Ajker Patrika

উপেক্ষিত হচ্ছে নারীজীবন

শাকেরা তাসনীম ইরা, ঢাকা
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৪: ০৪
উপেক্ষিত হচ্ছে নারীজীবন

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছে বিশ্বজুড়ে। উষ্ণতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা এবং চরমভাবাপন্ন তাপমাত্রা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পৌনঃপুনিকতার সঙ্গে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে লাখ লাখ মানুষের। এর প্রভাব অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও পড়েছে নেতিবাচকভাবে। যদিও অঞ্চল, প্রজন্ম, বয়স, শ্রেণি এবং লিঙ্গের ভিত্তিতে এর প্রভাব ভিন্ন। তবু আন্তর্জাতিক গবেষণাগুলো বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এরই মধ্যে পুরুষদের তুলনায় বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন নারীরা।

গত ১০ অক্টোবর জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এবং কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন একটি যৌথ গবেষণা পরিচালনা করে। তাতে জানানো হয়, বিশ্বের ১১৯টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৩৮টি দেশ গর্ভনিরোধ, মাতৃত্ব এবং নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয় পরিকল্পনায় রেখেছে। মাত্র ১৫টি দেশ উল্লেখ করেছে নারীর বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা সহিংসতা রোধে বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়নের কথা। এই প্রতিবেদনটি প্রথমবারের মতো দেখানোর চেষ্টা করেছে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিকল্পনাগুলো নারীর যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে।

নারীস্বাস্থ্য ও সহিংসতায় আলোকপাত করা এসব দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশের নাম। অথচ গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (জিসিআরআই) অনুসারে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটে থাকা শীর্ষ ১০ দেশের একটি। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির সূচকে এ দেশের অবস্থান সপ্তম।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন নাহার জানান, জলবায়ু সংকটে নারীদের জন্য আলাদা করে কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও ২০২৩ থেকে ২০৫০ সালের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার ৪.৮ অধ্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনে নারীর অভিযোজন-সংক্রান্ত আলোচনায় নারীর স্বাস্থ্য ও সামাজিক অবস্থানের বিষয়টি খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। সে পরিকল্পনায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে নারীর জন্য নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, স্তন্যপান ও প্রসূতি সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিতকরণের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্যোগের সময় লিঙ্গ, বয়স ও অক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত অনুসন্ধান এবং উদ্ধার কর্মসূচির কথাও। পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, লৈঙ্গিক সমতার ভিত্তিতে, বিশেষ করে নারীদের জন্য জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করার কথা।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে। ২০২২ সালে মিসরের শারম-আল-শেখে অনুষ্ঠিত ২৭তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ২৭-এ অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন নারীরা। জীবিকা নির্বাহের জন্য এসব নারী প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নারীরা প্রতিদিন যে ধরনের কাজ করেন, তার প্রায় পুরোটার উৎস প্রকৃতি। সেখানে কোনো ধরনের পরিবর্তন এলে সবার আগে তার প্রভাব পড়ে নারীদের ওপর। বাংলাদেশের উপকূল, পাহাড়ি ও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে এসব কারণে প্রতিনিয়ত কমছে নারী শিক্ষার্থীর হার। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতিবছর প্রায় ৩৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে উপকূল, পাহাড়ি ও দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে প্রতিবছর লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর। উপকূলীয় অঞ্চলে খাবারসহ দৈনন্দিন কাজে অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ বেড়েই চলেছে নারীদের মধ্যে। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মহার গত কয়েক বছরে বেড়েছে কয়েক গুণ সে অঞ্চলে। উপকূলীয় অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পরিষ্কার পানির অভাবে নারীরা দূষিত লবণাক্ত পানিতে ঋতুস্রাবের কাপড় পরিষ্কার ও গোসল করতে বাধ্য হচ্ছে। এর প্রভাব সরাসরি প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান অতিরিক্ত তাপমাত্রা মাতৃস্বাস্থ্য ও গর্ভাবস্থার সঙ্গেও বিশেষভাবে সম্পর্কিত। জলবায়ু সংকটের ফলে বিশ্বজুড়ে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল।

জলবায়ু সংকট নারীর আর্থসামাজিক অবস্থায়ও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। গত কয়েক বছরে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষের কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৌসুমি অভিবাসন। এই অভিবাসনের কারণে নারীর ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। কাজের সন্ধানে পুরুষেরা যখন সাময়িকভাবে অভিবাসী হচ্ছে, তখন আবার বাড়ছে বহুবিবাহের সংখ্যা।

আবার কারও কারও স্বামী ফিরে আসছেন না বলে নারীরা বিভিন্ন সামাজিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির হার। উপরন্তু জলবায়ু সংকট দরিদ্র পরিবারগুলোর ওপর অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এর প্রভাব এসে পড়ছে পরিবারের কিশোরী মেয়েটির ওপর। তাকে তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হচ্ছে পরিবার। যে কারণে গত কয়েক দশকে প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বাল্যবিবাহের সংখ্যা।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর তেমন কোনো হাত না থাকলেও এর শাস্তি বেশি ভোগ করে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো। এ সংকটের প্রভাব রোধে বিশেষ জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা দরকার। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাও জরুরি। 

তথ্যসূত্র: অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ইউনাইটেড ন্যাশনস ক্রনিকেল, বিবিসি, দ্য নিউ হিউম্যানিটারিয়ান এবং অন্যান্য। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মন্ত্রণালয় ও সংসদে আসনের দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা অমানবিক।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংলাপে বক্তারা গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় আসনের দাবি জানান। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ ও সাইটসেভার্সের ‘ইকুয়াল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনের সহযোগিতায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এই সংলাপের আয়োজন করে।

মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব এবং সাইটসেভার্সের ক্যাম্পেইন অ্যাডভাইজার অয়ন দেবনাথ। সালমা মাহবুব বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা নিয়ে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যম অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো যেন আমরা সেই আগের যুগে রয়ে গিয়েছি। প্রতিবন্ধী মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রথমেই বোঝা দরকার যে প্রতিবন্ধিতাটা কী। এটা সম্পর্কে যদি সুস্পষ্ট ধারণা থাকে, তাহলে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না।’

অয়ন দেবনাথ বলেন, যদি একটি ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি না যেতে পারে, তাহলে সেটা ভবনটির সমস্যা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমাজের অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ অধিকার থাকতে হবে। এখানে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।

সংলাপে আলোচকেরা বলেন, বাংলাদেশে স্কুল, অফিস, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ জায়গায় প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নেই। যার ফলে তাঁরা চাইলেও অনেক জায়গায় অংশ নিতে পারেন না। আসন্ন নির্বাচনেও বহু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।

ইউএনডিপির নির্বাচনী সহায়তা ব্যালট/ ড্রিপ প্রকল্পের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা আন্দ্রেজ দেল ক্যাস্তিলো সানচেজ বলেন, নির্বাচন অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেন সেখানে সবার মতো অংশ নিতে পারেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা থাকা উচিত।

সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন সাইটসেভার্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও। সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএনডিপির নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট অসীম ডিও। আলোচনায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। যদিও অধিকার সংখ্যা দিয়ে বিচার হয় না। যদি একজন মানুষ থাকে, তাকেও পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে একেক রকম তথ্য দেয়, কিন্তু কেউই সঠিক তথ্য দেয় না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য থাকা উচিত।

বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের উচিত প্রতিবন্ধিতাকে মানববৈচিত্র্য ও অধিকারের অংশ হিসেবে তুলে ধরা। তবেই সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা ভাঙবে এবং দেশের নীতি-পরিকল্পনা ও জনমানসে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জটিল প্রক্রিয়ার কারণে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করতে পারেন না নারীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘নারী ও প্রযুক্তি: অনলাইন সহিংসতা নিরসন ও আইনি সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘নারী ও প্রযুক্তি: অনলাইন সহিংসতা নিরসন ও আইনি সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি সহায়তা নীতিমালা ইংরেজিনির্ভর হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ (রিপোর্ট) জানাতে পারেন না।

আজ বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘নারী ও প্রযুক্তি: অনলাইন সহিংসতা নিরসন ও আইনি সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

নারী ও শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি) এ সভার আয়োজন করে।

সভায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা এবং সিএসডব্লিউসির ফোকাল মনীষা বিশ্বাস মূল নিবন্ধ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল ইত্যাদির রিপোর্টিং (অভিযোগ করা) ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রক্রিয়া জটিল ও ইংরেজিনির্ভর। অনেক ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকার কারণে রিপোর্ট ‘পলিসি ভায়োলেশন (নীতিভঙ্গ) নয়’ বলে বাতিল হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী সরাসরি কীভাবে রিপোর্ট করতে হয়, তা জানেন না৷

মূল নিবন্ধে অতীতের কিছু গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ৮৮ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করেন না৷ আরও বলা হয়, এআই জেনারেটেড ছবি, ডিপফেক কনটেন্ট—এগুলো শনাক্ত ও মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তি সহায়তা সক্ষমতা সীমিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তি উদ্ভূত লিঙ্গভিত্তিক যৌন সহিংসতা-সংক্রান্ত কনটেন্ট রিপোর্ট করতে পারলেও তা খুব সীমিত। এ ছাড়া ইমো, লাইকির মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিপোর্ট করার সুবিধা না থাকায় অপরাধীরা এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে মনীষা বিশ্বাস জানান, থানায় ভুক্তভোগীরা পরামর্শ নেওয়ার পরে মামলা করতে উৎসাহিত না হওয়ায় অভিযোগ নেওয়া হয় না। কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি থানায় এসে উপাত্ত সরানোর মাধ্যমে পারস্পরিক মীমাংসারও পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

সভায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নোভা আহমেদ বলেন, ‘সাইবার সহিংসতার কথা যখন বলি, তখন প্রথমে মাথায় আসে, কেন এটা নিয়ে এত চিন্তা করছি। তার একটা কারণ হলো, এটি দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং একে কখনো মুছে ফেলা যায় না। আমাদের দেশে সাইবার সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীদের চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান। ‘মি টু’ আন্দোলনে বাংলাদেশি নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার পেছনেও এই ভয় কাজ করেছে যে, কথা বললেই তাঁদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। বাস্তব জীবনে যেভাবে নারীদের দোষারোপ করা হয়, সেই একই চিত্র ডিজিটাল জগতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এর ফলে নারীরা নিরাপদভাবে অনলাইন পরিসরে বিচরণ করতে পারছেন না।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার হামিদুল মেজবাহ বলেন, ‘ফরেনসিক সাক্ষ্য সংরক্ষণের জন্য থানায় মোবাইল ফোন বা ব্যক্তিগত ডিভাইস জমা দিতে হয়, যা ভুক্তভোগীকে আরও নিরুৎসাহিত করে মামলা করার ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে আমাদের যথাযথ ডেটা নেই যে কতজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন এবং কতজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন।’

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের হেল্পলাইন ইনচার্জ রাইসুল ইসলাম জানান, নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমানে ১০৯-এর জরুরি হেল্পলাইন সেবায় ভুক্তভোগীদের চাহিদার ধরনগুলো পরিবর্তন হচ্ছে এবং এখন সাইবারসংক্রান্ত অভিযোগ বেশি আসছে।

ঢাকা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার মোছা. মাকসুদা আক্তার বলেন, সাইবারসংক্রান্ত মামলার ভুক্তভোগীদের জন্য মনোসামাজিক সেবা দরকার। যদি পুলিশের কাছে আসতে ভুক্তভোগীরা ভয় পান, তাহলে কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা দরকার।

সভার সমাপনী বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) নির্বাহী পরিচালক সাইদ আহমেদ বলেন, সব সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা এবং একে প্রান্তিক নারীবান্ধব করা প্রয়োজন। আইনবিদদের সঙ্গে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে বসা খুব জরুরি।

সভায় নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-কে সংশোধন করে ডিজিটাল শিশু যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত উপাদান এবং ডিজিটাল অসম্মতিপূর্ণ পর্নোগ্রাফিকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। ই-এফআইআর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যার ফলে ভুক্তভোগীকে ব্যক্তিগতভাবে পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে না, যা হয়রানি ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে শাহেলীর লড়াই

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
মেহেরুন নেছা শাহেলী। ছবি: সংগৃহীত
মেহেরুন নেছা শাহেলী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলার ইতিহাস পড়ে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনে বড় হয়েছেন মেহেরুন নেছা শাহেলী। তাঁদের কথা শুনলেই মনে হতো, বাংলার প্রকৃতিতে এখনো সাগর, নদী, আকাশ, পাখি আর সবুজ আছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে আদি শস্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যের আবেদন। সেই অভাব তাঁকে ভাবায়, জাগায় পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা। আর সেখান থেকে শুরু তাঁর উদ্যোগ—বাংলার আদি খাদ্য ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। এটি শুধু ব্যবসা নয়, দেশের জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা। সংসার সামলে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড়িয়েছেন শাহেলী। ‘আহরণ’ নামের ফেসবুক পেজের কান্ডারি তিনি।

পরিবার

স্বামী এবং এক সন্তানকে নিয়ে শাহেলীর পরিবার। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি। উদ্যোক্তা হতে গিয়ে শাহেলী স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন সব সময়।

শুরুর গল্প

বছর সাতেক আগে শাহেলী ব্যবসায় নেমে পড়েন। প্রথম দিকে টুকটাক সমস্যা হলেও বুদ্ধি করে সব সামলে নেন। শাহেলীর পেজ আহরণে অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। সাত বছর আগে খোলা এই পেজ তাঁর বিক্রির মাধ্যম। অবশ্য অফলাইনেও তিনি পণ্য বিক্রি করেন।

কেন উদ্যোক্তা হলেন

পড়াশোনা করে যে চাকরিই করতে হবে, এমন নয়। শাহেলী মনে করেন, উদ্যোক্তা হওয়ার মতো মেধা আর দক্ষতা থাকলে চাকরি না করে নিজে কিছু করে অন্যের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত। কাজ করতে করতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন শাহেলী; যাকে বলে ঠেকে ঠেকে শেখা।

মাসে আয় আড়াই লাখ টাকা

শুরুতে তাঁর পুঁজি ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। পরিশ্রম ও দক্ষতায় এখন তাঁর মাসিক বিক্রি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় ওঠানামা করে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর কাজে সহকারী হিসেবে যুক্ত আছেন ১৪ জন।

যা বিক্রি করেন

শাহেলীর পেজ আহরণে পাওয়া যাবে মধু, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার, খেজুরের গুড়, শুঁটকি, বিভিন্ন প্রজাতির চাল ইত্যাদি।

কাঁচামাল সংগ্রহ

শাহেলী কাঁচামাল পেতে ছুটে বেড়ান কৃষকের দোরগোড়ায়। নিজে উপস্থিত থেকে পণ্যের সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করেন। মানের বেলায় তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দেন না। এ কারণে অনেক ক্রেতা বিভিন্ন জায়গায় প্রতারিত হয়ে তাঁর কাছে এসে স্বস্তি খুঁজে পান।

আনন্দ

উদ্যোক্তা হিসেবে শাহেলী এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। তাই ভিড়ের মধ্যে একদম অচেনা কেউ এগিয়ে এসে যখন বলেন, ‘আপনি মেহেরুন না? আপনার পণ্যের গুণগত মান সত্যিই অসাধারণ’—সেই প্রশংসা শাহেলীর মন ভরিয়ে দেয়। অচেনা মানুষের এমন আন্তরিক সাড়া তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করে এগিয়ে যেতে।

চ্যালেঞ্জ

একজন নারী সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের নানান জায়গায় ছুটে বেড়াবে—এটা অনেকে সহজে মেনে নিতে পারে না। শাহেলীর ভাষায়, ‘একজন নারীও পুরুষের মতো মাঠপর্যায়ে কাজ করার সাহস ও সক্ষমতা রাখে। কিন্তু অনেকে নানা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে। এতে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।’

তবে শাহেলী জানান, তিনি শুরু থেকে সাহসী। তাই এসব মন্তব্য বা চ্যালেঞ্জ তিনি খুব সহজে সামলে নিতে পারেন। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ তাঁর আগামীর পথ আরও দৃঢ় করে।

আফটার সেলস সার্ভিস

নানা কারণে কুরিয়ারে পণ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাহলে কি ক্রেতা ক্ষতি মেনে নেবে? মোটেই না।

পণ্য নষ্ট হয়ে গেলে গ্রাহক যেভাবে ক্ষতিপূরণ চায়, সেভাবে ক্ষতিপূরণ দেন শাহেলী। আর যারা পণ্য নিতে চায়, পেজে বার্তা পাঠালেই তা ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

ভবিষ্যৎ

একটা গ্রাম হবে। সেই গ্রামে একজন মানুষ যখন প্রবেশ করবে, দেখবে ঢেঁকিতে ধান ভানা হচ্ছে, নারীরা পাটায় সর পিষছে, ঘানিতে সরিষা ভাঙিয়ে তেল বের হচ্ছে। মোটামুটি বাংলার আদি চিত্র দেখা যাবে সেই গ্রামে। এমন স্বপ্ন শাহেলীর। এ ধরনের একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাড়ছে আতঙ্ক

১১ মাসে নির্যাতনের শিকার ২,৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু

ফিচার ডেস্ক
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর দেশের সাধারণ মানুষ এবং নারী অধিকারকর্মীরা নতুন করে নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসেও সেই স্বপ্ন অধরা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের ১১ মাসে সারা দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, বরং এটি নতুন করে আশা জাগানো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি একটি গভীর প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।

চব্বিশের জুলাইয়ের পর মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় দায় রয়েছে, তা নতুন সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে বাস্তবতার ভিন্ন রূপ। ১১ মাসে মোট নির্যাতিতের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪৯ জন; এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ মোট নির্যাতিতের প্রায় অর্ধেকই কন্যাশিশু ও কিশোরী। এই জরিপে বিভিন্ন নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে।

কন্যা ও শিশুদের প্রতি নির্যাতনের এ সংখ্যা প্রমাণ করে, পরিবার বা সমাজের কোনো স্তরেই মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, এমনকি সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত পরিবারেও নারীরা নিরাপদ নয়।

পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসে ৫৯৩ নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ১০১ জন। নিপীড়নের শিকার হয় ৯৫ জন; এর মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ৬১ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৮১ জনকে, যাদের মধ্যে ১৪১ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭২৪ নারী ও কন্যাশিশু। এদের মধ্যে ৫০০ জন কন্যাশিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও কন্যাশিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিল কন্যাশিশু ও কিশোরী। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে ২৯ নারী ও কন্যশিশু। তাদের মধ্যে ১৬ জনের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে।

প্রতিবেদনটির উদ্বেগজনক দিক হলো, গত ১১ মাসের এই পরিসংখ্যান ২০২৪ সালের সারা বছরের মোট নির্যাতনের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ২ হাজার ২২৫ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।

এটি দেশের নাগরিকদের জন্য এক চরম হতাশার বার্তা। এরই মধ্যে গঠন করা হয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। যাদের কাজ আইনি, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য পর্যালোচনা করে প্রাসঙ্গিক সংস্কার প্রস্তাব করা। সে প্রস্তাব করাও হয়ে গেছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসের নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা গত বছরের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত