভূষিত’ করে থাকে নানা খেতাবে। এই সব ‘মেধাজীবী’ প্রায়ই প্রাসাদের প্রসাদভোগী হয়ে থাকেন।

আরেক শ্রেণির ‘মেধাজীবী’ থাকেন, তাঁরা অবশ্যই দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে সক্রিয়ভাবে কলম চালিয়ে যান। কখনো কখনো সশরীরে হাজির হন ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে এবং বুঝিয়ে দিতে। জাতি রক্ষার কান্ডারি হিসেবে হাজির হন তাঁরা। তাঁদেরই আমরা বলি জাতীয় বুদ্ধিজীবী বা ‘মেধাজীবী’।

এখন আসা যাক, ‘মেধাজীবী’ বা ‘বুদ্ধিজীবী’ কারা? প্রখ্যাত ঐতিহাসিক গৌতম ভদ্র ঐতিহাসিক রণজিৎ গুহকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘তিনি “বুদ্ধিজীবী” নাম না দিয়ে “মেধাজীবী” নাম দিয়েছিলেন।’ কারণ হিসেবে বলেন, ‘সব মানুষই বুদ্ধি খাটিয়ে জীবিকা অর্জন করে, বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। “ইন্টেলিজেন্স” ছাড়া মানুষের সরব, সচল অস্তিত্ব কি সম্ভব?’ তিনি আরও বলতে চান, ‘বুদ্ধি আর মেধা এক জিনিস নয়। বুদ্ধির সঙ্গে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি এক হলেই সে মেধার চেহারা নেবে।’ এ কারণেই ‘মেধাজীবী’ শব্দটিই বেছে নেওয়া। ‘মেধাজীবী’ মূলত চলতি বিকৃতির মধ্য দিয়ে আসল আকৃতি আঁচ করতে পারেন বা ভবিষ্যৎকে দেখাতে পারেন। চলতি বিকৃতি কী ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে তা তিনি দেখিয়ে দেন। আবার তিনি দেখিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হন না, বিকৃতিকে রুখে দিতে চান সক্রিয় প্রতিবাদ-আন্দোলনের ভেতর দিয়ে। এর মাধ্যমে তিনি ঝুঁকি নিতেও কুণ্ঠিত হন না। এই অকুণ্ঠ প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বই ‘মেধাজীবী’ হিসেবে বিবেচিত হন। আমরা যদি পৃথিবীর বড় বড় বিপ্লব, আন্দোলনের দিকে তাকাই, দেখব তাঁরা নানা বিপন্নতার মধ্যেও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্বমহিমায়। ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব এর ভালো উদাহরণ।

পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের এখানে যে আঘাতটি প্রথম করেছিল, তা ভাষার ওপর। বাংলার স্থলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পাঁয়তারা করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী। ভাষার ইতিহাসই যদি মানুষের ইতিহাস হয়ে থাকে, তাহলে বাঙালির যাবতীয় সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক চেতনার ভিত্তিভূমি এই ভাষা। এই ভিত্তিভূমি ভাঙার চেষ্টাই ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।

ভাষার ওপর আঘাত হানার কারণ কী? তা একটু খতিয়ে দেখা যেতে পারে। আপাত খোলা চোখে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা নিরীহ মনে হলেও, তা আসলে কোনো ক্রমেই নিরীহ বিষয় নয়। কারণ, ভাষা হলো একটি জাতির সংস্কৃতি বিনির্মাণের প্রথম এবং প্রধানতম পাটাতন। নিজের বিকাশ এবং প্রকাশের একমাত্র হাতিয়ার। ভাষা-পাটাতনের ওপরই তো গড়ে ওঠে সংস্কৃতির বিশাল প্রাসাদ। তারা ভেবেছিল, যদি ভাষার আধিপত্যকে নস্যাৎ করা যায়, তাহলে সংস্কৃতির প্রাসাদ বিধ্বস্ত হতে বাধ্য। আর এই সংস্কৃতির প্রাসাদ রক্ষার তাগিদে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে যাঁরা কলম ধরেছিলেন, তাঁরা আমাদের ‘মেধাজীবী’ সম্প্রদায়। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন এই অস্বাভাবিক উদ্ভট রাষ্ট্রের হাত থেকে সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে না পারলে, আমরা একটা পঙ্গু জাতিতে পরিণত হব। এই তাগিদে প্রথম দিকেই এগিয়ে এলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ, ড. এনামুল হক, আবদুল হক প্রমুখ। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন যে রাষ্ট্রের সঙ্গে যদি ভাষার সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক জীবন তছনছ হতে বাধ্য। এটা টের পেয়ে আমাদের ‘মেধাজীবী’ কবি, সাহিত্যিকেরা পরবর্তী সময়ে একুশের সংকলন, একুশের ফেব্রুয়ারি (১৯৫৩) গ্রন্থটি প্রকাশ করেন; যা আমাদের এখানে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রথম গ্রন্থিত প্রকাশ। এই গ্রন্থিত প্রকাশই পরবর্তী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বাতিঘর হিসেবে কাজ করে।

পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরাচারী ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ভাষার প্রশ্নে ব্যর্থ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সাহিত্যের ওপর সাম্প্রদায়িক আঘাত করেছিল অকপটে। তাঁকে আঘাত করা হয়েছিল ‘হিন্দু কবি’ বলে। নজরুলের কবিতা থেকেও ‘হিন্দুয়ানি’ শব্দ সরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। ফলে আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সাম্প্রদায়িকতার খপ্পরে পড়ে যায়। তারা আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের সম্ভ্রম ও সার্বভৌমত্বকে নষ্ট করার অপতৎপরতায় মেতে ওঠে। এ ছাড়া ১৯৬১ সালে যখন বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ পালনের আয়োজন হচ্ছে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এই আয়োজনকে বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে। রবীন্দ্রনাথের গান প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চালায়। কিন্তু আমাদের ‘মেধাজীবী’ সম্প্রদায় এসব অপতৎপরতাকে রুখে দেন। তাঁরা জানতেন, এতে ঝুঁকি আছে। কিন্তু তাঁরা ঝুঁকির তোয়াক্কা না করে তাঁদের কাজ চালিয়ে গেছেন। সাংবাদিকেরা লিখেছেন পত্রিকায়, কবি-সাহিত্যিকেরা লিখেছেন কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ। আর যাঁরা সাংগঠনিকভাবে তৎপর ছিলেন, তাঁরা নানা আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এই তুমুল নিপীড়নের মধ্যেও সুফিয়া কামাল, সন্‌জীদা খাতুন, ওয়াহিদুল হক প্রমুখের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘ছায়ানট’-এর মতো সাংস্কৃতিক সংগঠন।

পূর্ব পাকিস্তানের ‘মেধাজীবী’ সম্প্রদায় বুঝতে পেরেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তান ধর্মকে সংস্কৃতি হিসেবে মূল্যায়িত করতে চায়। কিন্তু ধর্মই সংস্কৃতি নয়, এটা হতে পারে বড়জোর সংস্কৃতির সুস্বাদু ফল। আর পূর্ব পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক চরিত্র এত বিচিত্রতায় ভরা যে, তার কূল পাওয়া অত সহজসাধ্য বিষয় নয়। বহু সভ্যতা ও সংস্কৃতির পলি দিয়ে স্তরে স্তরে গঠিত এর ভূমি। ফলে এর ভাঁজে ভাঁজে তার সৌরভ জড়িত ও জারিত হয়ে আছে। সেই শক্তিই পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা করবে। এরই প্রসঙ্গ ধরে রবীন্দ্রনাথের ইমপিরিলিয়াজম গ্রন্থ থেকে ধার করে বলা যায়, ‘পৃথককে বলপূর্বক এক করলে তারা একদিন বলপূর্বক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সেই বিচ্ছেদের সময় প্রলয় ঘটে’।

মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, আনোয়ার পাশা, জহির রায়হান প্রমুখ সাহিত্যিক এবং তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সিরাজুদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন প্রমুখ সাংবাদিকসহ প্রায় ১ হাজার ২২২ জন শহীদ ‘মেধাজীবী’ এবং যাঁরা বেঁচে ছিলেন বা আছেন, তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন এই রাষ্ট্রচরিত্রের মধ্যেই বিচ্ছিন্নতার সুর আছে। সেই সুরে তাঁরা রচনা করেছিলেন স্বাধীনতার গান। অবশেষে তাঁরা আত্মাহুতির মাধ্যমে স্থাপন করে গেছেন মেধাজীবিতার বিরল দৃষ্টান্ত। ‘মেধাজীবী’, যাকে আমরা অভিন্ন অর্থে ‘বুদ্ধিজীবী’ বলি, তাঁদের নিধনের মর্সিয়াকালে এই মহান শহীদদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।

লেখক: কুদরত-ই-গুল প্রভাষক, ইতিহাস বিভাগ, রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত